চেয়ারম্যান সাহেব খুব অনেস্ট
মাকেন্দো গ্রামে ভীষণ বিপর্যয় নেমে আসে। এ গ্রামের কৃষক ও কারিগরেরা শ্রমে-রক্ত-ঘামে যে টাকা-পয়সা…..
সেকেন্ড হোমার ইলিয়াড ওডিসির রচয়িতা হোমারের মতোই অন্ধ। হোমার যে হেলেন অফ ট্রয়ের গল্প বলেছিলেন; সেকেন্ড হোমার সেখানে হেলেন অফ জয়ের এক একটি চরিত্র; যারা আনাতোলিয়ার নির্বাচনী আসনে জমিদারি প্রতিষ্ঠা করে; পাওয়ার প্ল্যান্ট বা ক্ষমতা বৃক্ষ দেবীর আশীর্বাদে নিজ নিজ এলাকায় টাকার বৃক্ষ রোপণ করে।
এই টাকার বৃক্ষে দেশপ্রেমের সার লাগে; জাতীয়তাবাদের সেচ লাগে; চেতনার চেকপোস্টের টাকামালিদের নিড়ানি লাগে। ধর্মের গিলাফ লাগে; শোকরানা মেহেফিলের গোলাপজল লাগে। একটি টাকার ফুলকে বাঁচাতে যারা অতীতের সঙ্গে ছায়াযুদ্ধ করে।
এলাকার কৃষক যখন ধানের দাম না পেয়ে ধানে আগুন দেয়; তখন সেকেন্ড হোমার দূর্জয় মানবতার কাস্তে হাতে হেলমেট পরে ধানক্ষেতে নেমে পড়ে। ধানক্ষেতে দেবদূতের পদচারণায় স্তুতি রচিত হয় ফেসবুক ক্ষেতের চারিপাশে। চেতনার ঠোঁট মজুরেরা জারি গান গায়, ‘ও কৃষক তোমার দুইডো কান শোনবা; দুইডো চোখ দেখপা; কিন্তু একটা মুখ তো; ইট্টু কম কথা কবা’।
সেই থেকে কৃষক নিশ্চুপ হয়ে যায় আনাতোলিয়ায়। অন্ধ সেকেন্ড হোমার আর ফিরেও দেখে না; কৃষকের জীবন কতোটা পুড়লো; কতটা ছাই।
এইভাবে সেকেন্ড হোমারেরা পাওয়ার প্ল্যান্টের পদযুগল স্পর্শ করে আশীর্বাদ নিলে; ৩০০ টি টাকার বৃক্ষ জন্ম নেয় টেকাস্তানে। জিডিপির দই খেয়ে আঙ্গুল চাটার দলের কারণে আনাতোলিয়াকে গোটা বিশ্ব এখন টেকাস্তান নামেই চেনে। তারপর আর কোন বৃক্ষ জন্মেনা এখানে। কবিতার বৃক্ষেরা মরে যায়; পাওয়ার প্ল্যান্টের অপার মহিমায়; গানের বৃক্ষের পাতা ঝরে যায় পাওয়ার প্ল্যান্টের রাজকীয় সংগীতের বন্যায়।
৩০০টি পাওয়ার প্ল্যান্টের মালিক অন্ধ সেকেন্ড হোমারেরা তখন সাফল্যের শিখরে। টেকাস্তানে শিখরে উঠলে মনের মধ্যে বাইজি নাচে; খুশি জল আর জুয়ার আসরে রেড স্প্যারোর সংরক্ষিত আসনে হেলেন অফ জয় বসে থাকে। মখমলের লাল পর্দা নড়ে ওঠে প্রাইভেট শো’র খাজুরাহে। ঝাকাঝাকা ঝাকা ঝাকা দেহ দোলা না।
পিউ পাপিয়ার ঝাকানাকা নাচে আনাতোলিয়ার আকাশে আতশবাজি হয়। দেশপ্রেমের লিপ সার্ভিসে কালচারাল ভটভটির আলোচনা আসরে; অনেক আগের ট্রয় যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির গল্প হয়। কিন্তু আজকের জীবন্মৃত কৃষকের বিপন্নতার কথা ওঠে না। কেউ বর্তমানের কথা বললে; চেতনার চেকপোস্টের নিড়ানি সেনারা এসে তাকে ‘ট্রয় যুদ্ধে’-র স্বপক্ষ শক্তি বলে; কপালে বৃক্ষদেবির মূর্তি আঁকা আধুলির ছ্যাঁকা দিয়ে দেয়।
সেকেন্ড হোমাররা ফেসবুকের কানাগলির ধারে অভিজ্ঞ ডিশ ওয়াশিং ওয়ার্কশপের ক্ষুদ্র সাইদুল, গুলতান মির্জা, বাল্টন, বলদাদের জাতীয়তাবাদের মিনার্ভার কাঠের ঘোড়ার মধ্যে লুকিয়ে রেখে; মাঝে মাঝে গেরিলা যুদ্ধে পাঠায়। আনাতোলিয়ার কৃষক মরে যাওয়া, কবিতার কিংবা গানের বৃক্ষ উজাড় হয়ে যাবার বলসোনার ছেলেদের কেউ মানবতাবিরোধী বললে; ডিশ ওয়াশিং ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ; প্লেট-গ্লাস ধোয়া ময়লা পানি তার মুখে ছুড়ে মারা।
এইভাবে কৃষক-কবিতা-গান উজাড়ের সিসটেমেটিক ক্লেনজিং-টিকে পাওয়ার প্ল্যান্টের ব্যাংক অফ হিস্ট্রির অতীত চাদর দিয়ে ডেকে রাখার নাগ-নাগিনীর খেলার মাঝে; কল্পনা হারিয়ে যাওয়া পূর্ণিমাতে জলপাই গাছের নীচে মানবতার তনু দংশন করা হয়। পাওয়ার প্ল্যান্টের সুশীতল ছায়ার জন্য জলপাই অতীব প্রয়োজনীয় বৃক্ষ। তাই এই মারণ জলপাই বৃক্ষটিকে টিকিয়ে রাখা হয় ৩০০ টাকার বৃক্ষের মতো করেই।
দুর্জয় টাকার গাছের টাকা নিয়ে অন্ধ সেকেন্ড হোমারদের স্ত্রী-কন্যা-পুত্রেরা আনাতোলিয়া ছেড়ে চলে যায় একে একে। পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় বিশ্রামে হত বেগম বিলাস বৃক্ষ ফুঁড়ে ওঠে; আনাতোলিয়ার মানুষের রক্ত শুষে নিয়ে বাম্পার ফলন দেয়া টাকার গাছগুলোর নিশ্চয়তায়।
আনাতোলিয়ার বিজন গ্রামের অন্ধ সেকেন্ড হোমারের স্ত্রী পাওয়ার প্ল্যান্টের আশীর্বাদে সংরক্ষিত টাকার গাছ হয়ে পড়লে; পাপের লু হাওয়া দূরের এক মরুভূমিতে গিয়ে সেখানে আনাতোলিয়ার সেকেন্ড হোমার হবার স্বপ্ন জারিত করে। সেই টেকাস্তানের ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়ে সেখানকার ছোট ছোট পাওয়ার প্ল্যান্ট। এইভাবে টেকাস্তানের পাওয়ার প্ল্যান্টের রেনেসাঁর আলোতে গোটা পৃথিবীতে জন্ম নিতে থাকে কাম-ক্রোধ-লোভ-মোহ-মাতসর্য-পাপিয়া-পাপলু-পাপাচার্য।
আনাতোলিয়ার কৃষক-কবিতা-গান ফিরে পেতে আকুল কাজল সাঁঝ; দেশপ্রেমের নামে এইসব বুলবুলি আখড়াই; সেকেন্ড হোমারের দূর্জয় দুর্নীতির শিখরে নাগ-নাগিনীর নৃত্যের প্রতিবাদ করলে; কাজল সাঁঝকে রিমান্ডে নিয়ে যায়; সেকেন্ড হোমারদের অলিভ গাছের ত্রিকোণ ডালগুলো।
চিংড়ির ঘেরের পাশে বসে এক সেকেন্ড হোমার অনুভব করে; অন্যায় এমন চূড়ান্ত জায়গায় পৌঁছেছে যে; আপাতত সেকেন্ড হোমে বেগম বিলাস বৃক্ষের ছায়ায় কটাদিন জিরিয়ে নেয়া ভালো।
আনাতোলিয়ায় এখন নাগনাগিনীর খেলা; পাওয়ার প্ল্যান্টের বেদিনীর বীণের শব্দে মাতোয়ারা সর্পরাজেরা। ছোবলে ছোবলে নীলকণ্ঠ আনাতোলিয়ার মানুষ। পাওয়ার প্ল্যান্ট তার টাকা বৃক্ষের বড়েগুলো নিয়ে করোনার সঙ্গে দাবা খেলায় যেন স্টেইলমেট হয়ে স্থির হয়ে গেছে।
ফেসবুকে ‘ও মানুষ তোমার দুইটা কান শোনবা; দুইডা চোখ দেখবা; একটা মুখতো, ইট্টু কম কথা কবা, ‘দাদা আমি সাতে পাঁচে থাকিনা’, ফুল-ফল-লতা-পাতার সহমত কাব্য, বিকেল পাঁচটায় ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে করোনাযোদ্ধাদের হাততালি দেয়া, টুথ ব্রাশ দিয়ে দাঁত মেজে ট্রয়ের যুদ্ধের খুনিদের গালি দিয়ে; আজকের জয়ের যুদ্ধের খুনিদের অপরাধ ঢেকে রাখার ষোলকলা আর বিক্রি হয় না। ডিশওয়াশিং ইঞ্জিনিয়াররা আর সাহস পায় না সমালোচকের মুখে ময়লা পানি ছুঁড়ে মারতে।
সেকেন্ড হোমার চিংড়ি বাবু তার বেগম বিলাসের সিয়েস্তায় দুঃস্বপ্নে জেগে থাকে। তার ভয় হয়; মাথার গহীনে যেন কৃষকের গান কানে ভেসে আসে বারবার। পাওয়ার প্ল্যান্টের গায়ে শ্যাওলা জমে; ঝাড়বাতিতে মাকড়সা জাল বুনে; করোনাকালের জুম কনফারেন্সে কালচারাল ভটভটি আপারা ‘উনিই পারেন; উনিই পারবেন’ বললে ফেসবুক লাইভ থেকে দর্শক কেটে পড়ে। পড়ে থাকে সাজঘর; জরির পোশাক আর ক্ষমতার পরচুলো।
মাকেন্দো গ্রামে ভীষণ বিপর্যয় নেমে আসে। এ গ্রামের কৃষক ও কারিগরেরা শ্রমে-রক্ত-ঘামে যে টাকা-পয়সা…..
এক রাজার রাজ্যে কিছু চাল ব্যবসায়ী একজোট হয়ে ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতার কাছে গিয়ে বললো,…..
স্ত্রী তার নির্বাচন বিশেষজ্ঞ। ঐ একবার মঈন মামাকে দুটি ঘোড়ামন্ত্রে বশ করে ওপাড়ার প্রণব সাধু…..
জোছনা করেছে আড়ি আসে না আমার বাড়ি গলি দিয়ে চলে যায়, গলি দিয়ে চলে যায়…..