সুন্দরীদের জন্য গান- ১

বদরুদ্দোজা শেখু
কবিতা
Bengali
সুন্দরীদের জন্য গান- ১

 

বুঝিনি কোথায় যাচ্ছি, কতো দূর,কথায় কথায়
বন্ধুবর হেঁটে হেঁটে নিয়ে গেল বলা যায় ডেকে
নগরীর অন্যতম জনপূর্ণ পথের সভায়
পড়ন্ত বিকেলে একদা , দস্তুরমতো অভিনব
বিষয়-বস্তুর আশ্বাস দিল সে কোনো দ্বিধাহীন ,
অনুমান করলাম দর্শনীয় হবে কিছু অবশ্যই, তাই
গেলাম আগ্রহ নিয়ে, যেহেতু অনেক কিছু এই
নগরীর দেখিনি বস্তুতঃপক্ষে আমি এযাবৎ
নিতান্তই সঙ্গীহীন ব’লে ; নির্জনতা ভালবাসি
কিন্তু একা অপরিচিত কোথাও ঘুরতে যাওয়ার
জন্য পাই না মনের সায় কোনোক্রমে , যদিও-বা
আমি কোনো কেউ-কেটা নই । বহুদূর হাঁটলাম
নানান প্রসঙ্গ ধ’রে , অবশেষে পৌঁছে বুঝলাম
জায়গাটা কালীঘাট দোকানের সাইনবোর্ড দেখে ।
সামনে শুনছি মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি ঢাকবাদ্য
খোল-করতাল যোগে একটানা নাম সংকীর্তন ,
সাথে বিশৃঙ্ক্ষল ভিড়ের বহর , ঠেলাঠেলি
উত্তাল তরঙ্গরাজি ছায়া-ছায়া প্রেতাত্মার ভিড়
আবছা গোধুলি-লগ্নে নগরীর প্রহেলিকা-প্রিয়
সমবেত ভক্ত কিংবা পথচারী নারী পুরুষের
দর্শকের মনোভাব স্পর্শাতুর উগ্র গতিবিধি
পরিপার্শ্ব থেকে আসা উপচানো স্তনের ধাক্কায়
ঢেউ-তোলা নিতম্বের দোদুল্যমান ফুল্ল ধাক্কায়
অবর্ণনীয় , কামার্তির ক্ষুধিত ছন্দে আন্দোলিত
অপ্রতিরোধ্য , দুর্বোধ্য দৃষ্টির শিখায় অসংলগ্ন
পরস্পর অভিযোগহীন ,হতবুদ্ধি হ’য়ে যাচ্ছি
অভাবিত দৃশ্য দেখে , অনভ্যস্ত পরিবেশে প’ড়ে
হতবুদ্ধি হয়ে যাচ্ছি বন্ধুদের আড্ডাবাজ বর্ণনা-প্রসূত
যৌনতার গালগল্প শোনার অশ্লীল প্রেক্ষাপট
থেকেও অতি-বাস্তব অভাবিত দৃশ্যনাট্য দেখে ।
আরেকটু এগিয়ে সামনে গলির সম্মুখ জুড়ে
সারি সারি বিচিত্র ফ্যাসান-ধারী নারীর পসরা
দাঁড়িয়ে রয়েছে দিব্যি হাসি তামাশায় মগ্ন আর
নোংরা টীকা টিপ্পনী ফোড়নে তুখোড় দুরস্ত , গূঢ়
আকারে ইঙ্গিতে ডাকে পৌরুষের কামার্ত ইন্ধন ,
নরকের দরজায় ফুটে থাকা ফুলের মতন
দেহের বেসাতি নাচে প্রতি প্রতিমার প্রসাধনে ,
বন্ধুবর দেখালেন লোভনীয় নিষিদ্ধ পল্লীকে।

( ২ )

দু’হাঁটুর মাঝখানে ঢুকে যাওয়া রহস্যের সুড়ঙ্গের মতো
পথের গলির মুখে ঘরবাড়ির খোপে
দাঁড়ায় সে শরীরের পসরা সাজিয়ে
তার বিগত দিনের প্রতিদিনের ছায়ার মতো
সাজগোজ প্রসাধনে উন্মোচিত উচ্ছল তরুণী
নরকের গুহার দুয়ারে সদ্যঃফোটা ফুলের মতন
আগুনের অহংকারে ডানা-মেলা মথের মতন
মাংসের মৌচাকলোভী মানুষের আবাহনে মোমের মতন
দাঁড়ায় সরলতার অঙ্গীকারে খুলে দিতে ঊরুর সোপান
উষ্ণ লালসায় ঢুকে যায় লোলুপ পশুর দল
ঘন্টা পর্বে কামের আমেজ চাটে পায়রার খোপে
ক্ষিপ্ত অসহিষ্ণু জিভ নখ দাঁতে ঘাঁটে
নগ্ন তার বুক পেট পাছার কন্দর ,
উদ্ভ্রান্ত নাবিকের পাল তোলে লাস্যময়ী সংযমের গাঙের উজানে ।
মূর্তিমতী পাপ দ্যায় অমৃতের স্বাদ
উলঙ্গ রাক্ষসী মেয়ে মৃগনাভি যৌনতার দেবী
উদরে আত্মস্থ করে সহস্র উদগ্র শিশ্নরাগ
বিকৃত রুচির দাগ আদর সোহাগ বাঘের নখর
সর্বংসহার মতো মগ্ন অকাতর যান্ত্রিক প্রথায়
জঙ্ঘা তার ভ’রে উঠে অপব্যয়ী বীর্যের বমিতে ।
সত্ত্বার সাড়ে তিনহাত জমিতে তার ছেপে উঠে কদর্য পৌরুষ
পেষণ লেহন মেহন চুম্বন আলিঙ্গনে স্বেচ্ছাচারী মূদ্রার মোহর
সঙ্গমের নর্দমায় ঝকমকে মর্দানার ঘৃণার তর্জমা
তবু সে সন্ধ্যায় রোজ সেজেগুজে মনোরমা দাঁড়ায় গলিতে
তার বিগত দিনের প্রতিদিনের ছায়ার মতো
নরকের গুহার দুয়ারে সদ্যঃফোটা ফুলের মতন ।

যার কাছে এতো ভিড় , এমন নিবিড়
প্রেম যার কোনোরূপ বন্ধনের দাবিহীন দীক্ষাহীন
যে বিলায় মর্ষকামী শহরকে কামার্তির দায়মুক্তি
যে সাজায় নিত্যকার পৌরুষের স্বেচ্ছাচার বেসাতির
তীর্থভূমি ঘামের কামের সোঁদা গন্ধ , আঁশটে মোচ্ছব
কামরতি আনন্দের ফুল , মশগুল মন্দিরার ঝালা
লালসার অবরুদ্ধ রন্ধ্রে রন্ধ্রে শিরায় শিরায় ,
সে কেন পতিতা রয় ,পচে অন্ধকারে আজীবন ,
ব’য়ে যায় কীটের মতন ক্লান্তিকর জীবিকার ব্রত ?
অন্ধকার তার কাছে সহনীয় নবজন্ম , আলোই নর্দমা ।

( ৩ )

প্রতীক্ষা করে সে খদ্দেরের , বলা যায় সারাদিন
অর্থাৎ রোজগার না হ’লে খাদ্য জুটবে না তার
ঠেকেদার মালকিন ঘর ভাড়া দালাল-চক্রের কমিশন
উঠবে না । তাই প্রতীক্ষা করে সে খদ্দেরের ,
ঠাকুরের পদে
ইষ্টনাম জপে , গৃহদেবীর বেদীতে গড় করে ,
ষাষ্টাঙ্গ প্রণাম করে প্রতিদিন , সাধারণ সংসারী নারীর
চেয়ে অনুপাতে অবশ্যই বেশী । প্রথম খদ্দের
তার কাছে ঠাকুরের অশেষ কৃপার
আনন্দ-স্বরূপ হ’য়ে উঠে , অন্ততঃ সেটাই তার কাছে
মহামূল্যবান । দিনের বউনি সেটা , বণিক-তন্ত্রের সংস্কার
মেনে তারা কলঙ্কের অন্তরালে থেকেও নিজের
বৃত্তির সাফল্যের অর্চনা করে ধূপ ধুনো সহ নিত্য নিষিদ্ধ নিয়মে ,
নিজের নারীত্বের সর্বস্ব লুঠেরাকে স্মিতমুখে দিব্যি স্বাগত জানায় ।

( ৪ )

প্রতীক্ষা করে সে খদ্দেরের । কোনোদিন
খদ্দের না জুটলে বেজায় ক্ষিপ্ত হয় ,অশ্রাব্য খিস্তি খেউড়
দ্যায় অনাগত বেপথুমানতাহীন পৌরুষকে
প্রকারান্তরে সুদূর আলালী টেরি-কাটা ফুরফুরে
পোষাক আশাকে হাঁটা পেত্নীদের পাত-চাটা শহরের
কারবারী সমাজকে অসহিষ্ণু প্রেমের সতীন ।

বদরুদ্দোজা শেখু। কবি। জন্ম ১৯৫৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গরাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘিতে। অভাব অনটনের মধ্যে তাঁর বেড়ে উঠা। প্রথাগত শিক্ষায় স্নাতকোত্তর। পেশায় অবসরপ্রাপ্ত রাজ্য সরকারি কর্মচারী, নেশায় কবিতা লেখালিখি। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: অলৌকিক আত্মঘাত, দুঃস্বপ্নের নগরে নিভৃত নগ্ন, শব্দ ভেঙে...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..