ঝরা শিউলি
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
স্বপ্ন চোখে নয় আগে আসে মনে।সেই স্বপ্নকে চোখ থেকে বাস্তবে রূপান্তর করতে চাই পরিশ্রম।তবেই স্বপ্ন সত্যি হয়।
খালি সিগারেটের প্যকেট আর আমার জীবন খুব বেশি পার্থক্য না।বাবার শরীরে রক্ত শূন্য, আমার শরীরে যা একটু ছিলো তা বোধ হয় আর রাখার উপায় থাকবে না।আজ সকালে বিধান সভার বাবুরা এসে বলে গেলো বিশ বছরের খাঁজনা বকেয়া আছে।যদি তা দু’দিনের মধ্য পরিষোধ না করা হয় লাঠিয়াল দিয়ে উচ্ছেদ করবে।গুড়ো কিমড়ির যন্তনাই জীবন যাই যাই।প্রভু শাস্তি যদি দিতেই হয় তুমি দাও,কোন দুঃখ নেই;কিন্তু এই ইঁদুর-বাদরের উৎপাত থেকে রেহায় দাও প্রভু রেহায় দাও।একশো ভেড়ার চেয়ে এক সিংহের মূল্যায়ন আমার কাছে বেশি শ্রেয়।বাবা থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত,মায়ের হাঁপানি,হাড়ক্ষয় বংশ গত রোগ।ছোট একটা ভাই খুব আদরের আগামি দিনের স্বপ্ন দেখছে দু’চোখ ভরে।ইসকুলে যাবে শিক্ষিত হবে দেশের মুখ উজ্জল করবে,স্বপ্ন স্বপ্নই থাকবে বাস্তবে আসবে না কখনো।স্বপ্নগুলো হয়েছে তেমন জাত-পাত না দেখেই যার-তার চোখে চলে আসে।
আমার চোখেও স্বপ্ন ছিলো শিক্ষিত হবো মানুষের মত মানুষ হবো।তেল শূন্য প্রদীপটাকে আবার জ্বালাবো আলোয় ভরে উঠবে আমাদের সংসার,শান্তিতে দু’বেলা-দু’মুঠো খেয়ে পরে অন্ধকার মেঘের নিচে বাঁচবে চারটি প্রানী।স্বপ্ন বাস্তব হলো দশ ক্রোশ পথ পাড়ি দিয়ে রাজাবাবুর আস্তবোলে একটা কাজ জুঁটলো।সারাদিন হাঁড়ভাঙা শ্রম দিই বিনিময়ে একবেলে খাওয়া আর পাঁচ টাকা মাসের শেষে।চড়া বাজার তেল-নুনেই কাবার বাবা-মায়ের চিকিৎসা করা হয়ে ওঠে না।সেখানে ছোট ভায়ের ইসকুলে পড়ার স্বপ্ন স্বপ্নই।ঘোড়ার ঘাসকাঁটা আর ঘোড়ার খোঁজ-খবর রাখা আমার কাজ।মাঝে মাঝে আমার চোখে স্বপ্ন আসে আমি স্বপ্নের শিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যাই অনেক উপরে।পা পিছলে পড়ি না তা কিন্তু না;পা পিঁছলে পড়ে ঘুম ভাঙতেই দেখি আস্তাবলে গোবরে মুখ থুবড়ে পড়ে আছি।এভাবেই দুঃখের মধ্য চলে গেল একটি বছর।
একদিন সকালে লাঠিয়াল বাহিনী আমার ঝুঁপড়ি ঘরে,ঘর থেকে বের করে দিলো আমাদের।মিনিটের মধ্যই ঝুঁপড়ি মুখ থুবড়ে পড়লো মাটিতে,দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে করুন দৃশ্য দেখা ছাড়া কারো কিছুই করার ছিলো না।ভাঙা একটা ট্রাঙ্ক আর কিছু ছেঁড়া কাঁথা-বালিশ নিতে পারলাম,বাকিটা চোখেত সামনে জ্বলছে,জ্বলছে আগামির স্বপ্ন ভেসে যাচ্ছে মাথা গুজবার ঠাঁয়।গ্রাম ছাড়া হতে হলো আমাদের।হারিয়ে গেল আমাদের ঠিকানা বাপ-দাদার ভিঁটা।
পরদিন সকালে পায়ে হেঁটে পৌঁছালাম নাভারণ সেখান থেকে ট্রেণে চেঁপে যশহর শহরে।স্বপ্নের মত শহর কি নেই এই শহরে?অফিস,আদালত,স্কুল,কলেজ আরো কত কি!গ্রামে পুকুরের পেট বর্ষার দিনে যেমন কানায় কানায় জল ভরে ওঠে ঠিক তেমনি এই শহরের পেটে লোক আর লোক।একটা তিল ফেলবার জায়গা নেই।চারিদিকে শুধু লোক আর লোক আমাদের দিকে কেউ ফিরেও তাঁকায় না।আমরা পথের কুকুরের মত বসে আছি জংশনে।বুনো শুয়োরের মত মাল বোঝায় লড়ি ছুটে চলেছে গন্তব্যর পথ ধরে।বড় ব্যস্ত শহর এখানে সবাই কাজের মানুষ।ঐ হাক ডাকতে ডাকতে চললো ”চা,,ওয়ালা,এই চা এই চা লাগবে চা।ঝাল মুড়িচায়, চায়ে ঝালমুড়ি।এই খিরে আছে খিরে।যার যার মত হাক ডেকে চলছে।সূর্য নেমে আসছে পশ্চিম আকাশে একটু পরেই অন্ধকার গ্রাস করবে দিনের আলো।লোকের আনাগোনা কুমতে শুরু করেছে স্টিশনে,সারা দিনের পরিশ্রম শেষে ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দু-একটা কুকুর শুয়ে আছে।আমাদের চারটি ক্লান্ত,ক্ষুধার্ত দেহ নিথর হয়ে পড়ে আছে।কারো মুখের দিকে তাকানোর উপাই নেই।রাত গভীর হতে হতে আমরা ঘুমিয়ে পড়লাম সেখানে,হঠাৎ আমার ঘুম ভাঙলো তখন প্রায় মধ্য রাত হবে।আমার চোখের সামনে দেখতে পেলাম একটা শয়তান আমার দিকে ধেয়ে আসছে।একটা চোখ জলজল করছে।আমি আগেই শুনেছিলাম শয়তানের একচোখ আজ তা দেখছি।আমার হাত-পা শিঁধিয়ে যাচ্ছে পেটের মধ্য,হেম হয়ে যাচ্ছে সমস্ত শরীর।এ কি দেখছি খোদা। আমার দিকেই এগিয়ে আসছে,কাউকে ডাকার মত শব্দ নেই আমার স্বরে দৌঁড়িয়ে পালানোর মত শক্তি নেই।আমার ডাক কেউ শুনতে পাচ্ছে না কেনো?কিছু সময় পর জলজল আলো মিলিয়ে গেল পায়ের আওয়াজ পাচ্ছি এবার। শব্দ গাঢ় হচ্ছে গাঢ় হতে আরো গাঢ়।সর্বশেষ আমার পাশেই এসে দাঁড়ালো শয়তান।আমি ভয়ে চিৎকার করে উঠে বসলাম।আমার মনে হচ্ছিল ক্ষণকাল আমি কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছি,আমার স্মৃতি ফিরছে হারিয়ে যাচ্ছে।সব কেমন জানি গুলিয়ে যাচ্ছে।
ভয় পেয়ো না খোকা লোকটি বললো।
তোমার নাম কি?রমাকান্ত দাস।
কোথা থেকে এসছো?রামপুর থেকে।
আজই এসছো বোধ হয়? হ্যা ।
একা এসছো না-কি-?আমি মা-বাবা আর ছোট ভাই।ভয়ে ভয়ে সব বলছি চোখ মাটির দিকে রেখে।
সব ঘটনা খুলে বলতে আরাম্ভ করলাম।গভীর মন দিয়ে শুনছে লোকটা।আর মাঝে মাঝে বিড়ি ফুঁকছে।আমার ধারনা ভুল ছিলো ওটা শয়তানের চোখ না বিড়ির আগুন।কথা বলতে বলতে এক প্রকার দু’জনার মধ্য ভালো ভাব জমে উঠলো।
এক পর্যায়ে উনি জিজ্ঞাসা করলো কিছু খেয়েছো?বললাম না।
আচ্ছা ঠিক আছে চলো আমার সাথে
না,না আমি কোথাও যাবো না।
ঠিক আছে তুমি থাকো আমি আসছি।
এই বলে লোকটি চলে গেলো।ফিরে এলো ঘন্টা খানেক পরে।হাতে কি যেন একটা টুপলা;টুপলাটা আমার দিকে এগিয়ে দিলো বললো ধরো এতে খাবার আছে তুমি খাও আর ওদেরকে দাও।
মনে হলো লোকটার সব কথা স্বপ্নের মত।পা জড়িয়ে ধরে প্রণাম করার ইচ্ছা হলো।
আমরা খাদ্য খাওয়ার পর উনি বললেন আমি এখন যায় কালকে আবার দেখা হবে তোমাদের সাথে।এই বলে লোকটি চলে গেলো।মা বললো উনি আর আসবে না উনি তো ভগবানের পাঠাবো দূত।পর দিন সকাল-
ঘুম ভালো হলো না সারা রাত ধরে একের পর এক ট্রেন এসেই চলেছে।আকাশ পরিস্কার হয়েছে কর্মমূখি মানুষ ছুঁটছে কাজের জন্য।জংশনে লোকের আনাগোনা বাড়ছে।কিন্তু সেই লোক তো আসছে না।হয়ত মায়ের কথায় ঠিক।দুপুর গড়িয়ে যায় তিনি আসলো না।সন্ধার একটু আগে আসলো একটা লোক হাতে একটা টুপলা।টুপলাটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিলেন বললো ধরো আমি কাল রাতের সেই লোক।আমরা অবাক হলাম!বাবাকে বললো রমাকান্তের জন্য একটা কাজ ঠিক করেছি হোটেলে।কোন কিছু না ভেবেই রাজি হলাম আমি।তিন বেলা খাওয়া আর মাসে আট টাকা নিতান্ত আমাদের জন্য অনেক বেশি।চললাম কাজের উদ্দাশ্যে।আমি আর ঐ লোকটা।তখন প্রায় সন্ধা হয়ে এসেছে শহরের রাস্তা সন্ধা হলেও বোঝা যাই না।একটা শুঁড়িখানা পার হয়ে সামনে একটা গলি,গলির শেষ মাথায় অনেক মেয়েরা অর্ধোলঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।পরে জানলাম এরা পতিতা,শরীর বিকিয়ে টাকা আয় এদের উৎস।আমরা আর একটা গলি পার হয়ে আসলাম সেই হোটেলের সামনে।একটা মোটা লোক টেবিলে বসে কান চুলকাচ্ছে।মস্তবড় গোঁফ,টাঁক মাথা দেখতে কিম্ভুতকিমাকার।অগোছাল অপরিস্কার জায়গা চারিপাশে মাছি ভন ভন করছে।তুই সে রমা?আগ্গে হ্যা।ভীষন ভয় লাগছে মোটা লাল চোখ তাকাতে পারছি না।কাজ কিছু জানা আছে? না ।ঐ হাবীব কোথা থেকে আনলি এই মালটা,এতো কিছুই জানেনা।গফুর ভাই নতুন এসেছে শহরে।আচ্ছা কাল সকাল থেকে পাঠিয়ে দিস।রাতে ফিরলাম,বাবা-মাকে খুলে বললাম সব কথা।
পরের দিন সকাল থেকে শুরু হলো স্বপ্নের পথ চলা।সকালে হোটেলে পৌঁছাতেই শুনতে হলো গালা-গালি।মাগির নবাব এখন আসার সময় হলো।যা ভাগাড়ে গিয়ে মর শালা।খাঙ্কির ছেলে।
মাফ করো গফুর ভাই কাল থেকে আর দেরি হবে না।
যা যা ভাগাড়ের কুকুর ভাগাড়ে গিয়ে মর।সব সহ্য করে শুরু হলো কাজ।হাবীব সাহেব আগেই আমাকে বলেছিলো গফুর ভাই রাগি মানুষ।কোন কথাই কান না দিয়ে কাজ শুরু করলাম।প্রথম কাজ হলো কয়লা ভাঙা।কয়লা ভাঙা শেষ হলে লাগিয়ে দিলো এটো থালা- বাসন মাজা।আমি ছাড়া আরো দু’জন আছে ঐ হোটেলে।সকালে খেতে দিলো তিনটা পরাটা ডাল যা পারা যাই।একটা পরাটা আর দু’মগ ডাল গিলে বাকিটা রাখলাম।দুপুরের অল্প খেয়ে বাকি খাবার রাখলাম।ভাবলাম রাতের খাবার নিয়ে ফিরবো।রাত যখোন এগারটা বাজে হোটেল বন্ধ করে সব গুছিয়ে বাড়ি ফেরার পালা।খাদ্যর প্যকেট হাতে দেখেই গফুর ভাই রেগে মারতে এলো আরো সে কত প্রকার গালি-গালাচ।প্যকেট খুলে যা পেলো আমার খাওয়া অবশিষ্ট খাবার গফুর ভাইয়ের চোখে তখন ছানাবড়া।বললো এই পাগল সারাদিন তবে কিছুই খাসনি।আমার চোখ বেয়ে শ্রবণের বর্ষা শুরু হলো।গফুর ভাইকে বললাম আমার পরিবারের কথা।গফুর ভাই আমাকে জড়িয়ে ধরলো আগে বলবি তো কি ভুলটায় না করলাম বল। আরো কিছু খাদ্য তাতে যোগ করে আমার হাতে দিলো।
গলি পেরিয়ে আসলাম স্টিশনে সবাই মিলে ভাগা-ভাগি করে রাতের খাওয়া শেষ হলো।দিন থেকে রাত আর রাত থেকে দিন এভাবেই ছুঁটে চলেছে জীবন স্বপ্ন আসে স্বপ্ন যাই প্রবল স্রোতে নিজেকে হারাই।দিনে দিনে একটু একটু করে সংসারের চাঁকা ঘুরছে।স্টিশন থেকে এখন একটা ঝুঁপড়ি ঘর জুঁটেছে।এবছরে ইসকুলে ভর্তি করা হবে আগামির সভ্যতার কালপুরুষ নতুন পথের সন্ধানীকে।সব ফিরে পাবো, শুধু-
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
শেষ থেকে শুরু। আমি রজকিনী রামী,ধোপার বংশে জন্ম আমার।ঘাটে সখিদের সঙ্গে কাপড় কাচি। একাজটা আমি…..
মালঞ্চার পথে ভোরবেলা। সূর্য সবে উঠছিল। বৈশালী দূর থেকে দেখতে পেল,বুনিয়াদপুর বাসস্ট্যান্ডে বালুরঘাটের দিকে মুখ…..
আমার বাবা ছিলেন অত্যন্ত সাহসী একজন লড়াকু মনের মানুষ।শত অভাব অভিযোগেও তাকে কোনোদিন ভেঙ্গে…..