চেয়ারম্যান সাহেব খুব অনেস্ট
মাকেন্দো গ্রামে ভীষণ বিপর্যয় নেমে আসে। এ গ্রামের কৃষক ও কারিগরেরা শ্রমে-রক্ত-ঘামে যে টাকা-পয়সা…..
স্ত্রী তার নির্বাচন বিশেষজ্ঞ। ঐ একবার মঈন মামাকে দুটি ঘোড়ামন্ত্রে বশ করে ওপাড়ার প্রণব সাধু কুফাটা ছুটিয়ে দেবার পর থেকে স্ত্রী বিজয়িনী সোনাভান হয়ে একের পর এক নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের ঘোড়া দৌড়াচ্ছে। তবু নির্বাচনের আগে ছোট ভাইদের শ্বশুর বাড়িতে পাঠায়; যদি কোন বুদ্ধি পরামর্শ থাকে। স্বামী ও তার পরিবার পরামর্শের কথা শুনে হেসে কুটিপাটি।
-বিজয়িনী সোনাভান তো একাই একশো; মুখ ছুটালে তাকে থামায় কে! আমরা পুরো গুষ্টি ধরেও এতো অগ্নিবাণ ছুঁড়তে পারিনা গো।
এবার স্বামীর নির্বাচনের পালা। উপাসনালয় স্থাপনের অনুভূতিতে তার বিজয় প্রায় সুনিশ্চিত। তবু ও খণ্ডে ভোট টোট হয়। ইভিএম হ্যাক করতে না পারলেই বিপদ।
আর সেখানে আছে ঝামেলাপূর্ণ নাগরিক সমাজ; জাতিকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে, গত দশ বছরে কচুটা করেছে স্বামী। উপাসনালয় স্থাপন ছাড়া আর কী কাজ করেছে বলো দেখি! কৃষক আত্মহত্যা করে অনাহারে; কর্মসংস্থানের অভাবে শিক্ষিত তরুণেরা আত্মবিনাশী হয়। সব সম্পদ গিয়ে জড়ো হয় রায়দুর্লভ, রাজবল্লভ আর জগতশেঠের তেজোরিতে। ক্ষুধা-মন্দা-বেকারত্ব-রোগ-শোকে বিলীয়মান বিপুল জনগোষ্ঠী। উপাসনালয় দিয়ে কী পেট বাঁচে কারো! অস্থিসার শিশুর সারি; পৃথিবীর সবচেয়ে পুষ্টিহীন শিশুদের জন্ম এই নিষ্ঠুর তল্লাটে।
এতো কথার উত্তর কী করে দেবে হতচ্ছাড়া স্বামী! সে বদনগর গ্রামের ছেলে; গোবরডাঙ্গা গ্রামের স্যুট পরা ছেলে গর্দভ গোস্বামীকে দিয়ে গদি মিডিয়ায় দুটি ইংরিজি গোবর ছুঁড়ে আর তারস্বরে চেঁচিয়ে আর কতই নম্বর পাওয়া যাবে। গণিতের মার্কায় কাটা গেলো সর্বই।
তাইতো শ্যালকদের আমন্ত্রণ আসে। জামাইবাবুকে বাঁচাও; কিছু আলফাডাঙ্গার বুদ্ধি দাও! পাটগাঁতি বাজারে কীরকম ভয় ভীতি ছড়ায় শ্যালক ভ্যাকসিন চৌধুরী; প্লিজ শিখিয়ে দাও। পুলিশ কী করে ভাতের হোটেল খুলে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করে গরম ভাতে ফুঁ দেয়া ঠোঁটের মুদ্রায়; কী করে বাঘে-মহিষে এক হোটেলে ভাত খায়! কেমন করে দুনিয়ার বেনজীর ট্রমা ছড়িয়ে দেয়া যায় বিরোধীদের মনে! টিভিতে কেমন করে বাবু বিদূষকেরা “লজ্জা-ঘৃণা-ভয়, সব করেছি জয়”-এর গান গায়!
শ্যালকবাবু জামাইবাবুর বাড়ি পৌঁছেই বলে, সাইবার সিকিউরিটি আইনটা কী বালিশের নীচে ফেলে রাখার জন্য বিয়াই! সব্বোনেশে স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ানদের তুলে আনুন; কিশোরদের কান ফাটিয়ে দিন অলৌকিক আয়নাঘরে। তা কী বিস্কুট পাওয়া যায় কাঁচামাল গুদামে!
–আজ্ঞে পার্লেজি বিস্কিট বিয়াই মশয়!
ভয়ে ভয়ে উত্তর দেয় উঁইপোকা শাহ, দুলামিয়ার বলিবর্দ ছোট ভাই।
–ঠিক আছে ওতেই চলবে।
–আয়নাঘর কী!
–যন্তর-মন্তর ঘর; সেখানে বিরুদ্ধবাদীদের ধরে এনে পার্লেজি বিস্কিট খাইয়ে দলে ভেড়াতে হবে বেয়াই! আচ্ছা ফোনে যে বিরোধী দলের নেতাদের যে জেলে ভরতে বলেছিলাম, তার কতদূর!
–ঢুকিয়েছি কতিপয়!
–প্রধান বিরোধী দলকে কারাগারে রেখে নির্বাচন করা চাই। আর নির্বাচনের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করুন প্রতিপক্ষের ইলেক্টেবলদের।
–সেসব হয়ে যাবে! কিন্তু ইলেকশন কমিশনের কী করি!
— নির্বাচন বিষয়ে প্রধান বিচারপতির কতৃত্ব সরিয়ে নিয়েছেন শুনলাম; প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে বাওয়াল বানান; আর রিটার্নিং কর্মকর্তা চাই দলীয় রক্তের। ডিএনএ টেস্ট করে প্রজাতন্ত্রের সেবক নিতে যে পরামর্শ রেখে গিয়েছিলাম; তার কতদূর!
–ওটা একটু কঠিন; তবে উপাসনালয়ের অনুভূতি তো এদের আছেই। অনুভূতির কুঁচকুঁচানিটাই তো ডিএনএ-এর প্রধান বিষয়।
–সবকিছু হালকাভাবে নেবেন না! প্রতিপক্ষকে গান্ধা কইরা দেওয়ার কী করলেন!
–তা হচ্ছে কিছু, বড় ভাই বলে দিয়েছে, দেশের শত্রুরা ক্ষমতায় এলে মঙ্গলসূত্র খুলে নেবে বিবাহিত নারীদের গলা থেকে। সেইসব সোনা-রুপা জড়ো করে সংখ্যালঘুদের বিতরণ করবে!
–সংখ্যালঘুদের ছাগু বলুন বেয়াই!
–নাগরিক সমাজ যে আমাদের হনুমান বলে সংখ্যালঘুদের ছাগু বললে!
–নাগরিক সমাজগুলোকে পশ্চিমা দালালের তকমা দিয়ে দিন ফেসবুকের খিস্তি গ্যাং দিয়ে; নিত্যদিন দেশপ্রেমের সার্টিফিকেট বিতরণ করুন হোয়াটস এপ ইউনিভার্সিটি থেকে। আর ইতিহাস লেখক কোথায় যার “মনে তার শিরে” ফ্যান্টাসি!
ইতিহাসবিদ এসে কাচমাচু ভঙ্গিতে এসে দাঁড়ায়। শ্যালক বলে,
–ওহে হিস্ট্রি ফ্যান্টাসি; প্রতিপক্ষকে স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি বলে দাও; বিভাজন রেখাটা “আইদার ইউ আর উইদ আস অর এগেইন্সট আস” করে আঁকো! কী পারবে তো!
–আজ্ঞে পারবো শালাবাবু।
–বিয়াই এই ফ্যান্টাসিহিস্টোরিয়ান আর তার মামুকে একটা কৃষক ব্যাংকের লাইসেন্স দিন। যারা আপনাদের ভোট দেবে সেই কৃষকেরা ঋণ পাবে সেই কৃষক ব্যাংক থেকে; এমন প্রচার করে দিন!
–নিশ্চয়ই।
–ওহে ফ্যান্টাসি হিস্টোরিয়ান; প্রতিপক্ষ দলের প্রতিষ্ঠাতাদের বৃটিশ ও মুঘলের দালাল বলে দাও। হনুমানস্তানের পাশের মারখোরস্তানে চইলা যাওয়ার আদেশপত্র লেখো দেখি!
উঁইপোকা শাহ চোখ দুটো রসগোল্লার মতো করে বলে, বিয়াই আপনারা না এলে কী যে হতো!
আরেক শ্যালক বাবু চোখ দুটো মার্বেলের মতো গোল গোল করে লোলুপ দৃষ্টিতে জিভ দিয়ে ঠোঁট চেটে বলে,
–এখনো কাজ শেষ হয় নাই। প্রতিপক্ষের মাইয়াডা দেকলাম ডাগুর ডুগুর হইছে; বেশ ফাল দিয়া দিয়া বেড়াইতেছে! পার্টির ক্রাকপট গ্যাং দিয়া অরে গান্ধা কইরা দেন। সোশাল মিডিয়ায় অরে এমন গালি দেওয়াবেন যেন আর উইঠা দাঁড়াইতে না পারে। ভদ্রতা রাখেন মশাই; পার্টির পারবেন রঙ্গনা দিদি আর বদনা দিদিগো লাগাইয়া দ্যান গালি দিতে। আর নির্বাচনী প্রচারণায় হেলমেট পইরা নামতে হবে ফুটসোলজারদের। পাবলিকরে এমন ভয় পাওয়াইতে হবে যেন ভোট কেন্দ্রের ত্রিসীমানায় না আসে। কারা প্রতিপক্ষের পোলিং এজেন্ট হইতেছে তার লিস্টি বানাইয়া একটা দুইটার ঠ্যাং ভাইঙ্গা দেন; যাতে ভোটের দিন অরা আইতে সাহস না পায়!
–ভয় পেয়ে ভোটার না এলে ভোটের পারসেন্টেজের কী হবে বিয়াই!
–শোনেন ভোটের শতকরা হইতেছে কবিতার মতো;
”সেই সত্য যা রচিবে তুমি,
ঘটে যা তা সব সত্য নহে।
কবি, তব মনোভূমি, রামের জন্মস্থান অযোধ্যার চেয়ে সত্য জেনো ।”
মাকেন্দো গ্রামে ভীষণ বিপর্যয় নেমে আসে। এ গ্রামের কৃষক ও কারিগরেরা শ্রমে-রক্ত-ঘামে যে টাকা-পয়সা…..
এক রাজার রাজ্যে কিছু চাল ব্যবসায়ী একজোট হয়ে ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতার কাছে গিয়ে বললো,…..
জোছনা করেছে আড়ি আসে না আমার বাড়ি গলি দিয়ে চলে যায়, গলি দিয়ে চলে যায়…..
গার্মেন্টস কর্মী রাজু। শক্তপোক্ত যুবক, তবে চেহারাটা নিরীহ ধরনের। ঈদের ছুটিতে দেশের বাড়ি যাচ্ছে রাজু।…..