প্রক্সি
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
রাজু ছিল কুড়িগ্রামের এক অজো পাড়াগায়ের ছেলে, গ্রামের স্কুলে ক্লাস ফোরের ছাত্র ন’বছর বয়স তার। বাবা রাজনীতি করেন তিনি কম্যুনিস্ট পার্টির নেতা মা গৃহিনী। বাবা মাসে দু’মাসে ঢাকায় আসেন বাজনৈতিক কারণে। একদিন রাজু বাবার ঢাকায় আসার কথা শুনে বাবাকে বলল বাবা আমারে ঢাকায় নিয়ে যাইবা? আমিও ঢাকা শহর দেখতে যামু নিয়ে যাইবা বাবা আমারে?
ছেলের আগ্রহ দেখে বাবা না করতে পারলেন না, বললেন যাবি? ঠিক আছে যা তৈরী হয়ে নে। বাবার কথাশুনে ঢাকায় আসার খুশীতে রাজুর চঞ্চলতা বেড়ে গেল। এক দৌড়ে রান্নাঘরে গিয়ে অস্থিরতার সাথে মাকে বলল- মা আমারে একটা ভালো শার্ট দিবা আমি বাবার সাথে ঢাকা শহর দেখতে যামু।
ছেলের কথা শুনে মা বললেন তোর বাবা কি বলছে তোরে ঢাকা শহর লইয়া যাইবো? মায়ের কথার উত্তরে রাজু বলল হ মা, বাবা বললতো আমারে তৈরী হইতে আমারে একটা ভালো শার্ট দেওনা মা। ছেলের অস্থিরতা দেখে মা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে রাজুর বাবাকে বললেন- এই রাজুর বাবা তুমি কী রাজুরে ঢাকা শহরে লইতে চাইছো?
বাজুর বাবা পার্টি করেন বলে কখনই আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেন না, শুদ্ধ ভাষায় বললেন- হ্যাঁ যেতে যখন চাচ্ছে দাও তৈরী করে। রাজুর মা শার্ট প্যান্ট জুতা পরিয়ে তৈরী করে দিলেন রাজুকে। ঢাকায় এসে রাজুর বাবা রাজুকে নিয়ে উঠলেন মতিঝিলের এক ছোট্ট হোটেলে। যেহেতু ঢাকা শহরে তাদের কোনো আত্মীয়-স্বজন নেই তাই হোটেলই একমাত্র ভরসা।
পরদিন রাজুর বাবা নিজের প্রয়োজনীয় কাজ করতে ছেলেকে সাথে নিয়েই বেরিয়ে পড়লেন। কখনো বাস কখনোবা রিকসায় ছেলেকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় যেতে লাগলেন পার্টির কাজে। কাজ শেষে রাতের খাওয়া সেরে হোটেলে আসার পর রাজু বাবাকে বলল -বাবা আমারে চিরিয়া খানায় নিবা না? ছেলের কথার উত্তরে বাবা বললেন- নেব তো বাবা, আজ আমার কাজগুলো সারলাম কাল তোকে নিয়ে সারাদিন ঘুরে তারপর আমরা রাতের গাড়িতে বাড়ি চলে যাব, এখন ঘুমিয়ে পড় সকালে উঠতে হবে। ঠিক আছে বাবা, বলে বাজু শুয়ে পড়ল। রাজু চোখ বন্ধ করে পিটপট করতে লাগল আর মনে মনে ভাবতে শুরু করল কখন সকাল হবে বাবার সাথে চিরিয়াখানা দেখতে যাব। সেই খুশীতে যেন রাজুর আর ঘুম আসছেনা, এক সময়ে চোখ ফাঁক করে বাবাকে লিখতে দেখে বাজু আবার বলল- বাবা তুমি ঘুমাইবা না? বাবা বললেন-আমি ঘুমাবো তো বাবা, তুমি ঘুমাও সকালে উঠতে হবে। বাবার কথা শুনে রাজু ঘুমানোর চেষ্টা করল এক সময়ে ঘুমিয়েও পড়ল।
পরদিন সকালে রাজুর বাবা হোটেলের বিল পরিশোধ করে হোটেল ছাড়ল, হ্যন্ডব্যাগ হাতে নিয়ে রাজুকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। নাস্তা খেয়ে শাহাবাগ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়, চারুকলা, শিশুপার্ক এবং সংসদ ভবন ঘুরে গাবতলীতে এসে রাত নয়টার গাড়ির টিকেট কেটে বাবা বাজুকে নিয়ে দুপুরের খাবার খেতে হোটেলে এলেন। রাজু বাাবকে আবার বলল- বাবা চিরিয়া খানা দেখাইবানা?
বাবা বললেন দেখাবো তো বাবা, খাওয়া শেষে চিরিয়খানা দেখে এসে তারপর আমরা বাড়িতে যাওয়ার গাড়িতে উঠবো। বাজুর বাবা খাওয়া শেষে খাবারের বিল দিয়ে রাজুকে নিয়ে বাসে উঠে চিরিয়া খানায় এলেন। টিকেট কেটে ভিতরে প্রবেশ করে বাঘ ভল্লুক বানর শিম্পাঞ্জি জলহস্তি কুমির হরিণ আরো অনেক জীবজন্তু দেখিয়ে সন্ধ্যায় আবার গাবতলীতে এলেন। সেখানকার এক খাবারের হোটেলে রাতের খাওয়া শেষে গাড়িতে উঠলেন। ড্রাইভার রাত নটায় গাড়ি ছাড়লো, ভোর সাড়ে চারটায় রাজুর বাবা ছেলেকে নিয়ে কুড়িগ্রামে নামলেন।
পরদিন স্কুলে এসে রাজু বন্ধুদের সাথে ঢাকাশহর দেখার গল্প করল। রাজুর গল্প শেষে তাদের মধ্যে সাজু নামের এক বন্ধু বলল ইস তোর কী মজারে তুই ঢাকা শহর দেখে এলি। সাজুর কথার উত্তরে রাজু বলল- ঢাকাশহর আমার অনেক ভালো লাগছে, আমি বাবাকে বলব বড় হলে ঢাকায় পড়ব। সেইথেকে রাজুর মনে স্বপ্ন তৈরী হলো বড় হলে ঢাকায় পড়বে, বিশেষ করে চিরিয়াখানার জীবজন্তু আর চারুকলার চিত্র প্রদর্শনির ছবিগুলোর কথা বার বার মনে পড়তে লাগলো রাজুর। ছবি আঁকা রাজুর ভীষণ পছন্দ হলেও তা নিয়ে যে পড়াশুনা করা যায় এই অল্প বয়সের বাজরু তা একেবারেই অজানা। ঢাকায় এত সুন্দর কিছু দেখে তার একটাই স্বপ্ন বড় হলে সে ঢাকায় পড়বে। সেই থেকে রাজু পড়াশুনাব প্রতি ভীষণ মনোযোগী হতে উঠতে লাগলো। রাজু প্রাইমারী স্কুল থেকে সেকেন্ডারি স্কুলে পদার্পন করলো। একদিন স্কুল থেকে এসে বাবাকে বলল তার স্বপ্নের কথা বড় হলে সে ঢাকায় পড়বে। ছেলের এমন প্রতিভার কথা জেনে বাবাও বললেন- ঠিক আছে বাবা মনোযোগ দিয়ে পড়, তাহলে আমি তোমাকে ঢাকায় পড়াব। বাবার কথায় ভরসা পেয়ে শুরুহলো রাজুর স্বপ্নের পথ চলা।
রাজু গ্রামের স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করে মফস্বল শহরের কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করল। রাজু সিদ্ধান্ত নিলো চারুকলায় আর্ট নিয়ে পড়াশুনা করবে। রাজু ঢাকায় এসে চারুকলায় ভর্তি পরীক্ষা দিলো, একই সাথে রাজশাহী চারুকলায়ও পরীক্ষা দিলো। কিন্তু দুঃখের বিষয় রাজু ঢাকা চারুকলায় চাঞ্চ না পেয়ে রাজশাহী চারুকলায় চাঞ্চ পেল। রাজু রাজশাহী চারুকলায় ভর্তি হয়ে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো পড়াশুনা শেষকরে ঢাকায় চাকরি করবো। কয়েকদিন পর ক্লাস শুরু হলো রাজু তার স্বপ্ন পুরনের জন্য পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। আস্তে আস্তে রাজুর কথার আঞ্চলিক ভাব কেটেগিয়ে শহরের ভাব এলো। কয়েকমাস ক্লাস করার পর সামনে দূর্গা পূজার ছুটি হলো, রাজু তাদের বাড়িতে চলে এলো ছুটি কাটাতে। একদিন বিকেলে রাজু তার বাল্যবন্ধু সাজুর বাড়িতে গেল তার সাথে দেখা করতে। সাজু মফস্বল শহরের কলেজে বি এ ক্লাসের ছাত্র। সেদিন বন্ধুর বাড়ি থেকে আসার সময় পাশের এক বাড়ির দরজায় এক মেয়েকে চোখে পড়ল রাজুর। মেয়েটি তাদের বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বয়েছে রাজুর দিকে। রাজু বাড়িতে আসার পরেও মেয়েটির তাকিয়ে দেখার দৃশ্য বার বার মনে দাগ কাটতে লাগল। মেয়েটি দেখতে শ্যামলা খাট এবং মোটা হলেও চোখদুটো বেশ আকর্শনীয়।
পরদিন বিকেলে রাজু আবার গেল তার বন্ধু সাজুর বাসায়। মেয়েটিকে দরজায় দেখতে না পেয়ে বন্ধু সাজুকে বলল তোদের বাড়িতে আসার পথে তিন চারটে বাড়ির আগে বড় গেটওয়ালা একটা বাড়ি আছে, ওই বাড়িতে একটা মেয়ে আছে ওই মেয়েটা কেরে?
ওটা আফসার চাচার মেয়ে,ওর নাম হলো রিনা।
রাজু আবার বলল কী করে তার বাবা?
ওর বাবা একজন ব্যবসায়ী, এই এলাকার নামকরা লোক গোড়াউন আছে ওদের, এছাড়া বাসও আছে কয়েকটা ঢাকা টু কুড়িগ্রাাম লাইনে চলে। এলাকার সবচেয়ে টাকাওয়ালা মানুষ তাই সবাই ভয়ও পায় যেমন মানেও তেমন, থানা পুলিশ সব তার হাতে।
রাজু আবার জিঙ্গেস করলো তোদের কিছু হয়?
না না আমাদের কিছু হয়না এমনি চাচা করে ডাকি ওর বাবাকে, তো তুই কোথায় দেখলি?
কালকে তোদের বাড়ি থেকে যাওয়ার পথে দেখেছি দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলো।
ও আচ্ছা, বিকেল হলে ও প্রতিদিন বাইরে বের হয়। সাজুর কথা শুনে রাজু তার হাতঘড়িতে সময় দেখে পূর্বের দিনের সময়ে বের হলো বাড়িতে যাওয়ার জন্য। সাথে সাজুও বের হলো বন্ধুকে এগিয়ে দেওয়ার জন্য। রিনা তাদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো, রাজু এবং সাজু রিনাদের বাড়ির সামনের রাস্তায় আসা মাত্রই রিনা সাজুকে বলল সাজু ভাই কেমন আছেন?
পরক্ষণেই রিনার কথার উত্তরে সাজু দাঁড়িয়ে বললো, ভালো আছি, তুমি?
আমিও ভালো আছি, বলে রিনা একপা দু’পা করে এগিয়ে এলো সাজু এবং রাজুর দিকে। সাজু পরিচয় করিয়ে দিলো রিনাকে রাজুর সাথে। রাজু রিনার সাথে পরিচয় পর্ব শেষে বাড়িতে চলে যাওয়ার পর সাজু এবং রিনা তারাও যে যার বাড়িতে চলে গেলো। পরদিন বিকেলে রিনা ঠিক একই সময়ে তাদের বাড়ির দরজায় দাঁড়ালেও রাজুর সাথে আর দেখা হলো না, কিন্তু উদ্দেশ্য ছিলো রাজুর সাথে কথা বলা। সেদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত রিনা দরজায় দাঁড়িয়ে থেকে শেষমেষ বাড়ির ভেতরে চলে যায়। পরদিন বিকেলে আবার চললো রিনার প্রস্ততি দরজায় দাঁড়ানোর। রিনা অন্যান্য দিনের তুলনায় সেদিন একটু বেশী পরিপাটি হয়ে দরজায় দাঁড়ালো। প্রায় আধঘন্টা পর রাজুকে আসতে দেখে তার বুকের ভেতওে তরঙ্গ তৈরী হলো, মনে মনে প্রস্ততি নিলো রাজু বাড়ির সামনে এলেই কথা বলবে। এক পর্যায়ে রাজু তাদের বাড়ির সামনের রাস্তায় আসা মাত্রই রিনা জিঙ্গেস করলো কেমন আছেন?
উত্তরে রাজু দাঁড়িয়ে অনতি বিলম্বে বললো- জ্বি ভালো আছি, আপনি ভালো আছেন?
হ্যাঁ ভালো আছি।
বেশ, তবে ভালো থাকুন। বলেই রাজু হাঁটতে শুরু করলো সাজুর বাড়িতে যাওয়ার জন্য। এভাবেই প্রতিদিন যাওয়া আসার মাঝে রাজু এবং রিনা তারা এক অপরকে ভালো মন্দ জিঙ্গেস করতে লাগলো। শুধু তাই নয়, প্রায় চার পাঁচদিনের মধ্যেই শুরু হলো তাদের একে অপরকে ভালোলাগা এবং ভালোলাগা থেকে ভালোবাসা।
এভাবে কয়েকদিন চলতে চলতে একদিন রাজু বন্ধু সাজুর বাড়িতে যাওয়ার পথে রিনার বাবাকে দেখল তাদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে। সেদিন রিনাকে বাড়ির সামনে দেখতে না পেয়ে রাজু সাজুকে নিয়ে বেরিয়ে এলো বাইরে ঘোরার উদ্দেশ্যে, এবং যাওয়ার পথে আবারো দেখা হলো রিনার বাবার সাথে। সাজু রিনার বাাবকে ছালাম দিয়ে সামনে দাঁড়াল পাশে রাজুও। রিনার বাবা জিঙ্গেস করলেন সাজুকে ও কে বাবা ? ওকে তো চিনলাম না।
সাজু বলল- চাচা ও আমার স্কুল জীবনের বন্ধু ওর নাম রাজু। এমন সময় রাজু ছালাম দিলো রিনার বাবাকে।
রিনার বাবা ছালাম নিয়ে বললেন কী করো বাবা তুমি?
আমি রাজশাহীতে চারুকলায় পড়ি আঙ্কেল।
রিনার বাবা উৎসাহিত হয়ে আবার জিঙ্গেস করলেন- তোমার বাবার নাম কী বাবা?
রাজু তার বাবার নাম বলা মাত্রই রিনার বাবা চিনে ফেললেন।
কথা শেষে রাজু এবং সাজু স্কুলের মাঠে গিয়ে বসল, সন্ধ্যার আজান শোনা মাত্রই তারা দু’জন দু’জনের কাছে বিদায় নিয়ে যে যার বাড়িতে চলে গেল।
এদিকে রিনার বাবা রিনার মায়ের সাথে আলোচনা করলেন , পাশের গ্রামে একটা ছেলে আছে ভালো ছাত্র রাজশাহীতে পড়াশুনা করে, ছেলেটি দেখতে যেমন ফর্সা তেমন লম্বা বেশ নরম স্বভাবের।
রিনার বাবার কথা শুনে তার মা বললেন- বাড়ি কই ছেলেটির?
আমাদের পাশের গ্রামে, এমন ভলো ছেলেকে হাত ছাড়া করা যাবে না কালকে খোঁজ নিয়ে আমাদের রিনার জন্য প্রস্তাব পাঠাব । আমাদের একটাই মেয়ে ওর শশুরবাড়ি কাছাকাছি হলে ভালেইা হবে।
রিনার বাবার কথা শুনে তার মা বললেন ঠিক আছে খোঁজ নাও, যদি ভালো হয় এবং ছেলের বাবা-মা যদি রাজি থাকেন তাহলে আমরা তাড়াতাড়ি বিয়েটা দেব।
পরদিন রিনার বাবা খোজ নিয়ে জানতে পারলেন রাজুর পরিবারের কথা। রাজুর বাবার পরিচিতি নাজার পর অনতিবিলম্বে রিনার বাবা ঘটক পাঠালেন রাজুর বাবার কাছে মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। বাজুর বয়স কম, তাই তার বাবার মনে আপত্তি থাকলেও ঘটককে বললেন- এমন ধনী মানুষ আমার ঘরে আত্মীয়তা করতে চান আমি কী না করতে পারি? এতো আমার ছেলের পরম সৌভাগ্য। তবে একটা কথা, ছেলেটা এবার ভর্তি হলো মাত্র একটা বছর যাক দ্বিতীয় বর্ষে উঠুক তারপর ওনার মেয়ের সাথেই বিয়ে হবে। ঘটক চা নাস্তা খেয়ে চলে গেলেন রিনার বাবার কাছে। ঘটকের কাছে রাজুর বাবার মতামত জেনে রিনার বাবাও একমত হলেন তাতে। এরপর একদিন রিনার বাবা রাজুর বাবা-মায়ের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলেন তাদের বাড়িতে। চা-নাস্তা খেয়ে পারিবারিকভাবে কথা বলে নিশ্চিন্ত হয়ে বাড়িতে গেলেন। এদিকে রাজু এবং রিনা তারাও জানতে পারল তাদের বাবা- মায়ের মাতামত। রাজু মহা খুশী হলো এমন একজন ধনী পরিবারের জামাতা হতে চলেছে জেনে। এদিকে রিনাও খুশী হলো তার ভালোবাসার মানুষটি তারই হতে যাচ্ছে ভেবে।
পূজোর ছুটি শেষে রাজু চলে গেল রাজশাহীতে,পড়াশুনা নিয়ে বেশ ব্যস্ততায় কাটতে শুরু করলো বাজুর। এদিকে রিনাও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেল রাজু পরীক্ষা দিয়ে দ্বিতীয় বর্ষে উঠল। রিনা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করল। দ্বিতীয় বর্ষে ওঠার পর রাজু বাড়িতে এলো ইদের ছুটিতে দশদিনের জন্য। এরই মাঝে দু’পক্ষের পরিবার কথা বলে সিদ্ধান্ত নিলেন রাজু এবং রিনার বিয়ের জন্য। দিন তারিখ ঠিক করে ছেলে এবং মেয়ে উভয়কে আংটি পরানো হলো। রাজুর পড়াশুনা শেষে বড় রকম অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত নিয়ে খুব কাছের আত্মীয়-স্বজনদের নিয়েই তাদের বিয়ে দেওয়া হলো। বিয়ের সাতদিন পর বাজুর ছুটি শেষ হলো। রাজু রাজশাহীতে চলে যাওয়ার পর সে আর এক অনুভূতি। বউকে রেখে একা থাকতে রাজুর যেন একটু রেশীই খারাপ লাগল প্রথমবার। সেই থেকে ছুটি হলেই রাজু বাড়ি চলে আসে এবং ছুটি শেষ হওয়ার পূর্বেল দিন সে রাজশাহী চলে যায়। এভাবে বাড়ি এবং রাজশাহী যাওয়া আসার মঝেই রাজুর পেরিয়ে গেল আরো দু’বছর। সামনে থার্ডইয়ার পরীক্ষা, রাজু পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। এক সময়ে পরীক্ষা শেষও হলো। রাজু পরীক্ষা শেষে বাড়িতে এলো, রাতটা নিজেদের বাড়িতে থেকে বউয়ের টানে পরদিন শ্বশুর বাড়িতে গেলো। রাজুর বেশীর ভাগ সময় শ^শুর বাড়িতেই কাঁটতে শুরু করলো। মাঝে মাঝে রাজু শ্বশুর বাড়ি থেকে নিজের বাবা মায়ের কাছে তাদের বাড়িতে এসে থাকলেই শ^শুর শাশুড়ী আপত্তি করতেন। তারা দুজনেই বলতেন- এখানেই থাকো বাবা, মাঝে মাঝে বাবা মায়ের সাথে দেখা করতে যাবে, সারাদিন থেকে রাতে এখানে চলে আসবে। তারা চাইতেন রাজু সব সময় তাদের বাড়িতেই থাকুক। রাজু তাদের বাড়িতে এসে একদিনের বেশি থাকতে পারতো না, শ^শুর লোক পাঠাতেন রাজুকে নিতে। আবার কখনো কখনো সাথে আসতো রাজুর বউ, সারাদিন থেকে বিকেলে রাজুকে নিয়ে তাদের বাড়িতে চলে যেত। কখনো কখনো নিজেকে ভীষণ অপরাধী মনে হতো রাজুর, তার বাবা- মায়ের কাছে থাকতে এবং সময় দিতে না পেরে। মাঝে মাঝে রাজুর বাবা মায়ের কাছে একা থাকার ইচ্ছে হলেও বউ এবং শ^শুর- শাশুড়ীর জন্য তা হয়ে উঠত না।
শুধু তাই নয় রাজু ঢাকায় চাকরির জন্য দরখাস্ত করলেও শ^শুর- শাশুড়ি আপত্তি করতেন। একদিন রিনার বাবা রাজুকে বললেন তার ব্যবসা দেখাশুনা করার জন্য। কিন্তু রাজুর ইচ্ছে সে চারুকলা থেকে পড়াশুনা শেষ করে ঢাকায় কোনা কোম্পানিতে গ্রাফিক্স ডিজাইনার পদে চাকুরি করবে। তাই রাজু রিনার বাবার সে প্রস্তাবে অসম্মতি জানালো। রিনার বাবার প্রস্তাবে রাজুর আপত্তি থাকায় একদিন রিনা মনে মনে বুদ্ধি এটে রাজুর সাথে তাদের বাড়িতে এলো, রাজুর মাধ্যামিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার সার্ঠিফিকেট চুরি করে নিজেদের বাড়িতে এনে রাখল, যেন রাজু ঢাকায় কোনো চাকরি করতে না পারে। থার্ডইয়ার পরীক্ষার রেজাল্ট বের হলো, সেকেন্ড ক্লাস নিয়ে রাজু পাশ করল। রেজাল্টের কয়েকমাস পর রিনার কোল জুড়ে একটি ছেলে সন্তান এলো, রাজু তার নাম রাখলো হৃদ।
রাজুর ব্যবসার কাজে আপত্তি জেনে রিনার বাবা টাকায় বাসা ভাড়া করলেন রাজু এবং রিনার থাকার জন্য। রাজু শ^শুরের এমন উদারতা দেখে ভীষণ খুশী হলো,বাড়িতে গিয়ে তার বাবা- মাকে বলল শ^শুর ঢাকায় বাড়ি ভাড়া করেছে রিনাকে নিয়ে সে ঢাকায় থাকবে এবং সেখানে চাকরি করবে । রাজুর বাবা-মা ছেলের সিদ্ধান্ত জেনে ভীষণ খুশী হলেন, কারণ তারাও চান ছেলে একটা চাকরি করুক নিজের পায়ে দাঁড়াক।
বাবা মায়ের সাথে কথা বলে রাজু তার সার্টিফিকেট নেওয়ার জন্য কাঠের আলমারি খুলল, কিন্তু সার্টিফিকেটের ফইিলটি খুঁজে পেল না। রাজু মাকে জিঙ্গেস করল তার ফাইলটির কথা, কিন্তু মা ও বলতে পারলেন না। এরপর রাজুর সন্দেহ হলো রিনার উপরে। মন খারাপ নিয়ে রাজু শ^শুর বাড়িতে এসে রিনাকে জিঙ্গেস করল ফাইলটির কথা, কিন্তু রিনা সম্পূর্ণ অস্বীকার করল। রাজু মহা চিন্তায় পড়ল ঢাকায় চাকরি করতে গেলে সার্টিফিকেট লাগবে অথচ সার্টিফিকেট হাতে নেই! রাজু মনে মনে ভাবতে লাগল তবে কী রিনা ও তার বাবা মা চক্র করছে আমার সাথে? যেন ঢাকায় চাকরি করতে না পারি সেজন্য? সাতপাঁচ ভেবে রাজু ঢাকায় যাওয়ার অপেক্ষায় রইল। রিনার বাবা রাজু এবং রিনার ঢাকায় যাওয়ার দিন তারিখ ঠিক করলেন।
রিনার মা রিনা এবং রাজু তারা কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকায় চলে এলো। অবশ্য রিনার বাবার ঢাকায় বাসা ভাড়া করার পেছনে একটাই উদ্দেশ্য ছিলো রাজুকে ঘর জামাই রাখা, এবং ঢাকার যান্ত্রিক জীবনের অভিঙ্গতায় রাজু যেন বাধ্য হয় ঘর জামাই থাকতে এবং তাদের ব্যাবসা দেখাশুনা করতে। কিন্তু রাজু বিয়ের পর থেকেই শ^শুর বাড়িতে থেকে বুঝতে পেরেছে তার শ^শুর -শাশুড়ির অশোভনীয় আচরণ এবং কৌশল। রাজুর বাবা ধনী মানুষ নন জন্য রিনা এবং তার বাবা- মা রাজুকে মাঝে মাঝে খুব তুচ্ছ তাচ্ছিল্য আচরণ করতো। সে স্থান থেকেই রাজুর অভিঙ্গতা- রিনার বাবার ব্যাবসা দেখাশুনা করলে তারা যা বলবে তাই শুনতে হবে, এমনকি আমার বাবা-মা কেও আমার কাছ থেকে বঞ্চিত করবে তারা। তাই রাজু তার মান সম্মান, ব্যাক্তিত্ব এবং বাবা -মায়ের প্রতি দায়িত¦র কথা মনে রেখে ঢাকায় আসার কিছুদিন পর পত্রিকায় তার সার্টিফিকেট হারানোর বিঙ্গপ্তি দিলো। এবং সে বিঙ্গপ্তির পেপার কাটিং নিয়ে প্রয়েজনীয় কাজ সেরে রাজু রাজলাহীতে গিয়ে তার সমস্ত পরীক্ষার সার্টিফিকেট তুলে আনলো। পুনরায় সার্টিফিকেট তুলে আনলেও রাজু রিনার কাছে তা গোপন রেখে বিভিন্ন কোম্পানীতে চাকরির দরখাস্ত করতে লাগল। পর পর কয়েকটা অফিসে ইন্টারভিউ দেওয়ার পর একটা পত্রিকা অফিসে চাকরিও হলো রাজুর। অফিসে জয়েন করার পর রাজু বাড়িতে এসে তার বউকে জানালো চাকরির কথা। বাজুর চাকরির কথা শুনে শাশুড়ি এবং তার বউ আর এক ফন্দি আটলো। বড়লোকের মেয়ে রাজুর হিসেবের টাকায় সংসারে চলতে ভীষণ অশান্তি করতে লাগল, প্রায় দিনই রাজুকে খোটা দিতে লাগল মা এবং মেয়ে। তারা দু’জনেই রাজুকে অসম্মানজনক আচরণ দেখিয়ে রাজুর ওপর মানুষিক নির্যাতন চালাতে শুরু করল। রাজু দিনের পর দিন সব মুখবুজে সহ্য করল, কারণ রিনার বাবা অনেক দুঃসাহসী মানুষ, টাকার জোরে কোনো মুহূর্তে একজন মানুষকে গায়েব করে দিতে পারেন তিনি। তাই দিনের পর দিন বউ আর শাশুড়ির অত্যাচারিত আচরণ সহ্য করে জীবন চালাতে শুরু করলো রাজু।
রাজুর ছেলের বয়স প্রায় এক বছর। একদিন কাজের চাপে অফিস থেকে বের হতে রাজুর দেরি হলো। রাত নয়টায় রাজু অফিস থেকে বাসায় এসে দরজায় কলিং বেল দিলো কিন্ত রিনা দরজা খুলল না। রাজু মাঝরাত পর্যন্ত অসহায়ের মত দরজার দাঁড়িয়েই রইল, এক পর্যায়ে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হলো, কিন্তু তবুও রিনা ও তার মা দজো খুললো না। অবশেষে রাজু বাহিরের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে রাত একটায় অফিসে চলে এলো। সারারাত অফিসে থেকে সকাল আটটায় বাসার সামনে গিয়ে দেখল দরজায় তালা লাগানো। রাজু মনে মনে ভাবলো হয়তো তারা কুড়িগ্রামে গিয়েছে, কিন্তু কিছু না জানিয়ে যাওয়ায় রাজু মানষিকভাবে ভীষণ আহত হয়ে পুনরায় অফিসে ফিরে এসে কাজে বসলো। অফিস শেষে কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই রাজুর, তাই কয়েকদিন অফিসেই রাত কাটাতে হলো তার। সাপ্তাহিক ছুটি পড়ল, সাথে আরো দু’দিন ছুটি নিয়ে রাজু তাদের বাড়িতে গেল। বাড়িতে যাওয়া মাত্রই রাজুর মা ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন- বাবা মন খারাপ করিস না, নে এটা পড়। মা রাজুর হাতে রিনাদের বাড়ি থেকে আসা ডিভোর্স লেটার ধরিয়ে দিলেন। লেটারটি পড়াশেষে রাজুর দু’চোখে জল গড়িয়ে পড়ল। রাজু রিনাদের বাড়িতে গিয়ে তার বাচ্চাকে দেখতে চাইলে, রিনার বাবা আত্বহুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দিলেন। রাজু থানা পুলিশ করতে গেলেও রিনার বাবা থানায় টাকা দিয়ে তা বন্ধ করবেন জেনে রাজু নীরবে ঢাকায় চলে এলো। চাকরি ছেড়ে দিয়ে পাগলের মত এদিক সেদিক ঘুরতে শুরু করল। রাজুর সমস্ত স্বপ্ন কাঁচের মত ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। বাচ্চার শোকে খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়ে রাজু শুকিয়ে কাঠ হলো। মুখ ভরতি খোঁচা খোঁচা দাড়ি, ময়লা শার্ট এলামেলো মাথার চুল, এক কথায় পাগলের মত চলতে শুরু করল রাজু। এভাবে প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলো। এদিকে রিনাও দি¦তীয় বিয়ে করে সন্তান হৃদকে নিয়ে চলে গেছে তার দ্বিতীয় স্বামীর বাড়িতে।
দেড় বছর পর হঠাৎ একদিন বাস্তায় রাজুর দেখা হলো অফিসের এক্সিকিউটিভ ডায়রেক্টরের স্যারের । তিনি রাজুকে অগোছালো চলতে দেখে অফিসে নিয়ে গেলেন। রাজুর জীবনের সমস্ত ঘটনা জেনে তিনি রাজুকে আবারো চাকরির প্রস্তাব দিলেন। রাজু পুনরায় পূর্বের অফিসে চাকরি করার সম্মতি জানিয়ে এক্সিকিউটিভ ডায়রেক্টর স্যারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তার ম্যাচে এলো। পরদিন সকাল দশটায় রাজু অফিসে এসে জয়েন করল এরং রিসিপশনে খোঁজ নিয়ে জানতে পারল পূর্বের অফিস কলিগদের মধ্যে অনেকেই চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন অন্যান্য অফিসে। রাজু নিয়মিত অফিস আর কাজের ব্যস্ততায় আস্তে আস্তে জীবনের কষ্ট এবং হতাশা থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করল। অফিসে রিসিপশনের দায়িত্ব ছাড়াও আরো অন্যান্য কাজের দায়িত্ব নিয়ে যে মেয়েটি চাকরি করে তার নাম রিপা। রিপা বি এ পাশ করে চাকরিতে জয়েন করেছে। রাজুর জীবনের অমানবিক ঘটনা এবং মানষিক অবস্থান বুঝে রিপা যেন একটু বেশিই মেশার চেষ্টা করল রাজুর সাথে। দিনের পর দিন চলতে চলতে একদিন রিপা জিঙ্গেস করল রাজুকে- এভাবে আর কতদিন? বিয়ে করতে হবে না?
রিপার প্রশ্নের উত্তরে রাজু বলল- বিয়ে করার জন্য মেয়ে কোথায় মেড়াম? তাহলে দেননা একটা মেয়ে খুজে ।
উত্তরে রিপা বলল- কেন চোখের সামনে যে মেয়েটি আছে, তাকে চোখে পড়ে না?
রিপার কথাটি বার বার রাজুর মনে ঘুরপাক খেতে লাগল, রাজু তাৎক্ষনিক ভাবে বলে ফেলল সত্যিই আপনি আমাকে বিয়ে করবেন?
রিপা হেসে বললো- ক্ষতি কী?
এরপর থেকে শুরু হলো তাদের একে অপরকে ভেবে চলা। প্রায় তিন চার রছর প্রেম কারার পর তারা নিজেরা বিয়ে করল এবং ছয় বছর পর রিপার কোল জুড়ে একটি ছেলে সন্তান এলো তার নাম রাখা হলো- অর্ক।
রাজু তার দ্বিতীয় সন্তান অর্ককে মনপ্রান দিয়ে ভালোবাসতে শুরু করল। প্রথম সন্তান হৃদকে কাছে না পাওয়ার বেদনা কিছুটা হলেও দ্বিতীয় সন্তান অর্ককে পেয়ে লাঘব হলো। অফিস শেষে বাড়িতে এসে প্রায় দিনই রাজু অর্কর দিকে তাকিয়ে মনে মনে প্রথম সন্তান হৃদ এর কথা ভাবতে থাকে। অর্কর বেড়ে ওঠা এবং প্রতি বছর একে একে তার শিশুশুলভ আচরনের পরিবর্তন দেখে রাজু একদিন ভীষণ মানষিক কষ্ট পেতে লাগল। রাজু প্রায় দিনই একা একা নীরবে বসে ভাবতে থাকে- এতদিনে হৃদ বাবা না জানি কতবড় হয়েছে! সেই যে কবে এক বছরের ছেলেকে দেখেছি! অথচ তার বয়স এখন পনেরো বছর, প্রায় এক যুগেরও বেশি হলো অথচ ছেলেটির সাথে আর দেখা হলোনা! না জানি আমার ছেলেটা কোনো বখাটে ছেলের সাথে মিশে হয়তো এতদিনে বখাটে হয়ে গেছে! হয়তো সিগারেট বা মদ খেয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে! এভাবে দিনের পর দিন হতাশার মুখোপেখি হয়ে বছরের পর বছর পেরিয়ে বাজুর বয়স পয়তাল্লিশে পৌছল, কিন্তু প্রথম সন্তান হৃদের সাথে আর দেখা হলো না।
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
নভেম্বর চলছে। অনির সাথে আজ দেখা হবে তা জানাই ছিল। এই তো ক’দিন আগেই দেখা…..
বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..
এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..