ইমন কল্যাণ
পরিচ্ছেদ ৬ অনেক রাতে ফিরেছিল কল্যাণ ওরফে শহীদুল।গাড়িটা শেডে রাখার পর দু’বার হালকা করে মা…..
বললাম – “কী হলো রে? সব ঠিক আছে তো?”
ফাইল খুলে কাগজপত্র বার করতে করতে খুব গাঢ় স্বরে বলল – “হ্যাঁ।“
–“তাহলে! এতো গম্ভীর হয়ে আছিস কেন?”
গলাটা নামিয়ে বলল – “লোকটার পাশে রাখা বন্দুকটা দেখেছিস? তোর থেকেও লম্বা। পাশে গিয়ে দাঁড়া বুঝতে পারবি।“
আমি তো রেগেমেগে বললাম – “শালা! এখানেও ফাজলামি করছিস! কাজের কথাটা জানিয়েছিস পুলিশকে?”
চিঠি লিখতে লিখতে আমার দিকে তাকিয়ে বলল – “তোর মনে হয় যে পুলিশের সামনে গিয়ে অন্য কথা বলা যায়?”
–“উফ…সেটা বলি নি। সারনেম তো আলাদা রে ভাই। কী করে জানবে যে তুই আমি বর বউ?”
–“ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশান সার্টিফিকেটের কপি দেব চিঠির সাথে। তাই চাপ নিস না।“
আমি খানিকক্ষণ ভেবে বললাম – “দাঁড়া আমি গিয়ে আরেকটু পরিষ্কার করে বলে আসি।“
–“গেলে যা তবে যা বলার আমি বলেছি।“
আমিও তাকে একটা হুঃ ছুঁড়ে বলে সোজা পুলিশের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললাম – “স্যার…”
কিছু একটা লিখছিলেন সেই পুলিশ অফিসার। মাথে তুলে বলল – “ইয়েস ম্যাডাম?”
বলা শুরু করলাম – “স্যার, আপকোতো পাতা হ্যায় কি হামারা পার্স গুম হো গ্যায়া হ্যায় আই মিন গিড় গ্যায়া হ্যায়। লেকেন এক প্রবলেম হ্যায়, মেরে ভোটার কার্ড মে মেরে পিতাজি কা সারনেম হ্যায় বাট মেরে হাসব্যান্ডকা সারনেম তো আলাগ হ্যায়। তো ঘুমনে জানে কে লিয়ে যাব ডক্যুমেন্টস দেনা পারেগা তাব তো সারনেম ম্যাচ নেহি কারেগা? তব পারমিশান মিলে গা না ঘুমনে কা? ইয়ে থোড়া কনফার্ম কারনা থা।“
এইটুকু বলে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ। ততক্ষণে চোখ চলে গেছে পাশে রাখা বন্দুকটার দিকে। সত্যিই অনেকটাই লম্বা। মুহূর্ত খানেক পুলিশটি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন – “কোনো অসুবিধা নেই।“ বলেই আবার নিজের কাজে মন দিলেন।
এতক্ষণে নেমপ্লেটের দিকে তাকিয়ে দেখি নাম লেখা আছে বিজয় শর্মা।
আমি তো খাবি খাওয়ার মতো মুখ করে বেরিয়ে এলাম ঘরটা থেকে। অনির দিকে তাকিয়ে দেখি প্রাণপণে হাসি চেপে রেখে তখনও লিখে যাচ্ছে। তারপর বলল – “তোর সাইন লাগবে। পিতাজিকা কা সারনেম দিবি না বর কা দিবি সেটা তোর ব্যাপার।“
সাইন করে দেওয়ার পর সেই চিঠি আর কিছু কিছু কাগজপত্র ভেতরে গিয়ে দিয়ে এলো আর সেই চিঠিরই আরেকটা কপির ওপরে পুলিশ একটা স্ট্যাম্প মেরে দিয়ে জানিয়ে দিল যে এই চিঠিটাই সারা ট্যুরে ব্যবহার করা যাবে। তারপর কুলিকে বলা হলো ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের কাছে নিয়ে যেতে। হাঁটতে হাঁটতেই আমার কাছে এসে বলল – “তুই তো হেব্বি হিন্দি বলিস রে। আই এম প্রাউড অফ ইউ।“
আমি শুধু বললাম – শালা।
তারপরেই কাকুকে ফোন করে বললাম যে আমরা পৌছে গেছি। কাকুর সাথে দেখা করার কথা ছিল শিলিগুড়ির ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে। সেখান থেকে গাড়ি ধরে সোজা সিকিম। কিন্তু কাকু বললেন আগে হোটেলে যেতে তারপর কাকুই পৌছে দেবেন ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে। অগত্যা, নিউজলপাইগুড়ি স্টেশানের বাইরে থেকে ট্যাক্সি নিয়ে সোজা পৌছে গেলাম কাকুর হোটেলে। অনির সাথে কাকুর পরিচয় করে দেওয়ার পরে কাকু জানালেন যে একটা ঘর তৈরি করে রাখাই আছে আমাদের জন্য। ফ্রেশ হয়ে নিয়ে জলখাবার খেতে খেতে বাকি কথা আলোচনা হয়ে যাবে। আমরা দুজনেই দুজনের মুখের দিকে তাকালাম কারণ দুজনেরই ততক্ষণে সিকিম পৌছানোর তাড়া লেগেছে। পাহাড় যে ডাকছে রীতিমত। আমিই তখন কাকুকে জনালাম যে ফ্রেশ হওয়ার কিছুই নেই শুধু হাতটা একটু ধুয়ে নিলেই চলবে। কাকু বললেন – বেশ।
দুজনেই হাত মুখ ধুয়ে আসার পর কাকুর অফিসে বসেই তাকে জানালাম ট্রেনের ঘটনার কথা। এমনিতে কাকু বেশ কম কথার মানুষ। সবকিছু শুনে প্রথমেই বললেন – “তোর বাবাকে বলিস না কিন্তু।“
ইতিমধ্যে চলে এলো জলখাবার। চিকেন স্যান্ডউইচ, ডিম সেদ্ধ আর ফ্রুট জুস। প্লেটটা দেখেই মনে পড়লো যে সত্যিই খুব খিদে পেয়ে গেছিল। খেতে শুরু করতেই কাকু বললেন – তোরা খেয়ে নে আমি কয়েকটা ফোন করে আসি।
দুজনেই খেতে শুরু করলাম আর টুকটাক কথাবার্তা চলতে লাগলো। ২০০৩-এ আমরা প্রায় একমাস পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরেছিলাম। বাবার পোস্টিং ছিল উত্তরবঙ্গে। সেই সময় ফেরার পথে কাকুর হোটেলে দুদিন ছিলাম। তখনই কাকুকে প্রথম দেখি। বাবাকে নিজের দাদার মতই অসম্ভব শ্রদ্ধা করে। প্রায় প্রতিটা জায়গাতেই বাবাদের ইন্সপেকশান কোয়ার্টার থাকে। কিন্তু বাবাকে একরকম অনুরোধ করে নিজের হোটেলে থাকার জন্য। শেষ রাত্রে দেখছিলাম বাবা রীতিমত ঝগড়া করছিল কাকুর সাথে। কাকু টাকা নেবে না আর বাবা দেবেই। শেষে শুধু খাবারের টাকাটা বাবা দিতে পেরেছিলেন। সে এক দেখার মতো যুদ্ধ চলেছিল। এই ঘটনাটা অনিকে বলতে বলতেই কাকু ফিরে এলেন। পিছন পিছন একজন কর্মচারী তিনকাপ কফি নিয়ে ঢুকলো। নিজের চেয়ারে বসতে বসতে কাকু জানালেন যে পেলিং-এ থাকার জন্য হোটেল বুকিং করে দিয়েছেন। কাকুরই পরিচিত একজনের হোটেল। এমনিতে অনেক ভাড়া হলেও, কাকুর চেনা তাই কমেই হয়েছে। আমি অবাক হয়ে কাকুকে বললাম – “তুমি কী করে জানলে যে ঐ জায়গারই বুকিং করা নেই!” কাকু বললেন – “তোর বাবা দুদিন আগেই ফোন করে তোদের ঘোরার প্ল্যান আমাকে জানিয়েছিল। আর বলেছিল যে শুধুমাত্র পেলিং-এর বুকিংটাই করা নেই। চিন্তা করছিল, তাই আমিই করে দিলাম।“
আমি তো হাঁ। কানের কাছে মুখ নিয়ে অনি বলল – “বাবি কি বরাবরই এইরকম?”
আমি কটমট চোখে অনির দিকে তাকালাম। কাকু আবার বললেন – “তোদের কত টাকা হাড়িয়েছে? কিছু লাগবে? আমাকে বলতে পারিস কিন্তু লজ্জা পাস না।“
আমরা সাথে সাথেই জানালাম যে পার্সে টাকা বেশি ছিল না। তাই টাকার দরকার হবে না। কাকুই একটা রিক্সা ডেকে দিলেন আর বললেন যে কোনো অসুবিধা হলে যেন কাকুর সাথে যোগাযোগ করি। কাকুকে টাটা করে রিক্সায় উঠে পড়লাম। এইবার সিকিম।
ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে এসে দেখলাম প্রচুর ট্যাক্সি কিন্তু সেই তুলনায় পর্যটকের সংখ্যা অনেক কম। একটা বোলেরোর মাথায় আমাদের ব্যাগগুলো চাপিয়ে দেওয়া হলো। আমরা বসলাম গাড়ির সামনে। আনন্দ যেন ধরছে না দুজনের। হানিমুনের কথা শুনে সবাই বলেছিল সমুদ্রে যেতে। যেখানে ঘোরার কিছু নেই শুধু দুজনের সাথে দুজনে সময় কাটানো। দুজনেরই প্রতিক্রিয়া হয়েছিল – ন্যাহ। ঘুরতে যাওয়ার জন্য দুজনেরই পাহাড় পচ্ছন্দ। তাই বিয়ের প্ল্যানের পরেই শুরু করেছিলাম যে কোথায় ঘুরতে যাওয়া যায়। কাকতালীয় ভাবেই দুজনের মুখ থেকেই বেরিয়ে এসেছিল “সিকিম”। এই বেড়ানোর সময় বাড়ানোর জন্যই অষ্টমঙ্গলা অনুষ্ঠান বাতিল করে দিয়েছিলাম। বৌভাতের পরেরদিনই অষ্টমঙ্গলা অনুষ্ঠান হয়েছিল। আর তার পরেরদিনটা রেখেছিলাম গোছাগাছ করার জন্য। আর ঠিক তার পরের দিনই সিকিম যাত্রা শুরু।
গাড়ি এগিয়ে চলেছে। অনিই বোধহয় প্রথম বাঙালি যে আগে এই পথে আসে নি। না হলে প্রত্যেক বাঙালিই, জীবনে একবার না একবার দার্জ্জিলিং-এ ঢুঁ মেরেছে। শিলিগুড়ি থেকে যদি সেবক রোড ধরে দার্জিলিং-এ যাওয়া হয় তাহলে এই পথ ধরেই কিছুটা যেতে হবে। তারপর একদিকে সিকিম চলে গেছে আর বাঁদিকের রাস্তাটা সোজা চলে গেছে দার্জিলিং।। অনিকে বললাম – “জানিস…আকাশ পরিষ্কার থাকলে শিলিগুড়ি থেকেই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাওয়া যায়।“ কিন্তু আকাশ অপরিষ্কার তাই তার দেখা মিলল না। কিন্তু খুঁজতে তো আর বাধা নেই।
গাড়ি সেবক রোডে দিয়ে এগিয়ে যেতে থাকলো। পাহাড় শুরু হতে না হতেই তিস্তার দেখা মিলল। আমরা গাড়ির সামনের সিটে বসেছিলাম। যদিও এই রাস্তায় আমি আগেও এসেছি কিন্তু তবুও মুগ্ধ চোখে দেখতে থাকলাম পাহাড়ের দৃশ্য। তখনও অবশ্য কিছুই শুরু হয় নি। একপাশে পাহাড় আরেকপাশে চওড়া তিস্তার খাদ আর তিস্তার ঐ পাশের পাহাড়ের জঙ্গল। গাড়ি যত ওপরে উঠতে লাগলো ক্রমশ আমার কান বন্ধ হয়ে এলো। পাহাড়ে উঠলেই এই ঘটনাটি ঘটে। ক্রমাগত ঢোক গিলতে লাগলাম যাতে কানটা খোলা রাখা যায়। প্রায় অনেকক্ষণ চুপ করে ছিলাম দুজনে। অনি তো হাঁ করে তখনও তিস্তা দেখে চলেছে। একটা বেশ বড় মন্দির পড়লো রাস্তায়। সবাই দেখলাম প্রণাম করে ফেললো। আমি তখন অনিকে জানালাম যে আমার কান বন্ধ হয়ে আসছে আর খুব ঘুম পাচ্ছে। অনি বলল – “ওরে…গাড়ির সামনে বসে ঘুমোস না। মাঝপথে নামিয়ে দেবে কিন্তু।“
প্রাণপণে জেগে থাকার চেষ্টা করতে থাকলাম। অনিও বকবক করতে থাকল আমার ঘুম কাটানোর জন্য। কিন্তু লাভ হচ্ছিল না। অনিকে বললাম – “তুই আমাকে গার্ড কর। আমি একটু ঘুমিয়ে নিই।“
অনি বলল – “শালা… ড্রাইভার আমাকে গালি দেবে এইবার। দাঁড়া, চোখে মুখে একটু জল দে, দেখবি ফ্রেশ লাগবে। জলের বোতল দেব?”
ভাবলাম ঠিকই বলছে। সত্যিই গাড়ির সামনে বসে ঘুমোনোটা ঠিক না। হাতে একটু জল নিয়ে চোখে মুখে বুলিয়ে নিলাম। খানিকক্ষণ আবার গল্প করলাম কিন্তু কিছুতেই চোখ খোলা রাখতে পারছি না। অনি চেষ্টা চালিয়েই যেতে থাকলো। আই পডটা হাতে নিয়ে বলল – “কী ধরণের গান শুনবি বল। গান শুনলে ঘুম পাবে না।“ আমি বললাম – “ঢিনচ্যাক চালা। রোম্যান্টিক গান চালাস না তাহলে ঘুমিয়ে পড়বো।“ দুজনে একটা একটা হেড ফোন নিয়ে গান শুনতে লাগলাম। কিন্তু সেটাও কিছুক্ষণের জন্য। তারপরেই কান ব্যথা বেড়ে গেল। তিস্তা ততক্ষণে সুতো হয়ে গেছে, ঠান্ডা বাড়ছে। অনির হাতটা বেশ করে জড়িয়ে ধরে বললাম – “কিছুতেই ঘুমটা যাচ্ছে না রে।“ তারও বোধহয় আমাকে দেখে মায়া লাগলো, বলল – “ঠিক আছে চোখটা বুজে রাখ আমি সোজা হয়ে বসছি তাহলে তোকে আর দেখতে পাবে না ড্রাইভার। মনে হয় তোর প্রেশার ফল করছে। লজেন্স রাখবি মুখে?” দুদিকে ঘাড়টা নাড়িয়ে চোখ বুজে ফেললাম।
নাহ…ঠিক ঘুম হচ্ছে না কিন্তু চোখটা বুজে রাখলে বেশ আরাম বোধ হচ্ছে। গাড়ি যে বাঁক নিচ্ছে সেটা বেশ বুঝতে পারছি। একবার ডানদিকে হেলে যাচ্ছি আরেকবার বাঁদিকে। কী একটা অস্বস্তিতে হঠাৎ করে চোখ খোলার সাথে সাথেই অনি “গেলো গেলো” বলে চিৎকার করে উঠলো। আমারও চোখ চলে গেল ঐ দিকে। আমাদের একটা লাগেজ তখন গড়িয়ে গড়িয়ে খাদের দিকে চলে যাচ্ছে। আমিও ধরো ধরো বলে চিৎকার করে উঠলাম। পরে জেনেছিলাম যে ঐ বাঁকটাই ছিল ঐ পথের সবচেয়ে বড়ো বাঁক। প্রায় আটহাত দূরে ছিল রাস্তার শেষ আর খাদের শুরু। গাড়িও দাঁড়ালো আর ব্যাগটাও প্রায় গড়াতে গড়াতে খাদের ধারের কাছে গিয়ে থেমে গেল। পড়িমরি করে গাড়ি থেকে নেমে রাস্তা পার হতে যাব এমন সময় হাত ধরে অনি আমাকে থামিয়ে দিল। তাকিয়ে দেখি পাশের পাহাড়টা এমন ভাবে সামনের রাস্তা আড়াল করেছে যে উল্টো দিক থেকে গাড়ির পক্ষে এদিকের কিছুই দেখা সম্ভব না। বলল – “তুই যাস না।“ ততক্ষণে ড্রাইভার এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে, খাদের ধার থেকে ব্যাগটা কুড়িয়ে আনলো। তারপর বলল – “আপকা লাক আচ্ছা হ্যায়। দুসরা জাগা হোতা তো গিড় যাতা।“ আমার মাথা আগে গরম হয় এই সব ব্যাপারে। বললাম – “টাইট করে বাঁধতে পারো নি? পড়ে গেল কী হোতো?” ড্রাইভার পাহাড়ি হলেও রাগের সময় আমার বাংলা ছাড়া কিছু বেরোয় না। তারপর অনি প্রায় দাঁড়িয়ে থেকেই প্রত্যেকটা ব্যাগের বাঁধন আরও ভাল করে চেক করলো। আবার গাড়ি চলতে শুরু করলো। অনি বলল – “একদিক দিয়ে বেশ ভালই হোলো। তোর ঘুমটা মনে হচ্ছে আর আসবে না।“
সত্যিই তাই। সারা রাস্তা আর ঘুম এলো না। মেমোরি গেম, গানের লড়াই এই সব খেলতে খেলতেই বেশ খানিকটা সময় কেটে গেল। তারপর এসে দাঁড়ালো একটা হোটেলের সামনে। গাড়ি থেকে নেমে কোমর সোজা করতেই করতে দেখলাম ড্রাইভার গাড়ি থেকে নেমেই একটা সিগারেট ধরালো। অনিকে বলতে যাবো দেখি আমার দিকে একটা সিগারেট বাড়িয়ে দিয়েছে। উফফফ…মনে হোলো এই যেন চরম সুখ। তারপর হোটেলে ঢুকে মোমো খেলাম। ড্রাইভার বলল আর দশ মিনিটের মধ্যেই গাড়ি ছাড়বে। চায়ের অর্ডার দিয়ে দোকানের বাইরে এসে আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে দেখি অনি কনুই দিয়ে আমাকে ঠ্যালা মারছে। হোটেলের পাশেই একটা লোক সামনের গরম ধোঁয়া ওঠা বালতিতে কী যেন একটা চোবাচ্ছে আর তুলছে, চোবাচ্ছে আর তুলছে আর মাঝে মাঝে সেই জিনিসটা গা থেকে কীসব তুলছে। দু-তিনবার করার পরে আরেকটু এগিয়ে দেখি সেটা একটা মুরগি। পালকগুলো ঐ ভাবে ছাড়িয়ে নিচ্ছে শুধু। ছাড়ানোর পরে পাশে রাখা একটা ধারালো ছুরি দিয়ে দিব্যি সুন্দর টুকরো টুকরো করে ফেললো স্কিন সমেত। বাঙালিরা, এই স্কিন সমেত মুরগি খেতে একেবারেই অভ্যস্ত নেই। কে এফ সি বা এই ধরণের রেস্টুরেন্টের কথা আলাদা। কারণ স্কিন না থাকলে ফ্রায়েড চিকেনে মুচমুচে ব্যাপারটা ঠিক আসে না। তবে চেন্নাইতে থেকে দেখেছি যে মুরগির কোনো রান্নাতেই তারা স্কিন ছাড়ায় না। এইখানেও সেই ব্যাপার ঘটার সম্ভাবনাই বেশি। অনিকে বললাম – “পাহাড়ে যতদিন থাকবো মাংস খাবো না রে ভাই।“
এইবার কিন্তু ঠান্ডাটা বেশ বেড়ে গেছে। হুডিটা চাপিয়ে দুজনে আরও ঘেঁষাঘেঁষি করে বসলাম। কাঁপতে কাঁপতে অনিকে বললাম – “হেব্বি ঠান্ডা রেএএএএএ।“ দুজনে আড্ডা মারতে মারতে আর হ্যা হ্যা করতে করতে রংপো পৌছে গেলাম। সিকিমের প্রথম শহর। পরিষ্কার রাস্তাঘাট। রাস্তার দুপাশে পুলিশের দুটো ছোটো গুমটি। গাড়ি একপাশে দাঁড়াতেই নেমে গেল বাকি সবাই। সবাই স্থানীয় লোকজন। ড্রাইভার নেমে গিয়ে পুলিশের সাথে কথা বলে আবার গাড়িতে ফিরে এল। আবার চলা শুরু। ঠান্ডা আরও বাড়ছে। অনি এইবার গল্প জুড়লো ড্রাইভারের সাথে। এতক্ষণে জানলাম যে তার নাম রাকেশ। এখন অফ সিজন চলছে তাই সহজেই সাইট সিনের জন্য আলাদা গাড়ি পাওয়া যাবে। আমরা তাকেই আগামী দুদিনের জন্য বুক করতে চাইলাম কিন্তু এই গাড়িটির পর্যটক নিয়ে ঘুরতে বেরোনোর অনুমতি নেই। কিন্তু যেখানে আমাদের নামাবে মানে গ্যাংটকের ট্যাক্সি স্ট্যান্ড থেকেই ঘুরতে বেরনোর জন্য গাড়ি পাওয়া যাবে।
আমাদের তো আর তর সইছে না। শিলিগুড়ি থেকে বেরোতে বেরোতেই প্রায় ১১টা বেজে গেছিল। এখন সবে ৪ টে বাজে। কিন্তু তাও সন্ধে প্রায় নামবো নামবো করছে। অনির হাতটা আবার জড়িয়ে ধরলাম। প্রায় ছয় বছর সম্পর্কের পর এই বিয়ে। মানুষটাকে চিনি ঠিকই কিন্তু যতক্ষন না এই মানুষটির সাথে ২৪ঘন্টা সময় কাটাতে পারবো ততক্ষন তাকে সঠিক ঠিক ভাবে চিনতে পারা যায় কি? বিয়ের পর সব ঝড়ের মতো কেটেছে। তাই সেই ভাবে দুজন দুজনকে পাই নি। অনির-ও আমাকে চেনা অনেকটাই বাকি আছে। আমারও তো তাই। সামনে সবকিছুই বড় আবছা।
(ক্রমশ)
পরিচ্ছেদ ৬ অনেক রাতে ফিরেছিল কল্যাণ ওরফে শহীদুল।গাড়িটা শেডে রাখার পর দু’বার হালকা করে মা…..
পরিচ্ছেদ ৫ আকাশে এখন আর মেঘ নেই। হাওয়া হচ্ছে।কদিন পরেই বর্ষা নামবে।একদিন হাসপাতাল থেকে ফিরতে…..
পরিচ্ছেদ ৪ ভোর হয়ে আসছে।রাতে ভালো ঘুম হয়নি।ঘুমের ঘোরে মনে হচ্ছিল দম বন্ধ হয়ে আসছে।এরকম…..
বাংলার চিত্তাকর্ষক ইতিহাস সম্পর্কে জানার সময়, গৌরের মতো আর কিছু গন্তব্য হতে পারে না।…..