রূপ-নগর

বদরুদ্দোজা শেখু
কবিতা
Bengali
রূপ-নগর

রূপ-নগর

হাঁটছি যখন নগর-সভায়
সামনে অনেক অনেক নারী এলো
রূপের ঢেউয়ে পদেপদেই
হাঁটার ইচ্ছা অনেক হোঁচট খেলো ।
( লক্ষ্য থেকে খেই হারানোর
অন্যতম ভাবনা এলোমেলো )।

সামনে থেকে দেখবো যখন
নিলাম মুখোমুখি হওয়ার ঝুঁকি ;
অনেকবারই ভুল ভেঙেছে
সাজপোষাকে আইবুড়ীদের খুকী ,
( বে-আব্রুয়ান বহর থেকে
মক্ষিরাণির রুচির বিকার টুকি )।

হাল-ফ্যাসানের জমানা ভাই
রূপচর্চায় রাখছে বয়স তাজা
রাণির মতোই মাতাল রাতে
চাইছে পেতে রমণ-ক্রিয়ার রাজা ।
( ওরা কি আর করে দূরছাই
বোনের মতো শক্ত ঘষামাজা ? )

খুঁজছে নতুন উত্তেজনা
যাচ্ছে কাফে শোরুমে সিনেমায়
খাচ্ছে ফূর্ত্তি–কুশীলবের
লিমকা বীয়ার পথের কোণায় কোণায় ।
( কেউ মাধুরী ছড়ায় , কারো
দৃষ্টি নাচে শঙ্খিনীদের ফণায় ) ।

দেখছি যাকে সদ্যঃ গোলাপ —
যায়না যতো কোনক্রমেই চাওয়া ,
একটি চুমোর রাঙা রূপক
করছে মদির অনুভূতির হাওয়া ।
( তার বিহনে মানবে সবাই
জীবনটাকে ডিমের মতো বাঁওয়া ) ।

রূপ-নগরে দেখছি জড়ো
রাজ্যের সব ভর-যুবতী নারী
তাদের জন্যে হন্যে হচ্ছে
পুরুষ লোকের অসংখ্য পায়চারী ।
( আলো-আঁধার ময়দানময়
মত্ত যুগল ভূতের সারি সারি ) ।

 

অলীক মহফিল

বাঁদী থেকে বিবি আর প্রজা থেকে রাজা
সকলেই শশব্যস্ত রূপ ঘষামাজা
করে বড়ো এ শহরে ,যেন কোনো মহতী সভায়
জড়ো হ’তে হবে দ্রুত সভ্য অভিধায় –
দামী দামী বস্ত্র কেটে উগ্র সাজগোজ
প্রদর্শন করে আর মহ্ফিলি মৌজ
খোঁজ করে রোজ রোজ নতুন নতুন,
সত্ত্বার কন্দর কাটে আসঙ্গ-লিপ্সার কালো ঘুণ-
পোকা অন্তরালে গূঢ়,সদর রাস্তায়
তার ছিটেফোঁটা ঢেউ এসে পড়ে, মায়
সস্তার চটকদার বেসাতির ফুল
প্রণয়ের অভিনয় বিকৃত ব্যাকুল
হ’য়ে ওঠে পথঘাট পার্ক রেস্তোঁরায়
অভব্য আঙ্গিকে সব নগ্ন হ’তে চায় ,
অন্দরমহলে চলে জৌলসের ক্রীম
মাখানোর অঙ্গরাগ উলঙ্গ আদিম ,
হিমঘর হ’য়ে ওঠে স্নায়ুর মহল মর্মরিত ,
খানাপিনা প’ড়ে থাকে তুচ্ছ এলেবেলে অপচিত,
পায়না নাগাল তবু স্বার্থপর কেউ কারো দিল ,
অলক্ষ্যে রগড় করে সুন্দরের অলীক মহফিল –
দরজা খোলে বন্ধ হয় ,উপচায় ভিড় ,
ছত্রখান হয় ফের ,রাত্রির জোনাকে জমে ধোঁয়াসা নিবিড় ।।

 

ফুটপাতে মেয়ে

চোখ বুজে
মেয়েটি দু’হাত তোলে কা’র কাছে?

এটা তার কৃতজ্ঞতার অনুবন্ধ ?
দেবতা তো অন্ধ ,
কোনো পথিক তো দাঁড়ায় না
কেউ সাহায্যের হাত বাড়ায় না
ধারে কাছে যায় না কেউ
দেখেও দ্যাখে না কেউ
পিলপিলে জনতার ফুটপাত
ব্যস্ততায় চেপে আসে দিনরাত
মেয়েপুরুষেরা প্রদর্শনীর সমারোহে
কিস্তি-মাত করা মোহে
মানবিক আর্তিকে পাশ কেটে ছেঁটে
চ’লে যায় দৃপ্ত পায়ে হেঁটে
চোখ-কানে খিল এঁটে সেঁটে বোধকলা,
টেঁসে যায় মর্মফলা
ভেসে যায় দলা দলা আস্থার আঙুল
অনাস্থার নর্দমায়,মত্ততায় চুল খোলে চোলির জড়ুল ।
নি-লজ্জার ঝুল ঝেড়ে মেয়েটি ঢাকতে চায় চোখ
রাখতে চায় লজ্জার শিকড় মজ্জার মোহর
ছেঁড়া শাড়ি সামটিয়ে গায় বুকের গহ্বর
ডাকতে চায় চোখ বুজে ইষ্টনাম সহিষ্ণু বিনয়ে,
সেই দেবতাও দাঁড়ায় না এসে তার পরাজয়ে
সৌজন্য-বাধিত হয়ে,তবু সে দু’হাত তোলে কা’র কাছে?
হয়তো সে দেবতা কি মানুষের কাছে নয় —
একান্তই মানবতার দুয়ারে হাত পেতে রয় !।

বদরুদ্দোজা শেখু। কবি। জন্ম ১৯৫৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গরাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘিতে। অভাব অনটনের মধ্যে তাঁর বেড়ে উঠা। প্রথাগত শিক্ষায় স্নাতকোত্তর। পেশায় অবসরপ্রাপ্ত রাজ্য সরকারি কর্মচারী, নেশায় কবিতা লেখালিখি। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: অলৌকিক আত্মঘাত, দুঃস্বপ্নের নগরে নিভৃত নগ্ন, শব্দ ভেঙে...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..