রাউন্ড ফিগার

জয়দীপ দে
গল্প
রাউন্ড ফিগার

হাসিটাই সে আজ ধরে রাখতে পারল না। অথচ তার ধারণা ছিল, এতো দিন চাকরি করে আর কিছু শিখুক বা না শিখুক যা শিখেছে তা হলো ‘হাসি’। হাসির একটা আর্ট আছে। এতো সহজে রপ্ত করা যায় না। একবার করে ফেললে সবাই হাতের মুঠোয়। সে সেই শিল্পময় হাসিটাই আয়ত্ত্ব করেছে। এটা সে দেখেছে তার নওগাঁর সে সময়ের ডিসি স্যারের কাছে। তার পর থেকে সে একটু একটু করে কব্জায় আনার চেষ্টা করেছে। এখন সে বেশ পারে। পরিস্থিতি যতই ঘোলাটে হউক বা শান্ত, সে অর্ধনিমীলিত চোখে মৃদূ মৃদূ হাসবে। দেখে মনে হবে অন্যরা যে যাই বলুক, আসল সত্যটা সেই জানে। শেষমেশ সে মতেই রায় দেবে। কখনো সিএ ক্লার্ক, কখনো বা এলজিইডি’র ইঞ্জিনিয়ার, কখনো বা থানার ওসি সে হাসিতে বিপাকে পড়ে গিয়ে চিৎকার করে বলে ওঠে, স্যার আপনি তাইলে সম্মতি দিলেন।

যতক্ষণ পারে সে এই হাসির ওপর থাকে। মুখ খুললেই ঝামেলা। দায় কাঁধে নেয়ার হুজ্জোত। কিন্তু একটা সময় অন্যপক্ষ অসহিষ্ণু হয়ে ওঠে। চাপ দেয় মুখ খোলার জন্য। সে তখন ছোট্ট করে বলে, আচ্ছা দেখি।

এ বলেই সে আবার তার মুখের দরজায় হাসির সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়। লোকজন মনে মনে কি বলে তা তার জানার কথা নয়, তবে একটা বিধ্বস্ত মুখভঙ্গি করে কেটে পড়ে। তখন তার সত্যি সত্যি হাসি পায়। এতোক্ষণের কষ্ট-নির্মিত হাসিটাকে সফল মনে হয়।

তাই সে সকল পরিস্থিতিতে ধৈর্য্য ধারণ করার পথে যায়। কষ্টে-সৃষ্টে হাসিটা ধরে রাখে। সে জানে এই কষ্ট-সৃজিত হাসি তার জন্য চূড়ান্ত বিজয়ের হাসি নিয়ে আসবে। নিজেকে মাঝে মাঝে সাধক পুরুষ সাধক পুরুষ মনে হয়। হাসির সাধক। শেষমেশ সেই হাসিটাই আর ধরে রাখা গেলো না। সকাল থেকে একটার পর একটা উটকো ঝামেলা এসে ভর করছে। যতই সে মাছি তাড়ানোর মতো তাচ্ছ্বিল্যের ভঙ্গিতে এড়িয়ে যায় ততই গুরুতর সমস্যা এসে জুটছে তার কাপলে। সকালে অফিসে এসেই দেখে এক মেয়ে এক গাদা সার্টিফিকেটের ফটোকপি আর ছবি নিয়ে তার অপেক্ষায় দরজার সামনে।

স্যার, এটাস করে দেন না।

কি বললেন?

এটাস স্যার-

আপনি কিসে পড়েন।

ডিগ্রি কলেজে ফিফথ ইয়ারে।

ডিগ্রি কবে থেকে পাঁচ বছরের হলো!

না স্যার মানে ডিগ্রি ফাইনাল ইয়ার-

আর কিছু বলার রুচি হলো না। যে মেয়ে আর কিছু দিন পর একজন গ্র্যাজুয়েট হবে সে কিনা ‘এটেস্ট’ শব্দটা বলতে পারে না। কি ভয়ানক অবস্থা! আর মেয়েটার আক্কেল দেখো, উপজেলায় এখন গ-ায় গ-ায় ফার্স্ট ক্লাস অফিসার, এতোসব রেখে সরাসরি তার কাছে হাজির। আরে গর্দভ ইউএনও মানে বোঝো? উপজেলার মা-বাপ। ভেতর থেকে ইচ্ছে হচ্ছিল কিছু বলার। কিন্তু সামলে নিল সে। লোকজনকে জ্ঞান দিয়ে বেড়ানোর কাজ তার নয়। এই কাজ ডিগ্রি কলেজের মাস্টারদের। ওরাই দেখুক ওটা। আস্তে আস্তে নিজেকে প্রশমিত করে নিল। মুচকি হাসিতে মেয়েটিকে রুমে ডেকে নিল। গট গট করে দস্তখত বসিয়ে দিল অনুলিপিগুলোর বুকে। গ্রামের মেয়েরাও এখন স্টারপ্লাস দেখে দেখে ন্যাকামি শিখেছে। সেই রকমের একটা ন্যাকামিমাখা হাসি দিয়ে মেয়েটা চলে গেলো। তার পর পিয়নকে ডাকল। আচ্ছা করে ধমকে দিল।

এসব উঠকো ঝামেলা যদি ফার্দার আমার রুমে দেখি তাইলে তুমি পানছড়ি যাবা। পানছড়ি কোথায় জানো? এই বড়ো ম্যাপ থেকে খুঁইজ্যা বাইর করো।

সরি স্যার আর হবে না। পিয়নটি মুখ কালো করে চলে যাচ্ছিল।

এই মিয়া তোমারে যাইতে কইছি? তোমারে না একটা কাজ দিলাম।

স্যার কই স্যার-

ওই, কইলাম না ম্যাপ থেকে পানছড়ি খুঁইজ্যা বাইর করতে। উত্তেজনায় উঠে দাঁড়ালো ইউএনও সাহেব। পিয়ন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে চেয়ে রইল।

ইউএনও বসতে না বসতে দরজার পর্দা উড়িয়ে হুড়মুড় করে একদল লোক ঢুকে পড়ল। লোক নয় যেন পাহাড়ি ঢল। পিয়ন মোসাদ্দেক দৌড়ে গেলো এদের আটকাতে। কিন্তু দলপতিকে দেখে তার আর সে সাহস হলো না। ইউএনও সাহেবও যে এ ব্যাপারে কিছু বলবে না, সে নিশ্চিত।

দলপতি চেয়ারে বসেই শুরু করল রাজ্যের হাউকাউ। ইউএনও সাহেব সম্পর্কে স্থানীয় এমপি সাহেবের কি মূল্যায়ন; উপজেলা চেয়ারম্যানের মতো চৌর্যবৃত্তিতে সিদ্ধব্যাক্তি এই ধরাধামে দুটো হয় না; ঢাকায় গেলে সে কোন মিনিস্টারের বাসায় উঠে; কার বিবি কেমন রাধে… সে বিরাট ফিরিস্তি।

ইউএনও নিজেকে সামলে নেয়। যথারীতি শিল্পময় হাসিতে মোহনীয় করে তোলে নিজেকে। দলপতি যাই বলুক না কেন এ নিয়ে তার কোন মন্তব্য নেই। ও বা হু দিয়েই প্রত্যুত্তর। এরা হচ্ছে ব্যাঙ প্রজাতির প্রাণী। এদের জিহ্বা যে কতো লম্বা অনেকেই জানে না। জিহ্বাটা যখন বিস্তৃত হয় তখনি বোঝা যায়। তখন নাগালে যাই পাবে গিলে ফেলবে। এই যে ভালো ভালো কথা, স্তোব বাক্য তার পেছনে একটাই উদ্দেশ্য- তাকে তার জিহ্বার নাগালে নিয়ে আসা। পরিসীমার মধ্যে এসে গেলেই সে তার মুখগহ্বর থেকে গুপ্ত অস্ত্রটি প্রসারিত করবে।

অনেক চেষ্টায় যখন আর দম ধরে রাখতে পারল না, দলপতি তখন একটা চাঁদার রসিদ এগিয়ে দিল।

কত লিখব স্যার।

একটা একশ টাকার নোট এগিয়ে দিয়ে ইউএনও হেসে হেসেই উত্তর দিল, পঞ্চাশ।

মাত্র পঞ্চাশ! সবাই একযোগে হতাশার সুর ছাড়লো।

এসবের জন্য তো কোন ফান্ড নেই, নিজের বেতনের টাকা থেকে দিচ্ছি ভাই-

লিকার চা আর টোস্ট বিস্কুট এলো। মুখ ভারী করে চায়ে বিস্কুট চুবিয়ে খেয়ে নিয়ে উঠে পড়ল সবাই। এমন সময় এলজিইডির একাউনটেন্ট এসে ঢুকলো। দলটি দরজা থেকে বেরুতেই গুঞ্জন হল্লায় রূপ নিল। কে যেন বেশ জোরে বলে গেল, মালাউনগুলা আস্তা পঁচিশ। (কৃপণ না বলে অনেকে পঁচিশ বলে। কেন- তা অজ্ঞাত।)

একাউনটেন্ট নিরঞ্জন ম-ল মুখ কালো করে তাকালো ইউএনও’র দিকে। এই তমসাচ্ছন্ন করাটা পুরাটাই ভান। স্বজাতি ক্ষমতাবান ব্যক্তিকে আস্থায় আনার কৌশল। নিরঞ্জনের সঙ্গে চোখাচোখি হতেই চমকে উঠল ইউএনও, তার এই পোশাকি পরিচয়ের পাশে একটা স্থায়ী পরিচয় আছে। অনেকদিন পর কেউ তা মনে করিয়ে দিল। মনে করিয়ে দিল তার নাম মৃন্ময় ভৌমিক।

ছোটবেলায় মা মিনু বলে ডাকত। দুরন্তপনায় ছিল পাড়ার সবাইকে ছাড়িয়ে। সারা দিন খেলাধুলা মারপিট আর সাইক্লিং নিয়ে ব্যস্ত থাকত। হঠাৎ একদিন তার ওপর নিষেধাজ্ঞা এলো, ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না। এমনকি স্কুলে যাওয়া পর্যন্ত। কি হলো হঠাৎ! আগের রাতে উঠোনে দাঁড়িয়ে তারা দেখেছিল দূরে কৈবল্যধাম মন্দিরে দাউ দাউ করে আগুন চলছে। শিখাগুলো হরদম লাফছে রাতের কালো আকাশটা ছুঁইয়ে ফেলতে। সকালে ঘুম ভাঙলো দরজায় দড়াম দড়াম আওয়াজ শুনে। ভয়ে সবাই সিঁটিয়ে যাচ্ছিল। পরে শোনা গেলো অনাথ দা’র দামড়া গলার চিৎকার, কাকিমা কাকিমা দরজা খুলুন।

দরজা খুলেই তারা হতভম্ব। বোঁচকা বোঁচকি হাতে অনাথ দা, পেছনে একজন কম বয়সী মেয়ে। তার কোলে একটা বাচ্চা। হাতে আরেকটা। অনাথ দা মৃন্ময়ের বাবার অফিসের সুইপার ছিল। ডেপুটেশনে(!) তাদের গরুগুলোর দেখভাল করত। পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরে প্রতি দুপুরে বস্তা ভর্তি ঘাস নিয়ে আসত।

বাবা গম্ভীর মুখে তাদের ভেতরে যেতে বললেন।

মা কিছু শুকনো খাবার এনে দিলেন। কারো খাবারে রুচি। শুকনো খাবার ভিজে যায় চোখের জলে। গত রাতে কৈবল্যধামে আগুন দেয়ার সময় তাদের সুইপার কলোনিটিও ভস্মীভূত হয়ে গেছে। এর আগে চলেছে দেদারে লুটপাট আর অত্যাচার। সম্ভ্রমের ভয়ে মেয়েকে নিয়ে অনাথ দা চলে এসেছে মৃন্ময়দের বাসায়। তার পরিবারের লোকজন এখন ভাটিয়ারির পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

মৃন্ময়ের মাথায় শুধু একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল, এই নিরীহ অনাথ দার বাসায় কেন আগুন দেয়া হলো? কি তার অপরাধ?

অনাথ দা রোবট কিসিমের মানুষ ছিলেন। সেই মানুষটার চোখ চিরে জল আসতে লাগল, খোকাবাবু, হিন্দু হইয়া এই দেশে আছি, এটাই তো বিরাট অপরাধ।

সেদিন থেকে মৃন্ময়ের বুকে একটা ভয়ের বীজ উপ্ত হলো। সে বুঝতে পারলো জন্মসূত্রে সে এক বিরাট অপরাধী এই দেশে। এই অপরাধে যেকোন সময় দলে দলে লোক ট্রাকে করে এসে তাদের বাসায় আগুন লাগিয়ে দিতে পারে। তার ন¤্র মিষ্টি বড়ো বোনটির গায়ে হাত তুলতে পারে। তাকে খুনও করে ফেলতে পারে। এর কোন বিচার হবে না। ফলে কোন একটা ছুঁতো পেলে অনাথ দা’র মতো তাকেও নি:সহায় করে দিতে পারে যে কেউ। অতএব এই দেশে বাঁচতে হলে খুব কৌশলে চলতে হবে। গা-টা হতে হবে শ্যাওলা পড়া পিচ্ছিল রাস্তার মতো। কিছুতেই জড়ানো যাবে না। দিন পনের পর স্কুলে গিয়ে দেখে অন্য সহপাঠীরা কৌতুকের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে।

কি রে, গা ঢাকা দিছিলি এতো দিন?

এই সময় সরাইপাড়ার এক ছেলে পেছন থেকে এসে ধাক্কা মেরে বলল, এই ব্যাটা মালাউন, ইন্ডিয়া গেলি না-

সরাইপাড়ার সেই ষ-া মার্কা ছেলেটার মুখ থেকে প্রথম মালাউন শব্দটা শোনা। প্রথম শুনেই কেমন বমি আসছিল। লজ্জ্বায় নিজেকে মাটিতে পুঁতে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছিল। এখন আর এমনটা হয় না। অনেকটা গা সওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু শব্দটা শ্রুত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে সতর্ক হয়ে যায়। বুঝে এ কোন আসন্ন বিপদের পূর্বাভাস। এই পূর্বাভাস তাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে অনেকবার। শেষবারের কথা স্পষ্ট মানে আছে। টেকনাফের একটা পোলিং সেন্টারে ইমার্জেন্সি কলে গেছে। দেখা গেলো এক মোল্লা টাইপের লোক ব্যালেট পেপার নিয়ে পালাচ্ছে। পুলিশ দৌড়ে গিয়ে তাকে ধরে মারা শুরু করল। এই পুরো ঘটনায় মৃণ¥য়ের বিন্দুমাত্র সংশ্লেষ ছিল না। কিন্তু মার খেতে খেতে মোল্লা বলছিল,

ভাইসব চাই য, মালাউন ম্যাজিস্টেট আঁরে ফুলিশ লাগাই মারের দে-

সচকিত হয়ে ওঠে মৃণ্ময়। দৌড়ে গিয়ে লোকটাকে উদ্ধার করে গাড়িতে ওঠায়। একটা ছোটখাটো সাম্প্রদায়িক অসন্তোষকে অংকুরে ধ্বংস করে দেয়।

স্যার, নিরঞ্জন বাবুর কথায় ধ্যান ভাঙলো মৃন্ময়ের। এই দেশে আর বেশিদিন থাকা যাবে না স্যার।

মৃণ্ময় কপট হাসি দিয়ে মনের ভেতরটা লুকিয়ে নিল।

হাসবেন না স্যার, এখনই ওপারে একটা কিছু করে রাখুন, নইলে বিপদে পড়বেন।

আপনি তো অনেকদিন চাকরি করলেন, কিছু করেছেন কি-

স্যার, লুকাবো না, আপনি আমার জাত ভাই, সল্টলেকে একটা ন শ’ স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাট কিনেছি। লাখ বিশেক টাকা ফিক্সডে রেখেছি।

বাহ, আপনার তো আর চিন্তা নেই।

কি যে বলেন স্যার।

একটা কথা শুনুন নিরঞ্জন বাবু, আমি ভালো ফুটবল খেলতাম। আমি ঠিকই বল নিয়ে সবার আগে ডিবক্সে ঢুকে যেতে জানি। আমাকে নিয়ে টেনশন করবেন না। আমি এ দেশ ছাড়ব না।

স্যার-

কিসের জন্য এসেছেন সেটা বলেন।

স্যার খামটা দিতে বললেন ইঞ্জিনিয়ার স্যার।

কিসের খাম?

গত বছরের হিসেবের।

মৃন্ময় এক ঝটকায় ইউএনও সাহেব হয়ে যায়। এখন আর আবেগের কোন ঠাঁই নেই। সব শালারা হারামী; সুযোগ পেলে ঠকাবে। গত জুলাইতে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে ইঞ্জিনিয়ার সব বিল পাস করিয়ে নিয়েছে। তার পর আর ভাগ দেয়ার নাম নেই। তার অন্য ব্যাচমেটরা এ শুনে তাকে তিরস্কার করেছে। বলেছে, সাইন যখন নিয়ে গেছে আগামী জুনের আগে এ মুখো হবে না, ততদিন তুমি থাকলে। এ ভুল আর করবা না। সাইন করার আগে প্রতিটি পাই পয়সা বুঝে নিবা।’ কিন্তু ইউএনও ছেড়ে দেয়ার পাত্র নয়। সব প্রজেক্ট প্রোপজেল আটকে দেয়ার পর এখন একাউনটেন্ট দিয়ে খাম পাঠিয়েছে। ও কি ইঞ্জিনিয়ারের কাছ থেকে ভিক্ষা চেয়েছে? এবার ক্ষোভের দহনটা চেপে রাখার জন্য মৃদূ হাসল।

আমি তো এভাবে নেব না, কাগজপত্র নিয়ে ইঞ্জিনিয়ার সাহেবকে আসতে বলবেন। যদি না আসতে চান অসুবিধে নেই-। খামটা এখন নিয়ে যান।

নিরঞ্জন মিষ্টি ব্যবহারে দ্রবীভূত হয়ে চলে গেলো।

ভূমি অফিস থেকে তফশিলদার এক গাদা ফাইল নিয়ে এলো। এসিস্টেন্ট কমিশনার ল্যান্ডের পোস্টটা খালি থাকায় সেদিকটা তাকেই দেখতে হয়।  তার পর এলো সিএ ক্লার্ক। যন্ত্রের মতো শ খানেক দস্তখত করতে করতে সে ক্লান্ত। জুমের মডেম লাগিয়ে ল্যাপটপ খুলে বসল। ফেসবুকে দুটো লাইক দিতে না দিতেই মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হাজির। দুস্থ নারীদের সাহায্যের আবেদন নিয়ে একটা মিটিং আছে বারোটায়। এগ্রিকালচার অফিসার একটু পরেই আসবেন। মনে করিয়ে দিতে এসেছেন তিনি। ইউএনও স্যার যেন অন্য কোন প্রোগ্রাম না রাখেন।

মৃন্ময় মিষ্টি হাসি দিয়ে তাকে বিদেয় করলেন। মিনিট পনের অবসর মিলল। অনলাইনে পাওয়া গেলো ভার্সিটির লাইফের বন্ধুদের। ওরা রঙ চঙে গাড়ি বাড়ির ছবি দেয় রেগুলার। কথাবার্তা হয় না। আজ খুব মন টানছে কথা বলতে। গ্রামীণ ফোনের মাইনুলকে টোকা মারতে হড়বড় করে কথার ঢল নামতে লাগলো। মড়ার চাকরির নিকুচি করি বলে চ্যাটে মেতে উঠল মৃন্ময়। এমন সময় দরজায় আবার ধাক্কা।

চিনতে পেরেছেন আমাকে?

জি। মিষ্টি হাসির সাইনবোর্ড মুখে।

স্যারের ফাইলটার কি হলো?

দেখছি।

আর কত দেখবেন, দুই মাস তো হয়ে গেলো।

একটু বুঝতে দেন।

বুঝাবুঝির কি হলো, স্যারের তো ১৮৫ একর আছে, পাশের ভেস্টেড প্রোপারটি থেকে আরো কিছু নিয়ে রাউন্ড ফিগার করে দেন, এইটা আর এমন কি!

আচ্ছা।

কথাটা মনে হয় প্রথম শুনলেন! এই নিয়ে না হয় এক শ’ বার আপনাকে বলেছি-

ইউএনও স্মিত হাসল।

শুনুন আজকের মধ্যে এটার একটা ফয়সলা হবে, নইলে আমি অন্য ব্যবস্থা করব।

এটা তো সম্ভব নয়।

তাহলে ফোনে কথা বলেন।

আগন্তুক কাকে যেন ফোন করল। ‘জি জি স্যার’ ‘কথা বলেন’ বলে ফোনটা বাড়িয়ে দিল ইউএনও’র দিকে।

স্যার, গুড মর্নিং।

তাহলে চিনতে পেরেছো।

কি যে বলেন স্যার।

আমার মিউটেশনটা করবা না।

অবশ্যই করব স্যার। এখনই করে দিচ্ছি। তবে স্যার রাউন্ড ফিগার করতে পারবো না।

তাহলে তোমারে রেখে লাভ কি? পানছড়ি চিনো-

জি স্যার। আমার সামনেই একটা ম্যাপ আছে। গ্রাফোসম্যানের ম্যাপ। নিখুঁত ম্যাপ।

না না তোমারে পানছড়ি পাঠাই ক্যান! তোমারে পাঠামু তোমার দেশে। উষ্ঠা মাইরা ইন্ডিয়া পাঠাইয়া দিমু হালার মালাউনের বাচ্চা। পাওয়ার দেখাও?

মৃন্ময় তার কষ্টসৃজিত হাসিটা আর ধরে রাখতে পারে না। ফোনে হাসি দেখবেই বা কে। তাই ভেতরের বাঘটা ডেকে ওঠে, চোপ শালা।

জয়দীপ দে। জন্ম ১৯৮০ সালে। চট্টগ্রামে। রেলওয়ে হাসপাতালে। বাবা ছিলেন রেলওয়ের ইঞ্জিনিয়ার। সে সূত্রে রেল পাড়ায় বড়ো হওয়া। আদিভিটে সিলেটের গোলপগঞ্জ উপজেলায়। অবশ্য পঞ্চাশের দশকের কোন একসময় তা হাতছাড়া হয়ে যায়। পড়াশোনা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিষয় ছিল চারুকলা। সে সময় সাংস্কৃতিক...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

বালির বেহালা

বালির বেহালা

বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..

তদন্ত

তদন্ত

  এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..