ঝরা শিউলি
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
চমৎকার সামার এর বিকেল।জুন মাস। লালচে দীর্ঘ সোনালী বিকেলের আলো ছড়িয়ে পড়েছে হাডসনের জলে। নিউইয়র্ক এর ব্রুকলিন ব্রীজ পার্কে লিমোজিনে করে এসে নামলো বর কনে। কনের সাথে ব্রাইডস মেডরা। সবাই একরকম পোশাক পরেছে। বরের সঙ্গে বরের বন্ধুরাও। আয়োজনে কোন কিছুতেই কমতি নাই। ব্যতিক্রম শুধু এখানে এই গোধূলীর আলোয় বর কনে দু’জনই নারী। অন্যান্য বিয়ের মতো একজন নারী আর একজন পুরুষ না। অর্থাৎ বিয়ের কেন্দ্রবিন্দু দুইজনই নারী।
হ্যাঁ, দুই নারীর বিয়ে। এবং কনে বাংলাদেশের মেয়ে। দুই নারী ইশা হক ও এলি কাকলি রুথের বিয়ের প্রাক ফটোশুট হচ্ছে। সাদা লং ড্রেস ইশার পরণে। ব্রাইড মেডরা সব গোলাপী ড্রেস পরা। ডীপ নীল স্যুট আর হাল্কা ধূসর শার্ট পরা বরবেশে এলি কাকলি রুথ। ছবি তোলা হলো নানা ভঙ্গিমায়।যেমন সাধারণ সব নরনারী বিয়ের সময় তুলে থাকে।
ছবি তোলা শেষে ওরা চলে গেলো। ওদের সেদিন বাড়ি ভর্তি মেহমান। সেখানে গায়ে হলুদের আয়োজন। মেহেদির জন্য পার্লার থেকে মেয়েরা এসেছে। ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে পুরা হলরুম। গান বাজনাসহ সব বাংলাদেশী আয়োজন। পোলাও রোস্ট এর সাথে সমুচা সিঙারা গোলাপজাম জিলাপী সবই আছে। রসগোল্লা দইও বাদ যায়নি। স্টেক পাস্তা স্যান্ডউইচ বারবিকিউ চিকেন ও আছে। পানীয়র আয়োজনে কমতি নাই। মশলাদার পানের ব্যবস্থাও আছে। পার্টি হল গমগম করছে। সানাইয়ের সুর বাজছে। অতিথিরা সবাই ঝলমলে সাজ পোশাকে সজ্জিত। ব্যতিক্রমী এই বিয়ের পার্টি চলছে ব্রুকলিনের একটি পার্টি হলে। নাচের আসর বসেছে। এখানে আজ দুজনে তাদের ভালবাসার সম্পর্ককে নতুন নাম দেয়ার জন্য একত্রিত হয়েছে।
ইশা ওর বাবা মার একমাত্র সন্তান। শিশুবয়স থেকে ও খুব শান্ত, মেধাবী। ছেলেদের সঙ্গ বেশী পছন্দ করে না। মায়ের সাথেই বেশী হৃদ্যতা। যখন ছোট ছিলো তখন থেকে ছেলেদের বেশী পছন্দ করতো না ইশা। মেয়েদের সাথে বন্ধুত্ব হয় বেশী। মেয়ে বন্ধুদের বাসায় যেতে ভালো লাগে। ও একটু ভিন্ন।
এলি কাকলি রুথ, আর্জেন্টিনার বুয়েনস আয়ার্সে জন্ম ওর। সেখানেই বেড়ে ওঠা। ও যখন স্কুলের শেষ ধাপে তখনই ওর বাবা মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। বিচ্ছেদের পর খুব মনমরা হয়ে বেড়ে উঠছিলো। মা পরে বিয়ে করলে সে পড়তে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় এর ডর্মে চলে যায়। ইশা ও এলি কাকলি এক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে চেনা জানা। দুইজনের বন্ধুত্ব হতে সময় লাগেনি। দেশ ছেড়ে বিদেশে এসে কতো বড় এক শূন্যতা আর হাহাকার ঘিরে থাকতো সারাক্ষণ এলি কাকলির। ইশার সাথে বন্ধুত্ব হয়ে ওর সব কিছুই যেন ভাল লাগতে শুরু করে।
একদিন ভিডিও কলে কথা বলছিলো এলি। হঠাৎ কেঁদে উঠলো। পাশেই ছিলো ইশা। পাশ থেকে ছুটে আসে ইশা।
– এলি কী হয়েছে?
– আমার মা, মা আর নাই।
– ওকে জড়িয়ে ধরে বুকের মধ্যে ইশা। সান্ত্বনা দেয়। মুখে তুলে খাইয়ে দেয়। এক অন্যরকম অনুভূতি হয়।
– সেদিন এলির ভেতরে ভেতরে প্রচণ্ড ভাঙাগড়া। এরপর যত দিন যায় প্রতিদিনই এক তীব্র চুম্বকের মতো আকর্ষণ অনুভব করে ইশার প্রতি। ইশা পাশে থাকলে সবকিছু আনন্দে ভরে ওঠে। ইশার মাঝে যেন সে তার স্বপ্নের অস্তিত্ব খুঁজে পায়। ইশাকে একদিন না দেখলে মন যেন ভরে ওঠে বিষাদে।
দুজনে একসাথে একদিন এক পার্টিতে যায়। সেদিনই ওরা দুজনেই আবিষ্কার করে ওরা দুজন ভিন্ন। অন্যদের মতো না। ঝড়ের গতিতে বদলে যায় জীবন।
এলি কাকলিকে প্রথম দেখার পর ইশার যে কেমন লেগেছিল তার মনে নেই এখন। তবে তারা দুজনেই তখন সিঙ্গেল ছিল। একে অন্যের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছিলো দিনে দিনে।
দুই নারী ইশা ও এলি কাকলি রুথের বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে। বাজি পোড়ে। সানাই বাজে।বিয়ের অনুষ্ঠানে ইশার পরণে লাল রঙের বেনারসি শাড়ি। হাত ভর্তি সোনার গহনা। দুহাতে ছিল মেহেদির কারুকাজ। অপরদিকে এলি কাকলির পরনে ছিল অফ হোয়াইট শেরওয়ানি। এলির চুল ছেলেদের মতো মোহাক ছাঁট। পুরো বিয়ের অনুষ্ঠান বাঙালি ঘরানার আয়োজনে হয়। যাতে পুরোপুরি বাঙালি আমেজ ছিলো। বাঙালি সংস্কৃতির প্রায় সবকিছুই ছিলো এই বিয়েতে। গায়ে হলুদ, মেহেদী। শুধু একটাই ব্যতিক্রম – বর বউ দুজনেই মেয়ে। আর দ্বিতীয় ব্যতিক্রম যা ছিলো তা হলো আমন্ত্রিত অতিথিরা প্রায় সকলেই ছিলেন সমপ্রেমী।
এই বিয়েতে খরচ করা হয়েছে প্রায় কয়েক কোটি টাকা। এর আগে নিউইয়র্ক সিটির ম্যারিজ রেজিস্টার অফিসে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতাও শেষ করছে ইশা ও এলি।
ইশাই প্রথম বাংলাদেশি আমেরিকান লেসবিয়ান নারী। যে কীনা জাঁকজমকের সাথে উত্তর আমেরিকায় আরেক লেসবিয়ান নারীর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে সেটিকে স্বীকৃতি দিতে কুণ্ঠিত হয়নি। ইশা এলির আনুষ্ঠানিক ও দাপ্তরিক বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে।
ইশা হক মুসলিম পরিবারের সন্তান। তার বাবা আর মা শিশু ইশাকে নিয়ে বাংলাদেশ থেকে এদেশে আসেন। তারা বসবাস করেন যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ডেকোটায়। ইশা ওয়াশিংটনের তারপর ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেছে। তারপর নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি নিয়েছে। এখানেই প্রথম এলির সাথে একই ডর্মে থেকেছে।
বর্তমানে নিউইয়র্ক সিটির ম্যানহাটনের একটি ল’ ফার্মে কাজ করছে। ইশা যাকে ভালবেসেছে সে— এলি। এই তরুণী একজন আর্জেন্টাইন।অডিওলজিতে গ্র্যাজুয়েশনের পর সে বর্তমানে কাজ করছে ম্যানহাটনের একটি অডিওলজিক্যাল সার্ভিস কোম্পানিতে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে মার্কিন তরুণী এলির সঙ্গে প্রথম দেখা হয় ইশার। একসাথে চলতে চলতে দুজনেই চুম্বকীয় সম্পর্ক অনুভব করে পরস্পর পরস্পরের প্রতি। কোন ছেলে তাদের ততো আকর্ষণ করতো না। এই ব্যতিক্রম বুঝতে কিছু সময় নেয় দু’জনে। কোন তাড়াহুড়া না করে দুজনে দীর্ঘ তিনবছর সময় নেয়।
ব্রুকলিনের একটি এপার্টমেন্টে একবার পার্টির আয়োজন করেছিলো ইশা। সেখানেই টেক্সাস থেকে এসেছিলো এলি। সে সময় তার মনে হয়েছে, এলি তাকে তার নিজের মধ্যে চুম্বকের মতো আকৃষ্ট করছে। তখন তার মনে হয়ে ছিল তার কাছেই নিজেকে সঁপে দেওয়া যায়। তখনো ইশা সিঙ্গেল ছিল। এলিও সিঙ্গেল ছিল। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে প্রেম-ভালোবাসা। ইশা নিজে যখন বুঝে যে তারা লেসবিয়ান এরপরও আরেকটি পার্টিতে এলিকে আমন্ত্রণ জানালো। এরা দুজনে দুজনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। দুজনে মনে করে দুজনেই মানবিক গুণসম্পন্ন। পার্টিতে সেই রাতে দুজন একসঙ্গে ছিলো।
এলির মনে হয়েছে ইশা খুবই মেধাবী। আর ইশার মনে হয়েছে এলি তারজন্য যথাযথ সঙ্গী। আরও গভীরভাবে দুজন দুজনকে পর্যবেক্ষণ করার পর সব দ্বিধা মুছে ফেলে একে অন্যের কাছে সমর্পন করে। দুজনে নিশ্চিত বুঝতে পারে যে তারা পরস্পর পরস্পরের সঙ্গী হিসেবে উত্তম। আর সে জন্য তারা একসাথে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। শেষপর্যন্ত দুজনে বিয়ে করলো। প্রায় তিনবছর একসাথে চলার পর ওরা সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়। এরপর সেই ভালোবাসা থেকেই আজ তাদের বিয়ে। এই আশা বুকে নিয়েই তারা বিবাহিত জীবন যাপন করার সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। সানাই বাজছে। আকাশে ভরা পূর্ণিমার চাঁদ। বিয়ারের গ্লাসে আইস কিউবগুলো ডুবেছ ভাসছে। কোথায় যেন শুধু বেসুরো রাগিনী বাজছে।
সম্পাদনা: জোবায়েন সন্ধি
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
শেষ থেকে শুরু। আমি রজকিনী রামী,ধোপার বংশে জন্ম আমার।ঘাটে সখিদের সঙ্গে কাপড় কাচি। একাজটা আমি…..
মালঞ্চার পথে ভোরবেলা। সূর্য সবে উঠছিল। বৈশালী দূর থেকে দেখতে পেল,বুনিয়াদপুর বাসস্ট্যান্ডে বালুরঘাটের দিকে মুখ…..
আমার বাবা ছিলেন অত্যন্ত সাহসী একজন লড়াকু মনের মানুষ।শত অভাব অভিযোগেও তাকে কোনোদিন ভেঙ্গে…..