প্রক্সি
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
ভারী রাতের বাতাসে একটু হালকা শীতের আমেজ। নিয়ন্ত্রণহীন মনকে সঙ্গী করে তারাভরা আকাশের নীচে হাঁটতে শুরু করল সলিল। মনে তার অসহ্য বেদনা, বুকে পুঞ্জীভূত সীমাহীন যন্ত্রণা , দুচোখ ভারাক্রান্ত অবিরল অশ্রুধারায়। একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো সলিলের বুকের গভীর থেকে।
একই গাঁয়ের দুপ্রান্তে দুজনার বাড়ি – সলিল আর কল্পার। সাইকেলে চড়ে দুজন একসাথে শহরে যায় আবৃত্তি শিখতে । কতো কথা হয় নিজেদের মধ্যে। বেশির ভাগই আবোলতাবোল, তারই মধ্যে উভয়ের মন আদানপ্রদান পর্ব শেষ হয়ে গেল। সোনাঝরা সেই প্রথম প্রেমের মিষ্টি দিনগুলোর সাথি রবীন্দ্রনাথের সেই কবিতাটা আচমকা মনে পড়ল সলিলের – ‘ আমরা দুজন একটি গাঁয়ে থাকি , সেই আমাদের একটিমাত্র সুখ …’।
হঠাৎ কীসে হোঁচট খেয়ে পড়তে পড়তে কোনরকমে টাল সামলালো সলিল । এতক্ষণ ঘোরে থাকা মনটার হুঁশ ফিরতেই কানে এলো সানাইয়ের শব্দ । চোখে পড়লো আলোকমালায় উজ্জ্বলিত কল্পাদের বাড়ি। মালাবদল কি হয়ে গেছে কল্পার ? রাস্তায় দাঁড়িয়েই কল্পাদের বাড়ির দিকে চেয়ে হু হু করে কেঁদে উঠল সলিল। আজ তো তারই নায়ক হওয়ার কথা। কিন্তু …। একবুক দুঃখ নিয়ে আবার পথচলা শুরু করলো সলিল।
সামান্য এগিয়ে ডানদিকে বাঁক নিয়ে জংগলটার পথ ধরল সে। মনের মধ্যে ভেসে উঠল সেই দিনটার কথা। সেদিন ছিল সলিলের জন্মদিন। প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে সলিলের ঘরের জানালা দিয়ে কল্পা একটা কার্ড ছুঁড়ে দিয়েছিল সলিলের বিছানায়। সরাসরি সলিলের বুকে লাগে কার্ডটা। ঘুম ভেঙ্গে যায় তার। ভোরের সুখ ঘুম থেকে একরাশ বিরক্তি নিয়ে উঠে কার্ডটা পড়ল সে। লেখা আছে – ‘শুধু ভালবাসা দিয়ে বলে যাই আমি তোমারে বেসেছি ভালো’। মনের এতোদিনের অব্যক্ত কথাটা লেখনীর মাধ্যমে উঠে আসতেই আনন্দে বিছানা থেকে লাফ দিয়ে নামল সলিল। জামাটা কোনক্রমে গায়ে জড়িয়ে বাড়ির বাইরে এসে দেখল কল্পা হাঁটছে। পরণে তার নীল রংএর শাড়ি।
জঙ্গলের পথে যেতে যেতে একটা কাঁটা ফুটলো পায়ে। বাস্তবে ফিরে এসে নীচু হয়ে কাঁটাটা বার করলো সলিল। সামনে বহমানা দ্বারকেশ্বর নদীর জলের শব্দ কানে এলো। মনে হলো নদীও বোধহয় তার মনের কথা বুঝতে পেরে কাঁদছে। কতদিন বিকেলে কল্পা – সলিল নদীর জলে পা ডুবিয়ে তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা আলোচনা করেছে, হেসেছে, গেয়েছে, আবৃত্তি করেছে। আর আজ?
নদীর পাড়ে একটা মন্দির। সাদামাটা গড়ন। কিন্তু ভেতরের মূর্তির সামনে দাঁড়ালে মাথা আপনা থেকেই নত হয়ে আসে। রামসীতার মন্দির। মন্দিরের চাতালে বটগাছের শীতল ছায়া। বটের অসংখ্য ঝুরি নেমেছে। ঝুরির আগায় ঝুলছে লাল কাপড়ে বাঁধা কতশত ঢিল। সব মানত করা। জনশ্রুতি, এখানে ঢিল বাঁধলে মনস্কামনা সিদ্ধ হয়। দুজনে ঘরবাঁধার স্বপ্ন সফল করতে ঢিল বেঁধেছিল এখানে। চাঁদের স্নিগ্ধ আলোয় তাদের বাঁধা ঢিলটা সলিল দেখতে গেল। কিন্তু চোখে পড়ল না।
মন্দিরের চাতালে এসে বসল সলিল। কয়েকটা চামচিকে উড়ে গেল। মন্দিরের বন্ধ দরজার দিকে সলিল অপলক নেত্রে চেয়ে রইল। দরজায় চাঁদের মায়াবি আলো পড়েছে। সলিলের মনে হলো তার অনেক যন্ত্রণা, অনেক ব্যর্থতা, অনেক অপমান যেন ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাচ্ছে। ভিন্ন এক ভালোবাসায় তার মন ভরে গেল। সে আকাশের দিকে মুখ করে মন্দিরের চাতালে শুয়ে পড়ল।
সলিলের মনে পড়তে লাগলো কল্পার সঙ্গে তার যোগাযোগের শেষ দিনটার কথা। দিঘার সমুদ্র সৈকত, সামনে উথালিপাথালি ঢেউ। দিঘায় পিসিমার বাড়ি বেড়াতে গিসল কল্পা। পিসতুতো দাদার সঙ্গে সমুদ্র দেখতে এসেছিল সে। সলিলও এসেছিল পূর্বপরিকল্পনা মতো। তাদের ভালবাসার কথা পিসতুতো দাদা মারফত কল্পার বাবামায়ের কানে এসেছিল। সেই থেকে দুজনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।
ক্লান্তিতে দুচোখ বুজে এলো সলিলের। তন্দ্রাও এসে গেল। তন্দ্রার ঘোরে সলিল দেখল, সামনে দিগন্তবিস্তৃত সমুদ্রসৈকত। সমুদ্রের নীল জলরাশি দামাল শিশুর মতো আনন্দে খিলখিল করে হেসে গড়াচ্ছে। ঢেউয়ের মাথায় পড়েছে সূর্যকিরণ। সেই কিরণের সোনালি আভা এঁকে চলেছে এক নৈসর্গিক চিত্র। সেই চিত্রের মধ্যমণি কল্পা। ফেনিল সাগরের গর্জন আর তরঙ্গমালায় সৃষ্ট হীরকখচিত জলবিন্দুর মাঝে কল্পাকে জলপরির মতো দেখাচ্ছে। সলিলের হৃদয়বীণা গানে গানে বেজে উঠল। সমুদ্র কল্পার পা ধুয়ে দিচ্ছে, তরঙ্গকুল বীণা বাজিয়ে কল্পাকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে, নীলাম্বরী শাড়ি পরিহিতা কল্পাকে অনন্ত সমুদ্র লক্ষ লক্ষ প্রদীপ জ্বালিয়ে আরতি করছে। সলিলের মনের গভীরে এক স্নিগ্ধ প্রশান্ত হাসি হয়ে ফুটে উঠল। কিন্তু একী! হঠাৎ চারদিক এতো কালো হয়ে গেল কেন? কল্পাকে দেখা যাচ্ছে না কেন? কল্পা, কল্পা – সলিল চিৎকার করে উঠল।
তন্দ্রা ভেঙ্গে গেল সলিলের। কখন সকাল হয়েছে কে জানে! চোখ মেলতেই দেখল সামনে দাঁড়িয়ে আছে কল্পা আর তার স্বামী। গ্রাম ছাড়ার আগে প্রথানুসারে মন্দিরে দুজনে প্রণাম করতে এসেছে। তাড়াতাড়ি করে উঠে বসল সলিল। তার পায়ের পাতায় একবিন্দু জল পড়ল। তবে কী কল্পা কাঁদছে? মুখ তুলে তাকাবার আগেই কল্পা স্বামীসমেত গাড়িতে গিয়ে বসল। সলিল উঠে দাঁড়াবার মুহূর্তেই গাড়িটা ছেড়ে দিল।
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
নভেম্বর চলছে। অনির সাথে আজ দেখা হবে তা জানাই ছিল। এই তো ক’দিন আগেই দেখা…..
বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..
এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..