করাচিতে নজরুল
করাচি বন্দরে এককালে গ্রিক-পারসিক-আরবীয় সওদাগরেরা নোঙ্গর করেছে; অনেক স্থাপত্য চিহ্ন আজো রয়ে গেছে; যা…..
লিবিয়ার তরুণ কবি ও কথাসাহিত্যিক, যিনি প্রায় সব বিষয় নিয়েই লেখেন, সেই মারিয়ান আহমেদ সালামা কিন্তু গল্প, উপন্যাস তো নয়ই, শীত নিয়ে সামান্য কয়েক লাইনের একটা কবিতাও লেখেননি। শুধু তিনিই নন, লিবিয়ার জনপ্রিয় কবি খালেদ কাট্টাওয়া, কমল বেন হামেদা, এমনকী সুলেমন অল-বারুনিও শীত নিয়ে কোনও লেখা লেখেননি। লিখবেন কী করে! যাঁদের দেশে স্বাভাবিক তাপমাত্রার হার পঁতাল্লিশ থেকে পঞ্চাশ ডিগ্রি, তাঁরা শীতটা টের পাবেন কী করে!
না, ওঁদের কোনও শীত নেই, শীতকালও নেই। শীত আছে আমাদের। তাই শীত পড়তে না-পড়তেই সার্কাস পার্টিরা তাঁবু ফেলতে শুরু করে দেয় যত্রতত্র। যাত্রাপালা শুরু হয়ে যায় কোথাও সাত দিন, কোথাও দশ দিন, তো কোথাও টানা পনেরো দিন ধরে। শুরু হয়ে যায় খেজুর গাছ কাটা। এখানকার খালে-বিলে সাইবেরিয়া থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসে পরিযায়ী পাখি।
আমাদের শীতকাল আছে, তাই শীতের পোশাকআশাকও আছে রংবেরঙের। আছে কমলালেবু। আছে নলেন গুড়ের সন্দেশ, রসগোল্লা। আছে পিঠেপুলি। আছে দল বেঁধে কাছেপিঠে কোথাও বনভোজনে যাওয়া। কনকনে ঠাণ্ডায় শীতের মিঠে রোদ পিঠে মেখে আয়েশ করা।
শীতকে ঘিরে সব কিছুই আছে, কিন্তু শীত আছে কি! আগে, এমনকী আমার ছোটবেলাতেও শুনেছি, দুর্গাপুজোর পরে ঠাকুর বিসর্জনের সময় দুর্গা প্রতিমাকে জলে ফেললেই পাড়ে দাঁড়ানো লোকজনের গায়ে যে জলের ছটা এসে পড়ত, সেই জলের ছটার ওপরে ভর করেই নাকি শীত এসে ঢুকত।
কয়েকদিনের মধ্যেই লেপ-কাঁথা বের করতে হত। সন্ধেবেলায় বাড়ির উঠোনে কিংবা রাস্তার ধারে কাঠকুটো জ্বেলে দল বেঁধে সবাই বসে পড়ত আগুন পোহাতে।
শুধু শরীরে নয়, মনেও নয়, শীত কিন্তু চুপি চুপি ঢুকে পড়েছিল বাংলা সাহিত্যেও। একটু পাতা ওল্টালেই দেখতে পাবেন, মধ্যযুগে, বিশেষ করে মঙ্গলকাব্যে বা বারোমাস্যায় বারবার ধরা পড়েছে বছরের এই পঞ্চম ঋতু, পৌষ আর মাঘ মাসের শীত।
ষোড়শ শতকের কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী তাঁর কালকেতু উপন্যাসে বলেছেন-
পউষের প্রবল শীত সুখী যেজন।
তুলি পাড়ি আছারি শীতের নিবারণ॥
ফুল্লরার কত আছে কর্মের বিপাক।
মাঘ মাসে কাননে তুলিতে নাহি শাক॥’
পরবর্তীকালে আধুনিক কবিরাও শীতকালের বন্দনা কিংবা বর্ণনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন-
‘শীতের হাওয়া হঠাৎ ছুটে এলো।
গানের হাওয়া শেষ না হতে।
মনে কথা ছড়িয়ে এলোমেলো।
ভাসিয়ে দিল শুকনো পাতার স্রোতে।’
অন্য এক কবিতায় তিনি লিখছেন- ‘এসেছে শীত গাহিতে গীত বসন্তেরই জয়’। শীতকে তিনি মৃত্যুর প্রতীকেও প্রয়োগ করেছেন।
জসীম উদ্দীনের কবিতায় শীতকে আমরা পাই আমাদের নিজস্ব ঋতু হিসেবে। শীতকালের প্রবল ও আন্তরিক বর্ণনা তাঁর কবিতায় যে ভাবে প্রকাশ পেয়েছে, বাংলা সাহিত্যে আর কোনও কবির লেখায় বোধহয় তেমনটা হয়নি। ‘রাখাল ছেলে’ কবিতায় তিনি লিখেছেন-
“ঘুম হতে আজ জেগেই দেখি শিশির-ঝরা ঘাসে,
সারা রাতের স্বপন আমার মিঠেল রোদে হাসে।
আমার সাথে করত খেলা প্রভাত হাওয়া, ভাই,
সরষে ফুলের পাঁপড়ি নাড়ি ডাকছে মোরে তাই।
চলতে পথে মটরশুঁটি জড়িয়ে দুখান পা,
বলছে ডেকে, ‘গায়ের রাখাল একটু খেলে যা!’…
প্রকৃতির কবি, রূপসী বাংলার রূপকার জীবনানন্দ দাশ ‘শীতরাত’ কবিতায় লিখেছেন-
‘এইসব শীতের রাতে আমার হৃদয়ে মৃত্যু আসে;
বাইরে হয়ত শিশির ঝরছে, কিংবা পাতা।’
শুধু এই কবিতাতেই নয়, তাঁর বিভিন্ন কবিতায় বারবার ধরা পড়েছে, ‘পউষের ভেজা ভোর’, ‘নোনাজল’, ‘আতাবন’ ‘চুলের উপর তার কুয়াশা রেখেছে হাত’, ‘ঝরিছে শিশির’, ‘পউষের শেষরাতে নিমপেঁচাটি’ কিংবা ‘কুয়াশায় স্থির হয়ে ছিল ম্লান ধানসিঁড়ি নদীটির তীর’।
‘এইসব ভালো লাগে’ কবিতায় তিনি লিখেছেন-
‘জানালার ফাঁক দিয়ে ভোরের সোনালি রোদ এসে
আমারে ঘুমাতে দেখে বিছানায়, —আমার কাতর চোখ, আমার বিমর্ষ ম্লান চুল—
এই নিয়ে খেলা করে: জানে সে যে বহুদিন আগে আমি করেছি কী ভুল
পৃবিবীর সবচেয়ে ক্ষমাহীন গাঢ় এক রূপসীর মুখ ভালোবেসে,
পউষের শেষরাতে আজো আমি দেখি চেয়ে আবার সে আমাদের দেশে
ফিরে এলো; রং তার কেমন তা জানে ওই টসটসে ভিজে জামরুল,
নরম জামের মতো চুল তার, ঘুঘুর বুকের মতো অস্ফুট আঙুল।’
কবিতা আর শীতরাতের হিমের প্রখরতা যেন জীবনানন্দের ভাবনায় একাকার হয়ে আছে।
বাদ যাননি শামসুর রাহমানও। তাঁর ‘রূপালি স্নান’, আর ‘তার শয্যার পাশে’ কবিতা দুটিতে খুব সুন্দর ভাবে তিনি বন্দি করেছেন শীতের অনুষঙ্গ।
কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত তাঁর ‘কাব্য কানন’ গ্রন্থের ‘মানিনী নায়িকার মানভঙ’ কবিতায় শীতের বর্ণনায় তুলে ধরেছেন বেশ খানিকটা কৌতুক ও হাস্যরস। তিনি লিখেছেন-
বসানে ঢাকিয়া দেহ গুঁড়ি মেরে আছি।
উহু উহু প্রাণ যায় শীত গেলে বাঁচি॥
হাসিয়া নাগর কহে, খোল প্রাণ মুখ।
শীত-ভীত হয়ে এত ভাব কেন দুখ॥
ছয় ঋতু মধ্যে শীত করে তব হিত।
হিতকর দোষী হয় একি বিপরীত॥
তাঁর কবিতায়, পুরুষের দৃষ্টিতে ছয় ঋতুর মধ্যে ‘শীতকাল’ সেরার সেরা ঋতু হলেও, মেয়েরা কিন্তু সেটা মানতে রাজি নন। তাঁদের মতে, শীতের ভয়ে ভীত রমণীর শরীর ফেটে চৌচির, হাড় কাঁপানো শীতে যেখানে ঘর থেকে বেরোনোই দায়, যেখানে জল স্পর্শ করা প্রায় কল্পনাতীত, সেখানে শীতকাল কী করে শ্রেষ্ঠ ঋতু হয়?
মহাকবি কালিদাস মনে করতেন, শীতকালে মেয়েদের কামভাব প্রবল হয় বলেই, পুরুষদের কাছে শীত এত উপভোগ্য। তাঁর এই মত খুব স্পষ্ট ভাবে ধরা পড়েছে ‘ঋতু সংহার’ কাব্যগ্রন্থে।
ঠিক এই একই মতে বিশ্বাসী হয়ে কবি আলাওল তাঁর ‘পদ্মাবতী’ কাব্যে ‘ষট-ঋতু বর্ণন’ খণ্ডে শীতের বর্ণনা দিতে গিয়ে দেহ মিলনের এক মধুর চিত্র তুলে ধরেছেন।
আল মাহমুদ লিখেছেন-
‘কখনো ভোরের রোদে শিশিরের রেনু মেখে পায়
সে পুরুষ হেঁটে যায় কুয়াশায় দেহ যায় ঢেকে।’
আবদুল মান্নান সৈয়দ অকপটে লিখেছেন-
‘শীতের ঢেউ নামি আসবে ফের
আমার বুড়ো হাড়ে ঝনাৎকার।’
মহাদেব সাহা লিখেছেন- ‘শীতের সেবায় তবে সেরে উঠি’।
আবিদ আজাদ বলেছেন-
‘সব মরবে এবার শীতে
কেবল আমার ফুসফুসের পাতাঝরার শব্দ ছাড়া।
কবি নজরুল ইসলামের শীত নিয়ে লেখা ‘শীতের সিন্ধু’র মতো কবি শেলী-ও লিখেছেন- ওহ্, উইন্ড ইফ উইন্টার কামস, ক্যান স্পিরিং বি ফার বিহাইন্ড’।
কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য অবশ্য গরিব মানুষদের জন্য একটু অন্য ভাবে প্রার্থনা করেছেন। তিনি তাঁর ‘প্রার্থী’ কবিতায় লিখেছেন-
হে সূর্য
তুমি আমাদের স্যাঁতসেতে ভিজে ঘরে
উত্তাপ আর আলো দিও
আর উত্তাপ দিও
রাস্তার ধারের ঐ উলঙ্গ ছেলেটাকে।
জাপানি কবি বাশো-ও তাঁর বেশ কয়েকটি হাইকুতে শীতকে দারুণ ভাবে ধরেছেন।
শুধু কবিতা নয়, শীতকাল নিয়ে নাটকও লেখা হয়েছে প্রচুর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন- ‘রক্তকরবী’ (প্রকাশকাল: ডিসেম্বর ১৯২৬)। এই নাটকটি মূলত পৌষ মাসকে ঘিরেই লেখা। কাহিনি গড়ে উঠেছে গ্রামের ফসল কাটা এবং নবান্ন উৎসবের ওপর ভিত্তি করে।
পৌষের ফসল কাটা নিয়ে গানও বেঁধেছেন তিনি। লিখেছেন-
‘পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে— আয় রে চলে,
আয় আয় আয়।
ডালা যে তার ভরেছে আজ পাকা ফসলে,
মরি, হায় হায় হায়।…
মাঠের বাঁশি শুনে শুনে আকাশ খুশি হলো—
ঘরেতে আজ কে রবে গো। খোলো দুয়ার খোলো।’
রবীন্দ্রনাথ প্রত্যেকটা ঋতু নিয়েই গান লিখেছেন, কোনও ঋতু নিয়ে দেড়শোটা, তো কোনও ঋতু নিয়ে একশো পনেরো-কুড়িটা। আবার কোনও ঋতু নিয়ে তার চেয়েও বেশি। কিন্তু শীতকাল নিয়ে তিনি মাত্র বারোটি গান লিখেছেন।
বাংলার আরেক কবি রঞ্জনা রায় শীতকাল নিয়ে লিখেছেন খুবই সামান্য কয়েকটি কবিতা। তার মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য ‘শেষ প্রসাধন’ কবিতায় তিনি লিখেছেন-
শীত হাসে তুষার চাদরের স্নিগ্ধ আড়ালে মুখখানি ঢেকে
ঋজু পাইনের সবুজ মুছে, মায়া ফকিরের সাজে।
শেক্সপিয়রও লিখেছেন শীতকালের ওপর ভিত্তি করে অনবদ্য একটি নাটক- উইন্টার টেল।
দক্ষিণ কোরিয়ার জনপ্রিয় নাটক ‘দ্যাট মেলোড্রামা দ্য উইন্ড ব্লোওজ‘ও শীত নিয়ে লেখা একটি অসামান্য নাটক। যা আজও রমরম করে সমান তালে মঞ্চস্থ হয়ে চলেছে।
বাংলা উপন্যাসেও বারবার খুঁজে পাই শীতের উপস্থিতি। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ তাঁর ‘চাঁদের অমাবস্যা’ উপন্যাসটিতে শীতের বর্ণনা এমনভাবে দিয়েছেন যে, গরমকালে পড়লেও পাঠকের মনে এবং শরীরে শীত শীত লাগবেই। তিনি এক জায়গায় বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেছেন-
‘শীতের উজ্জ্বল জ্যোৎস্না রাত, তখনো কুয়াশা নামে নাই। বাঁশঝাড়ে তাই অন্ধকারটা তেমন জমজমাট নয়। সেখানে আলো-অন্ধকারের মধ্যে যুবক শিক্ষক একটি যুবতী নারীর অর্ধ-উলঙ্গ মৃতদেহ দেখতে পায়। অবশ্য কথাটা বুঝতে তার একটু দেরি লেগেছে, কারণ তা ঝট্ করে বোঝা সহজ নয়। পায়ের ওপর এক ঝলক চাঁদের আলো। শুয়েও শুয়ে নাই। তারপর কোথায় তীব্রভাবে বাঁশি বাজতে শুরু করে। যুবতী নারীর হাত-পা নড়ে না। চোখটা খোলা মনে হয়, কিন্তু সত্যিই হাত-পা নড়ে না। তারপর বাঁশির আওয়াজ সুতীব্র হয়ে ওঠে। অবশ্য বাঁশির আওয়াজ সে শোনে নাই।’
সোভিয়েত লেখক চেখভ অবশ্য অন্যান্য কবি লেখকদের মতো শীতকে আলাদা ভাবে কোনও গুরুত্ব দিতে চাননি। তিনি বলেছেন—‘মানুষ সুখী হলে জানতে চায় না—এটি শীত না বসন্ত।’
ইমোজেন রবার্টসন তাঁর ‘দ্য প্যারিস উইন্টার’ উপন্যাসে বিশ শতকের প্যারিসের ইতিহাস বর্ণনার সঙ্গে সঙ্গে শীতেরও খুব সুন্দর করে বর্ণনা করেছেন।
রোমান্স কমেডি ‘উইন্টার ইন টোকিও’ বেশ সাড়া জাগানো কাহিনি। হ্যাপী এন্ডিংয়ের মধ্য দিয়ে সাহিত্যিক ইলানা তান এখানে ইতিবাচক হিসেবেই শীতকে পরিবেশন করেছেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘটনাকে কেন্দ্র করে জ্যান টারল্যু লিখেছেন- ‘উইন্টার ইন ওয়ারটাইম’। জার্মান বাহিনীর হাতে ক্ষতিগ্রস্ত হল্যান্ডবাসীর শীত ও ক্ষুধার যন্ত্রণা জায়গা করে নিয়েছে এই ফিকশনে।
১৯৪০ সালে স্প্যানিশ মুক্তিযুদ্ধ শেষ হবার পর ইউরোপে ফ্রান্স সেনাবাহিনীর দাপট নিয়ে সি জে স্যানসম লিখেছেন ‘উইন্টার ইন মাদ্রিদ’। গ্রন্থটি আন্তর্জাতিক বাজারে বেস্টসেলারের মর্যাদা লাভ করেছে।
পাশাপাশি শীত নিয়ে লেখা ইসমত চুকতাইয়ের ‘লিহাব‘ গল্পটি বেরোনোর সঙ্গে সঙ্গে কেউ কেউ প্রচণ্ড আপত্তি তুলেছিলেন। ফলে সেটি অশ্লিলতার দায়েও অভিযুক্ত হয়েছিল।
মাত্র কয়েকবছর আগে, ২০০৬ সালে আমেরিকা থেকে প্রকাশিত ‘ডেড অব উইন্টার’ নামক ছোটগল্পে অস্ট্রেলিয়ান লেখক স্টিফেন ডিডম্যান তো শীতকে বিদায় জানানোর জন্য প্রস্তুতির কথা বলেছেন।
উল্টোদিকে আবার আর রেবেকা কে ওকোনর তাঁর ‘ওয়ান মোর ইউন্টার’ গল্পে শীতকে নতুনভাবে আহ্বান জানিয়েছেন।
দেখা গেছে যে দেশে শীত আছে, সেই দেশের কবি-সাহিত্যিকেরা শীত নিয়ে কম-বেশি কিছু না কিছু লিখেছেন। লিখছেন এবং লিখবেনও। সবাই যে সুখকর দিকগুলো নিয়েই লিখবেন তা কিন্তু নয়। শীতের বিরুদ্ধেও কলম ধরেছেন অনেকে। তাই প্রবাদে পরিণত হয়েছে- ‘এক মাসে শীত যায় না’। অর্থাৎ, মাঘ মাস এখানে বিপদের সংকেত। এতটাই বিপদের যে, শীতপ্রধান দেশগুলোতে তাই বয়স্ক লোকদের জন্য একটা কথা চালু আছে- এক শীতে টিকে যাওয়া মানে আরেকবার নতুন জীবন ফিরে পাওয়া।
এই শীতের সঙ্গেই ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে মেলা। পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বড় মেলা- গঙ্গাসাগর। এটা শীতকালেই হয়। ছোটবেলায় শুনতাম, ওখানে নাকি এত বীভৎস শীত পড়ে যে, সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যে সব থুত্থুড়ে বুড়োবুড়িরা যান, তাঁরা অনেকেই নাকি ফিরে আসেন না। ওখানকার শীতে কাবু হয়ে ওখানেই দেহ রাখেন। কিন্তু আমি নিজে গিয়ে দেখেছি, তেমন শীত কোথায়!
ওখানেই দেখেছি, যতই ঠাণ্ডা পড়ুক, ওখানকার সাধুবাবাদের কিন্তু একেবারে উলঙ্গ হয়ে বসে থাকেন। তা হলে কি ওঁদেরকে কোনও শীত ছুঁতে পারে না! আমার ধারণা, হয়তো ছুঁত, যদি না ওঁরা সারা গায়ে ছাইভষ্ম মেখে থাকত।
শুধু সাধুবাবারা কেন, হীমশীতল শীতেও দেখেছি, যার হাত থেকে বাঁচার জন্য সবাই সোয়েটার, মাফলার, টুপি, গ্লাভস, গরম মোজা পরে আছে, তার চেয়েও বেশি ঠান্ডা, বরফের আইসক্রিম বহু ছেলেমেয়েই আরাম করে খাচ্ছে। তারাই বলেছে, শীতকালে নাকি আইশক্রিম খাওয়ার মজাই আলাদা। বিশেষ করে সঙ্গে যদি তেমন কেউ থাকে।
তবে না, শীতকাল শুধু শিল্প-সাহিত্যেরই সময় নয়, উৎসবেরও সময়। নাট্য উৎসব। গান উৎসব। খাদ্য উৎসব। তাই বেরিয়ে পড়ুন। তবে বেরোবার আগে মনে রাখবেন, এই সময় কিন্তু পৃথিবীর অনেকটা কাছে চলে আসে সূর্য। তাই দিনেরবেলায় সব সময় সান’স ক্রিম মেখে বেরোবেন। কেন না, এই সময়েই সূর্য থেকে বেরোনো আশি শতাংশ ক্ষতিকারক রে আমাদের ত্বকের ক্ষতি করে।
পাশাপাশি এটাও জানিয়ে রাখি, ঠাণ্ডাতে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেড়ে যায়। ফলে শরীর খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই সামান্য থাকে।
তবে হ্যাঁ, একটু বেশী ঠাণ্ডা পড়লেই আমরা সকালবেলায় আর লেপের তলা থেকে বেরোতে চাই না। ঘুম থেকে দেরি করে উঠি। মনে করি, আজ আর মর্নিংওয়াকে যাব না। যোগা করব না। কিন্তু সেটা একেবারেই উচিত নয়। ঘুম থেকে উঠে যত বেশী পরিমাণে যোগা করতে পারবেন ততই আপনার শরীরের জন্য মঙ্গল। কারণ শীতকালে শরীর থেকে খুব তাড়াতাড়ি ক্যালোরি বেরিয়ে যায়। আর যারা খুব রোগা, কিছুতেই মোটা হচ্ছেন না, তারা এই সময় বেশি করে খান। কারণ, শীতকালে শরীরের ওজন বাড়ানো খুবই সোজা। কিন্তু যাঁরা বেশি মোটা, তাঁরা দয়া করে নলেন গুড়ের সন্দেশ দেখলে কিন্তু হামলে পড়বেন না। তা হলেই গেল!
এই কথাগুলো মাথায় রেখে একেবারে জমিয়ে কাটান শীতকাল। কারণ প্রায় দরজা ধাক্কাতে শুরু করেই দিয়েছে শীতকাল!
সম্পাদনা: রাখি রশিদ
করাচি বন্দরে এককালে গ্রিক-পারসিক-আরবীয় সওদাগরেরা নোঙ্গর করেছে; অনেক স্থাপত্য চিহ্ন আজো রয়ে গেছে; যা…..
তিনি বললেন, ভাষা হল ওষ্ঠের উপর সুধার মতো। আর বললেন, কবিতা যথেষ্ট স্বাদু, কিন্তু…..
রূপকথা পড়েছেন ছোট বেলায় অনেকে একথা আর বলা সন্দেহমুলক, প্রযুক্তির ব্যবহার জন্মের পর থেকে এখন …..
একটি পরাধীন দেশ আর তার বাসিন্দাদের মনে স্বাধীনতার আকুতি আমরা দেখেছিলাম ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতে। এর…..