গৌর (মালদা) – বাংলার চিত্তাকর্ষক ইতিহাস
বাংলার চিত্তাকর্ষক ইতিহাস সম্পর্কে জানার সময়, গৌরের মতো আর কিছু গন্তব্য হতে পারে না।…..
বারাণসী বাঙালির সংস্কৃতি আর মননের সাথে মিশে আছে।একে বাঙালির দ্বিতীয় আবাসস্থল বললেও অতুক্তি করা হয় না। বারাণসী নামের সৃষ্টি হয়েছে বরুণা এবং অসি এই দুই নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থানের কারণে।
আমাদের ভারতবর্ষের অনেক সাধক তাদের মুল্যবান জীবন এখানে অতিবাহিত করেছেন। যেমন ভাস্করচার্য্য, তৈলঙ্গ স্বামী প্রমুখ। আমাদের বহুদিনের ইচ্ছা ছিল কাশী যাবার সেটা এবারে পূর্ণ হল।আমাদের বুকিং ছিলো ‘ইন্ডিয়া’তে। এটি একটি চার তারা হোটেল। ট্যুরিস্ট আর বিদেশীদেরই ভিড় বেশী। ট্রেন লেট করে করে বারাণসী পৌঁছল যখন, তখন সময় রাত ৯ঃ৩০। টুক করে একটা রিক্সা চেপে হোটেলে চেক ইন করলাম তার আধঘণ্টার মধ্যেই।
প্রচণ্ড টায়ার্ড ছিলাম তাই তন্দুরী রুটি আর মাটন কষা খেয়েই শুয়ে পড়লাম। ঘুম ভাঙলো সকাল ৮ টায়। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিলাম। কমপ্লিমেন্টারি ব্রেক্ফাস্ট। সেখানে দোসা, ইডলি, লুচি, আলুর পরোটা, অমলেট, ফ্রুট জুস, চা কফি সব সাজানো রয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় আয়োজন অনেকই বেশী। পেট ভরে খেয়ে দেয়ে টুক করে একটা রিক্সায় উঠে পড়লাম। গন্তব্য গোধুলিয়া ঘাট। সেখানেই বাবার মন্দির আর গঙ্গা তীরের অজস্র ঘাট।
তথ্যসূত্র বলছে এদের মধ্যে ১৪টা ঘাটের বয়স ৩৫০ বছরের বেশী আর ৫১ টা ঘাটের বয়স অন্ততঃ পক্ষে ১৫০ বছর। এর থেকে বোঝা যায় বেনারস কত পুরোনো শহর। লেখার কলেবর অনাবশ্যক বৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে আমি শুধু ১০ টা ঘাট সম্পর্কে এখানে লিখছি।
আমরা একটা নৌকা ভাড়া করে গঙ্গাবক্ষে পাড়ি দিলাম।
(১) নারদ ঘাটঃ এই ঘাটে দুজন একসাথে স্নান করলে তাদের মধ্যে ঝগড়া নাকি অনিবার্য। বলাবাহুল্য আমরা কিন্তু সেই রিস্ক নিইনি।
(২) দশাশ্বমেধ ঘাটঃ এই ঘাটের জল পবিত্র পঞ্চ তীর্থের মধ্যে গণ্য করা হয়।। কথিত আছে ভগবান ব্রহ্মা একবার কাশী রাজার সহায়্তায় ১০ টি অশ্ব বলি দেন এখানে। সেই থেকে এই ঘাটের নাম এইরূপ।
(৩) রাজা ঘাটঃ পেশোয়া অমৃত রাও এই ঘাট নির্মাণ করেন। এখানে একটা বিশাল ছাতা আছে বলে এই ঘাটের আরেক নাম “ছত্তর” ঘাট।
(৪) মানমন্দির ঘাটঃ রাজা মান সিংহ এই ঘাটটি তৈরী করেন। এর ওপর একটি সৌধও তিনি নির্মাণ করান।
(৫) চৌষট্টি যোগিনী ঘাটঃ কাছেই চৌষট্টি যোগিনীর মন্দির থাকার জন্যে এইরূপ নামকরণ।
(৬) মনিকর্ণিকা ঘাটঃ কথিত আছে শিব এবং পার্বতী এক দিন এই ঘাটে স্নান করতে এসেছিলেন। দেবী পার্বতীর একটা দুল নাকি এখানে হারিয়ে যায়। অনেক খুঁজেও তা না পেয়ে শিব অভিশাপ দেন এই ঘাটে সব সময় শব দাহ হতে থাকবে।
(৭) হরিশচন্দ্র্র ঘাটঃ কথিত আছে অভিশাপগ্রস্ত রাজা হরিশচন্দ্র নাকি এখানে মড়া পোড়াতেন। সত্যনিষ্ঠ হরিশচন্দ্র্র নিজ পুত্র রোহিতাশ্বকে দাহ করার জন্যে স্ত্রী শৈব্যার অর্ধেক বস্ত্র দাবি করেন । তখন ভগবান আর্বিভুত হন এবং তাঁকে সশরীরে স্বর্গে যাবার অনুমতি দেন। এই ঘাটে অজস্র শবদাহ করা হয়। লোকে বলে এই ঘাটের চিতার আগুন কখন নাকি নেভে না।
(৮) রাণী অহল্যাবাঈ ঘাটঃ ইন্দোরের রাণী অহল্যাবাঈ এই ঘাটটা তৈরী করেন।
(৯) সঙ্কাটা ঘাটঃ নিকট্স্থ সঙ্কাটা দেবীর মন্দিরের উপস্থিতির কারনে এই রকম নামকরণ।
(১০) ললিতা ঘাটঃ নেপালের মহারাজা এই ঘাটটি তৈরী করেন।
অনেকগুলো ঘাট ঘোরা হয়ে গেল। এতক্ষন ঘুরে বেজায় খিদে পেয়ে গেছে আর ভোজনরসিক হিসাবে আমার একটু নামডাক আছেই। তার ওপর বেনারসের বিখ্যাত রাবড়ির কথা কে না জানে।অতএব মিষ্টির দোকানে গিয়ে আমি দুই বাটি সাবড়ে দিলাম। কেয়া অবশ্য খুব কষ্ট করে এক বাটিই খেল।
এই বার আমরা চোখ রাখব ধর্মস্থান হিসাবে বেনারসের ভূমিকায়। হিন্দু,মুসলিম,বৌদ্ধ,জৈন,খ্রিস্টান সব ধর্মের উল্লেখযোগ্য অস্তিত্ব থাকলেও এটি প্রধাণতঃ হিন্দু তীর্থস্থান।বারাণসী বা কাশী কে চিরকালই বাঙালীরা বেশী গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। তাদের বিশ্বাস চতুরাশ্রমের তৃতীয় অর্থাৎ বাণপ্রস্থ যদি এখানে কাটানো যায় এবং এখানেই দেহত্যাগ করলে ভগবান শিবের আর্শীবাদে তাদের মুক্তি ঘটবে আর জন্মগ্রহণ করতে হবে না।
কাশীর কয়েকটি বিখ্যাত মন্দিরঃ
এখানে প্রধান দেবালয় স্বর্ণচূড়া শোভিত বাবা বিশ্বনাথের মন্দির। বাইরের শত্রুরা বার বার এই মন্দিরকে আক্রমণ এবং ধ্বংস করেছে। কিন্তু প্রতিবারই আবার নতুন করে গড়ে উঠেছে এই মম্দির তার দুরন্ত প্রাণশক্তি দিয়ে।এর স্বর্ণ চূড়াটি করে দেন পঞ্জাব কেশরী রাজা রণজিত সিং। নেপালের রাজা উপহার দেন এক বিশাল সোনার ঘণ্টা।
অন্নপূর্ণা মন্দিরঃ বর্তমান মন্দিরটি ১৭৮১ সালে তৈরী করেন মহাদেব বলে জনৈক মারাঠী।এই মন্দিরে একটি গম্বুজ ও একটি চূড়া আছে। যার মাথায় রয়েছে স্বর্ণ কলস। মন্দিরের চারপাশে রয়েছে অসংখ্য বেদী যেখানে ব্রাহ্মণদের ভোজনের ব্যব্স্থা আছে।
এছাড়া শিব মন্দির গুলো হল আদি বিশেশ্বর, ওঁকারেশ্বর, কেদারেশ্বর, বীরেশ্বর,বৈদ্যনাথ, আদি মহাদেব,কামেশ্বর, তিলভান্ডেশ্বর ইত্যাদি।
বারাণসীকে আমরা অন্য যে কারণে জানি তা হল এটি জ্ঞান চর্চার একটি প্রাচীন পীঠস্থান।
পণ্ডিত সমাজ ও সংস্কৃতচর্চাঃ
বারাণসীর পণ্ডিতকূল সারাদেশে সামাজিক, ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক জীবনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতেন। তারা পাঠশালা এবং চতুষ্পাঠীকুলে ছাত্রদের মধ্যে বিদ্যাচর্চার ধার বজায় রেখে, বইপত্র লিখে, পাণ্ডুলিপি নকল করে শাস্ত্র গ্রন্থ সম্পর্কে বিতর্কে অংশগ্রহণ করে শাস্ত্র গ্রন্থ চর্চা প্রভৃতির উন্নতি সাধন করতেন। বারাণসীতে বেশ কিছু বৈদিক পাঠশালা গড়ে উঠেছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল- দিনকর বালাকৃষ্ণ যোশী (১৮১০-১৮৭০), বিনায়ক ভট্ট ডোংরে (১৮৩০-১৯০৪), পণ্ডিত রাজারাম শাস্ত্রী (১৮০৫-১৮৭৫), পণ্ডিত বিধ্যাধর লেলে (১৮৩৮-১৯১৮), পণ্ডিত কৃপাকৃষ্ণ জানি(১৮০৩-১৮৬৩) প্রমুখ।
সমসাময়িক কয়েক্জন পণ্ডিতের নাম এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে। আহোবাল শাস্ত্রী, অচ্যুতানন্দ পরিব্রাজক, কাশীনাথ শাস্ত্রী, কৃষ্ণদেব পণ্ডিত, কাশীনাথ ভট্টাচার্য,নারায়ণ শাস্ত্রী, কালিশঙ্কর ভট্টাচার্য, বালাজি পণ্ডিত, বলরাম বাচস্পতি, বৈদ্যনাথ ভট্ট প্রমুখ।
হুজুগে বাঙালি বেড়াতে গিয়ে কিছু কিনবেই। উৎকৃষ্ট পানমশলা কিছু সংগ্রহ করা হল। কেয়া একটি বেনারসী শাড়ি কিনল তাতে খসে গেল বেশ কিছু টাকা।
পরেরদিন বিদায়ের পালা। পুরোনো এই শহরটির প্রতি এক আন্তরিক টান অনুভব করলাম। হয়ত এই কারণেই বারাণসী বাঙালির দ্বিতীয় গৃহ। মনে মনে বললাম আবার আসতে হবে। কবে কে জানে!
ছবির বর্ণনা:
১) গঙ্গাতীরবর্তী বারাণসী শহর
২) নৌকাবিহারে আমরা দুজন
৩) বারাণসীর অজস্র ঘাটের একটি
৪) প্রয়াণ ঘাট
৫) ঘাট আর মন্দির যেন একাকার
৬) বাবা বিশ্বনাথের মূল মন্দিরের স্বর্ণচুড়া
তথ্যসুত্রঃ
১। Varanasi at Cross Road- স্বামী মেধসানন্দ, রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অফ কালচার
২। ঊনিশ শতকের বারাণসীঃ স্বামী মেধসানন্দ . (অনুবাদ: ডঃ বিশ্বানাথ দাস -উদ্বোধন)
বাংলার চিত্তাকর্ষক ইতিহাস সম্পর্কে জানার সময়, গৌরের মতো আর কিছু গন্তব্য হতে পারে না।…..
এপিসোড-১ (প্রথমাংশে রেল-জংশন) সে তিন যুগ আগের কথা।ঢাকা থেকে এসে বিল্টু মামা নেমেছেন কুলাউড়া জংশন…..
কবি কাশীরামদাসের জন্মস্থান পূর্ববর্ধমান জেলার সিঙ্গিগ্রামে বেড়াতে গেলাম।তাঁর জন্মভিটের ভগ্নাবশেষ দেখলাম।আমি,মিহির,রিমি,সোমা,রজত সকলে গ্রাম ঘুুুুরলাম। চারদিকে…..
ভ্রমণবিলাসী চারজন বেরিয়ে পরলাম ভ্রমণে। আমিও গেলাম।প্রথমে ওরা গেল মুকুটমণিপুর। সপ্তাহান্তে পিকনিক বা একদিনে ছুটিতে…..