রুমনা রায়ের সাতটি কবিতা

রুমনা রায়
কবিতা
Bengali
রুমনা রায়ের সাতটি কবিতা

আমি অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছি অনি
এক পশলা বৃষ্টির পর
বর্ষণ ক্লান্ত নীড় হারা পাখিরাও অপেক্ষায় থাকে
নতুন ভোরের
চারিদিকে শুধুই পড়ে আছে স্বপ্নের ভাঙা বাসা
চৈত্রের মেঘেরা জানে কি সে কথা?

কত আশায়, কত কষ্টে তিল, তিল করে যত্নে গড়া
ভালোবাসার আস্তানা
যেখানে তুই আর আমি আর সুখ যাপনের মুহূর্তরা।

ভালোবাসার মানে শুধুই কি একটি বাসা?

চারদেওয়ালে সুসজ্জিত আসবাব?

না দড়িতে ঝোলানো লাল পেড়ে শাড়ি
ডাল ভাত না বিরিয়ানী
রেস্তোরাঁয় নীল জল

ভালোবাসা মানে পাশাপাশি হেঁটে চলা
ভালোবাসা মানে তোর মাঝেই আমার যাপন
ভালোবাসা মানে ছুঁয়ে যাওয়া একটি হৃদয়
যেখানে আমি আমাকে খুঁজে পাওয়া।

এই অবেলায় ভালোবাসা মানে আরো কিছুটা পথ
এক সাথে পথ চলা
শরীরী সম্পর্কে র চেয়েও যা বহুমূল্যবান
ছুঁয়ে থাকা একটি জীবন।

দুই.

হলুদপাখী আজ বড় কাঁদছে
আকাশের মন কেমন বৃষ্টিতে
বাস্তুচ্যুত, চলে যেতে হবে
কোনো দূর গভীর অরণ্যে
যেখানে মাথা উঁচু করে
বেচেঁ থাকে শাল সেগুন রঙের দুনিয়ায়
সব আজ পর্যুদস্ত, পরাস্ত
কর্দমাক্ত, ভূলুণ্ঠিত
তাই চলে যেতেই হবে সবুজ অঞ্চলে।
হলুদপাখী জানে ছেড়ে আসা বড় কষ্টের
তবুও কিছু পেতে গেলে কিছুতো ছাড়তে হয়।
তা সে জীবন বা বাসা।

 

তিন.

মাসন্তে মোটা টাকা,নিশ্চিন্তে আরাম কেদারায়
গা এলিয়ে বাতানুকূল ঘরে।
ভাবনার মৃত্যু, একটু, একটু করে।

কি আসে যায়।পাশের বাড়ির রমা কিংবা সরমা।
না খেয়ে আছে দুবেলা।

হয়তো ছোট ছেলেটাও, খিদের জ্বালায়
ডাস্টবিনে খুঁজে চলে রাতের কিংবা দিনের আহার।

নয়তো কোনো চায়ের দোকানে বাসন মাজার বদলে কুড়ি টাকা।

বেশ আছি। দুবেলার ভাত, কিংবা বিরিয়ানি।
নয়তো বাতানুকূল রেস্তোরাঁর আলোছায়ার।
রাতের খাবার, রঙিন জলে।

ভাবলেশহীন ধোঁয়াশার মাঝে ঝেড়ে ফেলি
মাথা ব্যাথা।

পাশ কাটিয়ে যাই, চোখ ঢাকি, ঘেন্না হয়।
ছুতেও লাগে ভয়।
পাচ্ছে সংক্রমণ ছড়ায়।

ভাবি আমরা কোন উপগ্রহ এ বাস করি।
যেখানে শুধুই শ্রেণী ভাগ।

হা ঈশ্বর যদি একবার নেমে আসতে পারেন।
বিলীন হোক যত অবিচার।
অপেক্ষার ফল মিঠে হবে জানি।
যেদিন সব্বাই পাবে ভাত।
ছেলে খেলবে মায়ের কোলে।

আলোয় ভরবে চারপাশ।
অপেক্ষা য় থাক সন্তান।

চার.

যন্ত্রণার ভিতর দিয়ে যেতে যেতে
তৃণগুল্মকেও ভয় হয়
আগুনে পুড়ে যেতে যেতে
সূর্য কেও দাবানল মনে হয়।

 

পাঁচ.

“আজ বলার সময় এসেছে বন্ধু“

জাগো বিনিদ্র রজনী, ভাবনায় শান দাও।
ঘুরে দাঁড়াও একবার।
সুখনিদ্রার দিন শেষ।
অস্ত্রের ধার গুলো ভোঁতা, হৃদয়ের অস্ত্রে শানাও,
ঘুরে দাঁড়ানোর অঙ্গীকারে।
রক্তে মশাল জ্বালাও বন্ধু।
ভূমি ,ভাষা,ভবিষ্যৎ বিপন্ন।
নগ্ন আজ,ভয়ার্ত মুখগুলো কুঁকড়ে কালো।
জমাট বাঁধা চাপ, চাপ রক্ত।
আততায়ীর হাতে অস্ত্র নয় গুঁজে দিও একগোছা
লাল গোলাপ।

ছয়.

আজ আবিস্কার করেছি
আমি অন্য কিছু হতে চেয়েছিলাম
অনির্বাণ
নতুন করে জন্মেছি
ভাবনায়, ভাষায়, শব্দে, বর্ণে
চারটি অক্ষরের বর্ণমালায়।

 

সাত.

আমার হৃদয়ে তোমার বাসস্থান
জোর করে চাপিয়ে দেওয়া নিয়ম নীতির বাহিরে আমার ছোট্ট পরাণ
মাঝনদীতে একলা ভেসে যাওয়া অনিশ্চয়তা
কখনো উজানে ভেসেছে হৃদয়
ডুবেছে, সাঁতার কেটেছে
শ্বাস নিতে গিয়ে দম বন্ধ করে বাঁচিয়ে রেখেছে
জোড়াতালি জীবন

হয়তো জমা ছিলো গোপনে না বলা কথার কথোপকথন
হয়তো সাহসে নির্ভর ছোট্ট প্রাণ বাঁচাতে উদ্ধারকারী বিশুদ্ধ বাতাস আটকে গেছে
দক্ষিণ জানালার ধারে একা।
হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সবুজ ঘাসের নরম গালিচা
প্রজাপতির ডানায় ভর করেছে ভালোবাসা
ভয় হয় পরাণ বাঁচাতে হারিয়ে না যায় ছোট্ট হৃদয়খান।
দুজনের মাঝে একটাই প্রশ্ন
নষ্ট হয়েছে কার জীবন?

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..