ঝরা শিউলি
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
আমাদের পাড়ার শাশ্বতী ডাক্তার। হোক হোমিও, তবু সব জায়গায় নিজের নামের আগে ডঃ লেখার অভ্যাস তৈরি করেছে। কিন্তু তার মনে বড়ই কষ্ট। একটা বিয়ে হলে মন্দ হয় না। মা মরে গেছে ছোটবেলায়। বাবার সঙ্গে মায়ের বনিবনা ছিল না। মা মারা যেতে বাবা আরেকটি মহিলার সঙ্গে থাকে। সেই মহিলাকে কোনোদিন মা ভাবতে পারেনি শাশ্বতী। সে বড় হয়েছে জ্যাঠামশায়ের কাছে। অকৃতদার, খানিকটা পাগলাটে আর নিষ্কর্মা জ্যাঠামশায়ের কাছেই বড় হওয়া তার। কিন্তু জ্যাঠামশায়ের বয়স যেভাবে বাড়ছে, তাতে নিজের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে সে। হোমিওপ্যাথি ডাক্তার। একজনের বাড়তি একটা ঘরে বসে বসে মাছি তাড়ানোর ঢঙে চেম্বার চালায় সে। মেয়েদের ডাক্তারিকে বাঙালি কি কোনোকালেই খুব ভরসা করেছে? কাদম্বিনী গাঙ্গুলির কথা খবরের কাগজে বেরিয়ে ছিল। কাটিংটা রেখে দিয়েছে শাশ্বতী। কাগজে মন দিয়ে ‘পাত্রী চাই’ পড়ে সে। পশার হোক না হোক, ডাক্তার সে। তার পাত্র হবে বিশ্বখ্যাত প্রফেসর, অসাধারণ ইঞ্জিনিয়ার, ডাকসাইটে সার্জন, সেলিব্রিটি অ্যাডভোকেট, অন্ততপক্ষে আই এ এস। এলেমদার লোক ছাড়া বিয়ে করবেই না সে। একবার চোখে পড়ে গেল পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সী এক প্রফেসর বৌ খুঁজছেন। লিখেছেন, পাত্রীর ত্রিশ বছর বয়স হলে চলবে। হুররে। জ্যাঠামশায়ের নাম করে যোগাযোগ শুরু করে দেয় সে। চটপট কথা এগিয়ে যেতে থাকে। নিজের বিয়ে নিয়ে স্বপ্ন দ্যাখে শাশ্বতী। সে বিয়েতে কী রঙের বেনারসি পরবে, কোন্ ধরনের গয়না পরবে ভাবতে ইচ্ছে করে। প্রি ওয়েডিং শুটিং হবে, বিয়েবাড়িও ভাড়া করে কিছু অগ্রিম দিয়ে রেখেছে সে। বাকি টাকা পরে দিলেই হবে। কিন্তু নিজের চেম্বারে তো অত আয় হয় না। আর জ্যাঠামশায়ের তো কোনো সঙ্গতি নেই। যখন ছোট ছিল, এক পিসতুতো দাদা কিছু সাহায্য করত। কিন্তু হোমিওপ্যাথি পাশ করার পর সেও হাত গুটিয়ে নিয়েছে। অগত্যা বাপের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করল শাশ্বতী। আমার বিয়ে। সারা জীবন তো আমার জন্য কিছুই করো নি। এবার ক্যাশ ছাড়ো। অপদার্থ বাবা তার মেয়েমানুষের দিকে মিনমিন করে তাকায়। মহিলা একটা স্কুলে কী কাজ টাজ করে। তার ইঙ্গিতে বাবাটা বলল, যতটা বেশি পারি দেব। তুই সংসারী হ।
মনে চাঙ্গা হয়ে পিসি ও জ্যাঠা ও আর সব পৈতৃক আত্মীয়স্বজনের বাড়ি ঢুঁ মারতে শুরু করল শাশ্বতী। হুঁ হুঁ বাওয়া। আমার মা নেই তো কি হয়েছে। তোমরা তো আছ। দাও প্রত্যেকে পঁচিশ হাজার টাকা করে। আজকাল সরকারও তো রূপশ্রী নামে পঁচিশ হাজার টাকা দেয়। তোমরা নিজের বাড়ির মেয়েটার জন্যে দেবে না, তাই কি হয়?
ইতিমধ্যে শাশ্বতী আমাকে জিজ্ঞাসা করল, দাদা, আপনাকে কিন্তু আমার বিয়েতে আসতেই হবে।
বললাম, তুমি যদি বিয়েটা রেজিস্ট্রেশন করো, আর বিয়ের আগে রক্তপরীক্ষা করাও, তাহলে আসব।
শাশ্বতী বলল, তাহলে রেজিস্ট্রেশন কোথায় করা যায়, আপনি একটু দেখেশুনে দিন।
বললাম, যে ভদ্রলোকের সঙ্গে তোমার বিয়ে হচ্ছে, তিনি কি করেন?
বেশ একটু তৃপ্তির সঙ্গে সে বলল উনি প্রফেসর।
বললাম, তা হলে বিয়ের রেজিস্ট্রেশন নিয়ে তাঁর জানা থাকবে।
শাশ্বতী বলল, না না তিনি খুব সহজ সরল মানুষ। ওসব কিছু খবর রাখেন না। আপনিই একটু দেখে শুনে দিন।
বললাম, প্রফেসর মশায়ের বাড়ি কোথায়?
শাশ্বতী বেশ গর্বের সঙ্গে বলল, টালিগঞ্জ।
বললাম, ধুস্, টালিগঞ্জের ছেলে ম্যারেজ রেজিস্ট্রার চিনবেন না, এ হয় না কি? দ্যাখো, উনি সব ব্যবস্থা করে রেখেছেন।
হঠাৎ করেই কী মনে হতে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, হ্যাঁ গো, তোমার বরের বয়স কত?
শাশ্বতী সতর্ক উত্তর দিল, তিনি আমার থেকে বেশ খানিকটা বড়।
তখন জানতে চাইলাম, তোমার বয়স কত?
সে বলল, আমি ত্রিশ পেরিয়েছি।
আমি বললাম, তো প্রফেসর মশায় এতদিন বিয়ে করেন নি কেন?
শাশ্বতী বলল, আসলে বিয়ে করবেন না ভেবে রেখেছিলেন কি না।
সে কি! কেন, বিয়েতে অমত ছিল কেন?
না, ওঁর বাবা ওঁর ছোটবেলায় সন্ন্যাসী হয়ে চলে গিয়েছিলেন। পরে একদিন এসে ওঁকে প্রতিজ্ঞা করিয়েছিলেন, জীবনে বিয়ে করবি না।
তো হঠাৎ করে প্রফেসর মত বদলালেন যে!
ওঁর মা জেদ ধরেছেন যে। বলেছেন, বাবা, ঘরগুলো খালি পড়ে আছে। বড় ফাঁকা লাগে।
সেকি! বাবার কথায় সন্ন্যাসী হলেন, আর মায়ের কথায় ঘরণী আনবেন! না না শাশ্বতী, তুমি ভাল করে যাচাই করো, উনি আদৌ তোমাকে ভালবেসে বিয়ে করছেন, না কি ঘরগুলো খালি যাতে না থাকে, তার চেষ্টা করছেন।
কি করে জানব আমায় ভালবাসেন কিনা। কথা তো হয় না।
দ্যাখো শাশ্বতী, তুমি কচি খুকিটি নও। ভালবাসেন কি না জানো না বললে চলবে কেন? দুজনে একসাথে ঘোরো, সিনেমায় যাও, পার্কে যাও। সময় কাটাও। দ্যাখো, তোমাকে উনি কতটা চান!
বাড়িতে তো পারমিশন চাইতে হবে! সেটা কি ভাল দেখাবে?
এটা একটা কথা হল শাশ্বতী? দুদিন বাদে যার গলা জড়িয়ে ধরে শোবে, তাকে বিয়ের আগে খুঁটিয়ে জানবে না?
কিন্তু কী করে বুঝতে পারব ভালবাসেন কিনা?
কেমিস্ট্রি বোঝো শাশ্বতী, কেমিস্ট্রি? একটা পুরুষ ভালবাসি ভেবে কাছে এলে একটা কেমিস্ট্রি টের পাও না?
ফ্যাকাশে মুখে তাকায় সে।
বললাম, দ্যাখো শারীরিক ভাবে তিনি তোমাকে সত্যি চান কিনা, নাকি মাকে সন্তুষ্ট করতে বিয়ে বিয়ে খেলতে নেমেছেন!
কদিন বাদে শাশ্বতী খবর দিল বিয়ে ভেঙে গেছে।
আত্মীয়স্বজনেরা বলল, ঢং!
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
শেষ থেকে শুরু। আমি রজকিনী রামী,ধোপার বংশে জন্ম আমার।ঘাটে সখিদের সঙ্গে কাপড় কাচি। একাজটা আমি…..
মালঞ্চার পথে ভোরবেলা। সূর্য সবে উঠছিল। বৈশালী দূর থেকে দেখতে পেল,বুনিয়াদপুর বাসস্ট্যান্ডে বালুরঘাটের দিকে মুখ…..
আমার বাবা ছিলেন অত্যন্ত সাহসী একজন লড়াকু মনের মানুষ।শত অভাব অভিযোগেও তাকে কোনোদিন ভেঙ্গে…..