রাধা-কৃষ্ণ

পুলক বড়ুয়া
কবিতা
Bengali
রাধা-কৃষ্ণ

উৎসব

যারা বেয়াদব তাদের
চড় মেরে দিলে কেমন হয়
না না হাত দিয়ে নয়
অন্যভাবে, যারা বরবাদ গেছে তাদের দিয়ে
যারা অসভ্য—তাদের কষে চপেটাঘাত কর
নিজেকে নষ্ট কর না, নষ্টদের দিয়ে করাও
যারা বখে গেছে—সোজা করে দাও
সরাসরি নয়—পরোক্ষে-নেপথ্যে
যারা জালেম—তাদের চোবাও
শয়তানদের প্ররোচিত কর—ওদের ডোবাতে
যারা ব্যাভিচারী কিংবা ধর্ষক
দুষ্টদের বল, ওদের শায়েস্তা করতে
যারা আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা সেজেছে
বদমাশদের বল বদলা নিতে
যারা গুম-খুনী অথবা ওদের সাঙাৎ
অসুরদের পাঠিয়ে দাও ওদের কাছে
ওদের বধ করতে

ওদের পেছনে লেলিয়ে দাও
ওদের মুখোমুখি কুকুর ক্ষেপিয়ে দাও
ওদের ছদ্মবেশ নগ্ন করে দিতে
অথবা ইবলিশদের বল
যারা
ভন্ড
ওদের
মুখোশ
টেনে
খুলে
মেলে
নিয়ে
ছুঁড়ে
ফেলে
দিতে

আর অই মানুষরূপী হিংস্র হায়েনার মতো
বুনো জানোয়ার-হন্তারকদের হত্যা করুক
সভ্যতাকে অপমানকারী অপরাধী
পলাতক ও দন্ডিত আসামিরা

আজ উৎসবে, মহোৎসবে

সে পালিয়ে

বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র প্রসব করেছে
এক মৃতশিশু;
কিন্তু, সে এমন ক্যানো—
শুয়োরের মতো, বদখত,
অতএব, না, বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র প্রসব করেছে
এক মহাজানোয়ার,
সামান্য সৌজন্যতাটকুও
সে জানে না, কথাবার্তাও শেখেনি
তাকে নিয়ে ভীষণ মুশকিল—
এতদিনেও মানুষ হল না,
তার আচার-আচরণ আগের মতোই—
শেষ চার বছরের মতোই
সে আরও চার বছর থাকতে চায়
আগামী চার বছর
আসছে সর্বশেষ চার বছর
শেষদান আশা করছে;

করোনা ভাইরাস নিয়ে মশকরা করতে করতে
সে এমন অসভ্য, সভ্য দুনিয়ার গাড়ল …
সে নিজেও রেহাই পেল না,
বর্ণবাদী দাঙ্গার ভিজে বেড়াল সে
অভিবাসী দেশ থেকে
অভিবাসন হঠাতে চায়,
কিছু কিছু মানচিত্রকে
কালো তালিকাভুক্ত করতে চায়
জলবায়ু পরিবর্তনকে পিটপিট করে
খাটো চোখে দ্যাখে
আন্তর্জাতিক জলবায়ু চুক্তি থেকে
চম্পট দেয়
স্বাদেশিক রাজনৈতিক পালাবদলকে
স্বাগত না-জানিয়ে বুড়ো আঙুল দেখায়
তাকে পাগলা গারদের প্রেসিডেন্ট হলে
মানাত কী যে , মরি মরি, দারুণ দ্যাখাত …
আমি তার সচেতন-ভক্ত হয়ে যেতাম;
ব্যাটা, আস্ত একটা উজবুক …
উদারতার বদলে শুধু কট্টরপন্থী নয়, সংকীর্ণ নয়—
এতই হাড়কিপ্টে যে
খোদ রক্ষণশীলেরাও তার সঙ্গে নেই;
দুনিয়ার সবচে’ ক্ষমতাধর মসনদে বসে
তাকে ঘিরে ডাইনেস্টি কায়েম করতে চায়
তার সে স্বপ্ন গুড়ে বালি;
আসলে, ব্যবসায়ীরা গদিতে সুন্দর : যেই হোন;
অই যে চাঁদ সওদাগর—সফল সওদাগর তিনি;
বাণিজ্যে বসত করে লক্ষী, সমুদ্রে ভাসান তরী;
তার প্রেমের তরণীতে প্রাণের লক্ষী
হয়ে যায় বিষলক্ষ্যার ছুরি !

আমি ‘ শুয়োরের ঘোঁত ঘোঁত ‘ শুনতে পাচ্ছি,
তার বিদঘুটে গন্ধ পাচ্ছি;
দাঁতাল বুনো জানোয়ার বধের আওয়াজ পাচ্ছি,
উৎসব দ্যাখতে পাচ্ছি !

সে কী তড়পাচ্ছে, ধড়ফড় করছে
সে কী লাফাচ্ছে—কল্লাকাটা মুরগীর মতো;

একটু পর সব শেষ হয়ে যাবে
এই কী তার সর্বশেষ লম্ফঝম্ফ, এই বেলা;

দুনিয়ার সবচে’ ক্ষমতাধর গণতন্ত্র
এক মৃতশিশু উপহার দিলেও
আর যাই হোক
আমি তার উৎসের অপমৃত্যু চাই না;
আমি প্রসূতির এই বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের—
জননীর—জয় চাই;

বাবার কাছে শুনেছি,
আমাদের গ্রামে নাকি একবার এক
প্রেতাত্মার আবির্ভাব হয়েছিল
আর রাত হলে শুয়োর হয়ে নামতো;

সেরকম না-হয় এক
মানবেতর প্রাণি দাপিয়ে বেড়াল
উৎপাত করে গ্যালো;

পৃথিবী তো আর প্রেতলোক নয়
মানবমানবীর আগমনে
নরনারীর উত্থানে
মানুষের জাগরণে
মানবের জয়গানে

যে তিমিরে সে সে তিমিরে
লুকিয়ে যাবে, পালিয়ে যাবে
দূর হয়ে যাবে, দূরে যাবে, মিশে যাবে, মুছে যাবে !

আকন্ঠ সে

রঙিন স্বপ্নেরা রঙিন পানিতে সাঁতার কাটছে
এপার ওপার
উড়ে যায়, উবে যায়
জুড়ে যায়, জুটে যায়
পাত্র-পাত্রী কর্পূর-পিপাসা

মিলিয়ে মিশিয়ে
দিয়েছি ঢেলেছি
সোনালি শূন্যতা

আর রোদ্দুরের সাথে হাওয়ার মিতালী

এভাবে সময় ককটেল

তারপর
ডাক পিয়নের
নীল খাম
নীল চিঠি

নীলকন্ঠ

দুই মলাটের মতো
পালক আবৃত করে
পালক আবৃত্তি করে
বিলি করে

পত্রদূতকে দেখি না

হলুদ জিঞ্জির ছেড়ে
ছুঁড়ে ছিঁড়ে যায় পাখি
পাঠ করে পাড়ি দেয়
নীল ঢেউ নীল পানি
নীল চোখ নীলাকাশ

পান করে আকন্ঠ সে

আকাশের বুক-নাভি-উরু
নিতম্ব-দিগন্ত-জঙ্ঘা-জঘন-উপর-নিচ-তল
ভেতর-বাহির-গভীর-অনন্ত-ইহজাগতিক

ক্লেদ-পাঁক-কান্তি

রাধা-কৃষ্ণ

মরণচূড়ার মুসিবতে
কষ্টনদীর পারে
দুঃখ আমায় নিয়ে গেল
গভীর ব্যাথার ভারে ।

ঘাটে নেই কো খেয়া বাঁধা
পারে কৃষ্ণ-রাধা
তনুমনের মিলন হবে
থাক না হাজার বাধা !

লাইলি আছে মজনু আছে
আছে শিরি ফরহাদ
আছে রাধা আছে কৃষ্ণ
বাধাগুলো বরবাদ !

স্বর থেকে বর্ণ নিয়ে
ঢালো ব্যঞ্জন বর্ণে
বঙ্গ ভাষা সঙ্গ দেবে
মর্ম থেকে কর্ণে ।

দুইয়ে দুইয়ে দোঁহে মিশে
গড়ব সাঁকো মিলে
ভাষার মতো উঠব জেগে
দেহের আগে দিলে ‌।

পুলক বড়ুয়া। কবি। জন্ম বাংলাদেশের চট্টগ্রামে। লেখাপড়া করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রকাশিত গ্রন্থ: ‘ওই পূর্বে রাঙা সূর্যে’, এবং ‘পাঠেরা খেলছে মাঠে’।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..