চেয়ারম্যান সাহেব খুব অনেস্ট
মাকেন্দো গ্রামে ভীষণ বিপর্যয় নেমে আসে। এ গ্রামের কৃষক ও কারিগরেরা শ্রমে-রক্ত-ঘামে যে টাকা-পয়সা…..
সংসদে বিরোধী দল নেই। জোটসঙ্গীরা কেউ রাজি নয় বিরোধী দল হতে। “যেমন খুশী বিরোধী দল সাজো”-র আসরে গত পাঁচবছর বিরোধী দলের অভিনয়ে খুশী নয় কেউ। সুতরাং নীতি নির্ধারণী মহল চিন্তিত, এরকম কাঁচা অভিনয় দিয়ে চলবে না। তাহলে বিরোধী দল কোথায় পাই! এ প্রশ্নের মাঝে ঘুরপাক খেতে খেতে একজন বলে, ইউরেকা ইউরেকা!
সবাই বিস্ফারিত চোখে তাকায়। লোকটা রাজনৈতিক দরবেশের মতো হাত নেড়ে নেড়ে টকশো কথকের ভঙ্গিতে বলে, সংরক্ষিত আসনে এ কারণেই অভিনেত্রী নেয়া প্রয়োজন। কারণ এদের অনেকেই ফিল্মে সাংসদ চরিত্রে অভিনয় করেছে; আবার চরিত্রের প্রয়োজনে যে কোন সংলাপ বিশ্বাসযোগ্যভাবে বলতে পারবে তারা।
প্রস্তাবটির সম্ভাব্যতা যাচাই করতে সংরক্ষিত আসনে সাংসদ হতে ইচ্ছুক এমন কয়েকজন অভিনেত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
তাদের খিল খিল হাসিতে আর পারফিউমের সুগন্ধে মৌ মৌ করে পার্টি অফিস।
একজন নীতি নির্ধারক তাদের স্বাগত জানিয়ে বলে, হাসি-আনন্দ-সুগন্ধ এসবই জীবনে প্রয়োজন; কিন্তু আমরা ভাবছিলাম, সময়ের প্রয়োজনে যদি আপনাদের বিরোধী দলের ভূমিকায় অভিনয় করতে হয়; তখন একদম না হেসে গম্ভীরভাবে কথা বলতে পারবেন কি আপনারা!
এ কথা শুনে এক অভিনেত্রী তার রিনি রিনি হাসিতে জানালার শার্সিতে কাঁপন জাগায়; আরেকজনের চুড়ির টুংটাং শব্দে মাতোয়ারা হয় সাঁঝ; নিটোল পায়ে নূপুর পরে এসময় আরেকজন প্রবেশ করে। নীতি নির্ধারকরা মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকে কিছুক্ষণ।
একজন নিজেকে একটু গুছিয়ে নিয়ে বলে, আগের টার্মে বিরোধী দলের চরিত্রে অভিনয়ে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে; আমাদের বেছে নেয়া বিরোধী দলটি। আপনারা সে অভাব পূরণ করতে পারবেন কি?
একজন অভিনেত্রী বলে, নিজের আদর্শের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারবো না ভাই। যাকে এতো ভালবাসি তার বিরুদ্ধে কথা বলি কী করে। লাগবে না আমার সাংসদ হওয়া। যতদিন বেঁচে আছি কর্মী হিসেবেই সরকারি দলের সেবা করবো।
–এ তো মহাবিপদে পড়া গেলো। বোঝেন না কেন; ওটা হবে শুধুই অভিনয়। ভেতরে ভেতরে তো আমরা সহমত ভাই-বোন রয়ে যাবো।
একজন অভিনেত্রী উঠে এসে নীতি নির্ধারকের হাতে রাখি বাঁধতে বাঁধতে বলে, এতোদিন তো অভিনয়ই করলাম; তাই এবার অভিনয় নয়; সত্যি সত্যিই সাংসদ হতে চাই সহমত ভাই।
–আহা এতো সত্যি সত্যি এমপিই; ভূমিকাটা কেবল বিরোধী দলের।
আরেক অভিনেত্রী বলে, সরকারের বিরুদ্ধে কোন কথা বললে, ফেসবুকের দেশপ্রেমিক সহমত ভাইয়েরা গালাগাল করবে; রাস্তায় পেলে গায়েও হাত তুলবে।
–আমরা ফেসবুকের দেশপ্রেমিকদের নিষেধ করে দেবো এসব করতে।
–মুখের কথায় হবে না ভাই; সাইবার আইনে কারাদণ্ডের বিধান না করলে আমরা ঝুঁকিতে পড়ে যাবো।
নীতি নির্ধারকরা চিন্তায় পড়ে যায়। ধর্মীয় অনুভূতি, দলীয় অনুভূতির রক্ষাকবচ দেয়ার পর এই আইনে আবার বিরোধী অনুভূতির তাবিজ দিলে উন্নয়নের শত্রুরা সে ধারার সুযোগ নিয়ে নিতে পারে।
যে নীতি নির্ধারকের মাথায় অভিনেত্রীদের বিরোধী দলের চরিত্রে অভিনয় করানোর আইডিয়া এসেছিলো, সে গাল ফুলিয়ে বলে, ভাই হিসেবে একটা অনুরোধ করলাম, সেইখানেও আইনের প্যাঁচ দিতেছেন। আইন প্রণেতা হওয়ার আগেই আইন প্রণয়নের দাবী তুললেন। খুব হার্ট হলাম সহমত বোনেরা।
এক অভিনেত্রী কেঁদে কেঁদে বলে, এতো লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সয়ে আপনাদের সমর্থন করি; কথায় কথায় আরেক আমলের ছবি এনে খোঁটা দেয় দেশপ্রেমিক ভাইয়েরা; এখন আবার সংসদে গিয়ে সরকার বিরোধী কথা বললে, তারা বলবে, ঐ দ্যাকো ল্যাঞ্জা ইজ ডিফিকাল্ট টু হাইড।
নীতি নির্ধারক ক্ষেপে যায়, এই আলগা দেশপ্রেমিকগুলিরে নিয়া তো বিপদ হইলো; আরে ভাই ওরা দলের কেউ না; ওদের এতো গুরুত্ব দেওয়ার কী আছে!
অভিনেত্রী কাঁদতে কাঁদতে বলে, দুঃখ আমার বাসর রাতের কলংক। বুঝেছি, এবারো আমার এমপি হওয়া হলো না।
আরেকজন নীতি নির্ধারক বলে, ধরে নিন প্রয়োজনে বিরোধী দলের চরিত্রে অভিনয় করাটা চাকরির পূর্বশর্ত। এখন সিদ্ধান্ত আপনাদের। এখন অডিশন শুরু হবে; আসেন সহমত বোনেরা শুরু করা যাক।
প্রথম প্রার্থী ইউরেকা ভাইয়ের লেখা স্ক্রিপ্ট দেখে রাগত স্বরে বলতে থাকে, মাননীয় স্পিকার, অনেক অনুরোধ করার পরেও আমার এলাকার মন্ত্রী পাটোয়ারি সাহেব গত ছয়মাসে এলাকার কল্যাণে একটিও প্রকল্পের ব্যবস্থা করেন নি। শুনুন পাটোয়ারি সাহেব, আমরা গরীব হতে পারি; কিন্তু আত্মসম্মান বোধ আছে।
ইউরেকা ভাই আনন্দে হাততালি দেন, এইতো বেশ হচ্ছে। নেক্সট।
পরের প্রার্থী স্ক্রিপ্ট দেখে বলে, মাননীয় স্পিকার, আমার এলাকার মন্ত্রী চৌধুরী সাহেবের লোকেরা দাপট দেখিয়ে আমাকে এলাকায় নিষ্ক্রিয় করে রেখেছে; চৌধুরী সাহেব, এই দিন দিন নয়; আরো দিন আছে।
নীতি নির্ধারক ভাইয়েরা হাততালি দেয়, মাচ বেটার। গত পাঁচ বছর বিরোধী দলের ফ্লপ অভিনয়ের পর; এবার হিট হয়ে যাবে আপনাদের অভিনয়।
পরের প্রার্থী একজন গায়িকা। সে বলে, আমার স্ক্রিপ্ট লাগবে না। এমনিই চেষ্টা করে দেখি। গায়িকা গেয়ে ওঠে,
“এ খাঁচা আমি ভাঙব কেমন করে।
দিকে দিকে বাজল যখন
শেকল ভাঙার গান
আমি তখন চোরের মত
হুজুর হুজুর করায় রত।
চাচা আপন বাঁচা বলে
বাঁচিয়েছি প্রাণ
আসলে ভাই একা একা
বাঁচার নামে আছি মরে
এ খাঁচা আমি ভাঙব কেমন করে।।”
মাকেন্দো গ্রামে ভীষণ বিপর্যয় নেমে আসে। এ গ্রামের কৃষক ও কারিগরেরা শ্রমে-রক্ত-ঘামে যে টাকা-পয়সা…..
এক রাজার রাজ্যে কিছু চাল ব্যবসায়ী একজোট হয়ে ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতার কাছে গিয়ে বললো,…..
স্ত্রী তার নির্বাচন বিশেষজ্ঞ। ঐ একবার মঈন মামাকে দুটি ঘোড়ামন্ত্রে বশ করে ওপাড়ার প্রণব সাধু…..
জোছনা করেছে আড়ি আসে না আমার বাড়ি গলি দিয়ে চলে যায়, গলি দিয়ে চলে যায়…..