রুবাইয়ত, হাইকু ও তানকা

ষষ্ঠী কুমার দাস
কবিতা
Bengali
রুবাইয়ত, হাইকু ও তানকা

ঋতু বৈচিত্র্য (হাইকু)

বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ্
গ্রীষ্মের দাবদাহ
সর্বদা শ্রেষ্ঠ।

আষাঢ় আর
শ্রাবণ বর্ষাকাল
বৃষ্টির ঘর।

ভাদ্র আশ্বিন
শরৎ এর হিম
শীত বিহীন।

কার্ত্তিক আর
অগ্রহায়ণ হেমন্ত
আরম্ভ জার।

পৌষ ও মাঘ
হাড় কাপানি শীত
বেশির ভাগ।

ফাল্গুন চৈত্র
বসন্ত ধূ ধূ মাঠ
পিরীতি মৈত্র।

কচি কাচা (রুবাইয়ত)

ডিজে বাজছে ওরা নাচছে
বড় কনে খায় খই।
অতিথিও খাচ্ছে ক্যাটেরার দিচ্ছে
চলো রং খেলি সই।

২)

চলো চলো ভাই
শিশু-শিক্ষা কেন্দ্রে যাই
নাচ গান পড়া খাওয়া
বকা-ঝকা কিল-চর নাই।

৩)

চাঁদ বুড়ি শান্ত চরম
সূর্য মামা ভীষণ গরম।
প্রাণে বাঁচা বড় দায়
চলো, বনে ফিরে যায়।

৪)

নেটে বেটে যত অশান্তি
গেমে প্রেমে সুখ শান্তি।
ভেজালে বদহজম সম্বল
শাসনে নেই গ্যাস অম্বল।

৫)

অশিক্ষিত হকার শিক্ষিত বেকার
আর আছে জন্ম সুত্রে
কুমোর কামার আর চামার
আধুনিকতায় অসভ্য ভিক্ষারী।

৬)

সুসম আহারে সুস্বাস্থের বাহারে
কনে যাবে শশুড় বাড়ী
সবুজ সাথীর বাই-সাইকেল চড়ে
পরে কন্যাশ্রী টাকার শাড়ী।

 

চোর চৌকিদার খেলা (রুবাইয়ত)

বাম গেল রাম নাম জপতে
পদ্ম দিঘীর গেরুয়া পাড়ে-
কাস্তে হাতুড়ি তারা নিয়ে
হূনুমান বীর গদা ছেড়ে।

রাম রহিমের খেলা শেষ
চলছিল যা নির্বাচনকে ঘিরে-
জোটের নামে গদি চোট
নেতৃত্ব টের পাচ্ছে হাড়ে হারে।

তবে স্বদেশ এখন শক্তিশালী
কুছ পরুয়া নেই সরকারে-
সংবিধান সংশোধনে দেশ চলবে
বিরোধী দেখবে নয়ন ভোরে।

এবার ভারতমাতার সব রাজ্যে
জাতি ধর্ম অভিন্ন বিধান অচিরে-
দেখবে ডিজিটাল স্বচ্ছ ভারত
পশ্চিমীদেশ পুবে মুখ ফিরে।

দেশবাসীর চপের চেয়ে চা প্রিয়
ধর্মীয় নেশার মহা ঘোরে-
এতেই জগৎবাসী ইন্ডিয়া মুখী

শ্রেষ্ঠ আসন দিতে বিশ্বজুড়ে।

স্বদেশ মাতা

একবার জনম দে’মা, স্বদেশ শুধরে আসি।

মা’গো-
ধর্ষিতা মা মাসি বোন পিসি
গণতন্ত্র বিশ্বাসী সৈনিক চাষী
কেন অভিশপ্ত জীবনে শহীদের স্বদেশবাসী?

মা’গো-
ধর্মের বোম তৈরী করে
সুখ-শান্তি সম্প্রীতি হরে
কেন নেতা-নেত্রী মৌলবাদী উগ্রপন্থী সন্ত্রাসী?

মা’গো-
ভূস্বর্গ নীরে ওরা অনাহারে
রোজ বর্ডারে গুলি খেয়ে মরে
কেন পরাধীন বীর সৈনিক গেরিলা স্বদেশী?

মা’গো-
জনমে যদি তোর ছোট ক্ষুদি
হয়ে ঐ আদি বেয়ে রক্ত নদী
মা তুমি শ্রেষ্ঠ তেরঙ্গা পরিধিতা দেখবে বিশ্ববাসী।

মা’গো-
বিশ্বযুদ্ধ শেষে বলবো হেসে
শহীদ বেশে অন্তর্ধ্যানে এসে
মোরা বিপ্লবী স্বদেশী নয়’তো কারো দাস দাসী।

অতি আধুনিকতা (তানকা)

(১)

আধুনিকতা
সভ্যতা ধ্বংসের পথে
নষ্ট সততা।

সর্বত্র বর্বরতা
বেশ ভুষা উগ্রতা।

(২)

প্রতিযোগিতা
ইজ্জত প্রদর্শন
কাম মত্ততা।

প্রকাশ্যে যৌনাচার
অন্যায় অত্যাচার।

(৩)

ধর্ষিতা ধর্ম
কাষ্ট প্রথায় কর্ম
গরিবী চর্ম।

সভ্যতা লয় বার্তা
অতি আধুনিকতা।

চরণামৃত ঘুষ (তানকা)

(১)

আমলা নেতা
নেত্রী ঘুষেই জ্যান্ত
নিপুণ কর্তা।

ঘুরে ধ্বংস সংস্কৃতি
সমাজ রাজনীতি।

(২)

ধর্মীয় বার্তা
উগ্রতায় ধর্ষিতা
কর্মী বিধাতা।

লগ্ন মানবিকতা
তাইতো নীরবতা।

(৩)

ঘুষেই পাপ
দাতা গৃহিতা পাপী
করো মা মাপ।

প্রসাদি উপবাস
বলি সন্তুষ্টি আশ।

 

প্রকৃতির ভাষা (হাইকু গুচ্ছ)

(এক)

আমার ভাষা
শিক্ষা দীক্ষা সংস্কৃতি
দাতা প্রকৃতি।

(দুই)

উদার চিত্তে
ফুল ফল পল্লব
তাহার দান।

(তিন)

আলো বাতাস
জল মৃত্তিকা সুধা
রাখো নির্মল।

(চার)

ক্ষুদ্র জীবনে
শাশ্বত সৌন্দর্যের
মহিমা দেখি ।

(পাঁচ)

ব্রহ্মান্ডে খেলে
আজীবন প্রকৃতি
ঋতুর খেলা।

(ছয়)

বুঝতে ব্যর্থ
প্রকৃতির সে ভাষা
আর মহিমা।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ