রাঙিয়ে দেবো

কাজরী মজুমদার
গল্প, পডকাস্ট
Bengali
রাঙিয়ে দেবো

শ্রীলেখার আজ তেমন কোনো কাজ নেই। আসলে সকাল বেলাটা রোজ মার সাথে রান্নাঘরেই কেটে যায় শ্রীলেখার। কাকা, জ্যাঠাদের হাঁড়ি আলাদা হলেও, যৌথ পরিবার না হলেও,  শ্রীলেখারা একই বাড়ির একতলা, দোতলা আর তিনতলায় সবাই একসাথে বসবাস করে। শ্রীলেখারা এক ভাই, এক বোন। শ্রীলেখা ছোট।বাড়িতে দাদা, বৌদি, মা আর শ্রীলেখা থাকে। শুধু নিজের ঘরেই নয়, সারাবাড়িতে সব ভাইদের মধ্যে শ্রীলেখাই একমাত্র মেয়ে। তাই সারাবাড়িতে, শ্রীলেখার আদর একটু বেশিই ছিল। এখন তো তার সাথে সহানুভূতিও জুড়েছে। প্রায় ষোলো মাস হলো শ্রীলেখার স্বামী মারা গেছে। শ্রীলেখা বিয়ের পরপরই জানতে পারে, তার স্বামী প্রচণ্ড পরিমাণে নেশাগ্রস্ত। কিন্তু শ্রীলেখার ভালোবাসায়, তার চেষ্টায় মলয় নেশা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছিল। ডাক্তার জানিয়েছিলেন, বহুবছর ধরে অধিক পরিমাণে প্রতিদিন নেশা করে, মলয়ের শরীরের ভিতর ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল। যথার্থ চিকিৎসা করেও বাঁচানো যায় নি মলয়কে। তারপর থেকে শ্রীলেখা তার বাপের বাড়িতেই থাকে।

অডিও শুনুন এখানে: 
https://www.facebook.com/OngshumaliMagazine/videos/687289811669207/

বাপের বাড়িতে থাকলেও, শ্বশুরবাড়ির সবার সাথেই বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল শ্রীলেখার। তাঁরা ছেলেকে হারিয়েছেন ঠিকই কিন্তু ডাক্তার অনেক আগেই বলেছিলেন,মলয়ের শরীরে কিচ্ছু নেই। ধীরে ধীরে সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মলয়ের পরিণতি তাঁরা আগে থেকেই জানতেন। এতবছরে তাঁরা ছেলের নেশা ছাড়াতে পারেন নি, কিন্তু শ্রীলেখা তার ভালোবাসা দিয়ে ছাড়িয়েছিল। তবে মলয়ের শরীর আর লড়াই করতে পারে নি। শ্রীলেখার শ্বশুরবাড়ির আর বাপের বাড়ির সবাই শ্রীলেখার ভবিষ্যৎ নিয়ে সবসময় চিন্তিত থাকতেন। কিইই বা বয়স আর শুধুমাত্র আড়াইটা বছরই স্বামীর সাথে ঘর করতে পেরেছে, তার মধ্যে তো স্বামীর নেশা, আর চিকিৎসা নিয়েই কেটে গেছে শ্রীলেখার। কিছুই পেলোনা মেয়েটা, সবার মুখে ওই এক কথা।

বিয়ের পর থেকেই শ্রীলেখার দোলের দিনের স্মৃতি খুবই বিবর্ণ। প্রথমবছর মলয়ের বিরানোব্বই বছরের ঠাকুমা দোলের ঠিক আগের দিন মারা যাওয়ায়, সেই বছরের দোল ঠাকুমার কাজের অসুচেই কেটে যায়। ঠাকুমা খুব ভুগছিলেন বলে তাঁর চলে যাওয়ায়, ঠাকুমা মুক্তি পেয়েছেন ভেবে, সবার মধ্যে শোকের তুলনায় শান্তি ছিল। শ্রীলেখা ভেবেছিল পরেরবছর মলয়ের সাথে দোল খুব ভালো করে কাটাবে। কিন্তু পরের বছর দোলের বেশ কদিন আগে থেকেই মলয় হসপিটালে ভর্তি ছিল। হসপিটালের দেয়ালের মধ্যে শ্রীলেখার সেই অপেক্ষারত দোল কখন এলো আর কখন গেল, তা শ্রীলেখা টেরই পেলো না। তারপরেরবছর জানুয়ারি মাসেই মলয় সব লড়াইয়ের অবসান ঘটিয়ে সবাইকে ছেড়ে চলে গেল। সেবছর শ্রীলেখা বুঝলো, দোল আর তার জীবনে কখনো ফিরে আসবে না, কারণ দোলের আনন্দ তার জীবনে অভিশাপ হয়ে গেছে।

আজ আবার সেই দোল পূর্ণিমা। গতকালই জ্যাঠিমা বলে গেছেন, আজ জেঠুর বাড়িতেই সবার খাওয়ার নিমন্ত্রণ। আবার সকালে কাকু এসে বলে গেছেন, রাতে তাদের বাড়িতে সবার খাওয়া দাওয়া। তাই আজ শ্রীলেখাদের বাড়িতে রান্নাঘরের ছুটি।

শ্রীলেখাদের ব্যালকনিতে বসলে, সামনের রাস্তার সবটা দেখা যায়। সকাল প্রায় সাড়ে আটটা থেকে ছোট বাচ্চাদের দোলের হৈ চৈ শুরু হয়ে গেছে। বাড়ির সবাই জানতো শ্রীলেখা রং খেলতে খুব ভালোবাসতো। তাই শ্রীলেখার বৌদি বলেও রেখেছিল, বারোটা নাগাদ ওকে নিয়ে নিচে রং খেলতে যাবে। কিন্তু শ্রীলেখা রং খেলবে না বলে, স্নান করে, পূজো দিয়ে ব্যালকনিতে একটা টুল নিয়ে বসলো। ঘুম থেকে দেরি করে উঠে, শ্রীলেখার বৌদি শ্রীলেখা স্নান করে ফেলেছে শুনে, ব্যালকনিতে সবে বলতেই যাচ্ছিল, কিন্তু শ্রীলেখার দাদা বাধা দেয়, বলে ওর যখন ইচ্ছা করছে না, ওকে যেন ওর বৌদি জোর না করে।

এসব হতে হতেই ওর দাদা বৌদি দেখলো, কাকে দেখে যেন শ্রীলেখা উঠে দাঁড়ালো। শ্রীলেখার দাদা বৌদি আস্তে করে এগিয়ে উঁকি দিয়ে দেখলো, নিচে শ্রীলেখার দাদার বন্ধু কুণাল দাঁড়িয়ে, জেঠুর ছেলের সাথে কথা বলছে। আসলে কুণাল, শ্রীলেখার দাদা আর জেঠুর ছেলে একসময় একসাথে পড়তো। শ্রীলেখার দাদারা কিছু না বলেই ঘরে চলে যায়।

দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কুণালকে দেখে, শ্রীলেখার মনের ভিতরে কেমন মোচড় দিয়ে ওঠে। বিয়ের আগেও শ্রীলেখা স্বপ্ন দেখতো, বিয়ে করলে ও কুণালকেই বিয়ে করবে। লুকিয়ে কুণালকে দেখা, ইচ্ছা করে কোনোকিছুর ছুতো ধরে কুণালের সাথে কথা বলা, এককালে এসব ছিল শ্রীলেখার পাগলামী। যখন শ্রীলেখার বিয়ে ঠিক হলো, তখনো কাউকে কুণালের প্রতি, তার এই চাপা ভালোবাসার কথা বলতে পারে নি শ্রীলেখা। কি বলবেই বা সে! এই ভালোবাসা যে শুধু একতরফা, লুকিয়ে থাকা অনুভূতি। শ্রীলেখা কুণালকেও কখনো বুঝাতে পারেনি, তার ভালোবাসা। অবশ্য সেভাবে চেষ্টাও করে নি। কারণ শ্রীলেখার দাদার সাথে কুণালের এবং শ্রীলেখার পরিবারের সবার যা ভালো সম্পর্ক ছিল, তা শ্রীলেখা কখনো নষ্ট হতে দিতে চায় নি।

নিচের দিকে তাকিয়ে অতীতের কথা ভাবতে ভাবতে শ্রীলেখা খেয়ালই করেনি, কখন কুণাল উপরে এসে গেছে। রাস্তায় বাচ্চাদের দোলের উন্মাদনার আওয়াজে, শ্রীলেখার অতীত তখন আবছা হলো। কিছুমুহূর্ত পরেই বৌদি এসে শ্রীলেখাকেও ওদের সাথে নীচে রং খেলতে যেতে বলায়, শ্রীলেখা যাবে না বলে। কুণাল এসেছে বলে, বৌদি শ্রীলেখাকে একবার কুণালের সাথে দেখা করে আসতে বলে। শ্রীলেখার সঙ্গে সঙ্গে ওই ঘরে যাওয়ার তারণা দেখে মনে হবে, শ্রীলেখা যেন এই ডাকের অপেক্ষায়ই ছিল। ঘরে ঢুকেই শ্রীলেখা কুণালের দিকে তাকিয়ে যেন চোখ ফেরাতে পারছিল না। কুণাল ফোনে কাউকে মেসেজ দিচ্ছিল। তখন শ্রীলেখার দাদা বৌদিরা দোল খেলতে যাবে বলে, জামা কাপড় বদলাতে গিয়েছিল। শ্রীলেখার মা স্নানে গিয়েছিলেন। শ্রীলেখা ঘরের দরজার কাছেই দাঁড়িয়েছিল। বয়সের সাথে সাথে কুণালের ব্যক্তিত্বের প্রকাশ যেন আরো বেড়েছে। হালকা রঙের একটা পাঞ্জাবি পরে, গালে হালকা অগোছালো দাড়ি। চোখে কালো ফ্রেমের আধুনিক চশমাটা যেন কুণালের গাম্ভীর্যকে বাড়িয়ে তুলেছে। মেসেজ লিখেই কুণাল খেয়াল করলো দরজার কাছে শ্রীলেখা দাঁড়িয়ে আছে…

-কোথায় ছিলি?

-ব্যালকনিতে

-কেমন আছিস?

-আ..ছি

-আজকাল বুঝি, ঘরে শাড়ি পরিস?

-না! আজ পূজো করবো বলে…

-কাকিমা কোথায় রে?

-মা স্নানে গেছে,কেন?

-কিছু না

কুণাল শুনেই তাড়াতাড়ি সিগারেটটা ধরানোতে শ্রীলেখার বুকের ভিতরটা কেমন করে উঠলো। নেশার জন্য একটা মানুষকে, ও তিলে তিলে নিজের সামনে মরতে দেখেছে। যদিও এই নেশা আর ওই নেশার মধ্যে অনেক তফাৎ, তবুও শ্রীলেখা নিজের প্রতিক্রিয়াটা চেপে রাখতে পারে নি…..

-এতো বছর ধরে খেয়েও মন ভরে নি!

-আজকাল কম খাই রে, আগে ষোলোটা ছিল, এখন অনেক কমিয়ে দিয়েছি।ৱ

ইতিমধ্যে শ্রীলেখার দাদারা এসে হাজির….

-চল কুণাল!

-কাকিমার সাথে দেখা হলো না তো!

-আরে, বাড়ি যাওয়ার আগে মার সাথে একবার দেখা করে যাস।

দাদাদের হাতে আবির ছিল। দাদা আর বৌদি, শ্রীলেখাকে একটা আবিরের টিপের ছোঁয়া দিয়ে দিল। কুণাল একটা বই শ্রীলেখার হাতে দিয়ে বলল, এই বইটা যেন ও ওর মাকে দিয়ে দেয়, তবে দেওয়ার আগে যেন ও একবার পড়ে। একথা বলেই তিনজন নীচে চলে গেল। কুণালের ব্যবহারে শ্রীলেখা খুব অবাক হলো। কুণাল শ্রীলেখাকে একবারও শুভ দোলের কোনো শুভেচ্ছা জানাল না বা একটুও আবিরের ছোঁয়া ছোঁয়ালোনা। অভিমানে, কষ্টে শ্রীলেখার অস্থির অস্থির লাগছিল। শ্রীলেখা ওখানেই বসে পড়লো। শ্রীলেখার চোখ ছল ছল করছিল, ভাবছিল, কত বোকা ও। কুণালের প্রতি ওর কি অনুভূতি আর কুণাল ওকে কি ভাবে!

ও খুব ভালোই বুঝলো, কুণালের কাছেও ওর পরিচয় শুধু একজন বিধবা ছাড়া আর কিছু না।

কুণালের দেওয়া বইটা চোখের সামনেই ছিল, শ্রীলেখা বইটা নিয়ে, কার লেখা বই দেখতে গিয়ে দেখলো, বইয়ের পাতার ভাঁজে একটা খাম। শ্রীলেখা তাড়াতাড়ি খামটা খুললো, দেখলো একটা চিঠি আর একটা ছোট প্যাকেট পেপার দিয়ে পুরো আঠা দিয়ে মোড়া।

শ্রীলেখা তাড়াতাড়ি চিঠিটা খুললো…

কাকিমা,

সাগরদের (শ্রীলেখার দাদা) সাথে কথা হয়েছিল, তোমাকে আমি এসব কথা নিজের মুখেই বলবো, কিন্তু কেন জানিনা, এত বয়স হয়েও তোমার সামনে বসে এই কথাগুলো বলতে পারলাম না,তাই চিঠির সাহায্য নিতে হলো।

তোমরা আমায় অনেক বছর ধরে চেনো। একদম কম বয়সে, নিজে কোনো দায়িত্ব নেওয়া কাকে বলে অতটা বুঝতাম না। তবে বয়সের সাথে সাথে চাকরি, ঘরের দায়িত্ব এখন সবই পালন করছি।

শ্রীলেখার যখন বিয়ে হয় তখন বুঝি নি, তবে পরে অনুভব করেছি, বহুবছর ধরেই ও আমার মনের কোনো কোণায় বাসা বেঁধে ছিল। কিন্তু তখন ও বিবাহিত, তাই সেই অনুভূতিকে, শ্রীলেখার মঙ্গলকামনায়, ভালোলাগার চাদর দিয়ে ঢেকে দিয়েছিলাম। তারপরে ওর জীবনে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটলো, তখনো আমি কিছু বলিনি। একদিন কথায় কথায়, সাগর মজার ছলে ওর চাপা কষ্টে বলে ফেলে। বলে, শ্রীলেখার বিয়ের আগে আমার প্রতি ওর যে ফিলিংস ছিল, সেটা আমি ঠিক সময়ে বুঝলে, এতদিনে নাকি ও আমার শালা হতো, আর আজ ওর বোনের জীবনটা এত কষ্টের হতো না। ও খুব চাপা তাই সেদিন ওর ওই স্বীকারোক্তি শুনে আমি খুব অবাক হয়েছিলাম। তারপরে ওদের স্বামী স্ত্রীর সাথে আমার এসব নিয়ে অনেক কথা হয়। কিন্তু তোমাদের এত বড় পরিবারের সবাই, শ্রীলেখার শ্বশুরবাড়ির সবাই ওকে এত ভালোবাসে, যে আমি কিভাবে কি বলবো, ভেবে পাচ্ছিলাম না।

পরে আমার মনে হয়েছে, তোমাদের সাথে কথা বলার আজ যথার্থ দিন। তোমাদের সবার অনুমতি থাকলে, শ্রীলেখার কোনো আপত্তি না থাকলে, আমি শ্রীলেখাকে আমার জীবনসঙ্গিনী রূপে পেতে চাই। ভালো করে ভেবে দেখো। সাগরদের অনুমতি আমি পেয়েছি বলে, আজ এতটা সাহস করতে পেরেছি।

চিঠির সাথে একটা ছোট্ট প্যাকেট আছে। তাতে আবির আছে। তোমাদের অনুমতি পেলে, আজ আমি শ্রীলেখাকে আবির লাগাতে চাই।

– কুণাল

শ্রীলেখা চিঠি পড়তে পড়তে সমানে কেঁদে যাচ্ছে।

শ্রীলেখার মা সব সেরে, এঘরে আসার পর শ্রীলেখা চোখ মুছতে মুছতে মাকে চিঠিটা পড়তে দেয়।

প্রায় দু’ঘণ্টা পর সাগররা তিনজন দোল খেলে ঘরে ফেরে। উপরে উঠে দেখে, মেইন দরজা লক করা। কিছু বোঝার আগেই, কাকুর ছেলে এসে বলে, ওদের জেঠু নিচে যেতে বলেছে। সাগরদের তখন, চেহারা আর জামা কাপড়ের যা ছিরি, তা কারুর ঘরে যাওয়ার মতন নয়,কিন্তু একে তো জেঠু ডেকেছে, তারওপর দরজার চাবিও নেই, তাই বাধ্য হয়ে ওরা নিচে গেল। নীচে জেঠুর ঘরে ঢুকে ওরা তো অবাক! কাকু-কাকিমা, জেঠু-জেঠিমা, সব ভাইরা আর শ্রীলেখার মা সবাই ওখানে বসে আছেন। শুধু শ্রীলেখা ছিল না। তিনটে প্লাস্টিকের চেয়ারে ওদের বসতে দিয়ে, জেঠু চিঠিটা হাতে নিয়ে কুণালকে বললেন…

-এসব কি কুণাল!

-(এতোজনের মধ্যে অপ্রস্তুত হয় কুণাল) আমার তো যা বলার ছিল, তা চিঠিতে বলেই দিয়েছি জেঠু!

-তুমি কি লিখেছো, তা তুমি বোঝো! আমাদের মেয়ের একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। কিন্তু তুমি এখনো বিয়ে করো নি। তোমার বাড়ির লোকেরা কি বলবেন আর তাছাড়া এরপর বিয়ে হলে, নানা লোক নানা কথা বলবে, তখন?

-প্রথম কথা হলো আমি আমার বাড়ির সবাইকে জানিয়েই এই প্রস্তাব দিয়েছি আর লোকের কথায় ভয় পেলে কি, এই প্রস্তাব দিতাম আমি? এখন আর খামখেয়ালি করার বয়স নেই জেঠু। অতকিছু বলে বোঝাতে পারবো না, তবে শ্রীলেখার সাথে বাকি জীবনটা থাকতে চাই।

-তোমার চিঠি পড়ে ওর মা, আমাদের কাছে এসেছিল, তারপর আমি ওর শ্বশুরবাড়িতে সব জানিয়েছি। ওনারা বলেছেন আমরা আমাদের মেয়ের জন্য যে সিদ্ধান্ত নেবো তাতে ওনাদের পূর্ণ সমর্থন আছে। আমাদেরও সম্মতি আছে, তবে আগে তুমি আর মাম (শ্রীলেখাকে জেঠু এই নামে ডাকেন) একটু কথা বলে নাও, তারপর আমাদের জানাও। মাম ওইঘরেই আছে, তুমি যাও।

পাশের ঘরে বসে শ্রীলেখা সবই শুনছিল। কুণাল ভিতরের ঘরে ঢোকামাত্রই, শ্রীলেখা দাঁড়িয়ে পড়লো। কুণাল ভিতরে গিয়ে শ্রীলেখাকে দেখে,

শ্রীলেখার চোখে চোখ রেখে, কিছু যেন বলতে চাইল, কিন্তু শ্রীলেখা তখন নিজের দৃষ্টি সরিয়ে, চেষ্টা করছিল তার চোখের জল আড়াল করতে। কুণাল শ্রীলেখার সামনে গিয়ে…

-চিঠিটা পড়েছিলি?

শ্রীলেখা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো

– আমায় তোর জীবনে, পাশে থাকতে দিবি শ্রী?

শ্রীলেখা আর লুকোতে পারেনি তার চোখের জল।

কুণাল শ্রীলেখার চোখের জল মুছতে মুছতে

-আমার একটা ভুলে তুই এত কষ্ট পেলি। তখন আমি তোর ভালোবাসা বুঝি নি রে শ্রী! এবার আমায় আমার সব ভুল শুধরে নেওয়ার, একবার সুযোগ দে। সারাজীবনের জন্য তোকে আবিরের রঙে রাঙিয়ে দিতে চাই।

শ্রীলেখা কাঁদতে কাঁদতে কুণালের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো। এ কান্না ছিল অভিমানে, স্বীকারোক্তি। কুণালের স্পর্শে শ্রীলেখা শান্ত হয়ে, কিছুক্ষণের মধ্যেই দুজনে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। বাড়িয়ে কুণাল জেঠুকে বলল…

-শ্রীলেখাকে রাঙিয়ে দেওয়ার অনুমতি পেয়েছি। জেঠু, আমি ওকে একটু আবির লাগাতে চাই।

-না! সে অনুমতি আমি দেবো না।

কুণাল আর শ্রীলেখা খুব অবাক হয়ে যায়। কারণ আবির লাগানোর মধ্যে খারাপ কি আছে! জেঠু জেঠিমাকে ইশারা করে কি যেন আনতে বলেন।

সবাই মুখ টিপে হাসছিল। জেঠু শ্রীলেখাকে কুণালের পাশে এসে দাঁড়াতে বললেন। শ্রীলেখা কুণালের পাশে দাঁড়ানোতে, জেঠিমা একটা থালায় প্রদীপ জ্বালিয়ে আর একটা সিঁদুরের খোলা কৌটো নিয়ে এসে বলে উঠলেন…

-নাও দেখি! আইনত নিয়মকানুন পরে হবে, আবিরও না হয় পরে লাগাবে। আজ দোলের দিনে আগে মায়ের পায়ের সিঁদুর দিয়ে আমাদের মেয়েটার সিঁথি রাঙিয়ে দাও।

শ্রীলেখার মা পাশে গিয়ে মেয়ের মাথায় আঁচল তুলে ঘোমটা দিয়ে দেন। কুণাল দু’আঙুলে সিঁদুর নিয়ে শ্রীলেখার সিঁথিতে ছুঁইয়ে, শ্রীলেখার উদ্দেশ্যে বলে-

“শুভ দোল পূর্ণিমা শ্রী। জেঠুদের সাথে সাথে এই দোলপূর্ণিমাও, আমাদের এক হওয়ার সাক্ষী হয়ে রইলো।”

কাজরী মজুমদার

কাজরী মজুমদার। লেখক। জন্ম ও ভিটেমাটি ভারতের কলকাতায়। বর্তমানে স্বামীর কর্মস্থলের সূত্রে দিল্লিতে বসবাস। গল্প, উপন্যাস, কবিতা ও সামাজিক বিষয়ে সরল ভাষায় লেখালিখি করেন। তিনি বিশেষত সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে লিখতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এছাড়া বিভিন্ন ম্যাগাজিন আর পত্রিকায় নিয়মিত লেখালিখি করে...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

বালির বেহালা

বালির বেহালা

বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..

তদন্ত

তদন্ত

  এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..