সুদেব

হামিম কামাল
গল্প
Bengali
সুদেব

আজ সুদেবের মেসে থাকব, মনে বড় আনন্দ। সন্ধ্যা থেকে আয়োজন শুরু। মোড়ের দোকান থেকে এক প্যাকেট সিগারেট কিনলাম, সঙ্গে বড় দুটো চিকেন চিপস, আর একটা দেড় লিটারের কোক। ওর বাসাটা বেশি দূরে না হলেও রাস্তাটা অন্ধকার, আর নর্দমার নতুন লাইন বসাতে গিয়ে খোঁড়াখুঁড়ির চূড়ান্ত। পথ দিতে হবে আলো থাকতেই।

সন্ধ্যার কিছু পর দুই বন্ধুতে এক হলাম। খানিক বাদে অরবিন্দ এলো। রাস্তায় বেশিক্ষণ কাটানোর অবকাশ নেই তাই ওপরে উঠে পড়তে হলো।

ছোট্ট ঘর সুদেবের। দেয়ালের সাথে লাগোয়া একটা চৌকি- একজনের জন্যে বড়, দুজনের জন্যে ছোট। মেঝেতে একটুকরো আয়তাকার জায়গা, এর ভেতরই ঠেলেঠুলে জায়গা করে নিয়েছে বেতের বুকশেলফ, স্টোভ আর হাড়িকুড়ি।

সারা রাত সমাজ সাহিত্য উদ্ধার করে রাত তিনটার দিকে মনে পড়ল পরদিন সকালে অফিস আছে সুতরাং এবার আর রাশ না টেনে উপায় নেই। কথা শুনে সুদেব কী যেন ভাবল কিছুক্ষণ। হঠাৎ বলল, ‘এই রে, একটা সমস্যা হয়ে গেল।’

‘কী রে?’

‘আমার যে ঠাণ্ডার ধাত, তোরা কি নিচে শুতে পারবি?’

নিচে বলতে মেঝেতে। বললাম, ‘আমার কোথাও শুতে অসুবিধা নেই।’

‘ব্যাস, চুকে গেল।’

এরপর শুরু হলো সুদেবের বিখ্যাত নাকি-কণ্ঠের গান। ‘নক্ষত্র জানে না কক্ষপথ কতদূর।’ ভূতের মতো নাক থেকে গাইলেও সুদেবের গানের গলা বেশ ভালো, এ কথা আমাকে বলতেই হবে। শোবার প্রসঙ্গ কবরস্থ। এর ভেতর যে তার যে কী গূঢ় পরিকল্পনাটা লুকোনো, তখনো বুঝতে পারিনি।

শেষ দফার সিগারেট-পর্ব সেরে মেঝেতে একটা শীতল পাটি বিছিয়ে পিঠ লাগালাম। সঙ্গে শুলো অরবিন্দ। নানা কারণে ক্লান্ত দেহমন। সেইসঙ্গে প্রচুর নিকোটিন গেছে রক্তে। মগজ আর মানছিল না।

অরবিন্দের একটা স্বভাব হচ্ছে ঘুমের ভেতর গায়ের ওপর অবাধে পা তুলে দেওয়া। শুধু বারকয়েক ওর পায়ের ভারে ঘুম ক’বার ঘা খেলো আমার। তবে আবেশটা ছিল বলে মুহূর্তে আবার তলিয়ে গেলাম প্রতিবার। সকাল আটটায় ঘুম ভাঙল। উঠে বসলাম। দেখি সুদেব বিছানার ওপর বসে একটা বই পড়ার চেষ্টা করছে। আমার দিকে তাকিয়ে হাসল। সে হাসিতে প্রাণ নেই। চোখজোড়া লাল।

‘কীরে, ঘুমাসনি?’

‘হুম, ঘুমালাম। আমার বুঝলি, এতো যে ঠাণ্ডা, কোত্থেকে লাগল, ঈশ্বর জানে।’ যেন ধীরে ধীরে কম্পোজ হচ্ছে কথাগুলো। এর ভেতরের অস্বাভাবিকতাটুকু তখনো আমার মনে ধরা পড়ল না। অরবিন্দ তখনো চোখ বুজে এপাশওপাশ করছে।

রাতে আনানো খাবার কিছু বেঁচে গিয়েছিল। মুখহাত ধুয়ে একটা প্লেটে তার খানিকটা বেড়ে নিয়ে বসলাম চৌকির ওপর। চৌকিটা নড়ে উঠল। এমন সময় দেখলাম আমার পায়ের কাছে বিছানার ভাঁজ থেকে একটা ছোট্ট লাল পাথর আপন মনে গড়িয়ে জাজিমের তলে চলে যাচ্ছে।

এ দৃশ্য আমার চেনা।

বছর খানেক আগের কথা। পার্লিয়াকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছি। বাস বিজয় সরণী পেরোচ্ছে। বাইরে চন্দ্রিমা উদ্যানের সবুজ বন, স্নিগ্ধ বাতাস। মনটা ফুরফুরে। হঠাৎ দেখি, আমার কালো ব্যাগের ওপর দিয়ে একটা লাল পাথর এমনই আপন মনে গড়িয়ে চলেছে। আমি পথ রোধ করে দু আঙুলে তাকে তুলে চোখের সামনে ধরলাম।

প্রাকৃতিক নির্বাচনের ওপর কোনো অভিযোগ নেই। ছারপোকার চেহারা নিয়েও কোনো দাবি নেই। তবু কেন আমার গা অমর গুলিয়ে উঠল তার ব্যাখ্যা কী করে দেবো? পোকাটার চোখমুখ যেন স্পষ্ট দেখলাম। বিবমিষা জাগল। শপথ করে বলতে পারি সেই কীটেরও নিশ্চয়ই গা গুলিয়ে উঠেছিল মানুষের বিশ্রী চেহারা দেখে।

পার্লিয়া বলল, ‘কী করবে এখন?’

বললাম, ‘মারতে পারব না আমি। তারচে বাইরে বাতাসে ছেড়ে দিই। নিজে পারলে বাঁচুক।’

জানালার বাইরে হাত নিয়ে চলন্ত বাস থেকে আমি কীটটাকে ছুড়ে মারলাম। বাতাসে সেটা আরেক জানালার ফাঁক গলে ঢুকে পড়ল, কী কোথায় উড়ে গেল তার আর জানি না।

এর মাস খানিক পর ভয়াবহ ঘটনা ঘটে গেল। আমাদের মালিবাগের সারা বাসা ছেয়ে গেল ছারপোকায়। যতক্ষণ বাতি জ্বলে, যেন তাদের অস্তিত্বই নেই। যখনই বাতিটা নেভে, গুঁড়ি মেরে বের হয়ে আসে সব, আর কুটমুট করে কামড়াতে থাকে। এর যন্ত্রণা দেওয়ার ধরণ মশা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। শারীরিক কষ্ট ছাড়াও যে পরিমাণ মানসিক যাতনা এ কীট দিতে পারে তার সাথে কেবল অবাধ্য সন্তানের দেওয়া যাতনার তুলনা দেওয়া যায়।

নতুন কিছু প্রতিষ্ঠান বেরিয়েছে যারা বাসাবাড়ির কীটপতঙ্গ তাড়ায়। তেমনেই এক প্রতিষ্ঠানে খবর দেওয়া হলো। নির্দিষ্ট সময়ে ওরা এলে ওদের হাতে ঘর বুঝিয়ে দিয়ে আমরা দিন কয়েকের জন্যে হাওয়া হয়ে গেলাম। একেবারে ঢাকার বাইরে।

সত্যি বলতে কী, মনটা আমার একটু খারাপ হয়েছিল। জগতে প্রত্যেকে নিজের মতো বেঁচে থাকতে চাচ্ছে, আমরাও তার ব্যতিক্রম নই। প্রাকৃতিক নির্বাচন ঠিক করে দিয়েছে কে কার রক্তে, কে কার রসে-মাংসে বেঁচে থাকবে। সবার জীবৎকাল ছোট। জন্মেই দেখছে এ নিয়ম। বদলানোর উপায় নেই, না মেনে পথ নেই। ঘাড়ের ওপর পড়া নিয়মাবলীর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় মানুষ কেবল খানিকটা এগিয়ে। তাই অন্য সবার সাথে সব ক’টা লড়াই কেমন অসম হয়ে উঠছে। মানবজাতির সদস্য হিসেবে আমার গৌরব না হয়ে কেমন সংকোচ বোধ হয়। বন্ধুরা এর ঠিক নামই হয়ত দিয়েছে- আদিখ্যেতা।

যাহোক, বাড়ি ফিরে ছারপোকামুক্ত একটা ঘর পেয়েছিলাম।

আমার জন্মের বহু আগে, মা যখন কিশোরী, তখন নানাবাড়িতে একবার ছারপোকার আক্রমণ হয়েছিল। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছিল যে, ঘরময় বিষ ছিটিয়েই শেষ হয়নি। সমস্ত জাজিম সাত দিন রোদে শুকোতে হয়। যতটা শুনেছি, শেষ দফায় পুরনো জাজিম আর আসবাবের একটা অংশ পুড়িয়ে ফেলা হয়। আগে কালে এই ছিল যজ্ঞ।

জন্মের পর ছারপোকার সাথে আমার সংশ্রব ছিল না। কিন্তু কোনো এক বিচিত্র উপায়ে আমার ভেতর এই কীটের ভয় সংক্রমিত হয়ে। হয়ত আমার মায়ের কৈশোরের স্মৃতি এর পেছনে কাজ করে থাকবে।

আমি কী দেখেছি, তা সুদেবের চোখ এড়ায়নি। তাকিয়ে দেখি, ব্যাটা মিটিমিটি হাসছে। বললাম, ‘ক’দিন হলো।’

‘সপ্তাহখানেক খুব বেড়েছে।’

‘রোদ? ওষুধ?’

‘সময় কই।’

আমি চুপ করে তার দিকে চেয়ে আছি। বন্ধুর জন্যে একটা রাত বিসর্জন দিয়ে সুদেব হয়ত যিশুসুলভ আনন্দ পেয়েছে, কিন্তু আমায় ফেলেছে যাতনায়। তার হাত পা সবখানে ছারপোকার আদরের লাল দাগ। বললাম, ‘আমাকে আর বলিস কখনো তোর বাসায় আসতে। ওই ওপারে বলে না- কেলিয়ে বৃন্দাবন দেখিয়ে দেবো।’

খুব রাগ হচ্ছিল। রাগ জল করতে সুদেব চৌকির হেলানে তবলার তাল দিয়ে নাকি গলায় গান ধরল। একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক সেই গান। নাকি প্রাসঙ্গিক!

‘আঁজ এঁই দিঁনটাঁকে মঁনের খাঁতায় লিঁখে রাঁখোঁ…’

দুই.

তখন সন্ধ্যা নামলে শাহবাগে চেনা আড্ডাবাজদের সংখ্যা বেড়ে যায়। চারপাশে তাদের হুল্লোড়। আমি অবশ্য কোনো হুল্লোড়ের মধ্যে নেই, কেবল দেখি। সেদিনও দেখছি।

মানুষ হাত পা নেড়ে মুখে বিচিত্র সব সংকেত উচ্চারণ করছে। পার্লিয়াকে বললাম, ‘দেখো, কী বিস্ময়! অর্থহীন কতগুলো শব্দ। তার ভেতর মানুষ অর্থ পশিয়ে দিয়ে, কিভাবে কত কী বোঝাচ্ছে, তাই না? অদ্ভুত রহস্যময়, কিন্তু এতো সহজে হচ্ছে যে আলাদা করে চোখেই পড়ছে না। বোধে ধরাই পড়ছে না। এ কিরাম!’

‘শুধু তাই না, দেখো-’ পার্লিয়া বলল, ‘একেকজন আবার বুঝেও নিচ্ছে একেক রকম করে। একজন যা বুঝেছে, তা কিন্তু অপরজনকে বোঝাতে পারছে না। কোথায় একটা ফাঁক থেকে যাচ্ছে।’

এমন সময় পেছন থেকে অন্য একটা কণ্ঠ বলে উঠল, ‘আর সেই ফাঁকগুলো মনের অজান্তেই কল্পনা দিয়ে ভরে নিচ্ছে মানুষ। সৃষ্টি হচ্ছে সম্পূর্ণ নতুন একটা কিছুর।’ কণ্ঠটা এরপর কথার ঢং বদলে বলে উঠল, ‘সুপ্রিয় দর্শকশ্রোতা, আজকের এই মোহিতলাল সন্ধ্যায় আপনাদের সেবায় চলে এসেছে এই অধম, ব্রহ্মার মানসপুত্র শ্রী সুদেব চক্রবর্তী। তার সংসর্গে আপনাদের সময় হয়ে উঠুক আরো মধুর, আরো মসৃণ এবং প্রেমময়। আশা করছি তাকে আপনারা কাবাবের ভেতর হাড় জ্ঞান না করে মসলা জ্ঞান করবেন।’

‘বেশ, করব।’ এই বলে আমি পেছনে তাকালাম। আইল্যান্ডের ওপর নাটকপ্রিয় সুদেব পকেটে হাত ঢুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্যান্টের ভেতর শার্ট গোঁজা দেখে অনুমান, অফিস ছুটির পর সোজা চলে এসেছে। হাসিটা চেনা। কেমন দাঁতব্যথা গোছের। তার পেছনে শাহবাগের আলোঝিলমিল ফুলের দোকান, কিন্তু বাতাসে পেট্রোলের গন্ধ। মোড়ে তীব্র যানজট, ভেঁপুর শব্দ, পুলিশের বাঁশি।

          আমার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে সুদেব এবার পার্লিয়ার দিকে তাকাল। ফরাসী কায়দায় বিনয় দেখিয়ে বলল, ‘তারপর মুক্তোময়ী, আমার প্রেম। তুমি কেমন আছো? জানি অধমের কথা তোমার এ জন্মে আর মনে পড়ে না।’

‘আচ্ছা, এই কথা?’ হাসতে হাসতে আমি বললাম। পার্লিয়া কিছু বলার খুঁজে পাচ্ছে না তখনো।

‘নয় তো কী।’ আইল্যান্ড থেকে ছোট এক লাফ দিয়ে রাস্তায় নেমে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সুদেব বলল, ‘তোর কাছে এ জন্মে ওকে দিয়েছি কেন জানিস? আমার প্রায়শ্চিত্য।’ জিভ কেটে বলল, ‘ভুল বুঝিস না, আরে তুই তো হলি আমার প্রায়শ্চিত্যের সুবিধাভোগী। আগের জন্মে আমি আর মুক্তোময়ী ছিলেম হংসমিথুন, বুইলে? কেন্তু যা হয়েছিল- তা হলো গে, ওকে ভালোবেসে আমি ভগবানকে পর্যন্ত ভুলেছিলাম। যা হবার তাই। স্বেচ্ছামরণের অভিশাপ দিয়ে তিনি বললেন, পরের জন্মে মুক্তোময়ী হবে অন্যের প্রিয়া। অন্য বলতে- তোর সখা। যদি সইতে পারিস, তো শাপ কাটা পড়বে। আবার স্বেচ্ছামরণ, তারপরের জন্মে আবার মিলন।’

আমি শান্ত গলায় বললাম, ‘পরের জন্মে তাহলে পার্লিয়া আবার তোর হচ্ছে?’

‘আলবৎ! এ জন্মে তো আমরা কৃষ্ণার্জুন, বন্ধু! আমি কৃষ্ণ, তুই অর্জুন। তুই আমার সখা। ভগবানের কথা কেমন মিলে গেল। এর ভেতর ভগবানকে পেয়ে বেশ বন্ধুতা হয়ে গেছে বুঝলি? তাই তোর হয়ে তাকে রিকোয়েস্ট করব কিনা, বরটা একটু মডিফাই করে দিতে, বুঝতে পারছি না।’

নিরস গলায় বললাম, ‘বলে দ্যাখ। কাজ হয় কিনা।’

সুদেব শার্টের বুকপকেটে হাত রাখল। আমিও সিগারেট বের করলাম। সুদেব লাল একটা প্যাকেট থেকে ডার্বি বের করে ঠোঁটে চেপে ধরল। দেখে রাগ হলো আমার।

‘সুদেব, দরকার হলে সিগারেট কমিয়ে দে, আমি যেমন দিয়েছি। তবু এইসব সস্তার সিগারেট কেন?’

আমি বেনসন ধরিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে সুদেবের তাকিয়ে আছি। হয়ত পাল্টা কোনো মজার কোনো প্রতি উত্তর আশা করছিলাম। পেলাম না। দেখি সুদেব মুখে অসহায় হাসি নিয়ে নীরবে সিগারেটে আগুন নিচ্ছে। এ নিয়ে আর কোনো কথা হলো না। সুদেবও হঠাৎ একদম চুপ করে গেল।

আমার মনটা খারাপ হলো। পরমন অন্ধকার। সুদেবের মনের খবর জানি না। সে কি আমার কথায় কষ্ট পেয়েছে? আমি নিজে তো অমন উদোম বড়লোক না যে বন্ধুকে খোঁটা দিয়ে পরোক্ষে মুচকি হেসে মুষকো আনন্দ নেবো। সুদেব কি তা জানে না? তাছাড়া আমার নিজের অবস্থাও তো যাচ্ছেতাই। ও কি আমায় ভুল বুঝল?

তিন.

হয়ত কোথাও অনেকক্ষণ অপেক্ষা করিয়ে তারপর এলো। বলতাম, ‘এতো দেরি করলি?’ ও বলত, ‘স্যরি রে! এই তোর…’

এটা ওটা অনেক কিছু বলে দেরির কারণ বোঝাতে চাইত। আমি বাইরে খুব বিরক্ত হয়ে শোনার ভান করতাম, কিন্তু মনে জানতাম, সুদেব এলে যে কোনো দৈর্ঘ্যের অপেক্ষা ছোট হয়ে যায়।

তখন সুদেবের দিনগুলো খুব খারাপ যাচ্ছে। আমি জানি, ঢাকায় এসে একটু দাঁড়াতে কত চেষ্টা সুদেব করেছে। তার ফাঁকে কবিতা লিখেছে, প্রত্যক্ষ বাম রাজনীতি করেছে, বিরুদ্ধবাদিদের লাগাতার আক্রমণ সয়ে নবাগতদের সময় দিয়েছে।

শুরু থেকেই একটা বিষয় মেনে চলতে দেখেছি তাকে। আক্রান্ত হয়েও কখনো সংঘাতের পথে প্রতিআক্রমণ করেনি। ক্ষরণটা এদেরই বেশি হয়। অতি আশাবাদীদের দেখা হয় ফাঁসিকাষ্ঠের সাথে।

এর ভেতর শুভ্রার সঙ্গে প্রেম, দূরত্ব, মনপোড়নের বিচিত্র বেদনালেখ- তাকে সুস্থির হতে দিচ্ছিল না। কিন্তু, সুদেবের ভেতরকার আর্ততা, তার বাইরের উচ্ছ্বলতা হয়ে প্রকাশ পেত। সুদেব যেন ওই খেয়ালি উন্মাদ রাজার বানানো ষাঁড়ের ভেতর আটকে পড়া অসহায় মানুষ। যন্ত্রণায় যত চিৎকার করবে, ষাঁড়ের মুখ দিয়ে তা তত সুরেলা সংগীত হয়ে বেরোবে।

অরবিন্দের কাছে সুদেবের ব্যাপারে আজ শুনি এক কথা তো কাল শুনি আরেক। শুনি- সুদেব এক পত্রিকায় বেগার খাটছে। পত্রিকার মালকিন সুদেবকে পছন্দ করেন, পত্রিকার ব্যয় বহন করেন। সুদেবের ব্যয় কেমন বহন করেন তা জানা যায় না শুনি- সুদেব সুপার চেইন শপে বিপণণকর্মীর চাকরি নিয়েছে। অনেক সুনাম। আবার শুনি, সেখান থেকে তাকে ছাড়িয়ে দিযেছে। আবার কোন এক পত্রিকায় ঢুকেছে, যৎসামান্য বেতন। একটাই ছোট ঘরে প্রবল আত্মঅহংকারী এক সম্পাদকের সঙ্গে দিনরাত একমত হতে হয়। এর ভেতর নিজের একটা পত্রিকা বের করবে সুদেব, কিন্তু শেষতক টাকা যোগাড় হয় না। কিন্তু প্রকাশক তার কবিতার বই বের করার ঝুঁকিটা ঠিক নিয়েছে…

সুদেব সচ্ছ্বল পরিবারের সন্তান। কিন্তু নিজ কাঁধে অর্থের ব্যথাতুর অর্থহীনতা সে কেন তুলে নিয়েছিল? সুদেব উচ্চশিক্ষিত। তার তো কোনো চেইন শপে বিপণনকর্মী হয়ে ব্যতিব্যস্ত দিন পার করার পর অপমানিত হওয়ার কথা ছিল না, বাসের দরজায় হাতল ধরা ঝুলন্ত হেল্পার হয়ে পথের ধারাবর্ণনার কথা ছিল না, ছিল না হোটেলের আর্দালি হয়ে আধভেজা টেবিলে ঠকাঠক পানির গ্লাস নামিয়ে রেখে খাবারের নাম টুকে নিতে নিতে পেছনের কারো গালমন্দ শোনার কথাও।

জীবনের বিচিত্রতার প্রতি উদগ্র কৌতূহল সুদেবের। মাত্রাছাড়া। সৃষ্টিছাড়া নয়।

চার.

সুদেব ঢাকায় আসা অব্দি মিরপুরে অরবিন্দের সাথে থাকে, কিন্তু বাসায় গেলে দুজনকে কখনো একসঙ্গে পাওয়া যায় না। নানা কাজে সে কর্মে ব্যস্ত। পেটের অন্ন যোগানোর কাজ থেকে ছাড়া পাওয়ামাত্র হৃদয়ের অন্ন যোগাতে ছোটে। ফিরতে গভীর রাত। দুটো কথা বলার জন্যে তাকে পাওয়া যায় না- অরবিন্দ, অপর্ণার অভিযোগ।

অরবিন্দের মনের কথা জানি। যখন সুদেবকে চিনি না, জানি না, তখন থেকে তার প্রতি অরবিন্দের তীব্র টানের কথা মানি। সম্পর্কে পিঠাপিঠি মামাত ভাই ওরা। একের প্রাণ অপরের কৌটোয় আটক। অরবিন্দ যখনও বিয়ে করেনি, একা, আজিমপুরে ওর ইরাকি মাঠের মেসটায় গিয়ে আমি প্রায়ই থাকতাম। ওর নিচতলার ঘর। জানালার বাইরে সেই বিখ্যাত গোরস্থান। সারারাত চলত কবিতা। অরবিন্দ তখন অমল চক্রবর্তী নিয়ে খুব লেগেছে। ঘরের জল শেষ হয়ে যেত। আমরা তেলের ঘোলাটে ক্যান (ওটাই জলের পাত্র) দোলাতে দোলাতে দূরের কলকে চলতাম। গোরস্থানের ধসে পড়া দেয়াল পেরিয়ে উঁচু উঁচু ঢেউয়ের মতো কবর দেখা যেত।

          সেই সময় সুদেবের কথা ও বলত। ওদের একসাথে বেড়ে ওঠা, বংশানুক্রমিক পৌরহিত্য, গান, অভিনয়, বুড়ো ‍খুড়োর সঙ্গে বিচিত্র সব ভূতো ফাজলামো… আগে আমি ভাবতাম অরবিন্দ হয়ত আমার মতো কাউকে ভালোবাসে না। যখন আলাপে সুদেবের কথা এসে ওর চোখগুলো উজ্জ্বল করে তুলত, কোথাকার সেই সুদেব, তার প্রতি আমি অব্যাখ্যাত অবজ্ঞায় বিতৃষ্ণ হয়ে উঠতাম।

হঠাৎ একদিন খবর দিলো অরবিন্দ, সুদেব ঢাকা আসছে। অরবিন্দকে সেদিন কারা যেন মারবে বলে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছে। কবিদের সে আরেক দল। যে হুমকি দিয়েছে তার সাথে একটা পত্রিকার সূত্রে আমার আলাপ-পরিচয় ছিল। কিন্তু অরবিন্দের মুখে ওসব শুনে আমার মন সেই মানুষটির প্রতি বিরূপ হয়ে উঠেছিল। সুদেবের জন্যে বিরস মুখে অপেক্ষা করছিলাম।

ক্ষণটা স্পষ্ট মনে আছে। টিএসসির ঠিক সামনে, সন্ধ্যায়, ল্যাম্প পোস্ট আর বৃক্ষের আলোআঁধারি। আরো বেশ কিছু ছেলেপিলে নিয়ে সুদেব এলো। দেখলাম, যেমন কল্পনা করেছিলাম তার চেহারা ঠিক তেমন নয়। আমার বিরূপ মন যেমন ‍কুৎসিত কল্পনা করেছিল তাকে, সুদেব দেখতে যেন ঠিক তার বিপরীত, সুদর্শন। ঈর্ষার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াবশত ভেবেছিলাম সে বোধয় আরো লম্বা হবে, কিন্তু দেখা গেল, তত লম্বা সে নয়। আশ্বস্ত হলাম, কিন্তু বুঝতে পারলাম না কেন।

সুদেব বলল, ‘আপনিই হামিম? অরবিন্দ আপনার কথা এতোই বলত যে আমার ভেতর একটা অপেক্ষা দাঁড়িয়ে গিয়েছিল যে শালার মানুষ কেমন রে? কবে তার দেখা পাব?’

এ কী শুনছি। আমার মন ভিজে উঠেছিল। অরবিন্দতে ‘ক্ষমা’ করেছিলাম। সুদেবকেও।

বছর কয়েক পরের এক সন্ধ্যায় অরবিন্দ মিরপুরে আমার বাসার নিচে এসে দাঁড়িয়েছে। সুদেবের জন্য বাসা দেখতে হবে, আশপাশে কোথাও। অরবিন্দের সাথে সে আপাতত আর থাকবে না। অন্য কার সাথে যেন থাকবে। শুনেই ধাক্কা খেলাম। জানতাম, অরবিন্দ অপর্ণা এতে কতটা কষ্ট পাবে।

ঘরটা ভালো জানালা-ওয়ালা হওয়া চাই। ধূলাবালি আর শব্দ থেকে যত দূরে তত ভালো। চাই রাতবিরাতে ঢোকা আর বেরোনোর স্বাধীনতা। চাওয়া তো অনেক, বাজেটটাই কেবল স্বল্প।

বাসা দেখছি, থেকে থেকে অরবিন্দকে দেখছি। ওকে তো আমি চিনি অনেকদিন। ও হলো অরবিন্দ চক্রবর্তী। ও হামিম কামালও নয়, সুদেব চক্রবর্তীও নয়।

আমার সন্দেহ সত্য করে দিয়ে হঠাৎ অরবিন্দ ঝরঝরিয়ে কেঁদে ফেলল। সেই ছোটবেলা থেকে একসাথে দুটি ভাই।

মনের কথা মনেই চেপে বললাম, ‘শালা ক্ষেপলি নাকি! সুদেব তো আর ঢাকা ছাড়ছে না। এক শহরেই তো আছিস। তাও একই এলাকায়। প্রতি বিকালে আমাদের দেখা হওয়া ঠেকায় কে।’

খানিকক্ষণ কেঁদে অরবিন্দ শান্ত হলো। আমরা চা খেলাম। রাতের অন্ধকার ঢাকা যাপন করলাম, আরো কয়েকটা বাসা দেখলাম। একটাও পছন্দ হলো না।

আজ হোক, কাল হোক, সুদেবকে ঢাকা একদিন ছাড়তেই হতো। কিছুতেই যেন ও খাপ খাচ্ছিল না। কিছু কাচের স্বপ্ন নিয়ে যেন কেউ এসেছিল। হুমিঝুমির ভেতর কাচের যা পরিণতি হওয়ার তা-ই হয়েছে, সব ভেঙেছে।

আসি আসি করে সেই দিনটিও এলো। কবি, বিপ্লবী সুদেব চক্রবর্তী আমাদের পেছনে ফেলে পাড়ি দিলো আরেক জেলা শহরে। সে-ও আজ কতদিন আগের কথা।

পাঁচ.

কবি সারোক শিকদারের মাগুরার বাড়িতে সেবার শীতের নিমন্ত্রণ। বাড়ির সদর দরজা দিয়ে বাইরে তাকালে নাকি মধুমতী নদী চোখে পড়ে। শোবার ঘরের জানালার কাছে আমাকাঁঠালের ছায়ায় শান্ত নদী বয়ে যায়। বাংলা পাঠ্য বইয়ের পাতায় হাশেম খানের আঁকা ছবিতে যেমনটা সচরাচর চোখে পড়ে।

সারোকের বাড়িতে আছে মা, বাবা, ভাইবোনেরা সবাই; আতিথেয়তার জন্যে উদগ্রীব তাঁরা। শুনি, আমরা গেলে নদীতে মধ্যরাতে নৌকা বাওয়া হবে, সীতারাম রাজার দেউড়িও আমাদের অপেক্ষায় সময় গুনছে। আছে লিঙ্গ বদলে দেওয়া জাদুকরী অশ্বথ, তার নিচে কবিতার আসর বসবে। ভাবা যায়?

ঠিক হলো, মাগুরা যেতে মাঝপথে আমরা ফরিদপুর সদরে খানিক থেমে, যাব মধুখালী। কাজ আছে। তারপর সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে মাগুরা।

সব ঠিক থাকলে গাবতলী থেকে রাতের বাস ধরে মানিকগঞ্জ থেকে পদ্মা নদী পেরিয়ে রাজবাড়ী হয়ে আমরা ফরিদপুরে পৌঁছাব গভীর রাতে। রাতের বাকি অংশ ঘাড় গুঁজে কাটিয়ে দেবো একজনার ‘এক কামরার ঘরে’, এবং সেই ঘরটি শ্রীমান সুদেব চক্রবর্তীর। হ্যাঁ, সুদেব তখন ফরিদপুর।

কিন্তু,  তার ঘরে আমরা যখন পৌঁছালাম তখন রাত আর গভীর নেই। সকাল হয়ে গেছে। সেই সকাল গড়াতেও শুরু করেছে। বাজে প্রায় ন’টা। সারাটা রাত আমাদের কেটেছে পদ্মার পাড়ে, কখনো বাসের সিটে মাথা এলিয়ে কখনো রাস্তায় নেমে পায়চারি করে, একটার পর একটা সিগারেট ফুঁকে। ফেরির জন্যে দূরপাল্লার গাড়ির দীর্ঘ লাইন। আমাদের বাসের সিরিয়াল মিলতে সকাল। এমন ক্লান্তিকর রাত আমার বহুদিন আর আসেনি। স্মার্টফোনে বই পড়তে পড়তে চার্জ শেষ হয়ে গেলে নাচার হয়ে পড়লাম কারণ কোনো পাওয়ার ব্যাঙ্ক নেই। শেষরাতের দিকে বাসের সিটে মাথা এলিয়েই চোখ একটু লেগে এলো। কিন্তু মুখের রাতজাগা বিস্বাদভাবটা সুদেবের উঠোনের কলতলায় যাওয়ার আগে কাটল না বিধায় একটা কটু অপবিত্র ভাব যেন সারাক্ষণ বয়ে বেড়ালাম।

সুদেবের ওই কামরাটা বড় একটা বাড়ির অংশ। সে বাড়ির ছেলে হলো গে নিমাই। নিমাই এখানকার ইসকনের সদস্য। ধর্মীয় বিশ্বাসে আমরা- মানে এক অপর্ণা ছাড়া বাকি সবাই সংশয়ী। নিমাই তাই মুখ শক্ত করে রাখল সারাক্ষণ। সুদেবের রসবোধও তার কাঠ কাঠ ভাব শিথিল করতে পারছিল না। সে কেমন দূরে দূরে থেকে মাপা মাপা উত্তর দিচ্ছিল।

আমি একজন গোঁড়া হিন্দুর মাঝে অবিকল এক গোঁড়া মুসলমানকে দেখতে পেলাম। সমস্ত গোঁড়া ভালোমানুষের গোড়া অভিন্ন।

হঠাৎ অরবিন্দকে রূঢ় স্বরে কিছু একটা বলে বসল নিমাই। সম্ভবত তার সংশয়ীপনা নিয়ে, কিংবা অরবিন্দের ঘর ছাড়া নিয়ে। ভালো লাগল না। তবে আমার দুষ্টুমি ভাবটাও গেল না। বললাম, ‘নিমাই, আমি স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলছি। তুমি নিজেকে সংযত করো। আমাদের প্রতি সদয় হও, রূঢ়ভাব পরিত্যাগ করো।’

নিমাই চমকে উঠে পরমুহূর্তে ক্রোধে আরো শক্ত হয়ে গেল। আমার হাতে অবতারচিহ্ন দেখতে চাইলো। বললাম, ‘দেখাব না। তোমার ওপর এখনো সন্তুষ্ট নই।’

সুদেব এগিয়ে এসে এলো। ‘ওরে, ওরা অতিথি। আর ভক্তের দুয়ারে অতিথি হলেন নারায়ণ। কৃষ্ণ হলেন নারায়ণী অবতার, সুতরাং? হামিম বোধয় ভুল বলেনি নিমাই।’

নিমাই কোনো উত্তর দিলো না। সুদেকের দিকে প্রথমবারের মতো ভালো করে তাকিয়ে চমৎকৃত হলাম। হঠাৎ মন বলে উঠল সুদেব ভালো আছে।

ওর ঘরে বেড়ার দেয়াল। তার সাথে লাগোয়া সে-ই চৌকি। বুকশেলফ এবার একটার জায়গায় দুটো। এক কোণে ওর একবিন্দু রান্নাঘর। পুরনো স্টোভটা সেখানে শোভা পাচ্ছে। সঙ্গে আছে হাড়ি, কড়াই, কিছু চামচ, আর একটা সয়াবিন তেলের পেটমোটা বোতল। ঘরের মেঝেটা ইটের, চালাটা টিনের। ছাদ আগলে রাখা লোহার এঙ্গেলে বাঁধা ছোট্ট একটা ছাদপাখা। বেচারা বেশ শব্দ করে ঘুরছে।

পার্লিয়া আর অপর্ণা সেই চৌকির ওপর পা তুলে বসল। আমি আর অরবিন্দ বাইরে দাঁড়িয়ে রইলাম।

এর খানিক পর সুদেব আমাদের নিয়ে বেরোল। মনে হলো বাহিরটা তারই এলাকা। জ্যেষ্ঠ থেকে তরুণ সবাই সুদেবদার সামনে গলে পড়ছে। এ আমাদের চেনা দৃশ্য। সুদেব এখানে তার সাফল্যের অনেক গল্প বলল। কোন স্কুলের নেকাব পরা মেয়েরা যেন এখন ধ্রুপদী সব সাহিত্য চেয়ে নিয়ে পড়ছে। কোথায় যেন মৌলবীদের শান্ত করে এবার পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান হয়েছে। একটা বিজ্ঞান-পাঠচক্রও হয়েছে। তা নিয়ে একটা স্কুলের দেউড়িতে কবে যেন মুক্ত আলোচনা…

এখানে এইসব হলো তার কাজ। আরো অনেক কিছু তার নাটুকে মোহন ভঙ্গিতে বেশ গুছিয়ে সুদেব আমাদের বলে গেল।

বাতাসে একটা ধুলোট গন্ধ। মাথার ওপর রোদ, দরদরিয়ে ঘামছি। তবু কী যে ভালো লাগছে! কারণ আমার মনে হলো সুদেব তার যোগ্য কাজটা পেয়েছে। কিন্তু ওর অফিসটা কী, তার পদটাই বা কী।

সুদেব বলল। কিন্তু স্পষ্ট কিছু বোঝা গেল না। এবারও কি তবে কোনো সমস্যা আছে? হে ঈশ্বর!

সুদেব আমিসহ তার জন্যে দোকানির কাছে বেনসন চাইলো। আমি আনন্দিত চোখে তাকালাম ওর দিকে। আমাদের ভেতর একটা দৃষ্টি বিনিময় হলো যার খোঁজ কেবল আমরাই রাখলাম। পরমন আর অন্ধকার নেই। আমি বুঝতে পেরেছি, সুদেব আমায় ভুল বোঝেনি।

মধুখালির বিখ্যাত দেউলের কাছে এক মিষ্টির দোকানে আমাদের জন্যে অপেক্ষা করে আছেন শাহ কুতুবুজ্জামান। দেউলটার কথা আমি এতোদিন শুনেই এসেছি শুধু। কখনো দেখিনি।

দেউল দেখা হলো। অবিস্মরণীয় অনুভূতি। সেই দেউল, আর আশু মাগুরা নিয়েও হাত পা নেড়ে, রসিয়ে ঝাড়া বলে গেল সুদেব। পারেও।

বললাম, ‘এই, খুব বকছিস, আর বিদায় তো হচ্ছিস আজই। তাই না?’

‘পাগল! ছুটি নিয়েছি দু’ দিনের… তোরা আসছিস।’

‘এই দু’দিনে যদি সমাজ রসাতলে যায়?’

‘যাক না শালা রসাতলে। আগে তো বাঁচি!’

(নোট: লেখাটি কবি সুদেব চক্রবর্তী ও শ্রেষ্ঠা শর্মার বিয়ে উপলক্ষে সোহেল সবুজ সম্পাদিত ছোটকাগজ সেমিকোলনের ক্রোড়পত্র ‘সাত পাকে বাঁধা’য় প্রকাশিত।)

হামিম কামাল। লেখক। জন্ম- ১৯৮৭ সালের ৯ অগাস্ট, ঢাকায়। আহসানুল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তড়িৎ প্রকৌশলে স্নাতক। প্রকাশিত গ্রন্থ- 'জঠর' (২০১৬), 'কারখানার বাঁশি' (২০১৮)।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

বালির বেহালা

বালির বেহালা

বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..

তদন্ত

তদন্ত

  এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..