দৌড়
একবার এক দৌড় প্রতিযোগিতায় কেনিয়ার হয়ে দৌড়চ্ছিলেন আবেল মুতাই। খুবই ভালো দৌড়াচ্ছিলেন তিনি। সবাইকে পেছনে…..
বসন্ত আসে, সেই সাথে উজ্জ্বল পাতা, রঙিন ফুল, মৌমাছির গুঞ্জন, প্রজাপতির সাথে সবুজ হয় প্রকৃতি। বসন্তের তাজা বাতাস এবং রোদ মনে আনে সুখ, প্রেরণা। সৃজনশীল চিন্তাভাবনার প্রশস্ত হয় মানুষের চলার পথ। প্রকৃতি যখন শরৎ ডাকে, সেই সময় উষ্ণতা ছেড়ে ঠাণ্ডা হতে শুরু করে আবহাওয়া। অনেক গাছপালা খাদ্য তৈরি করা বন্ধ করে দেয় এবং পর্ণমোচী গাছগুলি তাদের পাতা ঝরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। পাতা ঝরে পড়ার আগে সবুজ থেকে লাল হয়, তারপর হয় কমলা হলুদ বা বাদামি। ঝরে পড়া শীর্ণ পাতা মনে টেনে আনে বিষাদ, স্মরণ করিয়ে দেয় শেষ যাত্রার সময়কালের কথা। এসবই তো প্রকৃতির নিয়ম, প্রকৃতির সাথে মানুষ হয়ে জন্মানোর পরিবর্তনের সহজাত প্রবৃত্তি।
প্রকৃতি বলি আর সময়, যে কোন ভাবেই মানুষের মনের চিন্তাভাবনা পরিবর্তিত হয়। পশুদের কি হয়? বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা ভিন্ন হলেও আমরা সাধারণ মানুষেরা বিশ্বাস করি যে, আমাদের সৃষ্টিকর্তা রয়েছে। এবং আমাদের ছাড়াও তিনি পৃথিবীতে হাজারো প্রাণী সৃষ্টি করেছেন। মানুষের মতই তাদের চোখ, হাত-পা, নাক, কান সবই দিয়েছেন। যা দেননি, তা হল- হৃদয় আর বিবেক। এখানেই পশু আর মানুষের মাঝে পার্থক্য।
বিবেক কি মানুষের সকল ঘাটতি বা শূন্যতা পূরণ করতে পারে? সময়, ঘটনা ও পরিস্থিতির প্রয়োজনে মানুষ যখন বিবেকশূন্য হয়ে পড়ে, তখন তাকে কি পশু বলা ঠিক হবে?
এই যে রোজ মানুষটার কথা ভেবে ভেবে সুখময় মুহূর্তটুকু কাটানো, সারাক্ষণ অপেক্ষায় থেকে শেষ হবার আগেই উতলা হয়ে উঠা, কখন দেখা মিলবে, কথা হবে… এই যে ঘোর লাগা এক সম্মোহন সরলার মনের, এ সবই তো স্বার্থান্বেষী লক্ষণ। এসবি লিপ্সা—কিছু পাবার, কাছে যাবার লিপ্সা।
অথচ মানুষটার নিজেরও আছে একটা নিজস্ব জগত। সে জগতে আছে তার সব রকমের আরায়দায়ক ব্যবস্থা- একটি বিছানা, পাশে কারো জন্য সুগন্ধিমাখা একটি বালিশ! আছে নিজ পছন্দমত বাদ্যযন্ত্রের পাশাপাশি একটি খুপরি ঘর, যেখানে থরেথরে সাজানো তার সুখ, দুঃখ, শোক, ক্ষোভ, শখ, স্বপ্ন।
কোন এক বিজ্ঞ পণ্ডিত ফুঁসে উঠে জানতে চাইতে পারেন, “দুঃখ, শোক, ক্ষোভ আবার আরামদায়ক হয় কী করে বাপু?”
হ্যাঁ হয়তো। যা ভোগ করা হয়, উপলদ্ধি করা হয়, অনুভব করে মন খুশি হয়, শান্ত হয়, তাই আরাম! তাই তো নিজের।
এমনই কত কথা ভেবে ভেবে মানুষটাকে ছুঁড়ে ফেলতে চেয়েছে সরলা মন থেকে। হয়ে উঠেনি। কেনো এতো ভালো লাগে মানুষটাকে? কেনো মন উতলা হয় একবার শুধু গা ঘেঁষে বসে তার পুরুশালী ভরাট কণ্ঠে কিছু শোনার, গায়ের গন্ধ শুঁকে নিয়ে তৃপ্ত হবার! কেনো সরলার স্বপ্নে আসে সে বার বার বাহুডোরে জড়িয়ে ধরে কেন কপালে রেখে যায় মায়াভরা চুমু!
ভেবে ভেবে হয়রান হয় সরলার মন। কোন উত্তর পাওয়া হয় না। তবু সরলা মানুষটাকে ছেড়ে যায় না। ঘাপটি মেরে পোষা বিড়ালটির মতো পিছু পিছু ছুটে। কা কা করে কাকের মতো ডেকে যায় বেলা অবেলায়। মানুষটা হাসে, সব বুঝে সে তবু অবজ্ঞা করে যায়।
আসলেই কী অবজ্ঞা? নাকি দূর্বল হয়ে পড়ার ভয়ে উপেক্ষা করে যাওয়া?
আর দুর্বল হলে ক্ষতিই বা কী! পৃথিবীর এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে কতটাই বা ক্ষতি করা যায়!
তাছাড়া সরলা ঠিক জানে তার সীমাবদ্ধতা। নাটাইবিহীন ঘুড়ি কত দূরই বা উড়তে পারে? ধপাস করে পড়ে যাবার কারণটুকু যে থেকে যায়। মই-তে কদম ফেলতে না পারা মানুষ আকাশের চাঁদ ছোঁয় কী করে! এ যে অবান্তর কিছু বেহুদা ভাবনা। তাছাড়া অসময়ের দাবী পুরোটাই তো ত্রুটিযুক্ত, যুক্তিহীন। এখানে নিজ আবেগীয় দর্শন যুক্ত করা যায়, তবে তাতে যুক্তির বৌদ্ধিক প্রতিবিম্ব অস্পষ্টই থেকে যায়।
মন সে তো এক বিভ্রান্তিকর ধারণা। এই মনের অস্তিত্ব নিয়ে কত মনোবিজ্ঞানী, গবেষক, বিজ্ঞানীরাই না সুতো টানাটানি করে গেছেন। এই মন নিয়ে সবচেয়ে বেশি খেলে গেছেন ফ্রয়েড। তাঁর মনস্তাত্ত্বিক প্রকল্প ও পদ্ধতিগুলোর পেছনে যুক্তি ছিল বেশ। তিনি মনে করতেন, মানুষের মন প্রচণ্ডভাবে গতিশীল এবং এই ‘মন’ নামক মানবিক উপাদানটি সহজাত প্রবৃত্তির, তাড়না, বিরোধ, গূঢ়ৈষা, অবদমন ইত্যাদির মতো কিছু ইচ্ছামূলক ক্রিয়া দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
মূলত মানুষের অপূর্ণ ইচ্ছাগুলির জন্যই মানুষ অতৃপ্ত হয়। আর সেই অতৃপ্তি ও ইচ্ছাগুলোই অচেতন স্তর থেকে স্বপ্নে পরিণত হয়। মানুষ স্বপ্নের মাধ্যমেই অপূর্ণ ইচ্ছাগুলো পূরণ করতে চায়। তাও ঠিক আছে। কিন্তু এই ইচ্ছা পূরণে বাস্তবিক চরিত্রের কোন উপস্থিতি থাকে না। স্বপ্নবেষ্টিত মানুষই কেবল স্বপ্নের চরিত্রে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে উপস্থিত হয়, যেখানে থাকে মানুষের অচেতন ও অবচেতন মন দ্বারা সৃষ্ট কিছু প্রতীক।
অচেতন মন কেবল আমাদের জাগ্রত চেতনার বাইরে অর্থাৎ আমাদের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণের বাইরেই থাকে, যার কোনো জ্ঞান ক্ষমতা বা কার্য সম্পাদনা করার সক্ষমতাই নেই। আর জেগে থেকে আমাদের যে ভাবনা, তাই সয়ংক্রিয়ভাবে অবচেতন মনে কাজ করে যায়। তবু মানুষ স্বপ্ন দেখে, হোক জাগ্রত ভাবনায় কিংবা বোধহীন ভাবনায়। এই নিয়েই তো বাঁচা। কিছু একটা নিয়ে বাঁচা।
কোন কোন রাতে সরলা ঘুমের সাথে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। ঘুম পালিয়ে যায় স্পর্শের আড়ালে, যেমন করে মানুষ পালায় নিজ আয়নায় প্রতিবিম্ব দেখার ভয়ে। এমনই বিচ্ছিন্ন নির্ঘুম রাতে অবচেতন মনে কোন কল্পমানুষ খুঁজে ফিরে তার ভালবাসা! পথে যেতে যেতে জানতে চায়, কই! কই আমার প্রাণ?
সরলা বলে তাকে, মনের ভিতর। খোঁজে দেখুন।
তিনি বলেন, কই খুঁজে পাই না যে!
ভাল করে খুঁজে দেখুন। ওখানেই আছে প্রাণ!
কল্পমানুষটা বলেন, দেখো! ওখানে কেবল অন্ধকার!
সরলা বলে, আপনার প্রাণ কি বোকা? অন্ধকারে কেমন করে বাতি জ্বালাতে হয়, তা কি জানা নেই?
বলেন তিনি, হয়তো। কিংবা আমিই বোকা, অন্ধকার করে রাখি সব।
সরলা বলে, অন্ধকারও একটা আলাদা জগত। রঙহীন। এখানে আর কেউ নেই অন্ধকার ছাড়া। শুধু নিজে একা। একা থাকাও উপভোগের। স্বাধীনতার। যা খুশি করা যায়। কেউ দেখে না বুকের কাঁপন, কেউ জানে না বুকের দহন! মন্দ না কিন্তু! তবু! আপনার প্রাণকে শিখিয়ে দিব কেমন করে অন্ধকারেও খপ করে, শূন্যতাকে বুকে জড়িয়ে ধরা যায়।
তিনি হেসে এড়িয়ে যান। বলেন, ভাল বলেছেন। একটু গুছিয়ে বললেই কবিতা হয়ে যেতো।
সরলা আবারও হাসে। বলে, জীবনটাই যার অগোছালো, সে কি করে শব্দ গুছায়?
তাই তো!
সব কথা কি কাব্যিক হয়? কিংবা সব কাব্যই কি কথা বলে?
তিনি বলেন, কী জানি!
কল্পলোকে সরলা তার কানে কানে বলে, যদি বলা যেত, তবে হয়তো আঁধারের কানে কানে ফিসফিস করে শব্দেরা আজ জানতে চাইতো- ‘হে আঁধারের মানুষ! তোমার জন্য কেন মন পুড়ে আমার?’
কত কথা যে হয় মানুষটার সাথে তার! কত খুনসুটি দিনরাত।
সরলা ভাবে, আচ্ছা! মানুষটা কি তাকে তার মত করে কখনো ভাবে? নাকি শুধুই রেখে যাচ্ছে মায়ার আঁচড়ে কিছু স্মৃতিময় মুহূর্ত, কিছু একটা যার কোন নাম নেই, অস্তিত্ব নেই! কে জানে! কারো মন নিয়ে ভাবাও দুরূহ ব্যাপার।
পিথাগোরাস উপপাদ্য আয়ত্বে নেই যার, সে কী করে অজ্ঞাত মানুষটার মন নিয়ে খেলে! কিছুই তো লেপটে থাকে না, মিশে যায় সব মাটির সাথে যেমন দেহ, দেহের সাথে লোহা-ম্যাঙ্গানিজ সংকর ধাতু। এমন করে-ই মিশে যাবে মানুষটাকে নিয়ে সরলার ভাবনাগুলোও একদিন। হয়তো সে মানুষটা জেনেও কিছুই জানবে না।
একবার এক দৌড় প্রতিযোগিতায় কেনিয়ার হয়ে দৌড়চ্ছিলেন আবেল মুতাই। খুবই ভালো দৌড়াচ্ছিলেন তিনি। সবাইকে পেছনে…..
সকালে উঠে মায়ের মমতামাখা মুড়ি ও লিকার চা খেতাম। তারপর দাদু বলতেন, এবার পড়তে বোস।…..
রোজকার সূর্য ওঠার মত বেলি ভোরে উঠে দরজায় সামনে জল দেয়,ঝাঁট দেয়, ফুল তোলে। তারপর…..
একটি সুপ্রতিষ্ঠিত কর্পোরেট অফিসের চাকরির ইন্টারভিউয়ে জটিল একটি প্রশ্ন করা হলো। প্রশ্নটি হচ্ছে –…..