লাল চিনার পাতা (পর্ব ০১)

দেবশ্রী চক্রবর্তী
উপন্যাস, ধারাবাহিক, পডকাস্ট
Bengali
লাল চিনার পাতা (পর্ব ০১)

শরতের মাঝামাঝি সময় এরকম প্রকৃতির পরিবর্তন আগে কখনো চোখে পরে নি কোমলের। পূর্ণিমার রাতে প্রকৃতির অসাধারণ রূপের ছটা ছড়িয়ে পরে চারি দিকে । কিন্তু আজ প্রকৃতি যেন নিজেকে লুকিয়ে ফেলার সব রকমের চেষ্টায় মগ্ন । ঝিলামের ধারে যুগল পাহাড়ের মাঝে পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে , কিন্তু কালো মেঘের ওড়নাতে আজ সে মুখ ঢাকার চেষ্টা করছে । কালো পাহাড়ের ছায়া এসে পরেছে ঝিলামের বুকে , বেশ ঝড় হাওয়া বইছে আজ । চিনারের শুকনো পাতা গুলো হাওয়ার দাপটে এদিক ওদিক ছোটা ছুটি করছে । কলেজ থেকে রহমতের বাড়ি গিয়েই দেরি হয়ে গেলো, দাদাজি মনে হয় বেশ চিন্তা করছে । কিছুটা পথ চলার পর মনে হলো রাত বেশি হয় নি, কিন্তু রাস্তা ঘাট অন্য দিনের চেয়ে আজ বেশি ফাঁকা । চিনারের শুকনো পাতা গুলো পিচের রাস্তার ওপর দিয় সর সর করে আওয়াজ করে ছুটে চলেছে । কিসের এত আশঙ্কা, প্রকৃতি কিসের সঙ্কেত দিচ্ছে কোমল তাঁর অন্তর দৃষ্টিতে বোঝার চেষ্টা করছে । রাত বেশি না, কিন্তু মনে হচ্ছে অমাবস্যার চেয়েও অন্ধকার এই অধ্যায় । জামা মাসজিদ আর হজরতবলে নামাজ পড়া শুরু হতেই কাশ্মীর উপত্যকার অন্য মাসজিদ গুলোতে এক সাথে নামাজ পড়া শুরু হলো । কোমল মাথার ওপর মাফলারটা ভালো করে পেঁচিয়ে নিলো । পাপার বন্ধু ফিরোজ চাঁচা ছোটবেলা থেকে শিখিয়েছে নামাজ পড়ার সময় মাথা খালি রাখতে নেই , এই সময়টা সারা দিনের মধ্যে বেশ আরামদায়ক এক মুহূর্ত , দাদাজি বলেন সাঁঝের প্রদীপ যখন জ্বলে তাঁর উজ্জ্বল আলো ডুবন্ত সূর্যের রূপ নিয়ে প্রতিফলিত হয় ভূস্বর্গের বুকে, তখন মন্দিরের ঘণ্টা আর নামাজের ধ্বনি ঝিলামের জলে জলতরঙ্গের ঢেউ তোলে , এই সময় কবিতা খাগের কলমের ডগা দিয়ে সূর্যের কিরণে রচিত স্বর্ণ সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসে সাদা কাগজের বুকে,কিন্তু আজকের সন্ধ্যা অন্য সন্ধ্যার চেয়ে বেশ আলাদা মনে হচ্ছে,আজকের আজান ধ্বনি ভীষণ রকমের গম্ভীর, এক ভয়ঙ্কর রণ বাদ্যের মতন শোনাচ্ছে । কথা গুলো ভাবতে ভাবতে কখন বাড়ির প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে গেছে ও।

 

লেখাটির অডিও শুনুন এখানে:

রবি চাঁচুর চায়ের দোকানটা আজ খোলা নেই, কিন্তু উনুনের ধোঁয়াটা এখনও দেখা যাচ্ছে যা কুণ্ডলী পাকিয়ে উঠে যাচ্ছে কালো অন্ধকারের মাঝে , কিছুক্ষণ আগে দোকান বন্ধ করেছে ,কিন্তু এ চিত্র তো বিরল, এরকম কেন হলো , এ তো হবার কথা না । সেই ছেলেবেলা থেকে রবি চাচুর দোকানে রেডিওতে খবর শুনে কোমল বড় হয়েছে, দেশ কাল পরিস্থিতির সব কিছু বুঝেছে এই খবর শুনে । সন্ধ্যা হলেই কোমলদের বাড়ির নীচে এই দোকানে খবর শুনতে জমা হয় ডাউন টাউনের মুস্তাক,সাহিল, ওমার , মহেশ্বর চাচুরা । খবর শোনা আর চা খাওয়া দুটো কাজই এক সাথে হয় । কোমলদের শোবার ঘরের জানালার ধারে বসে ও যখন পড়ে তখন মন দিয়ে এঁদের আলোচনা ও শোনে । লাইট পোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে হাত ঘড়ির সময়টা দেখল সন্ধ্যা ৭ টা ১০ , সন্ধ্যা হলে খবরের নেশা চেপে ধরে, সাতটার খবরের সময় এই দোকানে চায়ের বিক্রি সব থেকে বেশি , ৭ টার আগে দোকান বন্ধ করে দিলো কেন ! শরীর খারাপ হয়েছে হয়ত । বাড়িতে ঢুকতে যাবে ডান দিকে নেম প্লেটে চোখ পরল ,নেম প্লেটে বড় বড় করে লেখা থাকে দাদাজির নাম অশোক জুতসি, ডাউন টাউন, বাদজালা কিন্তু আজ নেম প্লেটটা একটা কাগজে ঢাকা, একটা নোটিশ টাঙ্গান মনে হচ্ছে , অন্ধকারে বোঝা যাচ্ছে না লেখা গুলো । ঠাণ্ডায় চোখ দুটোও অবশ হয়ে গেছিল, কাগজটা ছিঁড়ে নিয়ে পকেটে ঢুকিয়ে দরজাতে ধাক্কা দিলো কোমল । অন্য দিন দরজা ধাক্কা দিতেই খুলে যায়, আজ কিন্তু খুললো না । কোমল জোড়ে জোড়ে ধাক্কা দিতে কিছুক্ষণ পর ভাঁড়াটে জসবিন্দর ভাবি দরজা খুলে বলল, এত রাতে আর বাড়ি ফিরিস না, শহরের অবস্তা ভালো না। কোমল কিছুই বুঝতে পারল না এক রাতের মধ্যে কি এমন পাল্টে গেল । ও বলল,

কি হয়েছে একটু খুলে বলবে ।

জসবিন্দর নিজের কপালে চাটি দিয়ে বলল, নাও ঠেলা । আমরা বাড়িতে থেকে সব খবর জানি, ছেলে কলেজ থেকে ফিরে বলছে কি হয়েছে । ভেতর থেকে জসবিন্দরের স্বামী বিকাশ ওকে ডাক দিলো । ও দরজা বন্ধ করে কোমলকে বলল, যা ওপরে যা । আর বেশি রাত করিস না ।

ভাবি চলে গেলে কোমল কাঠের সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে আসতে থাকে, কাঠের সিঁড়িতে বুট জুতো গুম গুম শব্দ তোলে, কিছুটা উঠে কমলের চোখ পরে খোলা উঠানের ইঁদারাটার দিকে । পাশের চিনার বনের শুকনো পাতা গুলো সারা উঠানে ঘুরপাক খেয়ে ফিরে আসছে কোমলের দিকে , আজ ইঁদারাটাকে খুব একা লাগছে । মনে হচ্ছে, এক বুক কষ্ট নিয়ে ও একা দাঁড়িয়ে আছে ঝড়ের মাঝে । দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খাবা র গন্ধ নাকে আসছিল, সারা দিন পর এক কাঁপ গরম খাবা চোখের সামনে ভেসে উঠতেই কোমল জিভ দিয়ে ঠোট টা একটু চেটে নেয় । এমন সময় পেছন থেকে কে ডাক দেয় , কোমল ।

কোমল পিছন ঘুরে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে আসতেই আলো ছায়ার মধ্যে দুটো উজ্জ্বল চোখ ভেসে ওঠে । কাঠের অন্ধকার বারান্দায় রান্নাঘরের আলো এসে পরেছে । তাতে দাঁড়িয়ে আছে দাদি, দাদির হাতে কাঠের ট্রে, তাঁর মধ্যে এক কাঁপ গরম খাবা। এই গন্ধটাই নিচ থেকে পাওয়া যাচ্ছিল । কোমল দাদির সামনে এসে দাঁড়াল,

খাবা খাবি বেটা ?

কোমল ইয়ার্কি করে বলল, দাদির হাতে গরম খাবা, এই নিয়েই অসাধারণ সায়রি লেখা যায়

দাদি হাসতে হাসতে বলল, ইয়ার্কি করিস না, হাত মুখ ধুয়ে আয়।

দাদির মুখের এই হাসি কোমল দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে দেখছে,যার কোন পরিবর্তন নেই। এক অসাধারণ মমত্ব ,আস্তা আছে এতে। কিন্তু মুখটা পরিবর্তন হয়ে গেছে। একটা দেশের মানচিত্রের মতন কত রেখা জন্মেছে । দাদিকে আজ একটা অখণ্ড দেশের মতন লাগলো কোমলের ।

চিত্র: রিয়া দাস

কোমল ঘরে চলে গেলে দাদি কাঠে ট্রেতে খাবা নিয়ে ঢুকল দাদাজির ঘরে । দাদাজি লেখার টেবিলে বসে টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করছে । দাদি খাবার কাঁপটা টেবিলে রেখে বেরিয়ে যাবে, এমন সময় দাদাজি বলল, কোমল ফিরেছে ?

দাদি মাথার ওপর থেকে ওড়না টা কপালের কাছে টেনে বলল ,

এই ফিরলো ।

দাদাজি চশমাটা টেবিলের ওপর রেখে বলল, রমা আজকের নিউজটা শুনেছ ?

দাদি বায়রের দুনিয়ার সাথে সম্পর্ক খুব কমই রাখে, সে মনে করে তাঁর ঘর সংসার পাড়া প্রতিবেশী দের নিয়েই তাঁর জগত, তাঁদের সুখ দুঃখে সব সময় সে হাত বারিয়ে থাকলেও সারা পৃথিবীর খোঁজ সে খুব কমই রাখে । দাদি ক্লান্তিতে ভরা দুটো চোখ কোনক্রমে মেলে রেখে বলল, না ।

দাদাজি বলল, খবর শুনতে হবে, না হলে পরিস্থিতি জানবে কিভাবে । সকালে ইঁদারার ধারে প্রতিবেশিনীদের সাথে গল্প না করে খবরের কাগজটাতো এক বার পড়তে পারো ।

দাদির মনে হলো ৫৩ বছর বিবাহিত জীবনে কোন দিন দাদাজি তাঁকে খবরের কাগজ পড়তে বলে নি , আজ এমন কি হলো ।

কি হয়েছে না বললে বুঝব কি করে ।

স্বামীর এরকম অসহায় দৃষ্টি রমা জুতসি এত বছরে কোন দিন দেখেন নি । তাঁর স্বামী এই উপত্যকার নাম করা কবি, এক নামে তাঁকে সবাই চেনে, দুই ছেলে এবং এক পুত্র বধূকে হারিয়ে সে কোন দিন স্ত্রীর সামনে তাঁর অসহায়তার প্রকাশ করেন নি। যে স্বামীর ওপর অন্ধের মতন সে এতদিন নির্ভর করে এসেছেন, তাঁর চোখে আজ এত অসহায়তার কারণ কি বুঝতে পারছেন না রমা জুতসি ।

নবাব কন্যা যা আরম্ভ করেছে, আমরা মনে হচ্ছে না আর বেশি দিন এই উপত্যকায় থাকতে পারব ।

নাবাব কন্যা যে কে, তা বুঝতে অসুবিধা হলো না দাদির । শুধু মজা করে বলল, প্রতিবেশিনী তো তাই আমাদের সুখ দেখতে পারছেন না, এরকম একটু হয় । এ নিয়ে এতো ভেবো না ।

দাদাজি বললেন, নিজেকে নিয়ে কি আর ভাবছি, আমার সব চিন্তা ওই ছেলেকে নিয়ে ।

কথাটা শুনে দাদির মনে ছ্যাঁত করে উঠলো । ১২ বছর আগের সেই ভয়ঙ্কর দিনটা চোখের সামনে ভেসে উঠল । এরকমই এক সন্ধ্যা বেলা, রমজান মাস চলছে । বউমা তৈরি হচ্ছিল বড় ছেলে এলে ওরা এক বন্ধুর বাড়ি যাবে । এমন সময় বড় ছেলে তাঁর দুই বন্ধুকে নিয়ে আসে, বলে এঁরা ওর নিউস পেপার “চিরাগের” হয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করছে । বউমা চা করতে গেলে রান্না ঘর থেকে গুলির শব্দ পায় , ও ছুটে এসে দেখে আমার দুই ছেলে রক্তাক্ত অবস্তায় পরে আছে , ওরা বউমাকেও গুলি করে । সেদিন অশোক বাবু তাঁর স্ত্রী আর ৫ বছরের নাতিকে নিয়ে পেছনের লোহার পেঁচান সিঁড়ি দিয়ে নেবে পালিয়ে গেছিল আশা আর বরুণ লাল সালার বাড়ি । সেদিন বরুণ না থাকলে এই কোমলকেও হারাতে হত । দাদি ঘর থেকে বেরিয়ে রান্না ঘরের দিকে গেলো, ছেলেটার খিদে পেঁচে, সারা দিন বায়রে কি যে খায় কে জানে , দাদি আটা মাখতে বসলো । বায়রের ঝড়ের দাপট রান্না ঘরে এসে ঢুকতেই স্টোভের আগুণ টা দপ করে নিভে গেলো । এই মুহূর্তে লোডশেডিং হয়ে গেলো । অন্ধকারে চাঁদের আলো দাদির মুখে এসে পরল জানালা দিয়ে, চোখে ঝড় হাওয়ার সাথে বালি এসে পরল, দাদি চোখ খুলে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে, ছোট খাট বালি গুলো চোখের মধ্যে কচ কচ করছে , দাদি তাকিয়েয়াছেন , একটা কালো মেঘ এসে চাঁদটাকে ঢেকে দিতেই দাদির মুখটা অন্ধকার হয়ে গেলো ,কমলের ঘর থেকে কাঁচের গ্লাস ভাঙ্গার শব্দ হতেই দাদাজি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালেন ।

বাইরে ঝির ঝির করে বরফ পরছে , হাবালদার বরুণ লাল সালা তৈরি হচ্ছে, আজ নাইট ডিউটি পরেছে গুলসন বাগে । আশা টিফিন বক্স কাপড়ে বেঁধে ব্যাগে ঢোকাতে ঢোকাতে বলল, আজ আবহাওয়া ভালো না , লঙ্গ জ্যাকেটটা নিয়ে যাও সঙ্গে করে ।

বরুণ বলল, দাও বার করে দাও । আজ শরীরটাও ভালো লাগছে না । কথা বলতে বলতে লোডশেডিং হয়ে গেলো ।

এখনই কারেন্ট যেতে হলো , দাঁড়াও হ্যারিকেনটা নিয়ে আসি ।

আশা পেছন ঘুরতেই বরুণ ওকে জড়িয়ে ধরলো । আজকাল তো বাচ্চার সামনে তোমাকে খুঁজেই পাইনা , আমার মতন অভাগা মানুষরা তো এই সুযোগের অপেক্ষাই থাকে । পাশের ঘর থেকে মেয়ে নেহা চিৎকার করে উঠল, মাম্মি কোথায় গেলে তুমি ? দেখতে পাচ্ছ না আমি অন্ধকারে বসে আছি । আশার গলার আওয়াজ না পেয়ে নেহা আরও জোড়ে চিৎকার করা আরম্ভ করে দিলো ।

দেখেছ তো , কি করি বলো ।

হাবালদার বরুণ স্ত্রীকে বলল, তোমার মেয়েকে বোঝাও না হলে আমি কিন্তু অন্য কারুর কাছে চলে যাব বলছি ।

আশার আজকাল খুব ভয় করে, সংসার সামলাতে সামলাতে এত ব্যস্ত হয়ে পরেছে ও যে স্বামীর মন রক্ষাই আজকাল হয় না । কিরণ পণ্ডিতের বাড়ি আজকাল খুব যাতায়াত হয়েছে বরুণের । এই কিরণ পোস্ট অফিসে কাজ করে, প্রতি মাসে টাকা জমা দিতে গিয়ে দুজনার বন্ধুত্ব হয়েছে মনে হয় । আশা বাড়ির বাইরে না গেলেও সব খবর ওর কাছে আসে । সে দিন চম্পা টাপ্লু বলছিল, ও বেশ কয়েক বার কিরণ আর বরুণকে এক সাথে দেখেছে । হ্যারিকেন জ্বালিয়ে আশা নেহার ঘরে দিয়ে আরেকটা হ্যারিকেন জ্বালিয়ে স্বামীর কাছে এলো । আশা বিমর্শ হয়ে তাকিয়ে আছে স্বামীর দিকে , বরুণ বুঝতে পারে এই ভাষা , ২০ বছরের এই দীর্ঘ সম্পর্ক, এই মহিলার চরিত্রের পুরোটাই ও বোঝে ।

বরুন কোর্ট পড়তে পড়তে বলল, আমি কারুর কাছে যাব না আশু । তোমার চিন্তা নেই, আমি মজা করি তোমার সাথে । স্ত্রীর গালে হাত রেখে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলো বরুণ, তারপর বলল, আশু আকাশের অবস্তা ভালো না , আমি বেরিয়ে যাই, বরুণ ছাতা মাথায় দিয়ে সাইকেলে চরে বসলো, তারপর বলল, আজ তুষার পাত হবে , সাবধানে থেকো ।

চারিদিক অন্ধকার, তার মাঝে বরুণের সাইকেলের হেডলাইটের আলো সরু হয়ে এঁকে বেঁকে এগিয়ে গিয়ে মিলিয়ে গেলো, এখন আর কিছু দেখা যাচ্ছে না । ভয়ঙ্কর অন্ধকার । ঝির ঝিরে বরফের কুচি আশার মুখে এসে পরল , এই ভয়ঙ্কর অন্ধকারে মাঝে মাঝে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে আশার । কিন্তু এই অন্ধকারে যারা বেরিয়েছে তাঁরা কিন্তু ফিরে আসে নি । দু বছর আগে আশার ছোট বোন রুপা এরকম অন্ধকার রাতে বাড়ির থেকে বেরিয়ে গেছিল আর ফিরে আসে নি । দুদিন পর ছবি উঠেছিল পত্রিকাতে, ও বরুণের বন্ধু ফিরোজের ভাই ফারুককে বিয়ে করে ইসলাম কবুল করেছে এবং এও জানিয়েছে যে সে স্বাবালিকা, নিজের ভালো নিজে বোঝে । ভেতর থেকে নেহা ডাক দিলো মাম্মি, কোথায় তুমি , দেখছ না আমি একা । আশার ভয় করল এই অন্ধকারের মধ্যে দরজা খোলা রাখা ঠিক না । নেহা বড় হচ্ছে । আশা দরজা বন্ধ করে ঘরে গিয়ে ঢুকল । বরুণের নাইট ডিউটি থাকলে এই সময়টা খুব একা লাগে ওর । কিছু ভালো লাগে না । বরুণ ঘরে থাকলেও তো কাছে বসা, দুটো সুখ দুঃখের কথা কিছুই বলা হয় না , নেহা সব সময় মাকে পাহারা দিয়ে রাখে । এই মুহূর্তে বরুণের খারাপ পথে যাওয়াটা খুব সহজ , ছোট খাটো আশা আকাঙ্ক্ষা গুলো যখন মানুষের পূর্ণ হয় না তখনি সে বিকল্প পথ খোঁজে । আশা লক্ষ্য করে নি যে মেয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে ।

কি ভাবছ মাম্মি ? পাপার কথা ?

আশার আজকাল বিরক্ত লাগে না, কথা গুলো শুনে শুনে ওর অভ্যেস হয়ে গেছে । আশা বলল, তুমি পড়, হ্যারিকেনে তেল কম, একটু পরে খেয়ে শুয়ে পড়তে হবে ।

নেহা খুশি হয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়ে বলল, আমার মাম্মি ।

পাপা বাড়িতে যতক্ষন না থাকে স্নেহার শান্তি, মায়ের ওপর মনে হয় ওরই একমাত্র অধিকার , মা ওর সব থেকে কাছের মানুষ কিন্তু বাবা ঘরে এলে মা কিরকম যেন পাল্টে যায় । তাই বাবাকে সহ্য হয় না ওর ।

রাত তখন ১২ টা হবে, নেহা ঘুমিয়ে পরেছে, আশা অন্ধকারে তাকিয়ে আছে, দু চোখের পাতা এক করতে পারছে না ও । উল্টো পাল্টা চিন্তা মাথায় আসছে , রান্না ঘরের জানালাটা মনে হয় দেওয়া নেই , ঝড়ের দাপটে আওয়াজ হচ্ছে । একটা আওয়াজ হলো, এই আওয়াজ এই উপত্যকার মানুষদের কাছে খুব পরিচিত, মৃত্যুর সঙ্কেত, ডানদিকের থেকে আওয়াজটা এলো মনে হচ্ছে , এত দিন সব ঠিকঠাক চলছিলো, আবার কি আরম্ভ হয়ে গেলো, কার সর্বনাশের এই সঙ্কেত, বা চোখটা আজ ভীষণ কাঁপছে, আশার মনটা ভীষণ অস্থির লাগছে , বাইরে তুষার পাত হচ্ছে, কিন্তু ওর শরীরে ঘাম দিচ্ছে , এরকম ভয়ঙ্কর প্রলয়ের রাত ও এর আগে কখনো দেখে নি । এই রাতে নাইট ডিউটি দিতে গেছে, মানুষটা নিজের কাজ ছাড়া আর কিছুই চেনে না । এক দিন এমন নেই যে বরুণ অফিস না গিয়ে বাড়িতে রয়েছে,রোজ ওর যাওয়া চাই । গত বছর ইনফ্লেঞ্জা হয়েছিল , সেই নিয়ে ও অফিস করেছে । অন্ধকার ঘরের মধ্যে ফোনটা বেজে উঠতেই নেহা গুঙিয়ে উঠলো, উফফ শান্তিতে একটু ঘুমতে দেবে না । নেহা পাশ ফিরল । আশার বুক কাঁপছে, এত রাতে কে ফোন করলো । আশা কোনক্রমে উঠে দাঁড়িয়ে ফোনের শব্দকে অনুসরণ করে সামনের টেবিলের দিকে এগিয়ে গিয়ে রিসিভারটা তুলতেই ফোনটা কেটে গেলো । আশা বিছানায় ফিরে আসছে, এমন সময় ফোনটা আবার বেজে উঠলো ।

হ্যালো ।

আজ গুলসন বাগে যেটা হলো , সেটা একটা ছোটো খাটো ট্রেলার ছিলো ।

কথা গুলো স্পষ্ট না, মানুষ যখন খুব চাপে থাকে তখন তার মাথার কোষ গুলো কাজ করে না । তাই কানে কথা গুলো মনে হয় ঠিক ঢুকছিল না ।

আশা আবার বলল, হ্যালো ।

এবার কথা গুলো বেশ পরিষ্কার ।

বলছি, সময় থাকতে হাসবেন্ডকে বলুন এখান থেকে আপনাদের নিয়ে চলে যেতে , না হলে এর ফল ভালো হবে না ।

আশার হাত থেকে রিসিভারটা পরে গেলো । দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে ও বসে পরল কার্পেটের ওপর । কাঠের বাড়ির ছাঁদে বৃষ্টি পরার শব্দ হতে থাকলো ।

সকাল হতেই নাফতজালা অঞ্চল অন্য দিনের মতন রাতের ক্লান্তি ভুলে গিয়ে নতুন রূপে জেগে ওঠে, প্রত্যেক বাড়িতে পূজা পাঠ শুরু হয়ে যায় , শম্ভু গোয়ালা সাইকেলের বেল বাজাতে বাজাতে ঢুকে পরে এই অঞ্চলে, বাড়ি বাড়ি খবরের কাগজ পরতে থাকে তীরের গতিতে ,গত রাতে তুষার পাতের ফলে এই অঞ্চল আজ সাদা বরফে ঢেকে গেছে , চিনার গাছ গুলো মনে হচ্ছে সাদা মাথা ঢাকা টুপি পরে দাঁড়িয়ে আছে । সময় থেমে থাকে না, দুশ্চিন্তা মানুষের মনে চিরস্থায়ী হয় না, সকালের সূর্যের প্রথম কিরণ যখন এসে পরে বরফের ওপর, তার শ্বেত শুভ্র প্রতিফলনেই মানুষের মনে এক শান্তির অউরার শুভ সূচনা হয়। এই অঞ্চল কাশ্মীরের নামী পণ্ডিত পরিবারের বসবাস। গত রাতে কোমল একটা কাঁচের গ্লাস ভেঙ্গেছে, দাদির মনে শান্তি নেই, কারণ কাঁচের জিনিস ভাঙ্গা অমঙ্গলের প্রতীক । দাদি সকাল সকাল স্নান করে পূজা পাঠ করে সারা ঘরে ধুপ,ধুনা দিচ্ছেন, এই সময় দাদির ঘণ্টার টুং টাং শব্দে কোমলের ঘুম ভাঙ্গে । কোমল মজা করে বলে দাদির ঘণ্টা আমার কাছে মোরগের ডাকের সমান । দাদি কোন কিছু মনে করে না, তার কাছে কোমলের সব কথা বাল গোপালের মহিমার মতন শোনায় । দাদাজি টেবিলে বসে মন দিয়ে খবরের কাগজ পড়ছেন, আজ ভোরের দিকে কারেন্ট এসেছে , দাদাজির টেবিল ল্যাম্পের আলো ঘরের কাঠের মেঝের ওপর এসে পরেছে । ধুপ ধুনার গন্ধে এক খন্ড স্বর্গ নেমে এসেছে জুতসি ভিলাতে । দাদির পূজা শেষ হতে এখনও এক ঘণ্টা সময় লাগবে, কারণ পূজা শেষ হলে দাদি কিছুক্ষণ ধ্যান করেন ঠাকুরের সামনে, কাঁদেন, কি যে বলেন কোমল কিছু বোঝে না । টুথপেস্ট টা ব্রাশে লাগিয়ে কোমল বারান্দায় এসে দাঁড়ালো ।আজ রবি চাচু দোকান খুলেছে, রেডিওতে আমির খান আর মাধুরীর গান চলছে, উনুনের থেকে ধোঁয়ার গন্ধ বের হচ্ছে , এই গন্ধটা মনকে মাতিয়ে দেয়, আজ পরিবেশ বেশ মনরম , মনে হচ্ছে সাদা বরফের ওপর লাল নীল ফুল ফুটে আছে , নানা রঙ্গের ইউনিফর্ম পরা বাচ্চারা স্কুলে যাচ্ছে বাবা মায়ের সাথে , মাঝ পথে দাঁড়িয়ে একটু বরফ হাতে তুলে খেলছে নিজেদের মধ্যে । কোমলের নিজের ছোটবেলার কথা মনে পরে যায় । দাদাজির হাত ধরে কোমল বরফের পথ বেয়ে স্কুলে যেত , মাঝ পথে দাদাজি বরফ হাতে তুলে সূর্যের আলোর সামনে ধরে বলতেন দেখ কোমল, ভগবালের তৈরি হিরে, কোমল দেখতে পেত, বরফের মাঝখান দিয়ে যখন সূর্যের আলো ঢোকে অসাধারণ আলোর ছটা বের হয় তাই দিয়ে । ফিরোজ চাচু একবার বলেছিলেন এঁকে এস্নোয়ারা বলে উর্দুতে । বরফ যখন গলে যেতো, কোমল বলতো, দাদাজি, তোমার বরফ গলে গেলো । দাদাজি বলতেন আমরা পাপী মানুষ,আমাদের নোনা হাতে ভগবানের সৃষ্টি বেশিক্ষণ থাকে না । দাঁত মাজতে মাজতে কোমলের চোখ পরল রাধার দিকে, রাধা আজও স্কুলে যাচ্ছে আকাশি রঙ্গের সালোয়ার কামিজ, আকাশি সোয়েটার পরে । কোমলদের পাশের বাড়িতেই থাকে রাধা, কোমলের দাদি রাধার দাদির বন্ধু । রাধার দাদু টুনি লাল টপ্লু এই অঞ্চলের নামি ব্যারিস্টার । ছোট বেলা থেকে রাধাকে ও চেনে , কিন্তু রাধা যে এত সুন্দর তা আগে কখনো মনে হয় নি কোমলের । সকালের প্রথম শিশির বিন্দুর মতন রাধা পবিত্র,স্বচ্ছ । কোমলের মনে হয় দাদির কৃষ্ণের পাশে যে রাধা আছেন, এই রাধার মুখটা অবিকল তারই মতন । কোমল যে ওকে লক্ষ্য করে তা রাধা জানে । তাই কোমলদের বাড়ির নিচে এসে একবার তাকিয়ে দেখে ওপরের দিকে । দুই চোখ এক হলে কয়েক ফোঁটা শিশিরের বিন্দু ঝরে পরে চিনারের পাতা থেকে । এমন অলৌকিক মুহূর্ত কয়েক যুগে একবার আসলেও কোমল আর রাধার জীবনে রোজই আসে । দাঁত মাজতে মাজতে মুখটা কখন যে ফেনায় ভরে গেছিলো, কোমলের মনে নেই, বিস্ফোরণটা হলো দাদাজির চিৎকারে । মুখ থেকে ফেনা ফেরিয়ে গলা দিয়ে গড়িয়ে পরল কোমলের বুকে ।

কোমল রাধার দিকে তাকিয়ে বলল, আসছি দাদাজি ।

কোমলের এই পরিণতি দেখে সে দিন রাধা না হাসলে ওর বন্ধুরা হেসে ছিলো, যা রাধার মোটেও ভালো লাগে নি । দাদি পূজা শেষ করতে পারলেন না , ছুটে এলেন দাদাজির ঘরে । দাদাজি খবরের কাগজের শেষ পাতা দেখিয়ে বললেন দেখ কি হয়েছে । কোমল দেখল ছোট্ট একটা খবর গুলসন বাগে বোমা বিস্ফোরণ, একজনের মৃত্যু । হাবালদার বরুণ সালা গুরুতর আহত । দাদি মুখে হাত রেখে বলল,

হাঁয়, আমাদের বরুণ নাকি গো ।

দাদাজি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানাতেই দাদি ফোনের রিসিভারটা কানে তুলে নিলো । দাদাজি বলল কাকে ফোন করছ ?

দাদি বলল, আশা নেহাকে নিয়ে একা আছে , তুমি গাড়ি বার করো, আমি ওর কাছে যাবো ।

কোমল কাগজটা খুলে রিপোর্টটা খুব ভালো করে পড়ল । তার পর বলল,এত গুরুত্বপূর্ণ একটা খবর শেষের পাতায় !

ভোট ব্যাঙ্কে আমাদের মূল্য নেই, তাই আমরা মরলাম কি বাঁচলাম তার মূল্য খুব কম ।

দাদাজি কথা গুলো বলতে বলতে কোর্টটা পড়লেন ।

দাদি বলছে, রিং হলে যাচ্ছে কিন্তু কেউ ফোন তুলছে না । দাদাজি বললেন, বরুণ স্টেট জেলানেল হসপিটালে আছে, ওখানেই চলো ।

দাদিরা চলে গেলে কোমলের মাথায় কাল রাতের একটা ছোট্ট ঘটনা কাজ করতে থাকলো , কাল রাতে দাদাজির নেমপ্লেটের ওপর একটা নোটিশ ছিলো । কাল রাতে সেটা পড়া হয় নি । কি ছিলো সেই নোটিশে যা নেমপ্লেট ঢেকে লাগাতে হয়েছে । কোমল নিজের ঘরে গিয়ে প্যান্টের পকেট থেকে কাগজ টা বার করে দাদাজির ঘরে এসে টেবিলের ওপর রেখে পড়ল, কাশ্মীরি ভাষায় বড় বড় করে লেখা আছে অশোক জুতসি কাশ্মীর ছাড়, না হয় মর । কোমল দেখল গত রাতে গুলসন বাগে যতজন হাবালদার পাহারাতে ছিলেন , যাঁদের নাম খবরের কাগজে উঠেছে তারা প্রত্যেকে কাশ্মীরি হিন্দু পণ্ডিত । কোমলের হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে এলো, তাহলে কি পরিকল্পনা করে ওদের সরিয়ে দেবার চেষ্টা শুরু হলো । দাদাজির এই মুহূর্তে রাস্তায় বের হওয়া ঠিক হয় নি । কোমল নিজের হাত নিজেই কামড়াতে থাকল, কেন কাল রাতে ঘরে এসে ও নোটিস টা পড়ে দেখলো না । দাদাজির যদি কিছু হয়,ও নিজেকে কখনই মাফ করতে পারবে না । কোমল নোটিশটা পকেটে পুরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ল , আজ প্রকৃতির রূপের ছটা চারিদিকে ছড়িয়ে পরেছে । সাদা বরফের মাঝে কাঠের বাড়ি গুলো অসাধারণ লাগছে। কাঠের ওপর সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়ে একটা লাল আভা বের হচ্ছে । অন্য দিন হলে কোমল কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখত, কিছু সায়েরি মনে করার চেষ্টা করত ,কিন্তু আজ ও পাগলের মতন ছুটছে । কিছুটা যাবার পর ওর সাথে মুস্তাকের দেখা হলো । মুস্তাক ওর সাথে স্কুলে পড়ত, এখন একটা গ্যারাজ চালায় ।ও কোমলকে এই ভাবে ছুটতে দেখে ওর বাইক নিয়ে দাঁড়াল । আরে কোথায় ছুটছিস সকাল সকাল ।

কোমল ওকে বলল, ভাই আমাকে এক্ষুনি স্টেট জেনারেল হসপিটালে ছেড়ে দিবি চল । মুস্তাক ওকে নিয়ে চলল, পথে দুবার জিজ্ঞাসা করেছিলো, কিরে দাদা দাদি ঠিক আছে তো । কোমল কোন উত্তর না দিয়ে কেঁদে ছিলো । হস্পিট্যাল পর্যন্ত আর পৌঁছাতে হলো না, পথেই দাদাজির গাড়ি ওরা ধরে ফেললো । কোমলকে এই ভাবে আসতে দেখে দাদাজি ভয় পেয়ে গেলেন , ভাবলেন বাড়ির ওপর আবার কোন হামলা হলো নাকি । কোমল বাইক থেকে নেমে, দাদাজির গাড়ির দরজা খুলে দাদাজিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো । দাদি বলল, কি হয়েছে লালা, কাঁদছ কেন ?

কোমল পকেট থেকে কাগজ টা বার করে দাদাজির হাতে দিলো । দাদাজি কাগজটা পড়ে কোমলকে বলল গাড়িতে উঠে বস । তোর দাদিকে হাসপাতালে ছেড়ে আমাদের খবরের কাগজের অফিসে যেতে হবে । মুস্তাক এসে বলল, দাদাজি আমি আসবো ?

দাদাজি বলল তুমি তোমার কাজে যাও মুস্তাক, আমি সময় মতন তোমাকে ডেকে নেবো ।

কোমল গাড়িতে উঠে বসল দাদির পাশে । দাদি শাড়ির আঁচল দিয়ে কোমলের চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলল, আমি আছি লালা, চিন্তা করতে নেই, শরীর খারাপ হয় । কোমল দাদির কথা গলো শুনে আরও অসহায় হয়ে গেলো, কারণ দাদির কথা গুলো দাদির বার্ধক্যের ইঙ্গিত দিচ্ছিলো । কোমল কেঁদে ফেললো । দাদাজির গাড়ি হর্ন বাজিয়ে এগিয়ে চলল । রাস্তার দুই ধারে স্কুলগামী বাচ্চারা গাড়ি দেখে টাটা করতে থাকলো ।

দেবশ্রী চক্রবর্তী। কবি, লেখক ও ঔপন্যাসিক। দেবশ্রীর জন্ম ১৯৮২ সালের ৯ ই এপ্রিল। উত্তর ২৪ পরগণার ইছাপুরে। আদি নিবাস বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া। কৈশোর কেটেছে ইছাপুরে। ইছাপুর নবাবগঞ্জ বালিকা বিদ্যালয় থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর ব্যারাকপুর রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজ থেকে ইতিহাসে অনার্স...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ