সরোয়ারে কায়েনাতের ন’টি কবিতা

সরোয়ারে কায়েনাত
কবিতা
Bengali
সরোয়ারে কায়েনাতের ন’টি কবিতা

ধ্বনি

কি করে বলি;সৌন্দর্যের ধারাবাহিকতায়
উন্মাতাল হাওয়া যে ধরতে জানিনা,
না বলি মিথ্যাময় জয়ের অনুবেদনা।
সুবোধ তবুও বলে; লিখছোনা কেন?

মৃত্যুর আগেও সহস্র আবেগ নিহত হয়,
বিপ্রসন্ন অন্ধকারে জেগে ওঠে গভীর অন্ধকার!
রৌদ্রের চিৎকারে জাগে সূর্যের অনলবাদ!
বিপ্লবী চরণ কতটুকু আর হাঁটে মিনতিবাদী পথে?

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হবে কি সৌহার্দ্য ধ্বনি!
শাশ্বত কান্নার ভাঁজে লুকিয়ে আছে
বিকাশীকালের মহারাগ,জানি।

 

দীপ্তিময় পথ

দিয়াশলাই কাঠির বাক্সে একদিকে বারুদ
দেখে মনে হয়;সাজানো যেতে পারে..
চিন্তার ঔদার্যতা
সাধনার ব্যাপকতা
মানবিক সম্পূর্ণতা
অগণন ভালোবাসার মোম।

জিঘাংসা পুড়িয়ে দেয়া যায়,
উত্তাপে ভরিয়ে দেয়া যায় দীনতা,
প্রদীপ জ্বালিয়ে দেয়া যায় বোধের শিখায়।

কাঠি জ্বেলে জ্বেলে রাতের অন্ধকার পার হলে
নতুন সকাল।
যুবকটি সূর্যের গলা ধরে পক্ষপাতহীন
এক নিয়মের অধীন,অবশেষে দ্যুতিময়।

 

লাল

চাকুতে জবাফুল ঘঁষে লেবু কেটে
লাল রঙের বিজ্ঞান ক্লাস,
ইতিহাসের ছেলেটি বলেছিলো: তরমুজে শুধু
চাকু দিলেও লাল আসে।
চায়ের আড্ডায় রক্তলাল,
যুদ্ধ, নিহত লাল গোলাপ
এমনকি আমাদের যে মেয়েটি
সবুজ টমেটো হাতে নিয়ে লাল হয়ে উঠেছে;
বুকে তার থকথক লাল।
এরি মধ্যে ফ্রয়েড পড়ুয়া বলে ওঠে-
কমলাও লাল কোয়া কোয়া ভাগাভাগি।

লাল বর্ণান্ধ সুশীলও শোঁকে মাংসের গন্ধ!

 

অখণ্ড পাথর

বিপ্রতীপ বাসনা ছুঁড়ে জড়িয়ে ধরো,
কোলাকুলি, হ্যান্ডশেক বড় লম্বা সময় ধরে।
সূর্য উঠেছে; আরো আরো দাঁড়িয়ে থাকি!
বরফ গলে গলে সরে যায়,
আমাদের পায়েরা পাচ্ছে আশা আশ্রয়ের প্লাটফর্ম।
প্রলম্বিত দহন দীর্ঘশ্বাস আর সূর্যতাপ…
গলে মিশে এক হই, বিকিরণে একটা প্রমাণ পাথর!
তারপর ভেঙে সহস্র খণ্ড,
হাতুড়ি, ছেনি ঠুকে ঠুকে মূর্তি কিংবা মনুমেন্ট!

অতঃপর যেভাবেই উন্মোচিত হোক…
পাথর কখনও অভিযোগ করে না।

আলোর পালক

যেন খসে পড়া একটা পালকে কাঠি ছুঁয়ে দিলে;
উড়ছে সাদা কবুতর, তুমি এক কৌশলী জাদুকর।
নিমিষেই দর্শকের বাহবা,করতালির শব্দে
দূরত্বের চিঠি বেঁধে পায়ে উড়ে যাচ্ছে শান্তির পায়রা।

এক মুহূর্তে এঁকে ফেলো তামাম শহর, ল্যাম্পপোস্ট।
ভেজা দাঁড়কাকটাকে শুকিয়ে দাও এক লহমায়,
বিষণ্ণ ঘন রাতকে নিয়ে যাও আলোর মিছিলে;
রোদরাঙা হাসি।

এইসব শান্তির বাণী, মিঠা-মিঠা জ্যোৎস্নার গান,
সূর্যালোকিত দিনের সুর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পর্বত;
দুঃখমুদ্রা অঙ্কিত এ হাতে এই বুঝি ঝুকে পড়ে
নন্দন কলরবে আলোকস্তম্ভ হয়ে…

 

গুরুর বাক্য-১

ভেঙে পড়তে নেই।
হোগল পাতার মতো আকাশমুখী হও।
অতঃপর নিজেকে কেটে,শুকিয়ে চাটাই করো;
বসতে দাও সকলকে যারা যাপনের ক্লান্তি নিয়ে এবংবিধ খোশগল্পে একটু জিরিয়ে নিতে চায়।
চাইলে সবুজ ঘাস হয়ে বিছিয়ে পড়ো
বনবাদাড়ে, মাঠেঘাটে,
শোভিত করো দরজা-জানালা,গোরস্থান পাশ।

খুব রঙিন হবার প্রয়োজন নেই,
সাদা ফুল হতে পারো তাতে আছে সুবিস্তর ঘ্রান।
গন্ধের একটা আলাদা মাহাত্ম্য আছে ;
বন্ধু কেন বিদ্বেষীরাও অজান্তে শুকবে তোমায়।

দুঃখ,ক্রোধকে নিজের মধ্যে বলী করো;
পাবে সুশীতল এক প্রশান্তি।
তারপরও যদি কোন উন্মত্ততায় চোখ লাল হয়;
কানামাছির বয়সে ছুটে যাও; চোখ দুটোকে
লাগিয়ে দাও একটা পাকা পুঁই মাচায়…
কোনো কিশোরী দুটো ফল ছিড়ে
পায়ে তার আলতা করুক।

 

সংশক্তি

একটু সরে গেলে পিঠে পিঠে লেগে থাকা
বন্ধুর টান যে কেমন তা নিউরনই জানে।

পাটাতন থেকে একটা তক্তা সরিয়ে দিলে দৃশ্যমান ফাঁকা নিয়ে আসে যে আলো তাই বিষণ্ণ অন্ধকার।

রসিক মিস্ত্রি তক্তা জুড়ে দিলে;
বুকের পাটাতনে শিশুর পায়ের দুমদুম শব্দ
জাকির হোসেনের তবলার ছন্দ।
আমাদের বুকের পাঁজরের হাড় হারমনিয়ামের রিট; অদৃশ্য আঙুলে বেজে ওঠে সরস সুর।

সরল ছোঁয়া

সবজি বিক্রেতা জানে কতটুকু পানি ছিটিয়ে দিলে
ক্রেতা সহজে তা কিনে।
সরলা তুমিতো জানো; একটু ছুঁয়ে দিলেই
মুহূর্তে কত সতেজ হই।
আমাকে বিক্রয়যোগ্য করে তুলে
তুমিই শুধু ক্রেতা হতে পারো।

শুকনো ধানের চারারও থাকে ইউরিয়া অপেক্ষা।
সরলা একবার আঙুল ছুঁয়েই দেখো;
কত বেশি সবুজ হই,
তিরতির করে বেড়ে ওঠে মমতার চারা।

চোখের দিকে তাকাও;এবারতো শিখে গেলে
অশ্রু কেবল কান্নায় ঝরেনা।

 

সঞ্চয়

রোয়া বীজের সারিবদ্ধ শৃঙ্খলায় দাঁড়িয়ে আছো,
একটু একটু বেড়ে ওঠা দেখি।
কবি,তোমায় দেখি।
সবুজ থেকে অগণন সোনার ডিম।
এক একটা ধান তুমি কবিতা হয়ে গেছো।
কৃষকের কোছ বিড়ি স্বাধীনতায় আমার সুখটান!
কবিগণ,শান্ত বিড়াল।

ইঁদুরের সখ্যতায় কাটি ধান,
গর্তে সঞ্চয় কিছু সোনালী শব্দ।

সরোয়ারে কায়েনাত। কবি। জন্ম ৫ মে ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দ। উজিরপুর, বরিশাল; বাংলাদেশ। জীবিকাসূত্রে বাংলাদেশের স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস-এ কর্মরত। সেসূত্রে বরিশাল শহরে বসবাস। বেশ কয়েকবছর যাবত তিনি কবিতা লিখছেন।  কবিতার এই দীক্ষিত পাঠক, কায়েনাত; কিন্তু এখন অব্দি গ্রন্থপ্রকাশের অস্থিরতা তাঁকে গ্রাস করেনি।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ