প্রেম এবং অপ্রেমের কাব্য
এ-এক প্রেমের শহর, এ-এক প্রেমের শহর, এখানকার বাতাস প্রেমের সৌরভ বয়ে আনে। হাজারো প্রেমের কলি…..
অনেকদিন পরে হরিণের দল হাভেলীতে এলো, সবাইকে চিনতে পারি নি। কেউ টি-শার্ট আর জিন্স প্যান্ট, কেউ ট্রাউজার্স, কারোর ছিল মিনি স্কার্ট! সঙ্গে এনেছিল শপিংমলের গল্পকথা। স্ন্যাক্সস, বহুবিধ আহার, বোতল বোতল রাম আর ভদকা। সবাইকে নিয়েই শুরু হলো আমাদের সান্ধ্যকালীন আড্ডা। ধীরে ধীরে ভীড় যখন বাড়তে লাগলো, একটা সুনয়না হরিণী ইঙ্গিতে দেখালো দূরে পরিত্যক্ত অন্ধকার, একাকী রাত্রির নির্জনতা!
মিনিস্কার্ট সেই হরিণী আমাকে টেনে নিয়ে গেলো অশেষ ঝোপে, আমাকে স্পর্শ করে দেখাতে লাগলো চাঁদ আর নক্ষত্রের সুগন্ধি স্কেচ। সে বলতে থাকলো, – দ্যাখো, ওই দূরে ঝুলে আছে পৃথিবীর মৃগনাভি, পারফিউমের ধোঁয়া, অবতল শরীরের সময়যাপন! অনেক কিছুই বলছিল সে। চাঁদের আলোয় কয়েক টুকরো কুচি ঘাস দাঁতে কাটতে কাটতে একসময় সে খুলে ফেললো তার আবরণ, টি-শার্ট আর মিনি স্কার্ট। আমার সামনে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো ফসফরাসের আগুন!
দুই
তখন সবেমাত্র শুরু হয়েছে রাত্রিকালীন বর্ষবিদায় – নিউইয়ার পার্টি। চাঁদের আলোয় সমস্ত হরিণেরা পান করেছিলো জঙ্গলের স্বাস্থ্য, উগরে দিচ্ছিলো বনসমাজের উদ্বেগকথা। তখন তাদের আসরে ছুটতে ছুটতে ঢুকলো যে হরিণটি, ভয়ে সে কাঁপছে! সে এই মাত্র বাঘের থাবার থেকে বেঁচে গেছে – দূরে কোথাও জান্তব আর্তনাদ!
ধূসর অন্ধকার গাছে লটকানো হ্যাপি-নিউইয়ার লেখা ফেস্টুনে ছিটকে পড়লো কাশ্মীরের তান্ডব থেকে উড়ে আসা রক্ত! বরানগরের গনহত্যার শব্দে আচমকাই ছিঁড়ে গেলো অন্ধকারে টানানো নিউইয়ার ফেস্টুনের দড়ি। দূর থেকে ভেসে আসতে লাগলো আরো অসংখ্য হরিণদের পায়ের শব্দ, তাদের খুরের একটানা অস্থিরতা, আসামের জাতিদাঙ্গার ভীত সন্ত্রস্ত কোলাহল!
নিউইয়ারের ভোজনের সুগন্ধ তখন নাকে, হাতে পান পাত্র। নিউ ইয়র্কের বোমা বিস্ফোরণের যে প্রচন্ড শব্দ, তারই তরঙ্গে কয়েকদলা ঝলসানো মাংস। কতগুলো হিংস্র বাঘ ঝাপিয়ে পড়লো হরিণের সমাবেশে। সে রাতে হরিণসভায় বর্ষবিদায়ের পার্টি গেল ভেঙ্গে! থাক থাক রক্ত! লতা পাতা খাদ্য পানীয় পড়ে রইলো আসরে। যে সব হরিণেরা রক্তাক্ত হয় নি , তারা ছুটতে লাগলো অন্ধকার জঙ্গলে, নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। সেই রাতে ওরা নতুন বছরে পৌঁছুতে পারলো না, কারণ ওদের রুখে দাঁড়ানোর শক্তি ছিল না!
তিন
কেউ তাদের পৃথিবীর গল্প শুনিয়েছিলো। তাই আহত আর মৃত হরিণ হরিণীরা এখানে জল খেতে আসে। সময়ের শরীরে ব্যাধ তাড়িত তীব্র গতি। অথচ নিজস্ব সভ্যতা বা মানুষদের চক্রান্তে মৃগনয়নের যাবতীয় সরলতা স্কাই স্ক্র্যাপারের নীচে চাপা। হরিণদের হৃৎপিন্ড থেকে খুলে নেয়া হয়েছে তন্তু, তাকে পরানো হয়েছে ব্রান্ডেড পোষাক। বনজ গন্ধের বদলে সেখানে জ্বলে হ্যালোজেন, ডায়োডের আলোকিত ঘ্রাণ। ডায়নামোর শব্দ। নার্সিং হোমের দৌলতে হরিণদের শরীরে ঢুকে আছে অদ্ভুত জেব্রা, ধূর্ত শেয়ালদের জিন। কেউ কেউ ঘুরে বেড়ায় দাঁত বের করা হায়েনার মতো, কারো কারো মুখগহ্বরে মাংসাশী নিঃশ্বাস। শকুন্তলার সঙ্গী বনবিহারিণী হরিণশাবকেরা ভুলে গেছে পাতা আর ঘাসের রঙ, তারাও দলে দলে বেরিয়ে পড়েছে মাংসের খোঁজে। পৃথিবীর তাড়িত আত্মারাই এসময়ের মাংসাশী হরিণ!
চার
বেশীর ভাগ মানুষদেরই মৃত্যু হয়েছে এখানে। তবু মৃত হরিণেরা মিউনিসিপ্যালিটির
জল খেতে শহরে আসে। রেলস্টেশন থেকে পিল পিল করে বেরিয়ে আসে মৃত
মানুষদের বাদামী পোষাক, শরীরময় বাতিল নোটের সাদা সাদা জলছাপ, মাথার
শিংগুলো বাঁকানো। বাঁচবার কি এক অসম্ভব প্রতিযোগিতা, সবুজ পরিবেশ ছেড়ে
সমস্ত হরিণেরা এখানে উদ্বাস্তু, ঘুরে বেড়াচ্ছে রাস্তায়, ঘাপটি মেরে পড়ে আছে
সভ্যতার আনাচে কানাচে। এখানকার বাড়ীগুলোর নাম খোঁয়াড়। কয়েকটা হরিণ
বিপদজনক চক্রযান আর দূষিত ধোঁয়ার তাড়নায় কান নেড়ে ফেস্টুন ওড়াচ্ছে।
পরিক্রমা করছে জীবন্মৃত শহর। সভ্যতা তাড়িত সময়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রিত রাস্তা।
মৃত হরিণদের পাশে রেখে এখন হেঁটে যাচ্ছে কয়েকটা মাত্র বিবেক। কাঁধে তাদের
পরিবেশ, হাতে তাদের জীবন্মৃত প্লাকার্ড, তাতে লেখা ‘সময়কথা হরিণকথা’!
পাঁচ
আমার গবেষণার বিষয় ছিল নীল বাঘেদের সমাজে হরিণদের সহাবস্থানমূলক জীবনযাপন। এ জন্যে দীর্ঘকাল আমি ম্যানেজমেন্টের ক্লাস করেছি। পৃথিবীতে হরিণেরা কি করে প্রতিবাদহীন নগর জঙ্গলে বেঁচে বর্তে থাকে, কি করে জাহাজে যথেষ্ট মৃগনাভির জোগান দেয়া যায়, কি করে অরণ্যচারী জীবনকে সহজেই থাবার মধ্যে নিয়ে আসা যায় – এসব নিয়ে আমি অনেক পড়াশুনাও করেছি। আমি চাকুরী করতাম নীল বাঘেদের একটা প্রোজেক্টে। বাঘেদের দাঁত নখ ক্ষুধা হিংস্রতা ইত্যাদি থাকলেও আধুনিক অঞ্চলে তারা স্যুট টাই আর মুখোশ পরে ঘুরে বেড়ায়। তাই ভয়ে ভয়ে থাকলেও, নীল বাঘেদের সঙ্গে মেলা মেশা আমি শিখে গেছি। আমাদের প্রোজেক্টের আরো একটা বিষয় ছিল সাপ্লাই আর ডিমান্ড; যাতে করে হরিণের সংখ্যা হঠাৎ কমে না যায়, অথচ স্লটারহাউজ়ের সামনে সকাল থেকেই কি ভীড়। এখানকার হরিণদের যেসব হাসপাতাল, সেখানে মালিকেরাও সব শ্বাপদ প্রজাতির, তারা নীল কিংবা সাদা বাঘ।
ব্যাঘ্রসমাজে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতায় নীল বাঘেরা যাতে টিকে থাকে, অন্যান্য প্রজাতির বাঘেরা যাতে গুহা ছেড়ে বেশী বেরিয়ে আসবার সু্যোগ না পায়, আমাকে সেজন্যেও গবেষনা করতে হয়েছে।
আমার কর্মস্থলে প্রত্যেকদিন যেসব হরিণ হরিণীদের আমি দেখি, তারা পায়ে হেঁটে যায়, তারা সাইকেল চালায়, তাদের আমি জানাই নি আমার পেশা আর গবেষণার কথা। অথচ তারা আমার ব্যাপার স্যাপার খুব বোঝে, আমাকে সন্দেহের চোখে দেখে, আমাকে ভয়ও পায়। জঙ্গলের পাশেই আমার নিজস্ব হাভেলী। আমার ‘হরিণসমাজ ও নীল বাঘ প্রকল্প’র প্রাচীরে অপমানিত হরিণেরা রাতের অন্ধকারে চুপি চুপি আসে, তাদের শিং-এ আলকাতরা চুবিয়ে দেয়ালে লিখে রাখে পশুজীবনের মুক্তিকামী শ্লোগান।
এ-এক প্রেমের শহর, এ-এক প্রেমের শহর, এখানকার বাতাস প্রেমের সৌরভ বয়ে আনে। হাজারো প্রেমের কলি…..
পতাকায় মিশে যায় ফেলানির নাম উড়তে থাকে কাঁটাতারে; মানুষের মনে জমে পুঞ্জিভূত ক্ষোভ বিকল্প মেঘের…..
প্রেমিক হয়তোবা তাকে আমি গড়তে পারতাম তার বুকের ভিতর এপাশ থেকে ওপাশে উল্টে নতুন একটা…..
চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..