সুজান মিঠির পাঁচটি কবিতা

সুজান মিঠি
কবিতা
Bengali
সুজান মিঠির পাঁচটি কবিতা

খুব তো

খুব তো ভাবিস করবি ভ্যানিশ রোজনামচার গামছা,
দিনদুপুরে চাঁদকে জ্বেলে সূর্য নাকি করবি আবছা!
এপার ওপার ঢাকবি নদী উপড়ে পাহাড় ছুঁড়বি তায়!
সেই নদীটাই দেখ রে চেয়ে তোর বুকেতেই আছাড় খায়।

 

তুমি নাকি চাইছো?

সেই কথাটা খুব মনে পড়ে জানো!
বুকের উপর গন্ধ ঢেলে গলার স্বর পেঁচিয়ে
পেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলে, ভালোবাসা মানো?
অবাক হয়ে মুখের দিকে তাকিয়েছিলাম আমি
তখন তুমি তোমার হাতে সাবান ঘষছিলে
আসলে, হাতদুটো তো অনেক দামী…
আমার ছোঁয়া লেগেছিল তোমার ঘামে
শার্টের বোতাম গুলোও নিচ্ছিলে ধুয়ে ধুয়ে
আমার চোখে তখন বৃষ্টি বুককে ছুঁয়ে নামে।

বাইরে তুমুল ঝড় পথেরা ভেঙে চুরমার
ফিরে এসে দিয়েছিলাম চিঠি, একখানা
দেবে আমায় তোমার ঘেমো নদীর হার?
ফিরতি ডাকে এলো উত্তর, ওসব হবে
ঝড় সামলে অন্য পথে তুমি বলোতো
আসবে আবার কবে?

এবার সামনে এলো সমদ্র হাজার মুক্ত ঢেউ
ঘাম ভিজিয়ে জড়িয়ে নিয়ে বুকে, বললো
আমি থাকতে এমনভাবে ভালোবাসা চায় কেউ?
আমি তখন সাগরবুকে সুগন্ধী আতর
খেলছি ছুটছি হাসছি ভাসছি আর দেখছি
তুমি যেন কোথাকার এক ছুঁড়ে ফেলা পাথর।

কালো কসকসে বিচ্ছিরি, খেবরো খটখটে
সাগর এসে বললে আমায়, তুমি নাকি
চাইছো এক বিন্দু ঘাম মোটে।

 

কবি প্রণাম বাঁচে

আতা গাছের পাতায় ঘুমোয়
চাঁপার গাছের ছেলে,
সাত সমুদ্দুর আঁকছে এখন
অমল আকাশ মেলে।
একলা পথের আল্পনাতে
রং বদলে ভাসে।
প্রতিদিনের ডালিম গাছে
মৌ-কূজনে হাসে।
মেঘের পাড়ায় গ্রহ তারা
চাঁদও তায় বাঁচে,
রবির কিরণ শির-শিশিরে
আলোক-দোয়াত আঁচে।

লাল মুসুর বাড়ি

মুসুর ডালের বাড়ী তৈরি করেছে ঠাকুমা।
আধখানা চাঁদ জানলা দিয়ে আসে।
লাল মুসুরের সঙ্গে সখ্যতা বিলিয়ে
তারপর মেঘের আড়ালে ঘুমোতে যায়
ভোরবেলা।

বাড়িটা পাঁচফোড়ন শুকনো লংকা দিয়ে
ঠাকুমা বেঁধে রাখে আঁচলে।
ডালগুলো শক্ত হয়ে আগলে রাখে ঠাকুমাকে।
চাঁদটা গোটা হয়ে ঢোকে দরজা দিয়ে।
ঘুম চোখ ভোলে মেঘালু-জ্যোস্না।

মুসুর ডাল গুলো সিদ্ধ হয়ে গাছ হলো অবশেষে।
ঠাকুমার অস্থিতে এসে মিললো মেঘ।
যেইখানে ছিল বাড়িটা, সেইখানে উড়ে বেড়ালো স্মৃতি।
ঠাকুমা আর মুসুর ডালে বড়ি দিতে থাকা
পাগলী ঠাকুমা।
মুসুর ডালে বড়ি দিত ঠাকুমা।
আর পাঁচফোড়ন দিয়ে আঁচলে বাঁধত বাড়ি।
লাল মুসুর বাড়ি।

 

ভালো আছি, ভালো থেকো

ভালো আছো, ভালো থেকো, আর
কেটেছে সময় দুশ্চিন্তে,
বৃষ্টিতে রোদ, রাত্রে আলো
আর ভালো থাকা কিনতে।
বলবো বলবো করবো নিবেদন
প্রেমের প্রকাশ আজ,
ঘড়ি চশমা রুমাল সুগন্ধি আরো…
একটু নয় তো কাজ।
ঘেমো জামায় জমে ক্লান্তি
ফিরতি অবশেষের মুখ,
দুহাত দিয়ে জড়িয়ে গন্ধ তখন
সাবানজলে ঘষতে বড় সুখ।
এইতো আমার ভালো থাকা
খোলা বুকের ঘামে ভাসতে,
ভালোবাসি বলবো কখন বলো
সময় যে যায় ভালোবাসতে।

সুজান মিঠি (ছদ্মনাম)। আসল নাম সুজাতা মিশ্র। ছদ্মনাম সুজান মিঠি; এই নাম আসলে কয়েক জন বন্ধুদের দেয়া। বাবা-মায়ের দেয়া নাম সুজাতা মিশ্র। মা মিঠু মিশ্র ও বাবা কাশিনাথ মিশ্র। ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোনো’ পরিবারে জন্ম সুজাতা মিশ্রের ইং ১৯৮৭ সালের সেপ্টেম্বর...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ফ্রেম

ফ্রেম

দেবী না পরিণীতা রাতটা একা থাকে এবং নিঃসঙ্গ অন্ধকার মানে রাত; তাহলে অন্ধকার নিজেও একা…..

সীমানার শর্ত

বিজ‌য়ের সব মুহূ‌র্তেই… তার অ‌ধিকার! কেন্দ্র হোক আর কেন্দ্রা‌তিগ ব‌লের আসন; কেউকেউ বোরকায় রমনীয় স‌ঙ্গানুসঙ্গের;…..