ইমন কল্যাণ
পরিচ্ছেদ ৬ অনেক রাতে ফিরেছিল কল্যাণ ওরফে শহীদুল।গাড়িটা শেডে রাখার পর দু’বার হালকা করে মা…..
একদম তাই… নামের মতোই আমাদের হানিমুন এক্কেবারে ঘটনার ঘনঘটা। জটায়ুর বর্ণনার মতোই হাইলি সাসপিশাস। অনেক কিছুই ঘটে চলেছিল সমানে। তখন শুধু ভাবছিলাম যে আর কী কী বাকি আছে যেটা এখনও ঘটা বাকি। শুরুটাই যে ভাবে হয়েছিল তাতেই আমাদের অবস্থা খারাপ হয়ে গেছিল।
বাড়ির অনুমতি নিয়ে বাড়ির লোক মানে বাবা-মা ছাড়া এই প্রথম অন্য কারুর সাথে ঘুরতে বেরোনোর মজাই আলাদা। কিন্তু তারসাথে ছিল হাজার চিন্তা। এতদিন যে সব চিন্তাভাবনা করতেই হয় নি, সেইগুলোই চেপে বসতে লাগলো। জামাকাপড় কী কী নেবো আর কোনটা বাদ দেবো, টাকাপয়সা কোথায় রাখবো, টিকিট কার কাছে থাকবে, কোন ধরণের সোয়েটার ওপরে রাখবো, কোন জামাটা ওখানে গিয়েই পড়বো আরও বাকি সব কিছু। বোঝাই যাচ্ছে যে আমরা বেজায় অজ্ঞ ছিলাম এই সব বিষয়। বিশেষ করে আমি।
লটবহর নিয়ে যখন শিয়ালদহতে গিয়ে পৌছলাম, দেখি তার আগেই বাবা-মা পৌছে অপেক্ষা করছেন আর তাদের হাতে আরও একটা ব্যাগ, যেটাতে ঠেসে খাবার ভরা। ঐ দিকে বাপি মামনির হাতের খাবারের ব্যাগটাও বেশ ভারি। অগত্যা, দুই ব্যাগ আরও বাড়ল। মালপত্র দেখে বাবা বললেন – “হ্যাঁ রে, তোরা কি সিকিমেই থেকে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিস?” বলাটাই খুব স্বাভাবিক ছিল।
১. সবুজ রঙের চাকা লাগানো বড়ো ব্যাগ – জামাকাপড় ভর্তি।
২. একটা সুবিশাল ট্রলি (যাতে আমার দুটো বাচ্চাই আরাম করে শুয়ে যেতে পারবে) – একগাদা জ্যাকেট।
৩. একটা স্কাই ব্যাগ – মাফলার, গ্লাভস, টুপি, কানচাপা এবং হাল্কা ধাঁচের জ্যাকেট।
৪. দুজনের পিঠে দুটো স্কুল ব্যাগ – একটায় ওষুধপত্র, প্রসাধনের টুকিটাকি, আমার ডায়রি, দুটো শারদীয়া পত্রিকা, স্টেপলার, গার্ডার, সেফটিপিন, দুটো গগলস, জোয়ান মৌরি, আর দরকারি কাগজপত্র।
আরেকটা স্কুল ব্যাগে – ল্যাপটপ, দুটো ক্যামেরা, ৪টে পেন ড্রাইভ, আই পড আর তাদের চার্জারগণ।
৫. দুটো বিগশপার – ভর্তি খাবার। একমাত্র এই দুটি ব্যাগ ভরানোর দায়িত্ব আমরা পাইনি।
তাহলে বোঝাই যাচ্ছে যে বাবা ভুল কিছু বলেন নি। ভাগ্য ভাল যে ট্রেনের সিট ছিল আপার আর লোয়ার। ট্রেন আসতেই বাবি আর বাবা আগে উঠে পড়লেন। সেই সময় সিকিমে অফসিজন। তাই ট্রেনে লোকসংখ্যা কম। সব ঐ জোড়ায় জোড়ায় পাবলিক। আমাদের পাশের চারটে সিটের মধ্যে মাত্র দুটোতে লোক আছে। তাই বেশিরভাগ ব্যাগ সব ঐদিকের সিটের তলাতেই ঢোকানো হলো।
অনি সবকটায় চেন লাগিয়ে দিল আর মামনি আমার হাতে একটা লিস্ট ধরিয়ে দিল। মোট কটা ব্যাগ আছে তাদের রঙ ও তাদের পাশে নং লেখা ব্যাগের লিস্ট। দেখে সত্যিই ঘাবড়ে গেলাম। সবারই এক কথা – প্রতিবার ওঠানো আর নামানোর আগে ব্যাগগুলো গুনে নিস। ইয়ে মানে প্রতিটা লাইনের মধ্যেই গাধা, বোকা, পাগল এই সব ছোটোখাটো শব্দের ব্যবহারও ছিল। এছাড়াও ট্রেনে কী কী করবো, কী কী খাবো না, বাথরুম যাওয়ার সময় যেন অনিকে জানিয়ে যাই, মৌকে খাদের ধারে দাঁড়াতে দিবি না, হোটেলের চাবি সবসময় নিজেদের কাছে রাখবি, ড্রিংক্স খেলেও সেটা যেন রুমের মধ্যেই খাই, মাছ খাবি না, ঐটা কম খাবি (এটা অবশ্য মা আমাকে বললেন আর বাবি বললেন অনিকে), দুজনে সব সময় একসাথে থাকবি, টাওয়ার পেলে ফোন করবি, কোনো অসুবিধা হলে ঐ কাকুকে ফোন করবি। সবকটাতে ঘাড় কাৎ করতে করতেই ট্রেনের সিটি বেজে গেল। বাবা-মা, বাবি-মামনি নেমে গেলেন ট্রেন থেকে। কেমন যেন হঠাৎ করেই খুব খালি খালি লাগলো। ট্রেনের দরজায় দাঁড়িয়ে টাটা করতে করতে করতে দেখলাম, সবাই ছোটো হয়ে মিলিয়ে গেল। দুজনেই সিটে এসে বসলাম।
উফফফফ…এই প্রথমবার একা, ভাবা যায়? সাপের দশ পা বেরিয়ে গেছে যথারীতি। দুজনে দুটো কফি নিয়ে পা মুড়ে মুখোমুখি বসলাম। শুরু হলো গল্প। চানাচুর বেরলো একটা ব্যাগ থেকে আরেক ব্যাগ থেকে কাঁচি আর গার্ডার। ঠিক করা হলো, নেমেই গোপুকাকুকে একটা ফোন করতে হবে। গোপু কাকু বাবার অফিসের বন্ধু। শিলিগুড়িতে একটা হোটেল আছে তাঁর। তার সাথে দেখা করা মানেই হচ্ছে বাড়ির সবাই নিশ্চিন্ত যে যাক ভালোয় ভালোয় শিলিগুড়ি পর্যন্ত পৌছে গেছে। মানে আমাদের দুজনের ওপরে সবার এতটাই বিশ্বাস যে আমরা ট্রেন থেকে হারিয়েও যেতে পারি।
খানিকক্ষণ আড্ডা চলার পর ঠিক হলো যে সেই রাতটা না ঘুমিয়েই কাটিয়ে দেবো, কারণ পরেরদিন নামার কথা ৬-৬.৩০টার মধ্যে। পরিকল্পনার সময় রাত দশটা। মানে দিল্লী তখনও বহু দুর। মোটামুটি গোটা কামরাটাই তখনও জেগে। রাত দশটা হতে না হতেই ক্ষিদেটা বেশ চাগাড় দিয়ে উঠলো। ব্যাগ খুলতেই বেরিয়ে এল চিলি চিকেন, ডিমের কষা আর রুটি। বড়রা যায় দেয়, একটু বেশি বেশি কি না।
যাই হোক, খাওয়াদাওয়ার পরে ফ্রেশ হয়ে সিটে বসার পর শুরু হলো কাড়াকাড়ি। হ্যাঁ, ঠিকই কাড়াকাড়িই বটে। দেশ পত্রিকা আগে কে পড়বে। দুটি পত্রিকাই এই ট্রেন যাত্রার জন্যই বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিল। কারণ দুটোতেই তাবড় তাবড় লেখকরা লিখেছিলেন। একটি দেশ আরেকটি আনন্দবাজার পত্রিকা। পুজোর সময় থেকেই হাতটা নিশপিশ করলেও ধরার উপায় ছিল না। তারপরই তো বিয়ে। যাই হোক, কিন্তু নিষ্পত্তি কিছুতেই হচ্ছিল না। ঘুষ দেওয়া নেওয়া তখনও চলছিল। “ভালো জ্যাকেটটা আগে তোকেই পড়তে দেবো” বা “আগামী তিনদিন গাড়ির জানালার ধারের সিটটা তোর” কিন্তু কোনোকিছুই কাজে আসছিলো না। শেষে অবশ্য আমিই হেরে গেলাম। কারণ আমাদের বাড়ি থেকে পাঠানো তত্ত্বের মধ্যে অনির জন্য একটি সুন্দর লেদারের পার্স ছিল, সেটা এখন আমার জিন্সের পকেটে। তুরুপের এই তাসটি যে এই ভাবে বিশ্বাসঘকতা করবে সেটা বুঝতে পারি নি। যাই হোক, তার এই আত্মত্যাগের দাম তো দিতেই হবে। রেগে বললাম “ঠিক আছে যাহ্, তুইই পড়। কিন্তু একটা গল্প পড়ে বই অদলবদল করতে হবে, নইলে আপার সিটটা আমার”। অনি বরাবরই আপারের সিটটা প্রিয়। তাই একপ্রকার অনিচ্ছা ভাবেই রাজি হয়ে গেল। শুরু হলো বই পড়া। কিন্তু হিসেব করে কী আর বই পড়া হয়।
পড়তে পড়তেই খেয়াল হলো যে শুধু আমাদের দিকের আলোটাই জ্বলছে বাকি সব অন্ধকার। অনির কাছ থেকে প্যাকেট, লাইটার আর ব্যাগ থেকে রুম ফ্রেশনারটা নিয়ে বাথরুমে চলে গেলাম। ফিরে আসার পর দেখি আধো হাঁ করে, বই বুকে রেখে অনি বসে বসেই ঘুমিয়ে পড়েছে। ওর অবশ্য এতে বেশ নামডাক আছে। সে ভিড় ট্রেনেও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়তে পারে। ঘড়িতে তখন প্রায় পৌনে একটা। অনিকে ঠ্যালা দিয়ে বললাম “ওপরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড় রে, অনেক রাত হয়ে গেছে।“ ওঠার সময় বলল যে তার মোবাইলে অ্যালার্ম দেওয়াই আছে তাই সময় মতো সেই আমাকে ডেকে দেবে।
ভোর চারটের সময় ঘুম গেলো ভেঙ্গে। বাথরুমের সামনে গিয়ে দেখি, ওয়েস্টার্নের আলো জ্বলছে বাধ্য হয়ে ইন্ডিয়ানে ঢুকে পড়লাম। সবে বেল্টটা খুলতে গেছি, সেই সময় ঘটলো এই যাত্রার প্রথম অঘটন। জিন্সের পকেট থেকে পার্স গলে, প্যান দিয়ে সোজা ট্রেনের লাইনে। আমি খানিকক্ষণ হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। ভাবলাম কী করা উচিৎ। বেল্টটা ঐ ভাবে আধোখোলা অবস্থায় দৌড় লাগালাম অনির কাছে। ততক্ষণে, আমি কেঁদে ফেলেছি। বেশ খানিকক্ষন ঝাঁকানোর পরে, অনির ঘুম ভাঙল। ভাঙা ভাঙা গলায় বললাম “পার্স…প্যান…ট্রেনের বাইরে।“ কী বুঝলো ঐ জানে। চোখ কচলাতে কচলাতে বলল “দাঁড়া, চাপ নিস না। আমি বাথরুম গিয়ে দেখে আসছি।“
সিটে ধপ করে বসে ভাবলাম চেনটা টেনে দিই, তারপরেই মনে হলো ট্রেনের এখনকার গতিবেগ ঠিক কতোটা। মানে পার্সটা পড়ার পর বেশ কয়েক মিনিট কেটে গেছে। দুটো স্টেশনও দেখলাম পার হয়ে গেল। তাহলে কী গুগুল দেখবো যে দুটো স্টেশনের আগে কোন স্টেশন ছিল তাহলে একটা আন্দাজ অন্তত করা যাবে যে পার্সটা ঠিক কোথায় পড়েছে। কিন্তু ট্রেন থামলেও, এখান থেকে তো সেই স্টেশানে যাওয়ার মতো কিছু পাবো না। জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখলাম যে ভ্যান দেখা যাচ্ছে কি না বা নিদেন পক্ষে গরু। না মানে গ্রাম থাকলেই গরু থাকবে আর গরু থাকলে গরুর গাড়িও থাকবে। ততক্ষনে অবশ্য পাঁচ মিনিট পেরিয়ে গেছে। তাহলে ঠিক কতটা পিছিয়ে গেলে সেই জায়গাটা পাওয়া যাবে, সেটাও হিসেব করতে হবে। কিন্তু সকাল বেলায় গ্রামের অনেকেই রেললাইনের ধারে প্রাতঃকৃত্য করতে আসে, তারা যদি পেয়ে যায় পার্সটা তাহলে কি রেখে দেবে নাকি নিয়ে নেবে?
এতক্ষণে খেয়াল পড়লো যে অনি কোথায়?? সে তো এখনও বাথরুম থেকে ফিরলো না! বাথরুমে গিয়ে কি ঘুমিয়েই পড়লো নাকি রে বাবা! তারও প্রায় এক মিনিট বাদে অনি ফিরে এলো। বেশ তেড়েই বললাম “ কী করছিলিস এতক্ষন!!” খুব গম্ভীর ভাবে বলল “একটু গুছিয়ে নিচ্ছিলাম। “ আমি অবাক হয়ে বললাম “মানে!” বলল “ বাথরুমে ঢুকে চারপাশটা দেখে নেওয়ার পর মনে পড়লো যে তুই বলেছিলিস যে পার্স, প্যান, ট্রেনের বাইরে। তার মানে পার্সটা বাথরুমে নেই, তাহলে সেখানে খুঁজেও কোনো লাভ নেই। তাহলে এখন কী করণীয়। চেন টানার সময়ও পেরিয়ে গেছে। চিন্তা করতে করতেই হাগু পেয়ে গেলো। তারপরে একটু ঢুলুনি আসছিলো ঠিকই কিন্তু চোখে মুখে জল দেওয়ায় পর, এখন ঠিক আছি। এইবার বল যে পার্সের মধ্যে ঠিক কী কী ছিল?”
হরি হে সব গেলো। এতক্ষণ শুধু নতুন পার্সটার জন্যই মন খারাপ হচ্ছিল। এখন মনে পড়লো যে সেখানে কী কী ছিল। দুজনেই প্রায় একসাথেই আঁতকে উঠলাম। টাকা খুব বেশি ছিল না। হোটেলের একটা রিসিপ্ট ছিল, সেটারও উপায় হয়ে যাবে। কিন্তু ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড সব ছিল ঐ পার্সের মধ্যে।
হারানো জিনিস বানানো যাবে অবশ্যই কিন্তু এই মুহূর্তে এই জিনিসগুলো খুবই দরকারি। যে যে জায়গায় যাওয়ার কথা তারমধ্যে একটা জায়গায় ঐ কাগজপত্রগুলো লাগবেই। নাহলে যাওয়ার অনুমতি পাওয়া যাবে না। আমি তখন অনিকে শুধু বললাম “এইবার কী হবে রে?” অনি বলল “আগে এক কাপ কফি হবে। তারপর ভেবে দেখছি দাঁড়া। চিন্তা করিস না।“
ইতিমধ্যে কামরা জেগে উঠেছে। আর হয়তো ১ ঘন্টা বাকি নামতে। চা কফি হাঁকতে হাঁকতে আমাদের সামনে চলে এলো। কফি খেতে খেতেই অনি হঠাৎ করেই জোরে হেসে উঠলো। আকস্মিক এবং অত্যাধিক চাপে মানুষের মাথার ব্যামো দেখা দেয় সেটা জানি। কিছু জিজ্ঞেস করার আগে বলল “ জানিস, আমি খালি ভয় পাচ্ছিলাম যে আমরা হয়তো ঘুম থেকেই উঠবো না আর ট্রেন স্টেশান ছেড়ে বেরিয়ে যাবে। কিন্তু এইরকম হবে, সেটা মাথাতেই আসে নি।“ আমি বললাম “ তুই কী গাধা রে!! আমরা যেখানে নামবো সেটাই তো শেষ স্টপ। তুই নিজে না উঠলেও, লোকে তোকে ঠ্যালা মেরে নামিয়ে দেবে।“ বলল “ হুঃ…আমি তো গাধাই। আর তুই কী?? আমার নতুন পার্সটা তো গেলো। কলকাতায় ফিরেই আগে আমাকে একটা পার্স কিনে দিবি।“
কফি খেয়ে, অনি তার ব্যাগ থেকে একগাদা কাগজ পত্র বার করতে করতে বলল যে মিসিং ডায়রি করাতে হবে কিন্তু সেটা কোথায় করাতে হবে সেটা জানতে হবে। তাহলে ট্রেন যখন জলপাইগুড়িতে থামবে, তখন খোঁজ করতে হবে যে আশেপাশে কোথায় পুলিশ স্টেশান আছে কিন্তু ট্রেনের মধ্যে কিছু হারিয়ে গেলে বাইরের পুলিশ কি রিপোর্ট নেবে? প্রথমে ভাবলাম বাবাকে একটা ফোন করি। অনি বলল “ হয় বাবি বলবেন যে তোরা পরের ট্রেন ধরে ফিরে আয় অথবা নিজেই হয়তো দেখবি চলে এলেন। তারপর বলবেন যে তোদের একা একা ছাড়া যাবে না। আমিও তোদের সাথে যাবো। এমন ভাবে যাবো যে তোরা বুঝতেই পারবি না আমি তোদের পিছনে আছি।“ তীব্র প্রতিবাদ করতে গিয়েও চেপে গেছিলাম কারণ এই ব্যাপারটা অস্বীকার করার উপায় নেই। বোনের স্কুল থেকে একবার বোনদের দীঘাতে নিয়ে গেছিল। তখন আমার বাবা আর মামাও দীঘাতে চলে গেছিলেন। কারণ আমার বোন আগে খুব ডেয়ার ডেভিল টাইপের মেয়ে ছিল। একে সমুদ্র তার ওপর আবার বন্ধুদের সাথে। কিন্তু বোন জানতেই পারে নি যে বাবা তখন ফেলুদা হয়ে গেছেন। বাড়ি ফেরার বেশ কয়েকদিন পর, রাত্রে খেতে বসে বাবা বোনকে বলেছিলেন “ ঐ মেয়েটার সাথে অত ঝগড়া না করলেই পারতিস।“
বোন তো প্রায় চেয়ার থেকে পড়েই যায় আর কি। সেটা তো নয় তখন বোন ছোটো ছিল কিন্তু হানিমুনে বাবা যদি পেছন পেছন ছায়ার মতো ঘোরেন, কাউন্টার থেকে অ্যালকোহল কিনতে দেখেন তাহলে নির্ঘাত দুজনের কান ধরে বাড়ি নিয়ে চলে আসবেন।
নাঃ, বাবাকে বলা যাবে না কখনোই। তাহলে উপায়? বাবার আরেকজন বন্ধু আছেন, যাকে আমি নিজের বন্ধু বলেই মনে করি। খুব মজার মানুষ তিনি। একবার আমাদের বাড়িতে আসার সময় তিনটে গুজিয়া নিয়ে এসেছিলেন, মিষ্টি হিসেবে। বাবার সাথে ঝামেলা হয়েছিল তাই বাবার জন্য আনেন নি। বলেছিলেন “ অত ফর্মালিটি করতে জানি না। আমি গুজিয়া ভাল খাই, তাই সেটাই এনেছি। তুই বাজে লোক তাই তোর জন্য আনি নি।“ এই কাকুই আরেকটা ব্যাপারে আমাদের খুব সাহায্য করেছিলেন তাই অনিও বিয়ের আগে থেকেই কাকুকে চেনেন। ঠিক করা হলো যে কাকুকেই আগে ফোন করা হবে। ট্রেন থেকেই তলাপাত্র কাকুকে একটা ফোন করলাম। তিনিই বললেন যে জলপাইগুড়ি স্টেশানেই জি.আর.পি.এফ –এর কাছে গিয়ে মিসিং ডায়রি লেখাতে হবে। তারপর সেই কপিটা সাথে রাখলেই মুশকিল আসান আর অবশ্যই যেন গোপুকাকু মানে শিলিগুড়ির কাকুর সাথে দেখা করে নিই, কারণ গোপুকাকু আমাদের জন্য হোটেলে অপেক্ষা করে থাকবেন। ফোনটা ছাড়ার আগে বললেন “ পাগলটাকে (মানে আমার বাবাকে) কিছু জানাস না তাহলে হার্ট ফেল করে যেতে পারে।“
অনিকে জানাতেই সে আমার হাতে একটা ফাইল ধরিয়ে দিল। ইতিমধ্যে ট্রেন এসে থামলো। মালপত্র নিয়ে একটা ফাঁকা জায়গায় দাঁড় করিয়ে অনি গেল জি.আর.পি.এফ-এর অফিসের খোঁজ নিতে আর ট্রলি আনতে। ফিরে এলো কুলি নিয়ে। কুলিদের মাথায় মালপত্র চাপানো পচ্ছন্দ না হলেও অন্য কোনো উপায় ছিল না। কারণ জি আর পি এফ-এর অফিস সিঁড়ি দিয়ে উঠে স্টেশানে এক পাশে আর গাড়ি নিতে হবে স্টেশানের আরেক দিক থেকে এবং সর্বোপরি ট্রলি পাওয়া যায় নি। তিনজন মিলেই ব্যাগ ভাগাভাগি করে নেওয়া হলো। জি.আর.পি.এফ-এর অফিসের সামনে গিয়ে আমাদের দাঁড় করিয়ে অনি চলে গেল ভেতরে। আমি আবার বেশিক্ষণ চুপচাপ থাকতে পারি না। রাম মানে আমাদের কুলির সাথে কথোপকথন চালাতে থাকলাম বললাম যে
“সিকিমমে ঠান্ডা ক্যায়সা হ্যায় রাম জি?
সে দেখি আমার কথা পাত্তাই দিলো না। বলল -“ আপলোগ ইহা ক্যায়া কার রেহে হো দিদি, গাড়ি তো উস্পার সে মিলেগা।“
করুণ মুখে বললাম – “ হামারা সব কুছ খো গ্যায়া।“
সে, মালপত্রের দিকে চোখ বুলিয়ে বলল “ অউর ভি কুছ থা!!”
সেই মুহূর্তেই অনি ডাকলো, ফাইলটা দরকার। মুখটা বেশ গম্ভীর।
(ক্রমশ)
পরিচ্ছেদ ৬ অনেক রাতে ফিরেছিল কল্যাণ ওরফে শহীদুল।গাড়িটা শেডে রাখার পর দু’বার হালকা করে মা…..
পরিচ্ছেদ ৫ আকাশে এখন আর মেঘ নেই। হাওয়া হচ্ছে।কদিন পরেই বর্ষা নামবে।একদিন হাসপাতাল থেকে ফিরতে…..
পরিচ্ছেদ ৪ ভোর হয়ে আসছে।রাতে ভালো ঘুম হয়নি।ঘুমের ঘোরে মনে হচ্ছিল দম বন্ধ হয়ে আসছে।এরকম…..
বাংলার চিত্তাকর্ষক ইতিহাস সম্পর্কে জানার সময়, গৌরের মতো আর কিছু গন্তব্য হতে পারে না।…..