সুন্দরীদের জন্য গান

বদরুদ্দোজা শেখু
কবিতা
Bengali
সুন্দরীদের জন্য গান

সুন্দরীদের জন্য গান

( ৯ )

ঊর্বশীরা কেউ কেউ গণিকা-বৃত্তিকে অভিনব
জীবন-চর্যায় পরিণত করেছেন খোদ স্বামী সন্তান পরিবৃত নিজের
সংসারের গণ্ডীর মধ্যেই পাশাপাশি অসঙ্কোচ নিপুণ কৌশলে ,
কাজের ফাঁকেই রমণ-পিপাসু অতিথিকে আপ্যায়ন ক’রে
ঘর দ্যান সব সময় ,যান্ত্রিক প্রথায় সঙ্গম সারেন দ্রুত , টাকা নিয়ে
বিদায় করেন , পাশের ঘরেই পরিজন স্বামী সন্তানের সংসার চলে
সকলেই সব কিছু জানে,এটা তাদের নিতান্ত মামুলি ব্যাপার
রুজির ব্যবসা এটা,গর্হিত অনভিপ্রেত ঘৃণ্য কিছু নয় ,
বরং ঢালাও কারবারের প্রচ্ছন্ন সায় ও মদত থাকে—
স্ত্রী কন্যার দেহদান উপার্জনে গৃহকর্তা রপ্ত তৃপ্ত স্বচ্ছন্দ স্বচ্ছল ।
সুন্দরী এখানে গিন্নী স্ত্রী জননী কন্যা প্রেমিকা গণিকা ,
একই নারী একই সাথে অনায়াসে এতগুলি ভূমিকায় অভিনয় করে ।
বলা যায় এটা অতি আধুনিক গণিকা-কালচার ।
হ্য়তো এটা গণিকা বৃত্তিকে নতুন পথের দিশা দিতে সক্ষম হবে ।
ভরণ পোষণের এই অক্ষমতা
কাপুরুষ পৌরুষের দায় , তবু
নারী সে স্বাধীন হোক স্বয়ম্ভর স্বেচ্ছা-নিয়ন্ত্রিত ।

( ১০ )

দৈবাৎ সেদিন দিন দুপুরেই
দেখলাম সেই অতি অভাবিত
দৃশ্যের দরোজা খুলে গেলো সোজা
আপনা থেকেই নিতান্তই ভুলে
পথ ভুল ক’রে রাস্তা পেরোনোর
জন্য যে সড়কে ঢুকলাম তার
প্রতিটি গৃহের প্রতিটি গলির
প্রতি মহল্লায় লহমায় খোলা
উপচানো ভিড়ে ঘিরে আছে শুধু
মধুর মদির মক্ষিরানিদের
বাণিজ্য-সরণি রূপ-লাবণির
প্রসাধনী-প্রীত দুর্বোধ্য হাসির
স্মিত ব্যঞ্জনায় অপাঙ্গ দৃষ্টির
নির্লজ্জ রেখায় দুষ্ট প্রেরণার
আকার ইঙ্গিতে বুক পাছা ঊরু
অবলীলাক্রমে খুলে ধরবার
মূর্ত সম্মোহনে অলৌকিক এক
পুষ্পের বাগান বিঘোষিত হয় ,
রূপ রস রেণু যারা নিতে যায়
তারা শুধু ছিঁড়ে’ তছনছ করে
পাপড়ির প্রেম প্রলুদ্ধ পাপের
কামুক থাবায় ,অনভ্যস্ত এক
পথিকের প্রায় দৃশ্য দেখলাম
গন্ধ শুঁকলাম পরাঙ্মুখ প্রেমে
অনাসক্ত মনে আশঙ্কা-মিশ্রিত
পদচারণায় দ্রুত ঠিক যেন
নষ্ট বাগানের ভ্রষ্ট বনবীথি
মাড়িয়ে এলাম রোমাঞ্চ-বিহ্বল ।
পরে জেনেছি যে ওটাই আসলে
বহুল-কথিত বৌবাজার গলি
পরতে পরতে বেশ্যার দেহলি।

( ১১ )

নারী আর নারী নিষিদ্ধ পিয়ারী
বাহারী বর্ত্তুল মাংসের মুকুল
লোমশ কন্দর কামের বন্দর
অন্দর মহল তির্যক বিলোল
বেআব্রু বসনা আলগা রসনা
স্থূল পীড়িতক ঋতুর কোরক
নখ বিলেখন লেহন মেহন
রমণ-মোহনা রতির গহনা
মূলের আতপ পায়রার খোপ
ক্ষুধার অনলে জ্বলে আর জ্বলে ,
স্নায়ুর মোহর ছোপে থরোথর
চর গলি ঘুঁচি অগম্যা অশুচি
চিতল নায়িকা হয় অনামিকা
কামোন্মাদ- পট গোপন সংকট
তার অবশেষে
করে নষ্ট ঘট পশুর দাপট
প্রেমিকের বেশে ।
এই শেষ নয় — বিরক্ত সময়
হয়না বিদায় , জীবিকার দায়
দেনা সম্মোহন রচে অনুখণ
দিন হপ্তা মাস যুবতী-নির্যাস
নিঙ্ড়ানো নারী ,সে বানায় তার-ই
পঙ্কিল সড়ক ফুলের নরক ।

( ১২ )

সুন্দরীর ভিড়, আহা, অগুনতি সুন্দরীর ভিড়
কোন্ দিকে চোখ রাখি? কাকে করি মোচ্ছবের নীড় ?
নীবির ঢিবির ভাঁজে কাজ করে আঙুলের ফুল ,
তুলতুলে ত্বকের চুমকি ছেয়ে চোখ ঢুলুঢুল ,
উলের উষ্ণতা নাকি একঘেয়ে ক্লীবতার ক্লেদ
ঝুল-ধরা নাভিমূলে লেগে আছে হুলের অভেদ ?
মেদবতী আরাধ্য অসতী সেই আদিম ক্ষুধার
দেবী জন্ম দ্যায় দেহে বিবরের বিরল সুধার?
আঁধারে জোনাকি জ্বলে মিলনের মোহন মানিক
চিকমিকে কামনায় চোরাবালি দাঁড়ায় খানিক
নাবিকের দুঃসাহসী মগ্নতায় ,নগ্ন লাস্যময়ী
রহস্য প্রকাশ করে অকাতরে বেআব্রু বিনয়ী,
অয়ি তিলোত্তমা বর্মী সিঙ্গাপুরী দ্রাবিড় সুন্দরী!
কাকে ধরি, কাকে ছাড়ি, মরি মরি অভিশপ্ত কড়ি
গুঁজে দিয়ে যাকে খুশী পাওয়া যায় ইচ্ছামতো, ডোমকানা মন
ক্ষমতা হারায় আর হ’য়ে যায় মৌন অঘটন ।

( ক্রমশঃ)

বদরুদ্দোজা শেখু। কবি। জন্ম ১৯৫৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গরাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘিতে। অভাব অনটনের মধ্যে তাঁর বেড়ে উঠা। প্রথাগত শিক্ষায় স্নাতকোত্তর। পেশায় অবসরপ্রাপ্ত রাজ্য সরকারি কর্মচারী, নেশায় কবিতা লেখালিখি। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: অলৌকিক আত্মঘাত, দুঃস্বপ্নের নগরে নিভৃত নগ্ন, শব্দ ভেঙে...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ