স্বপ্নের ঘরামি

বদরুদ্দোজা শেখু
কবিতা
Bengali
স্বপ্নের ঘরামি

মাঝরাতে বেড়াবার

একদিন মাঝরাতে ঘুরে বেড়াবার ইচ্ছা হলো
আঁধারে কপাল ঠুকে বেরিয়ে পড়লাম
সটান দূরের উদ্দেশে ।
যেতে যেতে যেতে হিন্দুকুশ পাহাড় পেরিয়ে
সামনে এলেন বুখারা সমরখন্দ খৈয়াম বাবর
তাঁদের গজল- নির্ঝর এখনও
বইছে ললিত স্রোতে মরুভূমে অলিতে গলিতে ,
যেতে যেতে সামনে এলেন রওজা মাজার
মসজিদ মিনার কতো, স্থাপত্যশৈলীতে
অনবদ্য, আকাশ ছুঁয়েছে যেন চাঁদ-তারা -তাজ-
তসবিহর বাহার,
আরো যেতে যেতে সামনে এলেন
পীর পয়গম্বর দরবেশ ফকির কতো
দোওয়া দরুদ আজান সুরার সুললিত মূর্ছনায়
ছুঁয়ে যায় মন ও হৃদয় অনায়াসে,
সুবাতাসে আরো যেতে যেতে
জোর ধাক্কা খেলাম এসে একসময়
গাজা স্ট্রীপে, প্যালেস্টাইন বনাম ইজরায়েল লম্বা
যুযুধান, ধ্বংসের ও খুনখারাবির বহরে
খতিয়ান কুলোয় না, ধূলোয় লুটায়
মানবাধিকার স্বাতন্ত্র্য সমানাধিকার
ইত্যাকার বিরল বিষয়, অকুতোভয় তবু
ফিলিস্তিন লড়ে যাচ্ছে যথাসাধ্য অসম লড়াই,
স্বভূমির স্বতন্ত্র অধিকার পেতেই হবে তাকে ।
ঘুমানো বস্তিগুলোকে মনে হলো অস্তিত্ত্বের জীবন্ত বারুদ,
স্বপ্নের বুদ্বুদ উবে গেল আচমকা বোমার আগুনে ।।

স্বপ্নের ঘরামি

অল্প কিছুর স্বপ্ন আছে, অনেক কিছুর নয়,
এই যেমন ধরুন, নদীর তটে চেয়ে আছি তন্ময়
উজান যাওয়া মাছের পানে, ছোট মাছের ঝাঁক
কুলকুলিয়ে ডিঙোতে চায় নীল যমুনার বাঁক,

যেমন ধরুন শুকনো পাতা ঝরা পাতার রাশি
খসখসিয়ে মাড়িয়ে যাচ্ছি একলা উদাসী
সান্ধ্য বিজন বনের মধ্যে, গদ্যে পদ্যে মন
একূল ওকূল দুকূল ছাপায় ভাবের বৃন্দাবন,

যেমন ধরুন, শিল্প-মেলায় আটকে’ গেছি কোনও
ছবির সামনে, আনকোরা এক দুর্বোধ্য এমনও,
পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে সবাই যাচ্ছে হেঁটে দ্রুত
আমিই কেবল আটকে’ আছি অবাক অভিভূত
বুঝতে হবেই ছবিটাকে শিল্পীর চোখ দিয়ে ;

যেমন ধরুন কবিতা লিখি ভাবের ভাষা দিয়ে
ভাষার রূপক কল্প-কথা অল্প আয়োজন
কখন্ কী যে ঝিলিক দিবে মানিক গুপ্তধন
মনের কোণায় দফায় দফায় আমিই কি তা জানি ?
দিগ্বলয়ে আকাশ-মাটির অলীক কানাকানি
যেমন কুহক সেই মোহকে স্বপ্ন ফেরিওয়ালা
দাঁড়িয়ে থাকি দূরেই চেয়ে সকাল সন্ধ্যা বেলা ।

দিনের শেষে বটের শাখায় পাখির হুড়োহুড়ি
ঠাঁই দিয়েছে আপন কোলে একশো এক কুড়ি
ঝুরির তলায় দাঁড়িয়ে শুনি জুড়ির ঐকতান
সকল শ্রেণীর সহাবস্থান শুদ্ধ সামগান,
এমন সঙ্গ কোথায় পাবো ভাবো একবার ভাবো
ভাবতে ভাবতে দিনের শেষে বটের ছায়ায় যাবো ।

পাহাড় গেছি, খাদের কোলে নাম-না-জানা ঝোপ
বিচিত্র সব ফুলের বাহার চিত্রিত ছোপ-ছোপ
দূরের থেকে দেখতে দেখতে চোখের ঝালাপালা
তবুও মন হয়না ক্লান্ত, শান্ত সফরওয়ালা
চেয়েই থাকি অন্ধ উদাস উধাও কোনোখানে
হয়তো শখের বাগান গড়ি স্বপ্নের সন্ধানে ।

অল্প কিছুর স্বপ্ন আছে, অনেক কিছুর নয়
এই যেমন ধরুন উড়ছে বিমান, অনন্ত বিস্ময়
চলকে’ উঠে এক পলকে, চেয়েই থাকি তাই
দূর নীলিমায় দূর নীলিমায় যত দূর চোখ যায়
পাহাড় সাগর শহর মরু ডিঙোই তখন আমি
হয়তো কোথাও বানাই বাড়ি স্বপ্নের ঘরামি ।।

ধূলো ঝাড়তে ঝাড়তে 

ধূলো ঝাড়ছি
ধূলো ঝাড়তে ঝাড়তে যাচ্ছি
এই ধূলো ঝাড়তে ঝাড়তে যাওয়াটাই জীবন

ধূলো ঝাড়ি
ঘরদোরের ধূলো
চেয়ার টেবিলের ধূলো
বইপত্রের ধূলো
কাপড়চোপড় চশমার ধূলো,

ধূলো ঝাড়ি
জাতবেজাতের ধূলো
ধর্মাধর্মের ধূলো
বিশ্বাস-অবিশ্বাসের ধূলো
সংস্কার-কুসংস্কারের ধূলো
ন্যায়-অন্যায় অশান্তির ধূলো
অনাচার অবিচারের ধূলো,

ধূলো ঝাড়ি
অসংযমের ধূলো
অসহিষ্ণুতার ধূলো
অসহাবস্থানের ধূলো
অমানবিকতার ধূলো
অসুস্থ বিদ্বেষের ধূলো,

ধূলো ঝাড়ি
অন্তরের ধূলো
আকাঙ্ক্ষার ধূলো
চাওয়া-পাওয়ার ধূলো
পাওয়া-না-পাওয়ার ধূলো
নেপথ্য নক্শার ধূলো
অদৃশ্য অন্তরাত্মার ধূলো,

ধূলো ঝাড়ি
আর আত্মাকে বলি—-
ওঠো, জাগো, জেগে ওঠো, উজ্জীবিত হও
অন্তরের ধূলো ঝেড়ে নির্ভীক নিঃসঙ্কোচ হও
নির্মল পবিত্র হও
সত্যের দিশারী হও, সত্যের পূজারী ।

ধূলো ঝাড়ি
ধূলো ঝাড়ছি
ধূলো ঝাড়তে ঝাড়তে যাচ্ছি
ধূলো ঝাড়তে ঝাড়তে যাচ্ছি যাচ্ছি যাচ্ছি যাচ্ছি

বদরুদ্দোজা শেখু। কবি। জন্ম ১৯৫৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গরাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘিতে। অভাব অনটনের মধ্যে তাঁর বেড়ে উঠা। প্রথাগত শিক্ষায় স্নাতকোত্তর। পেশায় অবসরপ্রাপ্ত রাজ্য সরকারি কর্মচারী, নেশায় কবিতা লেখালিখি। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: অলৌকিক আত্মঘাত, দুঃস্বপ্নের নগরে নিভৃত নগ্ন, শব্দ ভেঙে...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..