রাখি ভাই

স্বাতী মুখার্জী 
অণুগল্প
Bengali
রাখি ভাই

মিতান যেদিন জানতে পারলো অর্ণব বিবাহিত সেদিন বেশ মন খারাপ হয়ে গেল ওর। একই অফিসে চাকরি করে দুজনে। মিতান তিন মাস হল ঢুকেছে। বাড়িতে ও খুব আদরের মেয়ে । বাবা মা। এক দাদা । বৌদি। আর ভাইপো টুবান। কিন্ত বাড়িতে মিতান প্রায় টুবানের মতোই আদরের। একটু বোকাও। অর্ণব যে জাস্ট মজা করার জন্যেই ওকে একটু ফ্লার্ট করতো বোঝে নি। প্রেমে পড়ল । আর তারপর জানতে পারলো বিবাহিত। তাও নিজের কোনদিন বুদ্ধিতে জোগায় নি। ওদের কলেজ গ্রুপের গেট টুগেদার এ গহনা ওকে বললাম, “ইস ইট সো! তুই শেষ পর্যন্ত প্রেমে পড়লি? তা তার ফ্যামিলিটা কেমন? কে কে আছে খোঁজ নিয়েছিস তো?”

বোকার মতোই হেসে মিতান বলল, “না তো! কেমন যেন লাগে অত কিছু জিজ্ঞেস করতে।”

গহনা কৃত্রিম রাগ দেখিয়ে বলল, “ওরে হাঁদা, আগে সেসব খোঁজ নে। আচ্ছা তো তুই! তারপর সম্পূর্ণ মন মনে মনে নিবেদন করার পরে শুনলি বিবাহিত। কি করবি তখন? প্রেমটা গিলে নিবি না উগরে দিবি? কিছুই পারবি না। গলার কাঁটা হয়ে থেকে যাবে।”

মিতানের বাড়ি ফেরার পথে মনের মধ্যে খুব উথাল পাথাল চলল। অনেকবার ফোনটা বের করল । whatsaapএ মাঝে মাঝে কথা হয়। ঘড়ির কাঁটা এগারোটা পার করেও। যদিও সেসব কথায় সরাসরি ভালোবাসার কোনও উল্লেখ থাকে না। তবু,,,,, বোঝা তো একটা যায়! নিশ্চয়ই বিবাহিত না। বিবাহিত হলে একটা আভাস দিত না এই তিনমাসে?

পরেরদিন অফিসের মাঝে অর্ণব টেবিল ছেড়ে উঠে ক্যাফেটেরিয়াতে যাওয়ার সময় একটু কাছে এসে হেসে বলল,” সব কাজ এখনই করে ফেলতে হবে! এখনও বেশ কয়েক ঘন্টা থাকতে হবে!”

চমকে তাকালো মিতান । তারপর একটু হেসে বলল,” তুমি বুঝি সব কাজ ফেলে রেখে রেখে করো! বাড়িতেও এরকম করে কাজ করো? তোমার মা রাগ করেন না?”

অর্ণব এতদিন পরে একটু গম্ভীর হয়ে উত্তর দিলো,” বাড়ির সব কাজ মা আর বৌ মিলে সামলে দেয়। এদিক থেকে আমি খুব লাকি। “

অর্ণবের উত্তর শুনে মিতানের মুখের সব আলো নিভে গেল ।

অর্ণব খেয়াল করল ,মিতানের মুখ নীচু। কিন্ত ভাবান্তরের কারণ টা বুঝলো না। বলল,”খুব হিংসুটে তো তুমি! আমি লাকি শুনেই চুপসে গেলে!”

মিতান শুকনো হেসে জিজ্ঞেস করল, “বৌদি কি করে? কতদিন বিয়ে হয়েছে? আগে বলো নি তো?”

অর্ণব হেসেই বলল,”দেড় বছর। আপাতত বাড়িতেই আছে। চাকরির প্রিপারেশন নিচ্ছে।”

মিতান একটা সেই “কাঁটা “ই বলা যায়, গিলে নিয়ে বলল,”ভালো।” তারপর কাজে মন দিলো। অর্ণব উঠে গেল । এবং হঠাৎই মনে হল মিতানকে ওর জানানো হয় নি ও ম্যারেড। আজ কিছু যেন বুঝলো। মনটা অর্ণবেরও খারাপ হয়ে গেল একটু।

পরের দিন থেকে কি একটা আশ্চর্য যাদুতে মিতান যেন শামুক হয়ে গেল। অর্ণবকে দেখলেই একটা খোলের মধ্যে ঢুকে পড়ে। শত কথা, হাসি গল্পও ওকে বের করে আনতে পারে না ঐ খোল থেকে।

মিতানের কোনও অভিযোগ নেই। কিন্ত অদ্ভুত একটা লজ্জা ওকে আচ্ছন্ন করে রাখে। বোধহয় সেটা নিজের কাছেই। খুব সুক্ষ একটা অভিমান অর্ণবের ওপর হয়। ইচ্ছে করে ওরকম করেছিলো? কিন্ত অর্ণবের কাজের পারদর্শীতা ওকে মুগ্ধও করে। অর্ণব পুরোটাই ফিল করে। নিজের ভুলটা কোথায় ছিলো বুঝতেও পারে।

সেদিন খুব বৃষ্টি। অফিস থেকে ফেরার পথে মাঝ রাস্তায় আটকে গেল মিতান। একটু পরে অর্ণবের ফোন। “উল্টো ফুটে চলে এসো।”

মিতান তাকালো । একটা কালো গাড়ি দেখতে পেল। অর্ণব নতুন গাড়ি কিনেছে, শুনেছে। ফোনে বলল,”তুমি যাও। আমি চলে যাবো ঠিক।”

একটা ধমক এলো। ” কোনও কথা না বলে চলে এসো।”

রাস্তা পার হয়ে অর্ণবের গাড়ি তে উঠল। একটু ভিজে গেছে। বলল,”তোমার নতুন গাড়ির সিট ভিজে যাবে।”

অর্ণব হাসলো। “হুঁ । আমার বোন দুবাই তে থাকে। এখানে থাকলে এতক্ষণে গালাগালি করে ভূত ভাগিয়ে দিতো। গাড়ি না ঘুরিয়ে ওকে পার হতে বললে। তুমি তো অনেক ছেড়ে দাও আমাকে।”

হাঁ করে তাকিয়ে থাকলো মিতান। “তোমার একটা বোনও আছে!! “

অর্ণব হেসে বলল, “আর একটাও আছে ।”

মিতান জিজ্ঞেস করল, “মানে? দুটো?”

অর্ণব বলল,” হ্যাঁ । এই যেমন দাদাগিরি করে ডেকে নিলাম আরেকটাকে।”

অনুচ্চারিত ভালোলাগা আজ ট্র্যাক চেঞ্জ করলে করুক। এই অফিসেই দু’জনকে এখনও অনেকদিন একসাথে কাজ করতে হবে। এই বরং ভালো হল। সূক্ষ্ম অভিমানটা একটা স্নেহের আধার পেল। হয়তো ভুলতে সুবিধে হবে।

অর্ণব ওর ছোট্ট ভুলটা সংশোধন করার সুযোগ খুঁজছিলো। আজ পেল। মিতান জিজ্ঞেস করল, “রাখি পরাবো তোমাকে? তুমি আমার রাখি ভাই হবে? “

নির্মল হাসলো অর্ণব। “খুব খুব খুশি হবো।”

মিতান তারপর যে হাসিটা হাসল সেটা একদম বাড়িতে ওর দাদার সাথে কথা বলার সময় যে আদুরে হাসিটা হাসে… সেটা।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

দৌড়

দৌড়

একবার এক দৌড় প্রতিযোগিতায় কেনিয়ার হয়ে দৌড়চ্ছিলেন আবেল মুতাই। খুবই ভালো দৌড়াচ্ছিলেন তিনি। সবাইকে পেছনে…..