দীর্ঘশ্বাস
ভালো নেই ভালো নেই ধূসর সন্ধ্যা বিষণ্ন বিকেল, চারিপাশ ভালো নেই কফির কাপ পথের ধুলো…..
কতদিন আমি নিজের ভিতর নিজেকে লুকিয়ে রেখেছি
তা শুধু আমার আকাশ জানে।
সেই কবে থেকে আহত শামুকের মতো
খোলসের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে আছি;
কতদিন ভরা পুর্নিমায় জ্যোৎস্না দেখে দেখে
ফিরতে চেয়েছি বাড়ী, সজল চোখে চেয়েছি সুনীল আকাশ
ডানা মেলে গাংচিল উড়ে গেছে লোভী করে;
শুভ্র মেঘের খাঁজে খাঁজে মিশেছে আবির,
আমি তো পারিনি যেতে খোলসের সীমানা ছেড়ে
কেন – তা শুধু আমার আকাশ জানে।
এক দিন বালুকাবেলায় উতল সাগর পেরিয়ে
আপন রক্তের নোনা স্বাদে নীল হয়ে
কেন যে লুকিয়ে নিলাম নিজেকে-
কেন বলিনি কথা, কেন প্রতিবাদে হইনি মুখর
কেন দেইনি সমুচিত জবাব; পেয়ে নপুংসকের পশ্চাৎঘাত
তা শুধু আমার আকাশ জানে।
আটাত্তর মিনিট দু’চোখ বন্ধ করে
আমি তাকিয়েছিলাম তোমার দিকে
তুমি আমার দিকে তাকিয়েছিলে;
আটাত্তর মিনিট আমি দু’চোখ ভরে স্বপ্ন দেখেছি।
আটাত্তর মিনিট তৃষ্ণার্ত কাকের মতো
আকন্ঠ নিমগ্ন ছিলাম তোমার কন্ঠস্বরে,
আটাত্তর মিনিট আমি তাকিয়েছিলাম
তুমি নও যেন সূর্য্য-চাঁদ কিংবা নক্ষত্রের পানে;
অনন্ত আকাশ কিংবা নদী অথবা সাগর-পাহাড়
সে কোন প্রকৃতির মাতাল অনুভবে আমি জানিনে।
আমি নির্লিপ্তের মতো ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলাম
কেননা আমার দৃষ্টি তখন তোমাতেই নিবদ্ধ,
আমি দুচোখ বন্ধ করে নেশাসক্তের মতো
তোমার দিকে তাকিয়ে ছিলাম আটাত্তর মিনিট।
সহসা এক জোড়া শকুন আমার দুচোখ উপড়ে নিলো,
আমি নিজেকে জন্মান্ধ ভেবে তোমার দিকে অপলক তাকিয়ে
আটাত্তর মিনিট তবুও কি করে যে কাটিয়ে দিলাম;
তোমার দিকে তাকিয়ে ছিলাম বলে
আমার দৃষ্টি হারানোর ব্যথা নিমিশেই উবে গেল।
তোমার দিকে তাকিয়ে ছিলাম বলে
নগ্ন ভিখিরির দিকে তাকাতে পারিনি আর,
তোমার দিকে তাকিয়ে ছিলাম বলে
রক্তের নেশায় উন্মত্ত এক দল রাক্ষসের সামনে
বুক চিতিয়ে দাঁড়াবার সাহস হয়নি আমার,
আমি তোমার দিকে তাকিয়ে ছিলাম বলে
স্বদেশের এক পাহাড় সম্পদ লুটে নিলো হায়েনায়
আমি নির্লিপ্তের মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম
আমি শিল্প ভেবে সন্ত্রাসকে দ্বিধাহীন আলিঙ্গন করলাম,
আটাত্তর মিনিটের ঘোর লেগে থাকা অনুভবে
নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি আমি;
অমন মুগ্ধতার অনুভবে তাকাও যদি
নির্লিপ্ত আমি কি করে রুখব হিংস্র নখর-
যা আসবে কাল তোমাকেই ছুঁতে!!
তোমাকে চমৎকার একটা বিকেল দেব বলে
সেই যে ঘর ছেড়ে পালিয়েছিলাম;
আজও আমার ফেরা হয়নি।
তোমাকে দেবার সেই বিকেলের ভাবনাটা
এখনও আমার বুক পকেটের নীচে
চিন চিনে ব্যথা হয়ে আছে।
যদি দৈবাত কখনো দেখা হয় তোমার সাথে
অনাহুত সেই বিকেলটা এখুনি চেয়ো না,
যদিও সেই বিকেলটা আমি শুধু তোমাকেই দেব।
তোমাকে দেবার সেই বিকেলের ভাবনাটা
আমার ধমনীকে থেকে থেকে উত্তাল করে দেয়
আমি তখন বুক পকেটের নীচে হাত রাখি
যেখানে বসে এক লক্ষ আহত প্রলেতারিয়েত
প্রতিদিন তোমার সেই বিকেলের ছবি আঁকে।
ভালো নেই ভালো নেই ধূসর সন্ধ্যা বিষণ্ন বিকেল, চারিপাশ ভালো নেই কফির কাপ পথের ধুলো…..
প্রেমের কবিতা যা কিছু পাষাণ, মনে হয় আঁশ বটিতে কুচি-কুচি করে কাটি পালানো ঘাতক সময়…..
তর্জমা স্নানে শুচি হবার পর বেকসুর সন্ধ্যাগুলো শুধুমাত্র নিজস্ব অন্ধকারের নিচে দোলনাচেয়ারে ছড়িয়ে বসা কিছুটা…..
হয়তো একদিন অস্তিত্বে খুঁজে আত্মপরিচয় নিভৃতে অপেক্ষার প্রহরে এ মন ভালোবাসার রূপালী আলোয় রাঙা মুখ…..