ইমন কল্যাণ
পরিচ্ছেদ ৬ অনেক রাতে ফিরেছিল কল্যাণ ওরফে শহীদুল।গাড়িটা শেডে রাখার পর দু’বার হালকা করে মা…..
বর কল্প
এক
নৌকা নিয়ে এগিয়ে যেতে যেতে কত কল্প যে কেটে গেল! কী কী দেখল, কোথায় কোন ঘাটে ঠেকল, সোমের তা সব আর মনে নেই। তবে ঘিয়া নদী ধরে বয়ে যেতে যেতে দেখেছে দুই পারের বসতি। যেমন মানুষ আছে, তেমনি আছে মৃগেরা। কত মানুষ যে তির্যক যোনিতে জন্ম নিয়ে পশু-পাখি-পতঙ্গ হয়ে যাচ্ছে তার কোন লেখাযোখা নেই; নিরন্তর ঘটে যাচ্ছে সব, বিচিত্র সব পালাবদল, পরিবর্তনের পরিবর্তন ঘটছে বারংবার। সোমের নৌকা পালটে গেল সময়ের সঙ্গে, কাঠ ভেঙ্গে জলে মিশে গেল। জলে ভাসতে ভাসতে চেপে বসে ভেসে আসা কোন এক মৃতদেহে। শুনতে পায় মাছেরা বলছে, এইসব দেহ উদ্বাস্তুদের। নারীদের লুঠ করে পুরুষদের হত্যা করে জলে ভাসিয়ে দিয়েছে।
তখন যেন তার সঙ্গে বুদ্ধ ভাসছেন। জলের উপর ভাসছেন, কোন অবলম্বনের প্রয়োজন হচ্ছে না তাঁর। আসলে তিনি জলের উপরই স্থিত। তিনি ভাগ করে নিচ্ছেন মাধুকরীর ফল। তাঁর পাশে স্থির হয়ে আছে একটি সোনালি হরিণ। মাথার উপর দিয়ে উড়ে চলেছে হাজার হাজার বলাকা। তারা সকলেই সেই প্রসাদ পাচ্ছে। তখন ফিসফিস করে বুদ্ধ যেন সোমকে বলছেন, ‘যিনি নিজেকে যতখানি সরিয়ে রাখতে জানেন, তিনি ততখানি সত্যের নিকটতর। যোগীরা একেই বলেন সামীপ্য। শূন্যই যোগীর বিষয়—যার অপর নাম আত্মবিশ্বাস। আর তা এলেই সমাজ থেকে, হৃদয় থেকে অসহিষ্ণুতা একেবারে মুছে যাবে।’
সোম দেখে তিনি এইভাবেই ক্রমে ফিকে হয়ে যাচ্ছেন। তাঁর আশ্রয় থেকে একাকী সেই হরিণ বাতাসে ভর করে উঠে আসছে তার নৌকায়। সে হরিণ যেন স্বর্ণ নির্মিত। উজ্জ্বল দুই চক্ষু যেন মাণিক্য খচিত। সে উঠে এল, নৌকা কিন্তু টলল না একটুও। তার মনে পড়ে গেল মৃগশিরার কথা। সে এমনি সুন্দর ছিল। তার দেহে যে এমন আলো, তা বাইরে থেকে পুরো বোঝা যায় না। তখন আবারও মনে পড়ে গেল কুষ্ঠরোগীদের কথা। ভরা চাঁদটা, নদীর উপর তার আবছায়া, রূপালি জলের রেখা, গাছের ছায়া, নদীর ঢেউ সেই ছায়াগুলিকে স্নান করায় এই রাত্রে। একটা উঁচু ঢিপির উপর বসে, জলের স্রোতের এই অবিরল প্রবাহকে সামনে রেখে সোম অতীতচারীতায় মগ্ন হয়। নদী এক সুন্দর এক শুভ্রতা, যাকে মনের গোপন কথা বলা যায়। তখন সেখানে কচি ঘাস চিবায় এক খচ্চর। এক নদীকে সঙ্গে নিয়ে নেমে এসেছিল মৃগশিরা। কুষ্ঠরোগীদের নৌকায়—ভিজে পায়ে ছলাৎচ্ছল—অনুভবের মুখগুলি তাদের যেন কেমন। সে যদি তাদের কিছু খাবার দিত, বেশ হোত। তাদের যে খাবারের প্রয়োজন হতে পারে, তা তা মাথাতেই আসেনি। তার হৃদয় তখন পেন্ডুলামের মত দুলছে। কেননা অবচেতন মনে তারও হয়ত মনে হয়েছিল, মৃগশিরা চলে যেতে পারে কোনদিন।
নৌকার গতি রুদ্ধ হয়ে গেল। সোম এক সুললিত পার দেখে নেমে পড়ল। এখানে আলোতে বাতসে এক মনোরম খেলা করে। বড় বড় তাল-তমাল গাছেরা বড় স্নিগ্ধ। সেই শান্ত সমাহির গাছেরা যেন ঘিরে আছে পারে দাঁড়িয়ে থাকা এক ভিক্ষুকে। তিনি মুন্ডিত মস্তক। তিনি চোমং। বাতাসে তার সামান্য শীত-পোশাক উড়ছে। বাতাসে মুখের কথা ভেসে যায়। সোম এইটুকুই শুধু শুনল, “এসো যুবক, আমি আছি তোমারই প্রতীক্ষায়।”
শুনে সোমের মনে হল, এরই জন্য হয়ত নৌকাটা তাকে এখানে নিয়ে এল। ঠেকে গেল পারে। সোম নৌকা বেঁধে রেখে পাড়ে উঠে পড়ল। হরিণ পিছু নিল। সোম নীরবে চলতে থাকল। দেখে হরিণ উধাও। ছিল পেছনে, এল সামনে—পরে আর নেই! চোমংকে বলল, “আমার কথা আপনি জানলেন কী করে?”
“এমন কিছু শক্ত ব্যাপার না সেটা। কিছু হরিণ এদিক দিয়েই যাচ্ছিল—তারাই বলে গেল। ওরা তোমাকে ভগবান বুদ্ধের সঙ্গে কথা বলতে দেখেছে।”
“এই স্থানের নাম কি?”
“সোমেশ্বরপুর। এটা ষোড়শজনপদের একটি গ্রাম।”
“এখানের জনগন কোথায় বাস করে? তাদের জীবিকা কি? ধারে কাছে কাউকেই তো দেখছি না।”
“এখানে চাষ জমি বেশি নেই। ফলে ছেলেরা বয়ঃপ্রাপ্ত হলে শ্রমিকের কাজ করতে বাইরে চলে যায়। তারা কেউ ফেরে কেউ ফেরে না। তাই এখানের জনসংখ্যার বেশির ভাগই হল নারী শিশু আর বৃদ্ধ। ছোটছোট গোল পাতার কুঁড়ে নির্মাণ করে তারা জীবনযুদ্ধের রণাঙ্গনে অবতীর্ণ হয় সেই বুদ্ধের সময় থেকেই। এসো—”
সোম আর কোন কথা বলল না। তাকে নীরবে অনুসরণ করল।
দুই
পথে যেতে যেতে ভিক্ষু বললেন, “তোমাকে যেখানে নিয়ে যাব, সেটা আমার বাসস্থান। আমার কুটির। কত কল্প সেখানে তুমি থাকবে থাকবে, তা আমি ঠিক করব না, তুমিও না; ঠিক করবে সময়। অথবা বুদ্ধ স্বয়ং বা একটি হরিণ যে আলোর মত করে আলোর বেগে দৌড়ে বেড়ায়। কিন্তু সেই সময়ের পরিমাপ আমরা কেউ জানি না। হিমালয় থেকে নেমে এসে আমি এখানে যে কত কল্প কুটির বানিয়ে আছি, নিজেই জানি না। হিমালয়ের কোলেই আমার জন্ম, লামা হয়ে ভেবেছিলাম, বাকি জীবন সেখানেই কেটে যাবে। এই সময় আমায় মাথায় চেপে বসল নির্বাণ পাবার আকাঙ্ক্ষা। তখন একদিন দৈববাণী শুনি। ঈশ্বরিক সেই গলা যেন আমাকে বলছে, নিচে নেমে আসার জন্য। এখানে এলেই বুদ্ধের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হবে আর নির্বাণ বিষয়ে আমি ঞ্জান পাব। আমাকে আর জন্ম নিতে হবে না।”
এই বলে চোমং থামলেন। খানিক পথ নীরবে হেঁটে বললনে, “কয়েক কল্প আগে এখানে এক মানুষ এসেছিলেন কুষ্টরোগীদের নৌকায় চড়ে। তাঁর নাম কালপুরুষ। এটি ছদ্মনাম। তাঁকে আমিই বুদ্ধ ঠাউরেছিলাম। পরে দেখলাম, তিনি তা নন। তিনি গেছিলেন ঘিয়া নদীর পশ্চিম পারে। সেখানে জমি নিয়ে আন্দোলন করছে সাধারণ মানুষ, চাষিরা। তিনি তাদের হয়ে লড়তে গেছিলেন। রাস্ট্রের নিপীড়ণ থেকে বাঁচার জন্য তিনি গোপনে আমার এখানে নেমে পড়েন। পরে শুনি তিনি মৃত। তারপর পরপর কয়েকটি উপনির্বাচন গেল। কিন্তু কোনটাতেই বিরোধীদল সুবিধে করতে পারেনি।”
“কারণ কী?”
“বিরোধীরা নানা দলে ও ভাগে বিভক্ত। তাছাড়া উপর থেকে লড়াই লড়াই বলা যায় কিন্তু নিচে নেমে বাস্তবে এখন লড়াই করা খুব কঠিন! প্রেসিডেন্টের দাপটে বিরোধীরা তো প্রার্থীই দিতে পারছে না সব বুথে। ভোটের সময় সংঘাত হলে নেতৃত্ব কতটা পাশে থাকবে, সেই নিয়েও নিচু শ্রেণির কর্মীদের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে। ফলে সাহসী প্রার্থী মিলছে না।”
“বুদ্ধের ফিরত আসাটা কি বিরোধীদেরই রটনা?”
“তোমার কি মনে হয়?”
“আমি জানি, তিনি সত্য।”
“এই তো সব মিটে গেল গোল।” চোমং এর মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। তিনি বললেন, “তবে হরিণদের মুখে তোমার খবর পেয়ে মনে হল, আমার এখানে নেমে আসাটা আসলে তোমারই জন্য। কারণ তুমিই এ যুগের একমাত্র ব্যাক্তি, যে বুদ্ধের স্বরূপের সঙ্গে কিছু কল্প আগেই বাস করেছ। স্বয়ং বুদ্ধ তোমার নৌকায় সওয়ারী হয়েছেন। ফলত সেই নৌকাও মহা মূল্যবান। সেটিকে আমরা বুদ্ধের জলযান হিসেবে চিহ্নিত করে রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করব। এখন তুমি আমার কুটিরে যাবে। কুটিরে বসে আমি তোমার কাছ থেকে বুদ্ধের স্বরূপ শুনব। আমি সেই সময়ের কথা, সেই মুহূর্তে তোমার অনুভবের কথা জানতে চাই।”
“আসার পথে কিছুজনকে বলেছিলাম তাঁর কথা।”
“কী প্রতিক্রিয়া পেলেন?”
“কেউ কেউ শুনে চুপ করে গেলেন। তাঁরা যে খুশি ও বিস্মিত, সেটা প্রকাশ করতে চাইছিলেন না। কয়েকজন সরাসরি বললেন, আমি বিরোধীপক্ষের খোচর। আমার প্রতি নাকি নজর রাখা উচিত।”
“সেটা নিয়ে ভাববেন না। সেটা অনেক আগে থেকেই হচ্ছে।”
“কীরকম?”
“খুব সোজা। তুমি যে আফিং চাষের বিরুদ্ধে নয়, সেটা ওরা জানবে কি করে? তুমি প্রেমিকার সঙ্গে মিলন করার জন্যে এলে। কিন্তু ঢুকে পড়লেন অন্য গ্রামে। পরে এক জনকে বিয়ে করে সংসার ফেঁদে বসলে। ওরা দেখল গাঁজা নিয়ে তোমার কোন উৎসাহ নেই। কিন্তু আমার প্রতি ওদের নজর এখনও ঘোরেনি। এখনো ওরা বিশ্বাস করে শূন্যতা নিয়ে আমার এই যে সাধনা, এটা ভেক। ওদের বক্তব্য, দীর্ঘদিন ধরে চলা একটা সরকার বদলাতে যেমন নানা ধরণের স্লোগানের দরকার পরে জনগণকে আকৃষ্ট করার জন্য, এটিই তাই। ঐ দূরের পাড়ার মানুষদের আমি যদি বলি, ‘চলো আমরা এবার শূন্য থেকে শূন্যে যাই, ওরা ভাবে আমি নতুন করে নতুন সরকারের শুরুর কথা বলছি। এর মাধ্যমে আমি আসলে বুদ্ধের আবাহন করছি। যে এসে এই প্রেসিডেন্টকে উৎখাত করবে।”
সোম কিছু বলল না।
চোমং বলতে লাগলেন, “শত যোজন দূরে এক ভগ্ন প্রাসাদ আছে। ইষ্টক নির্মিত। আকীর্ণ জঞ্জলের মধ্যে সেটি নিমজ্জিত। কিছু ছোট ছোট টিলাও আছে সেখানে। আমি হিমালয় থেকে নেমে আসার পর সেটিকে আবিস্কার করি। দেখলাম, সেটির বিষয়ে সাধারণ মানুষও অল্প বিস্তর জানে। তাদের কাছেই শুনেছি তার মধ্যে কোথাও রূপাঞ্জনা বাস করে শুনেছি। ক্রমে কমে আরও মেয়ে এসে জোটে সেই গ্রামে। তাদের কেউ কোন না কোন ভাবে সমাজ-সংসার-আত্মীয় পরিজন দ্বারা ধর্ষিত-লাঞ্ছিত-অপমানিত। যাদের কোথাও আর আবার জায়গা নেই। তবে জায়গাটা আমি চিনি না। এক আবছা ধারণা আছে মাত্র। তারা অত্যন্ত গোপনে বাস করে সেখানে। তাদের উপর নজর আছে পক্ষী শ্রেণির মানুষের।
ওরা আগে থাকত নদীর ওপারের একটি হোমে। কিন্তু সেটি বন্ধ হয়ে যাওয়াতে ওরা আতান্তরে পড়ে। ওরা চলে আসে এই পারে। এদিকের এক গ্রামে, নিরন্তরপুরে, পক্ষি শ্রেণির মানুষেরা বসবাস করে। তারা ওদের প্রতি নজর দিয়েছিল আগেই। কিন্তু হোমে আক্রমণ করার আগেই হোম বন্ধ হয়ে যায়। পক্ষীদের ওখানে নারী জন্মায় না। নারীর পেট চিরলে বেরিয়ে আসে কেবল পুরুষ আর পুরুষ—ঝাঁকে ঝাঁকে। ফলে তারা নারীর সন্ধানে ব্যাপৃত থাকে মাসের পর মাস। কেবল বর্ষাকালে ক্ষান্ত দেয় নিজেদের। আমরা সেই পথে যেতে পারি বটে, কিন্তু তাদের বাসস্থান চিনে বার করা খুব মুসকিল। এমন গোলকধাঁধার কেন্দ্র হবার ফলে আকাশ থেকে পক্ষী শ্রেণির মানুষেরা তাদের খুঁযে পায় না। এখন তোমাকে আমার ঘরে নিয়ে যাব। সেখানে কিছুদিন বিশ্রাম আর বুদ্ধের আলোচনা। সেই যে এক বনের মধ্যে একাকী এক মৃগ, খুব শান্ত-শিষ্ট, স্নিগ্ধ, তোমাকে পথ চিনিয়ে দিয়েছিল, মনে পড়ে? চলো, এখন আর কোন কথা নয়।”
আরও কিছুটা চলার পর চোমং বললেন, “সামনে ওই যে কুটিরটা দেখছ, ওখানেই আমি থাকি। এসো—”
কুটির? হ্যাঁ, তা একটা দেখা যাচ্ছে বটে। খড় ও কলাগাছের গঠনে সে কুটির নির্মিত। পিছনে কিছু গাছ আছে। আর এখান থেকে বহু দূরের এক ভগ্নস্তূপের সুউচ্চ চূড়া দেখা যায়।
একটা পুরাতন, শতছিন্ন কুটকুটে কম্বলের উপর তারা বসল। কতদিন পর! চোখ জুড়ে আসে। সোম বলে, “এখানে একটু কি ঘুমিয়ে নেওয়া যায়?”
“অবশ্যই।”
ছেঁড়া কম্বল ভাল করে বিছিয়ে শুয়ে পড়তে পড়তে সোম বলে, “আচ্ছা চোমং, তুমি রূপাঞ্জনাকে দেখেছ?” বলে সোমের হাই উঠল।
“তুমি এখন ক্লান্ত, সোম। তুমি ঘুমাও। যখন তোমার ঘুম ভাঙবে তখন আমরা এ নিয়ে আলোচনা করব। এখন খাবার নাও।”
বলে সে বার করে আনল বাজরার মোটা রুটি ও আলু সেদ্ধ, জল। সঙ্গে গুটি কয় মিস্ট ফল। কাঁচালঙ্কা। খুব সুন্দর লাগল সোমের। খেয়ে সে তৃপ্তি পেল। তারপর মেঝেতে কম্বলের বিছানায়। সোম নিশ্চিত চোমং হরিণকে দেখতে পাচ্ছেন না। সে আছে সোমের পাশেই। কম্বলে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে। কিন্তু সোম বুঝতে পারছে না যে হরিণ বুদ্ধের জন্য আসছিল, সেটি তার সঙ্গে কেন?
তিন
সেই সমস্ত বিকেল ও রাত্রি ঘুমাল সোম। পরদিন খুব ভোরে তার ঘুম ভাঙল। দেখে চোমং মাখন সহযোগে বড় মগে চা বানাচ্ছেন। সুন্দর গন্ধ!। এই গন্ধের তাড়নাতেই ঘুম ভেঙ্গেছে তার। সে খড়ের বিছানার উপর উঠে বসল। চোমং তার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলেন। ধূমায়িত চায়ের মগ এনে রাখলেন সোমের সুমুখে। বললেন, “তোমার জন্য স্পেশাল করে চা বানালাম। আমাদের পাহাড়ের দেশে এই চায়ের প্রচলন খুব। বানাতে সময় লাগে বটে, কিন্তু খেতে যেমন চমৎকার তেমনি শীতের হাত থেকে রক্ষা করতে অতি উপাদেয়। চা খেতে খেতে আগে তুমি তোমার সাদা দিনের কর্মপদ্ধতি ঠিক করে নাও। তারপর আমরা সেই নিয়ে আলোচনা করব।”
অসম্ভব গরম চায়ে চুমুক দিয়ে এতদিনের ক্লান্তি যেন এক লহমায় দূর হয়ে গেল। এতটা সময় ঘুমিয়েও যা সে পায়নি, সেই স্নিগ্ধতা বোধ শরীরে চলে এল এক লহমায়। ঝরঝরে হয়ে গেল শরীর। সোমের মনে হল, সে যেন একটি কল্প এই এক চুমুকেই পেরিয়ে এল। সে মুখে শব্দ করল, “বাঃ!”
খুশি হয়ে চোমং বললেন, “তোমার ভাল লেগেছে জেনে ভাল লাগল। এখানে আমার কিছু ভক্ত আছে। কিছু মানুষ আমার কাছে গোপনে দীক্ষা নিয়েছে। তারাই আমার আহারের কিছুটা ব্যায়ভার গ্রহণ করে। বাকিটা আমি করি মাধুকরী করে। আর হ্যা, কিছু ফসলও ফলাই পিছনের একটুকর জমিতে; যা করা উচিত নয়। কিন্তু কী করব বল, খেতে হবে তো!”
সোম নীরবে চা পান করতে লাগল। চোমং বললেন, “তুমি এসেছিলে রূপাঞ্জনার কাছে। তুমি কী সত্যিই তাকে খুঁজছ, সোম?”
সোম চুপ করে রইল।
মুখোমুখি বসে চায়ে চুমুক দিতে দিতে চোমং বললেন, “কালপুরুষ বুদ্ধ নন, প্রত্যেক বুদ্ধও নন। অথচ দেখ, আমি তাকে কোন এক বুদ্ধ ভেবেছিলাম। কারুণ এই যে কল্পে আমরা বাস করছি, এখানে চারজন বুদ্ধের জন্ম নেবার কথা। তাঁরা এসে পৃথিবীর চারদিক থেকে কাজ শুরু করবেন। যেখান থেকে তিনি তাঁর কাজ শুরু করেছিলেন, সেটি পৃথিবীর এক দিক। তাই আমি তাকে বুদ্ধ ভেবেছিলাম, প্রণতি জানিয়েছিলাম। তিনি ঈশ্বরবিশ্বাসী নন, তিনি সমাজতন্ত্র চান, গণতন্ত্র চান—বর্তমান সময়ে যা বাতাস থেকে উবে গেছে। তাই বর্তমান শাসক গণতন্ত্রের মুখোশ পরে একক হয়ে ওঠে—যা অসহিষ্ণুতারই নামান্তর। ছবি আঁকলে, নাটক করতে গেলে সরকারের অনুমতি লাগে। কবিরা সাধারণ মানুষের গান আর গান না। তাই আমিও চেয়েছিলাম, ফ্যাসিবাদী প্রেসিডেন্টের পতন আর নতুন এক শক্তির উত্থান। কিন্তু তা হয়নি। আমি ভেবেছিলাম, এই কল্পে তা হবার নয়। কিন্তু এখন তুমি এসে গেছ। তোমার সাংগঠনিক ক্ষমতার কথা আমরা শুনেছি। তোমাদের কলেজের ভোটে তুমি একাই প্রেসিডেন্টের সমর্থিত প্রার্থীকে তুমি একক ক্যারিশ্মায় পরাজিত করেছিলে। তুমি জয়ী হয়েছিলে বিপুল ভোটে। আমাদের দেশে তুমি জিতবে, আমার বিশ্বাস। এখানে রূপাঞ্জনার স্থান কোথায়?
“শুনেছি সেই কালপুরুষের সঙ্গে এমন একজন ছিলেন, যিনি এদেশে বিপ্লব আনয়ন করতে পারতেন। কিন্তু তিনিও ব্যর্থ। সঙ্গে এও শুনেছি তিনি এক খচ্চরের পিঠে চেপে নিরন্ন ও দেশত্যাগী মানুষদের জন্য অনেক কিছু করেন। তাঁর কথা শুনে আমিও তাঁকেও কোন এক বুদ্ধ হিসেবে ধরে নিয়েছিলাম। কিন্তু তিনিও সমাজে কোন পরিবর্তন আনতে পারেননি। লাঞ্ছিত মানুষদের মানুষদের নিয়ে বিল্পব আনা অত সহজ নয় এদেশে। বিশেষত এক গরিষ্ট অংশ যখন অশিক্ষিত। সাম্যবাদ আর কোন দেশেই বা ঠিকঠিক ভাবে অনুসৃত হয়।”
“ব্যবহারিক জীবনে রাজনীতির কাছে সমাজনীতি প্রায়ই পরাজয় বরণ করে।”
“যাই হোক, এ নিয়ে পরে বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে। এখন তাঁর দেওয়া এক উপহারের কথা বলি। যাবার আগে কয়েক বোতল সুন্দর লাল মদ দিয়ে গেছেন। শুনেছি এক নৌকা ভর্তি কুষ্ঠ রোগির দল তাকে হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে। অথচ তখন, আমি তাঁকে যতটুকু জেনেছি, ওই সময় তিনি চলেছিলেন শূন্যের পথে!”
এইসব কথায় কথায় বেলা চড়ল। চোমং বললেন, “তোমার নিশ্চয় খিদে পেয়ে গেছে। কাল রাত্রে প্রায় না খেয়েই শুয়ে পড়লে। ফলে কালপুরুষের উপহার দেওয়া সেই লাল মদ্য আমরা গ্রহণ করতে পারিনি। এই মদ্যে শীতবোধ দূর হয়, আয়ু বাড়ে। আর এর বিশেষত্ব হচ্ছে, একলা খেতে নেই এই জিনিস। আমি তোমার জন্যে কাল অপেক্ষা করেছিলাম। আজ সন্ধেতে এই মদ্য আমরা পান করব। আর একটা কথা—”
বলে চোমং থামলেন। একটা পাত্রে ছাতু দিয়ে আটা মাখতে বসলেন। সেই কাজ সম্পন্ন করতে করতে বললেন, “কালপুরুষ সেই কুষ্ঠরোগীর নৌকার কথা বারবার বলে বলে গেছেন। ওদের যেন দুটি অন্তত লাল মদ্যের বোতল উপহার দিই।”
তিনি রুটি বানালেন। তিনটি করে রুটি আলু সেদ্ধ আর আচার। তা খেয়ে এক খুড়ি জল খেতেই পেটটা যেন জুড়িয়ে এল। বলে তিনি নিয়ে এলেন চেরি ফল। সঙ্গে আরও অনেক সুমিস্ট ফল। সব ফল সোম চিনি না। একটু একটু করে ঠান্ডা বাড়ছে। তারা ফল খাওয়া শুরু করেছে। যেমন তাদের স্বাদ, ও বর্ণ। তেমন গন্ধ। খেতে খেতেই তিনি বললেন, “পৃথিবী ক্রমে অসহিষ্ণু হয়ে পড়ছে। এই পঙ্কিল অবস্থা থেকে একমাত্র তিনিই উদ্ধার করতে পারেন। তাই আমরাই তাঁকে আহ্বান করেছি। কিন্তু তিনি দেখা দিলেন আপনাকে, কথা কইলেন—সেও আপনার সাথে। আমরা কেউ তাঁকে ছুঁতে পারলাম না কেন?”
“আপনি কোন হরিণ দেখছেন, চোমং?”
“না।”
“গন্ধ পাচ্ছেন তার?”
“না”
সে কিন্তু এখানেই আছে।”
“এখানেই?” বলে চোমং তাঁর চারপাশ ও দূর দেখে নিলেন। কিন্তু কিছু চোখে পড়ল না তাঁর। অধৈর্য হয়ে বললেন, “কই, এখানে তো এ সব নেই! এখানে আগে আমি খচ্চর চলতে দেখেছি। একাকি এক খচ্চর মাথা নিচু করে আনমনে পথে চলেছে, তাও লক্ষ করেছি। বুদ্ধের জন্য আমি এই দক্ষিণদেশে এসেছি, কারণ বুদ্ধদেশ বলে এদেশে যদি কিছু থেকে থাকে, তা হল এই বঙ্গভূমি। এই ষোড়শজনপদ। এখানে এসে ভাঙ্গা স্তূপের ভেতর বাস করেছি প্রথমে। আমি শুনেছিলাম, এখানেই খুব সহজে নির্বাণ মেলে। যাইহোক, এখানের অনেক মানুষ আমাকে নানাভাবে বারণ করেছিল। ভাঙ্গা স্তূপ হল সাপখোপের আড্ডা। তাছাড়া অনেক সমাজবিরোধী কাজকর্ম ও নাকি হয়। কেউ বলে নদীর ওদিকের জমিতে গাঁজার চাষ হয়, কেউ বলে পোস্তর। হানজালা বলে, একদল শ্রমণ মশাল জ্বালিয়ে এই পথ পরিক্রমা করে। সেটা নিয়েও নানা ব্যাখ্যা আছে। অথচ মজাটা কি বলত, আমি এখানে বাস করেও তা কখনও দেখলাম না! বুদ্ধের দর্শনে কতটা পাগল হলে তা দেখা যায় আমি জানি না। ক্রমে আমি বুঝে যাই, আমার কাছে নির্বাণ অতি বিষম বস্তু। আন্দোলনও বিষম বস্তু। তুমি ছাড়া আমি সেই কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারব না।”
“হানজালা কোন হরিণের কথা বলেছে আপনাকে? জলহরিণ? হরিণের কোন গল্প?”
“না। এখানে অবশ্য হরিণ বাস করে না। অবশ্য এসে থাকতে পারে। কারণ এই পথেই ওরা চলাচল করে।”
“সে এসেছে আমারই সঙ্গে—নৌকায়। আমি শুনেছি, সে এক ফকিরের সঙ্গে ভেসে এসেছে। কথা ছিল, ফকির সেই হরিণ বুদ্ধকে দিয়ে এক নৌকা ভর্তি আফিম নিয়ে তিনি রাকার স্তরে চলে যাবেন।”
“তারপর?”
“সে এখন আমার নৌকায়। আমার সঙ্গে।”
“কিন্তু তাকে আমি নামতে দেখলাম না কেন? সে হরিণ এখানে এলই বা কেন?”
“আমিও যে তাকে সব সময় দেখছি, এমন নয়। কিন্তু তাকে মাঝেমাঝে দেখা যায় আলোর ঝলকানির মত।”
চোমং গভীরভাবে কিছু ভাবছিলেন। তারপর বললেন, “আপনি ধন্য হে সোম। এসেছিলেন অভিসারে, জড়য়ে পড়লেন স্থানীয় রাজনীতিতে; পেলেন এক অনুত্তর জিনিস, বুদ্ধের হরিণ। অথচ আপনি কোনদিন ধ্যান করেননি, বুদ্ধের প্রতি তেমন কোন টান নেই। অথচ আপনিই সফল। কিভাবে হল এটা, ব্যাখা দিন।”
“আমি কোনদিন রাজনীতি করিনি, চোমং। ফলে তার অন্ধকার দিকগুলি আমি জানি না।”
রাতে চোমং দিনের বেলা বর্ণিত সেই ছোট ছোট চ্যাপ্টা বোলতের মদ বার করে আনলেন তাঁর ঝোলার ভেতর থেকে। সোম বলল, “এখানে প্রেসিডেন্টের প্রভাব কেমন?”
“গোটা জনপদেই তাঁর হুকুমই আইন। পালটা বলতে গেলে বিপদ আছে। আমি মুখ খুলি না। কিছুদিন পর এক নির্বাচন আছে।”
“শুনেছি। তা হল উপনির্বাচন। পরে গ্রামীণ ভোটপরব।”
“নদী পেরিতে এতটা সময় লাগল কেন?”
“নদীর এমনিই আয়তন চোমং। হানজালা মাঝি নৌকা বাইছিল। সে থেকে যাচ্ছিল মাঝে মাঝে। তখন নদী বেড়ে যাচ্ছিল। সে বলে নদীর ভেতর অন্যান্য নদী ঢুকে যায়, তাই এত সময় লাগে। দেখি তার হাতে কোন লগি নেই।”
“তবে সে কিসের দ্বারা নৌকা বায়?”
“লগির দ্বারাই।”
বোতলের চেহেরা দেখে ভক্তি জাগবে না, কিন্তু স্বাদ নাকি অসাধারণ! তারা দু’জনে সেই মদ্য পান করতে থাকল একটু একটু করে। চোমং মিথ্যা কিছু বলেননি। সত্যিই অপূর্ব স্বাদ ও গন্ধ এর। একটু একটু করে তাড়িয়ে তাড়িয়ে তা খেতে হয়। সঙ্গে সেই চেরি ফল। সুস্বাদু।
সোম বলল, “সিদ্ধ ডুমুরের যে পদটা দিয়েছিলেন, তা অপূর্ব!”
“সিদ্ধ ডুমুর? কই, এমন কিছু ত আমি আজ রাঁধিনি!”
“কিন্তু আমি যে খেলাম। কেন, আপনি নিজের জন্য রাখেননি?”
চোমং অবাক হয়ে সোমকে দেখতে লাগল। সোম বলল, “কী হল?”
কাতর গলায় চোমং বলল, “সুজাতার পরমান্ন যখন শেষ হয়ে গেল, বুদ্ধ তখন রোজ একটি করে ডুমুর ফল খেতেন। সেই পদ কেমন করে তোমার পাতে আসে, সোম?”
চার
“আমার তখন তেমন মনে হয়েছিল, যিনি কৃষকের মধ্যে কৃষক হয়ে বাস করেন। তাঁর কথা শুনে বহু ছাত্র যুবা, যারা আসলে এক একটি হরিণ হয়ে—যা ছিল তাদের ছদ্মবেশ, গ্রামে গিয়ে কৃষকেদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে বাস করছিল। বুদ্ধ তাদের জীবনবোধে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। তারা সকলেই ছিল উচ্চবর্ণের। কিন্তু নিজেদের কৌলিন্যকে ভুলে গিয়ে উচ্চশ্রেণীর হরিণের মিথ্যা অহঙ্কার ও হীন স্বার্থবুদ্ধিকে অতিক্রম করে বাস্তব জীবনে শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে একাত্ম হওয়া। তারা নিষাদ হয়ে উঠল এইভাবে। এতে তোমার কী মনে হয়? এটা একটা নতুন রাজনৈতিক ধারার জন্ম দিচ্ছে না? কী বল? এতদিন যেখানে ছিল প্রেসিডেন্টের একনায়কত্ব, আজ শুরু হল শুরু হল এক ভিন্ন ধারা—জনগণের সঙ্গে একাত্ম হও, তাদের কথা শুনে চল।”
“আমার যখন একটি গ্রাম ছিল—; তখন দেখেছি, মৃগভূমি থেকে আগত সব হরিণেরা, যারা আদিতে কৃষক বা এখানে এসে কৃষক হয়ে গেছিল, তাদের অনেকেই ভুটানি, আদিবাসী, নক্ষত্রজাতের মেয়েদের বিবাহ করে সুখে-শান্তিতে ঘর সংসার করেছিল। তারা সকলে কলাপাতায় ভাত খেত। সমাজ নিয়ে কারও কোন মাথাব্যাথা ছিল না। ফলে, সেখানে মানুষ ও প্রাণী একত্রে আশ্চর্য সহবস্থানে বাস করত। হয়ত এখান থেকেই অসহিষ্ণুতা জন্ম নেয়।”
তাদের খাওয়া শেষ হয়ে গেছিল। পথ চলতে চলতে চোমং বলে চললেন, “রূপাঞ্জনা এক বিহারের গুহায় বেনেপুতুল হয়ে বাস করছে। পক্ষী জাতের মানুষের হাত থেকে বাঁচতেই সে এখন বেনেপুতুল।”
আঁধার নেমে আসছে। চারপাশের রঙ বদলে যাচ্ছে। এত কাছে ফুটে উঠছে চাঁদ যে মনে হয় যেন চাঁদের দেশ এটা। এখান থেকে একটু উঁকি মারলেই দেখা যায় গুঁড়ি মেরে রাস্তাটা এগিয়েছে সোজা। সে কেবলই যেন সোমকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। ঐ দূরে এক টিলার উপর দাঁড়িয়ে আছে হরিণটা। ঘন গাছপালায় ঘেরা। সে কি বুদ্ধের গমণপথ ধরে ভবিষ্যতের দিকে চলে যেতে চায়? তবে সে ডাকে কেন সোমকে? সে কী চায়?
“আমাদের এদিকেও একটি সংস্থা গড়ে উঠেছে। যে সব মেয়েরা উদ্বাস্তু হয়ে এদেশে চলে আসছে, তাদের হাতের কাজ শিখিয়ে স্বাবলম্বী করা। ও দেশে সহিষ্ণুতা বলে কিছু নেই।”
“কে করছে এই কাজ?”
“রূপাঞ্জনা। এই সমস্ত মেয়েরা তারা বেঁচে থাকার পাঠে নেয় এক ছাদের তলায়। সে তাদের হাতের কাজ শেখাত, নানা ধরণের শিক্ষামূলক কর্মসূচী করত। আমার ধারণা সে তোমার কাছেই এই শিক্ষা পেয়েছিল। যখন নিজের বাঁচার জন্য প্রয়োজন হল, সে সেই সব অভিঞ্জতাকে গড়ে তুলল নিজের মত করে।”
রাতটা কাটল লাল মদ সেবন করে। অদ্ভূত ক্ষমতা সেই মদ্যর। একটি বোতল এতই ছোট যে মনে হয় এক চুমুকেই তা শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু বাস্তবে তা হয় না। এক ঢোক খেয়েই দম নিতে হয়, মনে হয় একদল ঘোড়সওয়ারের মাঝে এক খচ্চরের পিঠে চেপে সে ছুটে যাচ্ছে! কুষ্ঠরোগীদের চলেছে মাছ শিকারে।
চোমং বলল, “তিনি কয়েকটি দিন লুকিয়ে ছিলেন আমার কাছে। কারণ সেই সময় তাঁর নামে কতগুলি মিথ্যে মামলা হয়েছিল। তাঁর হিসেবে, একদিন এই কোটি কোটি কৃষক, নিন্মমধ্যর মানুষেরাই হয়ে উঠবেন দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে এক অপ্রতিরোধ্য শক্তি!”
“এটা আপনি কী হিসেবে বলছেন?”
“কোন যুক্তি নেই এই কথার। এ আমার ধারণা মাত্র। সে কালপুরুষ, ঝাঁপিয়ে পড়েছিল দুনিয়ায় রাজনৈতিক-সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য। কিন্তু নিজের দেশের সমাজকে, তার সত্যকারের সমস্যা ও সামর্থকে আমরা কখনও মন দিয়ে শিখিনি। আমরা নিজেদের মানুষের ইতিহাস জানিনি, শিখিনি। সে শিক্ষা আমাদের ছিল না। এখনও নেই। গ্রামে গ্রামে গিয়ে গ্রামবৃদ্ধ, গ্রাম্যচাষি, রাখাল, গৃহবধূ ও গ্রামশিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আন্তরিকভাবে সকলকে নিয়ে খুঁজেছিলেন অসহিষ্ণুতা থেকে পরিত্রাণের পথ।
“যাক, এবার নিজের কথা কিছু বলি। আমি তোমার কথা শুনেছি অনেক আগেই। এবার নিজের সম্পর্কে কিছু বলা দরকার। আমি আগে এক গুহায় থাকতাম। সেখানে দুইশত জন লামা থাকে। পাহাড়ের কোলে আমাদের যেখানে গ্রাম, সেখানে এমন কোন ঘর পাবে না, যে ঘরের ছেলেরা লামা হয়নি। সেখানে যেন লামা হবার প্রতিযোগিতা চলে। আমি যখন মঠে চলে আসি আমার সাত বছর বয়স। পরে আর মঠ ভাল লাগত না। আমি চলে আসি এখানে—আমার একাকী বাস—আমার বেশ লাগে।
এবার আমার ছেড়ে আসা গ্রামের কথা বলি তোমায়। পাথর, মাটি আর কাঠ দিয়ে তৈরি আমাদের গ্রাম। বাড়ির জানালা হোত লাল রঙের। অনেকে সবুজ, নীল রঙ ও করত। আমরা ভেড়া, গাধা, ইয়াক পালন করতাম। যখন লামা নৃত্য হত—আমি সেই নৃত্যে অংশ নিতাম। মুখোশ পরে নাচতে হোত। আমি সেই মুখোশ অনেক তৈরী করেছি। সব নিয়ে আমাদের গ্রাম ছিল রঙ্গিন।”
গল্পে গল্পে রাত নেমে এল। শীতের আমেজে বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠল চারিদিক। দূরে কোথাও প্যাঁচা ডেকে উঠল। বাতাস শনশন করে বইছিল। কুটিরের ফাঁক দিয়ে মৃগশিরা নক্ষত্রকে দেখার চেষ্টা করছিল সোম। চোমং বললেন, “অনেক রাত হয়ে গেছে। তুমি শুয়ে পড়।”
সোমের বাধা উপেক্ষা করে রাতে ভিক্ষু বিছানা পরিপাটি করে সাজিয়ে দিলেন। বিনা বাক্য ব্যয়ে শুয়ে পড়ল সোম। সঙ্গে সঙ্গে ঘুম এসে গেল। মনে হল, এই প্রথম মৃগশিরার পর কেউ যত্ন করে তাকে বিছানা করে দিল।
পাঁচ
পরদিন সকালে পথ বেয়ে হাঁটতে হাঁটতে ভিক্ষু বললেন, “তুমি হয়ত তখন মৃগশিরাকে নিয়ে এক অন্য পথ ধরে নদীর ধারে ধারে হাঁটছিলে। তখনই এক অতি শান্ত, সজ্জন, বিনয়ী মৃগ তোমাকে পথ দেখিয়ে দিচ্ছেন। তিনি আর সাধারণ পাঁচটা মৃগের মতই—কিন্তু ঘটনা হল, তিনিই বুদ্ধ। পরে তিনি সওয়ারী হন নৌকাতেও, মনুষ্য দেহে। হু হু করে সেই খবর ছড়িয়ে যেতে থাকে আকাশ বাতাস জুড়ে। একমাত্র তুমিই সেই ব্যাক্তি যে তাঁর দূর্লভ সান্নিধ্য পেয়েছিলে। সেই কথাই শুনব তোমার কাছ থেকে।”
“বিদ্যুৎ চমকের মত উপস্থিতি তাঁর। প্রথমে আমি তাঁকে এক সাধক ভেবে ভুল করেছিলাম। যে সাধক ফকির মানুষের দেহের ভেলাতে এত জলপথ পাড়ি দেন। আমি যখন তাঁর কথা শুনছিলাম, মনে হচ্ছিল বুদ্ধই আসছেন কোন এক ছদ্মবেশে। নইলে হরিণ তিনি কোথা পাবেন। ভেলাতে স্থিত একটি হরিণ, যে তাঁকে পথ দেখিয়ে এদেশে নিয়ে আসে—এই কথা শুনে মনে হওয়াই স্বাভাবিক যে, তিনি বুদ্ধ না হয়ে যান না। কিন্তু পরে বুঝেছি তিনি নন। শুনেছি তিনি আসলে হরিণ রেখে ভেসে যাবেন অন্য পথে, রৈক্যের দিকে।”
“থামলে কেন, বল। আমি আরও শুনতে চাই—তুমি থেম না।”
“তিনি কিছু কথা বলেছিলেন। কিভাবে এই দেশ-কাল-সমাজ থেকে অসহিষ্ণুতাকে দূর করা যায়। সেই কথাগুলি বলেই তিনি অদৃশ্য হলেন। কিন্তু হরিণ রয়ে গেল আমার নৌকায়। তিনি আমার নৌকায় উঠলেন না। অথচ আমি একদিন শুনেছিলাম, হানজালা মোল্লা নামক এক মাঝি বলেছিল আমাকে, তিনি আমার নৌকায় ভেসে যাবেন। তিনি জলে ভেসে গেলেন। ভেবেছিলাম, নৌকার কথা বলবেন আমাকে। যখন বললেন না, দেখলাম, তিনি কিসে আসছেন। প্রথমে কিছু বুঝতে পারলাম না। মনে হল এমনিই জলের উপর দিয়ে তিনি ভেসে ভেসে যাচ্ছেন—আমি প্রথমে ভেবেছিলাম, আসলে তিনি হানজালারই ছেড়ে যাওয়া এক নৌকায় ভেসে চলেছেন। কিন্তু পরে খেয়াল করে দেখি, সুবিশাল এক জলপদ্মের উপর তিনি বরাভয় মুদ্রায় স্থিত।”
উত্তেজিত হয়ে চোমং বলতে থাকলেন, “আরও বল, আরও। আমার তৃষ্ণা বেড়ে যাচ্ছে ক্রমশ! পরিবর্তন আসছে; এ সব তারই লক্ষণ! আর সেই হরিণ? সে হরিণ কি এখনও তোমার আছে?” বড় অধৈর্য হয়ে ওঠেন চোমং। উত্তেজিত কন্ঠে বলেন, “ কই, তাঁর সে রূপ আমি দেখতে পাচ্ছি না কেন? আর বারবার তুমি পাচ্ছ! কেন?”
আত্মসমর্পণের মত অসহায় ভঙ্গিতে সোম বলে, “আর কিছুই আমার জানা নেই চোমং। আমি আপনাকে যতটুকু বলেছি, এই হল বুদ্ধের স্বরূপ আমার কাছে। আমি যতটুকু তাঁকে দেখেছি, তা ওই ঝলক মাত্র। আমার ভ্রমও হতে পারে। যেমন ভ্রম হতে পারে এই হরিণ দর্শন।”
চোমং জোর দিয়ে বলেন, “বুদ্ধকে তুমি দেখেছ, না হলে এই সব কথা তুমি বলতে পারতে না। বহু লামা দেখেছি, সাধক দেখেছি—কারও কাছে এমন অপূর্ব কথা শুনিনি। তুমি আমাকে বলেছ, নদীর কথা—ঘিয়া নদীর কথা—যা বন্যা ডেকে আনে প্রতি বছর। নদীরা শেষ হয়ে যাচ্ছে যুবক, মানুষ গিলে নিচ্ছে তাদের! সেও এক অসহিষ্ণুতা। তুমি মহৎ, হয়ত পরের কোন জন্মে বুদ্ধ হবে। নইলে এইরূপে তাঁর হরিণ তুমি লাভ করতে পার না। যদিও প্রেসিডেন্ট কোথাও নেই, তাঁকে দেখা যায় না, কিন্তু তিনি আছেন এই ষোড়শজনপদের আকাশে-বাতাসে। জলে-স্থলে-মাটিতে, ফুলে-ফলে তাঁর অবাধ গতি। তাই তাঁকে এড়িয়ে কিছু করার উপায় নেই।
এবার আমাকে দেখ। এতদিন ধ্যান করেও আমি যেমন নির্বাণ লাভ করতে পারলাম না, তেমনি পাচ্ছি না হরিণের দেখা চক্ষু মুদেও না। এই ষোড়শজনপদে কত অলৌকিক কান্ড ঘটে, আমি যে কিছুই দেখি না বা বুঝি না, তা নয়। কিন্তু ঘটনা কি বলত, সবই কেমন যেন আমাকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়। যেমন মাঝে মাঝে রাত্রিকালীন আলোকে আমি দেখি ওই ভাঙ্গা স্তূপ গড়ে উঠছে আলোয় আলোয়। তার কোল থেকে নেমে আসছে অজস্র হরিণ! পড়ে দেখি, সেগুলি আসলে হরিণ নয়, হাজার হাজার খচ্চর! কিন্তু এর বেশি আর কিছুই আমার দৃষ্টিগোচর হয় না। কোন পাপে এমন হচ্ছে! এদিকের বাকি সব কিছুই আমার দৃষ্টি গোচর হচ্ছে। মনে হচ্ছে, ওই দূরের যে পথ তা বেয়ে হেঁটে যাচ্ছেন অতীশ দীপংকর। অজস্র ভিক্ষু বুদ্ধের স্মরণ নিচ্ছেন। কিন্তু এই কাছের মৃগ, যে এখন আমাদের পাশেই উপস্থিত তাকে দেখি না কেন, সোম? আমি যখন দক্ষিণদিকে মুখ করে নতজানু হয়ে বলি, ‘হে গৃধ্রকূট পর্বত, তুমি আমাকে দর্শন দাও। সেখানে অসংখ্য বৌদ্ধ মহা সমাগমে মিলিত হচ্ছেন, আমি দেখতে চাই’ অমনি আমি তাই দেখি। বাতাসে ভেসে ওঠে সব কিছু। পর্বতপদে সেই রত্নভূমি সমতল। তার চারিদিকে সারিবদ্ধ বৃক্ষেরা যেন রত্নবৃক্ষ। সেখানে মণিমাণিক্যখচিত এক রত্ন সিংহাসন। সেটি শাক্যমুনি বুদ্ধের জন্য। কিন্তু আমি তাঁকে কখনও উপবেশন করতে দেখি না। দেখি যে, সকলে তাঁর জন্য অপেক্ষারত। সেখানে আমি নিজেকে দেখতে পাচ্ছি না কেন?”
“গোটা বৌদ্ধধর্মটাই কী নির্বাণ নিতে চলেছে, চোমং? আফগানিস্থান-পারস্য-কাবুল-কান্দাহার থেকে এই ধর্ম যে মুছে গেছে! তার উপর যে ভগ্ন স্তূপ আপনি দেখেন, সেটা কি সেই স্তূপ নয় যে সাত বার বিনষ্ট হলে বৌদ্ধ ধর্ম শেষ হয়ে যাবে!!”
কথা বলতে বলতে তারা চলতে থাকল। ক্রমে সরে যেতে থাকল বৃক্ষেরা, লতাপাতা, বন্য পশু ও ফল-ঝর্না, পক্ষীকূল। সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠলে লাগল কেবল আকাশ আর আকাশ। পথের পাশে রাখালদের খড়ের ছাউনির বিশ্রামাগারে খড়ের বিছানায় আধশোয়া হয়ে বিশ্রাম নিতে নিতে ভিক্ষু বলেন, “খচ্চর চড়ানোর রাখালরা সারাদিন পশুদের চরিয়ে সন্ধ্যাবেলা একটা করে গুণে গুণে ঘরে ঢোকায়। কিন্তু এর একটাও তার নয়। এরা হল নদীর তীরে বসা তীষ্ণার্ত লোক। পাশ দিয়ে নদী বয়ে যাচ্ছে কিন্তু সে তৃষ্ণনায় মরে যায়। এখানে কিছু মাস আগে এক ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়ে গেছে। ফলে এখানে যে গ্রাম ছিল, তাদের সকলেরই মৃত্যু ঘটেছে।”
এবার চলা নদীর জল ছুঁয়ে। এখানে নদীর রূপ তাকিয়ে দেখার মত। চোখ যেন আর ফিরতেই চায় না। নদীর ঢালে ক্ষয়ে যাওয়া মাটি আর নুড়ি-পাথরের ছোট স্তম্ভগুলি অতীব সুন্দর। পথ যে কোথায় আমাদের নিয়ে যাচ্ছে তার কোন ঠিক নেই। চলতে চলতে উঠে এল এক ধূসর সবুজের মাঝে। সেখানে দাঁড়িয়ে চোমং বলেছিলেন, “ঐ টিলার মাথায় তিন দেবতা বাস করেন। তবে কি তাঁরা এই স্থান পরিত্যাগ করেছেন ভূকম্পের পর।”
এরপর নদী ডান দিকে এক হলুদ স্রোত। পাড়ে নীলবরণ শ্যাওলা। এদিকেও কিছু স্তম্ভ আছে মাটির। তাতে উইয়ের বাসা। লতাপাতা, অঘ্রাণে যা শুকনো। জীর্ণ পাতা পরে পরে তা অপূর্ব শিল্পরূপ ধারণ করেছে। পিছনে এক পিপলি গাছ। দেখে যেন মনে হয় এখানে বুদ্ধ কখনও তপস্যা করেছিলেন।
জলে হাত দিল সোম। এখানের জল খুব ঠান্ডা। সোম নদীতে নেমে জল খেতে গিয়ে অনুভব করল সারা শরীর জুড়ে এক শিহরণ, তারপর কাঁপুনি। মিনিট দশেকের মধ্যে থরথর করে কাঁপতে শুরু করল। মাথার মধ্যে যেন ড্রাম বাজছে। খানিক বসে রইল গাছতলায়, সবুজ বমি হয়ে গেল। সে কি তবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে পড়ল? সে ভয় পেল। ডেঙ্গুতে মরলে তার মৃতদেহের উপর লেখা হবে, করোনারী হার্ট ডিজিজ।
সোমের মনের ভেতর গতজন্মরা চলে আসতে লাগল। অনেকগুলি জন্ম একত্রে সব কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। আর সেই সব জন্ম টপকে চলে যাচ্ছে অজস্র হরিণরূপী খচ্চর! তার মনে হয়, এই যেখানে শুয়ে আছে, এখানে এক শহর ছিল। এই শহর একদিন পর্যটন কেন্দ্র ছিল। সেখানে পরপর বিহার। ওই যে বৌদ্ধ শ্রমণের দল নীরবে হেঁটে চলেছেন। প্রত্যেকের হাতে মশাল। তাঁদের সকলের পশ্চতে রয়েছেন সীন দেশের হিউএন সাং। আকাশে বাতাসে মৃদুকন্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে, বুদ্ধের স্রোত্র। এখানে অনেক দেশ শুয়ে আছে উপত্যকার উপর, সবুজ হলুদ জমি গড়িয়ে নেমেছে নদীর ভেতর। তখন সীন দেশের সেই পর্যটক তার কাছে এসে বলছেন, ‘জীবনের সম্যক অর্থ কি—এ বড় জটিল প্রশ্ন। বুদ্ধ বর্তমান না থাকলেও বোধিসত্ত্ব এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন। কিন্তু তুমি কি কারণে এই জনপদে এসে উপস্থিত হয়েছ?’
সোম তিনদিন পর উঠতে পারল। সে মনে করতে থাকল, জ্বরের ঘোরে দেখা নানা স্বপ্নদের কথা। অবশেষে তাদের যাত্রা শুরু হল। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে পথ। খানিক দূর গিয়ে সোমের হ্যাঁ, এই পথই তো রেশমপথ। এই পথ সে পেরুতে দেখেছে হিউএনসাং কে। মনে হতেই বসে পরল। মাথা ঘুরছে। সামনে তাকিয়ে মনে হল, না, কোন ভুল নয়। ওই তো ওই তো হিউএনসাং চলেছেন। তাঁর মনময় প্রশান্তি। একা চলেছেন পরিব্রাজক। ভাল করে তাকিয়ে দেখে সোম, কই একা, সামনে যে এক হরিণ। সেই পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তাঁকে। তবে কী ফিরে যাচ্ছেন তিনি নিজ দেশে?
তাঁর যাত্রা পথের মাঝেমাঝে কিছুটা খোলামেলা জায়গা। অনেক নিচে নালা। উত্তরদিকে ঘাস ও ঝোপঝাড় ঢাকা প্রান্তর ছড়িয়ে উই ঢিপি, পাহাড়। ঘন বাদামি রঙের সেই ঢিপিগুলির উপর রয়েছে বড় বড়ো পাথরের চোর্তেন বা সাজানো স্তূপ। সেখানে বুদ্ধ উদাস হয়ে কারও জন্য অপেক্ষা করছেন। তাঁর পায়ের কাছে কতগুলি হরিণ খেলা করছে। এরা সকলেই মৃগভূমির হরিণ অথবা খচ্চর। এরা বুদ্ধের কাছে মিনতি করছেন, যাতে বুদ্ধ বলেন তারা বোধিস্বত্ত্ব লাভ করতে পারবে কি না। বুদ্ধ বললেন, ‘শূন্য কল্পে তোমরা হবে প্রত্যেক বুদ্ধ।’
তখন আকাশজুড়ে সাদা মেঘ জমতে শুরু করেছে। নানা আকৃতির দুধ সাদা মেঘ হাতির অবয়ব পায় যেন। ধূসর বাদামি পাহাড়, নীল দিগন্ত, সাদা মেঘ যেন আমার স্বরকে ভালো করে তোলে। সোম যখন বুদ্ধকে আরও কাছ থেকে দেখতে চায়, দেখে ঢিপির উপর এক অন্য দৃশ্য। চোর্তেনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক পাহাড়ি হায়েনা! সেখানে দাঁড়িয়ে এক ভিক্ষু বলছেন, ‘আমি যখন অসুস্থ হব, আমাকে দেখার কেউ থাকবে না। মৃত্যুর সময় আমার পাশে কেউ কান্নার জন্য বিলাপ করবে না।’
সে ভিক্ষু কে? চোমং? না অন্য কেউ?
(ক্রমশ…)
পরিচ্ছেদ ৬ অনেক রাতে ফিরেছিল কল্যাণ ওরফে শহীদুল।গাড়িটা শেডে রাখার পর দু’বার হালকা করে মা…..
পরিচ্ছেদ ৫ আকাশে এখন আর মেঘ নেই। হাওয়া হচ্ছে।কদিন পরেই বর্ষা নামবে।একদিন হাসপাতাল থেকে ফিরতে…..
পরিচ্ছেদ ৪ ভোর হয়ে আসছে।রাতে ভালো ঘুম হয়নি।ঘুমের ঘোরে মনে হচ্ছিল দম বন্ধ হয়ে আসছে।এরকম…..
পরিচ্ছেদ ৩ শীত শেষ হয়ে আসছে।রাঙ্গালীবাজনা ঢোকার মুখের রাস্তাগুলো পলাশ ফুলে ভরে গেছে।অথচ ঠান্ডাই।…..