প্রক্সি
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
সুস্মিতার মন খারাপ হয়ে যায়। মন খারাপ বললে কম বলা হবে। ওর রীতিমতো এখন কান্না পাচ্ছে। ও এমনটা আশা করেনি। এটা ঠিক যে শ্যামলের সেন্স অব হিউমার খুব ভালো। ওর অন্য সব বন্ধুদের মতো সুস্মিতাও শ্যামলের হিউমার উপভোগ করে। কিন্তু তাই বলে এমনটা বলবে! না হয় কামিজ বা ব্লাউজটা একটু টাইটই হয়েছে, কয়দিন হাঁটাহাঁটি করলেইতো কমে যাবে। এটা সরাসরি বললেই হতো। ও এমন কিইবা মোটা হয়েছে যে এমন করে বলবে! সুস্মিতা ভাবে অন্তত তিন দিন শ্যামলের সাথে কথা বলবেনা।
শ্যামলের ইদানিং এক অদ্ভূত খেয়াল হয়েছে। মাঝে মাঝেই এমন করে। ফোনে কথা বলে যখনি শেষ করতে যাবে, তখনি একটা কুইজ দেবে। সুস্মিতা সাধারনত ঠিক মতো কুইজের উত্তর দিতে পারেনা। অথবা দিলেও শ্যামলের মন মতো হয়না। কিন্তু শ্যামল উত্তরটা বলেও দেবেনা। কৌতুহল নিয়ে রাত কাটাতে হয়ে সুস্মিতার। কারণ, পরদিন কথা হওয়ার আগে উত্তরটা কি হবে তা জানার সুযোগ নেই। কুইজ গুলো অধিকাংশ সময়েই হয় ওদের প্রেম নিয়ে, প্রেমের বিভিন্ন খুঁটিনাটি আর খুনসুটি নিয়ে। তাই সুস্মিতা এই কৌতুহলি সময়টা বেশ উপভোগই করে।
শ্যামল অনেক সময়ই খুব সাধারন কথাও নাটকীয় ভাবে বলে। তখন সাধারন কথাও অসাধারন মনে হয়। সেদিন ফোন রাখতে যাবে এমন সময় বললো, ‘জানো! অনেক দিন ধরেই তোমাকে একটা জরুরি কথা বলবো বলে ভাবছি। বলি বলি করে বলা হচ্ছেনা’।
‘কী কথা? তাড়াতাড়ি বলে ফেল’। সুস্মিতার চোখে মুখে উদ্বেগ আর কৌতুহল।
আচ্ছা, ঠিক আছে। কাল না হয় বলবো। আমাকে কাল মনে করিয়ে দিও।
ফাজলামো করোনা। আমি সারারাত টেনশন নিয়ে থাকতে পারবোনা।
ধুর! তেমন কিছু জরুরী না। কাল বললেও চলবে।
তাইলে এখন বললে কেন? কি জরুরী কথা যদি এখন না বলো তাহলে আর বলতে হবেনা। আমিও কাল তোমার সাথে কথা বলবোনা। আমার না শুনলেও চলবে।
রাগ করোনা প্লিজ!
তাহলে বলো, কি জরুরী কথা বলবে বলছিলে।
আই লাভ ইউ।
বাজে কথা বাদ দিয়ে কি বলবে বলেছিলে তাই বলো।
সত্যি। মোটেও বাজে কথা না। অনেক দিন ধরেইতো বলা হয়নি – ‘আই লাভ ইউ’। সে জন্যই বলতে চাচ্ছিলাম। তুমিতো ইদানিং আর বলোইনা।
সুস্মিতার রাগও হয় আবার হাসিও পায়। ও ভাবছিল কী না কি জরুরী কথা। আর এখন শ্যামল বলছে ‘আই লাভ ইউ’ – এটাই নাকি জরুরী কথা। কিন্তু রাগের চেয়ে ভালো লাগাটাই বেশি হয়। এমনিতে ‘আই লাভ ইউ’ বললে যতো ভালো লাগতো তার চেয়ে অনেক বেশি ভালো লাগে এভাবে নাটকীয় উপস্থাপনে। আচ্ছা, সব ছেলেরাই কি এমন? এতো সুন্দর করে সাধারন কথাকে অসাধারন করে তুলে ধরতে পারে? সুস্মিতা নিশ্চিত না। প্রীতম আর মিনার দু’জনেরই অনেক গুন ছিল। কিন্তু ওরা কেউ এমন নাটকীয় ভাবে সাধারন কথা উপস্থাপন করে পারতোনা। ও জানেনা অন্য ছেলেরা পারে কিনা।
সুস্মিতা ওর উচ্ছাস চেপে রেখে কপট বিরক্তি দেখিয়ে বলে, ‘পুরোনো গার্লফ্রেন্ডকে আর নতুন করে পট্টি মারতে হবে না। যাও ভাগো। এখন ঘুমাতে যাবো। আমি ভাবলাম কী না কি!’
এই হচ্ছে শ্যামল। খুব সামান্য কথাকেই অসামান্য করে বলবে। গতানুগতিক কোন কিছুতে আচমকাই নাটকীয়তা নিয়ে আসবে। এই যেমন সেদিন হঠাৎ করেই জিজ্ঞেস করলো, ‘আচ্ছা বলোতো দেখি পৃথিবীতে সবচেয়ে সুন্দর জিনিস কি?’ সুস্মিতা জানে, এখনি ইনিয়ে বিনিয়ে ওর রূপের প্রসংশা শুরু হবে। কোন মেয়েরইবা তা ভালো লাগবেনা! তবুও না বোঝার ভান করে বললো, ‘পৃথিবীতেতো কতো সুন্দর জিনিসই আছে। তোমার কাছে কোনটা সবচেয়ে সুন্দর মনে হয়ে তা কি করে বলবো? নাকি সবচেয়ে সুন্দরী কোন রমনীর দেখা পেয়ে গেছো? আমাকে বলে দিলেই পারো।’
পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী রমনীর দেখাতো দুই বছর আগেই পেয়েছি। এ আর নতুন কি! আমি তার একটা বিশেষ জিনিসের কথা বলছি। জানো সেটা কি?
সুস্মিতা লজ্জা পায়। এবারে নিশ্চয় শ্যামল অসভ্যতা করবে। নিজের অজান্তেই ওড়না টেনে ঠিক করে। ‘একদম বাজে কথা বলবেনা। আমি অসভ্যতা একদম পছন্দ করিনা। খালি এদিক সেদিক নজর, তাইনা?’ ওর কথায় কপট রাগ ঝরে পড়ে।
ধুর! আমিতো এসব কিছুই মীন করিনি। অসভ্যতার চিন্তাতো দেখছি কেবল তোমার মাথায়।
তাহলে? ও, বুঝেছি। তোমার সব চাপাবাজী। আচ্ছা, পুরোনো গার্লফ্রেন্ডকে মিথ্যে পট্টি দিয়ে কি লাভ তোমার? সে কি অন্য কোথাও চলে যাচ্ছে তোমাকে ছেড়ে যে তাকে পট্টি দিয়ে ধরে রাখতে হবে?
তোমার মাথা! এখন হেঁয়ালী ছেড়ে বলো তবে পৃথিবীতে সবচেয়ে সুন্দর জিনিস কি?
তোমার দৌড় আমার জানা আছে। হয়তো বলবে আমার চোখ, না হয় বলবে আমার হাসি। আর অসভ্যতা করতে চাইলে বানিয়ে বানিয়ে অন্য কিছুর কথাও বলতে পারো।
আচ্ছা। সারারাত ভেবে নাও। কাল বলতে পারলেই হবে। কাল বিকেলেতো ‘লাবাম্বায়’ দেখা হচ্ছেই ।
আমার বয়েই গেছে।
পরদিন যথারীতি বিকেল চারটা বাজতেই দু’জনেই লাবাম্বায় এসে হাজির। এই সময়টা ওদের পছন্দ। টিনএজার বা আর্লি টুয়েন্টির কপোত কপোতীরা তখনো বাসা থেকে বের হয়না। এই সুযোগে নিরিবিলি প্রেম করা যায়। সুস্মিতা এসে কেবিনটায় ঢুকতেই শ্যামল বললো, আজ তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দেবো’।
ডেকে এনে ছ্যাকা দেয়ার মতো কোন সারপ্রাইজ দেবে নাতো আবার? আমি বাবা সবসময় ভয়ে থাকি।
তোমাকে আজ পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর জিনিসটা দেখাবো। তার আগে বলো, বের করতে পেরেছো জিনিসটা কি?
সুস্মিতা এবারে সত্যিই কৌতুহলী হয়। ওর ধারনা ছিল হয়তো বলবে ওর হাসি বা দৃষ্টি কিংবা……। সে অকারণেই আবার ওড়না টেনে ঠিক করে। আসলে ওড়নাটা ঠিকই ছিল, এখনই বরং বেঠিক হয়ে যায়। কিন্তু সেদিকে তার দৃষ্টি নেই। দৃষ্টি শ্যামলের মুখের দিকে। এমন কি জিনিস যে ও সাথে করে নিয়ে এসেছে দেখাতে। ‘না বলতে চাইলে না বলবে’। সুস্মিতারর চোখে মুখে আবারো কপট রাগ। যেন তার আর কোন আগ্রহ নেই এই ব্যাপারে।
কফি আর চিকেন স্যান্ডউইচের অর্ডার দিয়ে শ্যামল সুস্মিতার গা ঘেঁষে বসে। সুস্মিতা কিছু বুঝে উঠার আগেই ওর ঠোঁট দু’টোতে খুব আলতো করে চুমু খায়। খুব আলতো একটা চুমু। মাত্র কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী। সুস্মিতার সারা শরীর কেঁপে উঠে। এ চুমুর জন্য সে যে কাউকেই সারা পৃথিবী লিখে দিতে পারে। এতো আলতো একটা চুমু ওকে যেমন শিহরিত করতে পারে আর কোন কিছুই তাকে এমন করে শিহরিত করতে পারেনি, পারবেও বলে মনে হয়না। একটা অপার্থিব হাসির দ্যুতিতে সুস্মিতার চোখ মুখ উদ্ভাসিত হয়ে উঠে। শ্যামল তার মোবাইল ফোনে সেই হাসিটুকু ক্যামেরাবন্দী করে এক নিমেষে।
‘দেখো, এই হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর জিনিস’। সুস্মিতাকে ক্যামেরায় সদ্য তোলা তার হাসিমাখা ছবিটা দেখায়।
যাহ! তুমি একটা ফাজিল।
সত্যি করে দেখে বলোতো, এই হাসির চেয়ে সুন্দর কোন কিছু তুমি কখনো দেখেছো কি? আমিতো দেখিনি।
গার্লফ্রেন্ডের হাসি সবার কাছেই সুন্দর মনে হয়।
জ্বীনা! ভেবোনা তোমার সব সময়ের হাসিই ভূবন মোহিনী। কিন্তু তোমাকে আলতো করে চুমু খেলে তুমি যেভাবে হাসো তার চেয়ে সুন্দর কোন কিছু এই পৃথিবীতে নেই, থাকতে পারেনা। জানিনা, অন্য কোন সময়ে তোমার চেহারায় ঠিক এই অভিব্যাক্তিটি ফুটে উঠেনা কেন। আমার কি মনে হয় জানো?
কি?
আমার মনে হয় আমি যখন চুমু খাই তখন তোমার সবচেয়ে সুখের মূহুর্ত, আর তোমার এই ট্রেডমার্ক হাসিতে সেই অভিব্যাক্তিই ফুটে উঠে। ঠিক বলিনি?
কী জানি! তেমন ভাবেতো ভেবে দেখিনি। তাছাড়া মানুষকি তার নিজের হাসি দেখতে পায় যে এনালাইসিস করবে? আমি কি তোমার মতো স্মাইলোলজিষ্ট?
দু’জনে কফিতে চুমুক দেয়। নীরবতা ভেঙ্গে শ্যামল বলে, ‘তোমার কাছে আমার একটা জিনস চাইবার আছে’।
একদম বাজে কথা একদম বলবেনা। মাথার মধ্যে সারাক্ষন একই চিন্তা, তাইনা? এখন বুঝলাম কেন এতো পট্টি মারা হচ্ছে।
ধুর! আমার মাথায় মোটেও বাজে কোন চিন্তা নেই। আমি সিরিয়াস।
তাহলে বলো, কি চাও?
ধরো যদি কোনদিন আমাদের ব্রেকআপ হয়ে যায়, তোমার যদি অন্য কারো সাথে বিয়ে হয় তবেতো তোমার উপর সব অধিকার হারাবো। তোমার শরীর, মন সব কিছুর উপরই থাকবে তোমার বরের একচ্ছত্র অধিকার। আমি শুধু চাইবো শুধু একটা জিনিসই তুমি তাকে দেবেনা। সেই জিনিসটা কেবলি আমার থাকবে। তার বিকল্প কিছু তাকে দিও। কিন্তু আমাকে আলদা করে যা দিয়েছো, যা দাও শুধু সেইটুকু কাউকে কোনদিন দিতে পারবেনা, তাকেও না।
আর রহস্য না করে বলে ফেলো প্লিজ! আমি আর ওয়েট করতে পারছিনা।
তোমাকে চুমু খেলে যে তুমি এতো সুন্দর করে হাসো, সেই হাসিটা তুমি কোন দিন অন্য কাউকে দিতে পারবেনা। জানি, তোমার অন্য কারো সাথে বিয়ে হলে বা আমার সাথে ব্রেকআপ হয়ে অন্য কারো সাথে প্রেম হলেতো তার দিকে তাকিয়ে হাসবেই। প্লিজ! তুমি তার দিকে তাকিয়ে অন্যভাবে হেসো। এই হাসিটা শুধুই আমার। পারবেনা? তুমিতো জানো এই হাসির জন্য আমি সারা পৃথিবী জলাঞ্জলী দিতে পারি।
এমনকি আমাকেও?
ধুর বোকা! তুমি না থাকলেতো এই হাসিও থাকবেনা। এখন বলো, রাজী কিনা?
সুস্মিতার একটা অপার ভালোলাগা আর কষ্ট লাগার মিশ্র অনুভূতি হয়। শ্যামল এতো সুন্দর করে ওর একটা সাধারন হাসির অসাধারন কমপ্লিমেন্ট করেছে সেই ভালোলাগা আর ওদের কখনো ব্রেকআপ হয়ে যেতে পারে এই আশংকার কষ্টলাগা। সে খুব নিঃশব্দে শ্যামলের ঠোঁটে একটা আলতো চুমু খায়। সুস্মিতা নিশ্চিত না ওকে এখন কেমন দেখাচ্ছে। খুব দুখী দুখী? ওর চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। এক চোখে আনন্দের, অন্য চোখে বেদনার।
এই হচ্ছে শ্যামল। যার জন্য পৃথিবীর সব কিছুই বিসর্জন দেয়া যায়। অথচ সেই কিনা আজ এমন একটা মন খারাপ করার কথা বললো। সুস্মিতা জানেনা, হয়তো তার মন খারাপ করা ঠিক হচ্ছেনা। হয়তো উপমাটির সত্যিকারের ভালো কোন মিনিং আছে। কিন্তু তার কুইজবাজ বয়ফ্রেন্ড যতোক্ষন না ব্যাখ্যা করছে ততোক্ষন পর্যন্ত মন ভালো করা কঠিন। তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে কাল সকাল পর্যন্ত। সুস্মিতার ঘুম আসেনা।
ওদের প্রেমের দু’ বছর হলো ক’দিন আগে। শ্যামলের খুব খারাপ সময়ে ওদের পরিচয়। শ্যামল তখন জেরিনের সাথে ব্রেকআপ সামলে উঠতে পারেনি। ফেনসিডিল, হেরোইন, গাঁজা কোন কিছুই বাদ যায়না। অফিস কামাই হচ্ছে নিয়মিত। এতো ভালো চাকরিটা যায় যায় অবস্থা। সে অবস্থা থেকে সুস্মিতাই তাকে ফিরিয়েছে। শ্যামল বলতো, ‘তুমি ভূপেনের সেই গানটির মতো। ‘বলো কি তোমার ক্ষতি জীবনের অথৈ নদী/ পার হয় তোমাকে ধরে দূর্বল মানুষ যদি…’। সত্যি সেটা ছিল শ্যামলের ভীষন দূর্বল একটা সময়। সুস্মিতার বুকে মুখ গুঁজে সে অনেক কেঁদেছে সেসময়। সাবেক প্রেমিকার জন্য জন্ম নেয়া কষ্ট হবু প্রেমিকার বুকে ঝরিয়ে দেয়া। এ এক অদ্ভূত অভিব্যাক্তি। সুস্মিতা কোন ছেলেকে কোনদিন এভাবে কাঁদতে দেখেনি। এ সময়টা অন্য কোন মেয়ে এমন নিপুন ভাবে সামাল দিতে পারতো বলে শ্যামলের মনে হয়না। ও আজো সেসময়টাকে ভোলেনি। শুধু সেসময়ই নয়, এখনো সে সুস্মিতার সম্মোহনী ক্ষমতা আর কষ্টের সময়গুলোতে ওর সাপোর্ট দেয়ার ক্ষমতায় মুগ্ধ হয়ে থাকে। মেয়েটা এমন কী করে পারে! ভাগ্যিস জেরিনের সাথে ব্রেকআপ হয়েছিল। প্রীতমও ছেড়ে গিয়েছিল সুস্মিতাকে। নইলে…
আজ অনেকদিন পর সেসব পুরোনো দিনগুলো নিয়ে কথা হলো অনেক। শ্যামল যতোই কৃতজ্ঞতার কথা কথা বলে সুস্মিতা ততোই বিব্রত হয়। বলে। ‘আমি কি কেবল তোমার জন্যই করেছি? আমারওকি স্বার্থ ছিলোনা কোন? তোমাকে যদি সেই পতন থেকে না ফেরাতে পারতাম তবে কি আমিও তোমায় পেতাম?’ শ্যামল বললো, কেবল সেদিন গুলোর কথা ভেবেই না, তোমার সব কিছু ভেবে আমি শুধু একটি প্রাণীর সাথেই তোমার তুলনা করি। শুধু সে ই তোমার উপমা।
ডলফিন?
না, ঠিক ডলফিন না। তবে তার মতোই বড়সড় একটা প্রাণী।
বাঘ ভাল্লুক জাতীয় কিছু বলবে নাকি?
হাতি। হস্তিনী।
সুস্মিতা অনেকটাই অপ্রস্তুত হয়ে যায়। হঠাৎ করেই অনেক রাগ হয়। নিজের দিকে একবার তাকায়। বলে, ‘মানে কি? হঠাৎ তোমার হাতির কথা মনে হলো? আমি কি এতোটাই মুটিয়ে গেছি? ৬২ কেজি ওয়েট তোমার এতো বেশি মনে হচ্ছে? তোমার কি আমাকে কোলে নিয়ে হাঁটতে হবে?’
আহা! রাগ করছো কেন? তুমি নিজেও জানো আমি তোমার মুটিয়ে যাওয়া বা ওয়েট নিয়ে কিছুই বলছিনা। উপমাটা আমি দিয়েছি অন্য কারণে।
কেন বলছো জানিনা। কিন্তু পৃথিবীতে এতো কিছু থাকতে উপমা দেয়ার মতো তুমি এমন একটা বিশাল প্রাণী ছাড়া আর কিছুই খুঁজে পেলেনা?
আমিতো আকারের কথা বলিনি। বলেছি প্রকারের কথা।
কেন! তোমারতো ডলফিনের কথাও মনে হতে পারতো। তুমিইতো বলেছো ওরাই নাকি সবচেয়ে বেশি রোমান্টিক। অবশ্য আমাকে হয়তো তোমার কাছে এখন আর তেমন রোমান্টিক মনে হয়না।
আসলে ব্যাপারটা সেরকম কিছু নয়। জানলে তুমি বরং খুশিই হবে।
আমি মোটেই জানতে চাইনা। আমার না হয় ব্লাউজের হাতটা একটু টাইটই হয়েছে। তাই বলে হাতির সাথে তুলনা! তুমি এখন যাও। আমার খুবই মেজাজ খারাপ হচ্ছে।
এটা নিয়ে একটা কবিতা লিখবো ভাবছি। প্রথম ক’টা লাইন মনে এসেছে।
আমার কোন ইন্টারেষ্ট নেই।
‘বৃংহতি নেই প্রিয়ংবদা
পদ্মিনী নয়, শঙ্খিনী হয়
তবুও তোমার নাম দিয়েছি হস্তিনী……’
শ্যামল হেঁয়ালীর মতো করে আপন মনে বলে। সুস্মিতা কিছু শুনছে বলে মনে হয়না। ওর মন খারাপ হয়ে যায়। হতে পারে এই উপমার ভালো কোন অর্থ আছে। কিন্তু এখন কিছুই জানতে ইচ্ছে করেনা।
পরদিন দুই বার শ্যামলের ফোন ধরেনা সুস্মিতা। তৃতীয় বারে ধরে বলে ‘হেঁয়ালী না করে বলো কি বলবে’।
তুমি হাতি দেখেছো কখনো?
ও, তুমি এই কথা জিজ্ঞেস করতে ফোন করেছো?
হাতির কান দেখেছো, কুলোর মতো? হাতি তার কানের জন্য তার শরীর দেখতে পায়না। হাতি জানেনা সে কতোটা অতিকায়। নিজের শরীর দেখেনিতো কোনদিন। তাই নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে তার কোন ধারনাই নেই। যদি থাকতো তবে সে সামনে যা পেতো তাই ভেঙ্গেচুরে দিত।
তুমি আসলে কী বোঝাতে চাচ্ছো? তুমি কি হাতির এনাটমি পড়ানোর জন্য ফোন করেছো?
তুমিও একটা হাতির মতো। নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে তোমার কোনই ধারনা নেই। একজন মানুষকে দিনের পর দিন মুগ্ধ করে রাখার আর তাকে পতন থেকে টেনে তুলে আনার কী অসামান্য ক্ষমতা তোমার, তুমি যদি জানতে! কাল পুরোনো কথাগুলো মনে হয়ে বারবার একথাই মনে হলো। তোমার মতো ক্ষমতাবান কোন মেয়ে আমি দেখিনি কোন দিন। তুমি ছাড়া অন্য কেউ হলে আমি হয়তো এতো দিন নেশার অতলে ডুবে যেতাম। তুমি ছাড়া অন্য কেউ আমাকে এভাবে দিনের পর দিন মোহাবিষ্ট করে রাখতে পারতোনা। অথচ তুমি নিজেই জানোনা তোমার এই অসামান্য ক্ষমতা। যদি জানতে তাইলে আমার মতো এতো সাধারন একটা ছেলের প্রেমে এমন হাবুডুবু নাও খেতে পারতে। হয়তো তুমি সত্যিকারের কোন রাজপুত্তুরের গলায় মালা দিতে। তোমাকে হস্তিনী না বলে কি বলবো বলো?
সুস্মিতা কি বলবে বুঝতে পারেনা। ওর মন ভালো হয়ে যায়। ভালো হয়ে যায় বললে কম বলা হয়। ও এখন শ্যামলের সেই আলতো চুমুটা ছাড়া পৃথিবীর আর সব কিছুই লিখে দিতে পারবে যে কাউকেই। কিন্তু এখনযে সেই চুমুর জন্য ওর ঠোঁট দু’টো কেঁপে উঠছে!
শ্যামল ছেলেটাই এমন। কী সুন্দর আর নাটকীয় ভাবেই না কমপ্লিমেন্ট জানাতে পারে! হঠাৎ করেই ‘হস্তিনী’ শব্দটি সুস্মিতার খুব প্রিয় মনে হয়।
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
নভেম্বর চলছে। অনির সাথে আজ দেখা হবে তা জানাই ছিল। এই তো ক’দিন আগেই দেখা…..
বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..
এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..