আমি জানতাম না চব্বিশের জুলাইটা এত দীর্ঘ হবে
আমি জানতাম না চব্বিশের জুলাইটা এত দীর্ঘ হবে, আমি জানতাম না, অগাস্টকেও রাহুর মত গ্রাস…..
জন্মভূমি
শিক্ষার ঝুলি নিয়ে, দিয়েছি বিদেশ পাড়ি।
সব পর করে চলিলাম জন্মভূমি ছাড়ি।।
স্বপ্নে এলো বিদেশি টাকার ঘ্রান।
মন দেই নি, নিক না যদি নেয় প্রাণ ।।
চারদিকে শুধু কলকারখানার ধোঁয়া।
যায় না আর প্রকৃতির রূপ ছোঁয়া।।
মন যে আমার গায়ের কথা বলে।
কবে যে যাব জন্মভূমির কোলে।।
চারিদিকে শুধু আকাশ ছোঁয়া বাড়ি।
দাঁড়িয়ে আছে পরপর সারিসারি ।।
চারিদিকে কেবল, বিদ্যুতেরই ঝলক।
কিন্তু জোনাকির, আলোয় পড়ে না পলক।।
ডাকেনা এখানে ভোর বেলার পাখি।
ভোরের আলো বড্ড দেয় ফাঁকি।।
মন যে আমার গায়ের কথা বলে
কবে যে যাব জন্মভূমির কোলে।।
ভোরের বেলা সূর্যের মিষ্টি আলো ।
শিশির ভেজা দূর্বা কত ভালো।।
করেছি কত কোকিলের সাথে ঝগড়া।
চোখ জুড়ানো বাবুই পাখির ঘর করা।।
ভাবি ছেড়ে চলে যাই শহরের রাজপথ।
বাবুদের সাথে কখনোই মেলে না মত।।
মন যে আমার গাঁয়ের কথা বলে।
কবে যে যাব জন্মভূমির কোলে।।
গায়ে আমার শান্ত নদীর কূল।
কি অপরূপ সর্ষে খেতের ফুল।।
মৌমাছি ঘোরে ফুলের মধু খেতে।
প্রজাপতি ঘোরে রঙিন ডানা পেতে।।
বর্ষায় পুকুর জলেতে থই থই।
দুয়ারে ভাসে সিং, মাগুর কই ।।
মন যে আমার গাঁয়ের কথা বলে।
কবে যে যাব জন্মভূমির কোলে।।
যখন দেবো গাঁয়ের মাটিতে পা।
শরীর জুড়াবে শীতল দক্ষিণা হাওয়া।।
চারিদিকে শুধু সবুজ ধানের ক্ষেত্র ।।
ভারত ভুমিতে বসলেই ভিজে যায় নেত্র।।
কান জুড়ানো পাখির কলরব, কাকের কা কা।
সবুজে ঘেরা ওটাই আমার গাঁ ।।
মন যে আমার গাঁয়ের কথা বলে ।
কবে যে যাব জন্মভূমির কোলে।।
শিক্ষিত বেকার
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পাস করে
সার্টিফিকেট জমিয়েছি কত,
শিক্ষিত বেকার নাম দিয়েছে সবাই
চাকরি জুটছে না মনের মতো।
এই কদিন আগেই গর্ব করে বলতো বাবা,
ছেলে আমার এম এ, বি এ পাস।
এখন চাকরি কি করে, প্রশ্ন শুনেই
বাক্যহীন বাবার আটকে যায় শ্বাস।
কথা শুনে ই বুকটা ফেটে যায়
দুচোখে ঝড়ে অশ্রু ধরা।
শিক্ষিত বেকার, তাই বিধাতা বিরূপ
কোন চাকরি আর দেয় না সারা।
সরকারি চাকরি পাবোনা কিছুতেই
ঘরে যে নেই দশ, বার লাখ টাকা।
সুপারিশ টাও করবে না কেউ
কারন, নেতা নয় বাবা জ্যাঠা কাকা।
লজ্জা সরিয়ে সাহস করে বললাম
আমি লাগবো দিন মজুরের কাজে।
শুনেই ওরা বলে, কলম ধরা হাতে কোদাল ধরবে
এটা কি শিক্ষিত মানুষদের সাজে ?
ওরে আমার পেট আছে, আছে বৃদ্ধ বাবা মা,
কাজের যে আমার খুব প্রয়োজন।
আমি নাকি ঠাট্টা ইয়ার্কি করছি বলে
হেসেই উড়িয়ে দিল কজন।
লজ্জায় নিজেকে নিঃসঙ্গ করেছি
একা একা খুঁজি চাকরির খবর।
চেনা জগতে নিজেকে অসহায় লাগে
ওইযে ” বেকার ” কখন বলে দেয় মুখের ওপর।
সার্টিফিকেট দেখিয়ে চাকরি জোটে না
শিক্ষিত বলে, জোটে না দিন মজুরের কাজ।
নিষ্কর্মা, অপদার্থ পেছনে যে যাই বলুক
শিক্ষিত সমাজ নাম দিয়েছে এই সমাজ।
রূপসজ্জা
সুন্দর দেখিতে নারী
ছোটে পার্লারের বাড়ি।
রূপেতে সাজিতে রাধা
ক্রিম-পাওডার মাখে গাদা গাদা।
সেদিনের লম্বা চুল
ঝুলিতো হাঁটুর নীচে
শত প্রশংসার বানি
ছুটিতো পীছে পীছে।
ঘারের নীচেতে আর
থাকেনা কারো কেশ
স্টেপ কাট, লেয়ার কাট নাকি
সুন্দর লাগে বেশ।
ভ্রু কেটে প্লাক করে
ফেসিয়াল করে মুখ
করেনা কখনও রূপের কদর
ক্রিমের প্রশংসাতেই সর্ব সুখ।
সেদিন দেখিলাম এক
সুন্দর বিয়ের কনে।
রূপতো নয় অপরূপ
ধরেই গেল মনে।
মুখ খুলে বলেই দিলাম
আহ্ কি রূপের বাহার।
কথা শুনেই বলিলো কেউ
দাদা , কলোনিতে আমার পার্লার ।
সুন্দর রূপ নেই আর
সব ক্রিমের বোতলেই বাঁধা।
সবাই সুন্দর সাজে
কালো মেয়েও হয় সাদা।
অনেক প্রশ্ন জমেছে মনে
ভাবছি সেদিনের কথা
ঝরিতো রূপের ঝলক
যদি থাকতো কপালে টিপ,পায়ে আলতা।
ধর্ষিতা
কয়েকজনের লালসা থেকে বাঁচতে
চিৎকার যে করলাম কতো।
বাঁচাতে এগিয়ে কেউ এলো না
আজ বদনাম করছে নিজের মতো।
ধর্ষিতা তো হয়েছিলাম আমি
চরিত্রহীনা হয়েছি করও চোখে।
লজ্জা অপমান বাড়ছে এতো
সইতে পারছি না আর বুকে।
লজ্জায় নিজেকে বন্দি করে রেখেছি
চলতে যে আর পারবোনা মাথা উঁচিয়ে।
ওইযে, ওইদিকে, ওই মেয়েটা বলে
যন্ত্রনাটা যদি কেউ দেয় খুঁচিয়ে ?
শরীরের যন্ত্রণা সইলাম যখন
ভাবলাম জীবনটা দেই শেষকরে।
মানুষের কথাগুলো যখন কানে আসছে
লজ্জায় ঘৃণায় একটু একটু করে যাচ্ছি মরে।
অপরাধিদের শাস্তি চেয়ে গোটা দেশ ফুঁসছে
তবু চলেগেলো অনেকগুলো অস্ত।
কারন, আমাদের দেশের উকিল বাবুও
ওদের বাঁচানোর জন্য ব্যাস্ত।
দেশে আসুক সেই আইন
ধর্ষণকারী শাস্তি পাক হাতে হাতে।
সেদিন যেন কোন উকিল
থাকতে পারে না ওদের সাথে।
উচ্ছন্নে গেল দেশটা
আইন কানুন যে ভাঙে ভাঙুক,
যে লুটপাট করে করুক,
আমি করবো না প্রতিবাদের চেষ্টা।
বলবো, উচ্ছন্নে গেল দেশটা।।
গাছ কেটে ঘরে ফার্নিচার গরে,
সবুজায়ন কে ধ্বংস করে,
করবো বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে থাকার চেষ্টা।
বলবো উচ্ছন্নে গেল দেশটা।।
কলেজের অধ্যক্ষরা রয়েছেন বসে,
ফোর পাস মন্ত্রী শিক্ষার হিসেব কসে,
আমি করবো না প্রতিবাদের চেষ্টা।
বলবো উচ্ছন্নে গেল দেশটা।।
ওই যে দিনমজুর নেতা, শিখে রাজনীতির জাদু,
ঘোরাচ্ছেন ছড়ি, খাচ্ছেন মধু,
আমি করবো না প্রতিবাদের চেষ্টা।
বলবো উচ্ছন্নে গেল দেশটা।
রাস্তায় মেয়েদের প্রতি বাড়ছে কটুক্তির বর্ষণ,
নিষ্পাপ মেয়ে হচ্ছে শ্লীলতাহানি ধর্ষণ,
আমি করবো না প্রতিবাদের চেষ্টা।
বলবো, উচ্ছন্নে গেল দেশটা।
সার্টিফিকেট মূল্যহীন, এখন চাকরি বিক্রি হচ্ছে,
কেনাবেচার বাজারে চাকরিরও দাম বাড়ছে,
আমি করবো না প্রতিবাদের চেষ্টা।
বলবো, উচ্ছন্নে গেল দেশটা।।
যদি থাকি একসাথে মিলেমিশে,
জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে,
দলবেঁধে করবো প্রতিবাদের চেষ্টা।
তাহলে আর উচ্ছন্নে যাবে না দেশটা।
আমি জানতাম না চব্বিশের জুলাইটা এত দীর্ঘ হবে, আমি জানতাম না, অগাস্টকেও রাহুর মত গ্রাস…..
অভিশাপ মেঘের ভেলায় নিঃশ্বাসে ক্লান্তির ছাপ সবুজের নীড়ে আপন ঠিকানার খোঁজ এক ফালি সুখের নেশায়…..
পাখি দম্পতি পাখি গিয়েছিল কতদূর বনে তা কারো নেই জানা। ঠোঁটে ধরা লাল টুকটুকে ফল…..
তারা যেমন বলে, চোখে ধুলো দিলে থেমে যাবে আমার কাব্যময়তা অথচ আমি প্রামান্য দলিলের নই…..