শম্পা মাহাতোর ধারামুক্ত কবিতা

শম্পা মাহাতো
ধারামুক্ত কবিতা
Bengali
শম্পা মাহাতোর ধারামুক্ত কবিতা

ঘুম

রাত-ঘুম ফাঁকি দেয়। ভিজে বাতাস মুখ বাড়ায়। বলে, একটা চাদর হবে? সচরাচর না বলি না আমি। আজও বললাম, আমার এই একটাই। নেবে, তো নিয়ে যাও।

দু-এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল কিনা ঠাহর হল না। বাতাস ফিরে গেল। ফাঁকি দিলাম? ভাবার আগে, ভাবলাম। উফফ্, বাঁচা গেল। রাত-বিরেতে। যত্তসব। আমার কপালেই জোটে।

কপাল থাকে না হাওয়ার। নিদেনপক্ষে গাছও না একটা। থাকলে, আগলাত নিশ্চয়ই। বেমক্কা, যখন তখন ভিজতে হত না তাকে। যথেষ্ট গোলাবারুদ পেরিয়ে সে খেলা করত। ঝড় হয়ে ওঠার আগে মনে করত। পাখি এবং বন্ধুত্ব। বন্ধুত্ব আর ফাঁকি।

দূরত্ব ক্রমশ হয়। রাত থেকে ঘুম। ঘুম থেকে রাত। ওষুধ মুক্তি চায়। অসুখ! বলে ওঠে, চিনতে পারছ আমায়? আমি, না বলি না সচরাচর। আজও বললাম বলব। ঘুম ভেঙে উঠি।

জরুরী

ঠিকানা জরুরি। হারিয়ে যেতে ইচ্ছে হলেও। এমনকি মৃত্যুভাবনাতেও কারা যেন স্বর্গ-নরক গুঁজে দিয়ে গেছে ভাবলেই

আমার মরতেও ইচ্ছে করে না আর…

অস্হির বেড়ে যাচ্ছে। এভাবেই। এভাবেই কোনও কোনও দিন, জানলায় নেমে আসে আকাশ। মরওওওণ। তখন মৃত্যুকামনা নয়। বিরক্তি-সূচক অব্যয়।

কবে যেন ছেড়ে যাওয়া চোখ, হাতে জল ছুঁয়ে আমি নিজের অজান্তেই নিষিদ্ধ করেছি যে কোনও ঠিকানা। জন্ম-মৃত্যু। খোঁজ।
এমনকি অবিশ্বাস করতেও ইচ্ছে করে না এখন।

শুধু জানতে ইচ্ছে করে
ভালোবাসতে ভুলছি না কেন, কিছুতেই!

ঝুলন

তিনপাতা রূপকথা আর একফালি গন্ধরাজ লেবু বলতেই হেসে উঠল ঝা চকচকে আবাসন। চিনি একটু বেশি পড়ে গেল চায়ে।

আকাশের মন্দবাসায় মেঘ কম পড়েছিল কিছু। উথলানো তরলের বাষ্প গিয়ে জুটলো সেখানে। আমিও হাসি চাপতে পারলাম না।

সেই থেকে লাইক আর কমেন্ট। কমেন্ট আর লাইক শুধু। ঘুরেফিরে টুংটাং। ঘুরেফিরে একটাই গান “মেঘরাজা দেখিস তুই…..”।

ঝুলনের মেলা দেখতে যাব ঠিক হতেই ভেসে পড়লাম। সন্ধ্যা নামব নামব অথচ রোদ উঁকি মারল আমাদের একফালি জীবনে।

পুতুলগুলো নড়ে চড়ে উঠল। কলকল করে কথা বলে উঠল। অভিসার থেকে প্রেম থেকে বিচ্ছেদ। সেই শুরু,শোনা শেষ হল না আর…

ইছাপুর। নবাবগঞ্জ। অসমবয়সী তিন বন্ধু। আলুর চপ। ঘুঘনি। মথুরা কেক। দুশো বছরেরও কিছু বেশি পুরানো গঙ্গা। বয়েই চলল।

ডাক

আমার দূরের নাম ‘ওই’।

একটা নিরিবিলি সকাল। পাতকুয়োর মত গভীর। আমাকে ডাকে “এই যে” বলে। আমার কাছের নাম।

এত আদরের সে ডাক। যেন আমি অনধিকার ছেড়ে চলে যাচ্ছি। অন্য কোনও দিকে। অন্য কোনওখানে।

যেখানে লাজুক রোদ। কাছের থেকে দূর। নাম নেই। কেউ চেনে না।

জ্বলে নিভে যাওয়া আগুনে নিয়ম মাফিক জল ছেটায় বাবা। আর আন্দাজের কাছে হেরে যেতে চায় বারবার।

আমার জিতে যাওয়ার মনোবল মাথায় নিয়ে দমকা হাওয়ায় মিলিয়ে যায় ফেরিওয়ালা। তবু আমি প্রতিধ্বনির অনুপ্রবেশ ঠেকাতে পারি না।

মেঘ ডাকে।

শম্পা মাহাতো। কবি ও প্রকৌশলী। জন্ম- ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ২৪ পরগণায়। ইলেকট্রনিকস এন্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়াশুনা করেছেন। JIS College Of Engineering-এ চাকরি করছেন।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ