ঝরা শিউলি
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
“ফ্লাইট ডিলে আছে বাবা,পৌঁছে ফোন করে দেবো”
-ঠিক আছে।বৌমা দাদুভাইকে আনতে গেছে,ও ফিরলে বলে দেবো
-ঠিক আছে বাবা রাখছি
একটু দূরে….
-বৌমণি, মাকে বলে দিস।আমি বুনুর বাবাকে জানিয়ে দিয়েছি।ও নিতে আসবে বলেছে
-ঠিক আছে সাবধানে যাস
-হ্যাঁ রে
দুজনেই ফোনে কথা বলে আলাদা দুটো সিটে গিয়ে বসলো।একজন হলেন জয় বিশ্বাস।কলকাতা থেকে মুম্বাই যাচ্ছেন অফিসের কাজে।আরেকজন হলেন প্রিয়া সমাদ্দার কলকাতায় মার শরীর খারাপে মাকে দেখতে এসেছিলেন,এখন ফিরছেন তার নিজের বাড়ি মুম্বাইতে।দুজনেই একটু দূরে সামনা সামনি বসায় চোখ পড়লো দুজন দুজনের দিকে।জয়ের বিশ্বাস হচ্ছিল না।চোখের চশমাটা খুলে আরো ভালো করে দেখার চেষ্টা করলো,হ্যাঁ এ তো সত্যিই প্রিয়া।প্রিয়ার কিন্তু জয়কে চিনতে একটুও ভুল হয় নি।যদিও দুজনের পাশেই বসার জায়গা খালি ছিল,তবুও জয় উঠে প্রিয়ার পাশে যেতে সাহস পেলো না কারণ কে জানে প্রিয়ার সাথে আর কে আছে।তবুও ইশারা করে জিজ্ঞেস করলো প্রিয়ার পাশে গিয়ে বসবে কিনা।প্রিয়াও মাথা নেড়ে সম্মতি দেয়।জয় এদিক ওদিক তাকিয়ে প্রিয়ার পাশে গিয়ে বসে।কিছু মুহূর্ত দুজনেই চুপ থেকে প্রিয়া বলে ওঠে….
-তুমি এখানে?নতুন চশমা?
জয়-নতুন না,প্রায় এক বছর হলো।তুমি কোথায় যাচ্ছ?
প্রিয়া-বাড়ি ফিরছি
জয়-এখন বুঝি কলকাতার বাইরে থাকো?
প্রিয়া-হ্যাঁ ওর বদলির চাকরিতে আমরা এখন
….তুমি? বিয়ে করেছো?
জয়-ন’বছর পর তোমার সাথে দেখা হলো।সেদিন যদি তুমি আমার কথা মেনে নিতে তাহলে আজ আমরা….
প্রিয়া-ওসব পুরোনো কথা থাক
জয়-চাকরি করছো এখন? শুধু একটা চাকরির জন্য তুমি আমায়…..
প্রিয়া-কেন পুরোনো কথা তুলেছো? আমি তোমার সাথে ঘর করতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি অপেক্ষা করতে পারো নি
জয়-তোমাকে তো বলেছিলাম,যে বিয়ের পর করো ওসব কিন্তু তুমি মানলে না
প্রিয়া-জয়,আমি পড়াশোনা করে চাকরি করতে চেয়েছিলাম,সেটা কি অন্যায়ের ছিল? নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাওয়াকি ভুল?
জয়-তা তো বলিনি কখনো।বলেছিলাম বিয়ের পর করো।তুমি আমার ওপর বিশ্বাসটা রাখতে পারো নি
প্রিয়া-বিশ্বাস তো তুমিও রাখতে পারো নি।বলছিলাম একটু সময় দাও আমি নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে নি।কিন্তু তুমি বাড়ির লোকদের বোঝাতে পারলে না
জয় আর প্রিয়ার সামান্য উচ্চস্বর আশেপাশের কিছু লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ করালো।
সেটা লক্ষ্য করে….
জয়-সবাই দেখছে
প্রিয়া-দেখুক গিয়ে
জয়-চলো ওদিকটা ফাঁকা আছে,ওখানে গিয়ে বসি
প্রিয়া-তুমি যাও
জয়-জীবনে আর কখনো এই সুযোগ আসবে কিনা জানি না। আর কখনো এভাবে তোমার সাথে আমার একা দেখা হবে না হয়তো।প্লিজ প্রিয়া, ছেলে মানুষি করো না
প্রিয়া উঠে দাঁড়ালো।দুজনে একটা দেওয়ালের দিকে কোণার সিটে গিয়ে বসলো।
প্রিয়া-আমরা তো তখন দুজনে সমঝোতা করেছিলাম যে আমাদের ভবিষ্যৎটা আমরা আমাদের মতো করে কাটাবো।তাহলে আজ আমাদের এই অভিযোগ কিসের?
জয়-তুমি ঠিক বলেছো, সেদিন দোষটা আমারই ছিল।তোমার মনের ইচ্ছাটাকে আমার প্রাধান্য দেওয়া উচিত ছিল। কি আর হতো, আমরা না হয় আর তিন/চার বছর পর বিয়ে করতাম।তাহলে অন্তত দুজনে একসাথে থাকতে তো পারতাম।সেই ধৈর্য টুকু দেখাতে পারিনি সেদিন
প্রিয়া-ভুল আমারও ছিল।তুমি বলেছিলে যে বিয়ে করেও আমি চাইলে আমার ইচ্ছে পূরণ করতে পারি,কিন্তু আমি তোমার ওপর সেই ভরসাটা রাখতে পারি নি।মনে হয়েছিল বিয়ে করলেই আমার সব শেষ হয়ে যাবে
জয়-আমরা দুজনই দুজনের ওপর ভরসা রাখতে পারি নি,এটাই আমাদের দুর্ভাগ্য
প্রিয়া-ঠিক বলেছো।আই এম সরি
জয়-সরি তো আমিও।কিন্তু আমাদের এই ভুল আজ আর শুধরে নেওয়া যাবে না
প্রিয়া-তখন যদি এতটা পরিণত হতাম আমরা তাহলে…
জয় প্রিয়ার ভেজা চোখের পাতার দিকে তাকিয়ে-এখনো তোমার চোখ দুটো কত সুন্দর।ভেজা পাতা গুলো যেন আরো সুন্দর করে দেয় তোমার চোখগুলোকে
প্রিয়া খুব কৌশলের সাথে চোখের জল মুচ্ছিলো।জয় বলে উঠলো-ছাড়ো এসব মন খারাপের কথা।তোমার কথা বলো
প্রিয়া-আমার বর মিউজিক্যাল ইন্সট্রুমেন্টের একটা কোম্পানি তে কাজ করে
জয়-বাহ!তা গান টান করে নাকি?
প্রিয়-না!ভীষণ বেসুরো তবে বাদ্যযন্ত্রের অসুখ ঠিক ধরতে পারে।আমাদের পাঁচ বছরের মেয়ে বুনু
জয়-তুমি এত ছোট মেয়েকে কার কাছে রেখে এলে?
প্রিয়া-বাপ মেয়ের বন্ডিং খুব ভালো।ওর কাছে থাকবে।মার শরীরের জন্য এই সময় এলাম নয়তো….
জয়-তোমার বর তোমায় খুব ভালোবাসে তাই না?
প্রিয়া-সে কথা অস্বীকার করার কোনো জায়গা নেই।এবার তুমি বলো তোমার কথা
জয়-সাথী হাউস ওয়াইফ,ছেলে তিন বছর হলো সবে, প্লে স্কুলে ভর্তি হয়েছে
প্রিয়া-তুমি বিয়ে করেছো আমি জানতামই না
জয়-কি করে জানবে,আমাদের মধ্যে যে কথা হয়েছিল আমরা কেউ কারোর খোঁজ নেবো না।তোমার ফেসবুকে এ্যাকাউন্ট আছে?তোমার ওয়াটসঅ্যাপ নম্বরটা দাও তো
প্রিয়া-না জয়,আমি আমার বরকে তোমার ছবি
দেখিয়েছি।ও তোমার কথা জানে
জয়-সাথিও তোমার কথা জানে
প্রিয়া-তাহলে তুমি কি করে আমার সাথে যোগাযোগ রাখতে চাইছো?
জয়-আমরা কি খারাপ কিছু করবো নাকি? শুধু একটু যোগাযোগ রাখবো
প্রিয়া-তুমি তোমার সংসারে সুখী,আমি আমার সংসার শান্তিতে করছি,এখন আমাদের কোনো একটা ভুলে যেকোনো সংসার ভেঙে যেতে পারে
জয়-কিছু হবে না
প্রিয়া-তোমার আমার যদি এক হওয়া কপালে থাকতো তাহলে ন’বছর আগে আমরা ভালোবাসার সাথে সাথে একটু বিশ্বাস,ভরসাও রাখতাম একে অপরের প্রতি,কিন্তু তা হয় নি।আজকের এই দেখা হওয়াটাও একটা ভাগ্য।তোমার সিট নম্বর কত? আমার সামনের দিকে
জয়-আমার তো একদম পিছনে
প্রিয়া-এই দ্যাখো সেটাই তো বলছি।আজ যদি ফ্লাইট ডিলে না হতো,তাহলে কিন্তু আমাদের দ্যাখা হতো না।তুমি ফ্লাইটের এক দরজা দিয়ে ঢুকতে বেরোতে আর আমি এক দরজা দিয়ে ঢুকতাম বেরোতাম।কিন্তু দেখো দ্যাখা হলো,একান্তে কথা হলো।এই দ্যাখা হওয়াটা হয়তো আমাদের পুরনো সমঝোতাকে আরো
মজবুত করার জন্য হলো
জয়-এ্যানাউন্সমেন্ট হচ্ছে,এবার আমাদের যেতে হবে।যাওয়ার আগে একটা শেষ উত্তর জানতে চাই,এখনো ভালোবাসো আমায়?
দুজনেই উঠে দাঁড়ালো।প্রিয়া একবার ভালো করে জয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে,চোখের চাউনি নিচের দিকে করে-জানি না,তবে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে এটা ভেবে যে আর আমাদের কখনো দেখা হবে না
জয়-একটা শেষ অনুরোধ করছি
প্রিয়া-কিসের অনুরোধ?
জয়া-কথা দিচ্ছি,ভগবান না চাইলে আর কখনো তোমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করবো না।কিন্তু আমি কাল জয়া নামে একটা ফেক এ্যাকাউন্ট থেকে ফেসবুকে তোমায় ফ্রেইন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাবো,সেটা এ্যাক্সেপ্ট করো।আমি শুধু তোমাদের দেখবো।যদি কোনোদিন নিজেকে সংযত না রাখতে পেরে তোমায় মেসেজ দিয়ে ফেলি তাহলে আমায় ব্লক করে দিও।প্লিজ প্রিয়া শুধু নীরব হয়ে দেখবো,তুমি মানা করো না
প্রিয়া-ঠিক আছে চলো।তোমার তো ওই দিকের দরজায় যেতে হবে
জয়-ওকে বাই, ভালো থেকো
প্রিয়া-হুঁ
প্রিয়ার লাইন থেকে জয় বেরিয়ে অন্য লাইনে যাবে বলে সবে দু পা গেছে,পিছন থেকে প্রিয়া-জয়……
জয় দাঁড়িয়ে পিছন ফিরলে, প্রিয়া-কাল প্রিয়াঙ্ক তোমায় ফ্রেইন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাবে,একটু খেয়াল রেখো
জয় আনন্দটা চেপে রাখতে পারছিল না,একা একাই আনন্দে হেসে যাচ্ছিল,আর মনে মনে বলছিল,এবার তুমি আমার ওপর বিশ্বাসটা রাখতে পারলে প্রিয়া
ফ্লাইটের সিটে বসে প্রিয়া চোখ বন্ধ করে হাসি মুখে মনে মনে বললো,আমি জানি আমরা আমাদের বিশ্বাস কখনো ভাঙবো না,কারণ আমরা আমাদের পরিবার কে দুজনেই খুব ভালোবাসি আর হয়তো আজও একে অপরকেও…..
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
শেষ থেকে শুরু। আমি রজকিনী রামী,ধোপার বংশে জন্ম আমার।ঘাটে সখিদের সঙ্গে কাপড় কাচি। একাজটা আমি…..
মালঞ্চার পথে ভোরবেলা। সূর্য সবে উঠছিল। বৈশালী দূর থেকে দেখতে পেল,বুনিয়াদপুর বাসস্ট্যান্ডে বালুরঘাটের দিকে মুখ…..
আমার বাবা ছিলেন অত্যন্ত সাহসী একজন লড়াকু মনের মানুষ।শত অভাব অভিযোগেও তাকে কোনোদিন ভেঙ্গে…..