করাচিতে নজরুল
করাচি বন্দরে এককালে গ্রিক-পারসিক-আরবীয় সওদাগরেরা নোঙ্গর করেছে; অনেক স্থাপত্য চিহ্ন আজো রয়ে গেছে; যা…..
আগের পর্বে যা বলা হয়েছিল
ব্যাকটেরিয়া কোষে যেহেতু আধুনিক কোষের মতো জটিল সাজসরঞ্জাম অনুপস্থিত, তাদের ক্ষুদ্র না হয়ে উপায় নেই। সেটা না হলে কোষের বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় জেনেটিক তথ্য উৎস থেকে লক্ষ্যে পৌঁছতে বেলা কাবার করে দেবে।
আধুনিক কোষের মতোই ব্যাকটেরিয়াতেও জেনেটিক তথ্যের পাচার হয় দুটো ধাপ-এ: ট্রান্সক্রিপশন (অর্থাৎ, DNA থেকে RNA-তে পরিবর্তন) আর ট্রান্সলেশন (অর্থাৎ, RNA থেকে প্রোটিন)। সুপাররেসল্যুশন মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে ব্যাকটেরিয়া কোষে উঁকি মেরে দেখা গেলো যে আধুনিক কোষের মতোই দুটো ধাপ হয় দু-জায়গায়। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার কারণ এর আগে ভাবা হতো ট্রান্সক্রিপশন-এর সাথে সাথেই ট্রান্সলেশন হয়। দুটো ধাপ দু-জায়গায় হওয়ার ফলে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গাতে পরিবহন-এর প্রশ্ন এসে যায়।
ব্যাকটেরিয়া-র আদিম কোষে এই পরিবহন হয় ডিফিউশন বা ব্যাপনের মাধ্যমে। এক জায়গায় কোনো অণুর জমায়েত হলে তারা সময়ের সাথে সাথে ছড়িয়ে পড়তে চায়, এটাই ডিফিউশন। এই পদ্ধতি বড় মন্থর। তাই, ব্যাকটেরিয়া কোষের কাজকর্মে যাতে অহেতুক ঢিলে না পড়ে যায়, পরিবহনের পথ যত ছোট হয়, ততই মঙ্গল। ফলে ব্যাকটেরিয়া-রা সবাই লিলিপুট। এই লিলিপুট-দের জগতে যদি হঠাৎ অনেক বড় একটা সদস্যের আবির্ভাব হয়, তাহলে বিজ্ঞানীদের ভাবনা-র বিষয় হবে বৈকি। তখন নতুন করে ভাবতে হবে, এই গালিভার তথ্য পরিবহনের সমস্যাটা সমাধান করলো কিকরে?
সম্পূর্ণ কাহিনীটি জানতে ১ম পর্বটি একবার ঝালিয়ে নিতে পারেন।
গালিভারদের কথা
এই লিলিপুটদের জগতে কিছু গালিভার রয়েছে । এর মধ্যে কেউ কেউ দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে সাধারণ ব্যাকটেরিয়াদের তুলনায় ১০০-২০০ গুন বড়। সুতরাং আয়তনে আমাদের মডেল ব্যাকটেরিয়া ‘ই. কোলাই’-এর তুলনায় কয়েক লক্ষ গুন্ বড়। তবে অন্যান্য ব্যাকটেরিয়াদের মতোই এই গালিভার-ব্যাকটেরিয়াদের মধ্যেও যাবতীয় পরিবহন ডিফিউশন-নির্ভর। তাহলে কিভাবে সময়মতো জেনেটিক ইনফরমেশন পরিবেশন সম্ভব এই দানবিক কোষের মধ্যে? কোষের কেন্দ্রের নিউক্লিওয়েড থেকে বাইরের বিশাল আয়তন জুড়ে ছড়িয়ে পড়তে তো কয়েক লক্ষ-কোটি গুন বেশি সময় লেগে যাবে।
এই বিশালাকৃতি ব্যাকটেরিয়ারা এই সমস্যার এক অভূতপূর্ব সমাধান খুঁজে নিয়েছে। এদের কোষের মধ্যে একটার বদলে প্রায় শতাধিক ক্রোমোসোম থাকে। প্রতিটি ক্রোমোসোমের চারপাশে কিছু জেনেটিক তথ্য পরিবহন করার যন্ত্রাদি (আরএনএ পলিমারেস এবং রাইবোজোম) প্রস্তুত থাকে, যাতে পরিবহনের জন্য অযথা সময় ব্যয় না হয়। এই ধরণের খুব বড় ব্যাকটেরিয়াদের মধ্যে মাইক্রোস্কোপ দিয়ে দেখা গেছে যে, অসংখ্য ক্রোমোসোম কোষপর্দার খুব কাছে সারি দিয়ে সাজানো (চিত্র ১)। এইভাবে প্রতিটি ক্রোমোসোমের জেনেটিক তথ্য খুব তাড়াতাড়ি কোষেপর্দার কাছে পৌঁছে যায়। একই সাথে কোষের বাইরে থেকে আসা কোনো সিগন্যাল বা মেটাবোলাইট ক্রোমোসোমের কাছে পৌঁছে জেনেটিক তথ্যের প্রভাবে পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে।
চিত্র ১: Epulopiscium fishelsoni-এর ক্রোমোসোমগুলোর অবস্থান। কোষপর্দার গা ঘেঁষে উজ্জ্বল স্থানগুলো হলো ক্রোমোসোম
ব্যাকটেরিয়াদের মধ্যে ‘পলিপ্লয়ডি’
এই গালিভারদের উদাহরণ হিসেবে বিশালাকৃতি ব্যাকটেরিয়া এপুলোপিসিয়ামের কথা বলা যায় (উপরের চিত্র)। ব্যাকটেরিয়াটা এতটাই বড় যে প্রায় খালি চোখে দেখা সম্ভব। এ প্রসঙ্গে একজন বিজ্ঞানী হিসেব করে দেখিয়েছেন যে, ই. কোলাই-কে যদি মানুষের মতো বড় ধরা যায়, তাহলে একটা এপুলোপিসিয়ামের আকার একটা নীলতিমির মতো হবে (রেফ: মোসেলিও সেক্টর)। ২০০৮ সালে বিজ্ঞানী এস্টার আংগার্ট এবং তারা সহকারীরা দেখেন একটা এপুলোপিসিয়ামের মধ্যে প্রায় সহস্রাধিক ক্রোমোসোম রয়েছে, এবং প্রায় সমস্ত ক্রোমোসোমই কোষপর্দার খুব কাছে রয়েছে । এর আগে থাইওমারগারিটা ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার দেখা গিয়েছে। একই কোষের মধ্যে একই ক্রোমোসোমের অনেকগুলো প্রতিলিপি থাকার বৈশিষ্টকে বায়োলজিতে ‘পলিপ্লয়ডি’ বলা হয়ে থাকে। বিজ্ঞানীরা যতই নতুন নতুন ‘গালিভার’-দের সন্ধান পাচ্ছেন, ব্যাকটেরিয়াদের মধ্যে এইরূপ ‘পলিপ্লয়ডি’-র উদাহরণের সংখ্যা ততই বাড়ছে। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো ব্যাকটেরিয়ার পলিপ্লয়ডি-র মাত্রা ইউক্যারিওটিক কোষদের তুলনায় অনেক বেশি।
এক আশ্চর্য্য গালিভার
এবার আসি এই গালিভারদের মধ্যেই এক ব্যতিক্রমী ব্যাকটেরিয়া, আক্রমাটিয়াম অক্সালিফেরাম-এর কথায়। ২০১৭ নেচার কমিউনিকেশনস পত্রিকায় এই অক্সালিফেরাম-এর সম্পর্কে এমন এক তথ্য প্রকাশিত হয় যা ব্যাকটেরিয়া সংক্রান্ত বিজ্ঞানে অভূতপূর্ব । বার্লিনের লাইবনিজ ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী হান্স পিটার গ্রোসার্ট এবং তার সহকারীরা অক্সালিফেরাম-এর জেনোমিক কনটেন্ট নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে দেখলেন যেঅক্সালিফেরাম-এর মধ্যে যথারীতি তার বিশাল আয়তনের সমানুপাতিক ভাবে কয়েকশত ক্রোমোসোম রয়েছে, কিন্তু তাদের ধরণ ঠিক পলিপ্লয়ডির মতো নয়। পলিপ্লয়ডির ক্ষেত্রে প্রায় একইধরণের ক্রোমোসোমের বহুসংখ্যায় প্রতিলিপি থাকে, কিন্তু অক্সালিফেরাম-এর ক্ষেত্রে একই কোষের মধ্যে বিভিন্ন আলাদা আলাদা ক্রোমোসোমের সন্ধান পাওয়া গেল। ক্রোমোসোমগুলোর sequence পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেলো যে তারা একে ওপরের থেকে এতটাই আলাদা যে ভাবা যেতেই পারে ক্রোমোসোমগুলো একটা ট্যাক্সনমি ফ্যামিলি (taxonomy family) বা একটা জেনাস (genus) – এর বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়াদের থেকে এসেছে। একটা কোষের মধ্যেই উপস্থিত ক্রোমোসোমেদের এতো বৈচিত্র সত্যিই অভাবনীয়।
এই আপাত-বিস্ময়কর পর্যবেক্ষণকে পর্যালোচনা করতে গেলে আমাদের অক্সালিফেরাম-এর কোষগুলোকে এবং ক্রোমোসোমগুলোকে একটু ঘেঁটে দেখতে হবে। অক্সালিফেরাম-এর ক্রোমোসোম পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় যে তাদের মধ্যে প্রচুর বহিরাগত জিন অনুপ্রবেশের (insertion) চিহ্ন রয়েছে। অর্থাৎ ফেজ-ভাইরাস (phage virus) বাহিত কিংবা অন্য ব্যাকটেরিয়া থেকে প্রজনন-ব্যতীত অন্য কোনো উপায়ে জিন স্থানান্তরের (horizontal gene transfer) মাধ্যমে অর্জিত বহিরাগত জিন প্রচুর পরিমাণে প্রতিটি ক্রোমোসোমে ঢুকেছে এবং ক্রোমোসোমগুলোকে পরিবর্তিত করেছে। অন্য গালিভারদের তুলনায় আরেকটা বিষয়ে অক্সালিফেরাম-এর পার্থক্য রয়েছে।অক্সালিফেরাম-এর মধ্যে ক্রোমোসোমগুলো কোষপর্দার গায়ে নয়, বরং কোষের মধ্যে বৃহৎ ক্যালসাইট ক্রিস্টালগুলোর ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে। অক্সালিফেরাম-এর কোষের মধ্যে উপস্থিত ক্রোমোসোমেদের বৈচিত্রের পিছনে এই ক্যালসাইট ক্রিস্টালগুলোর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এই ক্যালসাইট ক্রিস্টালগুলো কোষের সাইটোপ্লাজমের মধ্যে আলাদা আলাদা কামরা (compartmentalization) তৈরী করেছে। যার ফলে, প্রতিটি ক্রোমোসোম একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্নভাবে রয়েছে এবং বিচ্ছিন্নভাবেই পরিবর্তিত হয়েছে। এই ব্যাপারটাকে আরেকটু বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা যাক।
চিত্র ২: ঠিক কীভাবে অক্সালিফেরাম-এর একটা কোষের মধ্যেই প্রায় একটা গোটা ট্যাক্সনমি ফ্যামিলির বিভিন্ন ক্রোমোসোম এক আধারে এসে হাজির হলো, তার প্রস্তাবিত মডেল। কোনো প্রাকৃতিক কারণে অক্সালিফেরাম-এর একটা পূর্বপুরুষের আয়তন খুব বড় হয়ে যাওয়ায়, কোষের মধ্যে ক্রোমোসোমের সংখ্যা বাড়ানোর প্রয়োজন হয়। ফলে, ‘genome replication’-এর মাধ্যমে একটা কোষের মধ্যে একাধিক ক্রোমোসোম তৈরী হয়। সময়ের সাথে সাথে বাইরে থেকে ‘horizontal gene transfer’ , কিংবা ‘phage attack’-এর ফলে প্রচুর ‘transposase’ কোষের মধ্যে ঢুকে পরে, এবং genome-গুলোকে পরিবর্তিত করে। কিন্তু, কোষের মধ্যে বিশাল আকারের ক্যালসাইট কেলাসগুলোর জন্য এই পরিবর্তন ‘locally’ হয়, এবং তার ফলে আলাদা আলাদা ক্রোমোসোম তৈরী হয়, যাদের আলাদা আলাদা রঙে দেখানো হয়েছে।
ঠিক কিভাবে অক্সালিফেরাম-এর এক-একটা কোষের মধ্যেই প্রায় একটা গোটা ট্যাক্সনমি ফ্যামিলির বিভিন্ন ক্রোমোসোম এক আধারে এসে হাজির হলো? আসুন উপরের তথ্যের উপর নির্ভর করে একটু একটু করে সেই রহস্যের জট ছাড়াই। অন্যান্য ‘গালিভার’-দের সাথে তুলনা করে বলা যায়, অতীতে কোনো একসময় বর্তমান অক্সালিফেরামের কোনো পূর্বপুরুষ তার বিশাল আকারের সাথে খাপ খাওয়াতে নিজের ক্রোমোসোম সংখ্যা শতগুন বাড়িয়ে ফেলে। কিন্তু কোষের ভিতরে থাকা ক্যালসাইট ক্রিস্টালগুলোর কারণে ক্রোমোসোমগুলো একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে যায়। সময়ের সাথে সাথে বাইরে থেকে phage infection কিংবা horizontal gene transfer-এর মাধ্যমে বিভিন্ন জিন আলাদা আলাদা ক্রোমোসোমে যুক্ত হয়। তাই আস্তে আস্তে গড়ে ওঠে ক্রোমোসোমের মধ্যে এক বিপুল বৈচিত্র যা থেকে মনে হয়, একটা নয়, আলাদা প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া থেকে ক্রোমোসোমগুলো এসেছে। অক্সালিফেরাম যেন একটা বৃহৎ ব্যাকটেরিয়া নয়, একই কোষপর্দার আড়ালে রক্ষিত এক বিপুল ব্যাকটেরিয়া-কলোনি।
কিন্তু সব রহস্যের জট ছাড়ানো গেছে বললে অত্যুক্তি করা হবে। সত্যি কথা বলতে গেলে ব্যাকটেরিয়াদের লিলিপুট-জগতের এই আশ্চর্য গালিভার আরো একগুচ্ছ আনুসঙ্গিক রহস্য এনে জোগাড় করেছে। ঠিক কিভাবে একটা কোষের মধ্যে এই বিভিন্ন ক্রোমোসোমগুলো সাজানো রয়েছে? যখন একটা অক্সালিফেরাম কোষ থেকে দুটো নতুন কোষের জন্ম হয়, তখন ঠিক কিভাবে এই নতুন কোষদুটোতে এই ক্রোমোসোমদের সুষ্ঠু বন্টন সম্ভব হয়? আশা করা যায় খুব শিগগিরই এর উত্তর মিলবে। এটুকু বলা যায়, একই কোষের মধ্যে এই বৈচিত্রময় ক্রোমোসোমের অবস্থান ব্যাক্টেরিওলজিতে একটা নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।
করাচি বন্দরে এককালে গ্রিক-পারসিক-আরবীয় সওদাগরেরা নোঙ্গর করেছে; অনেক স্থাপত্য চিহ্ন আজো রয়ে গেছে; যা…..
তিনি বললেন, ভাষা হল ওষ্ঠের উপর সুধার মতো। আর বললেন, কবিতা যথেষ্ট স্বাদু, কিন্তু…..
রূপকথা পড়েছেন ছোট বেলায় অনেকে একথা আর বলা সন্দেহমুলক, প্রযুক্তির ব্যবহার জন্মের পর থেকে এখন …..
একটি পরাধীন দেশ আর তার বাসিন্দাদের মনে স্বাধীনতার আকুতি আমরা দেখেছিলাম ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতে। এর…..