শালিক ফকিরের নয়নতারা

মঈনুস সুলতান
গল্প
Bengali
শালিক ফকিরের নয়নতারা

কুতুব ফকির কূলাউড়া রেলওয়ে জংশনে যখন একাকী হাঁক পেড়ে ঘুরে বেড়ায় তখন সে রীতিমতো দর্শনীয় বিষয়। চলমান ট্রেনের প্যাসিনজারা কৌতূহলি দৃষ্টি মেলে তাকে দেখে। কেউ কেউ জার্নির একগেঁয়ে ক্লান্তি কাটানোর জন্য গাড়ি থেকে নেমে দু একটা প্রশ্ন-টশ্নও করে। বিচিত্র বেশভূষা ও বউলা কেতার দীর্ঘ চূলদাড়ির জন্যই বোধ করি মানুষজনের চোখে তার আলাদা আকর্ষণ। সে হামেশা পরে থাকে লাল সালুর পায়জামার সাথে জরির কাজ করা গাঢ় নীল রঙের ছেড়াখোড়া তাপ্পি মারা ড্রেসিং গাউন। গাউনটি সম্ভবত চা এর বাগিচায় কাজ করা কোন ইংরেজ সাহেব তাকে উপহার দিয়েছেন, অথবা সে নিলামী বাজার থেকে চেয়েচিন্তে খরিদ করেছে, নির্দিষ্টভাবে বলা মুশকিল। তার হাতের লাঠিটিও দেখার মতো; সম্ভবত বনজ কোন উদ্ভিদের শিকড়ে প্রস্তুত কুকড়ি-মুকড়ি লাগা আঁকাবাঁকা অদ্ভুত যষ্টি। তার ডগায় একা জোড়া রুনুকুজুনু ঘুঙুর বাঁধা। এ অবাক করা লাঠিটি সচরাচর কুতুব ফকিরের হাতে থাকে না, বরং যষ্টিটির অবস্থান হয় তার কাঁধে। এবং প্রায়ই তাতে ঝুলে বিচিত্র পিঞ্জিরা, যার ভেতরে কিচির মিচির করছে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত একটি শালিক। পিঞ্জিরাটিকে পাখির বাসস্থান বলা যায় না, বরং এটি মূলত একটি পাখি ধরার ফাঁদ বিশেষ।

আশ্চর্য লেবাস পরা কুতুব ফকির যখন যাত্রা মঞ্চের রাজা উজিরের কায়দায় ‘সয়ফুল মূলুক বদিউজ্জামান’ পুঁথির চরণ গাইতে গাইতে রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম ধরে হাঁটে, তখন ট্রেনের ফার্স্টক্লাসে জাঁকিয়ে বসা বা ওয়েটিংরুমে অপেক্ষারত সুসজ্জিত মহিলারাও তার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকেন। প্ল্যাটফর্মের উদ্বাস্তু শিশু ও নেড়ী কুকুরেরা তাকে ঘিরে ভীড় জমায়। কুতুবের পেশা আদপেই ভিক্ষাবৃত্তি নয়, তার ফকির বলে পরিচিতি সম্ভবত আউলাঝাউলা আচরণ, হাঁটতে হাঁটতে চোখ মুদে কখনো সখনো মারফতি গানের দরাজ টান, ও সন্ধ্যেবেলা চাপলিশে কল্কেতে দম দেয়া, কিংবা আশপাশের অত্র আত্রাফের নানাবিধ মাজারে কোন কার্যকারণ ছাড়া আওয়ারা ঘুরে বেড়ানোর জন্য।

হাবেভাবে বাউলদের উদাসী তরিকার শাকরেদ হলেও কুতুব ফকির ষোলআনা সন্ন্যাসী নয়। তার ঘরবাড়ি গ্রামসাকিন না থাকলেও রাত্রি যাপনের নির্দ্দিষ্ট জায়গা আছে। কূলাউড়া জংশন থেকে বেরিয়ে রেললাইন ধরে হেঁটে লেভেল ক্রসিং পেরিয়ে মাইল দেড়েক সামনে বাড়লেই, ঝোপঝাড় পিশাচবনের আড়ালে দেখা যায় এককালের রেলমজদূরদের পরিত্যক্ত টিনের শেড। লম্বা মতো ঘরটির নোনা ধরা ইটের দেয়াল ফেঁটে চৌচির হয়েছে কোথাও কোথাও। অবলীলায় গজাচ্ছে নওল বয়সী অশত্থের শিকড়। সবুজ পাতার ছায়ায় বাস করছে এক জোড়া প্রৌঢ় তক্কক। চৌকাঠের পাশে ঢিবি গড়েছে মেহনতী কিসিমের কয়েক হাজার উঁইপোকা। রাত-নিশীথে কুতুব ফকির এ সব ডিঙ্গিয়ে ঢুকে পড়ে শেডের ভেতর। শ্যওলা ধরা অন্ধকার এ ঘরে বহুকাল কোন রেলশ্রমিক বাস করেনি । এর কড়িবরগা ঝুলে ঝুলে খুলে পড়ছে। একটি বরগায় হামেশা পেচিয়ে থাকে গোলাপি গাত্রবর্ণের নাদুস নুদুস একটি চাল-সাপ।

সাপখোপ কিংবা এত বড় ঘরের তীব্র নির্জনতায় কুতুবের ভয়ভীতি কিছু নেই। গত বছর কয়েক ধরে এ ঘরের একটি অংশে চিমনী-ভাঙ্গা লন্টন ভরসা করে, চাটাইয়ে তেল চিটচিটে কাঁথা জড়িয়ে রাত্রিযাপন করে সে। মুর্তাবেতের যে চাটাইয়ে সে নিদ্রা যায় তার আশপাশে অবহেলায় ছড়ানো  ছিটানো থাকে তার হামেহাল ব্যবহারের জিনিসপত্র-হাড়িপাতিল, সানকি, কালাই করা টিনের পেয়ালা, তিন-তিনটি ইটে গড়া চলতি চুলা, তার পাশে ছায়ামায়া রঙের ফ্রেম লাগানো আয়না ও মহিষের শিং এর কাঁকই। একটি ফুলতোলা রঙচঙে টিনের তোরঙ্গে আছে তার জানের প্রাণ সম্পদ-খান কতক পুঁথি-‘গাজী কালু চম্পাবতী, জঙ্গেনামা’, প্রভৃতি।

কুতুব ফকিরের অক্ষর জ্ঞান নাগ্রীতেই সীমাবদ্ধ। অল্প-সল্প বাংলা জানলেও পুস্তকাদি পাঠে বিশেষ সুবিধা করতে পারে না। সারা দিন কারণে অকারণে কখনো কখনো গুন গুন করে, কখনো-বা দরাজ গলায় সে পুঁথির চরণ ভাঁজে। সারাদিনমান ট্রেনে ট্রেনে শালিক কাঁধে ফেরিওয়ালার মতো ঘোরাঘুরি করে, রাতে ডেরায় এসে চাটাইয়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে সটান শুয়ে পড়ে। লন্ঠনের মিটি মিটি আলোয় সে চেয়ে দেখে,ছাদ জুড়ে মিহি মসলিনের সুতায় বোন হচ্ছে মাকড়শার মস্ত জাল। চামচিকার লুটাপুটি তার ঝিমিয়ে পড়াতে তেমন ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে না। তবে চাঁদনী রাত হলে ডেরায় ফেরার পথে সে যখন বিবির মোকাম ঘুরে আসে, মাজারের হাশিয়ায় হেলান দিয়ে কল্কেতে দু’দম দিয়ে আমেজ নিয়ে ঘরে ফেরে, তখন অবশ্য অন্য কথা। সে লন্ঠনের আলোয় ‘হালতুন্নবী’ নামক জিল ছিড়ে আসা পুঁথির পাতা সাবধানে উল্টায়। তার ভরাট গলায় সুরেলা ধ্বনি রেলশ্রমিকদের নির্জন শেডে গমগমিয়ে কাঁপে।

আজ দুপুরের দিকে কুতুব ফকির কূলাউড়া জংশন থেকে মেলা দিয়ে ধান খেতের আলপথ ধরে আস্তে-ধীরে চলে এসেছে মাইল পাঁচেক দূরে, ষাড়ের গজ পাহাড়ের পাদেেশে বনাঞ্চলে। গেল বছর বারো কিংবা তেরো হয় সে এ পাহাড়ে মাঝে মধ্যে আসছে, বনানীর পথঘাট অন্ধিসন্ধি তার এতদিনে ভালো করেই জানা হয়ে গেছে। বেলা পড়ে গিয়ে বিকাল হতে চললো। সে ব্যস্থ হয়ে গাছে গাছে ডালে ডালে নজর রেখে খুঁজে ময়না পাখির ছানা। দিন দুয়েক আগে স্টেশন মাস্টারের মেয়ের কাছে সে বাবুই পাখির নীড় বিক্রি করতে গিয়েছিলো। মেয়েটা তাকে দশ টাকা বায়না করে একটি ময়না পাখির বাচ্চা ধরে দেবার আব্দার জানিয়েছে। এদিকে বনাঞ্চল এখন আর আগের মতো গভীর নয়। ক্রমাগত কমে আসছে গাছগাছালি, সাথে সাথে হ্রাস পাচ্ছে পাখপাখালির সংখ্যা। ময়না পাখি তো আজকাল আর তেমন একটা দেখাই যায় না। তবে এখন অবশ্য পাখির প্রজনন ঋতু। ভেতরের দিকে নজর করে খুঁজলে হয়তো একটি বা দুটি ময়নার তালাশ পাওয়াও যেতে পারে। ময়না পাখির আরেকটা ব্যাপার,তারা বাসা বাঁধে অনেক উঁচু তৈরল গাছে। আর ডিম পাড়ার আগে গাছের চারদিকে চক্রাকারে উড়ে উড়ে কী যেন খেয়াল করে দেখে। তার জানা মতো আশপাশে আছে পর পর বেশ কয়েকটি তৈরলের গাছ।

কুতুব ফকির অবশেষে গামছা দিয়ে ঘাম মুছে একটি গাছে হেলান দিয়ে বসে। একটু জিরানো পর গাছের গা থেকে সরে এসে সে বা’হাত দিয়ে কপাল থেকে রোদ ফিরিয়ে মগডালে ধেয়ান করে তাকায়। খানিকটা সময় ধুন ধরে তাকানোর পর অনেক উঁচুতে সে খোড়ল দেখতে পায়। আকিজ বিড়ি ধরিয়ে কষে টান দিতে দিতে কুতুব ফকির নিমেষে চেয়ে থাকে খোড়লটির দিকে। কিছুক্ষণের ভেতর আকাশ পাড়ি দিয়ে উড়ে আসে পালক এলোমেলো করা মা-ময়না। পাখিটি খোড়লে ঢুকতে গিয়েও ঢুকে না। ইতস্তত করে ঘুরপাক খায়। উড়ে উড়ে যেন পাখি-মা’টি কোন সিদ্ধান্তে যেতে পারে না, বুঝি উড্ডীন হালতে ভাবছে, খোড়লে ফেলে রেখে গিয়েছিলো যে ছানাদের, তাদের দেখতে ঢুকবে কি না? অনেক উড়াউড়ি ঘুরপাক করে অবশেষে পাখি-মা’টি সাবধানে খোড়লে শরীর গলাতে যায়। সাথে সাথে সে ছটফট করে ছিটকে বেরিয়ে আসে। কিচির মিচির আর্তনাদে ছড়াতে শুরু করে অস্থিরতা। বহু বছরের অভিজ্ঞতায় কুতুব ফকির ঠিক বুঝতে পারে,খোড়লে কালসাপ ঢুকে বাচ্চাগুলোকে খেয়ে কুন্ডুলি পাকিয়ে শুয়ে আছে চুপচাপ। পাখি-মা’টি আবার খোড়লের কাছে যায়, কিন্তু ভেতরে ঢুকতে সাহস পায় না। গাছের সাথে শরীর লাগিয়ে ঘষে ঘষে কেবলই ঘুরে ফেরে। পাখির দেহ হতে একটি পালক খসে পড়ে। প্রায় আশি নব্বই হাত লম্বা গাছের উচুঁ মগডালের কাছ থেকে মা ময়নার কুচকুচে কালো একটি পালক হাওয়ায় দুলতে দুলতে অবশেষে মাটিতে পড়ে।

এ গাছ থেকে পাখির বাচ্চা পাড়ার আশা ছেড়ে দিয়ে কুতুব ফকির পালকটি কুড়িয়ে তার ময়লা রঙীন আলখেল্লার পকেটে রাখে। একটু দূরে পড়ে আছে ভুবন চিলের একটি বেজায় বড় পালক। কুতুব ফকির দেখা মাত্র ছুটে গিয়ে তাও কুড়ায়। তার ডেরার দেয়ালে এ রকম অনেক ঘুঘু, টিয়ে, দোয়েল ও আলতাপরির ছেড়া পালক গোঁজা আছে। পালক সংগ্রহ করতে তার খুবই ভালো লাগে। লাল, নীল, ধূসর, পাটিকিলে, ফিকে বাদামি হরকিসিম রঙ-ই তার পছন্দ। পালকের বর্ণাঢ্যতার দিকে তাকিয়ে তার কখনো আফসোস হয় যে,সে শুধু পালকই কুড়ালো, এ উড্ডীন খেচরগুলোর সাথে তার কখনো দেখা হলো না। একবার অনেকগুলো পালক জমিয়ে সুইসুতার কারিগরিতে বানিয়ে ছিলো একটি হাত-পাঙখা। ট্রেনে চড়ে বাড়ি যাচ্ছে সদ্য বিয়ে হওয়া এক দম্পতি তার কাছ থেকে রঙীন পাঙখাটি পঞ্চাশ টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছিলো। এবারও তার ডেরায় জমেছে অনেকগুলো পালক। তবে এগুলোর অধিকাংশই কালো, খয়েরি, নীল ও বেগুনি রঙের। বহুদিন থেকে সে একটি হলদে বেনেবউ পাখির খোঁজে আছে। হলুদ বরণ একটি মাত্র পালক পেলেও হয়, পাঙখার একদম মধ্যিখানে জুড়ে দেবে। কুচকুচে কালোর ঠিক মাঝখানে ঝিলিক পাড়বে সোনার আলো।

কুতুব ফকির হাঁটতে হাঁটতে এবার চলে আসে রাবার প্ল্যানটেশনের কাছাকাছি। এদিক ওদিক অনেকক্ষণ তাকিয়ে সে প্ল্যানটেশনের কাঁটাতারের বেড়ার বাইরে তালাশ পায় আরেকটি তৈরল গাছের। নিচে দাঁড়িয়ে উপরের ডালপালার দিকে গভীর নজরে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তার স্টেশন মাস্টারের কিশোরী মেয়ের কথা মনে পড়ে। মেয়েটি অবিকল এক বেনেবউ পাখির মতো চপল, সারাক্ষণ হলুদ ওড়না টেনে বুক ঢেকে এ ঘর থেকে ও ঘরে, বারান্দায়-ওঠানে অস্থির ছুটে বেড়াচ্ছে। আজ সকালে মেয়েটি ফুলতোলা উঁচু গোড়ালির স্যান্ডেল পরে টুকটুকিয়ে উঠে এসেছিলো রেলওয়ে অভারব্রীজের উপর। ওখান থেকে ধোঁয়া ছড়ানো স্টীম ইঞ্জিনের সাল্টিং দেখতে দেখতে ভারী সুন্দর কন্ঠে তাকে মজাক করে ডেকেছিলো,‌শালিকফকির, ও শালিকফকির, আমার ময়নার বাচ্চা কোথায়?’ সপ্তাহ খানেক আগে মেয়েটি কুতুব ফকিরকে ময়নার বাচ্চার জন্য ফরমাশ করেছে। কিন্তু ফেঞ্চুগঞ্জের সার কারখানার দিকে বাবুই পাখির নীড় বিক্রি করতে গিয়ে আর ময়নার বাচ্চা যোগাড় করা হয়ে ওঠেনি। কুতুবের অভাব অনটন বেড়ে গেলে সে মাঝে মাঝে পাখির নীড় ও মাদি-শালিক নিয়ে সার কারখানার দিকে যায়। ওখানে ফেক্টরীতে কাজ করা সাহেব-সুবোরা পাখির নীড় কিনে ধুয়ে মুছে সাফসুৎরা করে বৈঠকখানা সাজান।

কুতুব ফকির এবার তৈরল গাছের দিকে মন ফেরায়। নিচ থেকে পরিষ্কারভাবে দেখা যাচ্ছে একটি খোড়ল। সে অনেকক্ষণ ধুন ধরে তাকিয়েও মা-ময়নার কোন তালাশ পায় না। অভিজ্ঞতা থেকে সে জানে , ময়নার গতিবিধি লক্ষ্য না করে গাছ বেয়ে উপরে উঠা নিরাপদ নয়। সাপখোপের সম্ভাবনা আছে। গাছের ডালপালায় দিশা ধরে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কুতুব ফকিরের ক্লান্তি পায়। সে কাঁধের ঝোলা থেকে বের করে কল্কি ও কাটনি। এবার সে ঘাসের উপর জানু পেড়ে বসে আস্তে-ধীরে আবগারি তামাকের সাথে সাদা পাতা মিশিয়ে কেটে কুটে কুটে কল্কি সাজায়। একটি কৌটা থেকে নারকেলের গুড়ার সুপ মিশিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দিব্যি দীর্ঘটান দেয়। দেখতে দেখতে তার দেহমনে ভারী সুন্দর আমেজ এসে যায়। সে উঠে হাত পায়ের খিল ভেঙ্গে কাছেই একটি গর্জন গাছের গুড়িতে হেলান দিয়ে বসে বিড়ি ধরিয়ে কত কী ভাবতে থাকে। কয়েক দিন আগে সুপারী গাছে উঠে বাবুই পাখির নীড় পাড়ছিলো, তখন সে এক জোড়া ডিম পায়। ছোট্ট সাদা সাদা হাল্কা গোলাপি নীলচে আভার ডিম। সে তার ডেরার দেয়ালে ঝুলানো শিকায় নারকেলের ঠালিতে ডিম দুটি রেখেছে। মাঝে মাঝে শিকা থেকে ঠালি নামিয়ে সে ডিম দুটিকে পরখ করে, তখন মনে হয় কার যেন হারিয়ে যাওয়া এক জোড়া চোখের মণির মতো ডিম দুটো অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে কুতুব ফকিরের দিকে। তার ভারী দুঃখ লাগে, ডিম দুটি সারাদিন সারা নিশি তারে কী যেন কইতে চায়। সে ঠিক বুঝতে পারে না। তখন শিকায় ঠালিটি রেখে সে অন্যদিকে মুখ ফেরায়। ভাবে এগুলো আর নিজের কাছে রাখবে না। কাউকে- যদি পয়সা দিতে না চায় তাহলে এমনিই সে ডিম দুটি দিয়ে দেবে। মেয়ে খরিদদার হলে ভালো হয়। স্টেশন মাস্টারের কিশোরী মেয়েটি কী ডিম দুটো নেবে? হলদে পাখির মতো চটুল স্বভাবের মেয়েটা হয়তো বাবুর পাখির ডিমের গভীর মর্মকথা বুঝতে পারবে?

হঠাৎ করে অনেক দিন পর তার নয়নতারার কথা মনে পড়ে। বহুদিন হতে চললো নয়নতারা আর কুতুব ফকিরের কাছে ফিরে আসেনি। সেই কবে.. কত মাস আগে.. সে উড়ে গিয়েছিলো দক্ষিণ থেকে আরো দক্ষিণে। এখন তো বসন্ত কাল আসতে চললো। বেশ কিছু দিন হলো তার ফিরে আসার ঋতু এসে তা চলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। কিন্তু নয়নতারা এখনো ফিরেনি কেন? কে জানে- পাখিটি পথে প্রান্তরে বন্ধুকের গুলিটুলি বা অন্য কোন রকমের বালা মুসিবতে পড়লো কি না? নয়নতারা কাছে না থাকলে, তার ডেরায় রাত নিশীথে ডানা না ঝপটালে, কুতুব ফকিরের বড়ো একা লাগে। আজ থেকে প্রায় বছর তিনেক আগে সার কারখানার কাছাকাছি এক শুকিয়ে আসা হাওরে সে শালিক ধরার ফাঁদ পেতেছিলো। ফাঁদটি পিঞ্জরার মতো, উপরের দিকটা বনেলা পাতালতা দিয়ে ঢাকা। তার ভেতরে বসে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মেয়ে-শালিক কামাতুর গলায় ডাকছে। কুতুব ফকির পিঞ্জিরাটি নির্জন ঝোপে রেখে একটু দূরে অপেক্ষায় উবু হয়ে বসেছে। ফাঁদের কলাকৌশল এমন যে কোন পুরুষ শালিক পিঞ্জিরার জানালায় এসে ঠোঁট ঠুকলেই জপ করে তার ছাট বন্ধ হয়ে আটকা পড়বে সে.. ..। হঠাৎ করে অসমান থেকে ঘুরপাক খেতে খেতে তার পায়ের কাছে মুখ থুবড়ে পড়ে মস্ত বড় একটি হাঁস। একটু আগে সে গুলির শব্দ শুনেছে। কুতুব রক্তাক্ত হাঁসটিকে দুহাতে তুলে নেয়। ঠিক বেলেহাঁস না হলেও অনেকটা সে রকমের আকৃতি। ধবধবে সাদা বুকের কাছে খানিকটা সোনালি ছটা, মাথায় ঘন নীল পালক, পায়ের কাছ দিয়ে কলকল করে বেরুচ্ছে রক্ত। কুতুব ফকির বুঝতে পারে হাঁসটি হাতে নিয়ে এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে বন্ধুকওয়ালা এসে অচিরে তা দাবি করবে। সেদিন তার মেয়ে-শালিকের মায়ায় জড়িয়ে ছাটে পড়া পুরুষ-শালিককে আর ধরা হয় না। সে পিঞ্জিরা ও রক্তাক্ত হাঁসটি সহ দ্রুত পালিয়ে আসে। বন-কোনাকুনি মাইজগাঁও রেলওয়ে স্টেশন থেকে খুব আস্তে আগ বাড়া মালগাড়ির ডাব্বায় লাফ দিয়ে উঠে ফিরে আসে তার ডেরায়।

কাপড়ের পট্টি বেঁধে দেয়ায় রক্ত পড়া বন্ধ হয়েছে হাঁসের গতর থেকে। কুতুব ফকির তার ডেরার আশপাশ থেকে জোগাড় করে পিচাশ পাতা, ছইতেমরা লতার শিকড়, বাঁশের করিল; তাতে তামাক পাতা ও সর্ষে এসব মিশিয়ে শিলনোড়ায় বেটে সে হাঁসটির ক্ষতস্থানে লাগিয়ে ব্যান্ডেজ বেঁধে দেয়। সপ্তাহ দুয়েকের ভেতর হাঁসটি মোটামুটি ভালো হয়ে ওঠে হাঁটতে শুরু করে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। সে কুতুব ফকিরের পেছন পেছন হাঁটে, মাঝে মাঝে হাঁটুর কাছে দাঁড়িয়ে ডানা ছোঁয়ায়। সে হাঁসটিকে বেতের ভাঙ্গা টুকরির ভেতর খড়পাতা দিয়ে বাসা তৈরী করে দেয়। মাস খানেক পর হাঁসটি আবার উড়তে শুরু করে। তারপর থেকে দিনে আশপাশের  বিলে-ঝিলে আদার খুঁটে খেয়ে সন্ধ্যাবেলা ঠিকই ফিরে আসে কুতুব ফকিরের ডেরায়। মনে হয় হাঁসটি তার মায়ায় পড়ে গেছে। সে অজানা দেশে আর উড়ে যাবে বলে মনে হয় না।

অনেক বছর আগে কুতুব ফকির যখন বয়সে কিশোর তখন তার যাত্রা গানের নেশা হয়। কিছুদিন পর জনপ্রিয় এক পালার সখি চরিত্রের পাঠ নেয়া নয়নতারা বলে এক মেয়ের রূপে মতেলা হয়ে সে বিবাগি হালতে সংসার ছাড়ে। যাত্রা দলটি যেখানেই পালা গাইতে যেত, তাদের পেছন পেছন গিয়ে হাজির হতো কুতুব। না, নয়নতারার সাথে তার সাক্ষাতে কখনো কথাবার্তা কিছু হয়নি। শুধু দূর থেকে দেখা, ও ভেতরে ভেতরে পোড়ে মরা। তারপর কেটে গেছে কত বছর। কুতুব কীভাবে যেন ফকির নাম পেয়েছে, মা-বাবার সংসারেও তার ফিরে যাওয়া হয়নি। কুটুমখেশ কে কোথায়, কারা বেঁচে আছে অনেক বছর তাদের কোন খোঁজ খবর নেয়া হয়নি। সে ঘুরে বেড়াচ্ছে যেখানে জন্ম হয়েছিলো তা থেকে অনেক দূরে। রেলশ্রমিকদের ইটের লম্বা ঘরে ডেরা বেঁধে আছে সে বেশ কয়েক বছর। স্মৃতিও তার মলিন হয়ে আসছে। এত বছর পর সে আর ভালো করে যাত্রাগানের সখি নয়নতারার রূপলাবণ্য কিছু মনেও করতে পারে না। সে আমলে কুতুব ট্রেনে, বাসে, গরুর গাড়িতে করে ,কখনো পায়ে হেঁটে অই অপেরা পার্টিকে অনুসরণ করতো। তার খুব হাউস ছিলো,প্রতি রজনীতে যেন নয়নতারার নাচ দেখার সুযোগ হয়। সে কত কালের কথা। সখি নয়নতারা কী পরে অভিনেত্রী হয়েছিলো? কোন খবরই সে জানে না।

রেলমজদুরদের পড়ো ইটের ঘরের নিরালায় বসে নিশিরাতে তার আবগারি তামাকের নেশা তুঙ্গে ওঠলে যখন হাঁসটি খানিক খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে তার হাঁটুর কাছে এসে ডানা ঘষে, তখন মনের বেগোরে সে তাকে নয়নতারা ডাকতে শুরু করেছে। দিন কেটে যায়। মাঝে মাঝে তার মনে হয় হাঁসটির তার স্নেহে সাড়া দিচ্ছে। বিলে-ঝিলে সারাদিনমান উড়ে রাত্রে ঠিকই সে ফিরে আসে কুতুব ফকিরের ডেরায়। কোন কোন দিন হাতে পয়সাপতি হলে সে বাজার থেকে নয়নতারার জন্য নিয়ে আসে এক ভাগা পুঁটি মাছ। ডেরায় কুতুব ফকিরের পাশেই নয়নতারা ভাঙ্গা টুকরিতে ঘুমায়। পয়লা পয়লা কয়েকদিন নয়নতারাকে নিয়ে কুতুব বড় দুশ্চিন্তায় ছিলো। এক দিন মাঝ রাতে নয়নতারার ‘চিক চিক চোয়াক চোয়াক চু উ উ’ ডাকে তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। জেগে ওঠে কুপি জ্বেলে দেখে ছাদের কড়িবরগা থেকে দেয়াল বেয়ে চাল-সাপটি নেমে আসছে নয়নতারার টুকরির দিকে। সাপটি কুতুবের পরিচিত। এক সাথে অনেক দিন হলো তারা একই চালের নিচে বাস করছে। কেউ কারো অনিষ্ট কিছু করেনি। কুতুব কুপি জ্বালাতেই আর চাল-সাপটি সামনে বাড়ে না। দেয়ালে ঝোলে ফণা নাড়িয়ে ইতস্তত করতে থাকে। কুতুব সাপের সাথে কথা বলে,‘সাপের বেটা সাপ, তুই আমারে চেনোস। একটা কথা তোরে পরিষ্কার করে কই। তুই নয়নতারারে কখনো জ্বালাবি না। ও তোর কোন ক্ষতি করছে না। তুই সোজা ফিয়ে যা তোর জায়গায়,’ বলে লাঠি তুললে চাল-সাপটি ঠিক যেন কুতুবের কথা বুঝতে পারে। সে লেজ প্যাচিয়ে ফিরে যায় চালের কড়ি বরগায়।

তারপর থেকে চাল-সাপটি আর কোন ঝামেলা পাকায়নি। মাঝে মাঝে দুপুর বেলার নিরিবিলিতে কড়িবরগা থেকে নেমে এসে কখনো নয়নতারার খালি টুকরিতে কুন্ডুলি পাকিয়ে বিশ্রাম নিতো। তবে কুতুব ফকিরের পায়ের শব্দ পাওয়া মাত্র সে চোটপাট কুন্ডুলি খুলে দেয়াল বেয়ে চলে যেতো ছাদে। এভাবেই তাদের চলছিলো শান্তিপূর্ণভাবে সহ অবস্থান, কেউ কাউকে পারোতো পক্ষে ঘাটাতো না, সৃষ্টি করতো না কোন সমস্যা। তবে কিছুদিন পর কুতুব ফকিরের জীবনে বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয় নয়নতারার মাঝে ভ্রমণের যাযাবরি প্রবণতা ফিরে আসলে। হেমন্তে গাছ বিরিক্ষের পাতা ঝরতে শুরু করলেই বাতাসে চলে আসে খানিকটা শীতের হিমেল আমেজ। তখন নয়নতারা বড় অস্থির হয়ে পড়ে দক্ষিণ দিগন্তে উড়ে যাওয়ার জন্য। কুতুব ফকির অভিজ্ঞতা থেকে জানে যে, একবার উড়ে গেলে আবার তার ডেরায় ফিরে আসতে আসতে শীত ঋতু কেটে গিয়ে চলে আসবে বসন্ত। তার পৃথিবীতে আপন বলতে কেউ নেই। নয়নতারাকে ছাড়া নিরালা এ ডেরায় একা থাকাটা তার জন্য কঠিন। আর নয়নতারাই বা কোথায় উড়ে গিয়ে সারা শীতকালটা কাটিয়ে আসে কুতুব ফকির ঠিক বুঝতেও পারে না। একবার তো পাখিদের যাযাবরি মৌসুম শুরু হওয়ার আগে কুতুব বিরক্ত হয়ে কাঁচি দিয়ে ছেটে দিয়েছিলো নয়নতারার ডানার পালক। কিন্তু তাতেও নয়নতারাকে ঘরে রাখা কঠিন হয়। পালক কেটে ফেলাতে সে উড়তে পারে না বটে, কিন্তু অস্থির হয়ে ডানা ছটফটিয়ে হেঁটে হেঁটে দক্ষিণমুখে চলে গিয়েছিলো অনেকখানি পথ। কুতুব ফকির তাকে ধরে ডেরায় ফিরিয়ে এনে ঝাঁকার নিচে বন্দী করে রেখেছিলো। প্রতিদিন তাকে বাজার থেকে মাছ এনে খেতে দিতো। ঝিল থেকে তুলে নিয়ে আসতো শামুক ও গুগলি।। কিন্তু হাঁসটি ‘চিউ চিউ চোয়াক চোয়াক’ শব্দে সারাক্ষণ প্রতিবাদ করে তাকে শান্তিতে ঘুমাতে দেয়নি। তখন কুতুব বুঝতে পারে নয়নতারাকে যাযাবরি মৌসুমে তার যাত্রা থেকে কিছুতেই বিরত করা যাবে না। তো এবারে হেমন্তের শেষে যখন নয়নতারা দক্ষিণে উড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেলো, কুতুব ফকির তাকে আর বাঁধা দেয়নি। তবে তার কেবল ভয় হচ্ছিলো,অজানা দেশ থেকে নয়নতারা যদি আর ফিরে না আসে? যদি কোন শিকারি গুলি করে তাকে হত্যা করে? এ দুনিয়ায় বালা মুসিবতের তো কোন গাছপাথর নেই। কিন্তু কুতুব কী করতে পারে? জোর করে হাঁসটাকে ঝাঁকার নিচে বন্দী করে রেখে কষ্ট দিতে তার মন মানে না। তো হেমন্তের মৌসুম আসতেই কুতুব ফকির বিবির মোকামের খাদিমের কাছ থেকে-পথেঘাটে বালা মুসিবতে রক্ষা পাওয়ার জন্য একটি তাবিজ এনে তামার ঠুলে ভরে তা নয়নতারার গলায় ঝুলিয়ে দেয়। এক হাজি সাহেবের কাছ থেকে নিজের হাঁপানি রোগ নিরাময়ের কথা বলে সে জোগাড় করেছিলো যৎসামান্য আবে জমজমের পানি, তার খানিকটা সে নয়নতারাকে খাইয়ে দেয়। কিন্তু সেই যে হেমন্ত মৌসুমের শেষ দিকে নয়নতারা উড়ে গেলো-আজ অব্দি সে তো আর ফিরে আসলো না। কুতুব ফকিরের বুকের ভেতরটা চিনচিন করে ওঠে।

নয়নতারা উড়ে যাওয়ার আগে মাঝে মাঝে যখন কুতুব ফকির তার ডেরা থেকে পাঁচ সাত মাইল দূরে পাখি-টাখি ধরতে যেত, সহসা তখন আসমানে পরিচিত ‘চিক চিক চোয়াক চোয়াক’ ধ্বনি হলে সে চমকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতো, তখন নয়নতারা ঝুপ করে নেমে বসে পড়তো তার কাঁধে। সে ঠিক বুঝতে পারতো না কীভাবে হাঁসটি জেনে যেতো সে কোথায় গিয়েছে, আর উড়ে এসে তার কাঁধে বসে তাকে বড় চমকে দিতো! নয়নতারার কথা মনে পড়তেই তার বুকের ভেতরটা খালি খালি লাগে। আরো বেশী করে আবগারি তামাকের নেশা পায়।

এ সব নানা কথা ভাবতে গিয়ে কুতুব ফকির বেখয়াল হয়েছিলো, হঠাৎ করে তার নজর ফিরে যায় তৈরল গাছের ডালপালায়। খোড়লে ময়না পাখির সোনালি ঠোঁট দেখা যায়। মা পাখিটি বেশ ধীরে সুস্থে খোড়ল থেকে শরীর বের করে উড়াল দেয়। ময়নার আচরণ থেকে কুতুব ফকির পরিষ্কার বুঝতে পারে-এ খোড়লে পাখির ছানা আছে; এবং সাপখোপের আপাতত কোন ভয় নেই। সে ঝোলা থেকে আধ হাত লম্বা কয়েকটি বাঁশের টুকরা ও দড়ি বের করে। তৈরল গাছটি আশি থেকে নব্বই হাত উঁচু। সে বাঁশের একটি টুকরাকে দড়ি দিয়ে গাছের সাথে বেঁধে সিঁড়ির মতো করে নেয়। তাতে দাঁড়িয়ে বেশ উপরে গাছে বাঁধে আরেক খন্ড বাঁশ। এভাবে গাছের গায়ে বাঁশখন্ড বেঁধে-বেঁধে তরতর করে দক্ষ পায়ে কিছু সময়ের ভেতর উঠে পড়ে মগডালের কাছাকাছি। খোড়লে হাত ঢুকিয়ে সে তালাশ পায় এক জোড়া নরোম কচি ছানার। সে ছানা দুটিকে পিটের ঝোলায় সাবধানে পুরে নেমে আসতে থাকে নিচে।

অর্ধেক গাছ অব্দি নেমে আসার পর নিচের বাঁশখন্ডে পা দিতে গিয়ে কুতুব ফকির আঁতকে ওঠে.. ..। গাছ বেয়ে প্যাচিয়ে প্যাচিয়ে উপরে উঠে আসছে মস্ত এক কালসাপ। তার বুকের ভেতর ধ্বক করে ওঠে। গাছের মাঝামাঝি এ অবস্থান থেকে মাটির দূরত্ব প্রায় চল্লিশ পয়তাল্লিশ হাত। লাফিয়ে নিচে পড়ার কোন কায়দা নেই। মাটিতে পড়লে শরীরের হাড়গোড় একটাও আস্ত থাকবে না। এদিকে কালসাপটি ক্রমশ কাছে এগিয়ে আসছে.. .. কী করবে কুতুব ঠিক বুঝতে পারে না। কালসাপটি সামনে প্রতিবন্ধক আছে বুঝতে পেরে ফণা তুলে। নিশ্চিত মৃত্যুর মুখোমুখি ঝুলে থেকে কুতুব ফকিরের স্টেশন মাস্টারের কিশোরী মেয়েটার কথা মনে পড়ে। মেয়েটা হয়তো এখন হলুদিয়া পাখির পালকের মতো সোনালি ওড়না গায়ে অভারব্রীজের উপর দাঁড়িয়ে অন্যমনষ্ক চোখে তাকিয়ে আছে সিগনাল বাতির দিকে। কালসাপটি ফুসফুসিয়ে শরীর মুছড়িয়ে এসে পড়ছে কুতুব ফকিরের কাছাকাছি.. ..।

হঠাৎ আসমানে ‘চিক চিক চোয়াক চোয়াক’ শব্দ ধ্বনিত হয়। কালসাপের খুব কাছাকাছি ঝুলে থেকে কুতুব ফকিরের বড়ো তাজ্জব লাগে! সে বুঝতে পারে অজানা দেশে সফর সেরে ফিরে এসেছে নয়নতারা। কিন্তু কুতুব যে তৈরল গাছে ঝুলে আছে এটা হাঁসটি জানলো কীভাবে? শমণ তার কাছাকাছি ফণা তুলে আছে, এ বিপন্ন হালতে কুতুব ফকির ঘাড় ফিরিয়ে নয়নতারাকে শেষবারের মতো দেখার জন্য তাকায়। নয়নতারা ততক্ষণে নেমে এসেছে তৈরল গাছের খুব কাছাকাছি। দ্রুত ডানার পৎ পৎ ধ্বনি তুলে হাঁসটি কুতুব ফকিরের পা ও কালসাপের ফণার ঠিক মাঝ দিয়ে উড়ে যায়। হাঁসের ডানার আচমকা ঝাপটায় বিপন্ন সাপটি নামিয়ে ফেলে ফণা ।

মঈনুস সুলতানের জন্ম সিলেট জেলার ফুলবাড়ি গ্রামে। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভারসিটি অব ম্যাাসাচুসেটস থেকে আন্তর্জাতিক শিক্ষা বিষয়ে ডক্টরেট করেন। বছর পাঁচেক কাজ করেন লাওসে-একটি উন্নয়ন সংস্থার কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ হিসাবে। খণ্ডকালীন অধ্যাপক ছিলেন ইউনিভারসিটি অব ম্যাসাচুসেটস্ এবং স্কুল অব হিউম্যান সার্ভিসেস এর। কন্সালটেন্ট...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

বালির বেহালা

বালির বেহালা

বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..

তদন্ত

তদন্ত

  এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..