ঝরা শিউলি
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
চৈত্রের খর তাপ ঝরা দিনের পরে, ক্লান্তিকর সন্ধ্যা নামে শহর জুড়ে। রাতদিন তাপদগ্ধ করাই চৈত্রের কাজ যেনো। বাহিরের মতো মানুষের মনের ভিতরেও কখনো কখনো চৈত্র এসে ঠাইঁ গাড়ে যেনোবা। আজ তেমনি দিন! উর্বানার মন সহজে খারাপ হয়না, তবে মনখারাপ করা ঘটনাগুলো কেমন একটা চাপ তৈরী করে মনের উপর।
কাল সারাটা সন্ধ্যা রাত কেবল নিজের পরিচিত স্বত্তাটাকে খুঁজে গেছে সে। খবরটা আসবার পর থেকেই, নিজের অস্তিত্ব খুঁজে বেড়াচ্ছে সে।
বইয়ের তাকে ঠাঁসা প্রিয় বই, গান, আর অ্যালবামে রাখা ছবিতে। আলমারিতে, দেরাজে থরে থরে রাখা সাজানো শাড়িতে।একেকটা শাড়ি যেনো বারো হাতের একেকটা গল্প, মায়া। ছুঁয়ে গেছে প্রিয় শাড়িগুলো।সেই নীল স্বর্ণচরী শাড়িটা, যেটা পরেই প্রথম সাব্বিরের সামনে দাঁড়ানো! প্রগাঢ় প্রেমে, কনে দেখা আলোয়। যার পরিণতিতে এই বাড়ি, সাজানো আর বড় যত্নে গড়া সংসার।
ছত্রিশশো স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাট, ছবির মতো সাজানো গৃহকোণ! লোকের সামনে তাদের চোখে ধুলো দিয়ে সাব্বিরের বউ হয়ে সুখী হবার অভিনয়।
আলমারির খোলা দেরাজ থেকে বিয়ের নীলচে সবুজ বেনারসি! সে উঁকি দিয়ে জানালো ন্যাপথালিনের যত্নে তেমনি আছে, কেবল শাড়ি থেকে তার নিজের, উর্বানার গায়ের গন্ধটাই হারিয়ে গেছে। একেক শাড়ি, পোষাকের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে একেক পুরুষ সঙ্গীর শরীরের গন্ধ আর স্মৃতি! নানানরকম শাড়ি জমানো, উপহার পাবার দিকে ঝোঁক আছে তার, নিজের কেনাও কম না। প্রচন্ড রকম বিলাসিতায় গা ভাসাতে ভালো লাগে উর্বানার, নিজের গরীব বাবার গরীবী চালের জীবনটাকে বড় ঘৃণা করে সে। সাব্বিরের ঝা চকচকে চাকরি, মোটা বেতন , পার্কস আর নানান প্যাকেজের চাকরির সঙ্গে সিক্স ডিজিটের বেতন তার একমাত্র যোগ্যতা উর্বানার স্বামী পদে বহাল থাকবার জন্য।
দাম্পত্য সম্পর্ক বলতে যা বোঝায়, বা সাধারণ মানুষ বোঝে তা বহুদিন নেই সাব্বিরের সাথে উর্বানার। লোকের সামনে দম্পতি তারা, জায়া আর পতি৷ কিন্তু এই ঝকঝকে ফ্ল্যাটের চার দেয়াল জানে তাদের দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা হবার কাহিনি। জানে সাব্বিরর মা, কন্যাও, বোনেরাও। জানে তার মতো আরো সব নারী অধিকার নিয়ে বেহুদা তর্ক করে নিজের আখের গোছানোর মতো বেফালতু মানুষেরাও৷ যাদের কাছে নারীবাদ তত্ত্ব হিসেবেও জোলো। কেবলই একটা চাকরি বা ফান্ড যোগাড়ের এজেন্ডা মাত্র। তারা জানে আর উর্বানাকে ভালো করে চেনে, চেনে তার স্বভাবটিকেও।
এই তো কিছুদিন আগে সাব্বিরের কলেজ আমলের এক প্রেমিকার খোঁজ পায় উর্বানা, এক বিখ্যাত নারীবাদী সম্পাদকেরও বান্ধবী তিনি। উর্বানা পাড় মাতাল অবস্থায় এক শক্তিমানের পার্টিতে সেই নারীকে অপমান করে সকলের সামনে। বলতে ছাড়েনা সাব্বিরের সাথে তার প্রেমের কথা। কিন্তু বলেনা সেটা তাদের কলেজ জীবনের গল্প, বর্তমানে এই নারীর ছায়াও সাব্বিরের সংসারে নাই। এই স্বভাবের কারণে সাধারণ নারীরা উর্বানার মতো র্যাডিকাল এলিট নারীবাদী ভেকধারীদের এড়িয়ে চলে, কিন্তু সেসবে কিচ্ছু আসে যায় না উর্বানার। সে তার নিজের মতো নানান পুরুষ সঙ্গ করতেই মত্ত। যেকোন পুরুষকে তার মনে ধরলে যে কোন উপায়ে তাকে বিছানায় না নিয়ে তার থামতে ইচ্ছে করেনা। উর্বানার স্বামী সাব্বির, বন্ধু স্বাতীও জানে সব কান্ড, মিডিয়া কর্মী উর্বানার মানসিকতা জানতে বাকি থাকে না কোন হাউজের কোন কর্মীরই। একসময়কার লম্পট সামন্তপ্রভুদের মতো হাবভাব উর্বানার।
সাদিকের মেসেজটা বারবার করে পড়ে উর্বানা! পড়ে যে, সে আর এই সম্পর্ক রাখতে চায় না। সঙ্গে উদ্ধৃত করেছে নির্বাসিত কবি দাউদ হায়দারের লেখা ‘নারীবাদী ছিনাল লেখিকা‘ শিরোনামের এই কবিতা-
অনেক বিখ্যাত ছিনাল দেখিয়াছি পৃথিবীতে
তোমার মতন কেহ নয়, তুমিই সেরাসকালদুপুরসন্ধ্যায় গ্রীষ্মশীতে
খুঁটে খাও শিশ্ন; তোমার উদরে রেতঃপাত করে মর্দেরাতুমি সেই নারীবাদী-নামধারী লেখিকা
রক্তেশিরায় মিথ্যে আর ভণ্ডামি ছাড়া কিছু নেই জীবনে।
তোমার খানাখন্দে বিষমাখা পিপীলিকা;
জন্মগত ছিনাল যে-মত উত্তেজিত সহজাত-দংশনেঅনেক নারীবাদী-ছিনাল দেখিয়াছি, তুমিই সেরা।
তোমার শোনিতগন্ধে যারা দিশেহারা, নিশ্চিত বেজন্মা, হারামি।
দোষ বাপের বীর্যে, মায়ের যোনীতে। জানে চিকিৎসকেরা,
ছিনাল কেন মিথ্যুক, সর্বদা নিম্নগামী।যে-ছিনালের কথা বলছি, কী দরকার নামোচ্চারণে।
নদীর জল ক্রমশ দূষিত, মাছ ও মানুষ দিশাহীন।বছরে-বছরে তথা সাল ও সনে
নারীবাদী ছিনাল লেখিকা ভাবছে, ছিনালদলে আমি কী কুলীন?
নিজের বিশাল বপু শরীরটা লিভিং রুমের ডিভানে ছড়িয়ে দেয় উর্বানা। আজ টাকিলার নেশাও ঠিক জমে নাই তার। সাদিকের হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে চোখ আটকে ঠোঁট বেঁকে যায় তার, হাহহহ ছোকরা চেনে না উর্বানাকে। সাদিকের আগে আগে কাশফিও এরকম কঠিন জেদ দেখিয়েছিলো, তার কি দশা করেছে উর্বানা জানে সকলে। এখন এসছে সাদিক, ফুঁহহহহহ!
বরাবরই কচি, কম বয়সি ছোকরা পছন্দ উর্বানার। ত্রিশের আশপাশে ঘোরাফেরা করে তার পছন্দ। তেত্রিশের বেশি বয়সি ছেলেছোকরা নাপছন্দ উর্বানার। শরীফ সাদিক জামান, সাদিক জামান নামেই সমধিক পরিচিত।
বামপন্থী ভাবধারায় বিশ্বাসী ভেকধারী এক বিখ্যাত লেডিকিলার রোমিও। উর্বানার যেমন কচি ছেলে দরকার সে তেমনি একটু বেশি বয়সের নারীতে মজে যায়। যখন তখন গাঢ় স্বরে আবৃত্তি করতে পারে, পটাতে ওস্তাদ যেকোন নারীকে এক চুটকিতে।
একটু বয়সী, ম্যাচিউর্ড, কম ন্যাগিঙ করা, কম ডিমান্ডিং থলথলে পৃথুলা শরীর পছন্দ সাদিকের। তার মতো আর সব ছোকড়াদের মতো জিরো ফিগারের ট্রেন্ডি নারীর প্রতি তার টান নাই। গোছানো সংসারী সুন্দরী বউ তার সংসার সামলায় আর সে বড়লোকের বিগড়ানো বউ সামলাতে মজে যায়।
সবদিকে ব্যাটেবলে মিলে যায় বলেই সাদিকের সঙ্গে উর্বানার শরিরি প্রেম জমে উঠেছিল, একদম ঘন হয়ে। কমরেড সাদিক জামান এক বিশেষ রাজনৈতিক দলের ক্যাডার বলে, তার দলের নেতার বাসায় এমনকি উর্বানার এই ফ্ল্যাটেও চলেছে তাদের শরীরের আদান-প্রদান, খেলা। যদিও নিজের ফ্লাটে বা কোন রিসোর্টে তারা কখনো যায় না, অনেকটাই সাদিক জামানের পকেটের কথা ভেবে। তবে ইতিউতি বন্ধুদের ফ্লাটকে লিটনের ফ্লাট বানানোর সব খরচ উর্বানাই টেনে আসছে বরাবর। সে এই ব্যপারে উদার, আর যাই হোক ভোগী হতে হলে রাজসিক মেজাজ পালতে তো হবেই। আর তাই ফ্লাটের আর সকলের সামনেই উর্বানাকে নিয়ে তারই বেডরুমে ঢুকে পড়ে সে অবলীলায়! সবই চলছিল তালে তাল ঠেকিয়ে কিন্তু বাদ সাধে উর্বানার অত্যধিক বেশি শরীরের ওজন এবং বাহুমূল আর জঙ্ঘার বিকট দুর্গন্ধ! একটু ভারী শরীরই আমাদের বিপ্লবী কমরেডের পছন্দ বটে কিন্তু উর্বানার মৈনাক পর্বত সদৃশ বিশাল বপু ঠেলে কেবল মিশনারী পজিশনেই শরীরের সম্পর্ক সম্ভব, যা উর্বানার নিজেরই পছন্দ না।
হাতের টাকিলা ভরা টাম্বলার ছুঁড়ে ফেলে দেয় উর্বানা, সাদিকে প্রতি তীব্র ঘেন্নায়। ছোকরা শরীরের খেলায় বড় পারঙ্গম ছিল, ঘরে সুন্দরী কম বয়সের বউ রেখেই মজেছিল উর্বানার মোহে। কিন্তু সম্পর্কটা সে আর আগাতে পারছেনা জানাচ্ছে কিছুদিন পরপরই নতুন নতুন বাহানায়। তবে তারমধ্যে সবচেয়ে উৎকট ফাতরামি করেছে ছোকরা উর্বানা৷ শরীরে বিকট গন্ধের কথা বলে।
এমনকী সে সরাসরি বলেছে উর্বানার সঙ্গে শারিরীকভাবে সে আকৃষ্ট কিন্তু যখনই সে তার সাথে উপগত হতে যায় তীব্র উৎকট গন্ধে তার গা গুলিয়ে উঠে এবং তার শরীর নিস্তেজ হয়ে যায়! উর্বানার শরীরে উৎকট কাঁচা রক্তের গন্ধ!
সাদিক উর্বানাকে স্পষ্টভাবে এও বলেছে যে সে গাইনি ডাক্তার দেখাক, জঙ্ঘাতে এরকম গন্ধ স্বাভাবিক না। তার হয়তো কোন ইনফেকশন হয়েছে। জরায়ুতে ইনফ্লামেশন হওয়াও বিচিত্র না। ইঙ্গিত করেছে উর্বানার লাগামহীন বেলেল্লাপনা, নানান লোকের সাথে অবৈধ যৌন সঙ্সর্গকে! কিন্তু উর্বানা মানতে নারাজ সাদিকের কোন কথাই! তার কেবলই মনে হয় এটা সাদিকের একটা বাহানা নেহাত, উর্বানা৷ কাছ থেকে সরে যাবার।
রোজকার গৃহস্থালি তেমনি চলে, কপালের টিপ তেমনি ঝলকায়। শাড়ির ভাঁজও তেমনি, অভ্যস্ততায় চলে ভালোবাসা। আয়না অবিকল আমিকেই দেখায় তো!!!রোজকার বেয়াড়া নিয়মে বয়স বেড়েছে, আঠারো বদলে আঠাশ তারপরে আটত্রিশ পেরিয়ে আটচল্লিশ! আঠেরোতে যেমন আঠেরো দেখাতো আয়না আটচল্লিশে তাই দেখাতে চায়।ত্রিশে সাব্বিরের বউ হয়ে এসছিল, আটচল্লিশে এসে বছর পরেও সে যেনোবা এই পরিবারে এক আগন্তুক কেউ! এই পরিবার চলে উর্বানার শাশুড়ির অঙ্গুলি হেলনে, উর্বানা সেখানে ব্রাত্য।
নিজেকে এপাশ ওপাশ থেকে দেখে উর্বানা, দেখে কতোটা সৌন্দর্য ধরে আজো আটচল্লিশ বছরের শরীরে। কিন্তু সে বোঝেনা শরীর উন্মুক্ত পোষাক পরবার জন্য কাঠামো বড় ভালো হতে হয়। বাঙালি নারীর শরীরের যা গড়ন তা শাড়ির জন্য আদর্শ বটে। পশ্চিমি পোষাক সব বয়সের সব বাঙালি নারীকে মানায় না৷
আর বাঙালি মেয়েরা শাড়িতে কমনীয় সৌন্দর্যের সংজ্ঞা বটে কিন্তু মেদের আধিক্য সমস্ত সৌন্দর্য মাটি করে!
উর্বানার রোজকার সঙ্গের সঙ্গী স্বরবিতান, যা থেকে হরহামেশাই কোট করে সে ফেইসবুক স্ট্যাটাসে বা ছবির এ্যালবামের নাম! কাকবন্ধা এক নারীর দোসর যেনো রবীন্দ্রনাথের রচনা। স্কেলচেঞ্জারটা একা একাই বাক্সোবন্দী অবস্হা থেকে বের করে আনলো সে, সযত্নে।এতটুকু ধুলো জমবার ফুরসত নেই।আজ যখন তাকে ডেকে নিলো কেমন অদ্ভুতভাবে সাড়া দিলো।
নিজেকে খুঁজতে ফের ফিরে আসে উর্বানা সঙ্গীতের কাছে,যদি সেখানে পায় নিজের চেনা স্বত্তাটাকে!! সাদিকের ছবি দেখতে দেখতে একটা গান হঠাৎই যেন মনে এলো। বড় সাধ করে প্রাণপণে চাই, বঞ্চিত করে বাঁচালে মোরে…
বসলো বটে কিন্তু কিছুতেই কেন যে গানটা গলায় বসছেই না। অথচ এই গানটা বহুবার গাওয়া তার!
আদতে রাগরাগিণী ও বড় অদ্ভুত চাল চালে একেক সময়।সেও সম্পর্কেরই মতো,যত্ন চায়।তাকেও লালন করতে হয় পরম যত্নে! ফের নিজেকে সামলে নিয়ে গলায় বসানোর চেষ্টা করলো,হলো না। বেশ কয়েকবার চেষ্টা করে শেষে হাল ছেড়ে দিলো।বরং নিজের সমস্ত শক্তি জড়ো করে সাদিকের ধ্বংসের ছক কষে বের করলো। যে করে হোক, এই চেঙড়ার সমস্ত কেরিয়ার ধ্বংস করতে হবে। মিডিয়া হাউজের কর্মী হিসেবে তার বহু তাবড় মানুষের সাথে পরিচয় আছে, যে কোন কাউকে সে কাজে লাগাতে পারে। বহুবার বহুভাবে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের বিষয়ে নিজের অমত জানালেও শেষপর্যন্ত সেই আইনটা ব্যবহার করতে বধ্য পরিকর হলো উর্বানা! বিপ্লবের স্বপ্ন দেখে সাদিক, তা যতোই হাস্যকর হোক না কেন। সোশাল মিডিয়ায় সেসব বলে এর আগেও বহুবার বহু রকমের বিপদে সে পড়েছে। সরাসরি সরকারের বিরোধিতাও করে সে প্রকাশ্যেই। কমরেড সাদিক জামানকে ঠিক মতো পেড়ে ফেলতে হবে এইবার তাই মোক্ষম দাওয়াটাই ধরে সে!
আদতে উর্বানা সাদিকেরা এরকমই হয় , শোণিতগন্ধী! হায়েনার মতো ওঁত পেতে থাকে ভয়ানক কাণ্ড ঘটাতে।
ভন্ডামি এদের রক্তেই মিশে আছে। প্রকাশ্যে যার বিরোধিতা করে, অন্তরে তাকেই লালন করে সযত্নে!
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
শেষ থেকে শুরু। আমি রজকিনী রামী,ধোপার বংশে জন্ম আমার।ঘাটে সখিদের সঙ্গে কাপড় কাচি। একাজটা আমি…..
মালঞ্চার পথে ভোরবেলা। সূর্য সবে উঠছিল। বৈশালী দূর থেকে দেখতে পেল,বুনিয়াদপুর বাসস্ট্যান্ডে বালুরঘাটের দিকে মুখ…..
আমার বাবা ছিলেন অত্যন্ত সাহসী একজন লড়াকু মনের মানুষ।শত অভাব অভিযোগেও তাকে কোনোদিন ভেঙ্গে…..