লীলাচূর্ণ (চার)

মজনু শাহ
কবিতা
Bengali
লীলাচূর্ণ (চার)

আট.

গানের ভিতর দিয়ে আমি কি পারব কোনোদিন
শুশ্রূষায় পৌঁছে যেতে! সরে গেছে বজ্রগর্ভ মেঘ,
চুমুক দিয়েছে কেউ আমার রক্তমদের গ্লাসে
আর আমি সেটাকেই গূঢ় দরজাটি খুলবার
সম্মতি ভেবেছি এতদিন। গোলপাতা ঘরে বসে
ব্রোঞ্জের বুদ্ধমূর্তির দিকে চেয়ে দেখি মাঝে মাঝে,
কিছু বেলে কাঁকড়া ধীর পায়ে উঠে আসে বারান্দায়।
ওই দূরে ক্রীতদাসভূমি, কোনো সুজাতাকে দেখে
বুদ্ধের শরীর যদি জাগে, ওইখানে লীলাচূর্ণ,
দগ্ধগাছ থেকে পাতা খসে আর অবুঝের মতো
তার তলে হাত পাতে কেউ, ময়দানের ওপারে
তারপর কেউ একজন পাখিতে রূপান্তরিত।
আশ্চর্য একটি ক্যারাভান এসে থামে খুব কাছে,
সবুজ লণ্ঠন তার মাথায় দপদপ করে জ্বলছে।

 

নয়.

এবার রাজজম্বুগাছের ফল আস্বাদন করো
নর-বানরের সুনির্মম ঠাট্টা উপভোগ করো।
শশীগল্প আর নৃত্য করে মজে আছ রাতভর,
ভোর থেকে বুটিদার পাখি ডেকে ডেকে হয়রান
একবার তুমিও তাকে ডাক দিয়ে আনারস ঝোপে
ছিন্ন লাল ঝুঁটি আর বহুবর্ণ সাপের খোলস
কুড়াতে গিয়েছ, কত পণ্ডশ্রম রেখে গেলে পিছে,
বলি, কোন্‌ অবিনাশী রূপ আজ ধরেছ সম্পুটে!
তোমাকে বিমর্ষ দেখে শুধু নেচে যায় টারান্টেলা
স্ফটিকের পাখনা পড়ে থাকে ঘাসে এই ষোলোশিঙা
হরিণের দেশে, আর তুমি নর-বানরের সামনে
নগ্ন বসে রইলে, যেন এক মৃত্যুমথিত প্রেমিক!
বিদ্যুচ্চমকের মতো সত্যেরা কোথায় পালিয়েছে,
স্বপ্নের, জ্ঞানের, আদিতম বীজ রয়েছে কোথায়—

 

দশ. 

রাত্রি মেখে এইখানে পড়ে আছে অর্ধেক পৃথিবী,
আর আমি স্বরচিত নরকের থেকে উঠে এসে
দেখি এক ভণ্ড কবি স্নানসূত্র শেখাচ্ছে দেবীকে।
মাতাল আরবি ঘোড়া একা বাড়ি ফিরে আসে আর
আনমনে ছুটে যায় চকলেট সময়ের দিকে;
যে-তুমি রেখেছ বহুদূরে বাঘিনীর শান্ত দুধ
গোপন স্বর্ণকলসে, বুঝি নি তোমার অভিপ্রায়।
সারা গায়ে বাঘছাল জড়িয়ে নিয়েছি কী কী ভেবে
মনে নাই কুহু মনে নাই কোনো গান হাহাকার
তবু জগতের এই রুক্ষ মাঠ হাঁসে ভরে ওঠে।
একটি কুক্কুট খুঁজে পেতে ওই টিলার ওপরে
সারা সন্ধ্যা হয়রান হল তবু বুড়ো ধনুর্ধারী।
এখন কানন পথ মুখরিত কিন্নরের গানে
রুটি ঝলসানোর দৃশ্য থেকে সরে গেল অনাহারি—

মজনু শাহ, জন্ম ২৬ মার্চ ১৯৭০, গাইবান্ধায়। এ পর্যন্ত প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ — আনকা মেঘের জীবনী (১৯৯৯), লীলাচূর্ণ (২০০৫), মধু ও মশলার বনে (২০০৬), জেব্রামাস্টার (২০১১), ব্রহ্মাণ্ডের গোপন আয়না (২০১৪), আমি এক ড্রপআউট ঘোড়া (২০১৬), বাল্মিকীর কুটির(২০১৮)।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..