ঝরা শিউলি
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
বিয়ে বাড়িগুলো বোধহয় সব ঘোলাটে সময়ে আসে। মাসের শেষ। উপহারের জন্য ধার করে কনট্রিবিউশন দিয়েছে শশি। ঢঙ করে একজনকে বলল- পাত পেড়ে না খেলে পয়সা উশুল হবে কী করে।
গুগুলটা বিগড়েছে। কোন অ্যাপ দেখাচ্ছেনা। অগত্যা পাবলিক ট্রাসপোর্ট ভরসা। ধ্যাত তেরিকা। চার্জও ফুরোচ্ছে। বিয়েবাড়ির একটা আভাস সুজয় অবশ্য দিয়েছিল। বার বার বলেছে- শশা দাদা যাবেন কিন্তু। বউভাতের দিন আবার জানান দিয়ে দেবো। দিয়েছেও। ভুল হয়ে গেছে প্রিন্ট নেওয়া হয়নি। অফিসের শেষ আওয়ারে গড়বড়টা তপেশই করলো। কী একটা অ্যাকাউন্ট ভুল হয়েছে মোবাইল ভ্যানের।
ভেন্ডার পেমেন্ট না পেলে বেইজ্জতির একশেষ। অগত্যা অফিসের শেষ ঘণ্টা বাজার আগে মেইল কনফারমেশনে অ্যাকাউন্টে টাকা দিতে না পারলে হয়রানির একশেষ। মোবাইলটা চার্জে বসালেও কে কখন স্যুইচ অফ করে দিয়েছে। এটা কাজ না করলে এমন অচেনা জায়গায় ঘুরে ঘুরে হাল্লাক হতে হবে। কম চার্জে নেট ঠিকঠাক আসেও না যেন। ১২% চার্জ রয়েছে। এর মধ্যে নিশ্চই পৌঁছে যাবে শশা ওরফে শশি শেখর সম্মাদ্দার। সকলের আদরের শশা দাদা। ব্যাগ গুছিয়ে সোজা দক্ষিণদাঁড়ি বাস স্টপেজে চলে এসেছে একা একা।
বাস আর আসে না। কী উৎকণ্ঠা। নাগরিক তলানি পরিসেবায় ইলেকট্রিক পোস্ট বোবা ও মুক। দেওয়ালি আলোর মতো মাঝে মাঝে জ্বলে আর নেভে। সন্ধ্যা কত হল বোঝাও যাচ্ছে না। আকাশ ভার হয়ে আছে, এই বুঝি নামবে। ছাতা আছে? আজকাল ছাতা নিতেও ভয়। বধুয়ার সতর্কবানী- ‘হারিয়ে আসো দেখবে, বৃষ্টি হলে বাইরে দাঁড় করিয়ে ভেজাবো, আমাকে তো চেনো না’। ছাতা থাকলেও শশা বাবু তানিক ভেজে। তবু ব্যাগের পাখি ব্যাগেই থাকে। বৃষ্টির শব্দ শুনতে শুনতে ছাতা ব্যবহৃত পলিথিন প্যাকেটে হাই তুলতে থাকে। তা থাকুক। অন্তত বাড়ির ছাতা বাড়িতে ফিরুক।
এমন সমঝোতা শশাবাবু সবখানেই করেন। তার কোন গলি ঘুজি নেই। এক্কাদেক্কা নেই। হ্যাঁ যা বলছিলাম, বাস মহোদয়া এলেন দুলকি চালে। আচ্ছা বাসকে মহোদয়া না মহোদয় বলা শ্রেয়; এটা ভাবতে ভাবতে বাসের হ্যাণ্ডেল ধরে সোজা নিজেকে চালান করেন ভেতরে। কন্ডাক্টর তখনও তারস্বরে চেঁচিয়ে যাচ্ছে সিঁথি, সিঁথি, ডানলাপ, ডানলাপ। টালা ব্রিজ খারাপ থাকায় রুট বদলের সুবিধা মনে এলো। না হলে পকেট ফেটে চৌচির হত। কড়কড়ে তিনশ টাকা ফাউ গুনতে হতো। অন্যেরা অবশ্য ওলাতে পৌঁছে গিয়ে এতক্ষনে বেশ সাপ্টে খাওয়া শুরু করেছে হয়তো। যাকগে। বাসে দু’চারজন যাত্রী। ছড়িয়ে ছিটিয়ে। সুবিধামতো জানালা বাদ দিয়ে বসলো সে। বৃষ্টি এলে আদ্দেক বাসের জানালা দিয়ে বুনো মেঘের পানি যাত্রিদের ভিজিয়ে আনন্দ পায়। বাস মালিকরা তো শুধু টিকিট আর তেল নিয়ে মাথা ঘামায়। শশার মত বেদানা কাঁচকলারা যদি একটু ভিজলে মহাভারত অশুদ্ধ হবেনা। সবাই তো আর প্রতিদিন বৃষ্টিতে বিয়ে বাড়িতে গণ্ডেপিণ্ডে গিলতে যাচ্ছেনা!
খালি বাস থেকে কলকাতায় নব্য গড়ে ওঠা পোশাকের শোরুম দেখা যাচ্ছে। সেমি শপিংমল। ঠিক যেন টপ আর ডাউনের মধ্যবর্তী কুমারী শরীরের বাদামী ভাঁজ। সুবেশা রমণীদের কলকাকলীও টের পাচ্ছে বাসের থেকে শশী শেখর সম্মাদ্দার। বউ থাকলে রোষ দৃষ্টির প্রকোপে পড়তো। এখন অবশ্য সে ভয় নেই। যত খুশি যেখানে সেখানে তাকাও। ঘরে গিয়ে অনাবশ্যক ছানবিনে জড়াতে হবে না। সামনের সিটে হয়তো কালোভূতি টাইপের কেউ বসেছে। মুখ তুললে তার চোখাচোখি হতেই হবে। বিয়ে অর্থাৎ জীবনসঙ্গী জোটার পর মাটি ছাড়া অন্য দিকে তাকানো নিষেধ। পাছে কোন সুন্দরী তন্বীর দিকে চোখ যায়। আর রাস্তার কুত্তার গু মাড়িয়ে ফিরেছো তো পাগল ক্ষ্যাপার মত বর্ষিত হবে অকথা কুকথা। তুই তোকারিও বাদ যাবেনা। এখন সেসবের বালাই নেই। একদম তাজা শ্বাস নেওয়া। আজ এখন আর মুহু মুহু ফোন বাজবেনা। সিইও সাহেব এর কলমিস হবেনা। বলবেনা-আরে শসা বাবু আপনার শশায় ব্ল্যাক সল্ট এতো কম কেন। আপনি কিচ্ছু দেখেন না।
পাশের দোকান কফি কাফে শপ থেকে থেকে যেন ব্যাঙ্গালোরের সদ্য টাটকা কফির গন্ধ নাকে ঝাপটা মারছে। জায়গাটা বেশ কনজেস্টেড। বাসের ভিতর থেকে এগরোল অর্ডার দিলেই জানালা দিয়ে পাওয়া যেতে পারে। খাইচে বৃষ্টি জানান দিচ্ছে। পাশের যাত্রীকে জানালা বন্ধ করতে বলে শশাবাবু দেখেন মোবাইলের আয়ু আর কতক্ষণ। ১% এ ঠেকেছে।
বৃষ্টিতে এক স্টপেজে পেরিয়ে বাসটা দাঁড়ায়। যাত্তেরিকা সব গুবলেট হবে বুঝি। সঙ্গে ডাঁসা কেউ থাকলে তবু এত উদ্বেগ হতো না। যদি এমন ঘটতো এক ছাতার নিচে তুমি আর আমি বৃষ্টিতে ভিজে সপসপে হৃদয়ের উষ্ণতা পেতে পেতে ‘চল যাই বিয়ে বাড়ি’। আহা কী আনন্দ হৃদাকাশে। না সেসব কিছু ঘটেনি কোনকালে শসাবাবুর। কোনকালেও জোটেনি। আর এখন তো তিন কালের এক কাল।
চুল দাড়ি সব সদ্য দোওয়া দুধকেও হার মানাবে। কোনক্রমে বাস থেকে সপ সপে নেমে দৌড়ে এক আধ খোলা দোকানের শেডে দাঁডিয়ে যায়। পকেটের মোবাইলটা ইতোমধ্যে মহাঘুমে তলিয়ে গেছে। না কোন বিকল্প পথ নেই। এদিকে রাত ৯৩০। আধো অন্ধকার। দূরে ভাঙা শ্যামাপূজার প্যান্ডেলে অনুষ্ঠাান বাতিলের কথা ঘোষণা হচ্ছে। এই সেভেন ট্যাঙ্কে কোনদিন সে আসেনি। বৃষ্টি থামলে কী করবে ভাবতে থাকে। শশিবাবুর কপালে আজ বিয়েবাড়ির অন্ন বোধ হয় লেখা নেই। কোন পরিচিতের যে তার মত দেরী করেছে এমন কারো দেখা যদি হয়ে যায় এই ভাবতে ভাবতে ফোঁটা কমে এসেছে। সে কোন দিকে যাবে ঠাওরও করেতে পারছেনা। দোকানি ঝাঁপ ফেলবে তাই অগত্যা বাস্তায় নামা। তার অর্ধমৃত রেডমিকে প্রথমে চালান করে ব্যাগের ভিতরে। নিজের ওপর ভীষণ রাগ হচ্ছে। ব্যাটারি ব্যাংক থাকলে এভাবে উদ্বেগের মধ্যে পড়তে হতো না। কেউ না কেউ এগিয়ে আসতো। ওদিকে পেটে ছুঁচো ডন মারছে। হঠাৎ দু’চারজনের কলকলানি যেন সোনার থালের মত বাস্তার অধো অন্ধকার চিরে ভেসে ওঠে।
আমাকেই জিজ্ঞেস করে- আচ্ছা, মনামি সুইটস কী এইদিকে দাদা? হাতে উপহারের মত কিছু একটা ঠাওর হচ্ছে। শসাবাবু কিছু না ভেবেই বলে- হ্যাঁ হ্যাঁ এই দিকেই তো। তাকে এতক্ষণ পাল ভাঙা দিশাহীন মাঝির মত লাগছিল। মনে হচ্ছে এই লোকের পেছন পেছন গেলেই তার প্রার্থিত বিয়েবাড়ি মিলে যাবে। একটু দুরত্ব রেখে সে ওই লোকটার পেছন পেছন চলতে থাকে। যা থাকুক কপালে।
মনামী সুইটস এর আশেপাশে মনে হচ্ছে তারও গন্তব্য। জয় বাবা থার্ড সেন্স। সবুজ শার্টওয়ালা কোন লোককে আজ পর্যন্ত সে অনুসরণ করে নি। এগলি সেগলি বেঁকে লোকটা কাকে যেন ফোন করছে। এই তো বিয়ে বাড়ি। সানাইয়ের স নেই। বৃষ্টিতে লোকজন কম। হয়তো ভাঙা হাট। পেটে হরমোন সিক্রেসান শুরু হয়েছে। দ্রুত খেতে না পারলে সমূহ বিপদ। শশা বাবু সোজা ঢুকে পড়ে খাবার লাইনে। একজন বললেন আগে খেয়ে নিন তারপর ওপরে যান। ব্যাস সোনায় সোহাগা। সোজা ক্যাটারার সুন্দরীর হাত থেকে প্লেট নিয়ে লাচ্চা পরোটা আর ডাল মাখানি নিয়ে খাওয়া শুরু করে। যত দ্রুত শেষ করা যায় তত ভালো। না তার কোন কলিগদের টিকি নেই। আজ আর ইচ্ছে হলো না তাই আইসক্রিম নিল না। যা ভিজেছে। হাতটা ধুয়ে দোতালার লিফটে উঠতে গিয়ে দেখে সুবেশ নারী পরিবৃত বর বেশী অন্য সুজয় বেড়িয়ে আসছে লিফট থেকে।
শসা বাবু ভাবতে থাকেন এখন কী করণীয়। প্লাগে চার্জার ঢুকিয়ে এখন আর এখানে মোবাইল উজ্জীবিত করা ঠিক হবে কি…
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
শেষ থেকে শুরু। আমি রজকিনী রামী,ধোপার বংশে জন্ম আমার।ঘাটে সখিদের সঙ্গে কাপড় কাচি। একাজটা আমি…..
মালঞ্চার পথে ভোরবেলা। সূর্য সবে উঠছিল। বৈশালী দূর থেকে দেখতে পেল,বুনিয়াদপুর বাসস্ট্যান্ডে বালুরঘাটের দিকে মুখ…..
আমার বাবা ছিলেন অত্যন্ত সাহসী একজন লড়াকু মনের মানুষ।শত অভাব অভিযোগেও তাকে কোনোদিন ভেঙ্গে…..