বাংলা
( কোরাস ) বাংলা আমার গর্ব আমার বাংলা আমার ভাবের দেশ বাংলা আমার মাতৃভাষা, বাংলা…..
ছায়াপথ ঘুরে আসে কল্পনা। বহুকাল বৃষ্টি পড়ে নি আমাদের দরজায়। উঠোনে ছড়ানো ছিটানো অনুভূতিগুলো নিত্য সঙ্গী হয়ে ঘুরে ফেরে যাযাবর হৃদয় নিয়ে। ভ্যাপসা গরমে চোখ ধাঁধানো কিছু দৃশ্য কল্প এখনো রাঙিয়ে দিয়ে যায় চোখ। নিজের অবস্থান বুঝতে গিয়ে কাল্পনিক আবেশে জড়িয়ে যাচ্ছিলাম খুব। অনুভূতির ছলাকলা, কপাল ভাঁজ করা পারফরমেন্সে কিছু রেশ থেকে যায় পিছনের দিকে।
কাল্পনিক আবেশ মুছে গেলে কোনও অংকই থাকে না
বিনিময়ে গড়ে ওঠে বাস্তুহারা দুঃখদের আদি সমাবেশ
আমাদের চাওয়া পাওয়াগুলো ক্ষুদ্র। অল্পতেই ঢেকুর তুলি তৃপ্তির। সত্যি তলিয়ে দেখি নি আজো৷ আয়নায় দাঁড়িয়ে বিম্ব দেখে ভাবুক মনে আওড়ে যাই। দিনের মিছিলে ডেকে যায় ওইসব নাম। যাদের প্রিয়দের তালিকা থেকে মুছে ফেলেছি তীব্র ঘৃণায়। যদিও হাতের পুতুল নিজেকে প্রশ্ন করতে পারে না। কেবলই আজ্ঞাবহ এক চাটুকার।
ধ্রুপদী ব্যথাদের সমন্বয়ে অভিমানগুলো প্রাচীর হয়ে দাঁড়ায়। ভুলে যাওয়া মানুষগুলো মুখোশ উড়িয়ে দেয়। সেপ্টেম্বর ১, বৃষ্টি নেই কোনও। রৌদ্রজ্জ্বল দিনের আর্দ্রতায় বুঝে নেই বাতাসের মাঝে জলের সহবস্থানটুকু। প্রকৃতির গতিবিধি, খামখেয়ালিপনা পড়তে পড়তে দিন পেরিয়ে যায়। রাতের মোহ কাটিয়ে উঠতে শিখি নি আজো। তারপরেও কিছু সময়ের ফাঁকে আলাপনের বালু ঘড়িতে ঘুরে ফিরে আসে একই কথা।
অচেনা কিছু শব্দজট। নিজেকে খুঁজে বেড়ানো কিছু মুহূর্ত। আনন্দ আর উচ্ছ্বাসের মাঝখানে এলিট ভাব নিয়ে তাকিয়ে থাকা প্রহরগুলো ক্লান্তির শ্লোগান তুলে পালিয়ে যাচ্ছে দূরের দিকে। বিনিময়ে রেখে যাচ্ছে একরাশ স্মৃতি। হাতড়ে ফিরছি শুধু। ভাবছি এই প্রশ্নের উত্তর আদত কী হবে! কার কাছে বলবো থামতে দাবী দাওয়ার খাতা পূর্ণ হবে বলে ফিরে আসছি পিছনের পথে। বাকিটুকু অলিখিত ক্যানভাসে উড়ুক সকলের আড়ালে।
বহুপথ পেরোনোর পরে পিছনে তাকানোর কোনও মানে নেই। অথচ, শৈশবের স্মৃতিগুলো টেনে নিয়ে আসে উল্টোপথে। অবসরকালীন দুপুরে ভাবতে বসি জীবন একটা জার্নি, আর ভালবাসা অভ্যাস মাত্র। এমন সমীকরণের সামনে দাঁড়ালে নিজেকে বালুকণা মনে হয়। তুচ্ছ হবার মাঝেও একটা সুখ আছে, যা বুঝতে বুকের পাটা লাগে— সান্ত্বনা দিই নিজেকে এমন কিছু ভেবে।
ভুলে ভরা সময়টিকে নিয়ে নতুন কোনও কবিতা লেখা হয় নি। এগিয়ে যাওয়ার ফাঁকে হিসেব করিনি, ছায়াকে অতিক্রম করার ইচ্ছেটুকু তীব্র মিথ্যে। নির্ভয়ে এগিয়ে যাবার বাসনায় হারিয়ে ফেলি বিগত সময়ের পায়ের ছাপ। তীব্রতা কমলে জানান দিতে হয়। দর্শক নেই, শ্রোতা নেই… শুধু হাহাকার, কেবল হাহাকারই আছে। বদ্ধ জানালায় জমে গেছি ধুলোর আস্তরণে।
সেপ্টেম্বর ৪, ধূধূ বালুচরে দেখি ভারিক্কি ভারিক্কি যন্ত্রপাতির সমাবেশ, তারপাশে দাঁড়িয়ে ভেবে নিচ্ছি পড়ন্ত বিকালের মায়া। তবুও শিহরণ, চাপা উল্লাস, ভুলে যাওয়া মোহগুচ্ছদের বিদায় দিয়ে ভাপসা উষ্ণতাকে রেখে দিচ্ছি হিসাবের সবকিছু ওলটপালট করে দিয়ে।
ক্যানভাসে আঁকা ছবিগুলো ভুল বার্তা দিয়ে যায়, তুলির অসামঞ্জস্য কিছু আঁচড়, বুকের বাঁ পাশটায় তীব্র গতিতে বাজতে থাকে করুণ সাইরেন। বিকালের ঘণ্টা বেজে উঠলে চার্চের মাঠে গিয়ে বসে থাকি, নিজেকে নিয়ে বেশি ভাবনা নেই।ভাবনার শেষে পরিণাম কেবলই শূন্যতা। এক ঈশ্বরের জীবন ফেরি করছি— অথচ নিজেকে চিনি নি আজও।
তড়িৎ গতিতে ছড়িয়ে পড়ে অভিমান। দুঃখগুলোর নিষ্কাশন শেষে পাললিক হৃদয়ে ক্ষতচিহ্নগুলো উঠে আসে গোপন সব অনুভূতিকে জাগিয়ে দিয়ে। মুহূর্তগুলোকে আনন্দের মাঝে লুকিয়ে ফেলেছি অশ্রুজলে। নির্বাক মুহূর্তগুলোকে হাতের কড়ে মেপে ফেলি রোজকার গোপন হিস্যায়। যদিও ব্যর্থ কিছু অনুরণন তবুও অর্থবোধক প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে যাই রোজ। আর বিনিময়ে রেখে দিছি পাপ পুণ্যের নিপুণ অংক।
স্বার্থান্বেষী মেঘ উড়ে যায় আমার আঙিনার উপর দিয়ে। প্রান্তিক শব্দগুচ্ছ হানা দিয়ে যায় দক্ষিণা বারান্দায়। হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো মোহাচ্ছন্ন সুর। ডেকে চলে আমাকে। দূরের পথ, কার্নিশে জমে থাকা ধুলোর আস্তর, ভেন্টিলেটরের মেহমান চড়ুই দম্পতিদের ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ উড়ে যাওয়ার অন্যরকম কিছু দৃশ্যকে। বিভ্রম নিয়ে বসে থাকি শরতের দৃশ্যপটে। সেপ্টেম্বর ৭, লিখে রাখছে অব্যক্ত অনুভূতিগুলো এভাবে।
রোজকার দিনের বার্তাগুলো ভুলভাল খবর দেয়। ভাবনার করিডোরে মেঘ এসে হানা দেয়। বৃষ্টি নেই, তুলোমেঘে বিষণ্ণতা উড়ে যায় কেবল। ছুটে চলাটা ভুলে যাই। উড়ে যাবার নেশা আমাকে মুগ্ধ করে দেয়, অজানা গন্তব্যে ছুটে চলার ফ্যান্টাসি আমাকে আহত করে দেয়। ক্লান্তি নামে শহরের ক্যানভাসে। নাগরিক বিকালগুলো মুগ্ধ করতে পারে না। টঙ দোকানে উড়ে চলে বিভ্রান্তিকর কিছু মূর্ছনা।
দিনের হিসাবে বাকির খাতায় সব হিসাব। প্রাপ্তির খাতায় শূন্য। কল্পনার পাতায় নীলচে কিছু কালির আঁকাজোকা। বাস্তবের সামনে দাঁড়ালে মুছে যায় হিসাবের বারতা। সান্ধ্যকালীন বাতাসে উড়ে যায় মেঘ। ল্যাম্পপোস্টের আলো আধারিতে নিজস্ব অনুভবটুকু মুছে যায় দুর্বার গতিতে। প্রহসন মুছে যায়, ক্লান্ত বাতাসে পুড়ে যাই। পুড়ে যায় একটা তারিখ, গোটা একটা দিন।
প্রলেতারিয়ার মতো ভেসে যাচ্ছি। বিনোদনগুলো মুছে যাচ্ছে ক্রমশ। হাতের রেখা ধূসর হলে তুমিও ভুলে যাবে জ্যোতিষশাস্ত্র। বিমূর্ত ছবির বাসনায় মুছে যাচ্ছে কাল্পনিক রঙের সমাহার। সমাবেশে পাখিদের অধিকার শুনছি ইদানীং। লাইসেন্স বিহীন আকাশে উড়ে যায় দূরের দেশে। নিমিষে পেরিয়ে যায় আমার উঠোন। আর, জেগে থাকার আপ্রাণ চেষ্টায় জেগে থাকে ঘুমঘোরের কবিতারা।
বলেছি আগেই থেমে যাবার আগ মুহূর্তের সঙ্গীতের ভাষা। করুণ সুরে ভেসে যায় জ্যোৎস্না রাত। রাতের চাদরে আটকে ফেলেছি নাটকের ফ্রেম। স্ক্রিপ্ট ভুলে যাওয়া কোনও অভিনেতার মতো হাবাগোবা দাঁড়িয়ে আছি দূরত্বের চাদর মেপে। ক্লান্তি মেপে নিচ্ছে প্যারামিটারে। বাতাসের গতিপথ শুধুই গেয়ে যায় করুণ সঙ্গীত — বিচ্ছেদের।
নিজেদের নিয়মে আত্মপ্রচার করতে করতে ক্লান্ত। আমিত্ববোধ গিলে ফেলছে পুরো শরত। বৃষ্টিহীন অনুভাবে প্রেমহীন অনুভূতি ফেরি করছি। বেনামি প্রেমিক সাজতে গিয়ে হয়েছি পলাতক আসামী। নির্বাক একদিন কেন জানি গেয়ে যায় হারিয়ে ফেলা সঙ্গীতের সব সুর। সেও বাজিয়ে নিচ্ছে। সেপ্টেম্বরের সিম্ফনি শুনি, তারিখ ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, মাসের দুই তৃতীয়াংশ বাকি।
ছুটে চলার ফাঁকে আড়চোখে দেখি বারবার। আয়নার ফাঁকে গল্পের ভাঁজে পরিণাম লিখে রাখছি দিনভর। বিষণ্ণতা আঁকছি প্রতিদিন। বিনিময়ে মিলছে না কিছুই। দিনের হিসাবে দিন শুধুই সংখ্যা হয়ে যায়। এরবেশি অনুভূতি থাকে না। নীরবতাকে আঁকড়ে ধরি, ভ্রান্ত বিলাসে লিপিবদ্ধ সব প্রেম মুছে যায় অপ্রেমে। জিপসিদের মতো তল্পিতল্পা গুটিয়ে চলে যায় অন্য কোনও উপত্যকায়।
সংকেত! গভীর কিছু উপলব্ধির কাছে নতজানু হয়েছি। অক্ষরের ফাঁকে জমেছে অভিমান। শব্দের স্তূপ সরালে মৃত পাহাড়ের কাছে এসে থেমে যাই। নিজস্ব সংবিধানের ধারা, উপধারাগুলো বাজিয়ে যায় একই সঙ্গীত। তালহীন, ছন্দহীন জীবনকে টেনে নিয়ে যাচ্ছি ফেরিওয়ালার মতো। আবেশে জড়িয়ে পড়া মুহূর্তগুলো অংকের খাতায় নীরবে শ্লোগান দেয়। কম্পমান তারের ঐকতানে ঝুলতে থাকে অনাদায়ী স্বপ্ন।
অসুস্থ সময়ের কাছে ঋণ দেখে শিহরিত হয়ে পড়ছি। দৈনন্দিন হিসাবগুলো জ্বলজ্বল করে ওঠে। নিরাপদ জীবন অধরা হয়ে ডেকে চলে। ভুল বানানের প্রেমগুলো জীবাশ্ম হয়ে নাড়িয়ে দেয় ভিতরটা। প্রত্নতাত্ত্বিকের খাতার গভীরতায় মাটি খুড়ে বেরিয়ে আসে অতীত। অচেনা সভ্যতাকে বুকে জাপটে ধরে পার করে দিই দিনের পুরোটাভাগ।
নীরবতা ছুঁয়ে দেখেছে আমার পৃথিবী। মধ্যভাগ ঘনিয়ে এলে না মেলা অংকরা আরও জোরে কাঁপিয়ে দেয়, সব হিসাব নিয়ে চুপিসারে পালিয়ে যায়। দূরের পথ মলিনতা নিয়ে ঢেকে দেয় ধূসর দৃশ্য। নীরবতা এসে ঢেকে দেয় মুখরিত জীবন। প্রান্তিক হাতেখড়িতে ম্লান মুখ, ক্ষয়ক্ষতির হিসাবে পাকা জহুরির চোখ। দামী লেন্সের ফাঁকে কানামাছি খেলে বিমোহিত জীবন।
দিনের অংকে আমি খুব কাঁচা, সরল অংককে গরল করে ফেলি। ভুলের মিছিলে সংখ্যা বেড়ে যায়। জীবনের অংকে না মেলা হিসাবগুলো ধ্রুবক হয়ে ওঠে। মুখোশ খুলে ফেলি, অনিকেত, অচ্ছুত হয়ে ফিরে আসি। চূর্ণবিচূর্ণ মুহূর্তগুলো হেরে গেছে— হেরে গেছি আমিও। দিনের অংকে আমার হারাবার আর কিছুই নেই।
গোপনীয় দাগগুলো বিভ্রম জাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়ছে। দিনের আলোর সাথে সকল দুশ্চিন্তাও মুছে যাচ্ছে। হিসাবগুলো ভুল ছড়িয়ে ডুবে যাচ্ছে দ্রাঘিমা রেখার পাশাপাশি। শীতের শহরে মলিন মুখ, ছুঁয়ে দেখা হয় নি আমাদের। গোপনীয়তা ভেঙে দেখা হয় নি আমাদের। মুষড়ে পড়া অতীত, গ্লানিকর বর্তমান ছুঁয়ে দেখে বিস্তারিত। বিস্ফারিত সময়গুলো প্রহসনের গল্প লিখে রাখছে। দূরের চিত্রপটে সময়কে আটকে দিয়েছি নির্দিষ্ট গতিপথে।
করুণ দৃশ্যপটে তুমি আমি উভয়েই মুসাফির। পরিভ্রমণে পেরিয়ে যাই এক শহর থেকে অন্য শহরে। পকেটভর্তি শূন্যতা, হাবভাবে বড়লোক। বেদনা বিধুর চোখ, মুখে হাসি, পলেস্তারা দিয়ে আটকে রেখেছি ভিতর। উপরিভাগ দেখে কেউ প্রশ্ন করছে না। মায় পড়ানো চোখ, ভুলিয়ে দিচ্ছে রোজকার দিনে ক্লান্তি। মুছে ফেলেছি ভ্রান্তি জড়ানো নামগুলো। বিনিময়ে জমে যাচ্ছে লুণ্ঠিত প্রতারণা— জন্ম নিচ্ছে এক রাশ ঘৃণা।
মধ্যভাগ পেরিয়ে গেলে কাল্পনিক হিসাব মেলাতে থাকি।অদৃশ্যমান কিছু তথ্য উপাত্ত নিয়ে পেতেছি সংসার।নির্বাক কল্পকথায়,অজানা শিহরণে কিংবা ভুলের মিছিলে লিপিবদ্ধ হয় বাড়ন্ত শরীরে।কথার পিঠে জমে যাওয়া কথাগুলোর কনসার্টে শুনি প্রহসন। নির্বাক জীবনে রেখে দিচ্ছি দৈনন্দিন অবসাদ। সেপ্টেম্বরের বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে উঠোন। কাক ভেজা ইটের সলিং আজ অপেক্ষমাণ প্রেমিক এক।
মাসের মধ্যভাগের সাইরেনে ঝাপসা একগুচ্ছ স্মৃতি থাকে। দিনগুলো পরিষ্কার সামনে এসে দাঁড়ায়। নতুন দিনের উদযাপনে পুড়িয়ে ফেলে একেকটা দিন। প্রান্তিক জীবনে রেখে দিচ্ছি, ক্ষয়ে যাওয়া কিছু স্পর্শ, স্পষ্টত সবকিছুই প্রহসন। প্রথম প্রেমিকার মতো তুমিও অতীত। পাহাড়ের শান্ত হাওয়ার মতো ভিজিয়ে দিচ্ছ আমাকে। মখমলে ঘাসে মাথা পাতলেই দেখি নশ্বর ঘুমে পেরিয়ে যাচ্ছে অনাদরের সেপ্টেম্বর — অবহেলার নবম মাস।
মূর্ছনা থেমে যায়। গল্পের শেষ অধ্যায়ে ধূসর চিত্র, ম্লান মুখর বিবরণ, বিবর্তন শেষে কার্নিশে জমে থাকে দিনের পঙক্তিমালা, নির্বাক মুখগুলো গেয়ে যায় ভৈরবী। নিক্বণের শব্দে ঘুম–ভাঙা শহর আজো লুকোচুরি খেলে। উড্ডীন পাখিদের সমাবেশ থেকে জেনে নিচ্ছি বিরহের সঙ্গীত। নির্বাসনের মন্ত্র পাঠে কোথাও বেজে ওঠে বিষণ্ণতার সঙ্গীত। ম্লান মুখ বেদনার ইতিবৃত্ত পেরিয়ে যায়। ভোরের অবকাশটুকু জানান দেয় বেঁচে থাকার মূল্য।
উড়তে থাকা ঘুড়িটিও গোত্তা খায়। বেঁচে থাকে অজস্র ভুলকে সাথী করে। উপচে পড়া কিছু অবয়ব, সাথীহীন কতগুলো মুহূর্তকে নিয়ে আবিষ্কারের নেশায় মেতেছি বড্ড অবেলায়। নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত সময়গুলোকে ভেবে দেখি, দ্রুত পেরিয়ে যাচ্ছে নিজের সীমানা। মধ্যমা টেনে চুপিসারে দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায় আমাদের সম্পর্কগুলো। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অনুভবগুলো মুছে যাচ্ছে তার সমান্তরালে।
বিম্ব ভুলভাল রিপোর্ট দেয়৷ আত্মপ্রবঞ্চক হতে শেখায়। প্রাচীর টেনে দূরে সরে যায়, মেধাহীনের আস্ফালনগুলো সুনিপুণভাবে লিপিবদ্ধ করে ফেলি। নীরবে দূরে সরে যেতে যেতে বুঝে নিচ্ছি জাগতিক বোঝাপড়া। ক্যানভাসারের মতো আওড়ে চলছি, বিফলে মূল্য ফেরত শ্লোগান। যদিও আমাদের চার দেয়ালের বাইরে দেখা হয় নি কখনো।দেয়ালের কান আছে জেনেও আমরা বলে ফেলেছি সকল ব্যক্তিগত বাতচিত।
অনুভব মুছে যায়।মুখের ভিড়ে কিছু সময় ব্যক্তিগত অধ্যায় ছড়িয়ে চলে যাচ্ছে দূরের পথে। আটোসাজেশনে বারবার ভুল নির্দেশনা আসে। আকুপাংচারের মতো শৈল–বিদ্যায় বিশ্বাসী হয়ে উঠি। গ্রেটওয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে জানিয়ে দিই প্রবঞ্চকের দিনগুলোর সালতামামি। সেপ্টেম্বর ২০, অর্থহীন নয় একদমই। মানুষের ভিড় সামলে এখনো অভিজ্ঞতার ঝুলিতে রেখে যায় কিছু নাম। বাকিটুকু অপ্রকাশিত ও একান্ত ব্যক্তিগত।
দিনগুলো মুছে যায়। ক্লান্ত ঘড়ির কাটাটিও দৌড়ে ছুটছে ব্যস্ত আঙিনা ছেড়ে। বৃত্তাকার পথে ঘুরে আসাটাই এখন তার নেশা। সেকেন্ডের কাঁটায় দিনরাত লিখে রাখছি নিজেকে। এখানে অন্যকোনো আবেদন নেই। ছুটে চলাটা এখন জীবনেরই অংশ, এতে কোনও ফ্যান্টাসি নেই। একটা পলাতক মন কেবলই পিয়ানোর ঝঙ্কার তুলে মিলিয়ে যাচ্ছে বাতাসে। রোজকার সকালে ঘুম ভাঙানো ফোনকলটিও পাখির মতো কাজ করে। নিজেকে নিয়ে এর বেশি বলা বারণ।
প্রেমিক অপ্রেমিকের সংজ্ঞা লিপিবদ্ধ করা হোক দ্রোহের খাতায়। বিষণ্ণতার দিনযাপনে মৌন বাতাসও গুরুত্বপূর্ণ। তার নিজস্ব একটা ভাষা আছে। গভীর মনোযোগেই কেবল তা স্পষ্ট হয়। মুখের বিবরণে ভ্রান্ত সুখ, আর সমান্তরাল রেখায় চুপিসারে রেখে যায় পালক। সেই সাথে নস্টালজিক গাড়িতে চেপে চলে যাই গত জন্মে। টাইম মেশিন নেই, অথচ ছুটে চলা। পঙ্খীরাজ ঘোড়া নেই, কাল্পনিক বিন্যাসই এখানে সত্য হয়ে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
কিছু জিনিস ভাবতেই জলের সাথে মিশে যাই, লজ্জাকে ছুটি দিয়েছি অথচ পেতেছি সখ্য লজ্জাবতী ফুলের কাছে। ছাতিম ফুটে গেছে অবহেলার গাছে। নিজেকে শুনিয়ে বলছি বারবার আহা কী সুন্দর বিরহ গাছ। মালীহীন, সেবাহীন অথচ তরতর করে বেড়ে উঠে জানান দিয়েছে নিজের সত্তাকে। তার দিকে তাকালে নিজেকে দেখা হয়, আয়নার মতো সেও আমার বন্ধু। কত সুন্দরে সে দাঁড় করায় আমাকে সত্যের সামনে। বারবার বলে বুড়িয়ে গেছি আমি।
বৃদ্ধ নই, তরুণও নই। কেমন একটা অবস্থা। ডানে যেতেও বিপদ, বামেও তো একই দশা। মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে ব্যালেন্স করার চেষ্টায় রত। নিজের অবস্থা দেখে মনে হয় সার্কাস দলের ক্লাউন, রঙবেরঙের জামা পড়ে মনোরঞ্জনকারী ভদ্রলোক, দিনের শেষে যার কাছে দুটো কড়ি পয়সাও থাকে না। আর সুখ? আনন্দ? নাহ, ওসবকে লুকানোর জন্যই তো কিম্ভুত আকৃতির বেশভূষা। এখানে এসে নিজেকে আর মেলাতে পারি না।
আজ সেপ্টেম্বর ২৪, মাসের হিসাবে বাকি এক সপ্তাহ। যদিও সময় ফুরচ্ছে না একদমই। মনে হচ্ছে বিকল ঘড়িতে আটকে গেছে পৃথিবী। নির্বাক সময়ের হাতে ধরে আমিও দাঁড়িয়ে আছি নির্বিকার কিছু মুহূর্তের কাছে।
দিনটি বাতাসে উড়ে যায়। পাখিদের চরিত্র ধারণ করে এগিয়ে যায়। জন্মদিন আর অন্যান্য দিনের মাঝে তফাৎ নেই খুব একটা। নয়টা থেকে সাতটা গৎবাঁধা নিয়মকানুন। পেটের মায়ায় বিচ্ছিন্ন হবার কোনও সুযোগ নেই। নেই নেই করেও পালিয়ে যাচ্ছি আমরা একে অপরের থেকে। দিনের আলোয় মুছে যাচ্ছে সবটুকু হিসাবনিকাশ। বিনিময়ে মিলিয়ে যাচ্ছি, দুরন্তপনাকে ছুটি দিয়ে অপেক্ষমাণ অবসরের জন্য বসে থাকি।
কুয়াশার চাদরে ঢাকা নয় আমার সকাল। শিউলিতলায় ঝরে পড়ে নি কোনও ফুল, দূর্বাঘাসে নেই কোনও বনেদিপনা। চিত্রময় কিছু হাতছানি, ক্রমশ বিভ্রমে লুকিয়ে যায়। আর বিবর্ণ মানচিত্রে মানুষগুলো নিজস্বতা হারিয়ে রূপান্তরিত হচ্ছে ইকেবানায়। ঘ্রাণহীন ফুল, কেবলই সৌন্দর্য ছড়ায়। ফণীমনসা— তার প্রতি কেমন একটা দুর্বলতা আছে। ছিঁড়েখুঁড়ে খেয়ে ফেলে আমার ভিতরে।
শুরুতেই বলেছি আজকের দিনের এমন কোনও মানে নেই। দূরান্ত কিছু স্মৃতিকে আগলে ধরছি বুকে। হুটহাট চলে আসছে। ডোরবেল বাজে নি, ঝড়ো বাতাসেও কড়া নাড়ে নি। তবুও আশঙ্কা। কোথাও আশার আলো নেই। নিজেকে নিয়ে পঞ্জিকার পাতায় কোনও পরিকল্পনা নেই। বিচ্ছিন্ন কিছু শুভেচ্ছা, আর পরাবাস্তব ভালোলাগায় কেটে যায় যাদুবাস্তব মুহূর্তগুলো। আর দিনের শেষে কিছুই যোগ হয় না। যাই থাকে তার পুরোটাই মূল্যহীন।
এভাবেই কেটে যাচ্ছে আমার মাস। দিন ফুরচ্ছে না করেও ফুরিয়ে যাচ্ছে একটু একটু করে। সর্বহারার কিছুই কী থাকে হারাবার? প্রাপ্তির খাতায় কিচ্ছুটি লেখা নেই। হারানোর খাতাটি আগেই শূন্য। হরবোলা মনে রোজকার প্রলেপ দিয়ে যাই। বিবর্ণ পৃথিবী আরেকটু ধূসর হয়। মলিন আকাশ এখনো জ্বলজ্বল করে ওঠে রাত্রিবেলায়। নক্ষত্রদের সমাবেশে নিজেও নক্ষত্র হয়ে যাই। ২৭ সেপ্টেম্বর, জীবন মিছিলে লেখা অতিথি নামগুলো আওড়ে যাই যোগ বিয়োগের নিয়মে।
প্রহর ঘনিয়ে আসে। নীরবে রেখে যায় চিহ্ন। প্রান্তিক অনুভূতিগুলো বিমূর্ত কিছু দৃশ্য নিয়ে চুপসে গেছে। মূর্ছনা থেমে গেছে, অথচ কাল্পনিক বিন্যাস আজও অম্লান। নিরন্তর শব্দ বাজির শেষে দৃশ্যমান আবছা অংশটুকু জেগে থাকে। কথোপকথনের রেশ ভুলে যাই। মুখের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছি আমরা প্রতিদিন। শেষ হয়ে আসে সেপ্টেম্বরের সুর।
অচেনা একটা সুরের কাছে এসে দাঁড়িয়ে গেছি। পিয়ানোর চাবিতে লুকিয়ে থাকা অভিমানগুলো পরতে পরতে বিদ্বেষ ছড়ায়। রক্তিম সম্ভাষণে গোপন অভিলাষটুকু তারিয়ে উপভোগ করছি। ঢাল নেই, তরবারি নেই, অথচ নিধিরাম সর্দার— এই উপলব্ধি গায়ের সাথে আটকে গেছে। কাল্পনিক অনুভূতির কাছে জমেছে অনেক ঋণ। সুরেলা শব্দগুলো পাশাপাশি বসিয়ে আমরা মেতেছিলাম অন্যরকম খেলায়। এ খেলায় ভাসতে ভাসতে পেরিয়ে এসেছি পুরো মাস।
সময়ের গলায় ঘণ্টা বাঁধি। নিজেকে নিয়ে এরবেশি কোনও শব্দ নেই। শব্দরা ফুরিয়ে গেছে। বিনিময়ে রাখে নি কিছুই। অসময়ের বৃষ্টিতে ভিজে গেছে দরজা। নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ছি দুজনেই। বিপ্রতীপ কোণেই আমাদের বসবাস। ব্যক্তিগত মুহূর্তগুলো মুছে গেছে। ঘাসফড়িঙয়ের সমাবেশ দেখে উৎফুল্ল হচ্ছি না এখন আর। মুছে গেছে দোকলা জীবনের ধারাপাত।
সংগীত থেমে যায়, ধসে পড়ছে পলেস্তারা। নিজের প্রতিবাদটুকু মুছে যাচ্ছে। মনখারাপের দিনগুলো সহজেই শেষ হবার নয়। তারপরেও আশায় থাকি। বাস্তবকে ভাবি দুঃস্বপ্ন। আর অবচেতন মনে বিশ্বাস করি একদিন উলটে যাবে সব হিসাব। পাখিরা ফিরবে চেনা ঘরে। জিপসি হবে ঘরকুনো। সকল কিছুই হবে— যা ভাবে নি আগে কেউ কখনো। অথচ বাজবে না সেপ্টেম্বরের সিম্ফনি। দিনগুলো হবে ভীষণ একাকীত্বের।
( কোরাস ) বাংলা আমার গর্ব আমার বাংলা আমার ভাবের দেশ বাংলা আমার মাতৃভাষা, বাংলা…..
এমন বৃষ্টির দিনে যে ছবি আঁকে নদীজল এমন বৃষ্টির দিনে স্মৃতিকে জড়িয়ে ধরি, পোশাকে তুমি।…..
ঝরাপাতা তোমার চলে যাওয়া আমাকে ব্যথিত করে না, ঝরাপাতাদের নিঃশব্দ আর্তনাদে রয়ে গেছে তোমার উপস্থিতি।…..
১. বেকার জীবন মেয়েটা আজ আট-আটটি বচ্ছর বেকার! গতকালের ইউরিন টেস্ট রিপোর্ট পজিটিভ… ২. স্বপ্ন…..