আজ বিকেলে একটি মেয়ের সুরতহাল করে এসেছি। থানা থেকে ম্যাজিস্ট্রেটকে ডেকে পাঠায়। বলে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে একটি বধূর। সুরতহাল করতে হবে। বডি ছিল হাসপাতালের মুর্দা ঘরে।
আমি গেলাম। আমি বডি দেখে অভ্যস্ত। দেখতে হয় মৃত মেয়ের বিয়ে কবে হয়েছিল। আর বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ির লোকজন তার সঙ্গে কি রকম ব্যবহার করত। বিয়ের সাত বছরের মধ্যে বধূর অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে ভারতীয় আইন স্বামী ও স্বামীর বাড়ির আত্মীয়দের ভীষণভাবে সন্দেহ করে।
তবে মেয়ের বিয়ে হয়ে গেলে বাপ মায়ের কাছে মেয়ে পর হয়ে যায়। সে হয়ে যায় জামাইয়ের বাড়ির লোক। তাকে নিজের নাড়িছেঁড়া ধন মনে করতে ভুলতে শিখতে হয় মাকে। গড়পড়তা ভারতীয় বাবা কোনোদিনই মেয়েকে সেভাবে আপন মনে করে না। মেয়ে তার কাছে নিছকই কন্যাদায়।
বিডিওর চেয়ারে বসে এইসব কথা মাথায় ঘোরে। আমাকে কন্যাশ্রী দিবস পালন করতে হয়। কন্যাটিকে লেখাপড়ার খরচ দিতে বাপের তরফে ইচ্ছার ঘাটতি থাকে। মেয়েদের আবার অত লেখাপড়ার বাই কেন! খোদ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এমনকি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় পর্যন্ত নিজের মেয়েকে প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ায় জোরদার উৎসাহ দিতে পারেন নি। অথবা চান নি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তো ধরে ধরে অপদার্থ সব জামাইয়ের হাতে কচি কচি মেয়েদের তুলে দিয়েছেন। একটা মেয়েও সুখী হয় নি বিশ্বকবির।
সরকার মেয়েদের আইনসভায় নিয়ে আসতে আসন সংরক্ষণ করছেন। সরকার মেয়েদের গ্রামপ্রধান, আর পঞ্চায়েতী রাজে জায়গা করে দিতে আইন প্রয়োগ করছেন, সরকার মেয়েদের মা হবার সময় আর্থিক সহায়তা প্রদান করছেন। তবু মেয়েরা মরছে। কেননা, সমাজ চাইছে না।
শংকর গুহনিয়োগীকে মনে পড়ে। তিনি ছত্রিশগড় মধ্যপ্রদেশে শ্রমিকদের মজুরিবৃদ্ধির আন্দোলন গড়ে তুলতেন। তাঁর লাগাতার চেষ্টায় শ্রমিকদের মজুরি বাড়ত। তবে দিন বদলাত না। তার কারণ মদ।
কষ্টসাধ্য আন্দোলন করে শ্রমিকদের যেটুকু মজুরি বাড়ত, তা তার সংসারের হাল ফেরাতে বা ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া করাতে কাজে লাগত না। তা যেত বাড়তি মদ খেতে। মদ খেয়ে উন্মত্ত শ্রমিক বাড়িতে ফিরে বউ আর মেয়েকে পেটাত।
শংকর গুহনিয়োগী মজুরি বৃদ্ধি আন্দোলনের ফল দেখে বিপন্ন বোধ করে শ্রমিক পরিবারের বউ মেয়েদের বললেন মদ্যপ পুরুষদের সঙ্গে অসহযোগিতা করতে।
বললেন, ওদেরকে রান্না করে দিও না, আর কাছে শুতেও দিও না। বউদের কাছে গড়পড়তা ভারতীয় পুরুষের চাহিদা অবশ্য ওটুকুই। বৃথাই কবি ভেবেছিলেন পত্নী মানে গৃহিণী, সখী, সচিব, ললিত কলাবিধির সহভাগিনী। ভারতীয় পুরুষ জানে বউ মানে রেঁধে দেওয়া আর যৌন ফূর্তির জ্যান্ত যন্ত্র বিশেষ। বহু পুরুষ মানুষ একবার ভেবে পর্যন্ত দ্যাখে না, বউয়ের খাবার কতটুকু রইল। আরো বেশি পুরুষ ভাবেই না যৌনসংসর্গে তার বউয়েরও অর্গাজম হল কি না। ওইজন্য ভারতীয় আইনি ব্যবস্থা ম্যারিটাল রেপকে অপরাধ বলে দাগাতে ভয় পান। কেননা অত বেশি সংখ্যক অপরাধীর বিচার করা শক্ত। ভারতে ম্যারিটাল রেপকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বললে বিচারপতি প্রশাসক মন্ত্রী সান্ত্রী অনেকেই গারদের আড়ালে চলে যেতে বাধ্য হবেন।
তো শংকর গুহনিয়োগীর প্ল্যান অর্ধেকটা সফল হয়েছিল। বউ বাহিনীর অহিংস অসহযোগে পুরুষের দল মদ ছাড়তে বাধ্য হয়। কিন্তু মদের লবি কঠিন ঠাঁই। তারা লোক লাগিয়ে শংকরকে খুন করাল। ভাড়াটে খুনির শাস্তি হল। যারা খুনিদের ভাড়া করেছিল, সেই মদের লবির কর্তাদের টিকি ছুঁতে পারা গেল না।
শংকর মারা পড়তে মদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার লোক আর বিশেষ রইল না। রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীদের ভোটের জোট বানাবার আর সরকারকে চোখের মণি করে রাখবার দায় ছিল। বড় ব্যবসায়ীদের চটিয়ে সে সব সম্ভব ছিল না।
তো আমার মতো খুচরো অফিসারের কাজ হল রাবড়ি বানানো। মানে নিচে আগুন জ্বালিয়ে রেখে উপরে হাওয়া করতে থাকা। তবেই রাবড়ি তৈরি হয়। সমাজে প্রচলিত ঠকাবাজি ব্যবস্থা, লটারি, মদ, বেশ্যাপল্লীতে মেয়ে যোগানো, ভেজাল এবং ভোটলুঠ অক্ষুণ্ন রেখে সামাজিক ন্যায় ও সুরক্ষার অভিনয় করে যাওয়া।
বডি দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম মেয়েটি ইচ্ছা করে গায়ে আগুন লাগায় নি। রান্না করতে গিয়ে কখনো ছ্যাঁকা খেয়েছেন? খেয়ে থাকলে বুঝবেন, শখ করে গায়ে আগুন লাগানো যায় না।
মেয়েটির জিভটা অনেকখানি বেরিয়ে এসেছিল। কালি ঠাকুরের জিভ যেমন বেরিয়ে থাকে। কণ্ঠে একটা হাড় থাকে। ওকে বলে হাইয়ড বোন। ওটাই কণ্ঠনালীর মধ্যে মাংসল জিভের গোড়াটাকে ধরে রাখে। শ্বাসরোধ করে মারার সময় মুঠির ধাক্কায় ওই হাইয়ড বোন ভেঙে যেতে পারে। ভেঙে এদিক ওদিক সরে যেতে পারে। তখন আর জিভকে ধরে রাখার সুযোগ থাকে না। তাই জিভটা বেরিয়ে আসে অনেকখানি।
ঘুম আসছে না। দরজায় টোকা মারছে কে। আমি উঠব না। এত রাতে কে আমার ঘরে টোকা দেবে? কেন দেবে? আমি বিডিও বলে কি মানুষ নয়? নিশুতি রাতেও আমাকে উঠে পড়ে কাজ করতে যেতে হবে! আমি যাব না। শীতের রাত। মটকা মেরে পড়ে আছি। হুঁ, আওয়াজ এবার বেশ স্পষ্ট। আমি মুখের উপর কম্বলটা টেনে নিলাম। কানে ওই টোকার আওয়াজ ঢুকতে পর্যন্ত দেব না।
কাচের জানালার উপর পরদা টানা আছে। বাইরে চাঁদ খুব আলো ছড়িয়েছে। ও চাঁদ, আমি তোমাকে ভাল মতো জানি। তুমি মোটেও অপার্থিব মোহময়ী নও। শক্ত কালো এবড়ো খেবড়ো পাথুরে একটা চিজ। সূর্যের আলো ঠিকরে আসে তাই। তোমার গা মসৃণ আর তেল চুকচুকে হলে সর্বনাশ হত। আর তাকানো যেত না। এবড়ো খেবড়ো গা বলে ম্যানেজ হয়ে গিয়েছে। যাই হোক, তোমাকে আমি পাত্তা দিই না। থাকো তুমি নিজেকে নিয়ে মশগুল হয়ে। আমি পরদা টেনে রেখে তোমাকে আড়ালে রেখেছি।
সোনা কাকিমা চেঁচাচ্ছে। ওগো, কে কোথায় আছো, বাঁচাও। আমায় মেরে ফেলল গো। সোনা কাকা মদ খেয়ে এসে বউকে বেধড়ক পিটছে। কাপড় টেনে খুলে নিয়েছে। সায়া আর ব্লাউজ পরে উঠোনময় দৌড়ে বেড়াচ্ছে কাকিমা। সায়ার দড়িতে টান পড়লে কী হবে আমি জানি।
বাবা মাকে বলছে, আমি গিয়ে মেয়েটাকে বাঁচাই? মা চোখ কটমট করে বলছে, ওদের স্বামী স্ত্রীর ব্যাপারে খবরদার নাক গলাবে না। বাবা বলছে, তা বলে বউকে চোরের ঠ্যাঙান ঠ্যাঙাবে? মা হিসহিস করে বলছে, পরের বউয়ের ওপর খুব যে দরদ দেখছি!
সোনা কাকিমা বাঁজা মেয়েছেলে। বাঁজা কাকে বলে আমি জানি। যে বউদের বাচ্চা হয় না, তাদের বাঁজা বলে। আচ্ছা, ছেলেরা বাঁজা হয় না, না? সোনা কাকিমা কত ঠাকুর পুজো করে। সব ঠাকুরের মন্দিরে মাথা ঠোকে। একদিন ভিজে কাপড়ে ঘরে যাচ্ছিল, কোমরের কাছে শাড়িটা ঠিকমতো পরা ছিল না। সেদিন দেখেছি, একগাদা শিকড় বাকড় মাদুলি তাবিজ বাঁধা।
আমি জোরে জোরে নিউটনের তৃতীয় সূত্র মুখস্থ করতে থাকি। প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান এবং বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া আছে। মা বলে, কুঁচি দিয়ে শাড়ি পরে বিকেলে যখন হাওয়া খেতে বেরিয়েছিল, তখন মনে ছিল না, স্বামী ওসব পছন্দ করে না! বাবা বলে, কুঁচি দিয়ে শাড়ি পরবে না তো, কেমন করে শাড়ি পরবে?
মা বাবাকে চোখ পাকায়। খবরদার, ওই ডাইনির দিকে তুমি চোখ দেবে না। বাপ রে, যে নিচু করে শাড়ি পরে ও। ম্যাগোঃ!
আচ্ছা, প্রত্যেক ক্রিয়ারই যদি সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া থাকে তবে সোনা কাকিমা মাঝে মধ্যেই এরকম বেধড়ক মার খায় কেন? মাঝে সাঝে লাঠিটা তো কাকিমার হাতেও থাকতে পারে!
আমার মাধ্যমিক পরীক্ষার কয়েকদিন আগে সোনা কাকিমা শেষ বারের মতো বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। কপাল জুড়ে সিঁদুর মাখামাখি। পায়ে আলতার শিশি খালি করে দেওয়া হয়েছিল। খাটিয়ায় শুয়ে শুয়ে কাকিমা চলে গেল। পাড়ার সবাই বলল, সতীলক্ষ্মী ছিল গো। অক্ষয় সগগোবাস হোক।
পুলিশ এলে বাবা লুঙ্গির কষি বাঁধতে বাঁধতে গিয়ে বলেছিল, রাতে মাংস দিয়ে ভাত খেয়ে বদহজম হয়ে হার্টফেল হয়েছিল। পুলিশ চোখ রাঙিয়ে বলেছিল, কোন্ মেডিক্যাল কলেজের থেকে পাশ করা ডাক্তার আপনি? আরেক জ্যাঠা তখন গিয়ে একটা নোটের বাণ্ডিল ধরিয়ে দিয়ে পুলিশের লোককে ম্যানেজ করেছিল।
পুলিশের লোককে ম্যানেজ করাটা দোষের কিচ্ছু নয়। জোড়াসাঁকোর বাড়িতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নতুন বউঠানের যখন অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়, তখন উপনিষদ ভালবাসা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর পঞ্চাশটি টাকা দিয়ে পুলিশকে ম্যানেজ করেছিলেন। সে যুগে সোনার ভরি ছিল সাতটাকা।
‘বল হরি’ ধ্বনি দিতে দিতে যখন কাকিমাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তখন আমায় ফ্যালফেলিয়ে চেয়ে থাকতে দেখে মা আমার হাতের নড়া ধরে ঘরে ঢুকিয়ে এনে খিল লাগিয়ে দিল। বলল, হতচ্ছাড়ি আর মরবার টাইম পেল না। ঠিক আমার ছেলেটার পরীক্ষার আগেই মরতে ইচ্ছে করল!
কেমন করে মানুষ মরে যায়, মারা যাবার পর দেহটাকে পুড়িয়ে ফেলার পর কী হয়, আত্মা কোথায় ঘুরে ঘুরে বেড়ায়, সব আমার জানতে ইচ্ছে করত। অভেদানন্দ স্বামীর একটা বই আমাদের ঘরে ছিল। বইটার নাম ছিল মরণের পারে। পরে জেনেছি, অভেদানন্দ এক রকম খামখেয়ালিপনা করেই ওই বই লিখেছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বেশ প্লানচেট করতেন। সেই শুনে আমিও প্লানচেট করে সোনা কাকিমার খোঁজ খবর পেতে চাইতাম। কিন্তু আমার শত চেষ্টাতেও কাকিমা সাড়া দিতেন না।
কাচের জানালার পাশে পরদাটা একটু সরে গিয়েছে। আমি দেখি কে একজন মহিলা মুখ বাড়াচ্ছে। তাকিয়ে আমি অবাক হয়ে গেলাম। আশ্চর্য, এ তো সোনা কাকিমা! সেই রকম কপাল ভর্তি সিঁদুর, আর লাল শাড়ি গায়ে! কাকিমা বললেন, খোকা কখন থেকে তোমাকে ডাকছি। তুমি দরজাটা একটু খোলো তো। কথা আছে।
যে সোনা কাকিমাকে আমি প্লানচেট করে এতবার ডেকেছি, অথচ তিনি সাড়া শব্দ করেননি, আজ তাঁর কি হল যে, নিজে যেচে ডাকাডাকি করছেন!
মৃত্যুর পর তো তাঁর দেহ শ্মশানে দাহ করা হয়েছে। তারপর অপঘাতে মৃত্যু হয়েছে বলে তিন দিনে সব মিটিয়ে ফেলা হয়েছে। তারপর এক বামুনের ছেলেকে খরচপত্র দিয়ে গয়ায় পিণ্ডি দেওয়ানো হয়েছিল। তাহলে এখন আবার কাকিমার কী দরকার পড়ল! মনস্বিতা পাশে ঘুমোচ্ছে। আচ্ছা ঘুমোতে পারে বটে বউটা। ঘুমিয়ে পড়লে মড়ার মতো ঘুমোয়। ওর সঙ্গে এখন এ নিয়ে আলোচনা করা যাবে না। সেই কবে মরে যাওয়া কাকিমা নিশুতি রাতে কথা বলতে চেয়ে দোর ঠেলছে বললে, সে হাঁউমাউ করে কান্নাকাটি জুড়ে দেবে। বিএসসি অনার্স হলে কী হবে, বুদ্ধি শুদ্ধি মোটেও পাকে নি। কী করে একটা সিচুয়েশন ট্যাকল করতে হয়, তাই জানে না। কাকিমাকে বললাম, ইয়ে, দ্যাখো না, এত রাতে বিছানায় আমার বউটাকে ঘুম ভেঙে তুলতে পারছি না। তুমি জানলা দিয়েই বলো না কী বলবে।
কাকিমা বললেন, তুমি আজকে যে মেয়েটার ব্যাপারে তদন্ত করে এলে, সেটা ঠিক হয় নি।
কেন বলো তো কাকিমা? গোলমাল কোথায় হল?
দ্যাখো, মেয়েটার বরের কিন্তু জেলে যাবার ব্যবস্থা করে ফেলেছ তোমার রিপোর্টে।
কিঞ্চিৎ বিরক্ত হয়ে বললাম, তো আমার মনে হয়েছে মেয়েটাকে গলা টিপে মারা হয়েছিল। জিভটা ওইভাবে বেরিয়ে এসেছে দেখেছি। তারপর গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে দেওয়া হয়েছে। হঠাৎ করে মনে পড়ে গেল সুব্রত মুখার্জি শম্পা বৌঠানের হাতে কেরোসিনের বোতল ধরিয়ে দিয়ে বলেছিল, যাও রাস্তায় বেরিয়ে গিয়ে গায়ে আগুন দাও। কাকিমাকে বললাম, এই মেয়েটা কিন্তু সুইসাইড করে নি। ওকে মারা হয়েছে।
কাকিমা শান্ত গলায় বললেন, যা হয়েছে হয়েছে। কিন্তু তোমার রিপোর্টের ফলে কি হতে যাচ্ছে, সেটা একবার ভেবে দেখবে না?
আশ্চর্য হয়ে বললাম, তুমি একটা খুনির হয়ে সাফাই গাইতে এসেছ কাকিমা? আমি তোমাকে অন্য রকম জানতাম।
কাকিমা রহস্যময় একটা হাসি হাসলেন। তোমার কাকা যে আমার গলা টিপে খুন করেছিল, সে তো তুমি জানো না। তোমাদের বাড়ির সবাই বলল আমি না কি এমনি এমনিই মরে গিয়েছি। আমার পেটে বাচ্চা এসেছিল জানো? তোমার কাকা সেই নিয়ে সন্দেহবাতিকে ভুগত।
বললাম, আমার রিপোর্ট নিয়ে তুমি এত মাথা ঘামাচ্ছ কেন?
কাকিমা বলল, ঘামাতাম না, যদি না ওদের একটা বাচ্চা থাকত। বাবাটা জেলে গেলে বাচ্চাটাকে দেখবে কে? তোমার রিপোর্ট দেখে মেয়েটা খুব কান্নাকাটি করছে!
আশ্চর্য কাণ্ড তো! আমি কি না তার জন্যেই এতকিছু খুঁটিনাটি লিখলাম। আর সেই মেয়েই আপত্তি তুলছে!
কাকিমা বলল, পুলিশের কাছে গিয়ে কাল তোমার রিপোর্টটা পালটে দিও। বোলো, যে মেয়েটা বেখেয়ালে রান্না করতে গিয়ে গায়ে আগুন লাগিয়ে ফেলেছে।
বললাম, তোমার কথায় আমি রিপোর্ট বদলাব না। যা খুশি করো গে তোমরা!
হালকা বাষ্পের মতো মিলিয়ে গেল কাকিমা। আমি মনস্বিতার নাভিমূলে হাত রাখলাম। ওর গভীরে টুকবুক করছে আমার সন্তান। মনস্বিতা আমার দিকে ফিরে ঘুমের ঘোরেই আমার গলা জড়িয়ে ধরল। আমি অস্ফুটে বললাম, কাকিমা আর কক্ষনো আমাদের শোবার ঘরের জানলায় উঁকি দিও না।