পাগল
চৌদ্দ পনেরো বছর আগের কথা; আমি বসে আছি একটি দোকানে, দোকানটি মূলত আমাদেরেই। দোকানের সামনে…..
লোকে বলতো দুটো আপেল নাকি জামার নীচে ঢুকিযে রেখেছি! কেউ বলতো আলু! অবাক হতাম এটা ভেবে যে, কেউ জানেই না বাজারে ফোলা ফোলা স্পঞ্জওয়ালা ব্রাও পাওয়া যায় ! একবার ট্রেনে কলকাতা থেকে ফিরছি । এক ছোকরার কাতর আবেদন সে দেখতে চায় ওড়নার আড়ালেরটা অরজিনাল নাকি ফলস। সেই মুহূর্তে ট্রেনের ফুরফুরে জানলার ধারে আমার ভাবুক হাতে খোলা-বিভূতিভূষণ ! ছেলেটির স্পর্ধা আমায় মুগ্ধ করলো। রহস্যের সন্ধানের নামই তো বিজ্ঞান! ছোটবেলায় সেই রহস্যের উৎসমুখে গিয়ে কতবার দেখেছি অনেকেরই ফাঁপা ব্রায়ের ভেতর পুরোনো পেন্টি কিংবা ছেঁড়া তোয়ালে, আবার কখোনো বালিশের খোল গোল করে গোঁজা। মরদ শরীরে মেয়ে হওয়ার কী মারাত্মক প্রচেষ্টা ! স্তন থাকুক বা না থাকুক আমি মেয়ে, এ কথা বললে পুরুষ মানবে কেনো ! সমতল বুক তো পুরুষেরও হয়! কাজেই ছেলেটির আগ্রহও স্বাভাবিক। তবে আমার বুকের কুঁড়ি যেদিন সত্যি করে ফুল হয়ে ফুটলো সেদিন হৈচৈ বেঁধে গিয়েছিল শহরে। প্রতিযোগিতা চললো, আসল হলে তুই জিতবি, নকল হলে আমি। আজও যখন কোনো মধ্যরাতে ম্যাসেঞ্জারে ভিডিও কলের ঘন্টি বেজে উঠে বলে “একবারটি দেখাও” তখন জগৎ টাকে বড়ো আপন বলে মনে হয়। সেই পুরুষের আড়ালের পুরুষটাকে লম্বা হাতে স্যালুট জানাতে মন চায়! আহা! দু দিনের জীবনে বেচারা শুধু একটু দেখতে চায়! বিজ্ঞান নয়, এরপর একা বাথরুমে বসে হস্তমৈথুনের ওপর কোনো কোর্স হয়তো সে কমপ্লিট করবে ! পুরুষ কিছুক্ষন মোজা পরে থাকলে তা দুর্গন্ধ, আর নারীর ঘেমো বগলের গন্ধেও কি সুঘ্রাণ ! এটাই তো পৃথিবী !
গয়না পড়ে শাড়ি পড়ে নকল চুল বেঁধে হিজড়া পর্যন্ত হতে পেরেছি, মেয়ে হতে পারিনি । মেয়ে হওয়া যায় না। মা গো ! তোমার আদরের রাজকুমারের ওড়নায় আজ কত পুরুষের বীর্য মোছার দাগ! কন্ডোম এর মিষ্টি গন্ধ প্রতিটি হা হুতাসে ! আর কত ক্ষত তৈরি হলে পুরুষ তুমি প্যান্ট পড়বে ? আর কত অন্ধকার পার হলে আমার শীৎকার থামবে! যৌনতায় আমি মেয়ে। মাথার ঘিলুতে আমি মেয়ে । গু থুতু কফ, নাড়ি ভুঁড়ি মাড়িয়ে সময় হাতটি ধরে সমঝে দেবে সেই ক’সের ছাই ! তাতে শাড়ি চড়ানোর দরকার পড়ে না। কানের ,নাকের পড়তে হয় না। মনের দুনিয়ায় আমি তো রানিই। কিন্তু কাজল না টানলে যে পুরুষ আসে না! সায়া ব্রা না পড়লে যে মেয়ে লাগে না ! মন আর শরীর যে এখনও একসাথে! বড়ো জটিল এ অন্ধকার। বড়ো নিষ্ঠুর এ মন। ঘরের ছেলেটা হিজড়া হয়ে গেল! মা বাপের ওপর দিয়ে কি ঝড়টাই না গেল ! আকাশ হাতড়াতে গিয়ে রক্তের থাবা গুনি। সময় শুধুই যে অতীত দেখায়। সময় আর মৃত্যু যতটা , যৌনতা আর মন বুঝি ততটাই নিবিড়। যৌনতা আমাকে মেয়ে হওয়া শেখাল নাকি আমার মন ? নাকি যা মন তাই যৌনতা ? এক রাত অন্ধকারের সাথে আমার অনর্গল কথা বলা এ কি যৌনক্রিয়া নয় ? তাতে কি আমায় মেয়ে সাজতে হয় ? শরীরের সাথে শরীরের গপ্পেই যত দেখোনদারি । সে আনন্দ বড়ো ক্ষনিকের।
চুল লম্বা তো হলো কিন্তু আঁচড়ানোর সময় আর হয়ে ওঠেনি কত বছর কাল। ফেস পাউডার ব্যাগেই রয়ে গেল ডেট ফেল হয়ে। নাকছবি গেঁথে ছিলাম এক কালে, টিনের পাতে জং ধরে রয়ে গেল। কাজল পেন্সিল আছে বটে একটা, চোখে আঁকা হয়নি বহুকাল। সময় পাইনি। প্রথমে জ্যাঠা, তারপর মা, তারপর বাবা, এরপর আরেক দিদি। ফুলে ঢাকা শরীর গুলো ট্রাকে চেপে কোথায় সব হারিয়ে গেল। অন্ধকারে মাথা রাখি। এতটুকু হাড় পাঁজরায় এত ঝড় সইবার ক্ষমতা যে নেই একমাত্র অন্ধকারই বোঝে সে কথা। চোখ রাখি জানলার ফাঁকে। শরৎ দেখি, বসন্ত দেখি আকাশ দেখি, বিকেলের রোদ দেখি। কোথাকার সব ফুরফুরে হাওয়া আঙুলে বুলিয়ে টিপ পড়ি। আবার একটা দুগ্গা পূজা না ? ধুনোর গন্ধ, নতুন কাপড়ের গন্ধ, শরতের রোদের গন্ধ, প্যান্ডেলের গন্ধ বুক ভরে নি। ময়রা দের দুগ্গা থানে মাথা ঠুকি। মা যে এখানেই আসতো পুজো সাজিয়ে অষ্টমীতে, দশমীতে। অন্ধকারে ঠেস দিয়ে ঘুমাই কিছুক্ষন। ঢাকের শব্দে ঘুম ভাঙে। জানলায় চোখ রাখি উলুধ্বনি কলা বউ , ফটকার গন্ধ । রাতের আকাশে যতটুকু অন্ধকার সবটা আমার। ওই তারাগুলোও আমার।আমি অন্ধকারে বেঁচে রইবো সমস্ত মৃত্যুকে আগলে রেখে।।
মেয়েরা শুনেছি মায়ের জাত! কন্যা সন্তানকে বাঁচানোর জন্য কত কত আন্দোলন ! পুরুষেরা সেই “কন্যা” সাজলেই তোমরা তাদের ” হিজড়া ” বানিয়ে দাও ! তাঁদের লুটিয়ে পড়া আঁচল, চোখের কাজল, মুখে রঙের আড়ালে আরো একটা আত্মা আছে তার খোঁজ রেখেছো কখনো ? ও বাবুরা ! ভদ্র লোকেরা ! হিজড়াদেরই ভয়ানক মনে হয় বাবুদের ? একবার প্রেম করে দেখুনই না, চুরির ঠুনঠুন আওয়াজে মায়ের স্পর্শ পাবেন এ আমি এক বুক গঙ্গায় দাঁড়িয়েও বলতে পারি। হিজড়েরা শাড়ি তোলে, তালি বজায় ! উপায় কী ? আপনারা সাঁপ দেখলে ঢিল ছোড়েন না বুঝি ? আপনাদের অত্যাচারে, ঘেন্নায়, তাচ্ছিল্যে আমাদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে মশাই ! জানেন, কত পুরুষকে সুখ দিতে গিয়ে কত রূপান্তরকামী মানুষের অকালে জীবন গেছে ? এইডসে ! প্রেমিকের জীবাণু পোয়াতি বানালো! এর শেষ মৃত্যু! এই জীবাণুর বাবা যে কত পুরুষের তার হিসেব কে রাখে ! বাবুরা ! ভদ্রলোকেরা ! অত ঘেন্না করোনি ! এটা লিখতে লিখতেই পড়া গন্ধ নাকে আসে! রান্না কড়াইতেই ধরে গেছে ! দেখি তলাটা কালো…..! ঠিক আমাদের কপালটার মতো ! এবার ভাবছেন হয়তো লড়াইতে হেরে গেছি , হতাশ হয়ে পড়েছি ! কি তাই তো ? ভুল ভাবছেন। আমাদের যে হাড়ে হাড়ে আগুন। বেঁচে থাকার স্পর্ধা !
….ছটপট করছে মনটা । কেমন যেন উড়ু উড়ু করছে। আজ সাজলে কেমন হয়? শাড়ি পরবো। চুলে শ্যাম্পু করে ফুল গুঁজবো। হিল পরবো। শাড়িতে হিল মানাবে ?…লিপস্টিক তো লাগাচ্ছিই। চুল বাঁধবো নাকি খোলাই ছেড়ে দেবো?….কালকের আনা কানের গুলো পরবো….ওহো! ফেস ওয়াশ আনতে হবে ! হাতে মেহেন্দি লাগাতে হবে…ইচ্ছে সারাদিন উড়ে বেড়াই…ছেলেদের দেখে ঠোঁট বাঁকাবো। চোখ উল্টাবো।. সে রকম রাজপুত্তুর এলে দেখা যাবে। আচ্ছা কুমারীরা আলতা পরে? ভাবছি আলতা পরবো। কেমন শীত শীত করছে গো মা !… আচ্ছা মা ডাকলেও তোমরা কেউ কোনো সাড়া শব্দ দাও না কেন বলো তো আজকাল? চাদরটা গলা অবধি টেনে পাশ ফিরি। জানলাটা দিয়ে ফুর ফুর করে হাওয়া ঢুকছে। বেশ অন্ধকার বাইরেটাও । গ্যাঁদাল পাতার ঝোঁপটা কেমন কালো ভূত! দিব্যি দেখাচ্ছে। প্রিয়তম কী লিখি তোমায়?….আঙুলে করে আকাশটাতে আলতা টেনে দি চোখের কোন অবধি…নকশা কাটি মেহেন্দি দিয়ে একটা গোটা যোনিদ্বার…. জীবন সঙ্গী পাওয়ার একমাত্র সড়ক বুঝি !….এই তো ক্লাইটোরিসটা ! তারই নীচে সিংহ দুয়ার! শীতের ক’টা মাস পেরোলেই ফাগুন !…ক্যালেন্ডার হাতড়াই….এত ঠান্ডা কেন হাতটা বাবার?….ডাক্তার বলে গেলো ভেন্টিলেশনে দিতে হবে…ওঃ..তাই !..এক্ষুনি দিন… মাথার কাছে সর্ব মঙ্গল্য মঙ্গল্যে,শিবে সর্বার্থ সাধিকে…. বাবার স্বপ্ন একটা গরীব ঘরের মেয়ে দেখে আমায় বিয়ে দিয়ে দেওয়া .. আর সেই বিয়েতে বাবা বাজনা বাজিয়ে নাচবে !..কাজল দিয়ে আঁকিবুঁকি কাটি শরীর ময়…ক্যালেন্ডারটা পেয়েই যাই…বসন্ত নাকি ফুরিয়ে গেছে ! আজ হলেই বা কী হতো ?. ..মনটা ছটপট করছে..উসখুস করছে …ফোন তো এলো হাসপাতাল থেকে অনেক রাতে….আমি কিন্তু ন্যাড়া হই নি…মেয়ে না !.মেয়েরা ন্যাড়া হয় না…মৃত্যু ছাড়া পৃথিবীর দেওয়ার আর আছে টা কী ?….লিপস্টিক বুলাই আনমনে.. লাল নীল সবুজ সব অন্ধকার.…….
চৌদ্দ পনেরো বছর আগের কথা; আমি বসে আছি একটি দোকানে, দোকানটি মূলত আমাদেরেই। দোকানের সামনে…..
১৮ মার্চ ২০১৯ মধ্যরাত! চারদিক অন্ধকারে ঢেকে আছে শুধু বাড়ির চারিপাশে বিদ্যুতের বাল্বগুলো জ্বলছে তাদের…..
জোছনা করেছে আড়ি আসে না আমার বাড়ি গলি দিয়ে চলে যায়, গলি দিয়ে চলে যায়…..
পাঠকদের প্রায় জনেই হয়ত জানেন, সমকাম কি ? সমকামী কারা ? সমকামীর প্রকারভেদ, কেন…..