প্রক্সি
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
রাস্তার ধারে একটা পাগল মানুষ ঘোরে। পাগল শুনেছি। কিন্তু কখনোই তাকে গালি দিতে দেখি নি। আমার অফিসের লাগোয়া আমার বাসা। একটি সুদৃশ্য দোতলা বাড়ি। আর বাসার মধ্যে দোতলায় আমাদের থাকার ব্যবস্থা। নিচের ঘরগুলোতে ত্রিপল, কিছু চাল, আর নলকূপের সরঞ্জাম রাখা থাকে। একজন বিডিও-র অসময়ের সম্বল। দোতলায় বাইরের দিকে একটা ঘরে অফিসের একটা টুকরো এনে রাখা। অফিস টাইমের আগে পরে সেখানে অফিস করা।
ঘরে আমার নতুন বউ। তার কাজে সাহায্য করার জন্য একজন মহিলা আছেন। নিচের বাগানে কাজ করে একটা মালি। সে দিয়ে যায় পেঁপে, লাউ, কুমড়ো। আনে সংসারের দরকারি সবজি, আর মাছ।
আমি অফিসের কাজ করতে সারাদিন ব্যস্ত থাকি। সকালে দৌড়ে যাই কোনো একটা অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টারে। বাচ্চাদের একটু আদর করি। তারপর ঢুকি স্কুলে। স্কুলের শৌচাগারের হাল কেমন, তা দেখি। এক এক দিন একেকটা স্কুল দেখি। তারপর অফিস। অফিস চলে নিজের ছন্দে। অফিসে আমি দেওয়ালে লিখিয়ে দিয়েছি “এই অফিস আপনার। এখানে নিশ্চিন্তে মনের কথা বলবেন।”
এই লেখাটি দেখে উপর মহলের কর্তারা অনেকেই হেসে ফেলেছেন। তবে মোছার নির্দেশ দেননি।
অফিসে আমার চেম্বার থেকে একটি পোড়ো মন্দির দেখা যায়। মন্দিরের ধারে বিরাট পুকুর। পুকুরে মৎস্যজীবীদের একটা স্বনির্ভর গোষ্ঠী মাছ চাষ করে। আগে মাছ তুললে তারা বিডিও অফিসে একঝুড়ি মাছ দিয়ে যেতে বাধ্য থাকত। আমি সে নিয়ম বাতিল করে দিয়েছি। বলেছি অফিসে মাছ দিতে হবে না। ওই ভাগের মাছে পুকুরের লাগোয়া হরিচরণ হাইস্কুলে ছাত্রছাত্রীদের বছরে একবার হলেও ভোজ দিতে হবে। পল্লীর লোকজন এই ব্যবস্থা দেখে খুশি।
আমি এই অফিসে যোগদানের পর দিন আমার চেম্বারের বাইরে নতুন নেমপ্লেট এসে গেল। অফিস ছুটির পর, আমাদের সাপ্লায়ার বিমল নিজে দাঁড়িয়ে থেকে নেমপ্লেট লাগালো। কাজ সারা হতে আমাকে ডাকলো, একটু দেখে নিন স্যার।
ও বিমল, করেছ কি? সমষ্টি লিখতে গিয়ে একটা ই-কার বেশি দিয়েছ যে!
তখন তো আর জানি না একটা স্করপিও গাড়ির মালিক হলেও আমাদের বিমল ক্লাস ফোরের বেশি পড়ে নি।
ই কার বাড়তি পড়ে সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক হয়েছে সমিষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক।
বিমল যখন বুঝতে পারল, “সমষ্টি” আর “সমিষ্টি” দুটো মূলগত ভাবে আলাদা শব্দ, তখনই সে প্রতিশ্রুতি দিল পরদিন সকালে উঠেই সে নিজে বসে থেকে সঠিক বানান লেখা নেমপ্লেট আনবে।
আমি বাদ সাধলাম। বললাম, বিমল, চেঞ্জ করতে গেলে আবার বাড়তি পয়সা খরচ। ও থাক।
বিমল জিভ কেটে বলল, বাড়তি পয়সা লাগবে না স্যর। ওই পয়সায় হয়ে যাবে। আমি জোর দিয়ে বললাম, না থাক। ওতে কিছু অসুবিধা হবে না।
পরদিন সকালে অফিসের বড়বাবু কাঁচুমাচু মুখে আমার চেম্বারে এসে দাঁড়ালেন।
স্যর সবটা বিমলের দোষ। আপনার নামটা আমি ঠিকই লিখে দিয়েছিলাম। কিন্তু আজ এতদিন ধরে সমষ্টি কথাটার মানে ও যে একটুও জানেনা বোঝে না, আমি ভাবতেই পারি নি।
বড়বাবুর কাঁচুমাচু ভাব আর হাত কচলানো দেখে আমার হাসি পাচ্ছিল। তবু আমি জোর করে গম্ভীর হয়ে বললাম, না, ওটা থাক। আমি দেখতে চাই, কজন দেখে ওটা ভুল বলে বুঝতে পারে।
বড়বাবু চলে যাবার খানিকক্ষণ পরে পঞ্চায়েত উন্নয়ন অফিসার আমার চেম্বারে ঢুকলেন। বললেন, বড়বাবুর একটা ভুল হয়ে গেছে। নামের সাথেই ডেজিগনেশনটা লেখা উচিত ছিল। সমষ্টি কথাটা বিমল জানে। যে দোকানে আমাদের নেমপ্লেট লেখা হয়, সেখানেই লেখাতে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যে মিস্ত্রি লেখে, তার জ্বর হয়েছিল। তার ছেলে লিখতে গিয়ে এই কাণ্ড করেছে। আপনি কিছু মনে করবেন না স্যর। আজ বিকেলের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে।
পঞ্চায়েত উন্নয়ন অফিসার ছেলেটি ভাল। ডব্লিউ বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমেই এদের নিয়োগ হয়। ছেলেটি চটপটে ও দেখলে ভরসা করা যায়। তাঁকে বললাম, আপনার গ্রাজুয়েশনে কি সাবজেক্ট ছিল?
অফিসার বললেন, আমি ফিজিক্স নিয়ে অনার্স করেছি স্যর।
ওঁকে বললাম, জানেন তো, আমাদের চোখ আসলে দ্যাখে না। দ্যাখে মন। আমি না দেখলে অনেকেই খেয়াল করত না, যে নেমপ্লেটে সমষ্টি না লিখে সমিষ্টি লেখা আছে।
তা হবে হয়তো। তবে আজ আমি ডেলিভারি নেবার সময় নিজেই গাড়ি নিয়ে গিয়ে দেখেশুনে আনব। আর ভুল হবে না।
আমি বললাম, এই সামান্য একটা ব্যাপারে ইম্পরট্যান্ট অফিসারকে আমি ছাড়তে পারি না। আপনি আপনার ফাইলগুলো রেডি রাখুন। বিকেলে আমি ভিজিট করব।
মুখ শুকনো করে পঞ্চায়েত উন্নয়ন অফিসার চলে গেল।
এবার আসরে নামল খোদ জয়েন্ট বিডিও। ওঁকে আমি পুরোনো দায়িত্ব পালনের জায়গায় এই একই পদে পেয়েছি। তাইতে ওঁর সাথে আমার সম্পর্কটা একটু সহজ। উনি আমার চেম্বারে হাসি মুখে ঢুকে পড়ে বললেন, স্যর, একটা ছোট্ট ভুল হয়ে গেছে। আমি দায়িত্ব নিয়ে ঠিক করিয়ে দিচ্ছি। আপনি রেগে আছেন ভেবে বড়বাবু টেনশনে পড়ে গিয়েছে। বয়স্ক লোক। নার্ভ ফেল করবে।
আমি হাসলাম। আমার একটা পেটেন্ট মিষ্টি হাসি আছে। সেটা মাঝে মধ্যেই বেরিয়ে আসে। জয়েন্ট বিডিওর সামনে আমি সেই হাসিটা বের করে সারা মুখে মাখিয়ে রাখলাম। ওঁকে বললাম, আচ্ছা, আপনি তো আমাকে অনেক দিন ধরে চেনেন। আমি কি রাগী টাইপের লোক?
কান এঁটো করে হেসে তিনি বললেন, না স্যর, আপনার মতো মিষ্টি মনের লোক পাওয়া শক্ত।
সঙ্গে সঙ্গে আমি ছক্কা হাঁকিয়ে বললাম, তা আমার নামের সাথে “মিষ্টি” শব্দটা থাকুক না। প্লিইজ।
আমি যে নিজের ডিশিসনে এতটা শক্ত হয়ে থাকতে পারি, এটা জয়েন্ট বিডিও ভাবতে পারেন নি। তিনিও হতাশ হয়ে চলে গেলেন। খানিকক্ষণের মধ্যে গোটা অফিস জেনে গেল নতুন বিডিও সাহেব নিজের ডেজিগনেশনটা একটু বদল করে নিয়েছেন। বিকেলের মধ্যে ব্লক টাউনের সকলেই জেনে গেল, তাঁদের ব্লকে “সমষ্টি অফিসার” চলে গিয়ে একজন “সমিষ্টি অফিসার” এসেছেন।
বিকেল গড়িয়ে চমৎকার একটা সোনালী আলো ধানক্ষেত ভাসিয়ে ঘরে ঢুকে পড়েছে। আগের বিডিও ঘরের জানালা ভারি পর্দায় ঢেকে দুখানা এসি মেশিনের সাহায্য নিয়ে ঘর ঠাণ্ডা রাখতেন। স্প্রিং ঠেলা দরজা তাঁর প্রাইভেসি অক্ষুণ্ণ রাখত। আমি সব জানালা খুলিয়ে দিলাম। এসি মেশিন যেন আমার নির্দেশ ছাড়া কিছুতেই চালানো না হয়, আর দরজা যেন সবাকার জন্যে খোলা থাকে। আড়াল আবডালের ব্যাপারকে অতীতের বিষয় করে দিলাম।
অস্তায়মান দিনমণির স্নিগ্ধ আলোয় যখন গোটা ঘর ভাসছে, তখন ঘরে ঢুকলো হরিচরণ দি গ্রেট। এই নামটা আমি খানিকপরে তারই শ্রীমুখ থেকে জানতে পেরেছি। চেহারায় একটা ভারসাম্যহীনতা স্পষ্ট। জামাকাপড় বেশ পুরোনো হলেও পরিচ্ছন্ন। মাথায় এক বোঝা চুল আর গালে সেই অনুপাতে দাড়ির জঙ্গল। তবে চোখদুটো অসম্ভব রকমের উজ্জ্বল।
কি চাই আপনার?
শুনলাম, আমাদের ব্লকে একজন মিষ্টি অফিসার এসেছেন। গুড আফটারনুন স্যর।
আমি টুক করে হোয়াটসঅ্যাপে পঞ্চায়েত উন্নয়ন অফিসারকে লিখলাম, কাম শার্প।
সঙ্গে সঙ্গে তিনি এসে হাজির। এসেই আগন্তুককে দেখে তিনি বললেন, এই হরি, তুই স্যরের ঘরে ঢুকেছিস কেন? কি দরকার আছে বল্, আমি তো আছি।
পঞ্চায়েত উন্নয়ন অফিসারের কথায় বুঝতে পারলাম লোকটি আদৌ বিপজ্জনক নয়। বললাম, আহা, ওঁর কি সাহায্য দরকার, আমিও তো চেষ্টা করতে পারি।
অফিসার বললেন, না না, স্যর, ও ভিখারি নয়। কোনোদিন ভিক্ষা করে না।
আগন্তুক বলল, আমি যোগক্ষেম ধর্মে বিশ্বাস করি।
এরকম একটা পরিবেশে “যোগক্ষেম” কথাটা শুনতে পেয়ে আমি একটু চমকে উঠলাম। রামকৃষ্ণ মিশনে থেকে পড়াশুনা করেছি বলে আমি আধ্যাত্মিক জগতের দু চারটি শব্দের অর্থ জানি।
বললাম, আপনি কে?
বলল, আমি বছরের বেশিরভাগ সময় ‘হরিচরণ দি গ্রেট’।
তার কথার ভঙ্গি শুনে আমি অবাক। বললাম, আর বাকি সময়?
হাসতে হাসতে আমার অফিসার বললেন, কোনোদিন উনি নবাব সিরাজ উদ্দৌলা, কোনোদিন বাহাদুর শাহ্ জাফর, আবার কোনোদিন হারুণ অল রসিদ, আবার কখনও কখনও সুভাষচন্দ্র বসু।
মজা পেয়ে বললাম, আজকে আপনি কি?
আজ আমি প্লেন অ্যাণ্ড সিম্পল হরিচরণ দি গ্রেট। ওই যে আমার সাম্রাজ্য। বলে হরিচরণ আমার জানালা থেকে দূরে পুকুরের অপরপাড়ে হরিচরণ চট্টোপাধ্যায় স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবনটি দেখিয়ে দিল।
আমার অবাক হওয়া দেখে পঞ্চায়েত উন্নয়ন অফিসার রহস্য উন্মোচন করলেন।
বললেন, এখানে চাটুজ্যেরা বড় জমিদার ছিল। এই সব ভেস্ট জমি সবই এককালে ওঁদের ছিল। এদের ঠাকুরদার বাবা হরিচরণ চাটুজ্যে ছিলেন শিক্ষাপ্রেমী মানবদরদী লোক। এ অঞ্চলে তাঁর উদ্যোগেই প্রথম নারীশিক্ষা চালু হয়। আপনার অফিস তো বটেই, এই অঞ্চলের সকল সরকারি অফিসই চাটুজ্যেদের এক একটা বাড়িতে বসেছে।
আমি সম্ভ্রমের সঙ্গে তাকালাম। বুঝতে পারলাম আমি এক দুর্ভাগ্যপ্রপীড়িত মানসিক সমস্যাগ্রস্ত মানুষের সঙ্গে কথা বলছি।
অফিসার বললেন, ইনি চাটুজ্যেদের ছোটো তরফের বর্তমান প্রজন্মের সদস্য। এদের বাড়ির অনেকেই জজ ব্যারিস্টার। অনেকেই বিদেশে পাড়ি দিয়ে প্রতিষ্ঠিত। ইনিই এখানে থেকে গিয়েছেন।
হরিচরণ দি গ্রেট বললেন, ওয়ান ম্যান ফ্যামিলি স্যর, সিম্পল লিভিং, হাই থিংকিং।
চোখের ইঙ্গিতে অফিসারকে বললাম, এঁকে একটুখানি টিফিন খাইয়ে দিন।
হেসে অফিসার বললেন, খাবেনা স্যর। ও শুধু আপনার সাথে আলাপ করতে এসেছে।
হরিচরণ দি গ্রেট বলল, দিনে একবার প্রসাদ পাই। ওতে আমার চলে যায়।
অফিসার বললেন, মন্দিরের বাইরে বসে থাকে। রোজ দু পাঁচজন ভক্ত আসে। পূজারীও কিছু পায়। ওকেও কিছু দেয়।
হরিচরণ বলল, আই সেবাইত স্যর। নো বেগার।
এবার অফিসার হরিচরণকে বলল, মিষ্টি সাহেবকে দেখলি। এবার যা।
হরিচরণ দি গ্রেট বুকের কাছে হাতজোড় করে নমস্কার করে বলল, মিষ্টি সাহেব, আসি।
আমি হাসিমুখে বললাম, আবার আসবেন।
আমার নেমপ্লেটে সমিষ্টি শব্দটা মুখে মুখে ছড়িয়ে গেল গোটা ব্লকে। একদিন দুপুরে গেলাম হরিচরণ স্কুলে। হেডমাস্টার মশায়কে নিয়ে ক্লাসে ক্লাসে ঘুরে ইংরেজি ও অঙ্কের খোঁজ নিলাম। পিছনের বেঞ্চিতে বসা অনেকেই পড়াশুনায় কাঁচা। শিক্ষকদের বললাম ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ছেলেমেয়েদের বসাতে। আর যারা পড়া করে আসতে পারে না, ওদের যাতে স্কুলেই পড়া তৈরি করিয়ে দেওয়া যায়, তার উদ্যোগ নিতে বললাম। বাচ্চাদের বললাম কারা কারা মিড ডে মিল খাও না? কয়েকটি করে হাত উঠল। আমি বললাম, আজ যদি আমি এখানে মিড ডে মিল খাই, তোমরা আমার পাশে বসে খাবে?
প্রতিটি বাচ্চা বিডিও-র পাশাপাশি বসে মিড ডে মিল খাবার আগ্রহ প্রকাশ করল। হেডমাস্টার কুণ্ঠিত হয়ে বললেন, আমি এত করে বোঝাই স্যর। আর আপনার এক কথায় হয়ে গেল।
আমি একটু লজ্জা পাচ্ছি দেখিয়ে হাসতে যাব, অমনি পিছন থেকে কে বলল, উনি যে মিষ্টি অফিসার। ছেলেরা তো জানে।
কে বলল, তাকাতে গিয়ে দেখলাম হরিচরণ বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হাসছে। আমি তাকিয়েছি দেখে বলল, ওয়েলকাম টু এম্পায়ার অফ দ্য হরিচরণ ডাইন্যাসটি স্যর।
আমি হাসলাম। জিজ্ঞেস করলাম আজ আপনি কি?
টু ডে আয়াম মওলানা আবুল কালাম আজাদ স্যর। আয়াম দ্য ফার্স্ট সেন্ট্রাল এডুকেশন মিনিস্টার স্যর। দ্য প্রমিনেন্ট পারসন, হু স্টুড এগেইনস্ট পার্টিশন অফ দ্য কান্ট্রি স্যর।
হেডমাস্টার আমার কানে কানে বললেন, ও একটা স্যাড মেন্টাল কেস স্যর।
শিশুর মতো হাসে হরিচরণ।
হেডমাস্টার বললেন, স্যর, আজ আপনি একটু মিড ডে মিল টেস্ট করুন স্যর।
তাকিয়ে দেখি একজন ভারি সুশ্রী শিক্ষিকা নিজের হাতে দামি বোন চায়না প্লেটে খাবার এনেছেন। সঙ্গে সন্দেশ রসগোল্লা আর দই। আয়োজন দেখে হেডমাস্টারকে বললাম, স্কুলের মিড ডে মিলে দই মিষ্টির ব্যবস্থা তো নেই। তাছাড়া যারা এতদিন মিড ডে মিল খেত না, আমি তাদের সঙ্গে নিয়ে খাব। আপনি সেই ব্যবস্থা করুন।
হরিচরণ হাততালি দিয়ে বলল, ইউ পারফেক্ট মিষ্টি স্যর।
হরিচরণকে বললাম, তুমিও আজ এখানেই প্রসাদ পেয়ো।
হরিচরণ হাত জোড় করে বলল, নো স্যর, নো স্যর, বেগ পার্ডন স্যর। চিলড্রেন ফুড স্যর। অ্যাডাল্ট নট।
হেডমাস্টার বললেন, কোনো দিন তো খাস না, স্যরের অনারে আজ এখানে হয়ে যাক।
হরিচরণ কিছুতেই খেল না। বলল, আই ফলো যোগক্ষেম স্যর। টোল্ড ইউ ফার্স্ট ডে স্যর।
হেডমাস্টার বলল, ও স্যর কারো কাছে খায় না। মন্দিরে পূজা করে, স্বেচ্ছায় ভক্তদের কেউ যদি কিছু দেয়, মাথায় ঠেকিয়ে কার উদ্দেশে প্রণাম করে, তবে খায়। খুব ভদ্র আচরণের মানুষ।
হরিচরণ দাঁত বের করে হাসে। আই এমপারার স্যর।
খাওয়াতে মন দিতে পারলাম না। বাচ্চাদের বলে এলাম, সবাই মিলে রোজ মিড ডে মিল খাবে। শরীর খারাপ না হলে কেউ কামাই করবে না। একমাস ধরে রোজ খোঁজ রাখব। সবাই কথা শুনলে একটা ক্রিকেট সেট গিফট করব।
আমি স্কুলে রয়েছি শুনে অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক চলে এসেছেন।
হরিচরণ তখন বলল, স্কুলের দুটো টিউবওয়েল এর একটার গোড়ার বাঁধন নষ্ট হয়ে গেছে। একটু সারিয়ে দেন স্যর।
হেডমাস্টার মশায়ের দিকে তাকালাম। তিনি লজ্জা পেয়ে বললেন, প্রথম দিন এসেছেন, তাই বিরক্ত করি নি স্যর।
বিদ্যালয় পরিদর্শক বললেন, আমি টেণ্ডারের কাগজপত্র রেডি করে ফেলেছি স্যর।
আমি বললাম, টেণ্ডার তার মতো হবে। কাল সকাল থেকে আরজেন্ট বেসিসে কাজ শুরু করে দিন।
কটা দিন সময় দিলেই টেণ্ডারটা হয়ে যায় স্যর। এস আই কাতরে উঠে বলেন।
বাচ্চাদের লাইফের সিকিউরিটির ব্যাপার এস আই সাহেব। জলদূষণ থেকে ডায়েরিয়া, টাইফয়েড অনেক রোগ হতে পারে। ও আপনি কালই কাজ শুরু করে দিন। বাকি আমি বুঝে নেব।
হরিচরণ হাসে। ইউ মিষ্টি স্যর।
আমি আর কোনো দিকে না তাকিয়ে গাড়িতে উঠে পড়ি।
অফিসে ফিরে জয়েন্ট বিডিওকে ডাকাই। একশো দিনের কাজের খবর নিই। সেল্ফ হেল্প গ্রুপের খবর নিই। গ্রামে গ্রামে হাঁস মুরগির বাচ্চা বিলির খবর নিই।
বিকেলে চারটার সময় হাসপাতালে রোগী কল্যাণ সমিতির মিটিং। তারপরে আশাকর্মীদের সাথে বৈঠক। প্রতিটি গর্ভবতী মায়ের যত্ন নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু বিয়ে অল্প বয়সে হলে, আর পরিকল্পনা না করে বাচ্চা আনলে মায়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানো শক্ত। আজও এদেশের পুরুষ জানে না, শিশুর জন্মদানে বাবা ও মায়ের সমান দায়িত্ব।
মিটিং সেরে হাসপাতালে মেল ও ফিমেল ওয়ার্ডে ঘুরে ঘুরে দেখি। বিকেলে পেশেন্ট পার্টি রোগী দেখতে এসে রোগীর সাথে একই খাটে বসে গল্প করছে। আমি ঢুকেছি দেখে সবাই শশব্যস্ত হয়ে উঠল। ডাক্তারবাবু বললেন, কত বোঝাই স্যর! নিজের একটু সচেতনতা না থাকলে আমি কত করব?
তাঁর পিঠে হাত রেখে বললাম, আমি আবার আসব। পাশে থাকব। ওয়ার্ড বয়দের কড়া নির্দেশ দিলাম রুগি পিছু এক একবারে একজন গেস্ট। বাইরে থেকে খাবার আনা চলবে না। হাসপাতালে ভর্তি থাকলে হাসপাতালের নিয়ম মানতে হবে।
একটাও বেড়ালকে খাবার দেবেন না। খাবার না পেলে ওরা আপনি চলে যাবে।
ডাক্তার আর নার্সদের মুখে কৃতজ্ঞতার ছাপ।
গাড়িতে উঠতে যাব। কে বলল, ইউ ডিড পারফেক্টলি, মিষ্টি স্যর।
গাড়িতে উঠে অফিসে চলে এলাম। ছুটির ঘণ্টা বাজতে সবাই বাড়ি গিয়েছে। আমার টেবিলে ডাঁই করা ফাইল। অনেক কাগজপত্র সই করতে হবে। বাসার অফিসে কাগজপত্র পৌঁছে দেবে আর্দালি। আমি বাগানে একটু পায়চারি করে ঘরে ঢুকে পড়ব। আমার নতুন বউটা বিকেলে সাজগোজ করে বসে ছিল। তাকে বলা ছিল সন্ধ্যায় তাকে নিয়ে একটু বের হব।
ঘরে ফিরে দেখি সে সব সাজ মুছে একেবারে ঘরোয়া পোশাক পরে বসে আছে।
সন্ধ্যা হয়ে গেছে বলে ড্রাইভারকে ছুটি দিয়েছি। বেচারা সকাল থেকে দৌড়ঝাঁপ করে ক্লান্ত। বউকে বললাম, চলো একটু হেঁটে আসি।
সে বলল, নমস্কার, তোমার সঙ্গে এই ব্লকে হাঁটতে পারব না।
কেন, আমি কি করেছি?
তুমি কিছু করো নি। কিন্তু বিডিওকে দেখলে সবার সব সমস্যার কথা মনে পড়ে যায়। আর তখনই তাদের সব বলা চাই। অফিসে না গিয়ে এভাবে রাস্তায় বলা যায় না, একটা লোকের ফ্যামিলি লাইফ থাকতে পারে, সেটা এই ব্লকের লোকজন জানে না।
বললাম, সেটা ওদের ঠিক দোষ নয়। ওরা দ্যাখে আমি কথাটা মন দিয়ে শুনি, তাই বলে।
বউ বলে, হ্যাঁ, তুমি সবাইকার সব কথা শোনো। কিন্তু আমার কথা শোনার জন্য তোমার সময় নেই। তাড়া তাড়া কাগজপত্র সই করতে করতে তোমার চোখ ঘুমে জড়িয়ে আসতে থাকে। খাইয়ে দিতে হয় তোমাকে। বিছানায় পড়লে আর তোমার সাড় নেই। কি করব বলো তো তোমাকে নিয়ে? তোমার বিয়ে করাই উচিত হয়নি। মায়ের খোকা থাকতে, সেই তোমার ভাল ছিল।
আমি বউটাকে জড়িয়ে ধরে আদর করব ভাবি। ও শক্ত হয়ে থাকে। এমন সময় ঝনঝন করে মোবাইল বেজে ওঠে। থানার ওসির ফোন। ধরতে ধরতেই কেটে যায়। ঘুরিয়ে ফোন করি। আগুন লেগেছে বাজারে। শর্টসার্কিট। দমকল আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে। দমকলের বড় গাড়ি যেতে গিয়ে দু একটা ঝুপড়ি দোকান ভেঙে গেছে। তাই বিরোধী দলের উদ্যোগে পথ অবরোধ শুরু হয়েছে।
সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি ডাকিয়ে নিয়ে অকুস্থলে চললাম। মহকুমা শাসকের পরামর্শ মনে রেখে মাথায় একটা হেলমেট পরে নিলাম। গাড়িতেই রাখা থাকে। আমার সহৃদয় ভদ্র আচরণে পথ অবরোধ জমাতে পারল না রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীরা।
রাতে বাড়ি ফিরে দেখি সাড়ে এগারোটা বেজে গেছে। খাবার টেবিলে গালে হাত দিয়ে বসে আছে নতুন বউ। কাজের মেয়েটা দরজা আগলে বসে ছিল। তার বর তাকে নিয়ে যাবে বলে সিঁড়িতে বসে ছিল।
খাবার টেবিলে বসে কোনো কথা হল না। চুপচাপ খেয়ে শুয়ে পড়লাম। নতুন বউ শুতে গেল গেস্ট রুমে। ভোর রাতে অনেক সাধ্যসাধনা করে তাকে কাছে নিয়ে এলাম।
পরদিন সকালে উঠে বউ বলল, বাপের বাড়ি চলে যাব।
আমি বললাম, বাপের বাড়ি যাওয়া তোমার মৌলিক অধিকার। আমি আইনতঃ ন্যায়তঃ আটকাতে পারি না।
বউ বলল, আমি জানি, আমাকে তোমার কোনো দরকার নেই। একটা টেবিল চেয়ার আলমারি টিভি তবু কাজে লাগে। এখানে আমার কিচ্ছু ভূমিকা নেই। সে স্নান করে বেরিয়ে এল। হাতের শাঁখা লোহা খুলে রাখল ড্রেসিং টেবিলের সামনে । কপালে সিন্দূরচর্চা করল না। হা হা করছে শাদা ফ্যাকফ্যাকে কপাল। একটা শাদা শাড়ি পরল। তাতে একটু সামান্য জরিপাড় ছাড়া কিছুই নেই। মোবাইল ফোনটা রেখে টেবিলের ওপর সুইচ অফ করে রেখে দিয়ে আমাকে প্রণাম করে বলল, ভয় নেই, এমন কিছু করব না, তোমার চাকরিতে কোনো সমস্যা হয়। তুমি কোনো দিন আমায় মারো নি, কটু কথাও বলো নি, হাতখরচের যথেষ্ট পরিমাণে টাকা আমার ব্যাগে জোর করে ঢুকিয়ে দিতে। বধূ নির্যাতনের অভিযোগ আমি তুলতে পারব না। প্রমাণ করতে পারা যাবেনা। কিন্তু আইন ছাড়া দাম্পত্য জীবনে আরো একটু কিছু থাকে। সেটার অভাবে আমায় দূরত্ব গড়ে নিতে হল।
কাজের মেয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলো। দাদাবাবু বৌঠানকে আটকান। এটা চুপ করে বসে থাকার সময় নয়।
অফিসে গেলে সবাই আমার চেম্বারে আমাকে এক এক করে দেখে গেল। ইতিমধ্যে রাষ্ট্র হয়ে গেছে, কালবৈশাখী ঝড়ে উড়ে যাওয়া শুকনো পাতার সঙ্গে আমার বাসা তছনছ হয়ে গেছে।
গম্ভীর হয়ে একটার পর একটা ফাইল সই করে গেলাম। আমাদের ক্যাশিয়ার পদে চাকরি করে একটি ভারি মিষ্টি মেয়ে। নন্দিনী। সুগৌরী মেয়েটির শরীরটি সুপুষ্ট। চলার ছন্দে ছন্দে তার পোশাকে লহর ওঠে কোনো দিন এক মুহূর্তের জন্য হলেও খেয়াল করেছি। ক্যাশবুক সই করাতে এসে সে একটি সুরভি রেখে যায় আমার কাছে।
আজ সে আমাকে এসে বলল, আপনার খাওয়া হয় নি। আমি একটু অ্যারেঞ্জ করেছি।
আমি তাকে বললাম, ক্যাশবুক আপডেট করুন।
মেয়েটি বলল, আজ স্যর একটু আগে বাড়ি ফেরার ইচ্ছে করছে। মাসতুতো ননদের বিয়ে।
তার মুখের দিকে না তাকিয়ে বললাম, তাড়াতাড়ি আপডেট করলে তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যাবেন।
অফিস ছুটির পর আর্দালি বকেয়া ফাইল আর কাগজপত্র ঘরে নিয়ে যাবে কি না, জানতে চাইলে বারণ করলাম। কাজের মেয়ে চেম্বারে ঢুকে জিজ্ঞাসা করল, দাদাবাবু সকালে আপনি কিছু খান নি। দুপুরে রেঁধেছিলাম, আপনি বাড়ি ঢোকেন নি। আমার রান্না পছন্দ না হলে আমায় ছুটি দিয়ে দেন। আমি পার্স থেকে একটা দুহাজার টাকার নোট বের করে তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম, আমাদের কোনো দরকার পড়লে খবর পাবে। তার আগে আর আসার দরকার নেই। সে টাকাটা ছুঁয়ে পর্যন্ত দেখল না। চোখে আঁচল চাপা দিয়ে বলল, তুমি কী কঠিন, কী কঠিন!
তিন তিনটি দিন আমার কাটল অনাহারে। ঘড়ি ধরে সকাল নয়টায় অফিস ঢুকতাম। বের হতাম রাত গড়ালে। সমস্ত কাজ আপ টু ডেট করে রাখলাম।
তিন দিনের দিন সন্ধ্যায় এসডি ও এলেন আমার অফিসে।
এসেই ধমক লাগালেন , অফিসের লোকদের খাটিয়ে মারছ নাকি তুমি?
বললাম, কই, গত তিনদিন ধরে আমি তো কাউকে কিচ্ছু বলি নি। নিজের চেয়ারে সেঁটে থেকে মুখ বুজে কাজ করে গিয়েছি।
এসডিও সাহেব বললেন, হুম্ । খবরটা তাহলে ঠিক। তুমি সারাক্ষণ চেম্বারের টেবিলে সেঁটে থাকলে অফিস তো তটস্থ হয়ে থাকবেই। নাও, এবার আমায় ভালো করে চা খাওয়াও।
বেল বাজানো সত্ত্বেও ঘরে কেউ ঢুকল না। এসডিও সাহেব বললেন, তোমার চেম্বারে ঢোকার আগে আমি সবাইকে জোর করে ছুটি দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। তোমার আর্দালিটাকে পর্যন্ত।
আমি বললাম, সে কি, কেন?
তিনি বললেন, সবার সামনে বিডিওকে বকাবকি করা যায় না, তাই।
তাহলে আমাকে এবার বকাবকি শুরু করুন। কথাটা বলার সময় হাসবার চেষ্টা করতে গিয়ে আমার কান্না বেরিয়ে আসতে চাইল।
মহকুমা শাসক বললেন, চলো। আমাকে তোমার ঘরে নিয়ে চলো। তোমার বউয়ের হাতে বানানো চা খাব।
আমি মাথা নিচু করে বললাম, স্যরি স্যর। বাড়িতে কেউ নেই।
দেখলাম টেবিলে দু হাজার টাকার নোটটা তখনও পড়ে আছে। আমায় দাঁত ভ্যাঙাচ্ছে।
এসডিও বললেন, চলো তো দেখি, কি আছে তোমার বাড়িতে। নইলে নিজেই বানিয়ে খাব। চা না খেয়ে আমি আজ ফিরছি না।
আমি তাঁর পিছন পিছন ঘরে ঢুকে অবাক। আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ি আমার বউকে নিয়ে এসেছেন। ঘর আবার ঝলমল করছে। কাজের মেয়ের রান্নার চমৎকার গন্ধ বেরিয়েছে। ভাবলাম আমি কি স্বপ্ন দেখছি?
আমাকে এসডিও বললেন, তোমাদের এই রকমই দেখতে চাই। মিলে মিশে না থাকলে এমন ঝক্কির চাকরি সামলাবে কি করে?
আমার বউকে বললেন, আমি ওর ওপরওলা। ওর ওপর রাগ হলে আমায় বলবি। ঘর ছেড়ে চলে যেতে নেই। এই চাকরিটা শক্ত চাকরি। বাড়ির ফুল সাপোর্ট লাগে।
আমাদের পাশাপাশি বসিয়ে ওর হাতে ঢাউস একটা চকলেট ধরিয়ে দিয়ে এসডিও বিদায় নিলেন।
উনি চলে যাবার খানিকক্ষণ পরে হাসপাতাল থেকে বিএমওএইচ সাহেব ফোন করলেন।
বিডিও সাহেব আপনাকে যে একটু আসতে হবে।
আমি একটু মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে বললাম, আজ আমার বাড়িতে গেস্ট এসেছেন। আজ না গেলে হয় না?
ডাক্তারবাবু বললেন, আমি তিনদিন ধরে আপনাকে বলি নি, কেননা, আপনি নিজের একটা সমস্যায় ছিলেন। আপনার হরিচরণ খুব অসুস্থ। তিনদিন এখানে ভরতি। যদি শেষ দেখা দেখতে চান, আসুন। আপনার কথাই হরিচরণ বিকারে সারাক্ষণ বলছিল সে।
চট্ করে গায়ে জামা গলিয়ে গাড়ি ডেকে নিয়ে চললাম হাসপাতালে।
ফিরলাম অনেক রাতে।
শ্বাশুড়ি বললেন, ছুটি মিলল!
বললাম হ্যাঁ, মা।
রাতে শুয়ে কিছুতেই ঘুমাতে পারছি না। চোখ বুজতে চাইলেই হরিচরণ আমার সাথে কত কথা বলছে। অমুক প্রাইমারি স্কুলের চাল উড়ে গিয়েছে, অমুকপাড়ার নলকূপে জল উঠছে না, অমুকের পুকুরে বিষতেল দিয়েছে কারা। এক একদিন এক একটা খবর দিয়ে যেত সে। জয়েন্ট বিডিওকে বলেছিলাম এত সারভিস দেয় হরিচরণ, ওকে কোনও ভাবে একশোদিনের কাজ পাইয়ে দেওয়া যায় না? তিনি বলেছিলেন, চেষ্টা করুন। আমি তো হাঁফিয়ে গিয়েছি।
বললাম, কেন? হাঁফিয়ে গেলেন কেন?
তিনি বললেন, বাবুর ভোটার কার্ড নেই।
বললাম, নেই কেন? তুলে দিলেই তো হয়। সবাই ওকে চেনে।
হরিচরণকে ডাকিয়ে এনে ভোটার তালিকায় নাম তোলার দরখাস্ত জমা করতে বললাম।
হরিচরণ বলল, আই উইল নট ডু মাই মিষ্টি স্যর।
বিরক্ত হয়ে বললাম, কেন, ভোটার তালিকায় নাম তোলাবে না কেন শুনি? ভোটার তালিকায় নাম তোলানো আর সঠিক প্রার্থীকে ভোট দেওয়া আমাদের নাগরিক হিসেবে দায়বদ্ধতা। যাও, নাম তুলে নাও।
পাগল হেসে বলল, আই অ্যাম অ্যান এমপারার। আই অ্যাম নট সাবজেক্ট টু এনিবডি এলজ় একসেপট দ্য অলমাইটি। ভগবান ছাড়া আমি কারো বশ্যতা স্বীকার করি না।
আমি হাঁ হয়ে গেছলাম। আজ তার মুখে ‘স্যর’ ‘স্যর’ বেরোলো না।
সেই হরিচরণ অসুস্থ। বিকেলে স্বরভঙ্গ হয়ে গেছে। আমি ডাক্তারবাবুকে জিজ্ঞাসা করলাম হরির কী হয়েছে? উনি বললেন, দীর্ঘদিন অনাহারের হিস্ট্রি। প্রোটিন খায় না। শুধু একটু পুজোর প্রসাদ খেয়ে থাকত। যুঝবার ক্ষমতাটাই ফুরিয়ে গিয়েছে। ডাক্তারবাবু বললেন, আজ রাতটুকু কাটে কি কাটে না।
আমি শুয়ে শুয়ে ছটফট করছি দেখে নতুন বউ আমায় আদর করতে চেষ্টা করল। আমি ডুকরে কেঁদে উঠলাম।
এমন সময় ফোন বেজে উঠল। ডাক্তারবাবু বললেন, বিডিও সাহেব, হরিচরণ দি গ্রেট এর ছুটি হয়ে গেল। কাল সকালে ডেথ সার্টিফিকেট দেব।
আমি এক সম্রাটের উদ্দেশে কুর্ণিশ করলাম।
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
নভেম্বর চলছে। অনির সাথে আজ দেখা হবে তা জানাই ছিল। এই তো ক’দিন আগেই দেখা…..
বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..
এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..