হাজার গাছের মা

সুদীপ ঘোষাল
ছোটগল্প
Bengali
হাজার গাছের মা

শুরুর কথা

পূর্ববর্ধমান জেলার শ্রীসুরুড়া গ্রামে রক্ষাকালী মাতার পুজো হয়ে গেলো এক সপ্তাহ আগে । শ্বেতার পরিবারে তিনজন লোক।সে তার বাবা ও তার মা।এখানে প্রায় দশ হাজার লোক এইদিন প্রসাদ গ্রহণ করলেন। প্রসাদ খুব উচ্চ মানের পদ সাজিয়ে বিতরণ করা হয়। ছোটো গ্রাম হলেও এই পুজোয় আশেপাশের গ্রামের লোক এসে ভিড় করেন। বহু দূরের ভক্তবৃন্দ এই পুজো দেখতে ছুটে আসেন। গ্রামের ছেলে মেয়েদের উৎসাহ চোখে পড়ার মত। মায়ের পুজো দেখতে সকলে ভিড় করেন।

অনেক টাকা খরচ করে তৈরি হয়েছে মা রক্ষাকালীর নতুন মন্দির। দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের আদলে তৈরি হয়েছে এই মন্দির। এখনও কিছু কাজ বাকি আছে। ভক্তবৃন্দের উৎসাহে খুব শীঘ্রই এই মন্দিরের কাজ সম্পূর্ণ হবে বলে গ্রামবাসীদের আশা। গ্রামের পুরোনো বাসিন্দা অনিমেষ বোস বারান্দায় বসে আছেন। এই গ্রামে তিনি আজন্ম আছেন।মাঝে দশবছরের জন্য গেছিলেন শহরে চাকরি করতে।এটা ছিল তার শখের চাকরি।শুধু অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য শহরে যাওয়া।তার জমিজায়গা দেখাশোনা করেই অনেকে জীবীকানির্বাহ করে থাকেন।
শ্বেতার বাবার বন্ধু অনিমেষ নিজের স্ত্রী অনিমা ও উপস্থিত সকলকে, কৈশোর ও যৌবনের কথা বলেন। অনিমেষ বলেন,নদীর ধার দিয়ে ছিল নিত্য আমার আনাগোনা । গ্রীষ্মে দেখতাম, শুকনো বালির বৈশাখী কালো রূপে আলো ঘেরা অভয় বাণী ।বর্ষায় পরিপূর্ণ গর্ভবতী নারীরূপ । এই রূপে জলবতী নদীতে অতি বড় সাঁতারু ভুলে যায় কৌশল । আমি তখন নদীর বুকে দুধসাদা ফেনা হয়ে ভাসতে ভাসতে চলি বাক্যহারা হয়ে ।
শ্বেতার জননী, কবিতা দেবিও পাশের গ্রামের মেয়ে।তিনি স্বামীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বলেন,তারপর শরতে কাশ ফুলের কারসাজি । তার মাথা দোলানো দেখে আমি দুর্গা পুজোর ঢাকী হয়ে যাই । আমার অন্তর নাচতে থাকে তালে তালে । মা তুই আসবি কবে আর, নতুন জামায় নাচে মন সবার ।নদী এরপরে হেমন্তের বুকে ছবি এঁকে এগিয়ে যায় শীত ঋতুর আহ্বানে । লোটা কম্বল বগলে আমি রাজস্থানী সাজি । কখনও ধূতি পাঞ্জাবি পরিহিত শাল জড়ানো খাঁটি বাঙালি । মাঝে মাঝে কোট প্যান্ট পরিহিত বিদেশী সাহেবের সুন্দর সাজ । আমি সারা পৃথিবীর সাজে সজ্জিত হতে চাই শীতের আদরে ।শীতল আড়মোড়া ভাঙতেই বসন্তের বাসন্তী রঙের তালে তালে আমি রঙের ফেরিওয়ালা হয়ে যাই । সকলের অন্তরের গোপন রঙ ছড়িয়ে দেয় প্রকৃতি । এই সময়ে আমার রাধাভাব ছড়িয়ে পড়ে স্বচ্ছ অজয়ের মদনমোহনের রূপে ।আমার সমস্ত শরীর মন ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে মনোদেবতার মহান চরণে।

ছোটথেকেই শ্বেতার গাছের প্রতি ভালোবাসা মানুষকে অবাক করে দিত।তার বাবা তাদের বাড়ির পাশে থাকা একটা জিওল গাছ কেটে দিতে গিয়ে পড়ল মহা বিপত্তিতে।তার আট বছরের মেয়ে শ্বেতা বলছে,বাবা গাছটা তুমি কেটো না। যদি গাছটা কেটে ফেলো, আমি মরে যাব।গাছ কাটার আগে আমাকে কেটে ফেলো।শ্বেতার বাবা কাটারি হাতে দাঁড়িয়ে বললেন,বেশ যাও ঘরে। আমি গাছ কাটব না।তবু শ্বেতা গাছটাকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে থাকল।তার চিৎকারে লোকজন জড়ো হয়ে বলল,যাও মেয়ের কথা শোন। কাটারি রেখে দাও।তোমার মেয়ে ঠিকই বলছে।শ্বেতার বাবা বাধ্য হলেন। তিনি আর গাছ কাটবেন না প্রতিশ্রুতি দিলেন মেয়েকে। তারপর থেকে শ্বেতার আব্দারে বিডিও অফিস থেকে এনে দিতেন গাছের চারা। শ্বেতা যত্ন করে রাস্তার ধারে ধারে গাছ লাগাত।গ্রামবাসীরা শ্বেতার গাছ লাগানোর কথা সকলেই জানত।
শুরু হল শ্বেতার উচ্চস্তরে পড়াশোনা।কিন্তু কলেজে ভর্তি হলেও আর বেশিদূর পড়াশোনায় অগ্রসর হতে পারেনি শ্বেতা।কিন্তু গাছ লাগানোর নেশা তার রক্তে মিশে গেল।
যে বয়সটা ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা আর খেলাধূলায় সময় কাটায় সেই বয়সে শ্বেতা শুধু গাছ লাগিয়ে আনন্দ পায়।আর অন্যকিছু তার ভালো লাগে না। শ্বেতার মনের অনুভূতি কবিতার মত প্রকাশিত হয়।শ্বেতা প্রকৃতিপ্রেমীকা।সে তার রোপণ করা সবুজ গাছগাছালিকে উদ্দেশ্য করে কথা বলে মনের।সে বলে, তুমি আছো বলেই আমি আছি তা না হলে অস্তিত্ববিহীন সমাজের বুকে। শুধু কেঁদে কথা বলা। মায়ের কাছে বসে যখন শিশুবেলার কোল হাত কিন্তু থামে না। শুধু বিলি কাটে চুলে। মা আর সবুজ গাছগাছালি ছাড়া অর্থহীন বড় হওয়া।
আদতে কিন্তু চিরকালই ছোট আমরা গাছেদের কাছে।তাদের সবটুকু আমরা মায়ের দুধের মত শুষে নিই।তাই এসো, এওনও সময় আছে।আমরা ভুল শুধরে জীবন পাল্টাই। ঘুরে বেড়াই সবুজের অলিতে-গলিতে। এটা আমাদের হাতে আছে। গাছে গাছে বসন্তবৌরির ডেকে চলাই কাজ।সামনে বাবা গণেশের বিশাল মিছিল।ভক্তের দল পয়সা ছড়ায়, মিছিল বিন্দু হয়ে মিলিয়ে যায়।আরো দূরে শুধু থেকে যায়, আমরণ অনেক না খেতে পাওয়া শিশু। যদি বল বুড়ো বয়সে দুধতলা রোগ।আমি বলব এ রোগ নয়।ভালোবাসার সীমানা বয়স সব পেরিয়ে অসম্ভব ধারণক্ষমতার স্মৃতি জেগে বয়স পঞ্চাশ পূর্ণ তুমি নেই অথচ তোমার সঙ্গে কথা বলি তৃপ্ত হই। এবার তালতলায় কুন্দুলি পাকিয়ে গোপোন রেখেছি অধরা রহস্য। এখনো বাঁচবো অনেক উপপাদ্য বাকি।
মান বাঁচাতে যে পোড়া দেহ এখনো মানস পাড়ায় যেখানে সেখানে ভাসি ডুবি মানস সরোবরে নবীন মনে তুমি আড়াল থেকে বলবে তোমার না বলা কথা। এই যে মনের এত দুঃখ সব জমা হয়ে আছে অদৃশ্য বায়ুর মত একান্ত মনের ধ্রুপদী সঙ্গীত বাজে নিরন্তর। ছেদবিন্দু নেই আকাশের নীলের বিচরণ। আষ্টেপৃষ্ঠে জঞ্জাল। অর্থহীন চিন্তায় প্রতিক্ষণে মেঘের মাঝে বৃষ্টির দেবতা কে পেয়েছে আজ মুক্তি, ঈগল বন্ধনছিন্ন মেঘের বাইরে। ভালোবাসা চোখের জল ভালোবাসা ব্যথা।
যুগে যুগে জমানো আছে কত প্রেমের গাঁথা চন্ডিদাস-রজকিনী লায়লা মজনু। জুলিয়াস ক্লিওপেট্রার অথেলোর মাঝে আমার নাম লেখা হোক বৃক্ষপ্রেমী হিসেবে।দেশপ্রেমের একই কথা বিশ্বাস আর বিশ্বাস ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে সবাই নাও সবুজ প্রেমের শ্বাস। ভালো বাসবে ভালো থাকবে সকল নারী পুরুষ।ভয় পেয়োনা সংগে আছে অমর যিশুর ক্রুশ।

গৌতম ও তার ভাবনার কথা

সবুজ সাহসী নদীর বাঁকে একবুক ভয় নিয়ে মন্দির প্রাঙ্গণে ওরা সমবেত।নারী-পুরুষের কীর্তন শেষে সমবেত কণ্ঠে উলুধ্বনি।বিশ্বাস হয় তার প্রাণ আছে পোড়ামাটির। একেবারে জীবন্ত নায়ক। ধর্মের নামে চিন্তার অবকাশ। তারপর চাঁদের আলো আঁধারিতে হেঁটে যাওয়া নদী।
হৃদয় জুড়ে একতা আর মানবতার ধর্ম।এত সবুজ মুহূর্ত হারিয়ে তুমি দুঃখ খুঁজনা। জোনাকির আলো জ্বালিয়ে শুধু বসে থেকো না আলোটা চোখ ভরে তুমি দেখো। নতুন স্বপ্ন ভাঙার সুর জুড়ে এখন শুধু যত্ন নিন শিল্পীর। হাতে ঝরাও তোমার কর্মধুলা। নিশ্চয় সফল হবেনই। আশা-নিরাশার দাম। পেটে খিদে নিয়ে যদি ছড়াও ভালোবেসে জুড়াবে মনের ক্ষত।এখন যুগের হাওয়া আল্ট্রামডার্ন পোস্টমডার্ন জয়দেব চন্ডীদাস লালন সবার উপরে বসে দেখছেন কল্কি এলো কিনা।
এসব বাজারে এখন ওয়াইফাই নেট ব্লগ-এ বিখ্যাত লোকের ঘর থেকে বেরিয়ে পড়া সিনসিনারি।
সম্পাদকের লিস্টে নারী।পুরুষের সঙ্গে আকাশে উড়ছে নারী।নারী স্বাধীনতার যুগে এখনো অনেক কবিতা গান গল্প ঝুলে আছে।চিরবসন্ত সমাজের বুকে সাক্ষী হতে পেরে গর্বিত আমি।
যুগ পেরিয়ে আজকের আধুনিক মানচিত্র এগিয়ে যাওয়ার লড়াই।যুক্তি র বিচারে পৃথিবীকে শিশুর বাসযোগ্য করে যারা, তাদের স্মরণে আজকের যুবক-যুবতী নারী-পুরুষ সবাই এক মিনিট মৌনব্রত পালন করি।প্রকৃতি সাজাতে ভ্যানগগের কল্পনা ওই নীল পাখিটা বোঝে। আর তখনই জমে যায় মেঘ বৃষ্টি। দুঃখ দিয়ে যায় কাদামাখা জলের স্রোতে পুরনো স্মৃতিতে শ্যাওলার মুখে মিশে যায় জলে। মানুষ খুঁজে ফেরে সাজানো বাগান ক্ষ্যাপা। যেমন খোঁজে পরশপাথর।বুঝি আমি ওই নীল পাখিটার ভাষা।বৃষ্টি হোক মাটি উর্বর হোক। মাটি ভেদ করে জেগে ক্ষ্যাপা পেয়েছে আজ সবুজ পরশ পাথর।পুরনো বাড়ির চারকোনা টালি শ্যাওলার নরম বালিশ। ধুঁকছে কালো জলে দরজা ঘাটে তালগাছের আঁকাবাঁকা ছবি।পাড়ে বসে থাকা জীবনানন্দ দাশের গভীর গর্তের সতর্কতায়, দিব্যি বেঁচে আছে ছুটে যাওয়া পৃথিবী।আমার ইচ্ছে নেশার রঙে শ্রাবণ মাসের তুলিতে থাকা কৃষকের ঘরে শুধু লাঙ্গল জুড়ে ভুবন নাচে। দুরত্ব বাড়ানো ভালোবাসা আর পাশে বসে যত দুঃখের বটের ঝুরি।আজ পঞ্চাশেও প্রেম।কিশোরী চাঁদের গর্ত ও বাতাসের সংস্পর্শে এসে যায় শীতের হাওয়ার দোলায়।চিন্তার পাতা ঝরে কবে কিক্ষণে দেখা দেবে জিজ্ঞাসা চিহ্ন কিছু না শুধু সাদা হলুদ পরী। সমাজ একটা নাট্যমঞ্চ। পুরাতন গ্রহ।আলোচনায় সমবেত সুধীজন। অভিনয়, হাততালি শুধু জানে অন্ধকারে ব্যক্তির সত্য পরিচয় মুক্ত দাবা খেলে। যত দূরে যাই ততই পিছিয়ে পড়ি।এ যাত্রা ম্যারাথন স্টকে থাক দম।এক একটা পরগাছা সন্তান বেড়ে ওঠে।।হঠাৎ পরীক্ষক ঝড় এলে ভেঙে পড়ে দুর্বল কান্ড।অভিজ্ঞতার শিকড়ে একটু একটু করে গভীরে যায়।সবুজ হয় বৃহতের আড়ালে।এবার কান্ড শক্তপোক্ত।একদম সত্য ন্যায় প্রতিষ্ঠা।একটা যুগের চিত্রকর্মের লড়াই বাড়তেই থাকে তা জানেনা। এযাত্রা ম্যারাথন, সফলতা অতঃপর…।তোমাকে আর ফেরাবোনা। দুঃখ ভুলে গেলে ভালো হতো পারে। ধাক্কা খেয়ে পড়ে এসেছ এবার।
এই সমস্ত ভিজে মন অবহেলার দায়ে শুকনো বাড়ি এসে চেষ্টা করে দেখ যদি সাঁতার কাটতে পারো।একটা কবিতা মরে গেলে আরেকটা কবিতায় বেঁচে উঠি।ফিনিক্স পাখির মতো।সাগর সঙ্গমে এখনো পাওয়ার অনেক দূরে।চলে যেতে পারে মঙ্গল গ্রহে।আমি একা তুমি একা বাকি শুধু বিশ্বকবি কবিতায় চিরকাল ইমনকল্যাণ….। পুত্রদের বড় হওয়ার পথে উজ্জ্বল প্রতীক হয়ে থাকে মায়ের আদর্শ পেতে ধরা বাদে সমস্ত জীবন উৎসর্গ করা থাকে ছেলেমেয়ে সাফল্যের পথে শুধু বড় হওয়ার পর থেকেই জীবন আলাদা হয়ে থাকে না কখন যেন অজান্তেই স্বয়নে স্বপনে জাগরনে জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী। ভালোবাসা যুগে যুগে চোখের জল স্বতঃস্ফূর্তভাবে হৃদয়ে হৃদয়ে নানা রঙের ফুলের বাহারি ভালবাসার যোগ্য প্রেমের আগুন জলে পদ্ম ফুলের বাগান ভালোবাসা বৃহত্তম পাহাড় ঝর্ণা আকাশ বাতাস মাটি ফুঁড়ে ভালোবাসি ভালোবাসি তোকে। ভালোবেসে পাথরে ধাক্কা খেলে রক্ত হয়ে যায় লাল গোলাপ অপ্রিয় কটুক্তি মনে হয় আন্তরিক প্রলেপ অথচ সংসারী অসংখ্য প্রেমের মাঝে হৃদয়ের কথা জানতে নিষ্ঠুর হয় শুধু একটু তফাৎ একটু মায়া একটু ভালো লাগায় পাহাড় পাথর গলে যায় তোমার ছিল ভীষণ জ্বালা শুধু প্রেম পিয়াশি খেলা যায় না ধরা স্বপ্ন ছিল এক বোতল ভরা ভালোভাবে জীবন ছিল বেঁচে তুমি দিলে আমার আশা ছেড়ে দূরে রুপসী কন্যা যত প্রেমের জন্য মরন থেকে সরে আসে যখন তখন থেকে দেখি তোমায় প্রেমের ঢেউ খেলিয়ে মর্ত্যভূমি

তীব্র সবুজ আকর্ষণ মনের গভীর জলের আকাশে অপেক্ষা না করে নিচের থেকে শুরু করে আ্যামাজন জঙ্গল হয়ে যায় আমার কল্পনা। বৃষ্টি হওয়ার সময় ঈগল মেঘের বাইরে সমস্যার মোকাবেলা করে দিয়ে যায় বৃষ্টির জল খেয়ে তখন উর্বরা ফালতু চিন্তা না করে সহজে নিচের থেকে শুরু করি জেনে রাখি সত্য কথা হইছে আর পেটের নিচে কারণ
একমাত্র মা ছাড়া আমি কারো কাছে প্রিয় ছিলাম না। তবুও নীল আকাশ সমুদ্রের জল হাতছানিতে বারবার। বন্ধুরা মিলে ঠিক করলাম দীঘা যাব কলকাতা থেকে বাস ধরে কয়েক ঘন্টা পর চলে এলাম একদম দীঘা।দিঘাতে এই আমার প্রথম সমুদ্র দর্শন। সমুদ্র দেখে প্রথমে বুঝতে পারিনি আকাশের নীল সমুদ্রের নীল একাকার হয়ে গেছিল। আমি অবাক হয়ে গেলাম এই বৃহৎ সমুদ্র দেখে কত ছোট আমরাই সাগরের কাছে। তারপর লজ ভাড়া করে আমরা সব বন্ধুরা চলে গেলাম সেখানে। খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা লজের মালিক করতেন। প্রত্যেকদিন সামুদ্রিক মাছ ভেজে খেতাম আবার দুপুরে ভাত খাওয়ার সময় পেতাম। লজের মালিক বললেন এখানে এলে শুধু মাছ খাবেন বিভিন্ন রকমের মাছ খেতে ভালো লাগবে।

সমুদ্রস্নান মনে রাখার মত এই সমুদ্র স্নান করতে বারবার ভালো লাগতো বারবার ছুটে চলে যেতাম সমুদ্রের ধারে সেখানে পাথরে বসে থাকতাম আর দেখতাম ঢেউয়ের পর ঢেউ পুলিশ মানা করত এ পাথরের ফাঁকে বিষধর সাপ ও থাকে তাই তারা বলত অন্য জায়গায় বসবেন এসব জায়গায় সাধারণত কেউ বসেনা।

সন্ধ্যাবেলায় সমুদ্রের ধারে বসে ঢেউ গুনতে আর বন্ধুরা আনন্দে মউজ করতো আমি একা এক পাশে ঝাউবনের মধ্যে গিয়ে ঘুরতাম সেখানে আমার আরো ভালো লাগতো।

আমার এক বন্ধুর নাম ছিল গৌতম। গৌতম এর সঙ্গে ঘুরতে ঘুরতে হারিয়ে যেতাম সমুদ্রের ধারে ধারে ছবি তুলতাম কত সেইসব ছবি এখনো মনের মনিকোঠায় চির অমর হয়ে আছে এখনো ভুলতে পারিনি সেই সব দিনের কথাসকলের সাথে আমি সহজভাবে মিশতে পারি না কিছু কিছু বন্ধু আমার খুব প্রিয় ছিল তারা বুঝতে আমার অন্তরে কথা আমার স্বভাব চরিত্র সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল ছিল তাই তাদের সঙ্গে আমার বেশি ভালো লাগত।

আমি দেখতে খুব স্মার্ট নই কালো দোহারা চেহারার এক অসুন্দর যুবক। আজ অব্দি আমাকে দেখে কেউ প্রেমে পড়েনি আমি কারো প্রেমে পড়িনি। আজ কিন্তু আমি প্রকৃতির এই সমুদ্রের প্রেমে পড়ে গেলাম। প্রেম যে কত মধুর একমাত্র যার হয়েছে সেই জানে।

সেখানে পরিচয় হলো এক মেয়ের সাথে তার নাম সোমা। সোমা খুব সুন্দর দেখতে কি করে আমার মত একটা কালো ছেলে প্রেমে পড়ে গেল। সোম এতটাই ভালবেসে ফেলল যে আমার সঙ্গে লজে যেতেও কুণ্ঠাবোধ করল না।
পরেরদিন সকালে এসো মা আমাকে বললো চলো সমুদ্রসৈকতে ঘুরে আসি বলল হাতটা দাও হাত ধরে আমরা দুজনে একসাথে হাঁটবো দেখবে কত লভেলিয়ে দেখবে আমরা খুব মজা পাবো তারপর আমি তার হাত ধরলাম আঙ্গুলে আঙ্গুলে সাথে ভাঁজে ভাঁজে ঢুকে গেল তারপর হৃদয় শিহরিত হতে লাগল আমি বললাম তোমার কি অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে হচ্ছে। সোমা বলল হ্যাঁ হৃদয় খুলে যাচ্ছে। আমি বললাম আমার হৃদয় ভিজে যাচ্ছে ভালোবাসায়।

কোনোদিন ভাবতে পারিনি এত সুন্দরী এক মেয়ে আমাকে ভালোবেসে ফেলবে আন্তরিক ভালোবাসা তার শেষ হয়েছে তার বাবা-মায়ের সঙ্গে তাদের অন্য জায়গায় কিন্তু সে চলে আসে আপন মনে আপন খেয়ালে সমুদ্রের ধারে সেও সমুদ্র ভালোবাসে আর এই সমুদ্র যেন আমাদের মিলন ঘটিয়েছিল।সোমা বালি নিয়ে সমুদ্রসৈকতে কি সুন্দর এক দেবী প্রতিমা তৈরি করেছিল যেটা ঢেউয়ে সে আবার ভেসে চলে গেল আমি বললাম আমাদের প্রেম এরকম হবে নাতো বালির ঘরের মতো। সোমা বলল জীবনে তো তাই জীবনে তো বাড়ির ঘরের মতো একদিন ভেবে ভেসে যাবে সব ঘর। সোমা আরও বলল তবে যতদিন বাঁচবো আনন্দ করে বাঁচবো এসব চিন্তা করে লাভ নেই এস এখন আনন্দ করি। সোমা আমাকে মানুষ করে ধরেছিল আমি মানুষ ছিলাম না আমি কারো সাথে মিশতে পারতাম না ভদ্রভাবে কথা বলতে পারতাম না কিন্তু তোমার প্রেমে পড়ার পর আমি বুঝতে পারলাম জীবন কি।সোমা বলল জীবন অদ্ভুত শিল্প যে শিল্পী এই শিল্প ফুটিয়ে তুলতে পারে সেই তো সার্থক জীবনে দুঃখ কষ্ট আছে তাকে বড় করে দেখলে হয়না তাকে ভুলে গিয়ে সব সময় আনন্দে থাকতে হয় সেই আনন্দের খোঁজে থাকতে হয় শুধু আনন্দ শুধু আনন্দ এই আনন্দের অপর নাম দেবতা বা ঈশ্বর।সোমা বলল আমরা শুধু টাকা পয়সার পিছনে ঘুরে বেড়ায় কিন্তু এই আনন্দের পিছনে যদি আমরা ঘুরে বেড়াতে পারতাম তাহলে জীবনে এত সুন্দর অনুভব হত যে জীবনকে ভালবাসতে ইচ্ছে করত কিন্তু আমরা পারি না আমরা শুধু টাকা পয়সার পিছনে ছুটে বেরিয়ে আমাদের জীবনের মূল্যবান সময়টা নষ্ট করি।সমাহার ও বলেছিল তুই কোন জাত পাত নয় মানুষই একমাত্র ধর্ম মানবতা একমাত্র ধর্ম মানুষকে ভালোবাসায় একমাত্র ধর্ম এসো আমরা ভালোবেসে মানুষকে ভালবাসতে শিখো জগতকে ভালবাসতে শিখি।তারপর আমরা বিয়ে করেছিলাম এক মন্দিরে আমি বাড়ি নিয়ে গেছিলাম তাকে আমার বাবা-মা কিন্তু কোন অমত করেননি তাকে গ্রহণ করেছিল সুন্দরভাবে আর সময় ব্যবহারে মুগ্ধ হয়েছিল বাড়ির সকলে।সোমা আমার বাড়ি পরিবেশ পাল্টে তুলেছিল সবাই তাকে ভালোবাসতো সবাইকে থেকে এসে ভালোবাসার কথাই বলতো।কিন্তু ভাল লোকেরই তো কষ্ট বেশি।

শ্বেতার কথা

শ্বেতা বলে,আমরা গ্রামের মানুষ। তবু বাবার চাকরিসূত্রে ঘর ভাড়া নিয়ে লিলুয়া শহরে পটুয়াপাড়ায় থাকতাম।মফস্বল এলাকা প্রায় গ্রামের মত।তখন ১৯৭৮ সাল। বাবা একটা লোহার কারখানার ম্যানেজার।আমরা তিনভাই পড়তাম খেমকা হাই স্কুলে।তখন আমাদের টিভি ছিল না।রেডিওতে নাটক শুনতেন মা।আমিও মায়ের নাটক শোনার সঙ্গি হতাম।জগন্নাথ বসু আর তৃপ্তি মিত্রের অভিনয় শুনে চোখে জল আসত। একটা সুন্দর মানসিকতা গড়ার প্রথম শিক্ষিকা মা।মায়ের কাজের অনুসরণ করে আমরা বড় হই।
বর্ষাকালে টালির চাল ফেটে জল পড়ত মশারির উপরে।তাও মা আমাদের ঘুম ভাঙাতেন না।নিজের আঁচল দিয়ে আমাদের ঢেকে রাখতেন রাত জেগে।পরের দিন সকালে দেখতাম মায়ের আঁচল ভিজে।আবার রোদ উঠত।ঋতু পাল্টে শরৎ আসত।পুকেরের ধারে কাশবন মাথা নাড়িয়ে আমাদের আহ্বান করত।আমরা কাশের বনে লুকোচুরি খেলতাম।শৈশবটাকে বেঁধে রাখলে ভাল হত কিন্তু সময় তো বয়ে চলে নদীর স্রোতের মত।
শ্বেতা যেখানে জায়গা পেত সেখানেই লাগিয়ে দিত গাছের সারি।সবুজে ভরে যেত সবুজ প্রাণে।

শ্বেতার বাবা বিশুবাবু প্রকৃতিপ্রেমিক। তখন তিনি গ্রামে থাকতেন।বিশু আজ আমাদের সকলের শৈশবের বন্ধু। মা, মাটি, মানুষের আদরে মানুষ হয়েছে বিশু। কারণে অকারণে গ্রামের মাটি সে সারা অঙ্গে মেখে নিত। মাটিমাখা কৃষক, খেটে খাওয়া মজুর তার বন্ধু ছিল। ছোটো থেকেই সেবা করত মানুষের। কেউ খেতে না পেলে নিজের টিফিন খাইয়ে দিত অক্লেশে। বিশুবাবু আজ তার বন্ধুদের নিজের জীবনের কাহিনী বলছেন, বন্যা এসেছে। আমাদের তখন মাটির দোতলা বাড়ি। তিনি বলছেন, আমার কাকিমা রান্না সেরে নিচ্ছেন। বন্যার ঢেউ মাটির দেওয়ালে ধাক্কা মারছে। মাটির দেওয়াল জলের ধাক্কায় পরে গেলো। মা কান্নাকাটি শুরু করলেন। বললেন,কত কষ্ট করে এই বাড়ি হয়েছে। আর হবে না আমার বাড়ি। কাকু বললেন,চলে এসো পাকা বাড়িতে। বেঁচে থাকলে আবার হবে বাড়ি। আমাদের সবাইকে নিয়ে মা কাকুদের বাড়ি চলে এলেন। দুদিন আমরা অই বাড়িতে ছিলাম। আখের গুড় আর ছোলা ভিজে খেলাম সবাই। গোপালদা গরু মোষ দেখার জন্য নীচে ছিল। সে বলল, আমি দেখ এখানে বসে আছি। বাবু বলল, গোপাল দা তোমার পাশে শাঁখামুটি সাপ। গোপাল দা বলল,ভয় নেই আমার।ওরাও জলে থাকতে পারছে না। থাকুক কিছু করবে না।

সারারাত সে সাপের সঙ্গেই ছিলো। কিছু ক্ষতি হয় নি। বিপদে সবাই মিলেমিশে থাকে।বললেন,গোপাল দা। তারপর বন্যার জল নেমে গেলে বাবা,গোপালদা দুজনে মিলে পাকা ঘরটার
কাদা বালি পরিস্কার করে জিনিসপত্র নিয়ে এলেন। মাটির বাড়িটা পরে গেছে। বড্ড ফাঁকা লাগছে। পাকা ঘর একটা সেখানেই আমরা সবাই একসাথে বাস করতে লাগলাম। আমরা এখন পাঁচজন। তিন ভাই আর বাবা, মা। কাকিমা দুই বোনকে নিয়ে কাটোয়ায় থাকেন। কাকিমা চাকরি পাওয়ার পর কাটোয়া চলে এলেন যাতায়াতের অসুবিধার জন্য। তারপর আবার প্রকৃতির নিয়মে নতুন বছর এলো।

নতুন বছরে নতুন মন নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার স্পৃহা জেগে ওঠে মনে। তারপর এই ইচ্ছেটা ধরে রাখাই খুব কঠিন কাজ বলে মনে হয়। প্রথম প্রথম কবিতা লিখতে এসে, নতুন কবির পাতার পর পাতা ভরে যায়। কিন্তু যখন কোবিতা, কবিতা হয়ে ধরা দেয় ভাষা যায় ফুরিয়ে। ছমাসে,নমাসে হয়ত একটা কবিতা ধরা দেয়।
এখানেই মহাপুরুষের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য। তাঁরা হাল ছাড়েন না। লেগে থাকেন। আর লেগে থাকলেই হবে। যে কোনো কাজে সফল হওয়া যাবেই। প্রেমে লেগে থাকলেই হবে। পড়াশোনায় তাই। লেখা,জোখা সমস্ত কিছুতেই লেগে থাকলেই,চর্চা করলেই সফলতা পাওয়া যায়। তাই লেগে থাকতে হবে। বিফলতাগুলো সফলতার এক একটা স্তম্ভ। বাবা এইসব কথা আমাদের বলতেন। বাবা চাষবাস দেখাশোনা কোরতেন আর বড়দা লিলুয়ায় চাকরী করতেন একটা বড় স্টিল কারখানায়। আমি গ্রামের স্কুল থেকে হায়ার সেকেন্ডারি পাশ করে হাওড়া নরসিংহ দত্ত কলেজে ভরতি হলাম।

লিলুয়া শহরে যখন ভাড়াটে হিসাবে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতাম চার ভাই, তখন আমরা নিজেরাই রান্নাবান্না করে নিতাম। উনুন ধরিয়ে আঁচ দেওয়া,বাসনমাজা সবকিছু নিজেরাই করতাম। খাবার জল আনতে যেতে হত দু কিলমিটার দূরে। বালতি নামাতে,নামাতে আনতাম খাবার জল। কোনদিন আমার পালা পরত। ছোটোবেলা থেকেই এখানে কাটিয়েছি মা, বাবার সঙ্গে। তখন ভাল লাগত। আর এখন মা বাবা এখানে নেই। ভাল লাগত না। মনে হত যাই ছুটে মায়ের কোলে। যেতে পারতাম না। রোজগার করতে হবে। বসে বসে খেলে ত হবে না। বড়দা বলতেন,তোর যখন মন হবে বাড়ি চলে যাবি। মেজদা বলতেন,যা,মায়ের কাছে যা। এখানে তোর ভালো লাগবে না। কিন্তু আমার মনে একটা অপরাধবোধ কাজ করত। বসে বসে খাব। এটা চিন্তা করতেই মন খারাপ হয়ে যেত। তখন গ্রাজুয়েট হয়ে গেছি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্র পড়াই। আর ফাঁকা ঘরে আমি একা পড়তাম বিভূতিভূষণ, তারাশঙ্কর,রবীন্দ্রনাথ,মাণিক,শরতচন্দ্র,নিমাই,শীর্ষেন্দু,শঙ্কর ও আরো অনেকের লেখা। মায়ের অভাব, তাদের লেখাই ভুলিয়ে দিতো নিমেষে।
কিন্তু অতিরিক্ত নাটক,কবিতা,গল্প পড়ার ফলে আমার চাকরী বাকরী হয় নি। গোড়া,গৌতম,গোবিন্দ,অসীম আসতো বাসায়।
দাদার কাছ থেকে চলে এলাম মায়ের কাছে ছোটো ভাইয়ের হাত ধরে। শিবলুন স্টেশনে নেমে মাটির গন্ধে আমি আত্মহারা হয়ে গেলাম। মাটির স্পর্শ পেলাম। তারপর বাড়ি গিয়ে মা কে দেখে চোখে জল চলে এল। মায়ের চোখেওজল। তারপর সহজভাবে গ্রাম্য পরিবেশে মিশে গেলাম। ছোটো ছোটো ছেলে মেয়েদের নিয়ে খোলা মাঠে বোসতাম। গল্প শোনাতাম। এদিকে শুরু করলাম তিন ভাই মিলে গানের ক্লাস। তারপর আমার বিয়ে হোলো কাশীরাম দাসের জম্মস্থান সিঙ্গি গ্রামে। মনে আছে বন্ধুদের পাল্লায় পরে কাটোয়া এনিস সেলুনে ফেসিয়াল করেছিলাম। ফলে বিয়ের ছবিগুলো খুব সুন্দর হয়েছিল। বিয়ের তিন বছরের মধ্যেই পুত্র সন্তান হোলো। ভাই নাম রাখলো সৈকত।
এবার জীবিকার সন্ধানে চলে এলাম কাটোয়া শহরে। সস্তার জায়গা দেখে বাড়ি বানালাম। বেড়া দিয়ে ঘিরলাম জমি। কিছু গাছ লাগালাম। গ্রামের পরিবেশ। এটাই আমার সাদা কালো জীবনে বেশ খাপ খায়। তারপর মরণের সঙ্গে সহবাস। সস্তার সাত অবস্থা। সাপের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হলেও পালাবার পথ বন্ধ। মায়ার শেকল পায়ে জড়িয়ে গেছে। সামনে গঙ্গা নদী। ভয়ের চোটে আমি স্বপ্নে দেখছি আমি গঙ্গা নদীর জলে ডুবে গেছি। কিছুক্ষণ জলের তলায় পরে থাকলাম।তারপর ফুলে ফেঁপে ভেসে উঠলাম।পেট ফোলা দেখে একটা কাক এসে বসলো আমার উপরে। তারপর খুঁটে খেতে লাগলো পেটের চর্বি। পেট ফুটো হলেই জল ঢুকতে শুরু করলো। আবার আমার দেহ চলে গেলো জলের তলায়। এবার কুমীর, বোয়াল মাছে খেতে লাগলো আমার দেহের মাংস। শেষে কুমীরটা গিলে ফেললো আমার কংকাল শরীর। কুমীরটা, খাওয়ার পরে সাঁতার কেটে চলে গেলো আনন্দে। আমি দেহ শূন্য হয়ে উড়তে উড়তে আকাশের পথে চলেছি। আমি এখন আমার মৃত দাদু,বাবা,ঠাকুমা সবাইকে দেখতে পাচ্ছি। তারা এক একটা তারা হয়ে জ্বলজ্বল করছে। আমি থমকে গেছি। তাদের কাছে যেতে পারছি না। দাদু এগিয়ে এসে নিজের আলো ছড়িয়ে দিলেন আমার দিকে। আমি তার সঙ্গে চলতে শুরু করলাম। তাদের মাঝে আমারো জায়গা হোলো।
আমি মাঝে মাঝে গ্রামে যাই। মায়ের কাছে।মাটির কাছে।এবার গ্রামে গিয়ে দেখলাম,গোস্বামি বাড়িতে রাধামাধব এসেছেন।
রাধামাধাব আসলে আমাদের গ্রাম বৃন্দাবন হয়ে উঠত। ঘরে ঘরে হরিনাম হত। আমরা নিমন্ত্রন পেতাম সাতদিন ধরে। গোস্বামি বাড়ির পুজোতলায় রাতে বসত কির্তনের আসর। রাধার উজাড় করা প্রেমের কাহিনি শুনে মা, পিসির চোখে জল বাঁধ মানত না।
বিশু বলে চলেছে,আমার মা মহাভারতের অনেক গল্প বলতেন। আমাদের ছোটোবেলাতে অনেক গল্প শুনে মুখস্ত হয়ে গেছিল। রামায়ণের গল্প সুর করে পড়ে শোনাতেন আমার দাদু। দাদু ভাল গান করতেন একতারা বাজিয়ে। তখনকার দিনে যাত্রা শিল্পে মহিলা পাওয়া কঠিন ছিল। আমার দাদু মহিলা সেজে স্টেজে অভিনয় করতেন। বেশ ছিল ছোটোবেলার দিনগুলো। এখন বয়স বেড়েছে। আবেগ এখন পাগলামি বলে মনে হয়। অথচ এই পাগলামি ছিলো বলেই দাদু এত নামকরা শিল্পী হয়েছিলেন।

বিশুর দেশপ্রেম,মানবপ্রেম দেখে আমরা তার ভক্ত হয়ে পড়েছিলাম। সব জাতির মিলনে সে স্বছন্দ বোধ করত।
তারপর, বিশু সমাজসেবার দল করেছিলো। প্রায় কুড়ি বছর ছিলো মানুষের সেবক ।

বীরভূমের বাড়িতে থাকে সে । একদিন মা বাবাকে প্রণাম করে একদম আদুল গায়ে গামছা জড়িয়ে বন্ধুদের সঙ্গে চলে গেলো বক্রেশ্বর নদীতে। ওর সঙ্গে আমিও ছিলাম। দেখলাম অনেক উঁচু লাল টিলা থেকে লাফিয়ে নদীর জলে ঝাঁপ দিলো। তার পরেই বন্ধুরা। তারপর বিশু গান ধরলো,”ও আমার দেশের মাটি,তোমার পরে ঠেকাই মাথা”। আমি ওর গান শুনে মুগ্ধ।বড় মানবপ্রেমিক এই যুবক আমার সঙ্গেই বড় হয়েছে। আমার চোখে কেন জানি না জল এলো দু ফোঁটা।আমি ডুব দিলাম। নদীর জল আর চোখের জল মিলেমিশে ভালোবাসা তৈরি হলো।হিন্দু মুসলমান পরিবারের যৌথ জীবনের ভালোবাসা তাকে আঁকড়ে ধরেছিলো আজীবন। বিরাজুল, সামিম ছিল তার প্রিয় বন্ধু।

সরকারের সাহায্য নিয়ে সে যৌথ খামার দেখাশোনা করে।

সে এখন গ্রামের বাড়িতে চাষবাসও দেখাশোনা করে।

 

শ্বেতা যেখানে যায় সেখানে সবুজের জন্ম দেয়।সে হল সবুজ প্রকৃতির মা।বৈচিত্র্যে ভরা সবুজ সবুজ গাছগাছালি তার মন কেড়ে নেয়।গ্রামের পাশেই ফালি নদী। পাড়ে ফল গাছ। ভেতরে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে শ্বেতা তার বন্ধুর সঙ্গে কথা বলতে বলতে চলেছেন। এক জায়গায় তারা বসে পড়লেন। বন্ধু জঙ্গল খুব ভালোবাসেন।শ্বেতার বন্ধু সুমন। তিনি সবুজ একটা পাতা হাতে নিয়ে বললেন এটা কি গাছের পাতা বলতো?শ্বেতা বলল, এই পাতায় আপনি হাত দিয়েছেন? আপনার তালুতে আছে বলে, কোন অস্বস্তি হচ্ছে না। সুমন বলছেন না, তালুতে বিছুটি পাতার কোন প্রতিক্রিয়া হয় না।কিন্তু এটা ঘষে দিলে রস যদি এদেহে লাগে তাহলে তখন জ্বলতে শুরু করে। বলছি, আমি চিনি এটা বিছুটি পাতা।শ্বেতা বললেন। সুমন আক্ষেপ করে বললেন এখনকার ছেলেরা এই বিছুটি পাতা, ডুমুর গাছ, নয়ন তারা গাছ, তারপর বাঁদর লাঠিগাছ এইগুলো কি আর চিনতে পারবে?
কত বিভিন্ন রকমের প্রকৃতিতে গাছ আছে। যারা আপনা আপনি বেড়ে ওঠে। তাদের লাগাতে হয়না। যেমন, কদবেল গাছ, বেলগাছ এগুলো আস্তে আস্তে যেন হারিয়ে যাওয়ার পথে। বিশ্বপ্রকৃতির কতটুকু চিনি আমরা বলো?

শ্বেতা শহরে থেকেও গ্রামের কথা ভোলে নি।শ্বেতা বলে,আমি ও বন্ধুরা এই গ্রামে ভালোবাসা র বয়সটা কাটিয়েছি তার কথা আজ মনে সবুজ সর ফেলছে । শুধু মনে পড়ছে,আমার স্বপ্নের সুন্দর গ্রামের রাস্তা বাস থেকে নেমেই লাল মোড়াম দিয়ে শুরু ।দুদিকে বড় বড় ইউক্যালিপ্টাস রাস্তায় পরম আদরে ছায়া দিয়ে ঘিরে রেখেছে । কত রকমের পাখি স্বাগত জানাচ্ছে পথিককে । রাস্তা পারাপারে ব্যস্ত বেজি , শেয়াল আরও অনেক রকমের জীবজন্তু।.চেনা আত্মীয় র মতো অতিথির কাছাকাছি তাদের আনাগোনা । হাঁটতে হাঁটতে এসে যাবে কদতলার মাঠ। তারপর গোকুল পুকুরের জমি, চাঁপপুকুর, সর্দার পাড়া,বেনেপুকুর । ক্রমশ চলে আসবে নতুন পুকুর, ডেঙাপাড়া ,পুজোবাড়ি, দরজা ঘাট, কালী তলা । এখানেই আমার চোদ্দপুরুষের ভিটে । তারপর ষষ্টিতলা ,মঙ্গল চন্ডীর উঠোন , দুর্গা তলার নাটমন্দির । এদিকে গোপালের মন্দির, মহেন্দ্র বিদ্যাপীঠ, তামালের দোকান, সুব্রতর দোকান পেরিয়ে ষষ্ঠী গোরে, রাধা মাধবতলা । গোস্বামী বাড়ি পেরিয়ে মন্ডপতলা । এই মন্ডপতলায় ছোটোবেলায় গাজনের সময় রাক্ষস দেখে ভয় পেয়েছিলাম । সেইসব হারিয়ে যাওয়া রাক্ষস আর ফিরে আসবে না ।কেঁয়াপুকুর,কেষ্টপুকুরের পাড় । তারপর বাজারে পাড়া ,শিব তলা,পেরিয়ে নাপিত পাড়া । এখন নাপিত পাড়াগুলো সেলুনে চলে গেছে । সাতন জেঠু দুপায়ের ফাঁকে হাঁটু দিয়ে চেপে ধরতেন মাথা ,তারপর চুল বাটি ছাঁটে ফাঁকা । কত আদর আর আব্দারে ভরা থাকতো চুল কাটার বেলা ।এখন সব কিছুই যান্ত্রিক । মাঝে মাঝে কিছু কমবয়সী ছেলেমেয়েকে রোবোট মনে হয় । মুখে হাসি নেই । বেশ জেঠু জেঠু ভাব ।সর্বশেষে বড়পুকুর পেরিয়ে পাকা রাস্তা ধরে ভুলকুড়ি । আর মন্ডপতলার পর রাস্তা চলে গেছে খাঁ পাড়া , কাঁদরের ধার ধরে রায়পাড়া । সেখানেও আছে চন্ডীমন্ডপতলা , কলা বা গান, দুর্গা তলার নাটমন্দির সব কিছুই । পুজোবাড়িতে গোলা পায়রা দেখতে গেলে হাততালি দিই ।শয়ে শয়ে দেশি পায়রার দল উড়ে এসে উৎসব লাগিয়ে দেয়। পুরোনো দিনের বাড়িগুলি এই গ্রামের প্রাণ ।এই গ্রামে ই আমার সবকিছু , আমার ভালোবাসা, আমার গান ।

তারপর শ্বেতার বাবা রিটায়ার্ড হলে পরিবার নিয়ে চলে আসেন নিজের জন্মভূমি তার গ্রামে। শ্বেতার আবার গাছ লাগানোর পালা শুরু হয়।শহরে থাকতেও প্রায় হাজারখানেক চারাগাছ রোপণ করেছে রাস্তার ধারে ধারে।
শ্বেতার বন্ধু নেপালের বাড়ি কাটোয়ার নয়াচরে।শ্বেতা, বন্ধু বান্ধব সকলকে গাছ রোপণের জন্য উৎসাহিত করে।নেপালের বাড়ি গঙ্গার ধারে কাটোয়ার নয়াচরে।গঙ্গার ধারে একটা বকুলগাছ ছিল।একটা ভালোবাসার গল্প ছিল নেপালের মনে।সেই ভালোবাসা মনে করে আজও গেঁথে যায় বকুল ফুলের মালা।কত স্বপ্ন,কত আশা বাস্তবের মাটিতে মিশে যায় সহজে মনে দাগ রেখে।
কাটোয়া মহুকুমার একটি সুন্দর জায়গার নাম নয়াচর। কাটোয়া চরপাতাইহাট,নয়াচর গঙ্গার ধারে ছায়াছবির মত দেখতে লাগে। হাওড়া থেকে কাটোয়ার প্রায় দুরত্ব ১৫৪ কিমি.। এখানে এসেও শ্বেতা কাটোয়া এসে চর পাতাইহাটে তরুণদের গাছ লাগানোর জন্য উৎসাহিত করে।। স্টেশন থেকে ৫কিমি পথ হেঁটে ট্রেনে এলে দাঁইহাট নেমে সুবিধা হয় বেশি এখানে আসতে ।
পাঁচবছর পরে শ্বেতা এসে দেখে প্রচুর সবুজ গাছে , সুন্দর পরিবেশে চোখজুড়িয়ে যাচ্ছে আরামে।এখানে রিসর্টও আছে।শ্বেতার পরিচালনায় এন জি ও র সংস্থা পাখিশিকারিদের নিষেধ করে এই এলাকায় আসতে। গাছে গাছে পাখিদের ভিড়।
শ্বেতা বনদপ্তর সূত্রে জানতে পেরেছে , কাটোয়ার ভাগীরথী নদীর মোট তিনটি চরে পরিযায়ী পাখিরা আসছে। নয়াচরে বিভিন্ন প্রজাতির সাইবেরিয়ান বার্ড, স্মল পেটিন কোল্ড থেকে শুরু করে কিংফিশারের দেখা মিলছে। এমনকী অস্ট্রেলিয়ান বার্ডও আসছে বলে দাবি বনদপ্তরের। কাটোয়ায় এবার গাঙ্গেয় ডলফিন রক্ষায় কড়া নজরদারি শুরু করেছে বনদপ্তর। এরজন্য রাজ্য বনদপ্তর থেকে দু’টি স্পিড বোটও পেয়েছে কাটোয়া বনবিভাগ। তাতে যেমন ভাগীরথীতে তারা টহল দিচ্ছে, তেমনই ওই বোটে চরগুলিতে পরিযায়ী পাখিদের উপর নজরদারিও চলছে। পরিযায়ী পাখিদের আসার জন্য যে পরিবেশ দরকার, তারজন্য সবরকম ব্যবস্থা করতে তৎপর তারা। এখানে কাটোডলফিন , ভোঁদড় , ব্রাহ্মণী হাঁস , পারাডাইস ফ্ল্যাই ক্যাচার , অনেক রকম সাপ আরও অনেক রকম এর পাখি।
নয়াচর গ্রামটি কালীগঞ্জ থানার গোবরা পঞ্চায়েতের মধ্যে পড়ে। ওই গ্রাম থেকে অনেক পড়ুয়াই প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে কাটোয়ার পানুহাট রাজমহিষী উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়তে আসে।
গঙ্গার তীরে অপূর্ব সুন্দর পরিবেশে মন ভাল হয়ে যাবে।জঙ্গল আর বিভিন্ন পশুপাখি এই নয়াচরকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
শ্বেতা এখন তার বাড়িতে অনেকরকম ফুল গাছ লাগায়।আর অনেক ফুলের মাঝে সে সহজ হয়ে নিজেকে খুঁজে পায়।
ভাঁটফুল,ঢোলকলমি,পাহাড়িকলমি র ফুলের ঘ্রাণে, প্রাণে ভারতবর্ষের নির্মল সুন্দর গন্ধ ভেসে ওঠে।সুবাসে মন মাতোয়ারা। বসন্তের রঙ বাহারি ফুলের গানে হৃদয় দুলে ওঠে শ্বেতার।
ফল গাছের মাঝে বসে সে ভাবে পুরোনো দিনের কথা। সে জানে,change is the only constant in the world.

শ্বেতার বন্ধু বিশুর কথা
শ্বেতা ও বিশু একসঙ্গে গাছের সেবা করত।তাছাড়া তাদের পারিবারিক জীবনও ছিল।প্রেম ছিল,স্নেহ,ভালোবাসা ছিল আর ছিল সুন্দর একটা মন।

বিশুর আর তার বোন ঝুমা গ্রামের বাড়িতে একটা পুরোনো ভাঙাবাড়িতে, চার বন্ধুকে ডেকে গোলা পায়রা দেখতে যেত। বিশু ভালবাসত সোমাকে। বিশুর বোন ঝুমা শিউলিতলায় শিউলিফুলের বোঁটা থেঁতলে, নখ,হাত, পা রঙীন করে তুলত। আমাদের সকলের বোন ঝুমা,পুজোবাড়ির সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠত।তারপর আমাদের বিশু, পা ঝুলিয়ে দিত। আমরা বিশুর পা ধরে ওপরে উঠতাম।বিশু আমাদের একে একে টেনে তুলে নিত ছাদে।তারপর নারকেল গাছ থেকে নারকেল পেড়ে দাঁত দিয়ে ছাড়িয়ে খেতাম। এই ভাঙা পুজোবাড়ির ভিতরে খোলা জায়গাটা অনেকটা বড় ছিল।তার ভিতরে বড় বড় আমগাছ, নারকেলগাছ,অনেকরকম ফুলের গাছও ছিল।একটা ছোটপুকুর ছিল আর ছিল আমাদের খোলামন।তখন আমাদের কোন স্মার্টফোন বা মোবাইল ছিল না।কিন্তু আনন্দ ছিল ষোলআনা।আমরা চার বন্ধু। রমেন, জীবন, বিশু আর আমি। যেখানেই যেতাম একসাথে যেতাম,একসঙ্গে থাকতাম। বিশু ছিলো আমাদের দলের অলিখিত নেতা। নেতা তো এমনি এমনি হয় না। তার কাজ,দল চালানোর কৌশল তাকে নেতা বানিয়েছিলো। একদিন দুপুর বেলায় সে আমাদের ডাক দিত তার বাঁশি বাজিয়ে। বাঁশির ডাক শুনেই মন চঞ্চল হয়ে উঠত মন। চুপি চুপি বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পুজোবাড়িতে । আমাদের মিলন অফিস ছিলো এই পুজোবাড়ি । তারপর চারজন ছুটে চলে যেতাম খোলামাঠে। সেখানে বিশু বলত, দাঁড়া কয়েকটা তাল কাঁকড়া ধরি । ভেজে খাওয়া যাবে।একথা বলেই হাত ভরে দিত বিশু, সোজা ধানের জমির গর্তে।বিশু চিৎকার করে বলত, একটা মাগুর ধরেছি। এই কথা বলেই মাথা টিপে হাত বের করতেই দেখা গেলো মাছ নয় একটা বড় কালো কেউটে সাপ। বিশু সাপটাকে সাঁ সাঁ করে ঘুরিয়ে সহজেই ছুঁড়ে দিলো দূরে। তারপর তাল কাঁকড়া ধরে ভেজে খাওয়া হলো মাঠে। ভাজার সমস্ত সরঞ্জাম বিশু লুকিয়ে রাখতো একটা পোড়ো বাড়িতে। সাঁতার কাটতে যেতাম নতুন পুকুরে। একবার ডুবে যাওয়ার হাত থেকে রেহাই পেয়েছিলাম তার প্রখর বুদ্ধির জোরে। মাথার চুল ধরে টেনে তুলেছিলো ডাঙায়। বৃষ্টি হওয়ার সময় ঈগল মেঘের বাইরে সমস্যার মোকাবেলা করে দিয়ে যায় বৃষ্টির জল খেয়ে তখন উর্বরা ফালতু চিন্তা না করে সহজে নিচের থেকে শুরু করি জেনে রাখি সত্য কথা হইছে আর পেটের নিচে কারণ
একমাত্র মা ছাড়া আমি কারো কাছে প্রিয় ছিলাম না। তবুও নীল আকাশ সমুদ্রের জল হাতছানিতে বারবার। বন্ধুরা মিলে ঠিক করলাম দীঘা যাব কলকাতা থেকে বাস ধরে কয়েক ঘন্টা পর চলে এলাম একদম দীঘা।দিঘাতে এই আমার প্রথম সমুদ্র দর্শন। সমুদ্র দেখে প্রথমে বুঝতে পারিনি আকাশের নীল সমুদ্রের নীল একাকার হয়ে গেছিল। আমি অবাক হয়ে গেলাম এই বৃহৎ সমুদ্র দেখে কত ছোট আমরাই সাগরের কাছে। তারপর লজ ভাড়া করে আমরা সব বন্ধুরা চলে গেলাম সেখানে। খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা লজের মালিক করতেন। প্রত্যেকদিন সামুদ্রিক মাছ ভেজে খেতাম আবার দুপুরে ভাত খাওয়ার সময় পেতাম। লজের মালিক বললেন এখানে এলে শুধু মাছ খাবেন বিভিন্ন রকমের মাছ খেতে ভালো লাগবে।

সমুদ্রস্নান মনে রাখার মত এই সমুদ্র স্নান করতে বারবার ভালো লাগতো বারবার ছুটে চলে যেতাম সমুদ্রের ধারে সেখানে পাথরে বসে থাকতাম আর দেখতাম ঢেউয়ের পর ঢেউ পুলিশ মানা করত এ পাথরের ফাঁকে বিষধর সাপ ও থাকে তাই তারা বলত অন্য জায়গায় বসবেন এসব জায়গায় সাধারণত কেউ বসেনা।

সন্ধ্যাবেলায় সমুদ্রের ধারে বসে ঢেউ গুনতে আর বন্ধুরা আনন্দে মউজ করতো আমি একা এক পাশে ঝাউবনের মধ্যে গিয়ে ঘুরতাম সেখানে আমার আরো ভালো লাগতো।

আমার এক বন্ধুর নাম ছিল গৌতম গৌতম এর সঙ্গে ঘুরতে ঘুরতে হারিয়ে যেতাম সমুদ্রের ধারে ধারে ছবি তুলতাম কত সেইসব ছবি এখনো মনের মনিকোঠায় চির অমর হয়ে আছে এখনো ভুলতে পারিনি সেই সব দিনের কথাসকলের সাথে আমি সহজভাবে মিশতে পারি না কিছু কিছু বন্ধু আমার খুব প্রিয় ছিল তারা বুঝতে আমার অন্তরে কথা আমার স্বভাব চরিত্র সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল ছিল তাই তাদের সঙ্গে আমার বেশি ভালো লাগত।

আমি দেখতে খুব স্মার্ট নই কালো দোহারা চেহারার এক অসুন্দর যুবক। আজ অব্দি আমাকে দেখে কেউ প্রেমে পড়েনি আমি কারো প্রেমে পড়িনি। আজ কিন্তু আমি প্রকৃতির এই সমুদ্রের প্রেমে পড়ে গেলাম। প্রেম যে কত মধুর একমাত্র যার হয়েছে সেই জানে।

সেখানে পরিচয় হলো এক মেয়ের সাথে তার নাম সোমা। সোমা খুব সুন্দর দেখতে কি করে আমার মত একটা কালো ছেলে প্রেমে পড়ে গেল। সোম এতটাই ভালবেসে ফেলল যে আমার সঙ্গে লজে যেতেও কুণ্ঠাবোধ করল না।
পরেরদিন সকালে এসো মা আমাকে বললো চলো সমুদ্রসৈকতে ঘুরে আসি বলল হাতটা দাও হাত ধরে আমরা দুজনে একসাথে হাঁটবো দেখবে কত লভেলিয়ে দেখবে আমরা খুব মজা পাবো তারপর আমি তার হাত ধরলাম আঙ্গুলে আঙ্গুলে সাথে ভাঁজে ভাঁজে ঢুকে গেল তারপর হৃদয় শিহরিত হতে লাগল আমি বললাম তোমার কি অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে হচ্ছে। সোমা বলল হ্যাঁ হৃদয় খুলে যাচ্ছে। আমি বললাম আমার হৃদয় ভিজে যাচ্ছে ভালোবাসায়।

কোনোদিন ভাবতে পারিনি এত সুন্দরী এক মেয়ে আমাকে ভালোবেসে ফেলবে আন্তরিক ভালোবাসা তার শেষ হয়েছে তার বাবা-মায়ের সঙ্গে তাদের অন্য জায়গায় কিন্তু সে চলে আসে আপন মনে আপন খেয়ালে সমুদ্রের ধারে সেও সমুদ্র ভালোবাসে আর এই সমুদ্র যেন আমাদের মিলন ঘটিয়েছিল।সোমা বালি নিয়ে সমুদ্রসৈকতে কি সুন্দর এক দেবী প্রতিমা তৈরি করেছিল যেটা ঢেউয়ে সে আবার ভেসে চলে গেল আমি বললাম আমাদের প্রেম এরকম হবে নাতো বালির ঘরের মতো। সোমা বলল জীবনে তো তাই জীবনে তো বাড়ির ঘরের মতো একদিন ভেবে ভেসে যাবে সব ঘর। সোমা আরও বলল তবে যতদিন বাঁচবো আনন্দ করে বাঁচবো এসব চিন্তা করে লাভ নেই এস এখন আনন্দ করি। সোমা আমাকে মানুষ করে ধরেছিল আমি মানুষ ছিলাম না আমি কারো সাথে মিশতে পারতাম না ভদ্রভাবে কথা বলতে পারতাম না কিন্তু তোমার প্রেমে পড়ার পর আমি বুঝতে পারলাম জীবন কি।সোমা বলল জীবন অদ্ভুত শিল্প যে শিল্পী এই শিল্প ফুটিয়ে তুলতে পারে সেই তো সার্থক জীবনে দুঃখ কষ্ট আছে তাকে বড় করে দেখলে হয়না তাকে ভুলে গিয়ে সব সময় আনন্দে থাকতে হয় সেই আনন্দের খোঁজে থাকতে হয় শুধু আনন্দ শুধু আনন্দ এই আনন্দের অপর নাম দেবতা বা ঈশ্বর।সোমা বলল আমরা শুধু টাকা পয়সার পিছনে ঘুরে বেড়ায় কিন্তু এই আনন্দের পিছনে যদি আমরা ঘুরে বেড়াতে পারতাম তাহলে জীবনে এত সুন্দর অনুভব হত যে জীবনকে ভালবাসতে ইচ্ছে করত কিন্তু আমরা পারি না আমরা শুধু টাকা পয়সার পিছনে ছুটে বেরিয়ে আমাদের জীবনের মূল্যবান সময়টা নষ্ট করি।সমাহার ও বলেছিল তুই কোন জাত পাত নয় মানুষই একমাত্র ধর্ম মানবতা একমাত্র ধর্ম মানুষকে ভালোবাসায় একমাত্র ধর্ম এসো আমরা ভালোবেসে মানুষকে ভালবাসতে শিখো জগতকে ভালবাসতে শিখি।তারপর আমরা বিয়ে করেছিলাম এক মন্দিরে আমি বাড়ি নিয়ে গেছিলাম তাকে আমার বাবা-মা কিন্তু কোন অমত করেননি তাকে গ্রহণ করেছিল সুন্দরভাবে আর সময় ব্যবহারে মুগ্ধ হয়েছিল বাড়ির সকলে।সোমা আমার বাড়ি পরিবেশ পাল্টে তুলেছিল সবাই তাকে ভালোবাসতো সবাইকে থেকে এসে ভালোবাসার কথাই বলতো। সুজন স্বপ্নদেখে বেশি।

গ্রীষ্ম অবকাশে বট গাছের ডালে পা ভাঁজ করে বাদুড়ঝোলা খেলতাম বিশুর নেতৃত্বে।তারপর ঝোল ঝাপটি। উঁচু ডাল থেকে লাফিয়ে পড়তাম খড়ের গাদায়। এসব খেলা বিশুর আবিষ্কার। তারপর সন্ধ্যা হলেই গ্রামের বদমাশ লোকটিকে ভয় দেখাত বিশু। সুদখোর সুরেশ মহাজন গরীবলোকের কাছে মোটাটাকা সুদ নিত। বটগাছের ডাল থেকে একদিন শুনলো, কিঁ রেঁ বেঁটা খু্বঁ তোঁ চঁলেছিস হঁনহনিয়ে। আঁয় তোঁকে গাঁছে ঝোঁলাই। সুদখোর মহাজন অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো। তারপর থেকে ওপথে যেত না মহাজন। সাদাচুলো বুড়িকে রোজ সন্ধ্যাবেলা নিজের মুড়ি খাইয়ে আসতো অতি আদরে। বিশু বলতো, আমি তো রাতে খাবো। বুড়ির কেউ নেই, আমি আছি তো। শ্রদ্ধায় মাথা নত হত নেতার হাসিতে। একবার বন্যার সময় স্কুল যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন আমাদের নেতা। কোথাও সাঁতার জল কোথাও বুক অবধি জল। একটা সাপ বিশুর হাতে জড়িয়ে ধরেছে। বিশু এক ঝটকায় ঝেরে ফেলে দিলো সাপটা। স্কুল আমাদের যেতেই হবে। সাঁতার কাটতে কাটতে আমাদের সে কি উল্লাস। যে কোনো কঠিন কাজের সামনাসামনি বুক চিতিয়ে সমাধান করার মতো মানসিকতা বিশুর ছিলো। সে সামনে আর আমরা চলেছি তার পিছুপিছু। শেষ অবধি পৌঁছে গেলাম স্কুল। হেড মাষ্টারমশাই খুব বাহবা দিলেন স্কুলে আসার জন্য। তিনি বললেন, ইচ্ছা থাকলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।টিফিনের সময় ছুটি হয়ে গেলো। আসার সময় একটা নৌকো পাওয়া গেলো। মাঝি বললেন, আমার বয়স হয়েছে আমি একা অতদূর নৌকা বাইতে পারবো নি বাবু। তাছাড়া আমার এখনও খাওয়া হয় নি।বিশু সঙ্গে সঙ্গে নিজের টিফিন বের করে দিলো। আমরাও মন্ত্রমুগ্ধের মতো টিফিন বের করে দিলাম। মাঝি ভাই বললেন, এসো সবাই এক হয়ে খেয়ে লি। তারপর নৌকার কান্ডারি হলো বিশু। আর আমরা সবাই মুড়ি মাখিয়ে খেতে শুরু করলাম। মাঝি ভাই ও বিশু খেলো। ধীরে ধীরে পৌঁছে গেলাম গ্রামে। মাঝি ভাইকে পারিশ্রমিক দিয়ে বিদায় জানালাম।পরের দিন রবিবার। রঙিন সকাল। আকাশে মেঘের আনাগোনা। কাশের কারসাজি নদীর তীর জুড়ে। বন্যার জল নেমে গিয়েছে। পুজো পুজো ভাব। বিশু কাশফুলের ভিড়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে। কয়েকদিন হলো তাকে দেখা যাচ্ছে না। আমি ঘুরতে ঘুরতে পুজো বাড়ির ঠাকুর দেখতে গেলাম। সেখানে দেখি বিশু হাতে কাদা মেখে শিল্পীকে সাহায্য করছে। তিন দিন ধরে এখানেই তার ডেরা। এখন তার মনে বাজছে ঢাকের ঢ্যামকুড়াকুড়। মন মন্দিরে তার দুর্গা গ্রামদেশ ছাড়িয়ে অভাবি বাতাসে বাতাসে। পুজো বাড়িতে আমাকে দেখেও কোনো কথা না বলে হাঁটতে হাঁটতে বাইরে চলে গেলো।আমি জানি সে এখন চাল, ডাল নিয়ে সর্দার বুড়িকে রেঁধে খাওয়াবে। সে বলে, ওর যে কেউ নেই। ও খাবে কি? বিশুর বাবা বছরে একবার বাড়ি আসেন। তিনি ভারতীয় সৈন্য বিভাগে কাজ করেন। বাড়িতে এলেই বিশুর হাতে হাতখরচ বাবদ তিনি বেশ কিছু টাকা দিয়ে যান। সেই টাকা বিশু লোকের উপকারে কাজে লাগায়।বড়ো অবাক হয়ে ভাবি, ছোটো বয়সে এতবড় মন সে পেল কোথা থেকে? স্কুলের দূরত্ব অনেক বেশি হওয়ায় আমাদের চার বন্ধুর বাড়ির গার্জেনরা শলা পরামর্শ করে হোষ্টেলে থাকার কথা বললেন। দায়িত্ব নিলো বিশু। কিন্তু হেড মাষ্টারমশাই বললেন, সেশনের মাঝে হোষ্টেল পাবি না। ঘর ভাড়া নিয়ে চারজনে থাক। পরীক্ষা এসে গেছে। কাছাকাছি থাকিস তিনটি মাস। রেজাল্ট ভালো হবে।ঘুরে ঘুরে অবশেষে ভাড়া ঘর পেলাম। কিন্তু বাড়িওয়ালার পাশের প্রতিবেশি বললেন, সাবধান ওই বাড়িতে ভূত আছে। আমরা ভয় পেয়ে তিনজনে বলে উঠলাম, তাহলে অন্য ঘর দেখি চল।বিশু বললো, টাকা দেওয়া হয়ে গেছে। ভূতের বাড়িতেই থাকবো। বিশু যখন সঙ্গে আছে, ভয় কি তোদের।
একবার বাবা, কাকা আর আমরা চারবন্ধু পুরী বেড়াাতে গেলাম ।ট্রেনের সিট খুঁজে সবাই উঠে বসলাম জগন্নাথ এক্স্প্রেসে। ঠিক পরের দিন দশটার সময় পৌঁছে গেলো পুরী স্টেশনে। সেখান থেকে সোজা লজে । সেখানে একটা সুন্দর ফুলের বাগানে তারা অনেক ছবি তুললো। ঝুমা একটা ডালিয়া ফুল তুলেছে। হোটেলের মালিক ডেকে পাঠালেন ঝুমাকে ।তিনি বললেন,হাজার টাকা ফাইন দিতে হবে। যারা ফুলের মর্যাদা দিতে জানে না, গুণীজনের মান দিতে জানে না, তাদের শাস্তি হওয়ায় উচিত। ঝুমা অগতির গতি বিশুদাকে ডেকে পাঠাল। বিশু এসেই ম্যাডামকে বলল,ম্যাডাম আমাদের দলে এক বোন ভুল করেছে। ভুল তো মানুষের হয়। কিন্তু আপনি তার থেকে বড়ো ভুল করতে চলেছেন।লজের মালকিন অবাক হয়ে বললেন – কি রকম ভুল?বিশু বলল, আপনি ডালিয়াফুলের গাছে, লাল পিঁপড়ের সারি দেখেছেন?মালিক বললেন,কই না তো?বিশু বলল,আমি কিন্তু প্রথমেই দেখেছি, এবং সকালবেলা দোকান থেকে গ্যামাক্সিন পাউডার কিনে এনেছি। পিঁপড়ে মারার বিষ।
লজের মালকিন খুশি হয়ে বললেন,পিঁপড়ে দেখলে আমিও আনতাম। চারপাশে ছিটিয়ে দিন,গাছে যেন না লাগে । একবেলাতে পালিয়ে যাবে পিঁপড়ের সারি।বিশু বলল,বলুন আপনার ফাইন কতো?আপনার ক্ষতিপূরণ বাবদ।মালিক বললেন,না,না আর দিতে হবে না। ফুল যে ভালোবাসে। তার ব্যাথা বোঝে, আমি তাকে শ্রদ্ধা করি।
এমনি কতরকম ছোটখাটো সমস্যা বিশু চুটকিতে সমাধান করে দিত তার ইয়ত্তা নাই। নুলিয়াদের সঙ্গে সমুদ্রে স্নান করতো। সে যেনো সমুদ্রের সন্তান। কত সখ্য জলের সঙ্গে। ভাসিয়ে রাখতো তাকে মায়ের আদরে। ঝুলু,মিলু জিজ্ঞেস করতো, আমরা কেন ওর মতো হতে পারি না। ম্যাডাম বলেছিলেন,ওসব মন কোটিতে গুটি। ওসব মনের তল পেতে গেলে নিজেকে রাঙিয়ে নিতে হবে ওর হৃদয় রঙে।তারপর আমরা ফিরে এসেছিলাম। আমরা প্রত্যেকে উপহার দিয়েছিলাম আমাদের প্রাণের বিশুকে। দুদিন পরে দেখলাম ও সব উপহার বিলিয়ে দিচ্ছে বায়েনপাড়ার বন্ধুদের।বিশু ও আমরা তখন, বিল্বেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। আমার বন্ধু ছিল অনেক। তার মধ্যে সর্দার ছিলো বিশু। এখন যার কথা বলবো তার নাম অলক।বাড়ি তার কোমডাঙ্গা। স্কুলে যত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো তার প্রধান দায়ীত্বে থাকত আমাদের দলের প্রধান বিশু। আর কান টানলেই মাথা আসে। হাত বাড়ালেই বন্ধুদল হাজির। বিশু মানেই আমরা সবাই। আমাদের বন্ধুরা এই পরোপকারী নির্ভিক নেতার ভক্ত।
বিশু ও আমরা শীতকালে গোল হয়ে বসতাম।মাঝখানে জ্বলতো আগুন। পাতা,কাগজ কুড়িয়ে দিতাম আগুনে। আগুন নিভতো না। সেই আগুনে সেঁকে নিতাম হাত পা। আবার বাড়িতে গিয়ে মায়ের রান্নাঘরে মাটির তৈরি উনুনে সেঁকে নিতাম শীতল হাত,পা। মা সরজুগুলি,পিঠে বানাতেন। উনুনের ধারে বসে নলেন গুড়ের সঙ্গে আয়েস করে খেতাম। পায়েস খেতাম শেষ পাতে। রকমারি খাবারের সুগন্ধে মৌ মৌ করতো মায়ের হেঁসেল ঘর। পালো, বলে একরকমের খাবার মা বানাতেন যত্ন করে। সকালে উঠেই পালো খেয়ে ভুরিভোজ সারতাম। তারপর পিঠে রোদ লাগিয়ে সরব পড়া। বোঝার থেকে চিৎকার হতো বেশি। আনন্দ পেতাম সরব পড়ার প্রতিযোগিতায়। পাশের বাড়ির বন্ধুদের সরব পাঠের আওয়াজ পেলেই,ততোধিক জোরে শুরু করতাম পাঠ। স্কুলে গিয়ে তার আলোচনা হতো ক্লাসে। আরও জোরে পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রতিযোগিতা চলতো মাসের পর মাস। বিশু বলত,কোনো দুঃখ,কষ্ট আমাদের মনে রেখাপাত করতে পারে না,কারণ জীবনের আনন্দ ছড়ানো থাকে তো ধুলো জোড়া পথে। এই ধুলো,মাটির সুগন্ধ, শরতে হিমের পরশ আমাদের ভারতবর্ষের প্রাণ।
বিশুর বোন ও ঝুমা শরতকালে হিমের পরশে সকালবেলায় শিউলিতলায় চলে যেত।সেখানে শিউলি ফুল কুড়িয়ে সাজিতে রাখত।তারপর শিউলির বোঁটা দিয়ে নেলপালিশ পরত।নখগুলো রঙীন হয়ে উঠত,মনের রঙে। রান্নাশালে বিশুর মা, ঘুঁটে পুড়িয়ে চা তৈরি করতেন উঠোনে বসে ।চায়ের গন্ধে সকালটা সুন্দর হয়ে উঠত। কদমা আর মিছরি সহযোগে জলখাবারে মুড়ি খেত ঝুমা, দুপুরে পান্তাভাত, পোস্তবাঁটা আর আমড়ার চাটনি।
ঝুমা এখন নেই কিন্তু বোনের স্মৃতি আজও বিশুকে নিয়ে যায় শরতে হিমের অপূর্ব পরশে, সোহাগি শিউলিতলায়

সুদীপ ঘোষাল। গল্পকার। জন্ম ভারতের পশ্চিমব্ঙ্গরাজ্যের কেতুগ্রামের পুরুলিয়া গ্রামে। প্রকাশিত বই: 'মিলনের পথে' (উপন্যাস)। এছাড়াও কয়েকটি গল্প ও কবিতার বই আছে।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ