সঞ্চয়িতার এফিটাফ

জাহান রিমা
অণুগল্প, গল্প
সঞ্চয়িতার এফিটাফ

সঞ্চয়িতার সাথে আমার সম্পর্ক ছিলো। আমরা বই দেয়া নেয়া করতাম। সঞ্চয়িতা আমাকে শেষের কবিতা দিয়েছিলো আমি দিয়েছিলাম শ্রীকান্ত। শ্রীকান্ত’কে ফেরত দিতে এসে ও’ আমাকে বলেছিলো, আচ্ছা? তোদের কোরআনে কি লেখা আছে রে? আমাকে একদিন পড়তে দিবি? আমি ও’কে দিতে পারিনি। আমাদের কোরআন এতো উপরে রাখা থাকতো যে আমি নামাতে পারতাম না। সপ্তম শ্রেনীর হাত কতোই আর লম্বা হয়!

সঞ্চয়িতাদের বাড়ির তুলসী গাছ তলায় রক্ত জবা ফুটতো।
একদিন গোপনে ও’ আমাকে পূজার ঘর থেকে ফুল নিয়ে দিয়েছিলো। বলেছিলো, ধর। এগুলো তুই নে। মানুষের কাছে মানুষ থাকতে পদার্থরে ফুল দেয় কেন? আমি বুঝি না। তুই বুঝোছ?

বুঝা-না বুঝাটা গোধূলির মতো। বুঝে উঠতেই অন্ধকার।
সাজের বেলায় মসজিদে আজান, ঠাকুর বাড়িতে উলোধ্বনি আমার দিকবেদিক শূন্য লাগে। আমি ত’ বুঝি না। হঠাৎ মা’কে বলে বসি: মা যে আমারে গড়লো, তারে গড়লো কে? মায়ের থাপ্পর মারা চোখ প্রশ্নটাকে হত্যা করে। মা বলে, চুপ থাক। বেশি বুঝোছ। তাইতো! ছোট বেলার আমি বেশিই বুঝতাম।

এভাবে আমার বড় বেলা এসে যায়। প্রশ্নরা কমে যায়। বড় হলে আমরা বুঝে যাই অনেক কিছুই বুঝতে নেই। অপরদিকে সঞ্চয়িতার সাথে আমার দেয়া-নেয়া বাড়তে থাকে। মাঝে সঞ্চয়িতার কী যেন হয়। কার সাথে যেন জলের কসম খেলে। জলের খেলা সমাজের আগুনে হয়না।

সঞ্চয়িতা তাই সে আগুনে বাঁচেনি কিংবা ও’কে বাঁচতে দেয়া হয়নি। কূল আর জাতের যাতাকলে পড়ে সঞ্চয়িতা প্রতি মুহুর্তে কূল ভাঙ্গা নদীতেই ভাসান দিয়েছিলো। সঞ্চয়িতা এক মুসলমানের প্রেমে পড়েছিলো।

জীবন ভিন্ন অন্য কোন অস্র নেই বলে সঞ্চয়িতাকে জীবন দিয়েই জানাতে হয়েছিল, পৃথিবীতে একমাত্র ভালোবাসায় সত্য। ভালোবাসায় মানুষের ধর্ম। জীবিতের সব ইচ্ছে গলা টিপে হত্যা করলেও নিষ্প্রাণের একটা ইচ্ছে জীবিত রাখে এই নিয়ম মানা জগৎ সংসার। সঞ্চয়িতার এফিটাফে লেখা ছিলো, জাত গেলো জাত গেলো বলে এ কি আজব কারখানা..গোপনে যে বেশ্যার ভাত খায় তাতে ধর্মের কি ক্ষতি হয়?

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

দৌড়

দৌড়

একবার এক দৌড় প্রতিযোগিতায় কেনিয়ার হয়ে দৌড়চ্ছিলেন আবেল মুতাই। খুবই ভালো দৌড়াচ্ছিলেন তিনি। সবাইকে পেছনে…..