সুন্দরীদের জন্য গান

বদরুদ্দোজা শেখু
কবিতা
Bengali
সুন্দরীদের জন্য গান

ধারাবাহিক কবিতা
( পূর্ব-প্রকাশিতের পর)

( ১৩ )

বুঁদ হ’য়ে থাকতে চায় দুঃখ ভুলতে চায়,
অভিসারিকার কৃতি খদ্দের বিদায়
প্রেমে পেতে চায় পূর্ণ তৃপ্তি অনিবার ,
স্নায়ুতটে জেগে থাকে গুপ্ত ব্যাভিচার
নষ্ট প্রতিমায় ভ্রষ্ট মিলনের মঠ
চারুশিল্প প্রকরণে বিকৃত কপট
প্রতিজ্ঞায় ঋদ্ধ হয় , হৃদয় নামক
অতীন্দ্রিয় অভিধানে দ্রুত সংক্রামক
কামনার শব্দরাজি ফুলের তোড়ার
অনুধায় বিদ্ধ রয় ক্ষুধার খোঁয়াড় ;
আড়কাঠি অধিষ্ঠানে নগ্ন এলোচুল
খুলতে চায় তার সব , ভুলতে চায় ভুল
বারবার , মমতায় মগ্ন অন্ধকার
কম্প্র স্নায়ুতণ্ত্রে রতিলীলা দ্রুততার
অহংকার এনে দ্যায় যে ধ্বংসাবশেষ–
মোমের আগুনে নাচে যমের নির্দেশ ।

( ১৪ )

পরিচয় নাই , দুয়ারে দাঁড়াই
প্রশ্ন জাগে মনে পরিচয় চাই ,
আত্মকথা কেউ বলবে না জানি
গোপন ওদের এটা সাবধানী
নিয়মকানুন কুলাচার ব্রত
সদিচ্ছার কাছে নম্র সংযত
সম্ভ্রমী বিনয়ী বিষণ্ণ ভাষায়
অপাঙ্গ বয়ানে দূরের দিশায়
দৃষ্টির রহস্য হারায় সহসা
দুঃখী আতঙ্কের কাতর তমসা
ছায়া ফ্যালে দ্রুত ফুল্ল অবয়বে ,
ভিটেমাটি মন ক্ষুণ্ণ অগৌরবে
ভ’রে যায় , যেন পাপবিদ্ধা পরী
সেজেছে নিতান্ত নর্ম সহচরী
পূর্ণ অজ্ঞতায় অবস্থা বিপাকে
আজ অনুচ্চারে ভুলতে চায় তাকে ,
মৌন অনাগ্রহে এড়ায় আলাপ
হ’তে চায় দ্রুত কামের গোলাপ ;
মুহূর্ত্তের মৌজ আজ এতো বড়ো–
অতীতের খোঁজ মিছে কেন করো
বিষাদ-করুণ চোখে বলে কেউ ,
কিংবা আনকোরা গোয়েন্দার ফেউ
দ্যাখে কেউ অভিসারে, একরাশ
অনুতাপে কেউ খোলে ইতিহাস
অতি সন্তর্পণে,মনের নাগর
পেলে কোনোদিন ব্যগ্র কোজাগর।
জিন্না রীতা হাঁসু মর্জিনা মালতী
দেহাত-দুহিতা বিলক্ষণ সতী
দালাল-চক্রের চাকরির টোপে
প’ড়ে যায় নারী-পাচারের কোপে
পাঁচ হাত ঘুরে পরে অন্ধকার
দেহ-ব্যবসার ব্রত হয় সার
স্বপ্ন তার সব দুঃস্বপ্নই হয়
সোজা পথ আর খোলে না সময় ,
হৃদয়হীনের ভাগাড়ে কোমল
হৃদয় হারায় সব পরিমল
নিষিদ্ধ পল্লীতে পচে নিরুপায়
বিশ্ব-নারীত্বের নগ্ন অসহায়
এই রূপ যেন বিবেক-বিরাণ
কসাইখানায় ফুলের চালান ,
দুর্বৃত্ত দালাল আওরত আদম
ব্যবসা বানায় তাকে বেশরম
নীচ গণিকার , সেই অধঃপাত
নারকী সমাজে শ্রেষ্ঠ কালো হাত ।

( ১৫ )

বস্ত্র আর আলো
উভয়ের প্রদর্শনী নগরীতে ঢালো
ঝলমলে রাত্রিদিন ,বড়ো লাস্যময়ী
হ’য়ে ওঠে যখন তখন এই প্রকাশ্য মৃন্ময়ী
মহানগর , সদর রাস্তার চোরা গর্ত অন্ধকার
বস্তি ক্ষুধা হতাশার
দুঃখ ক্লেদ জ’মে থাকে
রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রতিটি ইটের ফাঁকে ।
বেশ্যারাও লাস্যময়ী বারাঙ্গনা বধূ
রূপরস বিকিকিনি নগরীর মধু
অন্তরাল দুঃখ ক্লেদ হতাশার সখি
নিত্যদিন ঘ্যানঘেনে জঘন-জনকী,
মনে হয় লাস্যময়ী বেশ্যা ও নগরী
ইজ্জতের ইজারাদার কিনে শুধু কড়ি ,
প্রকাশ্য গোপন এই উভয়ের ছক
একে অপরের ওতপ্রোত পরিপূরক ।

( ১৬ )

মন নয় , মায়া নয়, ভালবাসা নয়
যৌন আশ্লেষ আর কড়ি বিনিময়
মধ্যিখানে কমিশন কারবারের জাল
সংগোপনে ফয়দা তোলে ; নেপথ্য আড়াল
অন্ধকারে বিপন্ন বেপথুমান নারী
পর্যায়ক্রমিক ঘ্যানঘেনে রমণ-পসারী
অবসন্নতায় কাঁদে বিষাদ-জর্জর ক্লেদাতুর ,
উঠে যায় পুরুষেরা সম্ভোগের সুখের ঢেকুর
তুলে চৌরাস্তায় , এতো সস্তায় আর
শরীরের স্নায়ুতন্ত্রে আনন্দ কেনার
আয়োজন উপচার এ বাজারে নাই ,
মেনকার ঘাই-ধরা কান্না গুমরায়
পায়রা-খোপের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ,দীক্ষাসত্রে আদিম অসতী
অজস্র পুরুষ পায় , পায় না সে পতি ,
সাজায় সবাই তাকে অসহিষ্ণু আসঙ্গের রাণী ,
সাবধানী নয় কেউ , কাপুরুষ কুলাঙ্গার প্রাণী ,
বেসাতির ঘানিঘরে কীটের মতন আসে যায় ,
প্রেম সে ভাড়ার গাড়ী নারী চেপে চায় ,
চেকনাই বনিতার রূপ-রস-রঙে বুঁদ হ’য়ে ডুবা
সত্ত্বার স্বভাব-দোষে ব’লে উঠে ‘মেহবুবা , মেহবুবা’ ।
( ক্রমশঃ)

বদরুদ্দোজা শেখু। কবি। জন্ম ১৯৫৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গরাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘিতে। অভাব অনটনের মধ্যে তাঁর বেড়ে উঠা। প্রথাগত শিক্ষায় স্নাতকোত্তর। পেশায় অবসরপ্রাপ্ত রাজ্য সরকারি কর্মচারী, নেশায় কবিতা লেখালিখি। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: অলৌকিক আত্মঘাত, দুঃস্বপ্নের নগরে নিভৃত নগ্ন, শব্দ ভেঙে...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ