সম্পর্ক

ফারজানা নীলা
গল্প
Bengali
সম্পর্ক

দেখা করলে কি হবে? হয়তো অনেক কিছু হবে, যেমনটা গল্পে নাটকে হয়। কিছুক্ষণ শারীরিক মিলন এরপর হতাশা আর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে প্রত্যাবর্তন।

হাসান তাকিয়ে আছে রুপার দিকে। রুপা খামছে ধরল হাসানের পিঠ। অনেকক্ষণ বাদে রুপার হাত ক্লান্তিতে খসে পড়ল হাসানের পিঠ থেকে।

সকালে দুটো গাড়ি তাদের দুজনকে নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছে। একজন যাবে উত্তরা আরেকজন যাবে চিটাং। রুপার যেতে কষ্ট হচ্ছিল। এই মানুষটাকে সে ভালোবেসে গেছে ১৫ বছর ধরে। যে ভালোবাসার কোন পরিণয় ছিল না। অথবা কে জানে পরিণয় তারা চায়ও নি। পরিণয় কি? বিয়ে? সন্তান? সংসার? কে বলেছে? সে তো বিয়ে করেছে, ভালবেসেই। তার আর তার স্বামীর সম্পর্ক পরিণয় পেয়েছে। সে অসুখী নয়। প্রথম প্রথম হাসানকে না পাওয়ার কষ্ট খুব জ্বালাত। অমূলক জ্বলুনি। সে তো জানতই হাসান তার কাছে আসতে পারবে না। সেও যেতে পারবে না। তবুও  এক  নাম না জানা যন্ত্রণা মাঝে মাঝেই রুপাকে পিষে ফেলত। সময়ের বন্যায় সে  যন্ত্রণা অনেকখানি লাঘব হয়। ভালোবাসাটা জেগে না থাকলেও ঘুমন্ত অবস্থায় বহাল তবিয়তে আছে।

শিল্পী: রিয়া দাস

হাসাণের বদভ্যাস সে নারীবিলাসী, এ জীবনে সে কতজনের সাথে শুয়েছে সে নিজেও গোনতে পারবে না। চমৎকার অসাধারণ থেকে যেনতেন সবই তার শয্যাসঙ্গি। শুধু শারীরিক আকর্ষন। শুধু শারীরিক তৃপ্তি। মানসিক আকর্ষণের গল্প শুধু সে শুনেই এসেছে। কখন অনুভব করা হয় নি। কেন যে হয় নি এ এক বিরাট রহস্য মনে হয় হাসানের কাছে। নারী শরীর এত চমৎকার লাগে তার নারী মন কেন চায় না? কেন ইচ্ছে করলো না কারো দিকে মন ভরে তাকাতে। কেন ইচ্ছে করলো না কারো কোলে মাথা রেখে ঘুমাতে। কেন ইচ্ছে করলো না কারো জন্য এক তোড়া বেলী কিনতে। অথবা কাউকে দেখে কেন বুকের ভেতর মোচড় লাগে না। কেন অস্থির লাগে না অনেকক্ষণ অনেকদিন না দেখলে। কেন তাঁকে কষ্ট দিয়ে নিজে কষ্ট পাই না। কেন তার  ঠোঁটের কোণায় এক চুমুক হাসি দেখার জন্য  আকুল হই না। কেন তাঁকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে রাতে ঘুম ভাঙ্গে না। কেন কারো জন্য কাঁদি না। কেন হাহাকার জাগে না, কেন সুখে ভরে না মন?

২.

চল, যাবে আমার সাথে?

না

ভয় পাও?

আপনাকে? মোটেও না।

কেন না?

পাই না।

পাওয়া উচিত। আমি ভদ্র না। চরিত্রহীন বলতে পারো।

কেন আপনি চরিত্রহীন?

আমার অনেক প্রেমিকা।

তাতে?

এই তথ্য ভয় পাওয়ার জন্য যথেষ্ট।

আমি যেতে চাই না আপনার সাথে। অন্য কারণে।

কী?

বলে ফেললে যেতেই হবে।

সেদিন যায় নি রুপা হাসানের সাথে। তার বার বার মনে হয়েছে সে যদি আজ যায় তবে সেও হয়ে যাবে হাসানের একটি প্রেমিকা। শুধুই প্রেমিকা। সে প্রেমিকা হতে চায় না। সে ভালবাসতে চায়। ভালোবাসাতে চায়। ১৫ বছর আগে সেদিন কফি লাউঞ্ছ থেকে বের হতে রুপার পা কেঁপে যাচ্ছিল, বুক মুষড়ে যাচ্ছিল। তবু সে সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে নেমে আসে ধীরে। একবার পিছনে ফেরার ইচ্ছে এতই প্রবল ছিল সারাপথ সে পাথরের মত থমকে ছিল, সারা রাস্তা, সারা প্লেনের ভাসমান রাস্তা, ভিন দেশে নেমে ভিন রাস্তা পার হয়ে যখন সে একটি বাসা পায় দরজা আটকিয়ে তারস্বরে চিৎকার করে উঠে। বুক ফেটে কেঁদে উঠে। নীরব আহাজারি।

দীর্ঘ ১৫ বছর পর রুপা নিজ থেকে যোগাযোগ করছে হাসানের সাথে। দেশে  ফিরে এসেও ৩ বছর সে দাঁতে দাঁত চেপে অপেক্ষা করেছে। কীসের অপেক্ষা সে জানে না। শুধু মনে হত এখন না এখন না। শুধু নিশ্চিত ছিল হাসান তাঁকে চিনতে পারবে। ১৫ বছর যাদের সাথে কোনরকম যোগাযোগ ছিল না এমন কি ফেসবুকেও নেই তারা একসাথে।

দীর্ঘ নীরব রাতে হাসানের ঘুম ভাঙ্গে কর্কশ ফোনের আওয়াজে। রিসিভ করে বিরক্তি নিয়ে।

আমি রুপা

মাঝখানের কুঁচকে যাওয়া কপালের ভাঁজ আচানক সোজা হয়ে যায় হাসানের। কিছু নীরব নিথর সময় বয়ে যায় দু ফোনের দু পাশে।

কেমন আছ?

আপনাকে দেখতে ইচ্ছে করছে।

চিনতে পারবে?

পেরেছেন তো আপনি।

আসো।

হাসান বুড়িয়ে গেছে অনেক। বুড়িয়ে সেও গেছে। তবু হাসানের বয়সের ছাপ বেশি চোখে পড়ে। চুল তার এখনো আগের মতই আছে ঘন। চোখ এখনো গভীর। যেন ভেতরে দৃষ্টি দেয়। শুধু চোখের নীচে কালশিটে দাগ। তারা মুখে কিছুই  বলেনি তেমন। শুধু একে অপরকে দেখেছে অনেকক্ষণ নীরবে। এরপর মিশে গেছে দুজনের সাথে দুজন।

সময় শেষে বিদায় নেয় একে অপরের থেকে খানিক হেসে। আবার দেখা হবে এমন কোনো আশ্বাস বাণী কেউ কাউকে দেয় না।

রুপা চলে যায় হাসান কিছুক্ষণ হোটেল রুমে বসে থাকে একা। হাতে সিগারেট, সাইড টেবিলের’ হুইস্কি।

এতো নারী সঙ্গ পেয়েও যা কোনদিন পায় নি হাসান আজ তা সে পেয়েছে। তৃপ্তি, মানসিক তৃপ্তি। শরীর তো জাগেই শরীরের নিয়মে। মন জাগে না, জাগানো যায় না জোর করে। আজ জেগেছে। আজ শুধু তাকে দেখেই বিষণ্ণ এক যন্ত্রণা বোধ করেছে। কেমন যেন শুন্য নিঃস্ব মনে হয়েছে নিজেকে তার সামনে। যখন সে বুকে মাথা রেখেছিল কোত্থেকে যেন একটা শান্তি শান্তি ভাব সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এতটা ভরাট লাগে নি তার বুক এর আগে। সুখের অনুভূতি এত সুন্দর হয় জানা ছিল না আগে। হাসান বুঝতেই পারে না বুকে যখন রুপা ছিল চোখে তখন তার জল ছিল।

ফারজানা নীলা। গল্পকার, নারী ও প্রাণি সংরক্ষণ অধিকারকর্মী।  

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

বালির বেহালা

বালির বেহালা

বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..

তদন্ত

তদন্ত

  এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..