সুপ্তা সাবিত্রীর কবিতা

সুপ্তা সাবিত্রী
কবিতা
সুপ্তা সাবিত্রীর কবিতা

মে’র মৃতবৎসা সন্ধ্যায়

দৃশ্যত যখন মরে যাও
ডানার নিচে চাকার দাগ অস্পষ্ট থাকে
তখনো বগলের ঘামে সূর্য ডোবে না
তখনো সমুদ্র শুকিয়ে যেতে অনেক দিন লেগে যায়।
হাড়ক্ষয়ী বাতাসে কাঁপতে কাঁপতে, রোজ
রোজমেরির সুগন্ধ বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।
একদিন, কোন এক অন্ধ বিড়ালের ঋণ
এড়িয়েছো বলে কফিনের জানালা খুলে রাখা দায়
ভীষণ, ঝাউবনে ভয় নামে।
যখন তুমি সত্যিই মরে যাও কিংবা
দৃশ্যত মরে যাওয়া হয় এক কাপ কফির ক্ষেতে
সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে- তখনো তুমি জানো না
বাঘের স্বর থেকেও বর্ণমালা চুরি হয়।
ওদেরও লবণের সংসার হয় রীতিমতো
ব্যাকরণিক নিয়ম মেনে।
আসলে কানের পাশ ঘেঁষে আসা প্রেম
বসন্ত এড়াতে পারে না
ক্যালেন্ডারের বুকে তাই মে’র সন্ধ্যা মৃতবৎসা
অকুলান স্নেহে দেয়াল ভিজে আসে।

 

শব্দঋণ

আমাকে পান করো আমৃত্যু কোলাহলে।
গূঢ় গাণিতিকতায়—ছন্দ ফেলে,
নামতার পারদে নামাও উঠাও জ্বর।
নির্মোক জড়িয়ে গতকাল
পার হয়ে এসে,মহাকাশে স্থির হতে চায়
আগামীর ভয় নেই বলে—
ভয় নেই অন্ধকার শূন্যতায়।
আলোর তাড়নে শব্দকাতর ওরা
সাপের জীবন পড়ে, গুনগুন স্বরে
পিতা আসেন তার ভেতর।হাত বুলিয়ে
নিয়ে যান, খণ্ডিত কোন ঘোরে—
জলের রঙে তরল অঙ্কপাত
আর পারি না, সমাধানে শত ভেদ।
তারচেয়ে এই ভালো—
বকের শাদায় ঘুমিয়ে পড়ি, চলো…

শব্দের ঋণে কাতর ঘোড়াগুলি
দলে দলে এগিয়ে আসছে দেখো—
দুলছে পায়ের পেশি,পৃথিবীর চাঁদ
বেণী করা মেঘে উঁকি দেয়, শোঁকো…
ঘ্রাণ পাচ্ছো? ডানার ভাঁজে লবণিমা
এঁকে এঁকে লক্ষ জোনাক মরে গ্যাছে
আলো জ্বেলে।ঘোড়াদের ক্ষুরে নতুন
জলের গান, দেউলিয়া হলে মুছে দেবো
চকের দোকান ঘর—ব্ল্যাকবোর্ডে শুধু
নামতার কড়া নেড়ে উড়ে উড়ে যাবে
জোনাক পোকার মাত্রাবিহীন স্বর।

 

মাৎসর্য কাল

পর্যাপ্ত লবণের অভাবে আলাদীন ঘুমুতে ভুলে গেছে। বীভৎস যৌবনে এসে একই অনাচারে ডুবেছে নগর। রাজপথ গাইতে ভুলে গেছে,শোকার্ত জননীর পাথর চোখে মহাকালের শূন্যতা। খবরের কাগজের কয়েক পাতা বাঁশখালীর উদার চরে উড়ছে। নগণ্য বাতাস কাঁপে থরথর আশায়…

বিপর্যস্ত কালে উড়ন্ত কাগজের ডানা হোক। ডানাভাঙা শব্দের পরাস্ত চরাচরে কিছুক্ষণ উড়ুক নিজের আদেশে। আলাদীন স্বপ্নচারী হতে শেখেনি।ঝর্ণাকলমের কালি ফুরালে ঝরঝর শব্দে উপচানো মানিকের এক বুক ঢেউ—এসে তার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়তো না।

তবু…

সহস্র বছর পরে,মানবতার বুকে পা রেখে উড়তে শিখেছে সে। বালুচর ভেদ করে আসে স্বেদ; বখতিয়ার যে ডানায় উড়িয়ে দিয়েছিলো লক্ষণাবতীর ওড়না, তাতে পৃথিবীর স্তনে আসে জ্বরের প্রাবল্য।
প্রিও আলাদীন…

তৃষাতুর মুখে তুলে নাও প্রেমের লাবন্য সুধা। এই অমিয় পানে পাপ নেই। বিচ্ছেদের গতায়ু ফুরিয়ে এলে আসে কামনার মাৎসর্য কাল।

সুপ্তা সাবিত্রী। কবি। জন্ম, নোয়াখালি জেলায়। কবিতা চর্চা করছেন ২০১৬ সাল থেকে। সুপ্তা সাবিত্রীর এখনও কোনো গ্রন্থ প্রকাশিত হয়নি। কিন্তু এই অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি তাঁর কবিতায় মনোযোগী পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..