পাগল
চৌদ্দ পনেরো বছর আগের কথা; আমি বসে আছি একটি দোকানে, দোকানটি মূলত আমাদেরেই। দোকানের সামনে…..
বনে-পাহাড়ে বরাবরই আমার বড় টান, মনে হয় অন্য কোনও জন্মে এই পাহাড়েরই বুকে কোথাও একটি নিভৃত যাপন ছিল আমার, বড় নিজস্ব, একান্ত আপনার সেই না-তাড়া, না- দৌড়াদৌড়ির শান্ত শীতল দিন, কাক-চক্ষু সরোবরের মত স্বচ্ছ টলটলে অথচ নিবিড় নিভৃত অথচ গভীর আবেগময়। সেই প্রগাঢ়তার সাথে কবে কোনখানে যে মনান্তর ঘটলো সমতলের, চড়াই-উতরাই না ভেঙে আলসেকাতুর হয়ে উঠলাম তবু মনে মনে কতবার যে উড়াল দিতে হয়, পাখসাটে ব্যথামেঘ মেখে মেখে!
বনজঙ্গল নিয়ে আমার মাত্রাছাড়া বাড়াবাড়ির কারনে পরিচিত বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন এমনকি স্বল্প-পরিচিতেরা পর্যন্ত আমায় পুরোপুরি না হোক হাফ-জংলী, পাহাড়ি-ভূত বানিয়ে ছেড়েছে। কিন্তু তা বলে আটকানো যায়নি আমার শৈলপ্রেম, সেই অনুষঙ্গে জঙ্গলও। সেবার ডুয়ার্স হয়ে সিকিম যাবার পথে তিস্তা ব্যারেজের ওখানে একটি চা-জলখাবারের দোকানে দাঁড়িয়েছিলাম বেশ কিছুক্ষন। এন.জে.পি. থেকে গাজলডোবা হয়ে সে রাস্তা সোজা চলে গেছে একেবারে মেল্লিবাজার, করোনেশন ব্রিজ অবধি। ওইখানে একটি দোকান দেওয়ার ইচ্ছে হয়েছিল খুব, মনে মনে। চা-ডিমসেদ্ধ-ম্যাগী- বাটারটোস্ট- ওমলেট, পরিচ্ছন্ন পাহাড়ি মেয়েরা চটপট বানিয়ে দিচ্ছে হাসিমুখে, কি নিস্তরঙ্গ জীবন! আগেররাতে হলং বনবাংলোয় প্রায় সারারাত এক অপার্থিব অনুভূতিতে চমকে চমকে উঠেছি, রাতচরা পাখি আর বনচর জানোয়ারদের নিভৃত চলাফেরার শব্দে, চৌকিদারের শিষ আর বনরক্ষীদের ফিসফিস কথাবার্তায়, মিলনোন্মত্ত কোন পুরুষ হাতীর বৃংহনের তীব্রতায়, গর্ভিনী সাপের ভারী শরীরের পাতার ওপর সড়সড় করে ঘষটানো আওয়াজে, আকাশে ভাঙা চাঁদের মিহি জোসনায় শহুরে সভ্যতা থেকে যেন অনন্তকাল দূরে, যেন কতযুগ আগে আমি বাস করতাম সেখানে, আমার বর্তমান বলে কিছু নেই, এক বোবা জাতিস্মর আমার কলমে ভর করে আমায় দিয়ে লিখিয়ে নেয় এত কথা! সেই মেঘ ঝুঁকে আসা সকালে, তিস্তার পাড়ে দাঁড়িয়ে, উত্তর আকাশের গায় সারসার উত্তুঙ্গ পাহাড় কবে কোনকাল থেকে নীলমেঘ মাথায় স্থির হয়ে আছে,সেইদিকে তাকিয়ে, এখানেই ফোঁটা ফোঁটা চুঁইয়ে পড়েছে পশ্চিমের আলো কোন পাহাড়ি ঝর্ণার উচ্ছল ঘূর্ণিতে, সেই অনাগত কুহকী জীবনের মুহূর্তের ইশারায় আমার আর বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে করেনা। ওখানেই বসবাসের বড় ইচ্ছে হয়।
পরিষ্কার পাকদণ্ডী রাস্তার একদিকে পাহাড় অন্যদিকে খাদ। নিচু নিচু বারান্দায় রঙিন ব্ল্যান্কেট,পাহাড়ি ফুলে আচ্ছন্ন সবুজ লতা,মভরং অর্কিড, রাস্তায় বড় বড় লোমওয়ালা কুকুর…এভাবেই যদি থেকে যাওয়া যেত, সকাল-বিকাল চায়ের দোকানে কাজ সেরে দুপুরটুকু’র অবকাশে টুকটাক লেখালিখি। বন পাহাড়ে সন্ধে নামে তাড়াতাড়ি,ছায়া পড়ে আসে অর্ধেক পাহাড়ে, উল্টোদিকের ঢালুতে তখনও রোদ, সবুজ উপত্যকায় ঝলমল করে ঝর্ণা, পাহাড়িফুল।ওপর থেকে সেদ্দ নুডুলসের মত দেখায় নদীগুলো,নরম, আঁকাবাঁকা। পাহাড়-জঙ্গলে এক অপরূপ ভোর হয়, ঝর্ণার মাথায় পাইন, সিডার, দেবদারু আরও কত নাম জানা না-জানা ঘনসবুজ জঙ্গলের ফাঁকে কাশ্মিরী আপেলের মত লালচে আকাশে চেরা চেরা দাগ, সূর্যটাকে দেখা যায় না তখনও, মনেস্ট্রিতে ঘন্টা বাজে, তিব্বতী ভাষায় মন্ত্রোচ্চারণ হয়, সোনার বুদ্ধমূর্তির পায়ের কাছে স্ফটিকপাত্রে রাখা থাকে পূতঃপবিত্র জল, পত পত করে ওড়ে রং-বেরঙের পতাকা, ছোট ছোট পাখি ডাকে কিসকিস করে, অরন্যের সবুজের ওপর মাকড়সার জালের মত কুয়াশার আস্তর ঝলমলিয়ে রোদ ওঠে। পাহাড়ি মেয়েদের সিঁথির মত ধবধবে সাদা ঝর্ণার চিকচিকে জলের ছিটকে আসা ভেজা রাস্তায়, কমলালেবু বাগানের পাশ দিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ কোন চ্যাটালো পাথরের ওপর বসে যদি খুব সকালের এই প্রাণস্পন্দনে অক্সিজেনে ধুয়ে নিই বুকের আলোঘর, মোমদান,নৈবেদ্যর বেদি আরও কতকাল বেঁচে থাকা যায় এই চিরযৌবনা পৃথিবীর নিষ্ঠুর প্রাণপ্রবাহে! মাতালের মত।
পাহাড়ের পাঁজর ঘেঁষে যেসব শতাব্দীপ্রাচীন মহীরুহ উদ্ধত অহংকারের মত দাঁড়িয়ে আছে বহুকাল, কত ঘটনার সাক্ষী সেই পরম্পরার শালীন অথচ শীতার্ত অনুভবে নিজের মানুষী প্রবৃত্তির তাড়নায় উষ্ণ হয়ে ওঠা করতলে শুষ্ক, শূন্য বাতাস শুধু তার খসখসে হিমেল ঝাপটা দিয়ে দূরে সরে যায়, আমি মুঠো করেও ধরে রাখতে পারিনা কিছু, অনুভুতিও যেন আঁজলা গলে পরে যায় বরাবরের মত। চোখ বেয়ে একফোঁটা জল গাল পর্যন্ত এসে শুকিয়ে যায়।সব কান্নার দাগ হয় না।
চৌদ্দ পনেরো বছর আগের কথা; আমি বসে আছি একটি দোকানে, দোকানটি মূলত আমাদেরেই। দোকানের সামনে…..
১৮ মার্চ ২০১৯ মধ্যরাত! চারদিক অন্ধকারে ঢেকে আছে শুধু বাড়ির চারিপাশে বিদ্যুতের বাল্বগুলো জ্বলছে তাদের…..
জোছনা করেছে আড়ি আসে না আমার বাড়ি গলি দিয়ে চলে যায়, গলি দিয়ে চলে যায়…..
পাঠকদের প্রায় জনেই হয়ত জানেন, সমকাম কি ? সমকামী কারা ? সমকামীর প্রকারভেদ, কেন…..