দীর্ঘশ্বাস
ভালো নেই ভালো নেই ধূসর সন্ধ্যা বিষণ্ন বিকেল, চারিপাশ ভালো নেই কফির কাপ পথের ধুলো…..
সন্ধ্যের ভীমতাল। তরল পাহাড়ী ছায়া।
দিকভ্রমিত আমি।
উল্লফনে মায়া।
আমার ইষ্টযন্ত্রণার কাহিনী তোমার না শোনাই ভালো।
সেখানে প্রিয়তম
উজ্জ্বল কালো।
একেকটা সময়
নাগা হয়ে যাই। ধ্যানে সময়।
তবু যেন কী নেই–
আসলে-
মানুষ না হয়েই আমি বৈকুন্ঠ চাই।
এই এতো ভেঙে ফেলি সিঁড়ি
এতো গাছ
এতো ঝর্ণা
এতো আয়ু
এতো সর্বজনীন…
এখানে উহ্যে থামতে হয়।
ইষ্টযন্ত্রণার এই গুণ, একা একাই প্রেমময়।
সমতলে নামি রোজ। ওখানে একাকীত্ব নেই।
চোখের তারায়
চোখ না রাখি যদি
কিভাবে শুকায় ভেতরের নদী ?
এখানে
খেতে হয় বারবার নিজেকেই।
ইষ্টযন্ত্রণার কাহন তোমার না শোনাই ভালো।
স্বার্থের সূতিকাগার
মাঙ্গলিক অন্ধকার
পাহাড়ের ওপর থেকে দেখি
তোমার দেশ বড্ডো জমকালো। ভালো। খুব ভালো।
চেতনে উপসর্গ জমাট বাঁধলে
আমার নিঁদ – জাগরণ লয়।
প্রতিটা কালির মোচড়
সামনে এসে দাঁড়ায়।
জোর করে খসে যাওয়া কাপড়ের ফালির সাথে
লটকে মুখ
মলাটদুটো ফিসফিসে
‘– এবার?তোমার খাতার অস্তিত্ব কোথায়?’
মোষের পিঠে শুয়ে পেণ্ডুলাম কৈলুর ছেলেটা
কখনো জলায় কখনো জঙ্গলে কখনো খিদেয় কখনো ঘুমে
টাল খায়
গা থেকে খুঁটে খুঁটে পোকা এখানে ওখানে ছেটায়
ঠিক যেন – আমি।
আলসে – শত ছিন্ন – বন্ধ্যা জমি।
একটা কথা আমি খুব জানি। একদিন তুমিও কিনে নেবে চড়া দামে-
এ আলসেমি।
সেদিন শব্দদের
ছুঁয়ে দেখবে আলতো আঙুলে, নিজেকে আত্মস্থ করে
টেনে নেবে বারুদের ঘ্রাণ
বুঝে নেবে- ছায়া
কঠিন শ্বাস ফেলে খুঁজবে বিবর্ণ আয়নায়
‘– তুমি কোথায়?’
রাতে রেবতীকে খুঁজো। জায়গা ওখানেই।
উত্তরভাদ্রপদে এলেও- স্থান নেই।
তারই পাশে, ছায়াপথ ধরে
বিছিয়ে রাখবো
অনাসৃষ্টি যত
রাতজাগা সুরে
পড়ে নিও। এখন নয়- এখন তো সময়
ডুবে যাওয়া, ভেসে ওঠা তমসায়।
এখানে এক যাত্রায়
অহরহ পৃথক ফল ঘনায়।
চটকা ভাঙলো যখন-
দাঁড়াও, উড়ন্ত লেখাদের গুছিয়ে রাখি।
এ কাজে কি আর দেওয়া যায় ফাঁকি?
এ বছর প্রথম সেদিন বৃষ্টি হল-
আমরা কাঁচে দাগ গড়ানো দেখছিলাম। আমরা বলতে হয়,
আমি তোমায় দেখছিলাম।
মেঘ কুন্তলে ঢলে
চমক ছিটকে এলে
তুমি হাত বাড়িয়ে দিলে। প্রথম ছাঁটে বুক ভিজলো। দ্বিতীয়তে দৃষ্টি।
‘–চলো, আমরা ভিজি…’
গোড়ালি ডুবলো প্রতিবার। ছপ্ ছপ্। আমি কি অষ্টাদশী দেখেছি?
পেছন থেকে প্রতিবার গোছে
নিজেকে আটক রেখেছি।
দুরভিসন্ধি এতো কাছ থেকে বোঝা যায় না
চরিত্র সহজে ধরা দেয় না।
যতো না জল হল
তার থেকে কূট অন্ধকার
আমরা পার করলাম জল। সাঁতার।
চলো- এ জীবনটা একসাথে কাটাই
দিলাম তোমায় গোটা পুরুষের লজ্জা- আকাশ – বিশ্বাস
পুরোটাই।
এ আমার সমর্পণ
শরীর ডোবা মন।
যমুনার জল থেকে
প্রতিদিন তুলে রাখি
আধপোড়া কাঠ
যেদিন ডাঁই করে রাখা হবে তিন মন
একটা চিরকুট রেখে
দুম্ করে মরে যাব।
পড়লেই জানবে-
চিতার কাঠও কোথায় গুছিয়ে রেখে গিয়েছি।
মা বলত-
ভালো ছেলেরা
সবটাই সাজিয়ে গুছিয়ে রাখে।
বুকের ভেতর থেকে বুকটা বেরিয়ে সোজা
ঢুকে গেল তোমার ঘরে-
উঠোনের ওপারে।
ওখানে যেতে ওর এতদিন মানা ছিল না, ওখানে যে এ জন্মেই ওকে যেতে হবে আবার এটাই বোঝা ছিল না। যদি না বোকা ছাওয়ালডার চিৎকার—
ঝুমঝুম বেজে ওঠে শজারুর কাঁটা। ওগুলো কাঁটা হয় মেঘেরও।
এলো হয়ে জুড়ে রাখে ফর্সা কোমল পিঠ দুপুরের মিঠে রোদ
দাঁত খুঁচে নিতে নিতে সামলানো।
কাঁঠাল তলায় বসে বাংলার নির্যাসে ঝুমঝুম মনে আঁকি ছবি।
থুঃ করে সামনে ঝুঁকে ঊর্মীর উল্লাস বুকে, কোথায় লাগে নৌকো, চন্দ্রা, রবি?
তখন ইচ্ছেটা সমুদ্দুর,
কেন একবার চোখের ইশারা আমায় ওঘরে ডাকে না, মদের বাস অসহ্য নিঃশ্বাস, ওতে কি মদ্দ পুরুষ থাকে না?
আরো কতো গৎবাঁধা রাতে হুড়কো পাথর কঠিন
যতই বেদম হোক না কেন পুরুষের আসে কিন্তু দিন!
সব সয়- অপমান মৃত্যুরও বাড়া
সোহাগে নুড়ো জ্বেলে দিয়ে খুলে নেব বিরক্ত গাঁঠছড়া।
কে ফিরবে আর এখানে যেখানে শরীর জ্বলে না, কে গাইবে গান যেখানে দোয়েল শিস চেনে না!!
সেই ফেরা ফেরারী মন দশ দুয়ারী গুছিয়ে অগোছালো রাখা
উঠোনের পার থেকে চোখ দেখলো বেঁকে সেইবার সেই শেষ দেখা।
বাপজান– তুই এলি, আয় এই ঘরের ভেতর, দেখে নে শেষবার অভাগী মা আমার শুয়ে আছে কেমন নিথর।
বুকের ভেতর থেকে বুকটা বেরিয়ে সোজা
ঢুকে গেল তোমার ঘরে-
উঠোনের ওপারে।
মানা তো ছিল না, তবু-
সবাই কী সাহস করে ঘরে ঢুকতে পারে?
ভালো নেই ভালো নেই ধূসর সন্ধ্যা বিষণ্ন বিকেল, চারিপাশ ভালো নেই কফির কাপ পথের ধুলো…..
প্রেমের কবিতা যা কিছু পাষাণ, মনে হয় আঁশ বটিতে কুচি-কুচি করে কাটি পালানো ঘাতক সময়…..
তর্জমা স্নানে শুচি হবার পর বেকসুর সন্ধ্যাগুলো শুধুমাত্র নিজস্ব অন্ধকারের নিচে দোলনাচেয়ারে ছড়িয়ে বসা কিছুটা…..
হয়তো একদিন অস্তিত্বে খুঁজে আত্মপরিচয় নিভৃতে অপেক্ষার প্রহরে এ মন ভালোবাসার রূপালী আলোয় রাঙা মুখ…..